Tuesday, September 17, 2024

আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি। কিন্তু সেগুলো কেউ
সহযে পূরণ করতে পারলেও অনেকেই তা পূরণ
করতে যেয়ে ব্যর্থ হয়। সবারই একটা ইচ্ছে
থাকে তার দেখে আসা স্বপ্নগুলো একদিন পূরণ
হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই স্বপ্ন
গুলো হুবহু পূরণ হয়না। আর যাদের হয় তাদের
তো চাঁদের কপাল! ঠিক তেমনি আমারো একটা
ছোট স্বপ্ন ছিলো এক অজানা ছোয়া পাওয়ার।যার
স্পর্শে আমি কঠিন পদার্থ থেকে তরলে পরিণত
হবো। সত্যি কি কঠিন পদার্থ থেকে তরল পদার্থে
পরিণত হওয়া যায়? হুম যায়! তবে তা অনুভূতির মাধ্যমে।
আমার সেই অনুভূতিটার মাধ্যমি ছিলো অজানা ছোয়া।
.
"দোস্ত চিন্তা কইরা দেখ এক বছরের মধ্যে
কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছি আমরা।
আমার কথাটা শুনেই অকিব আর সাদনান আমার দিকে
তাকিয়ে বলে উঠলো, হুম দোস্ত।
"ইশ! এত বড় হওয়ার পরেও আমাদের বাসায় নালিশ
যেতো। হঠাৎ সব কিভাবে পরিবর্তন হয়ে
গেলো দেখলি!
এইবার আমার কথাটা শুনে অকিব বলে উঠলো, মামা!
সব কিছু জবটা পাওয়ার পরেই হইছে। আগে সারাদিন
এক সাথে থাকতাম। একেক জনের মাথায় একেক
রকম আকাইম্মা চিন্তা আসছে। আর সেইগুলাই আমরা
করছি। জবটা পাওয়ার পর আমাদের মাঝে একটা দায়িত্ব
এসে পরেছে। তাই এতো পরিবর্তন।
অকিব এর কথাটা শুনে আমি আর সাদনান দুইজনেই
বলে উঠলাম, ঠিক বলছিস।
.
মাস্টার্সটা শেষ হওয়ার পর বেশিনা মাত্র দুই মাস
বেকার ছিলাম। তারপর একটা প্রাইভেট হাসপাতালে
রেসিপশনের চাকুরীটা পেয়ে যাই। আমার চাকুরী
টা হওয়ার কিছুদিন পরেই সাদনান আর অকিব ও চাকুরী
পেয়ে যায়। একটা সময় এলাকাতে আমরা
আনলিমিটেড ফাজলামি করি গেছি। যদি এলাকাতে নতুন
কোনো লোক আসতো তাহলে সেই ধরনের
মজা নিতাম। আর সমবয়সি বা ছোট কেউ যদি
আমাদের কাছে এসে যদি বলতো, ভাইয়া অমুক
নামের ব্যক্তি কোন বাড়িতে থাকে?
তাহলে আমরা চিনি বা না চিনি জামাল চাচার বাড়ি দেখিয়ে
দিতাম। জামাল চাচা এলাকার মাথা ছিলেন। লোকটা বেশি
কথা বলতো। আর উঠতি বয়সের ছেলেগুলোর
জায়গায় জায়গায় ভুল ধরতো। মাত্রা অতিরিক্ত জ্ঞান
দিতো। ছেলে গুলোর কোনো ভুল দেখলে
বা তার সাথে কোনো তর্ক করলেই সোজা
গার্জিয়ান এর কাছে বলতো,কি মিয়া ছেলেকে কি
আদবকায়দা শিখান নাই। মুরুব্বিদের সাথে কেমনে
কথা বলবে তা শিখান নাই, সারাদিনতো ফাতরামি কইরা
বেড়ায় সেই খবর রাখেন? আরো কত যে
দোষ বের করে করে বলতো লোকটা!
.
ঠিক তেমনি জামাল চাচা সেই ছোট বেলা থেকে
আমাদের গার্জিয়ান এর কাছে কম বিচার দেই নি!
কমপক্ষে সাপ্তায় দুই এক দিন তো বিচার পরতোই।
একটা সময় জিনিসটা আমাদের জন্য ফরজ হয়ে
উঠেছিলো। কিছু বলতে পারতামনা। বাবার সমান বয়স
লোকটার। তবে ছাদের থেকে
পানির পোটলা, পঁচা ডিম আমাদের হাতে এই
পর্যন্ত যে তার মাথায় কতবার পরেছে তা
হিসাব ছাড়া। একটা বছর যাবৎ আর কোনো
নালিশ আসেনা বাসায়। আর আসবেই বা কি
করে সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় আর
তাছাড়া এই একটা বছরে আমাদের মাঝে
সেই আগের চঞ্চলতার স্বভাবটা একদমি কমে
গেছে। ব্যস্ততার কারনে বন্ধের দিনগুলা
ছাড়া একে অপরকে সময় দিতে পারিনা। তবে
প্রতি দিন রাতে ঠিকই তিন জন মিলে ঘন্টা
খানিক আড্ডা দেই। কিন্তু আগের মতো
আজেবাজে চিন্তা ভাবনা এখন আর মাথায়
আসেনা। আসলেই খুব পরিবর্তন হয়ে গেছি।
ইশ! কত বিরক্ত না হয়েছিলো আমাদের
পরিবারে মানুষগুলো আমাদের নিয়ে, তবে
মাইর এই পর্যন্ত কম খাইনি তাদের হাতে।
.
কথাগুলো ভাবা শেষ হতে না হতেই সাদনান বলে
উঠলো, মামা ওই দিন ইসলামপুর হয়ে আসার সময়
পাঞ্জাবি পিছ এর দোকানে ঢুকছিলাম। ইন্ডিয়ান ভালো
কোয়ালিটির পাঞ্জাবি পিছ আসছে। আজকেতো
ফ্রি আছি চল তিন জনে একরকম তিনটা পাঞ্জাবি পিছ
নিয়া আসি। তারপর ওই দিক থেকেই বানাতে দিয়ে
দিবো। এইবার শবেবরাতে তিনজন এক রকমম
পাঞ্জাবি পরবো।
ওর কথাটা শুনেই আমি বলে উঠলাম, আচ্ছা ঠিক আছে
বিকালে চলিস।
আমার মতামত পাওয়ার পর সাদনান অকিবকে বলে
উঠলো, কি মামা বিকেলবেলা রেডি থাইকো
তাইলে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
.
বিকেল তিনটার দিকে আমরা তিনজন ইসলামপুর যাওয়ার
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
.
সেইখানে পৌছানোর পর কয়েকটা দোকান
দেখে তারপর একটা দোকান থেকে তিনটা একই
ডিজাইনের পাঞ্জাবি পিছ নিলাম। পাঞ্জাবি পিছ গুলো
নিয়ে সোজা সেইখানেই এক টেইলর এ বানাতে
দিতে চলে গেলাম।
.
টেইলর এ যেয়ে তিন জন পাঞ্জাবির মাপ-টাপ দিয়ে
যেই টেইলর থেকে বেড় হোলাম। ঠিক তখনি
সরাসরি শিফার সাথে আই কন্টাক্ট হয়ে গেলো।
বিয়ের পর যেনো আগের থেকে খুব সুন্দর
হয়ে গেছে। আগের থেকে কিছুটা মোটাও
হয়েছে।মেয়েটা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রইলো। কেন যেনো বড্ড ইচ্ছে
করছিলো ওর সাথে একটু কথা বলি। কিছু বলার
আগেই অকিব আমার হাতটা টান দিয়ে ওর সামনে
থেকে আমাকে চাপানো চেষ্টা করলো। আমি
যেনো সেই মুহূর্তে পাথর হয়ে গেছিলাম।
অকিবের টানে চুল পরিমানো হিললাম না। যেই
শিফাকে দেখলাম মুখটা খুললো কিছু একটা বলার
জন্য তখনি খেয়াল করলাম পিছন থেকে কেউ
ওকে ডাক দিয়েছে। তাকিয়ে দেখলাম সেই
ব্যাক্তি আর কেউ না শিফার স্বামি। মেয়েটা আমাকে
আর কিছু না বলেই মুখটা বন্ধ করে চলে গেলে।
.
ও চলে যাওয়ার পর সাদনান হুট করে আমাকে বলে
উঠলো, কিরে তুই এমনে দাঁড়ায়া আছোস কেন?
এখনো এই মেয়ের প্রতি তোর দরদ আছে?
.
শিফা আমার বড় মামির বড় ভাইয়ের মেয়ে। মামার
বিয়ের সময় আমরা দুইজনেই খুব ছোট ছিলাম।
আমরা সবাই তখন একি এলাকাতে ছিলাম। মামা গাজীপুর
জায়গাজমি কিনেছিলো বিদায় মামাতো বোনটা হওয়ার
পর সেইখানে চলে যায়। আর আমরা পুরান ঢাকা
ছেড়ে নতুন ঢাকা/ জিঞ্জিরাতে চলে আসি। মামার
শশুর বাড়ির মানুষের সাথে আমাদের আগে
থেকেই অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। সেই
সুবাদে জিঞ্জিরা আসার পরেও প্রতি সাপ্তায় দুই
একবার সেইখানে যাওয়া পরতো। সেইখান
থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়। মেয়েটা পুরান
ঢাকা থাকার পরেও ওর মাঝে পুরান ঢাকার
মেয়েগুলোর মতো কোনো রকম চালচলন
আমি দেখিনি। খুব ভদ্র একটা মেয়ে ছিলো। আমার
মা তো কথায় কথায় ছোট বেলায় বলতো, হারামজাদা
শিফার পা ধুয়া পানি খা। তোর থেকা বয়সে তিন মাসের
ছোট দেখছোস কত গুছায়া থাকে, বাবা-মার সব কথা
শুনে।
আর সেই শিফা আমার মতো ফাতরা একটা ছেলের
প্রেমে পড়েছিলো একটা সময়। আমি যতই ফাতরামি
করতাম না কেনো শিফার কাছে আমি নিষ্পাপ, অবুঝ
ছেলেটাই ছিলাম। সবাই আমার খারাপ দিকটা স্পষ্ট
দেখলেও এই মেয়েটা আমার ভালো দিকটা
খুঁটিয়ে নাটিয়ে ঠিকি দেখে নিয়েছিলো। একটা
বছর রিলেশনটা আমাদের ছিলো। এই এক বছরে
আমরা কোনো দিন আলাদাভাবে দেখা করিনি। ওকে
দেখতে ইচ্ছে হলেই আমি কোনো বাহানা দিয়ে
ওদের বাসায় চলে যেতাম। কিন্তু এই ব্যাপারটা বড় মামি
ধরে ফেলেছিলো। মামি চাইলে পারতো শিফার
সাথে আমার রিলেশনটা অটুট রাখতে। কিন্তু সে তা
করলোনা! মামি তার ভাইকে ভুলভাল কান পড়া দিয়ে
শিফার সেই বছরের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে
দিয়েছিলো। তার পর থেকেই মামি আমাকে একটুও
সহ্য করতে পারতোনা। মামাতো বোনটাকেও
আমার কাছে আসতে দিতোনা। তার দশম শ্রেণি
পড়ুয়া এই মেয়েটাকে আবার জাদু করে ফেলি যদি
আমি! ছেলেদের কষ্ট পেতে নেই। তবে
ভিতরে ভিতরে ওর নাম ঠিকই জপতাম। আর জপবোই
না কেনো অজানা ছোয়ার অনুভূতি টা শিফাই আমার
মাঝে প্রথম সৃষ্টি করেছিলো। কিন্তু সেই
ছোয়াটা আর পাওয়া হই নি। তবে সব কিছু ভুলে
গেছিলাম আর তাছাড়া জীবনটা আগাতে হলে
পুরোনো স্মৃতি গুলো ভুলে থাকায় শ্রেয়। কিন্তু
আজ কেন যেনো সেই স্মৃতিগুলো হঠাৎ ওকে
দেখার পর কড়া নাড়া দিলো। তবে মানতে হবে
স্বামির ডাকে আলাদা শক্তি আছে। তা না হলে তিনটা
বছর পর দেখা হলো ওর সাথে স্বামির সামান্য একটা
ডাকে কিছু না বলে চলে যেতে পারলো!
.
সাদনান আস্তে করে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে
আবার বলে উঠলো, কিরে কিছু বলতাছোস না
কেন?
"আরে দূর কিসের দরদ! কয় দিন পর বাচ্চার মা হয়ে
যাবে এখন দরদ দেখিয়ে লাভ আছে? চল বাসায়
চল।
.
আমি ভালো করেই জানি সাদনান একটু ঘাড়ত্যাড়া
টাইপের ছেলে। এখন যদি এমন করে কথাটা না
বলতাম তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে ও অনেক কথা
বলবে। যা আমি মোটেও শুনতে চাই না। আর শিফার
সাথে আমার সম্পর্কের ব্যাপার টা ওরা শুরু থেকেই
জানতো।
.
এলাকাতে আসার পর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায়
চলে আসলাম। বাসায় যেয়ে দেখি মা নুডুলস রান্না
করেছে। আমি যাওয়ার সাথে সাথেই এক বাটি নুডুলস
এনে আমার সামনে দিলো। মা জানে আমার নুডুলস টা
খুব পছন্দ। আমি বাটিটা আমার হাতে নিয়ে আস্তে
আস্তে খেতে লাগলাম। মা আমার পাশে কিছুক্ষণ
চুপ করে বসে থেকে বলে উঠলো, তোর
বড় মামা ফোন দিছিলো।
"কি বল্লো?
"শোভার জন্য ছেলে দেখেছে।
ছেলেদের শোভাকে পছন্দ হইছে। কাল নাকি
তোর মামা আর মামি ছেলেদের বাসায় যাবে
আমাকে গাজীপুর যেতে বল্লো আমাকে
সাথে করে নিয়ে যাবে।
"কি! শোভার জন্য ছেলে দেখছে! মাত্র
মেয়েটা ভার্সিটিতে উঠলো। কিছুদিন যাক! এতো
তাড়াতাড়ি এসবের কি আছে?
"এত তাড়াতাড়ি করবোনা! কোন ফাতরা পোলার সাথে
জানি পেয়ার মোহাব্বত করা শুরু করছে। যদি উলটা
পালটা কিছু কইরা ফালায় তখন কি হইবো।
.
কথাটা মা একটু চেঁচিয়ে বলে উঠলো। কেন
যেনো ছেলেটাকে ফাতরা বলাতে আমার খুব রাগ
উঠলো। আমি চুপ করে না থেকে বলে
উঠলাম,ছেলে ফাতরা তোমাকে কে বলছে?
"তোর মামি বলছে। তোর মামি ছেলের খোজ
খবর আগেই নিছে।
"তোমার ভাইয়ের বউ এর কাছেতো সব
ছেলেরাই ফাতরা। নিজের আপন ভাগ্নে কে তিনি
ফাতরা প্রমাণ করছে। অন্যের ছেলেকে ফাতরা
প্রমাণ করতে তার কাছে সেকেন্ডের ব্যাপার।
আমার কথাটা শুনে মা আবার বলে উঠলো, ওহ সেই
কথা এখনো মনে আছে?
"এইটা ভুলার মতো কথানা। ঐ মহিলাটা আমার দুর্বল
জায়গায় হাত দিছে। ফাতরা ভাইবা নিজের মেয়েটাকে
ও আমার সামনে ভিড়তে দেয় নাই। যদি তার
মেয়েটাকে কিছু করে ফেলি। এরকম মন মানুষিক
ওয়াল মহিলা তিনি। এই কথা মরার দিন পর্যন্ত মনে
থাকবে আমার। আমার সাথে দুই নজর করছে না,
এখন নিজের মেয়েকে দিয়ে সেই শিক্ষা পাবে।
.
কথাগুলো আমি এক সাথে খুব রাগ নিয়ে বলে
নুডুলস টুকু না খেয়েই বাহিরে বেড় হয়ে গেলাম।
.
রাতে বাসায় ফিরেই আমি আমার রুমে যাওয়ার সাথে
সাথে মা ভাত নিয়ে আমার রুমে আসলো। আমি আর
কোনো কিছু না বলে ভাতটুকু খেয়ে নিয়ে
সোজা ঘুমাতে চলে গেলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তাটা সেরেই কাজে
যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।
.
হাসপাতালে এসেই সোজা রিসিপশনে ঢুকে বসলাম।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আমার কলিগ প্রিতি আপু বলে
উঠলো, ফায়সাল কাল রাতে ২৫৮, ৩২৪, ৪৭২ আরো
বেশ কয়েকটা কেবিনের রোগী রিলিজ হইছে।
এই নেও ফাইল গুলা তুমি চেক করে আমাদের মূল
ফাইলে সব তুলে ফেলো।
.
কথাটা বলেই প্রিতি আপু ফাইলগুলো আমার হাতে
দিয়ে কাজে মন দিলো।প্রিতি আপু আমার দুই
বছরের সিনিয়র। আর তাছাড়া তিনি সেই শুরু থেকেই
আমাকে অনেক হেল্প করে আসছে। ভাগ্যেটা
ভালো প্রিতি আপুর মতো এমন একটা কলিগ
পেয়েছি। আমি আর বসে না থেকে ফাইলগুলো
চেক করে আমাদের মূল ফাইলে সব কিছু তুলতে
লাগলাম।
.
