Friday, September 1, 2017

গল্পের নামঃ মায়াবী হাসি

গল্পের নামঃ মায়াবী হাসি
.
লেখকঃ নীল অর্দ্র (সিওনির মুগলি)
.
.
হাটছি উদ্দেশ্য একটা কাপড়ের দোকানে।
নিজের জন্য না ছোট বোনটার জন্য।
কালকে রাতে ফোন করে বললো.....
-ভাইয়া  এই বার ঈদে বাড়ি আসবি না?
-না রে আপু তোর কিছু লাগবে?
-ভাইয়া জানিস পাশের বাড়ির মেয়েটা একটা জামা নিয়েছে, আমাকে একটা কিনে দিবি?
বলেই জামার বিবরন দিলো!
মনে হলো তিনের কম হবে না!

>শহুরে থাকি।
গ্রামে মা আর বোনটা থাকে।
বাবা যখন মারা যায় তখন বয়সটা সবে ১০ পেড়িয়ে  বোনটার বয়স ৩।
মানুষের বাসায় কাজ করে লেখাপড়াটা শিখালো মা।

চাকরির খোজে শহুরে।
কিন্তু মামা আর খালু নেই  তাই ভাগ্য হলো না চাকরি। বাধ্য হয়ে টিউশনি।
তাতে যাই পাই বেশির ভাগটাই বাড়িতে পাঠাই।
ছোট বোনটা লেখাপড়া করছে।
এইবার এসএসসি দিবে।
কোন দিন কিছু চায় নি আমার থেকে গতকাল রাতেই প্রথম চেয়েছে।
দোকানে যেতেই অনেক ভিড়।
এই সময় ভিড়টা হওয়াই স্বাভাবিক।
খুব কষ্ট  করে ঠেলে ডুকলাম ভিতরে।
মুন্নির বর্ননা দেওয়া জামাটা চাইলাম।
প্রাইজ ৩০০০+।
পকেটে জামার কিনার টাকাটা হবে কিন্তু  পুরো মাস উপোস।
কোন কথা না ভেবেই কিনে ফেললাম।
পাঠিয়ে দিলাম গ্রামে।
জামাটা পাওয়ার পর খুব খুশি হইছে পাগলিটা।
সুয়ে আছি মেসে।
মেসের বড় ভাই এসে বললো মাসের মেস ভাড়াটা দিতে।
পকেটে মাএ ৩০০ টাকা পড়ে আছে।
এতেই পুরো মাসটা চলতে হবে।
জানি আমি পাড়বো।
মেসে মিলের খরচ লাগে না।
কারন আমি বাইরে খাই।
এতে কিছু টাকা বেচে যায়।
সকালে ৫টাকার বিস্কুট খেলেই চলে এক দুপুর।
দুপুরে রাস্তার ফুটফাত থেকে ভাত কিনে খেলেই চলে যায় রাতে খেলে খেলাম না খেলা খেলাম না। পানি তো আছেই।
ইদানিং ফুটফাতেও দামটা বেড়েছে।
এক প্লেটের জায়গায় আধা হলেই চলে।
সার্টের হাতাটা একটু ছিড়ে গেছে।
সেলাই করলে চলবে আরও কিছু দিন।

ঈদের মার্কেট বলতে কিছু নেই।
ঈদে বাড়ি না যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো...
অধিক ভাড়া।
আগেই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু টিউশনের টাকাটা না পাওয়াতে যাওয়া আর হলো না।
ভেবেছিলাম তবুও যাবো।
টিকেট-কাউন্টারে  গিয়ে ঘুরে আসতে হলো।
নীলু অবশ্য গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।
ও জানে আমিও গ্রামে যাবো।
কিন্তু আমার আর যাওয়া হলো না।
ভাবছি বসে বসে।
ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম নয়টা পার।
সাড়ে ১০টায় মেসের গেট বন্ধ করে দিবে।
পেটটা একটু চিনচিন করছে।
খালি পেটে পানি খাওয়ার ফলেই হয়তো।
মোবাইল বেজে উঠলো...
-হ্যালো (আমি)
-কই তুমি?
-গ্রামে কেন?
নীলু ফোন দিয়েছে তাই মিথ্যাটা বললাম। কারন  ও যদি  জানতো আমার কাছে টাকা নেই।
ও নিজেই দিতে চাইলো।
নেওয়া হলো না বিবেকে বাধলো।
বড়লোকের মেয়ে টাকার কমতি নেই।
ওখান থেকে কিছু আমি নিলেও কিছু যায় আসে না নীলুর।
তবে বিবেকে বাধে খুব।
এখন যদি বলি টাকার কারনে গ্রামে যাই না তাইলে শহুরে চলে আসবে।
এটা আমি চাই না।
এমনিতেই ওর কাছ থেকে যা পেয়েছি এটাই অনেক।
বড্ড বেশিই ভালোবাসে মেয়েটা।
-খাইছো? (নীলু)
-হুমমম খেয়ে একটু গ্রামের পুকুরের পাশে বসলাম।
তুমি কি করছো ?
-কিছু না ভালো লাগছে না আমি তোমার গ্রামে যাবো?
-আরে না না
-কেন?
-ও তুমি বুঝবে না।
-বুঝাই বলো।
-পরে এখন বাই কালকে কথা হবে বাড়ির বাইরে থাকলে সমস্যা হবে এটা গ্রাম।
ফোনটা কেটে দিলাম।
ওকে একবার আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেছিলাম।
মাটির বাসা।
সে কি পাগলামি,ছোটবাচ্চার মত।
নাহ্ এখনো মেসে যেতে হবে না হলে রাস্তায় থাকতে হবে।
রুমে যেতেই আবিদ ভাই ডাক দিলো,
-নীল শোনো
-বলেন ভাই।
-এই মাসের টাকাটাও বাকি?
কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে আছি।
-এই ভাবে আর কত দিন?
যদি মনে করো চলে যেতে পারো।
টাকা মাফ পাবে অর্ধেক।

