Tuesday, September 17, 2024

ফোনটা কেটে দেওয়ার পর রামিসাকে
আবার ও কল দিলাম।বেশ কিছুক্ষন রিং
হওয়ার পর ও ফোনটা রিসিভ করল।ফোন
রিসিভ করার পরে ও অপাশ থেকে কোন শব্দ
শুনতে পেলাম না।হয়ত মেয়েটা কাদঁছে।
কান্নার কারণে হ্যালো শব্দটাও বলতে
পারছে না।মেয়েটা অনেক সরল ও শান্ত
স্বভারের যার জন্য কিছু হলে অল্পতে কেঁদে
দেয়।মেয়েটাকে আমি কাঁদিয়েছি এখন
আমার চুপ করে থাকলে চলবে না।
.
-তুমি কি আমার সাথে কাল বিকালে
দেখা করতে পারবে।
.
এটা বলার পরে ও সেই দিক থেকে আবারো
চুপ হয়ে আছে।এখন শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
কান্নার আওয়াজ টা শুনতে পাচ্ছি।আস্তে
আস্তে কান্নার আওয়াজ টা বাড়তে লাগল।
আমি আবার ও বললাম।
.
-আমি কাল বিকাল চারটায় তোমার সেই
প্রিয় জায়গাতে তোমার জন্য অপেক্ষা
করব।আর তাড়াতাড়ি আসি ও।
.
এটা বলে ফোনটা কেটে দিলাম।কারণ আর
ফোনটা কানের কাছে ধরে রেখে ওর
কান্না শুনতে চাই না।কারণ বেশিক্ষন ওর
কান্না শুনার মত ক্ষমতা আমার নেই।হয়ত
এটা বলার পর ও চোখের পানি মুছে এক
চিলতি হাসি দিয়েছে।
.
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি।
পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারী
ব্যাক্তি আমার বাবা মারা যাওয়ার পর
পরিবারের সমস্ত দায়বার আমার উপর এসে
পড়ে।বাবার এরকম আকস্মিক মৃত্যু আমি
কোনমতে মেনে নিতে পারছিলাম না।তখন
প্রায় মানসিক ভাবে আমি ভেঙ্গে পড়ি।
তখন রামিসা এসে আমাদের পাশে দাড়ায়।
ও নানাভাবে আমাদের সাহায্য
সহযোগিতা করে।রামিসা সবসময় আমার
পাশে থেকে আমাকে মানসিক ভাবে
ভেঙ্গে পড়া থেকে ভাল করে তুলে।তখন
আমাদের সম্পর্ক প্রায় এক মাসের মত।এই
অবস্থায় যে কেউ হলে আমাকে ছেড়ে চলে
যেত।কিন্তু রামিসা এক মুহুর্তের জন্য ও
আমাকে ছেড়ে যায় নি।দিনের পর দিন
আমার সাথে থেকেছে ওর যতটুকু সম্ভব
সাহায্য করেছে।এতে ও ওর পরিবারের
যথার্থ সমর্থন ছিল।আমি জীবনে ও কল্পনা
করতে পারি নি ওর মত একজন পথ চলার
সঙ্গী পাব।এরপর জীবন চলার তাগিদে
পড়ালেখার পাশাপাশি দুই তিনটা
টিউশনি করতাম।আর আম্মু প্রাইমারি
স্কুলে শিক্ষিকা পদে চাকরি নিলেন।
.
এখন রামিসার সাথে সম্পর্কটা প্রায় দুই
বছরের মত।এই দুই বছরের মধ্যে বেশ প্রতিকূল
অবস্থা আসা সত্বেও মেয়েটা আমার হাত
একটুর জন্য ও ছাড়েনি।এইত সকালে চাকরির
জন্য ইন্টারবিউ দিয়ে সেখানে থেকে
আসতে দেরি হয়ে যাওয়াতে সোজা
বাড়িতে না এসে আজ শেষ বারের মত
টিউশনিতে যাই।কারণ আমার চাকরিটা
হয়ে যায় রামিসার বাবার জন্য।বাড়িতে
আসার মাঝ মধ্যে রামিসা কল দেয়।কাজের
ব্যস্তার কারণে ফোনে যোগাযোগ হলে ও
অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয় নি।এর জন্য ও
আমাকে সকালে দেখা করতে বলে।সকালে
ওরা কি একটা কাজের জন্য আমাকে
অফিসে যেতে বলেছে।তাই আমি ওকে না
বলে দিয়।
আর চাকরির ব্যাপার টাও ওকে জানায়নি
ভেবেছিলাম ওকে সারপ্রাইজ দিব।পরে
ফোন করে ওকে কাল বিকালে দেখা করতে
বলি।আর এক সাথে সারপ্রাইজ টাও দেওয়া
হয়ে যাবে।
.
