Friday, September 8, 2017

গল্প: পরিবর্তন

গল্প: পরিবর্তন
@আপসারা নূর তিথি


আজকে ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি। বাবার ইচ্ছে ছিলো একটা ইসলামিক পরিবার থেকে মেয়ে নিবে। কিন্তু এরা এতো টা ধার্মিক তা আমার জানা ছিলো না। যদিও আমি শালীন পোশাক মানে সালোয়ার কামিজ পরিহিতা ছিলাম। আর উড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা ও টানা ছিলো। তবুও আমাকে দেখে পাত্রীর ভাই ও বাবা মাথা নিচু করে নিলেন। পাশে বোরকা পরিহিতা একজন মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন। শুধু চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। তাও জর্জেটের নিকাবের ভিতর দিয়ে। এমন কি হাত ও পা'য়েও মোজা পরা। পাত্রীর ভাই ও বাবা দু'জন ই পাঞ্জাবি মাথায় টুপি পরেছে আর দাঁড়িও আছে। মহিলাটি বোরকার ভিতর থেকে অত্যন্ত নম্রসুরে আমাকে বললেন আমি যেনো ভিতরে গিয়ে বসি। ব্যাপারখানা বুঝতে পেরে আমি লজ্জিত হয়ে উঠে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি একটি বোরকা পরিহিতা মেয়ে খাটের উপর বসে মাটিতে দৃষ্টি দিয়ে আছে। উনার ও চোখ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত উনিই পাত্রী। আমি রুমে ঢুকতেই দশ/এগারো বৎসরের পিচ্চিটা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো। আমি ওকে বাধা দিয়ে বললাম তুমি কোথায় যাচ্ছো এভাবে? পিচ্চিটা মাথা নিচু করে বললো আপনি পরিপূর্ণ পর্দায় নেই। আমি আপনাকে এভাবে দেখতে পারি না। দৃষ্টির হেফাজত করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। এতোটুকু পিচ্চির কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি ভাইয়া নামাজ নিয়ে আলসেমি করলেও আব্বু-আম্মু ঠিকই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। কিন্তু পর্দার ব্যাপারে এতো সিরিয়াস না। আমি মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম। মেয়েটা মৃদুস্বরে বললো
-দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসেন
আমি চুপচাপ বসে গেলাম। এতো মিষ্টি গলা! না জানি সে দেখতে কতটা মিষ্টি! আমি রোবটের মতো বসে জিজ্ঞাসা করলাম
-আপনিই কি পাত্রী?
মেয়েটা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম
-আপনার চেহারা টা একটু দেখতে পারি?
মেয়েটা একবার দরজার দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে নিকাব তা সরিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমার মনে হলো তার চেহারা থেকে জ্যোতি বের হচ্ছে। ঘরটা অন্ধকার থাকলেও বুঝি এই চেহারার জন্য ঘরটাতে চাঁদের আলোর মতো আলো থাকতো। এতো ফর্সা আর এতো সুন্দর মানুষ হয় আমার জানা ছিলো না। আমি হা হয়ে তাকে দেখছিলাম। ঘোর কাটলো মেয়েটার কথার শব্দ শুনে। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
-মানুষ এতো সুন্দর হয়!
মেয়েটা মৃদু হেসে বললো
-আল্লাহর সব সৃষ্টি ই অপরূপ।
মেয়েটার সাথে কথা বললেও যেনো মনে একটা শান্তি লাগে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম
-তোমার নাম কি?
-ফাতেমা
মনে মনে বললাম নামের মর্যাদা রেখেছো। আমার মনে হচ্ছিলো আমার ভাই এই মেয়ের যোগ্য না। ভাইয়া ঠিকমতো তো নামাজ পড়েই না। তার উপর যতসব অশ্লীল সাইটে ঘুরে বেড়ায়। কেমন যেনো ঘোরের ভিতর ফাতেমা আপুকে ভাইয়ার খারাপ দিকগুলি বলে দিলাম। এমনি কি এই পর্যন্ত কতটা মেয়ের সাথে প্রেম করেছে তা ও। সব শোনার পর ও ফাতেমা আপুর চেহারায় বিশেষ পরিবর্তন দেখলাম না। তাই জিজ্ঞাসা করলাম
-এরকম একটা ছেলেকে তুমি বিয়ে করতে রাজি?
-জন্ম মৃত্যু বিয়ে আল্লাহর হাতে। তিনি আমাকে যার জন্য সৃষ্টি করেছেন আমি তার ই বিবি হবো। তাই বিয়ে নিয়ে আমি ঘাবড়াচ্ছি না। আমি জানি আল্লাহ আমার জন্য সঠিক টা ই করবেন। আর সেটা যদি আপনার ভাই হয় তাহলে তাকে বিয়ে করতে আমার আপত্তি থাকা শোভা পায় না। আর যদি আল্লাহ্ তার জন্য আমাকে সৃষ্টি না করেন তাহলে আমি রাজি থাকলেও কি এই বিয়ে হবে নাকি?