হঠাৎ করে মোবাইলটা বেজে উঠার সাথে সাথে
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম মা ফোন
করেছে। রিসিভ করে বলে উঠলাম, হ্যালো!
" ওই তুই তাড়াতাড়ি গাজীপুর রওনা দে। আমি আর
তোর বাবা রওনা দিতেছি।
মার কথাটা শুনে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। মা
এমন অস্থির হয়ে কেন গাজীপুর যেতে
বল্লো? কারো কিছু হলো নাতো আবার। আমি
আর কিছুনা ভেবে মাকে বলে উঠলাম, এমন করে
কথা বলতেছো কেন? আর কি হইছে?
"শোভা সকাল থেকা ঘরে নাই। ওর কাপড় চোপড়
নিয়া বেড় হইয়া গেছে।
"কাপড় চোপড় নিয়ে বেড় হয়ে গেছে মানে?
"আরে! ওই ছেলের সাথে চইলা গেছে। তুই কথা
না বাড়ায়া তাড়াতাড়ি রওনা দে। আমি আর তোর বাবা বেড়
হইতাছি।
"আচ্ছা
.
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে যেই প্রিতি আপুর
দিকে তাকালাম, খেয়াল করলাম তিনি আগে থেকেই
আমার দিকে তাকায়ি আছে। আমি কিছু বলার আগে তিনি
বলে উঠলেন, কি হইছে?
"আপু আমার মামাতো বোনটাকে নিয়ে খুব সমস্যা
হইছে। কাইন্ডলি আমাকে এখন একটু গাজীপুর
যেতে হবে।
"আজকের দিনটাইতো তাই না?
"হ্যা! আপু।
"আচ্ছা ঠিক আছে যাও আমি এই দিকটা সামলিয়ে নিচ্ছি।
"ধন্যবাদ আপু।
কথাটা বলেই আমি রিসিপশন থেকে খুব দূরত্বে
বের হয়ে গেলাম।
.
গাজীপুর পৌছাতে প্রায় দুপুর ১টার মতো বেজে
গেলো। বাস থেকে নেমে রিকশা নিয়ে একদম
মামাদের বাড়ির গেটের সামনে যেয়ে নামলাম।
নামার সাথে সাথে খেয়াল করলাম ছোট মামা আর বাবা
কি নিয়ে যেনো আলোচনা করতেছে। বাবা আর
মা তাহলে আমার আগেই এসে পরেছে। আমি আর
তাদের সামনে না যেয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলাম।
বাড়ির ভিতর ঢুকার সাথে সাথে দেখলাম বাড়িটা যেনো
মহিলা দিয়ে ভিড় হয়ে গেছে। এরূপ দৃশ্য দেখে
আমি কিছুটা অবাক হলাম। বড় মামার রুমের ভিতর ঢুকে
দেখি বাড়ির সবাই এক রুমে বসে আছে। বড় মামা
খাটের উপর শুয়ে আছে। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে
গেলাম। কি হলো আবার উনার? আমি কাউকে
উদ্দেশ্যে না করে বলে উঠলাম, কি হইছে মামার।
.
আমার কথাটা শুনে ছোট মামি বলে উঠলো,
স্ট্রোক করছে।
ছোট মামির কথাটা শুনে আমার ভিতরটা কেমন
যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো। ভালো করে
তাকিয়ে দেখলাম বড় মামি চুল গুলো
এলোমেলো করে বসে আছে আর আস্তে
আস্তে কি যেনো বলতেছে।নানী মামার
পায়ের সামনে বসে তজবি জপতেছে, আর মা
মামার মাথার সামনে বসে মামার মাথা বুলিয়ে দিচ্ছে আর
কাঁদতেছে।
.
আমি এইবার ছোট মামিকে বলে উঠলাম, হাসপাতাল নিয়া
গেছিলেন?
"হ্যা। এইযে কিছুক্ষণ আগে নিয়ে আসলাম হাসপাতাল
থেকে।
"কি বলছে ডাক্তার?
"তেমন কিছু বলে নাই। যাওয়ার পর চেকাপ করলো
তারপর ঘুমের একটা ইনজেকশন দিয়ে বলছে আট
ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে। শোভাটা যে কেন
এমনটা করলো? এমনটা না করলে ভাইয়া কি আর
স্ট্রোক করতো!
"ছেলেটা এইখানে কই থাকে?
"ভাওয়াল কলেজের ওইদিকে।তোমার ছোট মামা
চিনে ওদের বাসা।
"ওদের বাসায় খোজ খবর নেওয়া হইছে?
"নেওয়ার সুযোগ টা পেলাম কোথায়? ভাইয়াকে
নিয়েই তো দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেছে সকাল
থেকে।
.
আমি আর ছোট মামিকে কিছু জিজ্ঞাস করলাম না।
আস্তে করে বড় মামার সামনে যেয়ে দেখলাম
তার ঠোট দুটো বাকা হয়ে আছে। আর বাম হাতটা
কেমন ঠুঙ্গিয়ে গেছে। তার এরূপ দৃশ্য দেখে
শোভার উপর কেন যেনো মাত্রা অতিরিক্ত রাগ
হতে লাগলো। আমি আর সেইখানে দাঁড়িয়ে না
থেকে সোজা ছোট মামার কাছে চলে গেলাম।
.
ছোট মামার কাছে যেয়েই তাকে বলে উঠলাম,
এখন কি সিদ্ধান্ত নিলেন? কি করতে চাচ্ছেন?
আমার কথাটা শুনে মামা বলে উঠলো, ছেলেদের
বাসায় যাই। ওইখান থেকে দেখি খোজ খবর কিছু
পাই কিনা।
"ছেলেরে কি চিনেন? ছেলে কেমন?
"হুম। ছেলে সুবিধার না। নেশা করে, নেশা করারো
একটা লিমিট আছে,কিন্তু এই ছেলে লিমিট ছাড়া নেশা
করে, নেতা-ফেতাদের পিছনে পিছনে ঘুরে
দুইবার জেলেও গেছে। ছেলে সুবিধার হলে
একটা বার ভেবে দেখতাম সব কিছু।
.
ছোট মামার কথাটা শুনে পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে
গেছিলাম ছেলে আসলেই ভালো না। কারন ছোট
মামাও এই জেনারেশনেরি ছেলে। তিনি বুঝেন
আজ কালকের ছেলেরা একটু চেংড়া হবেই। তবে
মাত্রা অতিরিক্ত আবার ভালোনা। তবে একটা জিনিস
মানতে হবে এই সব ছেলে গুলোর মুখে আলাদা
রকমের মজা আছে এরা খুব সহজেই
মেয়েগুলোকে বলদ বানিয়ে যেমনি খুশি
তেমনেই নাচাতে পারে।
আমি আর কিছু না ভেবে মামাকে বলে উঠলাম,
তাহলে চলেন ছেলেদের বাসায় যাই।
"হুম চল।
মামা কথাটা বলেই বাবাকে বাসায় থাকতে বল্লো
তারপর আমাকে নিয়ে রওনা দিলেন।
.
ছেলেদের বাসায় যাওয়ার পর ছেলের মা বল্লো
তার ছেলে সকালে বেড় হইছে এখনো
আসেনি। মামা ছেলের মাকে সব কিছু খুলে
বল্লো কিন্তু মহিলা বলছিলো তিনি কিছুই জানেনা।
একটা সময় মামা রেগে যেয়ে যেই বল্লো,
মেয়ে যে কাজ করছে পরিবার,আত্মীয়স্
বজনের সবার মন থেকে উঠে গেছে। আর তার
উপর মেয়ের বাবা স্ট্রোক করেছে। এইখানে
আপনার নিজের মেয়ে ভেবে চিন্তা করে
দেখেন তো আপনার মনের অবস্থাটা কি রূপ ধারণ
করে।
.
মামার কথাটা শুনে ভদ্র মহিলা কি ভেবে যেনো
বলে উঠলো, দাড়ান আমি দেখতেছি।
মহিলাটা কথাগুলো ময়মসিংহের ভাষায় বলেছিলো।
বুঝতে আর বাকি রইলোনা ছেলেরা যে সেই
কুইট্টালবাম,খাইয়ালবাম গ্রামের পাবলিক।
.
ছেলের মা কাকে যেনো ফোন দিলো। আর
এদিক দিয়ে আমি শোভার নাম্বারে ফোন দিয়ে
দেখলাম নাম্বার খোলা নাকি। কিন্তু নাহ! ওর নাম্বার
বন্ধ আসছিলো। আমি একটু মহিলার দিকে খেয়াল
করলাম। তিনি ফোনে কাকে যেনো তাদের
আঞ্চলিক ভাষায় জিজ্ঞাস করতেছে, জাবেদ
দেখতো নাহিদ বন্দে আছি নাকি? আমাকে তাড়াতাড়ি
দেখে জানা।
.
মহিলা কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিয়ে মামাকে
বলে উঠলো, মেয়ে মানুষ সামলিয়া রাখতে পারেন
না?
"নিজের বুঝ নিজে বুঝে,সামলিয়ে রাখার আর কি
আছে। আর তাছাড়া আমাদের মেয়ে এমন করতে
পারবে তা জানা ছিলোনা।
.
মামার কথাটা শেষ হতে না হতেই দেখলাম মহিলার
মোবাইলটা বেজে উঠলো। ফোনটা তিনি রিসিভ
করেই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বল্লো, আচ্ছা
ঠিক আছে। খবরদার নাহিদ যেনো বুঝতে না পাড়ে
আমি ওর খবর নিছি।
এতটুক কথা বলেই ফোনটা কেটে দিলো মহিলাটা।
.
তারপর মামার দিকে তাকিয়ে মহিলাটা বলে উঠলো,
নেত্রকোনা আছে। নাহিদ আর আপনাদের
মেয়ে।
"ঠিকানাটা দেন।
"ঠিকানা দিলে ওইখানে যেয়ে খুজতে খুজতে
অনেক দেড়ি হয়ে যাবে। চলেন আমিও যাবো
আপনাদের সাথে।
মহিলাটার এরূপ ব্যবহার দেখে খুব ভালো লাগলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর আড়াইটা বাজে।
.
আমরা আর বেশিক্ষণ দেড়ি না করে
নেত্রকোনার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। রাস্তা
যেনো ফুড়াচ্ছিলোই না।
.
টানা ছয় ঘন্টা পর নেত্রকোনা এসে পৌছালাম। এর
ভিতর দুইবার বাস পালটাতে হয়েছে। রাত ৯টা বেজে
গেছিলো। আমার একটু ভয় লাগছিলো। ছেলেটা
শোভার সাথে উল্টা পালটা কিছু করবেনা তো!
নেত্রকোনা আসার পর গট গট টাইপের এক
ধরনের গাড়িতে উঠলাম।
.
প্রায় আধা ঘন্টা পর একটা বিশাল ফসলি জমির সামনে
এসে গাড়িটা থামলো। গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ
হাটার পর দেখলাম একটা কুঁড়েঘর এর দিকে মহিলাটা
যাচ্ছে। একশ পাওয়ারের একটা হলদে বাল্ব ঘরটার
সামনে ঝুলানো। ঘরটার সামনে এসেই মহিলা
জড়তে এক ধাক্কা দিয়ে ঘরের দরজাটা খুলে
ফেললো।
.
ঘরের ভিতরে যেয়ে দেখি, শোভা এক কোনায়
বসে কাঁদতেছে। আর ছেলেটা ঘুমাচ্ছে
অন্যদিকে। শোভা আমাদের দেখে বসা থেকে
লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ছেলেটার মা
ছেলেটাকে লাথি দিয়ে শোয়া থেকে উঠালো।
একদম শুকনো টাইপের ছেলেটা। চেহারাটা খুব
গ্লেস মারতেছিলো, সবার চোখেই সুন্দর
লাগবে। এই যুগের মেয়েদের ক্রাশ ও বলা
যেতে পারে ছেলেটাকে। এই গ্লেস মারার মূল
উৎসটা পিছনে ছেলেটা দিনে রাতে যে লাল
পৃথিবীর নিচে কতবার আগুন ধরিয়েছে সেইটা আর
কোনো মেয়ে বুঝবেনা। তবে ওর শরীর
আর চোখ দেখে বুঝে গেছিলাম এ ছেলে
আসলেই বড় ধরনের খোর।
.
শোভার দিকে মামা তাকাতেই দেখলাম তার চোখে
যেনো পানি জমে গেছে। আর জমবেই বা না
কেনো এই ছোট মামা বড় মামার থেকেও বেশি
ওকে ভালবাসতো। মামা শোভাকে ডাক দিয়ে বলে
উঠলো, এদিকে আয়।
শোভা মামার কাছে এসেই বলে উঠলো, চাচ্চু
আমার ভুল হয়া গেছে। আমি ভাবছিলাম ও ভালো
হয়ে গেছে। কিন্তু ও এইখানে এসেও আমার
সামনে কি সব জানি খাইছে।
"খারাপ ভালো হইতে অনেক সময় লাগে। নিজের
কপালে নিজে কুঠার মারলি। খুব ভালো করসছিস।
আজকে তোর জন্য তোর বাবা স্ট্রোক করে
নাযাহাল অবস্থা।
"কি!!!
কথাটা বলেই শোভা আবার কেঁদে উঠলো।
.
ছেলেটার মা ও ছেলেটাকে একের পর এক কথা
শোনাতেই থাকলো। আমি আস্তে করে মামা কে
বলে উঠলাম, এখন কি এইখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন?
এমনেই অনেক রাত হয়ে গেছে। বাসায় যেতে
যেতে ভোর হয়ে যাবে।
.
মামা আমার কথাটা শুনে বলে উঠলো, দাড়া মহিলাটার
সাথে কয়েকটা কথা বলে নেই।
তারপর মামা মহিলাটার সামনে যেয়ে কি যেনো
বলতে লাগলো। আমি ছেলেটার দিকে তাকালাম
ছেলেটা নেশার ঘোরে দাঁড়ানো থেকে বসে
পরেছে।
.
মামার মহিলাটার সাথে কথা বলা শেষ হওয়ার পর
শোভাকে নিয়ে আমরা বাসায় যাওয়ার জন্য বেড়
হয়ে গেলাম।
.
নেত্রকোনা থেকে গাজীপুর পৌছাতে ভোর
চারটা বেজে গেলো। যেই জায়গায় কোনো
দিন যাওয়ার নাম,ডাক নেই নি আজকে এই মেয়ের
জন্য সেই জায়গায় যেতে হয়েছে। শরীরের
অবস্থা বারোটা বেজে গেছে এরকম একটা লম্বা
জার্নির ফলে। এখন ঢাকা কি করে যাবো? তার উপর
আটটা বাজে রিসিপশনে থাকতে হবে। কিন্তু আমার
শরীরটা তো ঠিক মতো কাজ করতেছেনা। নাহ!
আজকে কোন মতেই কাজে যাওয়া হবে না।
আজকের দিনটার জন্য যে করেই হোক প্রিতি
আপুকে ম্যানেজ করে নিতে হবে।
.
বাস থেকে নামার সাথে সাথে মামা শোভার ব্যাগ টা
নিয়ে একটা রিকশাতে উঠলো। আমি আর শোভা
আরেকটা রিকশাতে উঠে মামাদের বাসায় যাওয়ার জন্য
আবার রওনা হলাম। হুট করে কান্না জড়িতো কন্ঠে
শোভা আমাকে বলে উঠলো, বাবার কিছু হবেনা
তো?
আমি একটু রাগ নিয়েই বলে উঠলাম,জানিনা!
মেয়েটা একটু ন্যাকা শুরে বলে উঠলো, এমন
করে কথা বলতাছো কেন?
"কোনো কথা বলবিনা চুপ।
শোভা আর কিছু না বলে ফুফিয়ে সাইলেন্ট মুডে
কান্না করতে লাগলো।
.
বাসার সামনে আসার পর রিকশা থেকে নেমে
মেইন গেট নক করার সাথে সাথে মা এসে দরজা
খুললো। শোভা মাকে দেখেই সোজা যেয়ে
জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলতে
লাগলো, ফুপ্পি তুমিও সবার মতো করে আমার উপর
রাগ দেখাবা নাতো?
.
মা ও ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, কেন
করতে গেলি এই রকম কাজটা মা!
"আমার অনেক বড় ভুল হয়া গেছে। তুমি আমার উপর
রাগ দেখিয়ো না অত্যন্ত পক্ষে। সবাই যদি রাগ
দেখায় তাহলে আমার কি হবে?
"আচ্ছা চল এখন ঘুমাবি।
"বাবা ঠিক আছেতো ফুপ্পি?
"হুম ঠিক আছে। কিছুক্ষণ আগে ঘুমের টেবলেট
খায়িয়ে দিছি এখন ঘুমাইছে।
.
মা আর কিছুনা বলে শোভাকে নিয়ে শোভার রুমে
যেই ঢুকতে যাবে ঠিক তখনি বড় মামী রুম থেকে
বেড় হয়ে আসলো, যেই মামী শোভাকে কিছু
বলতে যাবে মা তখনি মামীকে থামিয়ে দিয়ে বলে
উঠলো, যা বলবি সকালে বলিস এখন মেয়েটারে
ঘুমাতে দে। কথাটা বলেই মা শোভাকে রুমে
নিয়ে চলে গেলো।
আসলেই আমার মা শোভাটাকে খুব বেশি ভালবাসে।
এই রকম একটা কাজ করার পরেও ওর প্রতি মা'র
কোনো অভিযোগ নাই।
.
আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে মুখ, হাত, পা ধুয়ে
নানীর রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম।
.