বিকালে ওকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে
আমি নিজেই দেরি করে ওর সাথে দেখা
করতে গেলাম।নিরিবিলি জায়গা নাকি ওর
ভীষন পছন্দ।পার্কের পাশে ছোট
প্রবাহমান নদীর পারের নিরিবিলি
জায়গা টা হল ওর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
পার্কের সামনে রিক্সা থেকে নেমে
তাড়াতাড়ি হাটতে লাগলাম।কারণ প্রায়
বিশ মিনিটের মত লেট হয়ে যায়।দূর থেকে
ওকে দেখতে পেয়ে চিনতে ভুল করলাম না।
নদীর পাশে ছোট বেঞ্চটিতে ও বসে আছে।
আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম।ও
একদৃষ্টিতে নদীর দিকে চেয়ে আছে।হাল্কা
বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে।ওর মুখে
একধরনের মায়া ফুটে ওঠেছে।বেশ সুন্দর
লাগছে আজ রামিসাকে। সবসময় সুন্দর
লাগে না তা নয়।অনেকে তার প্রিয়
মানুষটিকে পরির সাথে তুলনা করে।আমি
হয়ত বা তা করব না কারণ
ভালবাসার মানুষটি যে কোন কিছুর
অপেক্ষায় বেশি সুন্দর সে যত কাল হোক না
কেন।
.
রামিসা কিছু একটা টের পেয়ে আমার
দিকে তাকিয়ে না দেখার ভান করে আবার
অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।পাগলীটা
কালকের ঘটনার জন্য এখনো আমার উপর রাগ
করে আছে।রাগ না ভাঙানো পর্যন্ত আমার
সাথে কথায় বলবেনা।আমি কিছু না বলে
ওর পাশে গিয়ে বসলাম।বাতাসে ওর উড়ন্ত
চুল গুলো
কানে গুজে দিলাম।ও তখন আমার দিকে
তাকিয়ে ভেংচি কেটে আবার মুখ ফিরিয়ে
নিল।
.
-তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছ।
.
কথাটা না শুনার ভান করে ও কিছু না বলে
এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন
নিরবতার পর আমি আবার ও বললাম।
.
-তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
.
ও এবার অন্যদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আমার
দিকে
আশ্চর্য বোধ হয়ে তাকাল।
.
-আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।ওরা আমাকে
কাল থেকে জয়েন করতে বলেছে।
.
কথাটা শুনা মাত্র ওর রাগি মাখা মুখটা
হাসি মাখা মুখে পরিণত হল।ও বেশ অবাক
হয়ে আমাকে জ্ঞিজেস করল।
.
-সত্যি।
-হ্যা সত্যি।এবার তোমার ও চাকরিতে
জয়েন করার পালা।
-মানে
-মানে খুব শীঘ্রী আম্মুকে আমাদের
বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোমার আব্বুর কাছে
পাঠাব।
.
ও কথাটি শুনে লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ
লুকাল।
এবার শুধু চলার চলার সঙ্গী নয়।ওকে
সারাজীবনের জন্য জীবন সঙ্গীনী করে
নিব।
.