-তোমাকে দেখে মনে হয় না কখনো পর পুরুষের সাথে অদরকারে কথা বলেছো কিন্তু ভাইয়া তো এতো মেয়ের সাথে প্রেম.....
-তিনি যে জিনা করে নি তাই আলহামদুলিল্লাহ!
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম এমন সময় পাত্রীর মা এসে ওনাকে নিয়ে গেলেন। ফাতেমা আপু আবার নিকাব টা মুখের উপর টেনে নিলো। আমি বান্ধবীদের ভাই বোনের মেয়ে দেখার অনুষ্ঠানে গেছি। সেখানে দেখতাম মেয়ে কত সেজেগুজে পাত্র পক্ষের সামনে আসে আর এখানে! বোরকার আড়ালে প্রকৃতির রং এ সজ্জিত এক পরী। দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম যখন পাত্রীর মুখ দেখতে চেয়েছে পাত্রীর মা কিছু সেকেন্ড এর জন্য মেয়ের নিকাব তুলে আবার মুখ ঢেকে দিয়েছেন। আমার মনে হচ্ছিলো এই পরিবার তাঁদের মতোই কোনো পরিবারে মেয়েকে পাঠাবে। বিয়েটা হয়তো হবে না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে নিলো।


আজ ভাইয়ার বিয়ে। আমাদের বাড়িতে আয়োজন এর শেষ নেই। মেয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম তেমন জাঁকজমক করে কিছু সাজানো হয় নি। খাওয়ার ব্যবস্থা টা দেখে আরো একবার বিমোহিত হলাম। চারদিকে কালো কাপড় দিয়ে আবৃত করে সেখানে মহিলাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিয়ে বাড়ির প্রধান আকর্ষণ বৌ। আজও দেখি সেই বোরকা পরে নিকাব দেওয়া। তার উপর ঘোমটা ও টানা।
বৌ আমাদের বাড়ি আনার পর বৌ এর বেশভূষা দেখে সবাই থ হয়ে গেলো। ভাবী আমার কাছে এসে বললো
-আমার একটা কথা ছিলো
-কি বলো?
-আমি পর পুরুষকে আমার মুখ দেখাতে পারবো না। আল্লাহ আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। তুমি দয়া করে আমাকে আমাদের রুমটা দেখিয়ে দাও। যেসকল মেয়ে লোক আমাকে দেখতে চায় তারা রুমে গিয়ে দেখবে।
-কিন্তু ফটোগ্রাফি?
-মাফ করবে। আমি নিজেকে প্রদর্শনী বানাতে পারবো না। যতজন ঐ ছবি দেখে মন্তব্য করবে ততোজনের জন্য আল্লাহ্ আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন।
আমি কিছু না বলে ভাবীকে রুমে নিয়ে গেলাম। সব অতিথি চলে যাওয়ার পর ভাবীর রুমে গিয়ে আরো একবার থমকে গেলাম। ভাবী বৌ সেজেছে। সেটা ঘোমটা আড়ালে লুকিয়ে ছিলো। এরকম একটা সৌন্দর্য এর দিকে হয়তো আমৃত্যু তাকিয়ে থাকলেও ক্লান্তি আসবে না। আমি অবাক দৃষ্টি নিয়েই বললাম
-ভা...ভাবী তু...তুম্মি এতো সুন্দর করে সাজছো?
-মেয়েদের জন্যই তো রং। কিন্তু তা শুধু স্বামীর সামনেই প্রদর্শন করতে হয়। স্বামী স্ত্রীর রূপে মুগ্ধ থাকলে আল্লাহ্ ও খুশি হোন।
আমি রুম থেকে বের হয়ে ভাবলাম ভাইয়া কি লাকি!


ভাবী আসার পর থেকে আমাদের বাসা টা পাল্টে যেতে থাকলো। প্রথম কয়েকদিন ভাবী সবাইকে সময়মতো নামাজ পড়তে অনুরোধ করতো। এখন আমাদের নিজের কাছেই সময়মতো নামাজ না পড়তে পারলে অস্বস্তি লাগে। ডিশ লাইন কেটে দেওয়া হইছে। এখন বেশিরভাগ সময় ই বাসাতে ওয়াজ বাজে। সবচেয়ে বেশি অবাক করা পরিবর্তন হয়েছে ভাইয়ার মাঝে। হবে ই না কেন যার বৌ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে ভাইয়ার জন্য দোয়া করতো। ইসলামের পথে আনার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতো সে তো ইসলাম এর ছায়াতলে আসবেই। ভাইয়াকে অফিসের স্যার দাঁড়ি কেটে পাঞ্জাবি পরা ছাড়তে বলেছিলো। ভাইয়া তা না করে স্যারের মুখের উপর রিজাইন লেটার দিয়ে চলে আসে। তাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার চাকরি টা হাতচ্যুত হয়। এখন ত্রিশ হাজার বেতনের চাকরি করলেও আল্লাহর রহমতে সব ভালোই চলে।


আজকে আরো একটা খুশির দিন। আমার বিয়ে। মনের মানুষ এর সাথেই বিয়ে কিন্তু গত চার বছর তার সাথে কোনো যোগাযোগ ছিলো না। একদিন মাঝরাতে আমি যখন ফোনালাপে ব্যস্ত তখন ভাবী তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। আমি হতভম্ব হয়ে ফোন কেটে দিলাম। ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বললেন
-আত্মহত্যা মহাপাপ জানো?