সকাল ৯.০০ বাজতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। আর
ভাঙ্গবেই বা না কেনো। পাশের রুমে তমুল
বেগে ঝড় হচ্ছিলো শোভার উপর দিয়ে। আমি
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম প্রিতি আপুর ৪
ফোন এসেছিলো। আমি আর কিছু না ভেবে প্রিতি
আপু কে ফোন দিয়ে সমস্ত ব্যাপারটা খুলে
বল্লাম। আর বল্লাম আগামীকাল যেইভাবেই হোক
আমি কাজে আসবোই। তিনি যেনো আজকের
দিনটা একটু ম্যানেজ করে নেয়।
.
তারপর মোবাইলটা রেখে ফ্রেশ হয়ে ছোট
মামিকে ডাক দিয়ে নাস্তা দিতে বল্লাম।
.
নাস্তাটা খাওয়া শেষে বড় মামার রুমের সামনে
যেয়ে দেখি শোভার নানা আর মামা এসেছে। বাড়ির
সবাই বড় মামার রুমে বসা।শোভা মা'র সাথে ঘেষে
বসে আছে। বড় মামি হুট করে শুর টেনে বলে
উঠলো, হায়রে শোভারে! নিজের কপালে
নিজে কালো দাগ বসিয়ে দিলি! এলাকার সবাই তোর
এই খবর জেনে গেছে। যেই ছেলেরা
তোকে পছন্দ করে গেছে তাড়াও তোর খবর
পেয়ে গেছে। এখন কি হবে তোর?
.
সবার মুখে কোনো কথা নেই। বড় মামার দিকে
তাকিয়ে দেখলাম স্ট্রোক করাতে তার বাম হাতটা
আর ঠোট টাতে খুব ক্ষতি হয়েছে। তিনি নির্বাক
হয়ে শোভার দিকে তাকিয়ে আছে। মামি একের
পর এক কথা বলেই যাচ্ছিলো। বড় মামীকে
থামিয়ে তার বাবা/শোভার নানা বলে উঠলো, একটা
অঘটন যখন ঘটিয়ে ফেলছে মেয়েটা এখন তো
আর চেঁচালেও সব ঠিক হয়ে যাবেনা। আর তাছাড়া
এখন তো আর কেউ জেনে শুনে ওকে বিয়ে
করতে চাইবেনা। লুকিয়ে বিয়ে দিলেও যখন
স্বামী জানতে পারবে তখন কি হবে?
.
কথাটা বলেই শোভার নানা একটু থামলো। তারপর
আবার বলে উঠলো, আমার এক ভাতিজার ছেলে
আছে। ছেলের সয় সম্পত্তি ভালো। বিয়েও
হয়েছিলো এক বাচ্চা আছে। বউ সুবিধার না দেখে
ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এখন ছেলেরে বিয়ে
দিবে আবার বলতাছে। দেখি শোভার কথা বলুম নি।
আমি বললে তারা রাজি না হয়ে পারবেনা।
.
বুড়ার মুখে এরূপ কথাটা শুনার পর কেন যেনো
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। ঠিক তখনি মা
আর চুপ করে না থেকে বলে উঠলো, তালই
এইটা কেমন কথা বলতাছেন? এমন জায়গায় কেন
বিয়ে দিবো আমাদের মেয়েকে? এমন জায়গায়
আমার ভাতিজীর বিয়ে হতে দিবোনা।
.
মার কথাটা শুনে শোভার নানা চটে গিয়ে বলে
উঠলো, আমার নাতীন রে যেইখানে ভালো
হইবো ওইখানেই বিয়ে দিমু। তোমার এইখানে নাক
গলাইতে হবেনা মাথারী।
.
শোভার নানার এরকম ঝাল কথা শুনে মা ও কয়েকটা
কথা শুনিয়ে দিলো তাকে। হুট করে বড় মামা
আস্তে আস্তে মাকে বলে উঠলো, দেখ
বোন শোভার নানা যা করবে সেইটা শোভার
ভালোর জন্যেই করবে। তুই শান্ত হ।
.
মামার কথা শুনে মা তেলে বেগুনে চটে গিয়ে
বলে উঠলো, এমন জায়গায় আমি ওর বিয়ে হইতে
দিবো না। দরকার পরলে আজকের মধ্যে আমার
ছেলেরে দিয়া তোর মেয়েকে আমি নিয়া
যাবো। তবুও জেনে শুনে আমার ভাতিজীর এমন
জায়গায় বিয়ে হতে দিবোনা।
.
আমি মা'র কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বল্লোটা
কি মা এইটা! মা'র মুখে সবাই কথাটা শোনার পর আমার
দিকে তাকালো। আমি শুধু বড় মামীর চোখের
দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই মহিলা তার রূপবতী
মেয়েকে আমার সামনে ভিড়তে দেই নি যদি শিফার
মতো তার মেয়েকেও আমার খাচায় বন্ধি করে
ফেলি। আর আজ তার মেয়েকে এক বাচ্চার
বাপের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে আর সেইখান
থেকে আমার মা তার মেয়েকে মুক্তি দিতে আমার
সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেছে।
.
মামীর চোখেটাও যেনো এখন বলছিলো
শোভার সাথে আমার বিয়েটা হোক। সবাই চাচ্ছিলো
এমনটা হোক। আমার মন টাও চাচ্ছিলো এমনটাই
হোক। কারন আমি চাই বড় মামীর মাথাটা এই
সুযোগে আমার কাছে নিচু হয়ে যাক। তিনি আমার
মনের ভিতর কম বড় দাগ দেয়নি!
.
এইবার মা আমাকে বলে উঠলো, কিরে তুই আমার
কথা রাখবিনা?
.
মা'র কথাটা শুনে আমি মুখে কিছু না বলে মাথাটা হিলিয়ে
হ্যা সূচক ইশারা দিলাম।
.
আমার এরূপ সিদ্ধান্তে বড় মামা যে খুশি হয়েছে তা
আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
.
আমি বড় মামার দিক থেকে চোখটা ফিরিয়ে নিয়ে
শোভার দিকে তাকালাম। শোভা মা'র কাধে মাথা
রেখেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জানিনা
আমার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কতটা সঠিক হয়েছে। কিন্তু
এটা জানি শোভা আমার চোখে আগে যেমন
ছিলো এখনো তেমনি থাকবে। তবে একটা জিনিস
মানতে হবে শোভাকে মা মাথায় তুলে রাখবে।
.
মামাদের বাড়িতে যেনো এক শান্তির ছোয়া
নেমে এসে পড়েছে ।গতকাল যেই বাড়িটাতে
এই সময়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছিলো।
আজ সেই বাড়িতে আনন্দ উল্লাসে মেতে
উঠেছে। বিষয়টা কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছেনা!
আসলেই অদ্ভুত!
.
দুপুরের খাওয়া শেষে দেখলাম ছোট মামা আর
শোভার নানা বাজারে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো।
ব্যাপারটা কেমন যেনো এলোমেলো
লাগছিলো আমার কাছে। এমন অবেলায় বাজারে
কেন যাচ্ছে?
আমি আর কিছুনা ভেবে নানীর রুমে চলে
গেলাম। ভাবতে লাগলাম রৌদ্রটা কমলেই ঢাকার
উদ্দেশ্যে রওনা হবো। এখন এক চোট ঘুমিয়ে
নেওয়া যাক।
.
ঘন্টা খানিক পর ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে
বাহিরে বেড় হয়ে দেখি সবাই কেমন জানি ব্যস্ত
হয়ে পড়েছে। রান্নাঘর থেকে স্বুঘ্রাণ ভেসে
নাকে আসতেছিলো। ব্যাপার টা আমি বুঝলাম না।
মাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, কি হইতাছে বাসায়?
সবাই এতো ব্যস্ত কেন?
"ব্যস্ত হবেনা! এশার নামাজের পরেইতো কাজী
এসে পরবে।
"কাজী! কাজী কেন?
"বল্লাম না তখন আজকেই তোর সাথে শোভাকে
বিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে যাবো।
.
মা'র কথাটা শুনে কি বলবো বুঝতে পারতেছিনা।
আজকেই কেন বিয়ে! আমিতো ভাবছিলাম মা তখন
কথায় কথায় মামাকে বলে ফেলেছিলো যে আমার
ছেলেকে দিয়ে তোর মেয়েকে আজকেই
নিয়ে যাবো। তাই বলে কি আজকেই বিয়ে হতে
হবে?
.
আমি চুপ করে না থেকে মাকে খুব শান্ত হয়ে
বলে উঠলাম, জিনিসটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছেনা?
"সমস্যা কি?
"ঈদের পর করলে হতো না কাজটা?
"একিতো। ঈদের পর আমাদের বাসায় ছোট করে
অনুষ্ঠান করে ফেলবো।
.
আমি আর একটা কথাও বল্লাম না। আমি জানি মা'র সাথে
এই বিষয় নিয়ে কথা বল্লে আর কাজ হবেনা। তারপর
কি মনে করে যেনো বাহিরে বেড় হয়ে
গেলাম।
.
এশার নামাজের আগেই বাড়ির সবাই সবকিছু ঘুছিয়ে
কাজীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
এতক্ষণে আমার বড় আপু আর দুলাভাই,শোভার
ছোট মামা আরো বেশ কিছু লোক বাড়িতে এসে
পড়েছিলো। খেয়াল করলাম আপু শোভার সাথে
হেসে হেসে কি বলছে যেনো। আর শোভা
কিছুটা হাসতে চেষ্ঠা করতেছিলো।
.
এশার নামাজের পর কাজী এসে বিয়ের কাজটা শেষ
করে ফেল্লো। তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্বটা শেষ
করে শোভার নানার বাড়ির মানুষগুলো বাড়িতে যাওয়ার
জন্য আগে বেড় হয়ে গেলো।
.
রাতের সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। এই
অবস্থায় সি.এন.জি পাওয়াটাও খুব কষ্টের। আর তাছাড়া
শোভার সব জিনিসপত্র নিয়ে বাসে করে যাওয়াটা
সম্ভবনা। এমন অবস্থায় বড় মামা আর মামী বলে
উঠলো, আজকের রাতটা এইখানেই যেনো
থেকে যাই। কিন্তু আমার যে করেই হোক কাল
ঠিক সময়ে রিসিপশনে থাকতেই হবে। আমি বিষয়টা
সবাইকে ঠিক মতো বুঝালাম।আমার কথাটা শুনার পর বাবা
আমাকে একাই চলে যেতে বললো আর
বললো কাল তারা সকালে চলে আসবে। তারপর বাড়ি
থেকে যেই বেড় হতে যাবো তখনি বড় মামী
আমাকে ডাক দিয়ে বল্লো, সাবধানে যাস।
"ঠিক আছে।
ইশ! মহিলা শাশুড়ি সাজলো! কতগুলা বছর পর মহিলাটা
আজকে আমার একটু টেইক কেয়ার করলো।
.
সকালে প্রিতি আপুর আগেই হাসপাতালে এসে
রিসিপশনে যেয়ে বসলাম। গতকাল ঢাকা পৌছাতে
রাতের ২.০০ টা বেজে গেছিলো। আমি যে
আজকে প্রিতি আপুর আগেই হাসপাতালে এসেছি
সেটাই অনেক কিছু।
.
কিছুক্ষণ পর প্রিতি আপু চলে আসলো। আমাকে
দেখেই ছোট একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,সব
কিছু কি ঠিক ঠাক এখন?
"জ্বি । আর কোনো সমস্যা নেই।
"যাক ভালো।
আমি আর কিছু বল্লামনা। তারপর ডেস্কে থাকা ফাইল
গুলো নিয়ে দেখতে লাগলাম।
.
কাজ শেষ করে বাসায় পৌছাতে রাতের ৯ টা বেজে
গেছে। বাসায় এসে দেখি মা আর শোভা টিভি
দেখতেছে। আমি আস্তে করে আমার রুমে
যেয়ে ফ্যানটা ছেড়ে বিছানায় বসে শার্টের বুতাম
গুলো খুলতে লাগলাম।
.
শার্টটা খুলে যেই দরজার পিছনের স্টানে ঝুলাতে
যাবো তখনি দেখলাম শোভা দরজার সামনে
দাঁড়ানো। আমি ওকে দেখেই বলে উঠলাম, কি
হইছে?
"কই কিছু না তো।
.
শার্টটা স্টানে রাখতে রাখতে আমি শোভাকে
বলে উঠলাম, কিছু বলবি?
"না।
আমি আর কিছু ওকে জিজ্ঞাস না করে ওয়ারড্রব এর
সামনে যেয়ে যেই প্রথম ডয়ারটা খুলে আমার
টাউজার আর টি শার্ট টা বেড় করতে যাবো তখনি
শোভা পিছন থেকে আমাকে বলে উঠলো,
উপরের দুই ডয়ারে আমার কাপড় চোপড় রাখছি।
তোমার গুলো নিচের দুই ডয়ারে রাখছে ফুপ্পি।
.
আমি আর প্রথম ডয়ারটা খুললাম না। নিচের ডয়ার খুলে
টাউজার আর টি শার্টটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।
.
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ
করে মা'র রুমে গেলাম। মা আমাকে দেখেই
বলে উঠলো, ভাত দিবো?
"না। একটু বাহিরে যাবো। তোমরা কখন আসছো?
"দুপুর ১২ টার দিকেই আইসা পরছি।
"ওহ। আচ্ছা বাহিরের গেট টা লাগিয়ে দেও।
কথাটা বলেই বাহিরে বেড় হয়ে গেলাম।
.
বাহিরে বেড় হয়েই রাস্তার মোড়ের চায়ের
দোকানে যেয়ে দেখলাম সাদনান আর অকিব
বসে আছে। চা ওয়ালা মামাকে তিন কাপ চা দিতে
বলে আমি ওদের পাশে বসলাম।
.
আমাকে দেখেই ওরা বলে উঠলো,আসছোস
তাহলে তুই?
"হুম আসলামতো।
আমার দিকে তাকিয়ে অকিব বলে উঠলো,
কোনো সমস্যা হইছে নাকি?
"দাড়া চা খেতে খেতে সব বলি।
.
দোকানদার চা দেওয়ার পর সাদনান আর অকিবকে
কথাগুলো সব খুলে বল্লাম। আর ওদের না বলেও
কোনো উপায় নেই। আমার শোভার বিয়ের কথাটা
শোনার পর শালারা মশকারা শুরু করে দিলো। প্রথমে
সাদনান বলে উঠলো, মামা বিয়া হয়া গেছে আর তুমি
একটুও এক্সাইটেড না। মামাতো বোন হইছে
তো কি হইছে? আমার ছোট মামাতো বোন
থাকলে আমি যে কি করতাম!
"দেখ মামা ওকে আমি কখনো এমন চোখে
দেখি নাই।
"তাইলে বিয়া করলি কেন?
"ওর অন্য যেই জায়গায় বিয়ে হতো না কেনো,
স্বামী বাড়ির মানুষের সাথে একটু কথা কাটাকাটি
হলেই, ওর সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়টা নিয়ে খোটা
দিবে, আর দ্বিতীয়তো মামীর জন্য। তার
অহংকারটা কমিয়ে দিলাম। ফাতরা ছেলের সাথেই শেষ
পর্যন্ত তার নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে হলো।
.
আমার কথাটা শুনে সাদনান বলে উঠলো, হুম বুঝলাম।
আজকেতো তোমরা প্রথম একসাথে,এক বিছানায়
রাতে ঘুমাবা।মানে আজকেতো তোমাদের বাসর
রাত। প্লান কি?
"তুই ব্যাটা জীবনেও ভালো হবিনা।
এইবার সাদনান আর অকিব দুইজনেই হেসে উঠলো
আমার কথাটা শুনে।
.
সাদনান চুপ হয়ে যাওয়ার পর অকিব বলা শুরু করলো,
দোস্ত বিয়া করছোস এখন তো আমাদের আর
সময় দিতে পারবি না।
"আমি এমনটা বলছি?
"আরে ব্যাটা হইছে, বউ যখন ফোন দিয়ে বলবে,
বাবু কই তুমি! একটু বাসায় আসো। তোমাকে মজা
দিবো অনেকগুলা। এই মজার কথা শুনে তুমি ফায়সাল
ভাই-ব্রাদার ফালায়া উড়াল দিবা।
.
আমি জানি এখন শালারা মজা নিতেই থাকবে। আমি যেই
ওদের কিছু বলতে যাবো তখনি মোবাইলটা
বেজে উঠলো। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে
দেখি মা ফোন করেছে বাসা থেকে। আমি
ফোন টা ধরার সাথে সাথে ওই পাশ থেকে শোভা
বলে উঠলো, ফুপ্পি তোমাকে বাসায় আসতে
বলছে।
"আসতাছি।
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে যেই ওদের দিকে
তাকালাম তখনি ওরা হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
দেখছো বলতে না বলতে প্রথম দিনেই ফোন
দিয়ে দিছে। যাও যাও বউয়ের কাছে যাও!
ওদের কথাটা শুনে খুব রাগ উঠলো। আমি ওদের
কে আর কিছু না বলেই চায়ের বিলটা দিয়ে বের
হয়ে গেলাম।
.
বাসায় আসার পর দেখি বাবা কাজ থেকে এসে
পরেছে। মা ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে সবার
জন্য ভাত বাড়তে বাড়তে আমাকে বলে উঠলো,
রাতে বাহিরে বেড় হওয়ার অভ্যাসটা বন্ধ কর এখন
থেকে।
.