লিখা: রক্তাক্ত লেখক হিমু (মি. নীল)

>> আজ থেকে কেউ আমাকে বউ বললে খবর আছে। আমার কথা কেউ শুনে না। তুমি আমাকে বউ বললে কিন্তু সব কাপড়চোপড় আগুনে জ্বালিয়ে বাহিরে ফেলে দিমু।
>> আর আমি কি বসে বসে আঙুর চুষব।
আমিও তোমার সব সাজবার জিনিস সব কিছু জানালা দিয়ে ফেলে দিমু।
আমার কি রাগ কম নাকি।
>> হি।
রাগ দেখাচ্ছ আমাকে । ভাজা মাছ টা ঠিক মতো খেতে পার না।
আর রাগ দেখাচ্ছ আমাকে ।
>> শালার কেন যে মানুষ বিয়া করে আমি বুঝি না।
এখন থেকে আমাকে যে বলবে ভাই বিয়া কি করমু । শালার আমি তাদের বলব দেখ আমার বউ আমাকে কি শান্তিতে রাখে ।
>> কি হু।
আমি তোমাকে শান্তিতে রাখি নি।
আমার সামনে আমাকে এতো বড় কথা বললা । আমি থাকব না তোমার বাসায়।
আমি চলে যাব আমার বাবার বাড়ি।
যে মানুষ আমাকে কথায় কথায় খোঁচা দেয় আমি শান্তি দেই না। তার বাসায় থেকে কি লাভ আমার ।
>> আরে যাও যাও। তাতে আমার কিছু ইনকাম হবে । তুমি যে খাবার খাও। তাতে আমি রক্ষা পাব। আমার কিছু টাকা বাঁচবে।
>> আমি বেশি খাই।
আমি এমন কি খাই। এখন সব দোষ আমার। তরকারী ভালো না হলে বল তরকারী ভালো হয় নি। বাজারের সব পঁচা সবজি কিনে এনে বল আমাকে রান্না করতে। আমি এখন রান্না করলাম তো।
যখন খাবারের টেবিলে বসলে তখন তোমার চিল্লাচিল্লি শুরু হয়ে যায়।
তরকারী ভালো হয় নি এই ভালো হয় সেই ভালো হয় নি । আর তুমি ঐ ভালো সবজি কিনে আন নি । ভালো সবজি না হলে তরকারী তো ভালো হবে না। এইটা তো তুমি বুঝ না। আচ্ছা এখানে আমার কি দোষ।
>> সবজির খোঁচা দেও কেন?
সবজি ভালো না
আমাকে বলবা। আমি ভালো সবজি কিনে আনব।
এসব বলবা দূরের কথা পঁচা সবজি ঐ রান্না করে পেল। আর আমার উপর তোমার সব রাগ মিটাও।
আমি বুঝি না । সব বুঝি আমি ।
>> এই যে তুমি শুধু আমাকে দোষ।
আমি কিন্তু কেঁদে দিমু। আমার এসব বাজে কথা শুনতে ভালো লাগতাছে না।
আমি রান্না করতে পারি না কতবার বলব।
>> তে বিয়া করছ কেন আমাকে।
বাসায় বসে বসে শুধু টিভির সব নাটক দেখবা।
এইটা তো তোমার বড় কাজ।
আচ্ছা টিভি দেখ ভালো কথা।
রান্নার অনুষ্ঠান দেখতে পার না। তা দেখলে তো রান্না করা শিখতে পার।
>> কেন তুমি আছ না।
আমাকে রান্না করে করে খাওয়াবে। আচ্ছা আমি তোমার বউ না। বউ কে কেউ কি এ রকম করে বকাবকি করে।
>> না মাথায় তুলে নাচানাচি করে। তোমাকে লাস্ট বার বলে দিচ্ছি। আমার কথার উপর কথা বললে তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিমু।
>> মা দেখছেন কত বড় কথা হৃদয় আমাকে বলছে।
>> মা এখানে আসলা কোথায় থেকে।
তার মানে নন্দিনী আমার সাথে এখন মিষ্টি করে কথা বলছে মাকে দেখে।
মা কি আমার পিছনো ছিলা। তার মানে আমি এখন যে কথা গুলা বললাম মা সব কথা শুনে ফেলেছেন। এখন আমার কি হবে।
তাকে বিদায় করতে গিয়ে দেখি এখন আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাব।
>> কি?
বউমা বাসা থেকে বের হবে মানে দরকার হলে তোকে বাসা থেকে বের করে দিমু আমি।
তোর মুখ দিন দিন বেরে যাচ্ছে। তুই নাকি বউ মা কে সব সময় বকাবকি করছ।
আমি শুনতে পেলাম।
>> মা তুমি কিছু জান না।
তোমার বউমা খুব বেশি বেড়ে গেছে।
আমাকে ধমক দেয়।
>> আমার মুখের উপর তুই কথা বলিস।
তাইলে তোকে আমি এখন বাসা থেকে বের করে দেই।
>> মা আপনার ছেলে কে আপনি মাফ করে দিন ।
আর আমার সাথে ঝগড়া করবে না।
>> ঠিক আছে বউমা তোমার কথায় মাফ করে দিলাম। কিন্তু আবার যদি তোমাকে বকাবকি করে আমাকে শুধু বলবা। আমি ওর কান ছিড়ে পেলুম।
.
হৃদয় তো পুরাই অবাক। ঝগড়া প্রথম শুরু করল নন্দিনী। আর এখন নন্দিনী নির্দোষ। হৃদয় ভাবতে লাগলো নন্দিনী কে কি শাস্তি দেওয়া যায়। না নন্দিনী কে শাস্তি দিতে হবে।
.