এরকম কথা বলার কোনো হেতু আমি খুঁজে পেলাম না। তবুও মাথা নেড়ে বললাম
-হুম
-তুমি কি আত্মহত্যা করছো না?
-মানে?
-তোমার ভিতরের মুমিন সত্তাকে হত্যা করছো না? তুমি কি জানো না বিবাহপূর্ব প্রেম ইসলামে নিষিদ্ধ?
-কিন্তু ভাবী আমরা তো কোনো খারাপ....
-কখনো তার সাথে দেখা করো নি? হাত ধরো নি?
আমি মাথা নিচু করে বললাম
-দুটোই করেছি
-আমি আর গভীরে নাই বা গেলাম। তোমরা যতোই সৎ থাকো। যখন তোমরা একত্রে থাকো তখন তোমাদের মনে খারাপ ইন্ধন যোগাতে শয়তান সেখানে উপস্থিত থাকে। যেখানে একজন মুমিন ব্যক্তির উপর ও শয়তান ইন্ধন জুগানোর চেষ্টা করে সেখানে তোমাদের উপর তো প্রয়োগ করা আরো সহজ। তুমি কি প্রাচীন জাহেলি যুগের কাহিনী জানো না? তাঁদের মতো নিজেকে প্রদর্শন করে কেনো বেড়াচ্ছো?
-কিন্তু ভাবী আমরা তো নিয়ত করেছি আমরা একে অপরের জীবনসঙ্গী হবো
-বিয়ে ঠিকঠাক হওয়ার পর ও আকদ না হওয়া অবধি কথা বলাও জায়েজ নেই। সেখানে তোমরা ফ্যামিলিকে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছো। এর শাস্তি কি জানো? কেমন লাগবে বলতে পারো গলিত শিশা চোখে ঢাললে?
আমি চুপ করে ছিলাম। আমার হাত পা কাঁপছিল। শরীরে ঘাম ছুটে গেছে। ভাবী আবার বলতে লাগলেন
-তুমি কি সূরা মায়িদার 5 নং আয়াত কিংবা সূরা নূর এর 31 নং আয়াত সম্পর্কে অবগত নও? যেখানে মেয়েরা কাদের সাথে সাক্ষাত্ করতে পারবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে?
আমি তখন ও চুপ। ভাবী একটু থেমে বললেন
-দেখো ছেলেটা অবুঝ না। তোমাকে দেখলে তার কামনা পায়। প্রকাশ করুক বা না করুক। মেয়েদের প্রতি ছেলেরা আকৃষ্ট হবেই। তুমি এর সুযোগ করে দিয়ে নিজের পাশাপাশি ছেলেটাকে গুনাহগার করছো। নিশ্চয়ই নিজের ভালোবাসার মানুষের ভয়ানক শাস্তি তুমি কাম্য করো না?
আমি কাঁদতে কাঁদতে না বললাম।
ভাবী আমার মাথায় হাত রেখে বললো।
-ইসলামে কাউকে পছন্দ করা টা পাপ বলে নি। কিন্তু পছন্দ করলেই স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। তুমি তাকে বলো সবর করতে কিংবা তোমাকে বিয়ে করে নিতে। স্বামী স্ত্রী মাঝে মোহব্বত থাকলে আল্লাহ্ খুশি হন। আর আল্লাহর খুশি মানেই সওয়াব অর্জন। যা থেকে সওয়াব পাওয়া যায় তা ভুল সময়ে করে কেনো গুনাহগার হবে? মনে রেখো যা জিনাহ এর নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে জেনেশুনে যাওয়া ও এক প্রকার কবিরা গুনাহ। শুধু শারীরিক সম্পর্ক ই না। হাত চোখ এমন কি মনের ও জিনা হতে পারে!
আমি ভাবীর কথামতো সেদিন ই ওকে না করে দিছিলাম। প্রথমে মানতে নারাজ ছিলো। সে বলেছিলো আমাকে ছাড়া নাকি এক মূহুর্ত ও চলে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। বলেছিলাম সত্যি ভালোবাসলেই আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে। ছবিগুলি ডিলেট দিও। আমার জন্য মন ছটফট করলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিও। এটাও ভাবীর কাছে শিখেছিলাম। নামাজ পড়লে সত্যিই অস্থিরতা চলে যায়।
সেদিন ভাবীর সব কথা শুনেছিলাম বলেই হয়তো আজ নিজেকে খুব লাকি মনে হচ্ছে। কারণ ভাবীর মতো কোনো উৎশৃঙ্খল না একজন ইসলামি আদর্শে পরিপূর্ণ ছেলের বৌ ই হচ্ছি। আমি বোরকা আর নিকাব আর সে পাশে পাঞ্জাবি আর টুপি পড়ে বসে আছে। কাজি বিয়ে পড়াচ্ছেন। নিঃসন্দেহে এটা কি পৃথিবীর সুন্দরমতো দৃশ্যের মধ্যে একটি নয়?
