Monday, January 16, 2017

গল্প: বউ ইন শীতকাল

গল্প: বউ ইন শীতকাল

এমনিতেই প্রচন্ড শীত পড়েছে, তার
উপর এখন আবার শাস্তির বোঝা
মাথায় চেপে খালি গায়ে কম্বল/
চাদর ছাড়াই শুয়ে থাকতে হচ্ছে।
মাথার উপর আবার ফ্যান ঘুরছে। অথচ ইতু
আমার কাপাকাপি দেখে কম্বল
গায়ে জড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
একজনের পৌষ মাস তো আরেকজনের
সর্বনাশ।

আমার এই অদ্ভুদ শাস্তির কারন টা হচ্ছে
সকালে অফিসে যাওয়ার সময়
তাড়াহুড়ো করে গরম পানি না খেয়ে
শীতের ড্রেস না পড়ে বাসা থেকে
বের হয়ে যাওয়ার অপরাধে। ইতুর কড়া
নির্দেশ কোণ ভাবেই শীতে ঠান্ডা
পানি খাওয়া যাবেনা, শীতের
ড্রেস ছাড়া কোথাও যাওয়া
যাবেনা। আর আজ সময় স্বল্পতায় তা
পালন না করতে পারায় এখন আমাকে
আরো ঠান্ডায় রেখে শাস্তি দেয়া
হচ্ছে।
.
-ইতু, শীত লাগছে, কাথা টা দাওনা??
.
=এখন এতো শীত এলো কিভাবে??
সকালে মনে ছিলোনা??
.
-ওটাতো মিসটেক, সময় ছিলোনা,
আমার কি দোষ বলো!!
.
=চুপ বেয়াদব, সকালে আমি এতো
চিৎকার করে বললাম তবুও তোমার মনে
পড়েনি তাইনা?? তুমি জানো, তুমি
যাওয়ার পর আমি কতো কেদেছি??
এখন প্লিজ আমার রাগ সুদেআসলে
মিটাতে দাও, না হয় আরো শাস্তি
দিবো।
.
-ভাল, আমি অসুস্থ হলে কার কি যায়
আসে, সমস্যা নেই, আমি ছাদে
গিয়েই ঘুমাবো খালি গায়ে।
.
এই বলে উঠতেই ইতু পিছন থেকে আমার
হাত টা ধরে টান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে
কাথা দিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে
দিলো..
.
=ভেবোনা কুত্তা আমি গলে
গিয়েছি, আমি কিন্তু রাগ করছি, কথা
বলবেনা আমার সাথে তুমি!!
.
ইতু আমার দিকে পিঠ দিয়ে অপর
দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। ইতুর
জামায় কাধের নিচের খালি অংশ
টুকু দেখা যাচ্ছে, আস্তে করে
সেখানে আলতো করে কয়েকটা আঙুল
বুলাতেই সুড়সুড়ি তে ইতু কেপে উঠে
চিৎকার দিয়ে আমার দিকে ফিরে
হেসে দিয়ে বললো..
.
=কুত্তা শয়তান, একটু রাগ করেও
আমাকে থাকতে দিবিনা তাইনা??
.
-আমি কি করলাম??
.
=আমি কি করলাম মানে?? তুমি আমার
কাধে সুড়সুড়ি দাওনি??
.
-কিহ!! আমি তোমার কাধে কেনো
টাচ করবো, রাগ তোমার নিজের
একার সম্পত্তি নাকি, রাগ আমিও
জানি, পোকা টোকা মনে হয় কাধে
পড়ছে, আর ওমনি কথা বলার ধান্দা
খুজে কথা বলতে আসছে, ছেচরি, হুহ..
.
=কিইইইহ!! তুউউউমি.....
.
ইতু আর কিছুই বলতে পারলোনা, রাগে
কাপতে কাপতে চোখ বুঝে ফেললো।
ইতু রাগ করলে ওর ঠোট আর নাক, দুটোই
অসাধারণ লাগে, নিচের ঠোট টা
অনবরত কাপছে, আর নাক ফুলছে
বারবার, চোখ বন্ধ করায় চোখ ও
কাপছে। আর আমি শুয়ে শুয়ে আমার
রাগওয়ালি বউটার মায়াবী
রাগান্বিত মুখ টা দেখছি।।

আমি জানি ইতুও বুঝতে পারছে আমি
এটা ইচ্ছে করেই বলেছি যাতে ওকে
রাগিয়ে দিতে পারি। তাই সে
রাগছে তবু কিছু বলছেনা। আর না হয়
যদি সত্যি রাগ হতো তবে সে
এতোক্ষনে কান্না করে,আমার বুকে
থাপ্পড় দিয়ে অবস্থা হালুয়া করে
দিতো।