সরাসরি  না বললেও ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিলো তার মনের কথা।
কোন কথা না বলেই রুমে চলে আসলাম।

সকালে নীলু ফোন দিলো।
-তারাতারি সব কিছু নিয়ে মেস থেতে বের হও আমি বাইরে আছি।
-মানে?
-আগে আসো।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
দৌড়ে বাইরে গেলাম।
নীলু বাইরে দাড়িয়ে আছে রিকশা নিয়ে।
আমাকে দেখেই বললো,,,
-কি হলো কানে কথা যায়  নি কি বললাম?
-কিন্তু!
-তুই যাবি নাকি ঘাড়ে..........
কথাটা পুরো শেষ করতে দিলাম না।
রাগে গেলে এমন করেই বলে নীলু।
মেয়েটা যে কেন এতো বেশি ভালোবাসে বুঝি না।
জিনিস বলতে বেশি কিছু না।
কাপড়-চোপড় ছাড়া কিছুই নেই।
আমাকে দেখেই নীলু রাগে ফুলছে।
জানি আমার অপরাধ দুইটা।
(১) আমি মিথ্যা বলেছি (২) টাকার দরকার মেস থেকে চলে যেতে  বলেছে সেটা ওকে বলি নি।
বলতে বিবেকে বাধে।
কি করবো?
-তুই নাকি গ্রামে? তো এখানে কেন?
নীলু প্রশ্নের উওর না দিয়ে বসে আছি রিকশায়।
উওর নেই আমার কাছে।
দেখলাম আমার কাধে মাথা রেখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
-কালকে সোহানকে ফোন দিয়ে  জানতে পারলাম তুমি গ্রামে যাও নি আর তোমার মেসে সমস্যা হইছে।
আমাকে কেন বলো নি বলো?
-কি বলতাম?
-জানি না কিছু জানি না এখন আমি যা বলবো তাই করবা।
রিকশাটা বড় একটা বাসার নিচে থামলো।
বাসাটা তো নীলুদের না।
তাইলে?
ভিতরে নিয়ে গেলো।
চাবি খুলে বললো এই বাসাতে থাকবা আর মাসে মাসে ভাড়া দিবা।
রান্না আমিই করে দিয়ে যাবো।
-কিন্তু..!..
-হুমমমম প্রতি মাসে ভাড়া দিবা।
এতে সমস্যা কি?
-গ্রামে টাকা পাটাতে হয় তো।
-হুমমমম কত পাঠাও?
-৫,০০০ টাকা
-এইবার থেকে ১০,০০০ পাঠাবা।
-মানে কি?
-হুমমমম বাসা ভাড়া ৪হাজার টাকা।
-নীলু তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
-হ্যা হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি, যখন শুনি তুমি সকালে ৫ টাকা দিয়ে একদুপুর কাটিয়ে দেও। দুপুরে এক প্লেট ভাতের বদলে আধা প্লেট খাও।
আর রাতে পানি।
-দেখো নীলু যার যেটা সামর্থ  সে তো সেটাই করবে তাই না?
-না তুমি করবা না বলেই একটা কাগজ দিলো হাতে।
-এটা কি নীলু?
-কাল থেকে তোমার জয়েন্ট ঠিকানা মত চলে যেও।
মাসে ২২,০০০ দিবে।
বাসায় ১০হাজার  দিবা আর বাসা ভাড়া ৪ হাজার  ৬ হাজার দিয়ে  সারামাস চলবে,আর বাকি ২ দিয়ে ছুটির দিনে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবা যা  লাল চুরি কিনে দিবা প্রতিবার ঘুরতে গেলে।
আমার আমি তোমার কাধে মাথা রেখে বসবো।
কি চলবে?
-কিন্তু?
-তোরে মাইরাই ফেলামু এই চাকরি না করলে।
বলেই আমার বুকে মুখ লুকালো।
-আচ্চা নীল আমাকে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে দিবে না?
করো না বাবু চাকরি টা তোমার জন্য না হলেও তোমার মা আর বোনের জন্য আমার জন্য করো।
সব ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসবো।
দুইবেলা দুই মুঠো খেতে দিতে পারবে না?
ছোট করে উওর দিলাম "পারবো। "
-না পারলেও পারতে হবে। হি হি হি
হাসিটাতে আমাকে পাগল করে জানিনা কি মায়া আছে তাতে।
জানতে চাই না আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখতে চাই ওই হাসিটা।
________________সমাপ্ত
.
.
লেখকের আইডিঃ নীল অর্দ্র(সিওনির মুগলি)

No comments:

Post a Comment