(সমাপ্ত)

★মরিচ গাছে সাদা ফুল★

★মরিচ গাছে সাদা ফুল★
১.
"কিরে দোস্ত,মন খারাপ কেন?"
সিফাতকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে শাহেদ এসে ওর পাশে বসল।ওরা দুই বন্ধু,নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে অনার্স করছে।একই মেসে থাকে।এক বছরেই দুজন দুজনের প্রাণের বন্ধু হয়ে গেছে।বন্ধুকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে শাহেদ আবার প্রশ্ন করল,
"কিরে কি হয়েছে বলবি তো?শায়লাকে নিয়ে কোনো সমস্যা?"
শায়লা সিফাতের গার্লফ্রেন্ড।যথেষ্ট ভালো মেয়ে,সিফাতকে প্রচন্ড ভালবাসে।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।তাই সিফাতের ভয়,যদি ভালো অবস্থানে গিয়ে শায়লা ওকে ভুলে যায়!শাহেদ দেখছে ইদানিং ওদের মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হয়।সিফাত শায়লাকে কারনে অকারনে সন্দেহ করে।শাহেদ আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেনা,কারণ এসব বিষয়ে ওর অভিজ্ঞতা একেবারে শূন্যের কোঠায়!
.
সিফাত আস্তে আস্তে বলল,"কিছু ভালো লাগছেনা রে।আজ শায়লার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হচ্ছে।"
-ঘটনাটা কি?
-আর কি বলিস না,ও আজ সকাল থেকে একটাও ফোন দেয়নি।আমি ভাবলাম হয়তো ক্লাসে গেছে।বিকালে ফোন দিলাম বলল যে সারাদিন রুমেই ছিল।'আমি কারণ না জেনেই আমি ওকে অনেক উল্টাপাল্টা বলে ফেলছি রে।পরে শুনলাম ও নাকি অসুস্থ!
-কি বলিস!
-হ্যাঁ রে দোস্ত,জানিস ও অসুস্থ হলে কখনো কাউকে বলেনা এমন কি আমাকেও না।নিজে নিজেই সাফার করে।আমি কেন যে আজ বুঝতে পারলাম না।
-তোকে বলল কে?
-ওর একটা রুমমেট আছে,বেশ ভালো মেয়ে।ও-ই আমাকে ফোন দিয়ে সেই লেভেলের ঝাড়ি দিল,কিছু না জেনেই কেন শায়লাকে কাঁদালাম তাই।শেষে অবশ্য আমি স্যরি বলেছি।ওর দিকে খেয়াল রাখতে বলেছি।
-আচ্ছা তাহলে আর চিন্তা কি।
-ওকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে রে।এত রাগ করেছে যে ফোনটাও তুলছে না।
বলতে বলতে সিফাতের গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।তা দেখে শাহেদ ধমকে উঠল,"আরে শালা মেয়েদের মত কাঁদছিস কেন!"
-আগে নিজে একটা প্রেম কর,তারপর বুঝবি।
-নারে ভাই,তোকে দেখে শিক্ষা হচ্ছেনা?আমার অত প্রেম-টেমের শখ নাই।
-ঈশিতাকে পেলে তো ঠিকই করতি।
-ধুর বাদ দে তো।চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
-আমার ভালো লাগছে না,তুই যা।
.
.
সিফাত আসতে চায়নি তাই ওকে আর জোর করেনি,শাহেদ একাই রাস্তায় হাঁটছে।মাত্র সন্ধ্যা হল,এই সময়টা ওর ভালোই লাগে।ও সিফাতের বলা শেষ কথাটা নিয়ে ভাবছে।আচ্ছা,ঈশিতাকে পেলে কি ও সত্যি প্রেম করত?
প্রত্যেকের জীবনেই প্রথম ভালোলাগা মানুষটার জায়গা একটু আলাদা হয়।ঈশিতা শাহেদের জীবনে সেই "প্রথম"!আর ঘটনাগুলোও এত অপরিণত বয়সে ঘটেছিল যে এখন ভাবলে ওর হাসি পায়।
.
ঈশিতা ক্লাস নাইনে ওদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়েছিল।প্রথমদিন স্যার ওকে নিউ কামার বলে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল।শাহেদ দেখল বেশ মিষ্টি একটা মেয়ে।প্রথমদিন বলে ওর পরনে স্কুলড্রেস ছিলনা,সবার মাঝে ওর মাথায় দেওয়া লাল-সবুজ ওড়নাটার দিকে তাই বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল।সবকিছু ছাপিয়ে নজর কাড়ছিল ওর লম্বা চুলের বিনুনি...........