তার মা কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে নন্দিনী আমার জন্য কফি তৈরী করে নিয়ে আসো তো। খুব খেতে ইচ্ছে করছে।
অফিসের কাজ করতে হবে তো।
আর নন্দিনী বুঝতে পারল না হঠাৎ হৃদয় কফি বলছে কেন। সে তো কখনও কফি খায় না। তাই সে বলতে লাগলো....
>> কফি তো নাই।
>> নাই মানে কি?
তুমি বলবা না কফি নাই। কফি খেতে খেতে আমি এখন রাত জেগে অফিসের কাজ করব। আর তুমি বলছ এখন কফি নাই।তোমার বিচারের এর তুলনা হয় না।
>> তুমি তো কখনও কফি খাও না।
আজ হঠাৎ কফি খাবে কি মনে করে।
>> এই দেখ তুমি এখন একটা মিত্যা কথা বলে ফেললা। আমি খাই না বুঝি তোমাকে কে বলছে।বাসায় কফি নাই ঠিক আছে আমাকে বলবা আমি এনে বাসায় রাখব।কিন্তু খাই না এইটা কি বললা।
>> তুমি তো সত্যি ঐ কোনো দিন বাসায় কফি খাও নি আর কোনো দিন কফি আনো নি।
>> এই খবরদার মিত্যা কথা বলবা না।
মা ও মা।
>> কি রে এতো চেঁচাচ্ছিস কেন?
কি হয়েছে।
>> মা বাসায় কফি নাই আমাকে বলব।
এসব কথা না বলে আমাকে বলছে আমি নাকি কখন কফি খাই না।
>> তো এতো চেঁচানোর কি হলো।
যা বাজার থেকে কফি নিয়ে আয় আমিও খাব।
>> মা এতো রাতে আমি কোথায় যাব।
আমি পারব না মা।
>> তাইলে এতো বকাবকি কেন করস বউ মা কে। বউ মাকে আমি আসার পর থেকে একটুও শান্তি দেস না। বউমা কে এইটা করতে বলস নইলে বা গালাগালি করস।
এইটা তোর বউ। মনে রাখিস কিন্তু।
>> মা আমাকে দোষে যাচ্ছ।
যাও মা যাও শুধু আমাকে দোষ।
আমি কে। আমার কষ্ট কেউ বুঝে না।
.
.
>> তুমি কান্না করতাছ কেন?
কিছু হয়েছে।
(বউ)
>> আমার চোখ দিয়ে পানি আসে তে আমি কিতা করতাম।
>> আরে চোখ দিয়ে পানি আসে মানে।
তুমি কান্না না করলে চোখ দিয়ে পানি আসবে কেন?
>> আমাকে কেউ ভালোবাসে না।
>> কে বলছে তোমাকে কেউ ভালোবাসে না। ভালোবাসি বলেই তো অত্যাচার করি তোমার উপরে তুমি বুঝ না।
>> অত্যাচার করতে করতে আমাকে মেরে ফেললে ভালোবাসবে কারে?
>> তুমি এতো বড় কথা বললা।
যাও তোমার সাথে আমি আর কথা বলব না। আমি একটু মায়ের সামনে দুষ্টামি করলাম আর তুমি আমাকে বলছ তুমি মরে যাবে।
>> না তো বলি নি মুখ দিয়ে চলে এসেছে।
>> দাঁড়াও।
আমি আসছি।
.
>> আরে কি করছ?
এই টা কি হাতে তোমার?
>> সুই।
সুই দিয়া তোমার মুখ সেলাই করব।
>> বাপরে বাপ।
তাইলে আমি কথা বলব কি করে?
>> তোমার কথা বলতে হবে না।
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবা আর শুনবা।
>> বউ মাফ করে দেও না।
>> মাফ করে দিলে কি হবে।
তুমি আবার বলবা।
>> বলব না বউ।
বউ আমি না তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
>> কি এনেছ গো।
দেখাও না।
>> আচ্ছা চোখ টা মুঝ কিছু সময়।
এবার চোখ টা খুল।
.
>> ও মা গো।
মা ভ্যাএএএএএএএ।
শয়তান।
আমাকে ভয় দেখালে কেন?
(তেলাপোকা ছিল)
>> আমি আনি নি তো এখানে ছিল।
>> তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
>> কি শাস্তি?
>> আমাকে খোলে করে ছাদে নিয়ে আকাশে চাঁদ টা দেখাতে হবে।
>> ওজন দেখছ তোমার কত?