মা'র কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। কিছু
বলতেও পারতেছিনা বাবা সামনে। উনি না থাকলে কিছু
একটা বলতাম।
.
ভাত বাড়া শেষে মা শোভার পাশে বসে ওকে
তরকারী দিতে দিতে আমাকে আবার বলে
উঠলো, এখন নতুন করে আরেকটা দায়িত্ব বাড়ছে
তোর, সেই দিকটাও কিন্তু এখন খেয়াল রাখতে
হবে।
.
কথাটা মা বলার পর শোভার দিকে খেয়াল করে
দেখলাম শোভা ভাতের লোকমাটা মুখে নেওয়ার
সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়েছে। আমি ওর দিক
থেকে চোখটা ফিরিয়ে নিয়ে তরকারীর বাটি
থেকে চামচটা উঠিয়ে দুই চামচ ডাল আমার প্লেটে
নিলাম।
.
খাওয়ার এক পর্যায়ে দেখলাম মা শোভার ডান হাতের
চুড়িটা টান দিয়ে হাতের উপরে উঠিয়ে দিয়ে বলে
উঠলো, চুড়িটাই সামলাতে পারতেছিস না। বার বার
হাতের তালুর কাছে এসে পড়তাছে। আমার এই
সংসারটা সামলাবি কি করে?
মা'র কথাটা শুনে শোভা ওর চোখের সামনে আসা
চুল গুলো কানের চিপায় গুজে মাথাটা একটু নিচু করে
ভাত গুলো আঙ্গুল দিয়ে নাড়াতে লাগলো।
.
মা ওর এরূপ দৃশ্য দেখে একটু আওয়াজ করে
হেসে বল্লো, কিরে চুপ করে বসে আছিস
কেন? তাড়াতাড়ি খাঁ।
.
খাওয়া শেষে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে
যেয়ে দেখি বিছানার চাঁদরটা পালটিয়েছে। আমি
সেই দিকটাতে আর লক্ষ্য না করে বিছানাতে
লম্বানে যেই গাঁ এলিয়ে দিতে যাবো ঠিক তখনি
শোভা রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।
.
আমি আর লম্বানে না শুয়ে বালিশটা নিয়ে পাথালি করে
বিছানার এক প্রান্তে শুয়ে পড়লাম। ঠিক কিছুক্ষণ পর
শোভাও খাটের অপর প্রান্তে শুয়ে পড়লো।
আচ্ছা! আমি কি শোভাকে বড় মামীর উপর রাগ
নিয়ে বিয়েটা করলাম? নাহ! তার উপর আমার প্রচন্ড রাগ
আছে। তবে সেই রাগটা আমার উপর দিয়ে। ভিতর
দিয়েনা! মামীর মাথাটাতো নিচু হয়ে গেছিলো
তখনি যখন শোভা নাহিদর সাথে ভেগে গেছিলো।
তাহলে কি ওর সুবিধার জন্য আমি ওকে বিয়ে করলাম?
কি জানি!
.
আমি আর কিছুনা ভেবে চোখ দুটো বুজে ঘুমাবার
চেষ্টা করতে লাগলাম।
.
একের পর এক দিন চলে গেতে লাগলো।
বিয়ের আগে যেমনটা ছিলাম এখনো ঠিক তেমনি
আছি। তবে রাতে আড্ডা দেওয়ার পরিমানটা একটু
বেড়ে গেছে। এই নিয়ে বাবা কিছু না বল্লেও মা
প্রতিদিন কথা শুনায়। ছেলেরা নতুন বিয়ে করলে নাকি
ঘর ছাড়া কিছু বুঝেনা। বাহিরে বেড় হলেই নাকি কখন
বাসায় যাবে, কখন বউটাকে দেখবে সারাক্ষণ এই
চিন্তায় থাকে। কিন্তু আমি ঠিক উল্টো টা।আসলে
শোভার প্রতি আমার তেমন কোনো ফিলিংস কাজ
করেনা। এই নিয়ে মেয়েটার কোনো
অভিযোগ হয়তো নেই। আর থাকারো কথানা।
তবে মা শোভাকে পেয়ে খুব খুশিতে আছে তা
দেখলেই বুঝা যায়।
.
আজকে বাসায় ফিরতে প্রতিদিনের তুলনায় একটু
বেশিই দেড়ি হয়ে গেলো। কাজ থেকে
এসেই পাঞ্জাবিটা আনতে ইসলামপুর গেছিলাম।
সেইখানে যেয়ে কলেজের কিছু বন্ধুদের
সাথে দেখা। ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে
কখন যে সাড়ে বারোটা বেজে গেছিলো।
সেই খেয়ালটা আমার ছিলোনা। বাসায় এসে দরজাটা
নক করার সাথে সাথে দেখলাম প্রতিদিনের মতো
আজকেও শোভা দরজাটা খুললো। দরজাটা খুলেই
কেমন ভাবে যেনো আমার দিকে তাকালো
মেয়েটা। চোখ গুলো কিছুটা লাল দেখাচ্ছিলো
ওর।
.
আমি ঘরের ভিতর ঢুকে দেখলাম মা'র রুমে লাইট
অফ করা। বুঝতে আর বাকি রইলো না তারা ঘুমিয়ে
পড়েছে। তারপর আমি আমার রুমে যেয়ে হাতে
থাকা পাঞ্জাবির ব্যাগটা ওয়ারড্রব এর উপরে রেখে
যেই বিছানায় শুতে যাবো তখনি শোভা আমাকে
বলে উঠলো, কয়টা বাজে এখন?
ওর মুখে কথাটা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে
দেখলাম ১:১৫ বাজে। আমি শোভার দিকে তাকাতেই
দেখলাম ওর চোখটা ঘড়ির দিকে। আমি যেই কিছু
একটা বলতে যাবো তখনি শোভা আমাকে থামিয়ে
দিয়ে আবার বলে উঠলো,১.১৫ বাজে আর
তোমাকে কতগুলা ফোন দিছি?
.
শোভা কথাগুলো কেমন করেই যেনো
বলছিলো আমাকে। কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে। আমি
ওকে কিছুনা বলে মোবাইলটা পকেট থেকে
বেড় করে দেখলাম ৩৭টা মিসডকল। খেয়াল করে
দেখলাম মোবাইলটা সাইলেন্ট করা। তারপর আমি
ওকে বলে উঠলাম, মবাইল সাইলেন্ট হয়ে আছে।
ফোন দিছোস শুনবো কি করে?
"তোমার দেড়ি হবে আসতে একবার কি ফুপ্পিকে
ফোন দিয়ে বলতে পারতানা? জানো তুমি ফোন
ধরতেছনা দেখে উনি কত টেনশনে ছিলো।
কিছুক্ষণ আগে আমি ফুপ্পিকে মিথ্যা বলছি, কাজ
আছে দেখে তুমি হাসপাতালে গেছো। আসতে
দেড়ি হবে। আমার কথাটা শোনার পর ফুপ্পি আর ফুপা
ঘুমাইছে।
.
আমি কি বলবো কিছু বুঝতে পারতেছিনা। শোভা
আমার এরূপ চুপ করে থাকা দেখে আমাকে আর
কিছু না বলে খাটে যেয়ে ওর ওড়নাটা বালিশের
কোনায় রেখে শুয়ে পরলো।
.
রাগ দেখালো শোভা আমার উপর? তাও আবার
এতো আস্তে আস্তে কথা বলে। রাগ
উঠলেতো গলার আওয়াজটা খুব জড়তে হয়। কিন্তু
ওর গলার আওয়াজটা তো খুব নিচু ছিলো।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমের
ভিতর এসে শার্টটা পরতে লাগলাম। ঠিক তখনি
শোভাকে খেয়াল করলাম আমার পিছনে দাঁড়িয়ে
আছে। আমি ওর দিকে না তাকিয়ে শার্টের বুতাম
গুলো লাগাতে লাগাতে ওকে বলে ফেললাম,
দাঁড়িয়ে আছিস কেন কিছু বলবি?
"হুম।
শোভার কথাটা শুনে আমি পিছন দিকে ফিরে ওর
দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, কি বলবি?
"নাহিদ আমার ফোন নাম্বারটা ওর ফ্রেন্ডদের দিয়ে
আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে। একটা সিম এনে দিবা
আমাকে?
"আমার ডয়ারে একটা সাদা বক্স আছে। ওইটার ভিতরে
একটা সিম আছে। ওইটা আপাতত চালা।
"ঠিক আছে।
কথাটা শেষেই শার্টের কলারটা ঠিক করে আমার
মোবাইলটা পকেটে ভরে চুল গুলো আচরিয়ে
কাজে যাওয়ার জন্য বেড় হয়ে গেলাম।
.
দেখতে দেখতে শবেবরাত টা এসে পড়লো।
আজ রাতেই নামাজ। বাড়িতে আজকে আমরা চার
জনেই রোজা আছি। এই কয়েকটা দিনে শোভার
মাঝে একটা জিনিস খেয়াল করেছি। মেয়েটা আমার
উপর খুব চটে আছে। এর মূল কারন প্রতিদিন রাতে
আমি আড্ডা দিয়ে দেড়িতে বাড়ি ফিরি। তবে এই
বিষয়টা নিয়ে শোভা কখনো আমাকে স্পষ্ট করে
কিছু বলে নি। কিন্তু টুক টাক ওর সাথে কথা বলার সময়
আমার উপর চটে থাকার সেই ঝাজটা মেয়েটা
আমাকে কথার মাঝেই বুঝিয়ে দিতো। আমি কি
করবো? আমার বাসায় কেন যেনো এখন মনটা
টিকে না। আচ্ছা! আমি বেশি রাত করে আড্ডা দেই না
যা করি এতে করে শোভার এরকম রিয়েক্ট করার কি
আছে?
.
আজ আসরের আজানের আগেই হাসপাতাল থেকে
বাসায় রওনা দিলাম। ভাবলাম আসরের নামাজটা এলাকার
মসজিদে পড়বো। আর তাছাড়া আজকে রোজাটা
রেখে একটু বেশিই দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে।
শরীরটাও কেমন জানি দুর্বল দুর্বল লাগছিলো।
কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেড় হওয়ার পর
কোনোমতে যেনো বাস পাচ্ছিলাম না। যাও দুই
একটা বাস দেখলাম সেইগুলো একদম মানুষ দিয়ে
ভর্তি। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গরমে
পুরো শরীরটা যেনো ভিজে যাচ্ছিলো।
মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। প্রায় আধাঘণ্টা
পর একটা বাস আসলো খেয়াল করে দেখলাম
বাসের সিট গুলো বুকিং হয়ে গেলেও দাঁড়িয়ে
যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে। আর অপেক্ষা
করতে পাড়লামনা। দৌড়ে যেয়ে সেই বাসটাতে
উঠলাম।
.
বাসায় এসে পৌছিয়ে যেনো মেজাজটা আরো
বেশি বিগড়ে গেলো। মা রান্নাঘরে এই গরমের
ভিতরে একা বসে পিয়াজ রসুন কাটতেছিল আর
কিছুক্ষণ পর পর চুলার সামনে যেয়ে
আলুচপ,বেগুনি গুলো ভাজতেছিলো। রুমের ভিতর
খেয়াল করে দেখলাম শোভা বিছানায় হেলান দিয়ে
টিভি দেখতেছে।
.
আমি রুমের ভিতর যেয়ে শোভার হাত থেকে
রিমোট টা টান দিয়ে নিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিলাম।
আমার এরকম কান্ডটা দেখে শোভা আমার দিকে
অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। আমি আর চুপ করে না
থেকে কিছুটা রাগ নিয়েই বলে উঠলাম, তুই এখানে
আরামে বসে টিভি দেখতেছিস। আর মা রান্নাঘরে
এই গরমের ভিতরে রোজা রেখে একা এতগুলা
কাজ করতেছে। একটুতো যেয়ে হেল্প
করতে পারোস? এই পর্যন্ত তোকে একটা
দিনেও আমি ঘরে কাজ করতে দেখি নি। আজাইরা
সারা দিন ঘরের ভিতর বসে থাকছ। কাজ কি শরীরে
ঘুচে না?
.
আমার কথাগুলো শুনে শোভা কিছু না বলে চুপ
করে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মা
রান্নাঘর থেকে আমার রুমে এসেই আমাকে বলে
উঠলো, ওই তুই কাজ থেকে আইসাই এমন
চেঁচাচেঁচি শুরু করে দিলি কেন?
"চেঁচাবোনা! রান্নাঘরে তুমি একা সব কাজগুলো
করতেছো। আর ও এইখানে হেলান দিয়ে টিভি
দেখতেছে। একটুতো পারে তোমার কাজে
হেল্প করতে।
"আমিই বলছি ওকে কাজ না করতে। এমনেতেই
আজকে ও রোজা আছে।
"ও! রোজা আছে বলে কাজ করতে পারবেনা তাই
না! তুমি রোজা রেখে কিভাবে কাজ করতেছো?
আর তাছাড়া এমনি সময় বা ও কখন কাজ করে?
"তুই চুপ থাকবি?
"চুপতো সব সময় থাকি। আজকে ওর জায়গায় অন্য
কোনো মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিলে পারতা
এরকম বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে? নিজের ভাতিজি
দেখে এমন ছাড় তাই না?
মা এইবার আমার উপর খুব রেগে গিয়ে বলে
উঠলো, বাহিরের হাতির পাঁচ পা দেইখা আইছোস?
আইসাই কি শুরু কইরা দিছে, জানোয়ার কোথাকার।
.
মা কথাটা বলেই শোভাকে নিয়ে আমার রুম থেকে
বেড় হয়ে গেলো। আমি কিছু একটা বলতে
যেয়েও থেমে গেলাম। আচ্ছা! আমি খারাপ কি
বল্লাম? শোভার জায়গায় যদি অন্য মেয়ে থাকতো
মা কি ওই মেয়েকেও এরকম বসিয়ে বসিয়ে
রাখতো? আমি আর কিছু না ভেবে মসজিদে যাওয়ার
জন্য রুম থেকে বেড় হয়ে গেলাম।
.
ইফতারি সামনে নিয়ে সবাই বসে আছি। শোভা মাথায়
কাপড় দিয়ে মাথাটা নিচু করে বসে আছে। মা'র দিকে
তাকাতেই দেখলাম তিনি কিছুটা রাগ নিয়ে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। নিজের কাছে এই মুহূর্তে কেমন
যেনো ফিল হচ্ছিলো।
.
আযান টা দেওয়ার সাথে সাথেই সবাই পানি মুখে নিলাম।
শোভা পানি,শরবত আর এক পিছ খেজুর খেয়ে
আর কিছু না খেয়েই উঠে পরলো। বাবা
শোভাকে উঠে যেতে দেখে বলে উঠলো,
কি হলো, উঠে যাচ্ছো কেন? মুড়ি মাখতেছি খাবা
না?
"তোমরা খাও। আমার গ্যাস্ট্রিকে চাপ দিছে।
কথাটা বলেই শোভা রুমে ঢুকে গেলো। ওর
কন্ঠটাও কেমন জানি ভারি ভারি লাগলো। সত্যিই কি ওর
গ্যাস্ট্রিকে চাপ দিছে? আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম
না। মুড়িমাখা শেষে অল্প কয়টা মুড়ি খাওয়ার পর কেন
যেনো মুড়িমাখাটা ভালো লাগছিলোনা। তাই আর মুড়ি
না খেয়ে চিন্তা করলাম নামাজ পড়ে এসে ভাত
খেয়ে নিবো।
.
নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে দেখলাম বাবা এখনো বাসায়
আসেনি। মা'র রুমে যেয়ে আমি মাকে বলে
উঠলাম, মা ভাত দেও তো আমাকে।
মা আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। আমি তার
চুপ থাকা দেখে আবার বলে উঠলাম, কি হলো? ভাত
দেও।
এইবার মা আর চুপ করে না থেকে বলে
ফেল্লো, সারাটা দিন রোজা থেকে মেয়েটা
পানি,শরবত আর এক টুকরা খেজুর ছাড়া কিছু খায়নি। এই
দিকটাতে খেয়াল আছে তোর?
"গ্যাস্ট্রিকে চাপ দিছে দেখেই তো খায়নি।
"কোনো গ্যাস্ট্রিকে চাপ দেইনি, তুই যে
বিকেলবেলা বলছিলি অন্য মেয়ে বিয়ে করলে
বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারতা। ওই কথাটার জন্য
এখনো কিছু খায় নি।
.
আচ্ছা! এই কথাটার জন্য শোভা খায়নি! কথাটা কি শোভা
খুব মাইন্ডে নিলো? আমি মাকে বলে উঠলাম, যাও
ওকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসো। তারপর একসাথে
খেতে দেও।
"আমি গেছিলাম। এখন খাবেনা। তুই যেয়ে নিয়ে
আস।
আমি আর মাকে কিছু বল্লামনা। আস্তে করে মা'র রুম
থেকে উঠে যেয়ে আমার রুমে যেয়ে
দেখলাম শোভা বিছানার এক কোনায় গুটিসুটি খেয়ে
শুয়ে আছে। আমি বিছানার এক পাশে বসে বলে
উঠলাম, শোভা!
আমার ডাকটা শুনে মেয়েটা কেমন করে যেনো
নিশ্বাস ছাড়লো। আমি আবার বলে উঠলাম, কি হলো?
এইবারো ও কিছু বল্লোনা। আমি ওর কিছুটা সামনে
যেয়ে বলে উঠলাম, কথাটা যে তুই এরকম ভাবে
নিবি আগে জানলে কখনো বলতাম না।
.