অনেক কিছু ভুলে গেলেও ঈশিতাকে প্রথম দেখা দিনটার কথা শাহেদের ভালভাবেই মনে আছে।প্রথম এক বছর শাহেদ কিছু টের পায়নি।ঈশিতাকে দেখতে ওর ভালো লাগত,এতটুকুই।শাহেদের কাজিন নিহা,ওদের সাথেই পড়ত।নিহার কাছে শুনেছে ঈশিতার বাবার চাকরিসূত্রে ওরা এখানে এসেছে।শাহেদদের পাশের বাসাতেই থাকে।কিন্তু স্কুলে যাওয়া-আসা ছাড়া ঈশিতাকে সে কখনো বের হতে দেখেনি।নিহার সাথে ঈশিতার ভালো বন্ধুত্ব ছিল।নিহা প্রায়ই এসে বলত,ঈশিতা নাকি ভীষন ভীতু!হরর ফিল্ম দেখে ভয়ে অস্থির!তেলাপোকা দেখে নাকি চিৎকারে পুরো ঘর মাথায় তোলে।আবার সে নাকি বাচ্চাদের মত হরলিকসে বিস্কুট ভিজিয়ে খায়!ওর মা এখনো ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।ছোট ভাইয়ের সাথে সারাদিন মারামারি করে।হাস্যকর হলেও ওর সব আচরণ শাহেদের ভালো লাগে!অথচ স্কুলের ফাংশনে ঈশিতা যখন গান গায়,কবিতা আবৃত্তি করে,তখন আবার নিহার কথার সাথে শাহেদ ওকে মিলাতে পারেনা।সব মিলিয়ে দিনকে দিন ঈশিতার প্রতি ওর মুগ্ধতা বেড়েই চলে।
.
.
ক্লাস টেনে উঠে একবার ঈশিতা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল,প্রায় একমাস স্কুলে আসেনি।তখনই শাহেদ টের পেল তার ভেতর এক অদ্ভূত পরিবর্তন।ক্লাসরুমে কি যেন একটা সে সারাক্ষন মিস করে।সবকিছু তার খালি খালি লাগে।প্রতিদিন ক্লাস শুরু হবার ঘন্টা পরা পর্যন্ত অপেক্ষা করে,এই বুঝি ঈশিতা আসল!ঈশিতা যেদিন সুস্থ হয়ে স্কুলে এল সেদিন তার খুশি দেখে কে!সেদিনই ক্লাসের সবাই বুঝে গেল ও যে ঈশিতাকে পছন্দ করে,বন্ধুদের টিটকারি চলল সমান তালে।কথাটা ঈশিতার কানে গেলে সে সবাইকে ধমকাল,এসব বলতে নিষেধ করল।কিন্তু কে শোনে কার কথা,ক্লাসের ছেলেমেয়েরা সুযোগ পেলেই ওদের হেনস্থা করতে ছাড়ত না।শেষমেষ আর না পেরে ঈশিতা শুধু হাসত,কিছু বলত না।ততদিনে শাহেদ ওর প্রেমে বিভোর!যে ছেলে মেয়েদের দিকে তাকাতে ভয় পেত,সে ছেলে শুধু ঈশিতাকে একবার দেখার জন্য কোনো বাহানায়ই আর স্কুল মিস করেনা!সারাক্ষন সে ঈশিতার কথাই ভাবে।একসময় সাহস করে নিহাকে দিয়ে কয়েকটা চিঠি পাঠায়।ঈশিতা কোনো চিঠিরই জবাব দেয়না,কিন্তু চিঠিও ফেরত দেয়না।নিহাকে বলে দেয় শাহেদ যেন এসব ছেড়ে পড়ায় মন দেয়,সামনে ফাইনাল পরীক্ষা।কে কাকে ভালবাসবে সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।এমন কি এ-ও বলে যে আর কোনো চিঠি দিলে শাহেদের বাবা-মার কাছে কমপ্লেন করবে।এ কথায় নিহাও শাহেদকে বকাঝকা করে।প্রতিবেশী হিসেবে শাহেদের পরিবার ঈশিতাদের ভালোই চিনত।এসবে শাহেদের অনেক রাগ হয়।সে ভাবে ঈশিতাকে আর বিরক্ত করবে না।অভিমানের ডালা নিয়ে শেষ চিঠি লেখে ঈশিতাকে,এলাকার একটা ছেলেকে দিয়ে পাঠায়।কিন্তু কোনো জবাব আসেনা।শাহেদ তখন পড়ায় মন দিতে চেষ্টা করে,এসবের জন্য রেজাল্ট খারাপ হলে সবার কাছেই ছোট হতে হবে-এই ভেবে।
.
.