আমার পাগলী টা এমন ই, অল্পতে খুশি,
অল্পতে দুঃখ, কারন ওর জীবন টা যে
শুধুই আমি ময়। আর আমার জীবন?? সেটাও
তো এই পাগলীময়।
.
যেদিন দীর্ঘ প্রেম জীবনের পর
আমাদের আংটি বদল হয়, সেদিন ও
নিজ হাতে সবাইকে চা দিচ্ছিলো,
ইতু সব সময় সাঝুগুজু করে না, কিন্তু
সেদিন আমার রিকোয়েস্ট এ
সেঝেছিলো, লাল শাড়ি, লাল টিপ,
পিওর বাঙালি বধু, আমি ওকে দেখে
এতোই অবাক হচ্ছিলাম যে কখন ও
চায়ের কাপ নিয়ে আমার সামনে
এসেছি বুঝতেই পারিনি, বুঝেছি যখন
আমার বুকের উপর গরম পানীয়র অস্তিত্ব
পেলাম, যখন হুশ এলো তখন বুঝলাম ইতুর
হাতের কাপ থেকে আমার গায়ে চা
পড়েছে। সবাই এতো জোড়ে
হাসছিলো যে রাগে আমি
ফুঁসছিলাম, কে যেনো ইতু কে বললো,
"যাও মা, জামাই কে ঘড়ে নিয়ে
যাও, ক্লিন হতে হেল্প করো"। আলাদা
রুমে যেতেই আমি বলে উঠলাম..
.
-ওই তুমি এটা কি করলা?? প্রথম দিন চা
দিয়া গোসল করালে পড়ে তো গরম
ডাল দিয়েও করাবে মনে হচ্ছে!!
.
=দরকার হলে তাই করবো জনাব,
আপনাকে কাছে পেতে এগুলো যদি
না করি তবে কি করে হয় বলুন??
.
-তুমি/তুই থেকে আপনি তে চলে এলে!!
বাহ, আদব কায়দায় এতো উন্নতি!!
.
=তুমি তো আমার স্বামী, তাই একটু
সম্মান দিচ্ছি আর কি!!
.
-ওয়াহ ওয়াহ!! শুনে ধন্য হলাম।।
.
=এই যে জামাইবাবু, শার্টা টা একটু
খুলুন!!
.
-ছিঃ কি বলো এসব, এখন ও বাসর হয়নি
তো!!
.
=ওই তোরে খুলতে কইছিনা?? খুল..
.
-এক মিমিটেই তোমার সম্মান শেষ!!
আপনি থেকে সোজা তুই!!
.
=যা বলছি বেশ বলছি, দরকার হলে যা
ইচ্ছে তা বলবো..
.
শার্ট খুলার পর ইতু আমার বুকের
যেখানে চা পড়েছে সেখান টায়
আস্তে করে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলো,
নিমিশেই বুকের গরম চায়ের
জলাপোড়া চলে গিয়ে অদ্ভুদ ভাল
লাগে কাজ করছিলো। বেশ কিছুক্ষণ
পর যখন ও সোজা হয়ে দাড়ালো তখন
লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে শাড়ির আচল
হাতে নিয়ে খুটতে খুটতে নিচে
তাকিয়ে রইলো। আমি বলে উঠলাম..
.
-আমার বউ এতো সুন্দর ডাক্তারি করবে
সেটা জানলে তো বলার আগেই খুলে
ফেলতাম!!
.
ইতু লজ্জায় মুচকি হেসে বুকে একটা
থাপ্পড় দিয়েই দৌড়ে অন্য রুমে চলে
যায়।।

পাগলীটার এমন আরো পাগলামী
ভাবতে ভাবতে অনেক টা সময় পাড়
হয়ে গেলো, ইতু যে কখন আমার আঙুল
গুলো পেঁচিয়ে ধরে অর্ধ ঘুমের মতো
হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি, রাত
অনেক গভীর। হঠাৎ মনে পড়লো, যখন
বিয়ের আগে হঠাৎ একদিন মধ্য রাতে
ইতুর কল। ইতু সেদিন অসুস্থ ছিলো, আগে
আগেই তাই ঘুম পাড়িয়ে
দিয়েছিলাম। ইতুর কল পেয়ে ভয়
পেয়েছিলাম এই ভেবে যে কোনো
বড় সমস্যা হলোনা তো!! কিন্তু ফোন
করে আমার পাগলীটা বলে উঠলো..
.
-সামু, আমার না খুব ইচ্ছে হচ্ছে
তোমায় নিয়ে এই শীতের মধ্য রাতে
হাটতে বের হতে। আমি এখন ই যেতে
চাই..
.
কোণ ভাবে সম্ভব না হওয়ায় তখন
পাগলী টার ওই ইচ্ছে টা পূরণ করতে
পারিনি।

আর কিছু না ভেবেই ইতু কে জড়িয়ে
ধড়ে দু হাতে করে কোলে তুলে
নিলাম। ইতু জেগে উঠে চমকে গিয়ে
বলে উঠলো, কি হলো!! আমার আঙুল
গুলো ইতুর দু ঠোট চেপে আলতো স্পর্শ
করলো। দুজনে এক চাদর গায়ে জড়িয়ে
আস্তে করে রুম গুলো পাড় হয়ে ঘড়ের
দরজা টা খুললাম, ইতুকে কোলে
নিয়ে বের হয়ে পড়লাম সুনসান নিরব
রাস্তায়। পুরো রাস্তা জনশূন্য শুধু আমি
আর ইতু ছাড়া। নিয়নের আলো গুলো
যেনো আমাদের পাহাড়া দিচ্ছে।
ইতুকে কোলে নিয়ে হাটতে থাকলাম
দূর, বহু দূর..
ক্ষনিক পর ইতু কোল হতে নামলো,
আমার পা দুটোর আঙুল গুলোতে চাপ
দিয়ে ইতু দাঁড়িয়ে আমার ঠোট দুটো
খুব নিরবে স্পর্শ করে নিলো। ঝাপ্টে
ধড়ে আমার বুকের ঠিক মাঝ খান টায়
মাথা গুজিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আমিও
জড়িয়ে নিলাম খুব শক্ত করে, খুব
বেশি কাছের করে, শুধু আমারি
প্রাণে..

No comments:

Post a Comment