>> আমার ওজন মানে।
আবার খোঁচা দিচ্ছ কিন্তু।
>> থাক না।
ওজন বাড়ুক আর নাই বাড়ুক আমার বউ এর জন্য ঐ তো বাড়ছে।।
>> আচ্ছা চল না দেরী হচ্ছে।
>> চল মহারানী।
>> খুলে তুল।
>> তুলছি তো।
জামাই এর খুলে উঠতে এতো সখ।
>> দ্যাত দুষ্ট।
>> হা হা হা।
.
লেখক ও আইডি :- হিমু জুনিয়র

-তুমি যাবে না আমিই বের হয়ে যাব ঘর
থেকে?(আমি)
-তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন?
(ইপ্সিতা)
-কেন বলছি জান না?রোজ সকালে তোমার
প্যানপ্যানানি এত ভাল লাগেনা।
-কি বলতে চাও এখন আমি পুরানো হয়ে
গেছি,আমাকে আর ভাল লাগছে না তাই
না।
-উফফ,তুমি এত বেশি বুঝ কেন বলত?আমি কি
বললাম আর তুমি কি বুঝলে?
-থাক আমি বুঝেছি। আর বুঝাতে হবেনা।
-কি বুঝেছ শুনি বলত...(বলেই হাতটা
বাড়িয়ে দিলাম চায়ের কাপ নিতে)
-অমনি পিছনে সরে দাড়াল।
-কি হল এটা?
-দেখতেই তো পাচ্ছ।
-চা দাও।
-উহু হবে না।
-কেন?
-একটু আগেই যাকে বললে ঘর থেকে বেরিয়ে
যেতে,এখন আবার তার কাছে চা চাইছ কোন
মুখে লজ্জা করেনা?
-নাহ বউয়ের কাছে লজ্জা কিসের?
-নাহ আমি কারও বউ না।(বলেই পিছন
ফিরে বেরিয়ে যেতে চাইল)
-এই শোননা এত রাগ কর কেন বলতো,জানই
তো ঘুম ভেঙে দিলে আমার কেমন রাগ হয়।
-হ্যা জানিতো,আর এজন্যই তো প্রতিদিন
বকা শোনার পরেও নির্লজ্জের মত
তোমাকে চা দিতে আসি।
-এভাবে বলছ কেন?বউকে একটু বকা দিলে
কি অপরাধ হয়?
-জানিনা তবে......একটা নিশ্বাস ফেলল।
-তবে কি?আমি বলছি তো আমার ভুল হয়ে
গেছে মাফ করে দাও।
-আমারই ভুল তোমার হাত ধরে বেরিয়ে
এসে বোধহয় অনেকটাই ভুল করে ফেলেছি।
-সামান্য একটা কারনে তুমি এমন কথা
বলতে পারলে?
-সামান্য কারন কোনটা,প্রতিদিন তোমার
কাছে বকা শোনার পরও চুপ থাকা,একটু
আগেই তো বললে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে।
-আমি তো ভুলবশত বলে ফেলছি।আমি
সত্যিই অনুতপ্ত ওভাবে বলা উচিৎ হয়নি।
-যাই হোক আমি বুঝতে পেরেছি আসলেই
তুমি মুক্তি পেতে চাইছ।
-মানে কি?ইপ্সিতা দেখ তুমি কিন্তু ভুল
বুঝছ।
-আমি মোটেও ভুল বুঝছি না।আসলে
আমাদের সম্পর্কটা অনেক দুর্বল।
-মোটেও না অনেক মজবুত।(বলেই হাতটা
ধরলাম)
-হাত ছাড় বলছি।
-নাহ ছাড়ব না।শক্ত করে ধরে রাখব।
-হ্যাচকা টানে হাত ছাড়িয়ে চলে গেল।
ইপ্সিতা শোন....
আর পিছু ফিরল না।
.