এরই মধ্যে এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়।লম্বা ছুটি পেয়ে বিষন্নতা কাটাতে শাহেদ ওর খালার বাড়ি বেড়াতে যায়।ফিরে এসেই বড় ধাক্কাটা খায় সে,যখন শোনে ঈশিতার বাবা এখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে ফ্যামিলিসহ অন্য কোথাও চলে গেছে!নিহার কাছে ঈশিতাদের বাসার যে নাম্বারটা ছিল সেটাও কদিন পর বন্ধ পাওয়া যায়।এসব শাহেদ অনেক ভেঙ্গে পড়েছিল......মনে হলেই কান্নাকাটি করত,কিছুতেই ঈশিতাকে সে ভুলতে পারছিল না।বাবা-মা,আত্মীয়স্বজন সবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছিল ওকে।একটা সময় শাহেদ নিজেকে সামলায়......যাকে কোনোদিন পাবেনা তার জন্য আর কেন কষ্ট পাওয়া!ঈশিতা তো ওকে ভালবাসেনি.......বরং বাচ্চাকালের পাগলামি ভেবে এসব ভুলে যাওয়াই শ্রেয়!আস্তে আস্তে তীব্র খারাপ লাগার অনুভুতিটা হারাতে থাকে।এখন মাঝে মাঝে মনে পড়লে শুধু ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে!এই তিন বছরে আর কাউকে যে ওর ভালো লাগেনি তা নয়,কিন্তু কেন জানি ঈশিতার মত করে কাউকে ভাবতে পারেনি।এই অদ্ভুত একতরফা ভালবাসার জন্য শাহেদ নিজেই নিজের উপর বিরক্ত।তার দেখাও পাচ্ছেনা,ভুলতেও পারছেনা.......
.
.
২.
"কিরে শাহেদ,তুই কিছু খাচ্ছিস না কেন?"
সিফাতের কথায় শাহেদ একটু চমকে উঠল।আজ সিফাতের জন্মদিন,তাই ও সবাইকে ট্রিট দিচ্ছে,শাহেদকে সাথে নিয়ে এসেছে।শায়লা এসেছে ওর সেই রুমমেটকে নিয়ে।তাকে দেখেই শাহেদের ভিরমি খাওয়ার দশা!এ তো ঈশিতা!সমস্যা হল শায়লা ওকে "নিশি" বলে ডাকছে।ঈশিতা ও শাহেদের সাথে সদ্য পরিচিতের মতই কথা বলছে।শাহেদের সব গুলিয়ে যাচ্ছে।শাহেদ ভাবতে লাগল কিভাবে ওর সাথে আলাদা করে কথা বলা যায়?হঠাৎ শাহেদ বলে উঠল,"সিফাত তোদের তো অনেকদিন পর দেখা হল,তোরা তাহলে কথা বল,আমরা ওইপাশে গিয়ে বসছি।"মেয়েটা হেসে বলল,"ওহ তাই তো,দেখ শায়লা,আমিও বোকার মত তোর সাথে বসে আছি!তোরা কথা বল তাহলে।"
দুজন আরেকটা টেবিলে গিয়ে বসল।শাহেদ কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছিল না।আমতা আমতা করে বলেই ফেলল,"এক্সকিউজ মি,তোমার মানে আপনার নামটা যেন কি?"
একগাল হাসিসমেত জবাব পেল,"নিশিতা!"
-কিন্তু আমি তো জানি আপনার নাম ঈশিতা!
নিশিতা বেশ অবাক হয়ে শাহেদের দিকে তাকাল।মনে হচ্ছে এমন অদ্ভুত কথা সে আগে কোনদিন শুনেনি।বলল,
-আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি নিশিতা।ঈশিতা আমার বড় বোন।আসলে আমরা টুইন,এজন্য আমাকে আপনার ঈশিতা মনে হচ্ছে।
-ঈশিতার তো কোনো যমজ বোন ছিলনা!ওরা এক বোন এই ভাই ছিল।
-আপনি ঠিক কোন সময়কার কথা বলছেন বলুন তো?আপনি ঈশিতাকে কোথায় দেখেছেন?
শাহেদ সময় আর ওদের এলাকার নাম বলল।
-তিন বছর আগে আপনি আমাকে দেখেননি কারণ আমি তখন আমার নানুমনির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম।বাসায় গেলেও বাইরের কেউ টের পেতনা কারণ আমরা দুবোন দেখতে হুবুহু এক।
-আমার কাজিন নিহা ঈশিতার ভালো বন্ধু ছিল কিন্তু ঈশিতা তো কখনো বলেনি তার আরেকটা যমজ বোন আছে--
-দেখুন আপনাকে কে কি বলেছে আমি জানিনা।আমার কথা আপনার বিশ্বাস না হলেও তো আমার কিছু করার নেই।অযথা পেঁচাচ্ছেন কেন?
মেয়েটাকে রেগে যেতে দেখে শাহেদ নিজেকে সামলালো।তাহলে সে ঈশিতা নয়,নিশিতা।মিনিট তিনেক চুপ করে থাকার পর শাহেদ বলল,"স্যরি।"
-ইটস ওকে,আসলে আমিই স্যরি,একটু বেশি রিএক্ট করে ফেলেছি।আচ্ছা ঈশিতা কি আপনার বন্ধু ছিল?
-বন্ধু.........আসলে......আমরা একসাথে পড়তাম আর আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিল।
-ওহ,আচ্ছা।আপনি যেভাবে আমাকে ঈশিতা বানাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন,আমি তো ভাবলাম কাহিনী অন্যকিছু!
-তাই নাকি!আচ্ছা ঈশিতা এখন কোথায়?
-হ্যাঁ ও তো ঢাকাতেই আছে,পড়াশোনা করছে।
-নিশিতা,কিছু মনে না করলে ওর কন্ট্যাক্ট নাম্বারটা পেতে পারি প্লিজ?আমার খুব প্রয়োজন ছিল!