আমার কথাটা শুনে শোভা শুয়া থেকে উঠে চোখ
দুটো মুছতে মুছতে বলে উঠলো, নাহ।
ঠিকিতো বলছো।বসে বসে খেলেতো যে
কেউ এমনটা বলবে।
ওর কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম আমার কথাটায় ও খুব
কষ্ট পেয়েছে। কান্না করতে করতে চোখ
দুটো লাল হয়ে ফুলে গেছে মেয়েটার। মুখটাও
খুব শুকনো শুকনো দেখাচ্ছিলো ওর।
.
আমি আর চুপ করে না থেকে বলে উঠলাম, খুদা
লাগছে খুব, চল একসাথে খাবো।
"আমি খাবোনা তুমি যেয়ে খাও।
ওর কথাটা শুনে আমি চুপ করে রইলাম। একটু মায়াও
হচ্ছিলো ওর প্রতি। কেন হচ্ছিলো জানিনা। তবে
ওর এরকম শুকনো চেহারাটা দেখলে যে কারো
মায়া হবে। আমি এইবার ওকে বলে উঠলাম, রাগের
মাথায় কথাগুলো বলে ফেলছি। বিশ্বাস কর আমি যদি
জানতাম তুই খুব কষ্ট পাবি কথাটাতে আমি কখনো
বলতাম না।
.
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার দিকে চুপ করে
তাকিয়ে রইলো। আমি আবার ওকে বলে উঠলাম, মা
আমার উপর রেগে আছে। বাবা জানলেও খুব রাগ
করবে। কিছু খেয়ে একটু শুয়ে থাক। আজকে
রাতে আবারতো নামাজ পরবি।
.
এইবার আর আমার কথাটা শোভা ফেলতে
পারলোনা। বিছানা থেকে উঠে সোজা ওয়াশ রুমে
যেয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসেই ডাইনিং
টেবিলে যেয়ে বসলো। শোভাকে দেখেই
মা তার রুম থেকে বেড় হয়ে আমাদের খেতে
দিলো।
.
এশার আযানটা দেওয়ার পর সাদনান ফোন দিয়ে
বল্লো দোস্ত রেডি হয়ে মসজিদের ছাদে
আইসা পর আমি আর অকিব আসতেছি।
আমিও বল্লাম ঠিক আছে।
.
ফোনটা রেখে পাঞ্জাবিটা পড়ে শোভার দিকে
তাকালাম। মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে।চোখের নিচটা
ফুলে গেছে। এতটুকু কথায় এমন করে কান্না
করতে পারলো! মুখটা যেনো মায়া দিয়ে ভরে
গেছে। এতোদিন পর ওকে দেখে এমন মায়া
হচ্ছে কেন? কি মনে করে যেনো ওর কাছে
যেয়ে বসলাম। হুট করে নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন
জেগে উঠলো, আচ্ছা,শোভা যদি মামার মেয়ে না
হতো আমি কি পারতাম ওর কাছে না এসে থাকতে।
ধূর! এইসব কি ভাবতেছি! আমার মাথায় এমন কিছু কি
করে আসতে পারলো? আচ্ছা! শোভাকি আমাকে
নিয়ে ভাবে? ধ্যাত! আমাকে নিয়ে ও আবার কি
ভাববে।
.
আমি আর এক মুহূর্ত শোভার পাশে বসে না
থেকে বেড় হয়ে গেলাম।
.
মসজিদের ছাদে যেয়ে দেখি অকিব,সাদনান ছাড়া
আর কেউ নেই। খেয়াল করলাম সাদনান ফোনে
কার সাথে যেনো কথা বলতেছে। আমি অকিবের
সামনে যেয়ে দাড়াতেই অকিব আমাকে বলে
উঠলো, দেখ শালায় এমন একটা দিনে কোন
মেয়েরে যেনো ইসলামিক ভালবাসা সম্পর্কে
জ্ঞান দিচ্ছে। দোস্ত বুঝি না ওর ভাগ্যেই কেন
সব ভালো ভালো মেয়েরা পড়ে। আমাকে কি
চোখে দেখেনা?
আমি অকিবের কথা শুনে হেসে উঠলাম।
.
এশার নামাজ শেষে কিছুক্ষণ হুজুরের বয়ান শোনার
পর সাদনান আর অকিব বলে উঠলো, দোস্ত
আজকে রাতে বাইতুল মোকাররমে নামাজ
পড়বো। আমাদের কলেজের বন্ধুরাও আসবে
এক সাথে পড়বো।
আমি ওদের কথা শুনে বলে উঠলাম, সেই আগের
মতো রয়ে গেলি। নামাজতো না তোরা ফুর্তি
করতে যাবি এমন একটা দিনে।
আমার কথাটা শুনে অকিব বলে উঠলো, আরে ব্যাটা
চল। ফুর্তি কই? নামাজি পড়বো।
.
আমি আর কিছু বল্লামনা। এইবার সাদনান বলে উঠলো,
তাহলে বাসায় যা খাওয়া দাওয়া করে একবারে বেড় হই।
একদম ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় আসবো।
"আমিতো খেয়েই বেড় হইছি। আচ্ছা ঠিক আছে
চল বাসায় যাই।
.
বাসায় এসে আমার রুমে না ঢুকে মা'র রুমে চলে
গেলাম। দেখলাম মা নামাজ পড়তেছে। শোভা কি
নামাজ পড়বেনা? ও কি এখনো ঘুমাচ্ছে! ওর শরীর
কি ঠিক আছে! একসাথে আমার মন এতগুলো কথা
বলে উঠলো। আমি মা'র রুম থেকে বেড় হয়ে
আমার রুমে চলে গেলাম। আমার রুমে যেয়ে
দেখলাম শোভা রুমে নাই। কোথায় গেলো
শোভা! খেয়াল করলাম ওয়াশরুমে কেউ একজন
আছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না। শোভা
ওয়াশরুমে। আমি আর আমার রুম থেকে না সরে
বিছানায় একটু হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
.
কিছুক্ষণ পর দেখলাম শোভা ওয়াশরুম থেকে
বেড় হয়ে রুমে ঢুকলো। তা ও আবার গোসল
করে। কেন যেনো ওর দিক থেকে আমার
চোখ জোড়া ফিরছিলো না। মেয়েটা সাদা
সেলোয়ার পরনে ছিলো। চুল গুলো ভিজা আর
ছড়ানো ছিলো। আমি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে
তাকিয়ে রইলাম। শোভাকে যেনো চিনাই
যাচ্ছিলোনা। এই প্রথম ওকে গোসল করা অবস্থায়
দেখলাম। খুব সুন্দর লাগছিলো। তবে ওর নাকের
নথটার দিকে তাকাতেই মনে হলো নথটা যদি একটু
ছোট হতো তাহলে একটু বেশিই সুন্দর লাগতো।
.
শোভা আমাকে দেখেই ওয়ারড্রব এর উপর
থেকে ওর ওড়নাটা নিয়ে গাঁয়ে দিলো। আমার এরূপ
তাকিয়ে থাকার দৃশ্য দেখে শোভা যে কিছুটা লজ্জা
পেয়েছে। আমি ঠিকি বুঝতে পেরেছিলাম। হঠাৎ
কি হচ্ছে এইগুলা? আজকে দুপুরবেলাও তো ঠিক
ছিলাম। সন্ধ্যার পর থেকে সব কিছু এমন
এলোমেলো হয়ে গেলো কেন? শোভার
দিক থেকে আমি খুব কষ্টে চোখগুলো ফিরিয়ে
নিলাম। তবুও আমার চোখগুলো চোরের মতো
ওর ভেজা চুলের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কেন
যেনো ওর দিকে আমার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে
করতেছে। আমার এরকম কান্ড দেখে আমার
নিজের কাছেই খুব অবাক লাগলো।
.
দুইজনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। শোভা নীরবতাটা
ভাঙ্গিয়ে বলে উঠলো, নামাজ পড়ে এতো তাড়াতাড়ি
চলে আসছো?
"নাহ। এখন আবার বেড় হবো। হঠাৎ গোসল করলি
এমন অসময়ে?
"আজকে একটা নামাজ আছে। ওই নামাজটা গোসল
করে পড়তে হয়।
"ওহ! আচ্ছা আমি তাহলে যাই। একদম ফজরের নামাজ
পড়ে বাসায় আসবো।
.
কথাটা বলেই আমি যেই রুম থেকে বেড় হয়ে
গেলাম। ঠিক তখনি শোভা বলে উঠলো,পায়েস
রান্না করছি খাবা?
"নাহ! পেট ভরা।
.
গেটের সামনে যেতেই মনে হলো শোভা কি
বল্লো, পায়েস রান্না করছি নাকি করছে।পায়েস কি
ও রান্না করছে! আমি গেটের সামনে থেকে
ঘুড়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলাম, তুই রান্না করছিস পায়েস?
আমার কথাটা শুনে শোভা মাথাটা ঝুকিয়ে হ্যা সুচক ইশারা
করলো। পেট ভরা অবস্থায় কেন যেনো
খেতে ইচ্ছে করলো আমার। আমি ওকে বলে
উঠলাম, অল্প একটু দে।
.
আমার কথাটা শুনার পর শোভার চেহারাটায় খুশির একটা
আভা দেখতে পেলাম। তারপর মেয়েটা তাড়াহুড়া
করে রান্নাঘরে পায়েস আনতে চলে গেলো।
.
পায়েস আনার পর আমি পায়েসটুকু খেয়ে
শোভাকে বলে উঠলাম, আরেক বাটি পায়েস আমার
জন্য ফ্রিজে রেখে দিস।
সকালে এসে খাবো।
কথাটা বলেই আমি বাহিরে বেড় হয়ে গেলাম।
.
শবেবরাত চলে গেছে দশ দিন হয়ে গেলো।
এই দশ দিনে শোভার মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন
লক্ষ্য করলাম। আগে মা সবার জন্য খাবার বাড়তো
এখন সেই কাজটা শোভাই করে। সকালে নাস্তা
বানানোর সময় শোভা মাকে রুটিবেলে দেয়।
আমার সেইদিন ওর উপর রেগে উঠাটা মনে হয়
কাজে লেগেছে। কিন্তু গত কাল আমার ভিতর
এরকম একটা ভাবনা এসে যাবে আমি কখনো ভাবতে
পারিনি! গত পড়শু ঘুম না আসাতে রাত জেগে
ইউটিউবে বেশ কয়েক রোমান্টিক সর্ট ফিল্ম
দেখলাম। সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গছিলো না বিদায়
শোভা আমাকে ডেকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে
দিয়েছিলো। ঠিক তখন শোভার দিকে তাকিয়ে
কেন যেনো ইচ্ছে করছিলো ওকে আমার
পাশে এনে ওর ছড়ানো চুলের মাঝে আমার মুখটা
গুঁজে দেই। এমন একটা চিন্তা মাথায় আসার সাথে
সাথেই আমি লাফ শুয়া থেকে উঠে পড়লাম। কারন
আমি জানি এখন শুয়ে থাকলে ঘুম মাতাল অবস্থায় কিছু
একটা অজান্তেই হয়ে যাবে। বিয়ের পর এই প্রথম
এমন একটা ভাবনা আমার মাথায় আসলো তাও আবার
শোভাকে নিয়ে! বিয়ের আগেও এমনটা
অনেকবার হয়েছে তবে তখন কল্পনার মাধ্যমেই
সুখটা অনুভব করে নিতাম।
.
হাসপাতালে আসার পর থেকেই রিসিপশনে চুপচাপ
বসে আমি কথাগুলো ভাবতে লাগলাম। আমার এরকম
চুপ করে বসে থাকা দেখে প্রিতি আপু বলে
উঠলো, কি ব্যাপার বসে বসে কি ভাবতেছো?
"না আপু কিছুনা।
কথাটা বলেই আমি প্রিতি আপুর দিকে তাকালাম। তার
দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম তার নাকের নথটার
দিকে। একদম ছোট কেমন যেনো
চমকাচ্ছিলো। শোভাকে এই নথটাতে দারুণ
লাগবে। আমি প্রিতি আপুকে হুট করে বলে উঠলাম,
আপু আপনার নাকের নথটা কোন জায়গা থেকে
কিনছেন?
প্রিতি আপু আমার কথাটা শুনে অবাক হয়ে বলে
উঠলো, কেনো!
.
প্রশ্নটা করেও যেনো আমি খুব বোকা হয়ে
গেলাম। এখন কি বলবো আমি! প্রিতি আপুকে আমি
এখনো বলি নি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ভাবছিলাম
ঈদের পর অনুষ্ঠান হবে তখন বলবো। আমি কিছু না
বলে চুপ করে রইলাম। প্রিতি আপু আমার চুপ করে
থাকা দেখে একটু হেসে বলে উঠলো,
গার্লফ্রেন্ড এর জন্য কিনবা নাকি?
আমি আর তার কাছে কিছু না লুকিয়ে শোভা আর
আমার বিয়ের কথাটা বলে দিলাম।
.
প্রিতি আপু সব কিছু শোনার পর দুষ্টামি করে বলে
উঠলো, বউয়ের প্রতি এতো ভালবাসা!
"তা না! ওকে এরকম নথে খুব ভালো লাগবে। তাই
আরকি।
"হুম বুঝছি বুঝছি! তুমি নিউমার্কেট চাঁদিনীচক যেয়ে
দেখবা ওইখানে সামনে দিয়ে কয়েকটা জুয়েলারির
দোকান আছে। বাহির থেকেই দেখবা বক্সে
এগুলো ডিসপ্লে করে রাখছে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলেই আর কিছু না ভেবে কাজে
মনোযোগ দিলাম।
.
কাজ শেষে রাতে বাসায় আসার পর দরজাটা নক করার
সাথে সাথে মা এসে দরজাটা খুলে দিলো। ঘরের
ভিতর ঢুকে দেখলাম শোভা রান্নাঘরে। খেয়াল
করে দেখলাম ও চা বানাচ্ছে। আমি আর সেই দিকটা
খেয়াল না করে রুমে যেয়ে জামাটা চেঞ্জ করে
নিলাম।
.
জামাটা চেঞ্জ করে বালিশটা খাটের সাথে রেখে
কিছুক্ষণ হেলান দিয়ে বসে রইলাম। প্রায় মিনিট
পাঁচেক পর শোভা চায়ের মগ হাতে আমার কাছে
আসলো। তারপর চায়ের মগটা আমার কাছে দিয়েই
আমার কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসলো।
.
চা টা চুমুক দেওয়ার সাথে সাথে শোভা আমাকে
বলে উঠলো,আচ্ছা আমাদের বিয়েটা কয় তারিখে
হইছিলো?
.
ওর কথাটা শুনে আমি দ্বিতীয় বার চায়ে চুমুক দেওয়া
থেকে থমকে গেলাম। কথাটা বলেই শোভা আমার
দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি মনে করতে একটু
চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার মটেও মনে আসছিলো
না। এমন একটা স্যাচুয়েশনে আমাদের বিয়েটা
হয়েছিলো বিয়ের তারিখ যে কারো মনে থাকার
কথা না। তবে এতটুক মনে আছে এপ্রিলের শেষ
দিকে। আমার এরকম চুপ করে থাকা দেখে শোভা
বলে উঠলো, জানোনা তাই তো?
কথাটা যেনো শোভা কেমন করেই বল্লো।
কথাটার মাঝে কিছু একটা মিশানো ছিলো। যা আমি ওর
চোখ দেখে ঠিকি বুঝতে পেড়েছিলাম।
.
আমি আর চুপ করে না থেকে ওকে বলে উঠলাম,
তারিখটা মনে নাই তবে এপ্রিলের শেষ দিকে।
আমার কথাটা শুনে শোভা একটু হাসলো। তারপর
আমার বুকের দিকে একটু তাকিয়ে আমার চোখে
চোখটা রেখে বলে উঠলো, চা ঠান্ডা হয়ে
যাবে, তাড়াতাড়ি খাও।
আমি আর কিছু না বলে চা টুকু খেয়ে শেষ করে
ফেললাম।
.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে প্রতিদিনের মতো আমার
জায়গায় এসে আমি শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর
শোভা এসেও শুয়ে পড়লো। আমি মোবাইলটা
হাতে নিয়ে ডাটা টা অন করলাম। ঠিক তখনি শোভা
আমার দিকে ফিরে বলে উঠলো, কাল গাজীপুর
যাচ্ছি।
শোভার কথাটা শুনেই আমি মোবাইলের লক বাটুন
টাতে চাপ দিয়ে, ওর দিকে একটু ঘুরে বলে উঠলাম,
কেন?
.
আমার কথাটা শোনার পর শোভা একটু অবাক হয়ে
বললো, যাওয়া যাবেনা!
"আমিতো সেইটা বলি নাই। হঠাৎ গাজীপুর কিসের
জন্য যাচ্ছিস?
"বাবা ফোন করছে একমাস হয়ে যাইতেছে
একবারের জন্যেও এখনো গাজীপুর যাই নাই।কাল
ছোট চাচ্চু এসে নিয়ে যাবে।
"ওহ। যা তাহলে।
কথাটা বলেই আমি আবার মোবাইলটার দিকে তাকালাম।
.