ইপ্সিতা আমার স্ত্রী।ছয়মাস হল বিয়ে
করেছি। এই ছয়মাসে প্রতিটি দিনই সকাল
হলে চা হাতে মেয়েটি চলে আসবে। তবু যদি
আদর করে বলেএই উঠো চা টা খেয়ে নাও।
কিন্তু না টং দোকানের মত বলবে চা গরম
চা গরম।এমনিতেই আমার ঘুম বেশি তারপর
প্রতিদিন ভোরে এভাবে ডেকে তোলে।
আমি মিষ্টি করে একটু রাগ দেখাই যদিও তবু
সকালে ওর মুখ আর ওর হাতের মিষ্টি চা খুব
ভালই লাগে।অন্যসবার মত আমাদের
বিয়েটা পারিবারিকভাবে নয়।কারন
পরিবার বলতে কি বুঝায় আমি জানিনা।
জন্মের পর যখন বুঝতে শিখেছি তখন শত শত
সঙ্গীদের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার
করেছি।এরপর বাস্তবতাটাকে খুব কাছ
থেকে দেখেছি।যদিও এতিমখানায় রুলস
দেওয়া থাকে তবুও খাবারের জন্য সেসব
কিছুই না।কতবার না খেয়ে থেকেছি বলতে
পারব না।এখান থেকেই জীবনযাত্রা শুরু।
এরপর এক হুজুরের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠায়
তিনি আমাকে উচ্চ মাধ্যমিক,উচ্চ শিক্ষার
সুযোগ করে দেন।কথায় আছে যার কেউ নেই
তার আল্লাহ আছে।হয়ত আমারও সহায়
ছিলেন তিনি।যাই হোক ইপ্সিতার সাথে
আমার পরিচয় ভার্সিটি লাইফে।ভীষন
জেদি আর লাজুক স্বভাবের মেয়ে।সবকিছু
জেনে শুনেও মেয়েটি আমার প্রেমে পড়ে।
নাহ মেয়েটি ধনী না মধ্যবিত্ত
পরিবারেরই।এরপর যখন বুঝতে পেরেছি ওর
পরিবার থেকে কখনই মেনে নিবেনা।তখন
এই ভুল পথটাই বেঁছে নিতে হল।পালিয়ে
বিয়ে করেছি।এখন আমি একটা জব করি।ও
সারাদিন বাসায়ই থাকে,জানি বোরিং
লাগে তবুও এটা মেনে নিতে হবে।মেয়েটা
আমার ভীষন খেয়াল রাখে।খাওয়া
দাওয়া,পোশাক,মিতব্যয়ী ইত্যাদি।
প্রতিদিন সকালে ওর হাতের মিষ্টি চা টা
দারুন লাগে তবু মুখে বলিনা।ঘুম ভাঙলেও
শুয়ে থাকি এই মিষ্টি মূহুর্তটার জন্য।
প্রতিদিনই একটু কটু কথা বলি,তবে আজ একটু
বেশিই বলে ফেলেছি মনে হয়।আজ ছুটির
দিন সত্যিই সত্যিই ঘুমে ছিলাম হঠাৎ করে
ডাক দিলে কেমন যেন মেজাজটা খারাপ
হয়ে যাওয়াতে যা ইচ্ছা তাই বলে দিলাম।
মেয়েটা বোধহয় ভীষন রেগে গেছে।
.
দুপুরে কি খাব শুনি?(আমি)
-আমার দিকে একনজর তাকাল তারপর
কাজে মন দিল।
-কি বলছি শুনতে পাচ্ছ না?
-কি করতে হবে আমাকে বল।রান্না করতে
হবে তো ওকে করছি একটু সময় চাই।(হঠাৎ
করে প্রচন্ড জোরে রাগান্বিত হয়ে চিৎকার
করে বলল)
-এই তোমার কি হয়েছে বলতো।সকালের
কথাটি এখনও মনে রেখেছ?
-মনে রাখার মতই তো কথা।
-আমি খুব ভুল করে ফেলেছি জান।আমাকে
এবারের মত মাফ করে দাও।আর কখনও
বলবনা এই দেখ কানে ধরছি।
-মাফ তুমিই আমাকে মাফ করে দাও আমি
তোমাকে এতদিন শুধু বিরক্ত করে এসেছি।
-এভাবে বলনা প্লিজ।আমি সত্যিই অনুতপ্ত।
-একটা কথা বলব
-হুম বল।
-তুমি আরেকটা বিয়ে করে নাও।
-কি বলছ এসব আবোল তাবোল।
-ঠিকই বলছি।কারন আমি যাওয়ার পর
তোমাকে কে দেখবে?
-মানে কি কোথায় যাবে শুনি?
-আমি বাসায় ফিরে যাব।
-কিন্তু কেন?
-জানিনা।
-এত রাগ আমার উপর?
-এখানে রাগের কিছুই নেই।আসলে আমারই
ভাল লাগছে না।
-কিন্তু কেন?
-জানিনা কাল সকালে একটা বাসের
টিকিট কেটে দিতে পারবে?
-আমি স্যরি অনেক স্যরি দেখ কানে ধরছি
তবুও প্লিজ তুমি এভাবে বলনা।
-আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
-ইপ্সিতা তুমি.....