-উমমমম......একটা কাজ করুন,আপনি বরং আপনার নাম্বারটা আমাকে দিন,আমি ওকে বলব আপনার সাথে কন্ট্যাক্ট করতে।ও আবার কাউকে এভাবে নাম্বার দেওয়া পছন্দ করেনা।
-না না ঠিক আছে,আমারটাই নিন।
.
.
রেস্টুরেন্ট হতে ফেরার পর থেকেই শাহেদ কেমন যেন আনমনা।ভাবছে নিশিতার কথায় ঈশিতা ওকে ফোন দেবে কিনা।নাকি এবারেও পেয়েও হারাবে ওকে!সাতপাঁচ ভেবে ভেবে সে নিহাকে ফোন দিল।নিহা সব শুনে অবাক।সে কিছুতেই মানতে রাজি নয় যে ঈশিতার কোনো যমজ বোন আছে!নিহা বলল ব্যাপারটা সে দেখবে।
নিহা ভীষন চটপটে মেয়ে।সে সোজা চলে গেল ঈশিতার বাবা যে অফিসে চাকরি করত সে অফিসে।সেখান থেকে ওর বাবার ফোন নাম্বার জোগাড় করে ফেলল।ওনাকে ফোন করে ঈশিতার বান্ধবী পরিচয় দিয়ে ওর আর ওর মায়ের ফোন নাম্বারও নিয়ে নিল।শাহেদ তো নিহার কথা শুনে পুরোই থ।ঈশিতার কোনো যমজ বোন নেই!তার মানে সে ঈশিতাই ছিল!কিন্তু ওর পরিচয় গোপন করা,এত নির্লিপ্ত আচরণ........ঈশিতা ওর সাথে কেন এমন করবে!এতসব ভাবনার দোলাচলে একটা দিন চলে গেল।
.
শাহেদ নিহার কাছ থেকে ঈশিতার নাম্বার নিয়েছিল।ভাবছে এখনই কথা বলবে নাকি আরো কিছুদিন অপেক্ষা করবে ওপাশ থেকে সাড়া আসে কিনা?তবে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলনা,সেদিন রাতেই ফোন এল।শাহেদ দেখল নিহা যে নাম্বার দিয়েছিল সেটা থেকেই কল এসেছে।রিসিভ করতে গিয়ে শাহেদের হার্টবিট বেড়ে গেল!
-হ্যালো!
-হ্যালো,শাহেদ বলছেন?
-ঈশিতা?
-না,আমি নিশিতা।
এবার শাহেদের কাছে সব পরিস্কার হয়ে গেল!ঈশিতা আর নিশিতা-একই মানুষ!সে খুশিতে 'ইয়াহু' বলে চিৎকার দিতে গিয়েও থেমে গেল।ওর অবস্থা দেখে সিফাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!নিজেকে সামলে নিয়ে শাহেদ বলল,
-ঈশিতা ফোন দিলনা যে?
-আসলে ও আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেনা।আচ্ছা সমস্যা কি বলেন তো?যদি আমাকে বলতে আপনার আপত্তি না থাকে।
-নাহ কোনো সমস্যা নেই।থাক ও কথা বলতে না চাইলে কি আর করা।
-আপনি আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন।কোনো প্রেমঘটিত ব্যাপারস্যাপার নয়তো?
-কিছুটা ওই রকমই।
-ঘটনাটা বলেন!
-আসলে ঈশিতা আমাকে অনেক ভালবাসত।
-কিহ!!
-হ্যাঁ,ও আমাকে কয়েকবার প্রপোজ করেছিল,আমি রাজি হইনি।
-বলেন কি এসব!
-ও আমাকে অনেক চিঠি লিখেছে,কিন্তু আমি কখনো জবাব দেইনি।তখন আমি ওকে পাত্তাই দিতাম না।
-তাই,না?এত ডিমান্ড ছিল আপনার?
-তখন একটু ছিল আর কি।অনেক মেয়েরা ভালবাসত তো,তাই!
-আপনার মত মিথ্যুককে কেউই ভালবাসত না।
-আরে!আমি যে মিথ্যুক সেটা আপনি জানলেন কিভাবে?
কিছুক্ষন আমতা আমতা করার পর জবাব আসল,
-ঈশিতা বলেছে আমাকে।ও নয়,বরং আপনি ওকে ভালবাসতেন।
-ও তাই?আর কি কি বলেছে?
-বলেছে আপনি ওকে অনেক চিঠি লিখেছেন,কয়েকবার প্রপোজ করেছেন।
-ঈশিতা তো অনেক মিথ্যে কথা বলে!
-ঈশিতা মোটেই মিথ্যে বলেনা।
-ও যে আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে গিয়েছিল,আর একবারও যোগাযোগ করেনি,সেটা বলেনি?
-ও মোটেই আপনাকে কষ্ট দেয়নি বরং বলেছে ভালভাবে লেখাপড়া করতে।ভালবাসার কথা সে তখন ভাবত না।আর ওখান থেকে চলে আসার কয়েকদিন পর ওদের মোবাইল হারিয়ে যায় সাথে নাম্বারগুলো ও।
-আমার শেষ চিঠিটা কি সে পায়নি?