চোখটা মোবাইলের দিকে থাকলেও আমি বেশ
কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে দেখলাম শোভা আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। কি মনে করে যেনো
ফেসবুকে ঢুকে শোভার প্রফাইলে ঢুকলাম।
খেয়াল করে দেখলাম ওর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস
ম্যারিড দেওয়ানো। কিন্তু ম্যারিড এর তারিখটা শোভা
উল্লেখ করে নি। আর ম্যারিড উয়িথ কে সেটাও
দেয়নি। তেইশ ঘন্টা আগে রিলেশনশিপ ম্যারিড
দিছে। কি মনে করে যেনো কমেন্টে ক্লিক
করে কমেন্ট গুলো চেক করতে লাগলাম। একটা
কমেন্ট দেখে আমি অনেকটা এক্সাইটেড হয়ে
কমেন্টের রিপ্লাই কি ছিলো সেইগুলো
দেখতে লাগলাম। কমেন্টটা ছিলো, বরের নাম কি
গো? শোভার রিপ্লাই ছিলো, ফায়সাল। তারপর
সেইখানে আবার কমেন্ট করে বলা হয়েছে, কি
করে বর? শোভার রিপ্লাইটা ছিলো, চুরি, ডাকাতি সব
করে। লাস্ট কমেন্ট ছিলো, কতটা ভালবাসে বর?
এইবার শোভার রিপ্লাইটা দেখে আমি হেসে
উঠলাম। রিপ্লাইটা ছিলো, ভালবাসায় খরা পরেছে
বর্ষার পর পরিমাপ করে বলবো।
.
কমেন্টা আমি দুই তিন বার পড়লাম। তারপর একটা
স্কিনশট নিয়ে ডাটা অফ করে শোভার দিকে
তাকাতেই দেখলাম মেয়েটা ঐ পাস ফিরে শুয়ে
আছে। ভালবাসায় খরা পরেছে! কথাটা আস্তে
আস্তে নিজে নিজেই বলে হেসে উঠলাম।
.
সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বেড় হবো। ঠিক তখনি
শোভা আমার অনেকটা কাছে এসে বলে
উঠলো, এখনতো আর আমি বাসায় থাকবো না।
এখন রাতে কম আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে ফুপ্পিকে
একটু সময় দিও।
শোভার কথাটার মাঝে আমি কেমন যেনো একটা
ক্ষোভ এর গন্ধ পেলাম। আমি কি বলবো কিছু
বুঝতে পারতেছিলাম না। ও আমার দিকে কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থেকে আবার বলে উঠলো, যাও কাজে
যাও।
কথাটা বলেই শোভা রুম থেকে বেড় হয়ে
গেলো। আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে কাজে
যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।
.
চার দিন যাবৎ ঘরটা কেমন যেনো খালি খালি লাগছে।
এই চারটা দিনে শোভা একটা বারের জন্যেও
ফোন দেয় নি। কিন্তু গতকাল রাতে মাকে
ফোনে ওর সাথে কথা বলতে দেখছিলাম।
.
দেখতে দেখতে রোজাটা এসে পড়লো। কি
করে যে চারটা রোজা শেষ হয়ে গেলো
কোনো টেরি পেলামনা। শোভা গাজীপুর
গেছে আজ নয় দিন। এই নয়টা দিনের ভিতর একটা
দিনেও ওর সাথে কথা হয়নি।আচ্ছা! ওর কি ইচ্ছে নাই
আমার সাথে কথা বলার? নাকি সেই ক্ষোভটা
এখনো ওর মনের মাঝে বিরাজ করতেছে!
মোবাইলটা হাতে নিয়ে কি মনে করে যেনো
ওকে ফোন দিলাম। ফোনটা রিসিভ করেই বলে
উঠলো, ফোন দিতে ইচ্ছে করলো?
"হুম।
"কিসের জন্য দিছো?
কথাটা শোভা রাগ নিয়েই বললো। আমি চুপ করে না
থেকে বলে উঠলাম, এমনিই দিলাম।
"আমি মার্কেটে আসছি। এখন রাখি।
কথাটা বলেই আমাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে
শোভা ফোনটা কেটে দিলো। রেগেই যে ও
এমনটা করলো সেইটা আর আমার বুঝতে বাকি
রইলোনা।
.
আরো ছয়টা দিন পাড় হয়ে গেলো।এর মাঝে
আমিও আর ওকে ফোন দেয় নি।শোভাও
আমাকে দেয়নি। কিন্তু মা'র সাথে শোভার রাতে
দৈনিক কথা হতো। তবে আমার উচিত ছিলো
শোভাকে আবার ফোনটা দেওয়ার। কিন্তু সেইটা
আমি করলাম না।
.
কাজ থেকে আজ রাতে বাসায় আসার পর মা আমার
রুমে এসে বলতে লাগলো, রোজার আজকে
১০ টা। মেয়েটা ১৫ দিন ধরে গাজীপুর। ওকে বাসায়
আনার কোনো নাম গন্ধই দেখতেছিনা তোর
মাঝে।
"শুক্রবার যেয়ে নিয়ে আসবো।
আমার কথাটা শুনে মা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
থেকে বলে উঠলো, এইভাবে আর কয় দিন
চলবি? বিয়ের পর থেকাই দেখতেছি তোদের
মাঝে কিছুই ঠিক নাই। মেয়েটা ভুলে এমন একটা কাজ
করে ফেলছে। এর মাশুল টা যেনো খারাপ না হয়
তার জন্য তোর সাথে বিয়ে দিলাম। এরকম একটা
পরিস্থিতিতে মেয়েটারে কই তুই একটু সাপোর্ট
দিবি তা না করে ঠিক মতো ওর সাথে দুইটা কথাও বলিস
না। এগুলা কি তুই ঠিক করতাছিস? তুই আর এমনটা করে
মেয়েটাকে কষ্ট দিস না।
.
মা'র কথাগুলো আমাকে কেমন যেনো একটা
ভাবনায় ফেলে দিলো।
শোভা কি আসলেই আমার থেকে কষ্ট
পেয়েছে!
.
দেখতে দেখতে আরো একটা দিন চলে
গেলো। আজকে বৃহস্পতি বার। হাসপাতালে আসার
পর থেকেই ভাবতেছি কাল গাজীপুর যেহুতু
যাবো বড় মামার জন্য একটা পাঞ্জাবি আর বড় মামীর
জন্য একটা শাড়ি নিয়ে যাবো। তারপর পকেট
থেকে মানিব্যাগটা খুলে দেখলাম যা টাকা আছে তা
দিয়ে কিনা হয়ে যাবে।
.
রাতে কাজ শেষে হাসপাতাল থেকে বেড় হয়েই
নিউমার্কেট চলে গেলাম। সেইখানে যেয়ে মামার
জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনে গাউসিয়া মার্কেট
থেকে মামীর জন্য একটা শাড়ী নিলাম। মার্কেট
থেকে বেড় হয়ে যেই বাসে উঠতে যাবো
তখনি চোখটা চাঁদিনীচক লেখা সেই বড়
সাইনবোর্ডটার দিকে পড়লো। কেন যেনো
আর বাসে না উঠে আমি শোভার জন্য নথ কিনতে
সেইখানে চলে গেলাম। প্রিতি আপুর কথা মতো
সামনের কয়েকটা জুয়েলারির দোকানের দিকে
লক্ষ্য করে দেখলাম পাথরের নথ গুলো
ডিসপ্লে করা। তারপর একটা জুয়েলারি থেকে
শোভার জন্য দুইটা নথ কিনে কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে
মানিব্যাগের ভিতর রেখে দিলাম।
.
ভোরে শেহেরি খেয়ে নামাজটা পড়ে এসে
যেই শুতে যাবো। তখনি মা আমার রুমে এসে
বলে উঠলো, এখন ঘুমাস না। ছয়টার দিক দিয়ে রওনা
দিয়ে দিস। জ্যাম থাকবেনা। ঠান্ডায় ঠান্ডায় পৌছে
যেতে পারবি।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
মা আমার কথাটা শুনে একটু মুচকি হেসেই আমার মাথার
সামনে বসে আমার মাথাটা বুলিয়ে দিতে লাগলো।
আর একের পর এক কথা বলতে লাগলো। কাল
রাতে মামীর জন্য শাড়ী মামার জন্য পাঞ্জাবী
এনেছি দেখে মা খুব খুশি হয়েছিলো। এখনো
মা'র মুখে আমি সেই খুশিটা দেখতে পাচ্ছিলাম।
.
সকাল ৯টার মধ্যেই গাজীপুর এসে পৌঁছে গেলাম।
মামাদের মেইন দরজাটা নক করার কিছুক্ষণ পর নানী
এসে দরজা খুললো। আমাকে নানী দেখেই হাসি
দিয়ে আমার হাতটা ধরে বড় মামার রুমে নিয়ে
যেয়ে বলে উঠলো, ওই দেখ কে আইছে!
.
মামা বিছানায় শোয়া থেকে উঠে আমার দিকে
তাকালো আর মামি রান্নাঘর থেকে বেড় হয়ে
বলে উঠলো, আসতে মন চাইলো এতদিনে?
"সময় পেলেতো আসবো। সারাদিন থাকি কাজে
সেই রাতে যেয়ে ফ্রি হই।
"রোজা আছিস?
"হ্যা।
কথাটা বলেই আমি বড় মামা আর মামীর জন্য নিয়ে
আসা পাঞ্জাবি আর শাড়ীর ব্যাগটা মামীর হাতে দিয়ে
বলে উঠলাম, আপনার আর মামার জন্য আনছি।
.
মামীব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো, এগুলা আনার
কি দরকার ছিলো?
"কখনোতো আপনাদের কিছু দেই নাই। তাই
আনলাম।
"ঘেমে দেখি গেছিস, যা খাটে যেয়ে বস।
.
খাটে এসে বসার পর বড় মামার সাথে কথা বলতে
লাগলাম। খেয়াল করে দেখলাম মামার হাতটা এখনো
বাঁকানো, কথা বলার সময় ঠোটটা ট্যাড়া হয়ে যায়।
কথায় কথায় মামা বললো, লাঠিতে ভর ছাড়া নাকি হাটতে
পারেনা। ডাক্তার ঔষধ দিছে আর ব্যায়াম করতে
বলছে একটু সময় লাগবে নাকি ঠিক হতে।
.
মামার সাথে কথা বলতে বলতে একটা সময় আয়নার
দিকে খেয়াল করে দেখলাম শোভাকে দেখা
যাচ্ছে। আমি পিছনের দিকে তাকিয়েই দেখি শোভা
বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে আমার ঘুম। মামা
বিষয়টা বুঝতে পেড়ে আমাকে ঘুমাতে শোভার
রুমে পাঠিয়ে দিলো।
.
ইফতারির পর যেই বল্লাম, বাসায় যেতে হবে, তখনি
মামি রান্নাঘর থেকে প্লেটে করে এক প্লেট
ঠেসে মোড়ক পোলাও নিয়ে আসলো। আমি না
পারতে সেইগুলো খুব কষ্টে খেলাম।ইশ! কি
জামাই আদরটা না করতেছে আমাকে। তিনি কি
কখনো কল্পনা করছে এই জামাই আদরটা আমার
মতো একটা ফাতরা ছেলেকে করবে। হাহ!
ভাগ্যের কি লীলাখেলা।
.
বাসা থেকে বেড় হয়েই দেখলাম ছোট মামা
সি.এন.জি ভাড়া করে নিয়ে আসছে। আমি শোভার
ব্যাগ দুইটা সি.এন.জি এর ভিতর রাখার পর শোভা
যেয়ে সি.এন.জির ভিতর বসলো। আমি যেই
ভিতরে ঢুকে বসতে যাবো ঠিক তখনি বড় মামি আমার
কাছে এসে জোর করে কিছু টাকা আমাকে
মার্কেট করার জন্য দিতে চাইলো। আমি টাকা গুলো
না নিয়ে তাকে বল্লাম, আমাকে দেওয়ার সময় চলে
যাচ্ছেনা। এমনিতেই মামা কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে ঘরে
বসা। আগে মামা ঠিক হোক তারপর নিবো। এখন
মামাকে ভালো করে ডাক্তার দেখান।
আমার কথাটা শোনার পর মামীর চোখে পানি জমে
আসছিলো। আমি আর দেরি না করে বিদায় নিয়ে
সি.এন.জির ভিতর যেয়ে বসলাম।
.
মেইন রোডে সি.এন.জি আসার পর খুব গতি
সহকারে সি.এন.জি চলতে লাগলো।শোভার দিকে
তাকিয়ে দেখলাম ও এক দৃষ্টিতে বাহিরের দিকে
তাকিয়ে আছে। বাসায় আসার পর একটা বারের
জন্যেও আমার সাথে কথা বলে নেই । এই
কয়েকটা দিনে যেনো বেশ শুখিয়ে গেছে
মেয়েটা।
.
আমি ওর দিক থেকে যেই চোখটা ফিরাতে নিলাম
তখনি শোভা আমার দিকে ফিরে বলে উঠলো,
সেইদিন ফোনটা যে আমি হুট করে কেটে দিলাম,
তোমার কি আরেকটা বার আমাকে ফোনটা দেওয়ার
প্রয়োজন ছিলোনা?
কথাটা শোভা রাগ নিয়েই বললো। কি মনে করে
যেনো আমি আমি বলে ফেললাম, হুম।
"তাহলে কেন দিলা না?
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। আমার চুপ
করে থাকাটা দেখে শোভা আবার বলে উঠলো,
আমার প্রতি করুণা দেখিয়ে বিয়েটা না করলেই পারতা!
অযথা নিজের লাইফটা নষ্ট করলা না?
"আমি এমনটা কখনো বলছি?
"বলো নাই, তবে তোমার কাজ কর্মে তা বুঝায়।
"আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঢুকাস না।
আমার কথাটা শোনার পর শোভা আর কিছু না বলে
আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকয়ে থেকে আবার
বাহিরের দিকে তাকালো।
.
শোভার মাঝে অভিমানের একটা ছাপ দেখতে
পাচ্ছিলাম। অভিমানটা রাগের থেকে বেশি ভয়ানক।
রাগটা যে কারো উপর করা যায়। কিন্তু অভিমানটা সবার
উপর করা যায় না। আমি নিরবতাটা ভাঙ্গিয়ে আবার
শোভাকে বলে উঠলাম, পড়াশোনাটা করার কি ইচ্ছা
আছে?
শোভা বাহিরের দিকে তাকিয়েই বলে
উঠলো,থাকবে না কেন?
"ফাস্ট ইয়ারটা গাজীপুর থেকেই কমপ্লিট কর।
সেকেন্ড ইয়ারে এইখান থেকে ট্রান্সফার করে
ঢাকায় কোনো কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবো।
আমার কথাটা শুনে শোভা অনেকটা অবাক হয়ে
আমার দিকে তাকালো। আমার কাছ থেকে ও
কখনো এরকম কিছু হয়তো আসা করে নি। আমি
আস্তে করে পকেট থেকে মানিব্যাগটা বেড়
করে শোভার জান্য আনা নাকের নথ দুটো ওর
হাতে দিলাম।
.
শোভা নথ গুলো দেখে আরেকটু বেশি অবাক
হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মুহূর্তে
শোভার মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু
সেইটা ও মুখ ফুটে প্রকাশ করার ভাষাটা হারিয়ে
ফেলছে। আমি কি মনে করে যেনো বলে
ফেললাম, তোর নাকের নথটাতে তোকে বেশি
সুট করেনা,এই নথ গুলাতে খুব মানাবে তোকে।
কথাটা বলেই আমি ওর দিক থেকে চোখটা ফিরিয়ে
নিলাম।
.
বাসার সামনে চলে আসার পর সি.এন.জি থেকে
নেমে শোভার ব্যাগ দুটো হাতে নিয়ে যেই
আমাদের গলির ভিতর ঢুকতে নিলাম তখন খেয়াল
করলাম শোভা আমার হাতটা যেনো ধরতে
চেয়েছিলো। কিন্তু আমি আগেই হাটা শুরু করে
দেই তার জন্য আর ও আমার হাতটা ধরতে পারি নি।
.
দিন দিন কেন যেনো ওর প্রতি আমার মায়াটা
বেড়েই চলছিলো। রাতে এখন যেনো ইচ্ছা থাকা
সত্যেও বাহিরে আড্ডা দিতে পারতামনা। সারাদিন
রোজা থেকে অনেক খাটা খাটনি করে খুব ক্লান্ত
হয়ে থাকতো মেয়েটা। আর তার উপর আমি দেরি
করে ফিরলে না ঘুমিয়ে জেগে থাকে। তাই রাতে
আর বাহিরে বেশিক্ষণ থাকতে পারতামনা। এই জিনিসটা
শোভা খুবি উপভোগ করতো। আমি বাড়ির বাহিরে
থাকলে কারনে অকারনে হুট হাট আমাকে ফোন
দিয়ে কি বলবে ও নিজেই ভেবে পেতো না।
দিন দিন যে শোভা আমার প্রতি দুর্বল হয়ে
যাচ্ছিলো ওর কথা, বার্তায় বুঝতে পারতাম। আমি
অনেকবার চেষ্টা করেছি ওর এই দুর্বলতাটায় একটু
সাড়া দেই কিন্তু আমাকে দিয়ে কেন যেনো
হয়ে উঠছিলোনা।
.
আজকে হাসপাতাল থেকে ঈদের জন্য বেতন,
বোনাসটা মাস শেষ হওয়ার আগেই পেয়ে
গেলাম। সেইখান থেকে ঘর ভাড়ার টাকাটা আলাদা
রাখলাম। বাড়িতে ঘর ভাড়ার টাকাটা আমি দেই। আর
খাওয়ার খরচটা বাবা চালায়। তারপর কিছু টাকা ঈদে হাত
খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা থেকে মা'র জন্য
শাড়ী আর বাবার জন্য লুঙ্গি, পাঞ্জাবি কিনে বাড়িতে
ফিরলাম।
.