-প্লিজ এখন তুমি এখান থেকে যাও।
বেরিয়েই আসলাম বাসা থেকে।দুপুর হয়ে
গেছে এখন কিছু খাওয়া হয়নি।মেয়েটা এত
কেন রেগে আছে জানিনা।আচ্ছা ও কি
সত্যি সত্যি চলে যাওয়ার কথা বলছে।
তাহলে আমি কি করে থাকব।আমার
প্রতিটা নিশ্বাসে ও জড়িয়ে।
বাইরে থেকে খাবার নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।
তখনও বসে আছে। আমাকে দেখে চোখের
পানি মুছে নিল।
-চল খাবার খেয়ে নিবে।(আমি)
-নাহ,তুমি খেয়ে নাও আমার ক্ষুধা নেই।
-প্লিজ ইপ্সিতা রাগ কর আমার উপর তবুও
না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দিওনা।
-বললাম তো খাবনা।
-আমিও খাবনা।
-তুমি কেন খাবেনা?
-ক্ষুধা নেই।
-আর কিছু বললনা।
এখন রাত নেমেছে।সকাল থেকে দুজনেই না
খেয়ে আছি।বসে আছি দুজন দুদিকে মুখ
করে।সারাটিদিন বোঝানোর চেষ্টা
করলাম ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও।কিন্তু
না হবেনা।
-একটা কথা বলব?(আমি)
-হুম।
-তুমি কি সত্যিই চলে যেতে চাও?
-হ্যা।
-জানতে চাইবনা কেন যেতে চাও।বারন
আমি জানি আমি সত্যিই খারাপ।
-এতে তোমার কোন দোষ নেই।আমারই ভাল
লাগছেনা।
-আর একটু ভাববে না?
-অনেক ভেবেছি।
-একটা সত্যি বলব?
-হুম।
-আমি তোমাকে ভালবাসি ভীষন।
-হয়তবা।
-আমি তোমাকে মিস করব কিনা জানিনা
তবে, প্রতিদিন সকালে ঘুমের ভান করে
শুয়ে থেকে অপেক্ষা করব একটা মিষ্টি
বউয়ের হাতের মিষ্টি চায়ের,মিস করব
অফিস শেষে ক্লান্তি নিয়ে ফিরলে
মিষ্টি একটা বউকে যে বুকে ঝাপিয়ে
পড়ত,মিস করব তাকে যে ভালবেসে সব
ছেড়েছিল,মিস করব তাকে যে ভালবাসায়
আমার কুঁড়েঘরে সুখ এনেছিল।
-নিশ্চুপ।
-কাল সকাল সাতটায় বাস ছাড়বে এই নাও
টিকিট।
-আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকাল
তারপর টিকিটটা নিল।
-ব্যাগ গুছিয়েছ?
-উহু
-আমি হেল্প করব?
-নাহ ঠিক আছে।
-ওকে ঘুমাও এখন কাল ভোরে উঠতে হবে।
-হুম।তুমিও ঘুমাও।
-হ্যা আসছি।
-আসছি মানে কোথায় যাচ্ছ?
-এইতো একটু ছাদে যাব।
-হুম।
বুকের ভিতর শূন্যতা চেপে বসেছে।জানিনা
কেন এত সহজে ওকে চলে দিতে দিচ্ছি।তবুও
কেন জানি মনে হচ্ছে আমার বাধা দেওয়ার
কোন অধিকার নেই এখন।আচ্ছা কতটা ভুল
করলে মানুষ তার প্রিয়জন থেকে দূরে যেতে
চায়,ততটাই ভুল কি আমি করেছি।
রাত দুইটা বাজে। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে
এসেছি।ঘরে ঢুকেই দেখি ঘুমিয়ে গেছে।
এতটা মায়ামুখ না দেখে কেমন করে থাকব
বাকি জীবনটা।জীবনে সবকিছু কেমন
জানি আমার হয়েও হলনা।জন্ম নেয়াটাই
বোধহয় পাপ ছিল।ছোটবেলা থেকেই
প্রিয়জনগুলো একটু একটু করে দূরে চলে
যাচ্ছে।সবকিছু কত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল
তাইনা....।
.
ভোর পাঁচটা ত্রিশ মিনিট...
-এই শুনছ ইপ্সিতা।(আমি)
-ঘুমিয়ে আছে।
-এই উঠো ছয়টা বাজতে চলল।(সেই কখন
থেকে ডেকে চলেছি তবু সাড়া
দিচ্ছেন,গায়ে হাত দিতেও কেন জানি
সংকোচ হচ্ছে)
-হু।(সাড়া দিল)
-উঠো ফ্রেশ হবেনা।বাস ছাড়ার সময় হয়ে
গেছে।
-উঠে চোখ মুখ মুছতে শুরু করল।বি হয়েছে
ডাকছ কেন?