-কোন শেষ চিঠি?কার কাছে দিয়েছিলেন?
-মাহাদীর হাতে পাঠিয়েছিলাম!
-পাড়ার সেই বলদ ছেলেটা?
-হ্যাঁ!সেটায় তো লিখেছিলাম আর তাকে ভালবাসার কথা বলবনা,অন্তত বন্ধু ভেবে যোগাযোগ রাখতে।সে আমাকে কোনো সুযোগই দেয়নি।
-ওহ শিট!আপনি ওর কাছে চিঠি দিতে গেলেন কেন?ওই বলদটা আমাকে বিরক্ত করত তাই আমি ওর কথা পাত্তাই দেইনি!ওতো সেদিন বারবার বলেছিল এই চিঠিটা ওর না,অন্য কারো---
-তাই,ঈশিতা?
-হ্যাঁ!নিহার হাতে দিলেই তো হত!
এতটুকু বলে ঈশিতা চুপ হয়ে গেল।শাহেদ এবার হেসে ফেলল।ওপাশে পিনপতন নীরবতা।শাহেদ কয়েকবার "হ্যালো ঈশিতা,এই ঈশিতা" বলে ডেকেও সাড়া পেলনা।শাহেদ এবার বলল,"জানো ঈশিতা,আমি এখনো তোমাকে ভুলতে পারিনি।"
-আপনি তাহলে আমার মুখ থেকে সত্যিটা বের করেই ছাড়লেন?আপনি খুব খারাপ,খুব খারাপ!
-তুমি এখনো সেই বাচ্চাদের মত কথা বল!
-চুপ,কোনো কথা বলবেন না।
-আপনি আপনি করা বন্ধ কর তো!আগে বল তুমি আমার সাথে মিথ্যে বললে কেন?
-আপনার মনের খবর জানতে!আমি তো আপনাকে অনেক আগেই চিনেছি,সিফাতের আইডিতে আপনার ছবি দেখে।তখন থেকেই সব প্লান করা।
-তার মানে শায়লা সব জানত?
-অবশ্যই!
-তোমরা মেয়েরা পারো বটে!তো আমার মনের খবর কি জানলে?
-জানিনা।আপনিই বলেন না!
-কাল সকালে দেখা কর,তখন বলব।
.
.
ঈশিতা এত সহজে দেখা করতে রাজি হবে ভাবেনি।সেই রেস্তোরায়,শাহেদ আসার পাঁচ মিনিট পর ঈশিতা আসল।ওর পরনে গোলাপি সালোয়ার কামিজ,চোখে গাঢ় কাজল,খোলা চুল,এতই ভালো লাগছিল যে শাহেদ ওর দিক থেকে চোখ সরাতে পারছিল না।ঈশিতা বসেই বলল,"স্যরি লেট হয়ে গেল!"
-ইটস ওকে।আচ্ছা তুমি কি আমাকে ভালোবাসো ঈশিতা?
-আরে এত তাড়াহুড়ো কিসের!
-তিনটা বছর অপেক্ষা করলাম,আর কত!
ঈশিতা এতক্ষন টেবিলের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল।এবার শাহেদের চোখে চোখ রেখে বলল,"তুমি কি আমাকে এখনো ভালোবাসো?"
-জীবনের প্রথম ভালবাসাকে কি কখনো ভোলা যায়?
-এখন আমাকে খুঁজে না পেলে তো ঠিকই ভুলে যেতে।
-তুমি কি মনে রাখতে?
-জীবনের প্রথম ভালো লাগাকে কি কখনো ভোলা যায়!
-আমাকে তোমার ভালো লাগত?
এ কথায় ঈশিতা ব্যাগ থেকে কতগুলো চিঠি বের করে শাহেদকে দিল।
-এগুলো তো আমার চিঠি!এখনো রেখে দিয়েছ কেন?
-ভুলতে পারিনি যে!
-তাহলে ভালোবাসো আমাকে?
-আমি বলতে পারব না!তুমি বুঝে নাও।
-আজব তো বললে কি হয়!কখনো তো আমার চিঠির উত্তর দাওনি।আজ তাহলে দাও।
-আমি কখনো কাউকে চিঠি লিখিনি তো!পারব না লিখতে।
-যা মনে আসে তাই লিখে দাও।
ঈশিতা একটু ভেবে ব্যাগ থেকে কলম নিয়ে শাহেদের একটা চিঠির পিঠে লিখল,
"মরিচ গাছে সাদা ফুল,
আমার লেখায় অনেক ভুল।
লেখা দেখে হাসবে না,
আমার কথা ভুলবে না!"
শাহেদ এই লেখা পড়ে হেসে ফেলল।ঈশিতার বাচ্চামি স্বভাব এখনও যায়নি।ও নিজেও হাসছে তবু শাহেদকে ধমকাল,"এই খবরদার হাসবে না!"
শাহেদ বলল,"ঠিক আছে হাসব না,তোমার কথাও ভুলব না!"
.
.
লেখা-রাজকন্যা মায়াবতী