Tuesday, September 17, 2024

ফোনটা কেটে দেওয়ার পর রামিসাকে
আবার ও কল দিলাম।বেশ কিছুক্ষন রিং
হওয়ার পর ও ফোনটা রিসিভ করল।ফোন
রিসিভ করার পরে ও অপাশ থেকে কোন শব্দ
শুনতে পেলাম না।হয়ত মেয়েটা কাদঁছে।
কান্নার কারণে হ্যালো শব্দটাও বলতে
পারছে না।মেয়েটা অনেক সরল ও শান্ত
স্বভারের যার জন্য কিছু হলে অল্পতে কেঁদে
দেয়।মেয়েটাকে আমি কাঁদিয়েছি এখন
আমার চুপ করে থাকলে চলবে না।
.
-তুমি কি আমার সাথে কাল বিকালে
দেখা করতে পারবে।
.
এটা বলার পরে ও সেই দিক থেকে আবারো
চুপ হয়ে আছে।এখন শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
কান্নার আওয়াজ টা শুনতে পাচ্ছি।আস্তে
আস্তে কান্নার আওয়াজ টা বাড়তে লাগল।
আমি আবার ও বললাম।
.
-আমি কাল বিকাল চারটায় তোমার সেই
প্রিয় জায়গাতে তোমার জন্য অপেক্ষা
করব।আর তাড়াতাড়ি আসি ও।
.
এটা বলে ফোনটা কেটে দিলাম।কারণ আর
ফোনটা কানের কাছে ধরে রেখে ওর
কান্না শুনতে চাই না।কারণ বেশিক্ষন ওর
কান্না শুনার মত ক্ষমতা আমার নেই।হয়ত
এটা বলার পর ও চোখের পানি মুছে এক
চিলতি হাসি দিয়েছে।
.
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি।
পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারী
ব্যাক্তি আমার বাবা মারা যাওয়ার পর
পরিবারের সমস্ত দায়বার আমার উপর এসে
পড়ে।বাবার এরকম আকস্মিক মৃত্যু আমি
কোনমতে মেনে নিতে পারছিলাম না।তখন
প্রায় মানসিক ভাবে আমি ভেঙ্গে পড়ি।
তখন রামিসা এসে আমাদের পাশে দাড়ায়।
ও নানাভাবে আমাদের সাহায্য
সহযোগিতা করে।রামিসা সবসময় আমার
পাশে থেকে আমাকে মানসিক ভাবে
ভেঙ্গে পড়া থেকে ভাল করে তুলে।তখন
আমাদের সম্পর্ক প্রায় এক মাসের মত।এই
অবস্থায় যে কেউ হলে আমাকে ছেড়ে চলে
যেত।কিন্তু রামিসা এক মুহুর্তের জন্য ও
আমাকে ছেড়ে যায় নি।দিনের পর দিন
আমার সাথে থেকেছে ওর যতটুকু সম্ভব
সাহায্য করেছে।এতে ও ওর পরিবারের
যথার্থ সমর্থন ছিল।আমি জীবনে ও কল্পনা
করতে পারি নি ওর মত একজন পথ চলার
সঙ্গী পাব।এরপর জীবন চলার তাগিদে
পড়ালেখার পাশাপাশি দুই তিনটা
টিউশনি করতাম।আর আম্মু প্রাইমারি
স্কুলে শিক্ষিকা পদে চাকরি নিলেন।
.
এখন রামিসার সাথে সম্পর্কটা প্রায় দুই
বছরের মত।এই দুই বছরের মধ্যে বেশ প্রতিকূল
অবস্থা আসা সত্বেও মেয়েটা আমার হাত
একটুর জন্য ও ছাড়েনি।এইত সকালে চাকরির
জন্য ইন্টারবিউ দিয়ে সেখানে থেকে
আসতে দেরি হয়ে যাওয়াতে সোজা
বাড়িতে না এসে আজ শেষ বারের মত
টিউশনিতে যাই।কারণ আমার চাকরিটা
হয়ে যায় রামিসার বাবার জন্য।বাড়িতে
আসার মাঝ মধ্যে রামিসা কল দেয়।কাজের
ব্যস্তার কারণে ফোনে যোগাযোগ হলে ও
অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয় নি।এর জন্য ও
আমাকে সকালে দেখা করতে বলে।সকালে
ওরা কি একটা কাজের জন্য আমাকে