-যাবেনা বাস তো ছেড়ে দিবে একটু পরে।
একেবারে বাচ্চাদের মত বসে বসে চোখ
মুছে চলেছে।
-হু।
-যাও ফ্রেশ হতে যাও।
-যাচ্ছি তো তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এত
ব্যস্ত কেন?
-আরে নাহ।তোমার ভালর জন্যেই তো
বলছি।
-থাক আর কিছু বলতে হবেনা।
-ওকে।
ফ্রেশ হয়ে এসে বসে পড়ল।যেন কোন কিছুই
হয়নি একটু পরে সে চলে যাবে তেমন কোন
ভাবই নেই তার মধ্যে।কাপড় পরে নাও আমি
বাইরে যাচ্ছি।
-এই শোন?
-জ্বি বল।
-চা খাবে?
-অবাক হয়ে তাকালাম মেয়েটির দিকে।
কি বোঝাতে চাইছে।
-কি হল হা করে তাকিয়ে আছ কেন?
-না কিছুনা খাব না।
-তাহলে কাল মিথ্যে বললে কেন আমার
হাতের চা তুমি মিস করবে?
-হ্যা করব।কিন্তু এখন খাবনা।
-কেন?
-মায়া বাড়াতে চাইনা।একটু পরেই তো
হারিয়ে যাবে।
-ও।
বেরিয়ে আসলাম।একটু পরে রুমে গেলাম।
কাপড় পরেছে।তবে বোঝা যাচ্ছে মন দিয়ে
পরেনি।এলোমেলোভাবে পরেছে।
-কি পরেছ এটা?(আমি)
-কেন শাড়ি।
-সে তো দেখতেই পারছি।কিন্তু এলেমেলো
কেন?
-এমনি।
-আচ্ছা দাড়াও।(বলেই কাপড়টা ঠিক করে
দিচ্ছি।আমার দিকে একপলকে তাকিয়ে
আছে)
আচ্ছা এবার হয়ে গেছে চল।
-আমি যাব না।(বলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে
দিল)
-আজিব সবকিছু রেডি আর এখন বলছ
যাবেনা মানে কি?
-আমি ফাজলামো করে বলেছি আমি চলে
যাব আর তুমি সেটা বিশ্বাস করে নিবে।
আমাকে এতটাই ঘৃনা কর।
-ঘৃনা করব কেন?আমি দোষ করেছি বলেই
তো চলে যেতে চেয়েছ এতে অবিশ্বাসের
কিছু ।তাছাড়া যে যেতে চায় তাকে শত
বাধনেও বেধে রাখা যায়না।
-আমি তো যেতে চাইনি।দেখতে
চেয়েছিলাম কতটা ভালবাস আমাকে?
-হয়তবা।
-আমি চলে গেলে তুমি তো থাকতে
পারবেনা।
-কে বলেছে?একাকীত্বে থাকার অভ্যাস
আমার আছে।
-আমি তো কখনই তোমাকে ছেড়ে যাবনা।
(কেঁদে কেঁদে বলল)
-যেতে হবে।
-না।
-হাত ধরে বললাম চলো বাস ছাড়ার সময়
হয়ে গেছে।
-আমি যাব না।উহু উহু উহু
-তাহলে বললে কেন?
-আমি কি জানতাম নাকি তুমি সত্যি
ভাববে।তাছাড়া তুমি আমাকে কাল ঘর
থেকে বেরিয়ে যেতে বললে কেন?
-আমি তার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলাম।
-আমিও চাইছি।
-উহু যেতে হবে।
-আমি বাঁচবনা তোমাকে ছেড়ে গেলে।
(বলেই কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল)
-উহু হবেনা যেতে হবে।
-ভালবাসি বাবু।
-আমি বাসিনা।
-তাহলে কাঁদছ কেন?
-জানিনা।
-চা খাবে?
-না।
-আমি সত্যিই চলে যাব?
-না।
-তাহলে বললে কেন?
-তুমিই তো ছেড়ে যেতে চাইলে।
-যেতে চাইলাম বলে যেতে দিতে হবে।
-জানিনা।চা খাব?
-হুম।(বলেই কান্না চোখে কিচেনে গেল)
পাগলী মেয়ে।আমি তো জানি ও আমাকে
ছেড়ে কখনই যেতে পারবে না।তবুও মিছে
মিছি এই অভিমান।ভালই হল।বুঝতেই
পারছি আজকের চা টা স্পেশাল মিষ্টি
হবে।।।
.
.
লিখা:অন্তহীন শ্রাবন