বাড়িতে এসে খেয়াল করে দেখলাম হাতে মাত্র
চার হাজার টাকার মতো আছে। শোভা না থাকলে এই
টাকা গুলো দিয়ে আমি নিজেই কিনা কাটা করতাম।
কেমন যেনো একটা টানা-টানির মধ্যে পড়ে
গেলাম। বিয়ের পর মেয়েটার প্রথম ঈদ আমাদের
এইখানে। একটু আয়েশ মতো ওকে কিছু কিনে না
দিলে কেমন দেখায়? মনটা বলতে লাগলো, এই
টাকা গুলোর মধ্যে শোভার কি ভালো মতো কিনা-
কাটা হবে! নাহ! এই বছরটা একটু ম্যানেজ করে
নিতেই হবে। সামনের বছর থেকে আগে
থেকেই টাকা পয়সা জমিয়ে রাখতে হবে। এই বছর
না হয় আমি শবেবরাতের পাঞ্জাবি আর গত বছরের
প্যান্টটা দিয়ে চালিয়ে দেই। আর তাছাড়া পাঞ্জাবি আর
প্যান্টটা একবার পরেছি এমনিতেই ওগুলো নতুন।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম শোভা
রুমে এসে ঢুকেছে। আমার সামনে এসে বলে
উঠলো এতক্ষণ বসে কি ভাবলা?
আমি বুঝতে পারলাম শোভা আগে থেকেই
আমাকে লক্ষ্য করেছে। ওর দিকে তাকিয়ে আমি
বলে উঠলাম, কই কিছু না তো!
"মিথ্যা বলতেছো!
"আরে তেমন কিছুই ভাবি নাই।
"ওহ! রান্না হইছে খাবা এখন।
"নাহ। একদম সেহরি এর সময় খাবো।
শোভা আর কিছু না বলে আস্তে করে বিছানায়
এসে শুয়ে মোবাইল টিপাতে লাগলো।
.
কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম শোভা মোবাইলটা
হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পরেছে।আমি আস্তে করে
মোবাইলটা ওর হাতে থেকে নেওয়ার সাথে
সাথে লক বাটুমে চাপ পড়ে যাওয়াতে দেখলাম ডাটা
অন করা। মোবাইলে সাইড লক ছিলো বিদায় লকটা
খুলে ডাটা অফ করার পর খেয়াল করলাম অনলাইনে
একটা ড্রেসে শোভার কমেন্ট ছিলো,
ড্রেসটার প্রাইজ কত? ড্রেসটা দেখতে বেশ
সুন্দর ছিলো। আমি ডাটা টা আবার অন করে চেক
করে দেখলাম কোনো রিপ্লাই আসছে নাকি। হুম!
রিপ্লাই ছিলো। ড্রেসটার দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।
আমি কিছু না ভেবে ড্রেসটার নিচে থাকা এড্রেসটা
এক নজর দেখে নিলাম। আর ড্রেস কোডটা
মনে রাখলাম।
.
আজকে কাজ শেষে বাড়ি ফিরার আগে শোভার
মোবাইলে দেখা ড্রেসটার এড্রেস অনুযায়ী
সেখানে গেলাম। তারপর সেইখান থেকে সেই
ড্রেসটা কিনে সোজা বাসায় আসলাম।
.
বাসায় আসার পর শোভার হাতে ড্রেসের ব্যাগটা
দিলাম। শোভা ব্যাগ থেকে ড্রেসটা বেড় করে
ড্রেসটা দেখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি ওর এরূপ তাকিয়ে থাকা দেখে বলে উঠলাম,
কাল তুই মোবাইল হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পরছিলি।
তোর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখি
মোবাইলের ডাটা অন ডাটা অফ করতে যেয়ে
দেখলাম তুই এই ড্রেসটায় কমেন্ট করছিস। ভাবলাম
তোর খুব ভালো লাগছে। তাই নিয়ে আসলাম।
"তোমার কাছে কেমন লাগছে?
"হুম ভালোই।
"ভালো লাগবে আমাকে?
"হুম লাগবে।
" সত্যিতো!
"হ্যা!
"আচ্ছা আমি ফুপ্পিকে দেখায়া নিয়া আসি।
কথাটা বলেই শোভা মা'র রুমে চলে গেলো। ওর
চেহারাটা দেখে বুঝতে পেলাম ও খুব খুশি
হয়েছে।
.
ঈদের দুই দিন বাকি থাকতেই হাসপাতাল থেকে ছুটি
পেয়ে গেলাম। ঐদিক দিয়ে বড় মামা ফোনের
উপর ফোন দিয়ে বলতে লাগলো ঈদে
যেনো আমরা সবাই গাজীপুর চলে আসি। আমিও
বলে দিয়েছিলাম আসবো।
.
আজকে চাঁদরাত সকাল বেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে
যাওয়ায় বিছানাতে শুয়েই শোভার দিকে তাকিয়ে
রইলাম। নিজের কাছে যেনো কেমন লাগছিলো!
নিজের উপর কিছুটা জিদ হচ্ছিলো। বিয়ের পর
মেয়েটার প্রথম ঈদ, কিন্তু আমি ওকে সাথে করে
শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারলাম না। এই নিয়ে শোভার
কোনো অভিযোগ নেই এমনকি কোনো মন
খারাপি নেই। তবে আমার নিজের কাছেই খুব খারাপ
লাগছিলো।
.
সারা দিন ঘরে টিভি দেখেই কাটিয়ে দিলাম। রাতে
সাদনান ফোন দেওয়াতে বাহিরে বেড় হলাম।
প্রতিবার চাঁদ রাতে আমরা একটা দুইটা পর্যন্ত বাহিরেই
থাকি। আমাদের কাছে ঈদের থেকে চাঁদ রাতটাই সব
থেকে বড়। আকিব,সাদনান আর আমি একসাথে হওয়ার
পর। তিন জন মিলে রিকশায় করে ফেরিঘাট চলে
গেলাম। সেইখানে যেয়ে তিন কাপ গরুর দুধের চা
নিলাম। এক চুমুক দিতেই কথার প্রসঙ্গ উঠলো
আমাকে আর শোভাকে নিয়ে। আমি জানি বছর খানিক
না যাওয়া পর্যন্ত এদের কাছ থেকে শান্তি পাবোনা।
ওরা দুইজন মিলে যেনো আমাকে পুরা বাটে নিয়ে
নিলো।
.
সেইখানে আড্ডা দেওয়ার প্রায় ঘন্টা তিনেক পর
মোবাইলটা বেজে উঠলো। আমি সাদনান আর
অকিব কে চুপ থাকতে বলে মোবাইলটা পকেট
থেকে বেড় করে দেখলাম শোভার ফোন।
ফোনটা ধরতেই শোভা বলে উঠলো, কই তুমি?
"বাহিরে আছি। কেন?
"বাসায় আসবা না?
"হুম।
"তোমার সাথে কথা আছে তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।
আমি আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
খেয়াল করে দেখলাম ১১টা বেজে গেছে।
আগে থেকে শোভার কথার ধরন গুলা খুব
পরিবর্তন হয়ে গেছে। কেমন যেনো এখন সব
কিছুতেই জোড় খাটিয়ে কথা বলে। আমি ওদের
সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওদের বলে
বাসায় রওনা দিলাম।
.
বাসায় আসার পর দেখলাম শোভা হাতে মেহেদি
দিয়ে বসে আছে। আমি রুমে ঢুকার পর আমার
দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি ওকে বলে উঠলাম, কি
কথা বলবি বল?
"সবার জন্য কিনা-কাটা করলা। তোমার জন্য করলা না
কেন?
"আমারগুলা ঈদের আগেই করে ফেলছি।
"কই দেখলাম নাতো!
"কাল পরলে দেখিস।
শোভা আর কিছু বললোনা। এতটুকু কথার জন্য
তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললো! আমি ওর দিকে
তাকিয়ে রইলাম। খেয়াল করে দেখলাম ওর বাম হাতটা
মেহিদি দেওয়াতে একদম লাল টকটকে
দেখাচ্ছিলো। ইশ! যা লাগছিলোনা। হাতটা যেনো
কেন খুব ধরতে ইচ্ছে করতেছে। কিন্তু কেমন
একটা যেনো দ্বিধায় পড়ে গেলাম। শুধুমাত্র এই
দ্বিধাটার জন্য আজ এই মেয়েটাকে আমার কাছে
নিয়ে আসতে পারতেছিনা। আমি জানি আমি একটু
ইঙ্গিত দিলে শোভা একবারেই আমার সাথে মিশে
যাবে। কিন্তু ঐযে! দ্বিধাটাই সেইটা হতে
দিচ্ছিলোনা।
.
সকালে ঘুমটা ভাঙ্গলো শোভার ডাকে। আমি
চোখ দুটো খুলে দেখি শোভা আমার মাথার
পাশে বসা। ওর চেহারাটা দেখে খুব হাসি খুশি
লাগছিলো। আমি চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে
বলে উঠলাম, কি হইছে?
"গত কাল রাতে না মসজিদে এলান্স করে দিলো ৮
টায় নামাজ। উঠো রেডি হও।
শোভার কথাটা শুনে আমি একটু চোখটা বন্ধ করলাম।
ঘুমটা যেনো কাটছিলোই না চোখ থেকে। যেই
চোখটা খুলে শুয়া থেকে উঠে পরলাম, খেয়াল
করলাম শোভা আমার মাথায় ওর হাতটা রাখতে
নিচ্ছিলো। আর ঠিক সেই সময় আমি শুয়া থেকে
উঠে গেছি। আমি শোভার দিকে তাকিয়ে দেখলাম
মেয়েটা আস্তে করে হাতটা সরিয়ে নিলো।
নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগলো। এর আগেও
আমার হাতটা ধরতে চেয়েও ধরতে পারলোনা।
আজকেও ঠিক তেমনটাই হলো। শোভা মুচকি একটু
হেসে আবার বলে উঠলো, যাও তাড়াতাড়ি গোসল
করে তাড়াতাড়ি নামাজে যাও।
.
গোসল করে এসে শবেবরাতের বানানো সেই
পাঞ্জাবিটা পরার সাথে সাথে শোভা বলে উঠলো,
তুমি এইটা পরতেছো কেন?
শোভার কথাটা শুনে আমি বলে উঠলাম, এইটাইতো
ঈদের জন্য বানাইছি। শবেবরাতে একদিনের জন্য
একটু পরছিলাম।
"তাই নাহ!
কথাটা শোনার পর ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম।
শোভার সেই হাসিমাখা চেহারাটা মিনিটের মধ্যে
চেঞ্জড হয়ে গেলো। আমি আর কিছু না বলে
আস্তে করে নামাজে যাওয়ার জন্য বেড় হয়ে
গেলাম।
.
ঈদের নামাজ শেষে কিছুক্ষণ রাস্তায় বন্ধুদের
সময় দিয়ে বাসায় এসে দেখলাম শোভা গোসল
করে মাত্র বেড় হলো। ভালো করে খেয়াল
করে দেখলাম ওর পরনে থ্রি-পিছটা নতুন যেইগুলা
এইবার ঈদে নিয়েছে সেইগুলার মধ্যে একটাও না।
ও আগের থ্রিপিছ পড়েছে। শোভা আমাকে
দেখেই রান্নাঘর থেকে সেমাই এনে দিয়ে
জানালার সামনে যেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
বুঝতে আর বাকি রইলোনা আমি যে মিথ্যা বলছি
শোভা তা ধরে ফেলেছে। তাই বলে এই ঈদের
দিনে ও নিজে নতুন জামা না পড়ে আগেরটা পরবে?
.
এরি মধ্যে মা হুট করে রুমে চলে এসে বলে
উঠলো,ওই তোরা গাজীপুর আজকে চলে যা।
আমি আর তোর বাবা কাল চলে আসবো। এইখানে
আমাদের কাজ আছে আজকে।
কথাটা বলেই মা শোভার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে
তাকালো। তারপর মা আর কিছু না বলে চলে
গেলো।
.
আমি সেমাই এর বাটিটা বিছানায় একপাশে রেখে
শোভার সামনে গেলাম। আমাকে দেখেও
শোভা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো। আমি কি
ভেবে যেনো বলে উঠলাম, এইটা কি পড়ছিস?
নতুন এতগুলা ড্রেস থাকতে?
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার দিকে তাকিয়ে রাগ
নিয়ে বলে উঠলো, যা ইচ্ছা তাই পড়বো। ওইগুলা
পড়ার আর ইচ্ছা নাই।
"কি হইলো আবার হঠাৎ করে তোর?
"তুমি আমার সাথে মিথ্যা কেন বল্লা? তুমি নাকি কিনা-কাটা
আগে করে ফেলছো!
"আরে এই পাঞ্জাবি ঈদের জন্যেই কিনছি।
"আবার আমার সাথে মিথ্যা বলতেছো!
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। এই মেয়ের কাছে
দেখি কিছু লুকানো সম্ভব না। শোভার চোখ
গুলো কেমন যেনো লাল হয়ে যাচ্ছিলো। আমি
আর চুপ করে না থেকে শোভাকে বলে উঠলাম,
আচ্ছা ঠিক আছে আমার ভুল হইছে। এখন যা যেয়ে
রেডি হ। গাজীপুর যাবো।
শোভা আর কিছু না বলে আমার সামনে থেকে
চলে গেলো।
.
শোভা রেডি হয়ে আসার পর দেখলাম ও এখনো
ড্রেসটা চেঞ্জ করে নাই। রুমে ঢুকেই ব্যাগের
ভিতর আগের পুরানো ড্রেস গুলো ঢুকাতে
লাগলো।ওর এরকম কান্ড দেখে আমার খুব রাগ
উঠে গেলো। আমি ওর হাত থেকে ব্যাগটা একটু
জড়তেই টান দিয়ে নিয়ে ওর সব নতুন ড্রেস
গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে আমার কয়েকটা নতুন
উঠানো জামা ব্যাগে নিলাম।
.
আমার এরকম কান্ড দেখে শোভা কিছুটা ভয়
পেয়ে গেলো। সেটা আমি ওর চোখ দেখে
ঠিকি বুঝতে পেরেছিলাম। তারপর রুম থেকে
বাহিরে বেড় হয়ে বাবা আর মাকে বলে রওনা দিলাম।
.
বাসে উঠার পর থেকে শোভা একটু পর পর আমার
দিকে তাকাতে লাগলো। ওর চেহারাটা যেনো খুব
গম্ভীর দেখাচ্ছিলো। ব্যাগটা ওরকম করে টান না
দিয়ে একটু বুঝালে তো বুঝতো। এমন একটা
দিনে মেয়েটার মনটা খারাপ করে দিলাম! বাসায়
যেয়ে যদি এরকম গম্ভীর হয়েই থাকে তাহলে
বড় মামা আর মামী কি ভাববে! আমি আর কিছু না
ভেবে ওর হাতটা ধরেই ফেললাম। শোভা কিছুটা
চমকে যেয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কিছুনা
বলে চুপ করে ওর হাতটা ধরে বসে রইলাম।
.
কিছুক্ষণ পর কন্টাক্টদার টিকেট চেক করতে
আসলে আমি ওর হাতটা ছেড়ে পিছনের পকেট
থেকে মানিব্যাগ টা বেড় করে টিকিট টা দেখালাম।
টিকেট চেক করে কন্টাক্টদার চলে যাওয়ার পর
শোভার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, এমনে
অনেক জামা কাপড় দিয়ে ঘর ভর্তি। তাই আর এবার কিনি
নাই কিছু। আর তুই অযথা একটা সিম্পল বিষয় নিয়ে এমন
করতেছিস। বাসায় যেয়ে যেনো আমার কিছু
বলতে না হয় সোজা যেয়েই ড্রেসটা চেঞ্জ
করে ফেলবি।
.
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার হাতটা ওর মাথায়
রেখে বলে উঠলো, সত্যি তুমি ইচ্ছে করে
কিনো নাই নাকি তোমার হাতে টাকা ছিলোনা?
ও যে এরকম একটা কাজ করবে আমি কখনো
ভাবতে পারি নাই। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম, কি
করলো ও এইটা! আমি আর চুপ করে না থেকে
সত্যটাই বলে উঠলাম, হুম টাকা ছিলোনা।
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার দিকে একটু তাকিয়ে
থেকে বলে উঠলো, এতো টাকা দিয়ে কি দরকার
ছিলো আমার ড্রেসটা কিনার? এতোই যখন কিছু
দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো তাহলে অল্প টাকার ভিতর
কিছু একটা কিনে দিতা আর নিজে কিছু নিতা! তাতেই খুব
খুশি হতাম।
"বিয়ের পর এই প্রথম ঈদ তোর। সেই তুলনায়
কিছুই দিতে পারি নি। অন্য ছেলেদেরো দেখছি
বিয়ের পর প্রথম ঈদে বউকে কত কিছু কিনে
দেয়। আর আমি!
.
আমার কথাটা শুনে শোভা বলে উঠলো, আমাকে
বউ ও ভাবো তুমি!!
ওর কথাটা শুনে আমি কি বলবো কিছুই জেনো মাথায়
আসছিলো না। ও বললোটা কি এইটা!