অফিসে যেতে বলেছে।তাই আমি ওকে না
বলে দিয়।
আর চাকরির ব্যাপার টাও ওকে জানায়নি
ভেবেছিলাম ওকে সারপ্রাইজ দিব।পরে
ফোন করে ওকে কাল বিকালে দেখা করতে
বলি।আর এক সাথে সারপ্রাইজ টাও দেওয়া
হয়ে যাবে।
.
বিকালে ওকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে
আমি নিজেই দেরি করে ওর সাথে দেখা
করতে গেলাম।নিরিবিলি জায়গা নাকি ওর
ভীষন পছন্দ।পার্কের পাশে ছোট
প্রবাহমান নদীর পারের নিরিবিলি
জায়গা টা হল ওর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
পার্কের সামনে রিক্সা থেকে নেমে
তাড়াতাড়ি হাটতে লাগলাম।কারণ প্রায়
বিশ মিনিটের মত লেট হয়ে যায়।দূর থেকে
ওকে দেখতে পেয়ে চিনতে ভুল করলাম না।
নদীর পাশে ছোট বেঞ্চটিতে ও বসে আছে।
আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম।ও
একদৃষ্টিতে নদীর দিকে চেয়ে আছে।হাল্কা
বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে।ওর মুখে
একধরনের মায়া ফুটে ওঠেছে।বেশ সুন্দর
লাগছে আজ রামিসাকে। সবসময় সুন্দর
লাগে না তা নয়।অনেকে তার প্রিয়
মানুষটিকে পরির সাথে তুলনা করে।আমি
হয়ত বা তা করব না কারণ
ভালবাসার মানুষটি যে কোন কিছুর
অপেক্ষায় বেশি সুন্দর সে যত কাল হোক না
কেন।
.
রামিসা কিছু একটা টের পেয়ে আমার
দিকে তাকিয়ে না দেখার ভান করে আবার
অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।পাগলীটা
কালকের ঘটনার জন্য এখনো আমার উপর রাগ
করে আছে।রাগ না ভাঙানো পর্যন্ত আমার
সাথে কথায় বলবেনা।আমি কিছু না বলে
ওর পাশে গিয়ে বসলাম।বাতাসে ওর উড়ন্ত
চুল গুলো
কানে গুজে দিলাম।ও তখন আমার দিকে
তাকিয়ে ভেংচি কেটে আবার মুখ ফিরিয়ে
নিল।
.
-তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছ।
.
কথাটা না শুনার ভান করে ও কিছু না বলে
এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন
নিরবতার পর আমি আবার ও বললাম।
.
-তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
.
ও এবার অন্যদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আমার
দিকে
আশ্চর্য বোধ হয়ে তাকাল।
.
-আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।ওরা আমাকে
কাল থেকে জয়েন করতে বলেছে।
.
কথাটা শুনা মাত্র ওর রাগি মাখা মুখটা
হাসি মাখা মুখে পরিণত হল।ও বেশ অবাক
হয়ে আমাকে জ্ঞিজেস করল।
.
-সত্যি।
-হ্যা সত্যি।এবার তোমার ও চাকরিতে
জয়েন করার পালা।
-মানে
-মানে খুব শীঘ্রী আম্মুকে আমাদের
বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোমার আব্বুর কাছে
পাঠাব।
.
ও কথাটি শুনে লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ
লুকাল।
এবার শুধু চলার চলার সঙ্গী নয়।ওকে
সারাজীবনের জন্য জীবন সঙ্গীনী করে
নিব।
.
লিখা: রক্তাক্ত লেখক হিমু (মি. নীল)

No comments:

Post a Comment