আমি আর ওর দিকে তাকিয়ে না থাকতে পেড়ে
মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললাম।
.
মাথাটা ঘুরানোর সাথে সাথেই শোভা ওর হাত দিয়ে
আমার মাথাটা ওর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
রইলো। ওর চোখে যেনো পানি জমতে শুরু
করলো। তারপর মেয়েটা আবার বলে উঠলো,
মুখ দিয়েতো এখন কোনো কথাই বেড় হবেনা!
সব কিছু নিজের ভিতরেই রেখো। যা করতেছো
খুব ভালো করতেছো! আমিও দেখবো কয় দিন
এমনটা করতে পারো!
কথাটা বলেই, শোভা আমার দিকে আরো কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থেকে আমার হাতটা শক্ত করে ওর বুকের
সাথে মিশিয়ে নিয়ে আমার বুকে মাথা গুঁজে দিলো।
কেন যেনো নিজেকে এমুহূর্তে ওর কাছ
থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারলাম না। কোনো
দ্বিধাও যেনো এমুহূর্তে কাজ করছিলো না। আমার
মনটাও যেনো এমুহূর্তে বলতে লাগলো, একটু
সাড়া দে! আমি আর কিছু না ভেবে আমার মনের
কথাটাতে শাই দিয়ে আলতো করে ওর চুলে আমার
মুখটা গুজিয়ে দিলাম। আজ যেনো আমার সেই
অজানা ছোয়াটার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।
লেখা> ফ|য়স|ল আহম্মেদ শ|ওনআমরা সবাই স্বপ্ন দেখি। কিন্তু সেগুলো কেউ
সহযে পূরণ করতে পারলেও অনেকেই তা পূরণ
করতে যেয়ে ব্যর্থ হয়। সবারই একটা ইচ্ছে
থাকে তার দেখে আসা স্বপ্নগুলো একদিন পূরণ
হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই স্বপ্ন
গুলো হুবহু পূরণ হয়না। আর যাদের হয় তাদের
তো চাঁদের কপাল! ঠিক তেমনি আমারো একটা
ছোট স্বপ্ন ছিলো এক অজানা ছোয়া পাওয়ার।যার
স্পর্শে আমি কঠিন পদার্থ থেকে তরলে পরিণত
হবো। সত্যি কি কঠিন পদার্থ থেকে তরল পদার্থে
পরিণত হওয়া যায়? হুম যায়! তবে তা অনুভূতির মাধ্যমে।
আমার সেই অনুভূতিটার মাধ্যমি ছিলো অজানা ছোয়া।
.
"দোস্ত চিন্তা কইরা দেখ এক বছরের মধ্যে
কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছি আমরা।
আমার কথাটা শুনেই অকিব আর সাদনান আমার দিকে
তাকিয়ে বলে উঠলো, হুম দোস্ত।
"ইশ! এত বড় হওয়ার পরেও আমাদের বাসায় নালিশ
যেতো। হঠাৎ সব কিভাবে পরিবর্তন হয়ে
গেলো দেখলি!
এইবার আমার কথাটা শুনে অকিব বলে উঠলো, মামা!
সব কিছু জবটা পাওয়ার পরেই হইছে। আগে সারাদিন
এক সাথে থাকতাম। একেক জনের মাথায় একেক
রকম আকাইম্মা চিন্তা আসছে। আর সেইগুলাই আমরা
করছি। জবটা পাওয়ার পর আমাদের মাঝে একটা দায়িত্ব
এসে পরেছে। তাই এতো পরিবর্তন।
অকিব এর কথাটা শুনে আমি আর সাদনান দুইজনেই
বলে উঠলাম, ঠিক বলছিস।
.
মাস্টার্সটা শেষ হওয়ার পর বেশিনা মাত্র দুই মাস
বেকার ছিলাম। তারপর একটা প্রাইভেট হাসপাতালে
রেসিপশনের চাকুরীটা পেয়ে যাই। আমার চাকুরী
টা হওয়ার কিছুদিন পরেই সাদনান আর অকিব ও চাকুরী
পেয়ে যায়। একটা সময় এলাকাতে আমরা
আনলিমিটেড ফাজলামি করি গেছি। যদি এলাকাতে নতুন
কোনো লোক আসতো তাহলে সেই ধরনের
মজা নিতাম। আর সমবয়সি বা ছোট কেউ যদি
আমাদের কাছে এসে যদি বলতো, ভাইয়া অমুক
নামের ব্যক্তি কোন বাড়িতে থাকে?
তাহলে আমরা চিনি বা না চিনি জামাল চাচার বাড়ি দেখিয়ে
দিতাম। জামাল চাচা এলাকার মাথা ছিলেন। লোকটা বেশি
কথা বলতো। আর উঠতি বয়সের ছেলেগুলোর
জায়গায় জায়গায় ভুল ধরতো। মাত্রা অতিরিক্ত জ্ঞান
দিতো। ছেলে গুলোর কোনো ভুল দেখলে
বা তার সাথে কোনো তর্ক করলেই সোজা
গার্জিয়ান এর কাছে বলতো,কি মিয়া ছেলেকে কি
আদবকায়দা শিখান নাই। মুরুব্বিদের সাথে কেমনে
কথা বলবে তা শিখান নাই, সারাদিনতো ফাতরামি কইরা
বেড়ায় সেই খবর রাখেন? আরো কত যে
দোষ বের করে করে বলতো লোকটা!
.
ঠিক তেমনি জামাল চাচা সেই ছোট বেলা থেকে
আমাদের গার্জিয়ান এর কাছে কম বিচার দেই নি!
কমপক্ষে সাপ্তায় দুই এক দিন তো বিচার পরতোই।
একটা সময় জিনিসটা আমাদের জন্য ফরজ হয়ে
উঠেছিলো। কিছু বলতে পারতামনা। বাবার সমান বয়স
লোকটার। তবে ছাদের থেকে
পানির পোটলা, পঁচা ডিম আমাদের হাতে এই
পর্যন্ত যে তার মাথায় কতবার পরেছে তা
হিসাব ছাড়া। একটা বছর যাবৎ আর কোনো
নালিশ আসেনা বাসায়। আর আসবেই বা কি
করে সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় আর
তাছাড়া এই একটা বছরে আমাদের মাঝে
সেই আগের চঞ্চলতার স্বভাবটা একদমি কমে
গেছে। ব্যস্ততার কারনে বন্ধের দিনগুলা
ছাড়া একে অপরকে সময় দিতে পারিনা। তবে
প্রতি দিন রাতে ঠিকই তিন জন মিলে ঘন্টা
খানিক আড্ডা দেই। কিন্তু আগের মতো
আজেবাজে চিন্তা ভাবনা এখন আর মাথায়
আসেনা। আসলেই খুব পরিবর্তন হয়ে গেছি।
ইশ! কত বিরক্ত না হয়েছিলো আমাদের
পরিবারে মানুষগুলো আমাদের নিয়ে, তবে
মাইর এই পর্যন্ত কম খাইনি তাদের হাতে।
.
কথাগুলো ভাবা শেষ হতে না হতেই সাদনান বলে
উঠলো, মামা ওই দিন ইসলামপুর হয়ে আসার সময়
পাঞ্জাবি পিছ এর দোকানে ঢুকছিলাম। ইন্ডিয়ান ভালো
কোয়ালিটির পাঞ্জাবি পিছ আসছে। আজকেতো
ফ্রি আছি চল তিন জনে একরকম তিনটা পাঞ্জাবি পিছ
নিয়া আসি। তারপর ওই দিক থেকেই বানাতে দিয়ে
দিবো। এইবার শবেবরাতে তিনজন এক রকমম
পাঞ্জাবি পরবো।
ওর কথাটা শুনেই আমি বলে উঠলাম, আচ্ছা ঠিক আছে
বিকালে চলিস।
আমার মতামত পাওয়ার পর সাদনান অকিবকে বলে
উঠলো, কি মামা বিকেলবেলা রেডি থাইকো
তাইলে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
.
বিকেল তিনটার দিকে আমরা তিনজন ইসলামপুর যাওয়ার
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
.
সেইখানে পৌছানোর পর কয়েকটা দোকান
দেখে তারপর একটা দোকান থেকে তিনটা একই
ডিজাইনের পাঞ্জাবি পিছ নিলাম। পাঞ্জাবি পিছ গুলো
নিয়ে সোজা সেইখানেই এক টেইলর এ বানাতে
দিতে চলে গেলাম।
.
টেইলর এ যেয়ে তিন জন পাঞ্জাবির মাপ-টাপ দিয়ে
যেই টেইলর থেকে বেড় হোলাম। ঠিক তখনি
সরাসরি শিফার সাথে আই কন্টাক্ট হয়ে গেলো।
বিয়ের পর যেনো আগের থেকে খুব সুন্দর
হয়ে গেছে। আগের থেকে কিছুটা মোটাও
হয়েছে।মেয়েটা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রইলো। কেন যেনো বড্ড ইচ্ছে
করছিলো ওর সাথে একটু কথা বলি। কিছু বলার
আগেই অকিব আমার হাতটা টান দিয়ে ওর সামনে
থেকে আমাকে চাপানো চেষ্টা করলো। আমি
যেনো সেই মুহূর্তে পাথর হয়ে গেছিলাম।
অকিবের টানে চুল পরিমানো হিললাম না। যেই
শিফাকে দেখলাম মুখটা খুললো কিছু একটা বলার
জন্য তখনি খেয়াল করলাম পিছন থেকে কেউ
ওকে ডাক দিয়েছে। তাকিয়ে দেখলাম সেই
ব্যাক্তি আর কেউ না শিফার স্বামি। মেয়েটা আমাকে
আর কিছু না বলেই মুখটা বন্ধ করে চলে গেলে।
.
ও চলে যাওয়ার পর সাদনান হুট করে আমাকে বলে
উঠলো, কিরে তুই এমনে দাঁড়ায়া আছোস কেন?
এখনো এই মেয়ের প্রতি তোর দরদ আছে?
.
শিফা আমার বড় মামির বড় ভাইয়ের মেয়ে। মামার
বিয়ের সময় আমরা দুইজনেই খুব ছোট ছিলাম।
আমরা সবাই তখন একি এলাকাতে ছিলাম। মামা গাজীপুর
জায়গাজমি কিনেছিলো বিদায় মামাতো বোনটা হওয়ার
পর সেইখানে চলে যায়। আর আমরা পুরান ঢাকা
ছেড়ে নতুন ঢাকা/ জিঞ্জিরাতে চলে আসি। মামার
শশুর বাড়ির মানুষের সাথে আমাদের আগে
থেকেই অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। সেই
সুবাদে জিঞ্জিরা আসার পরেও প্রতি সাপ্তায় দুই
একবার সেইখানে যাওয়া পরতো। সেইখান
থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়। মেয়েটা পুরান
ঢাকা থাকার পরেও ওর মাঝে পুরান ঢাকার
মেয়েগুলোর মতো কোনো রকম চালচলন
আমি দেখিনি। খুব ভদ্র একটা মেয়ে ছিলো। আমার
মা তো কথায় কথায় ছোট বেলায় বলতো, হারামজাদা
শিফার পা ধুয়া পানি খা। তোর থেকা বয়সে তিন মাসের
ছোট দেখছোস কত গুছায়া থাকে, বাবা-মার সব কথা
শুনে।
আর সেই শিফা আমার মতো ফাতরা একটা ছেলের
প্রেমে পড়েছিলো একটা সময়। আমি যতই ফাতরামি
করতাম না কেনো শিফার কাছে আমি নিষ্পাপ, অবুঝ
ছেলেটাই ছিলাম। সবাই আমার খারাপ দিকটা স্পষ্ট
দেখলেও এই মেয়েটা আমার ভালো দিকটা
খুঁটিয়ে নাটিয়ে ঠিকি দেখে নিয়েছিলো। একটা
বছর রিলেশনটা আমাদের ছিলো। এই এক বছরে
আমরা কোনো দিন আলাদাভাবে দেখা করিনি। ওকে
দেখতে ইচ্ছে হলেই আমি কোনো বাহানা দিয়ে
ওদের বাসায় চলে যেতাম। কিন্তু এই ব্যাপারটা বড় মামি
ধরে ফেলেছিলো। মামি চাইলে পারতো শিফার
সাথে আমার রিলেশনটা অটুট রাখতে। কিন্তু সে তা
করলোনা! মামি তার ভাইকে ভুলভাল কান পড়া দিয়ে
শিফার সেই বছরের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে
দিয়েছিলো। তার পর থেকেই মামি আমাকে একটুও
সহ্য করতে পারতোনা। মামাতো বোনটাকেও
আমার কাছে আসতে দিতোনা। তার দশম শ্রেণি
পড়ুয়া এই মেয়েটাকে আবার জাদু করে ফেলি যদি
আমি! ছেলেদের কষ্ট পেতে নেই। তবে
ভিতরে ভিতরে ওর নাম ঠিকই জপতাম। আর জপবোই
না কেনো অজানা ছোয়ার অনুভূতি টা শিফাই আমার
মাঝে প্রথম সৃষ্টি করেছিলো। কিন্তু সেই
ছোয়াটা আর পাওয়া হই নি। তবে সব কিছু ভুলে
গেছিলাম আর তাছাড়া জীবনটা আগাতে হলে
পুরোনো স্মৃতি গুলো ভুলে থাকায় শ্রেয়। কিন্তু
আজ কেন যেনো সেই স্মৃতিগুলো হঠাৎ ওকে
দেখার পর কড়া নাড়া দিলো। তবে মানতে হবে
স্বামির ডাকে আলাদা শক্তি আছে। তা না হলে তিনটা
বছর পর দেখা হলো ওর সাথে স্বামির সামান্য একটা
ডাকে কিছু না বলে চলে যেতে পারলো!
.
সাদনান আস্তে করে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে
আবার বলে উঠলো, কিরে কিছু বলতাছোস না
কেন?
"আরে দূর কিসের দরদ! কয় দিন পর বাচ্চার মা হয়ে
যাবে এখন দরদ দেখিয়ে লাভ আছে? চল বাসায়
চল।
.
আমি ভালো করেই জানি সাদনান একটু ঘাড়ত্যাড়া
টাইপের ছেলে। এখন যদি এমন করে কথাটা না
বলতাম তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে ও অনেক কথা
বলবে। যা আমি মোটেও শুনতে চাই না। আর শিফার
সাথে আমার সম্পর্কের ব্যাপার টা ওরা শুরু থেকেই
জানতো।
.
এলাকাতে আসার পর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায়
চলে আসলাম। বাসায় যেয়ে দেখি মা নুডুলস রান্না
করেছে। আমি যাওয়ার সাথে সাথেই এক বাটি নুডুলস
এনে আমার সামনে দিলো। মা জানে আমার নুডুলস টা
খুব পছন্দ। আমি বাটিটা আমার হাতে নিয়ে আস্তে
আস্তে খেতে লাগলাম। মা আমার পাশে কিছুক্ষণ
চুপ করে বসে থেকে বলে উঠলো, তোর
বড় মামা ফোন দিছিলো।
"কি বল্লো?
"শোভার জন্য ছেলে দেখেছে।
ছেলেদের শোভাকে পছন্দ হইছে। কাল নাকি
তোর মামা আর মামি ছেলেদের বাসায় যাবে
আমাকে গাজীপুর যেতে বল্লো আমাকে
সাথে করে নিয়ে যাবে।
"কি! শোভার জন্য ছেলে দেখছে! মাত্র
মেয়েটা ভার্সিটিতে উঠলো। কিছুদিন যাক! এতো
তাড়াতাড়ি এসবের কি আছে?
"এত তাড়াতাড়ি করবোনা! কোন ফাতরা পোলার সাথে
জানি পেয়ার মোহাব্বত করা শুরু করছে। যদি উলটা
পালটা কিছু কইরা ফালায় তখন কি হইবো।
.
কথাটা মা একটু চেঁচিয়ে বলে উঠলো। কেন
যেনো ছেলেটাকে ফাতরা বলাতে আমার খুব রাগ
উঠলো। আমি চুপ করে না থেকে বলে
উঠলাম,ছেলে ফাতরা তোমাকে কে বলছে?
"তোর মামি বলছে। তোর মামি ছেলের খোজ
খবর আগেই নিছে।
"তোমার ভাইয়ের বউ এর কাছেতো সব
ছেলেরাই ফাতরা। নিজের আপন ভাগ্নে কে তিনি
ফাতরা প্রমাণ করছে। অন্যের ছেলেকে ফাতরা
প্রমাণ করতে তার কাছে সেকেন্ডের ব্যাপার।
আমার কথাটা শুনে মা আবার বলে উঠলো, ওহ সেই
কথা এখনো মনে আছে?
"এইটা ভুলার মতো কথানা। ঐ মহিলাটা আমার দুর্বল
জায়গায় হাত দিছে। ফাতরা ভাইবা নিজের মেয়েটাকে
ও আমার সামনে ভিড়তে দেয় নাই। যদি তার
মেয়েটাকে কিছু করে ফেলি। এরকম মন মানুষিক
ওয়াল মহিলা তিনি। এই কথা মরার দিন পর্যন্ত মনে
থাকবে আমার। আমার সাথে দুই নজর করছে না,
এখন নিজের মেয়েকে দিয়ে সেই শিক্ষা পাবে।
.
কথাগুলো আমি এক সাথে খুব রাগ নিয়ে বলে
নুডুলস টুকু না খেয়েই বাহিরে বেড় হয়ে গেলাম।
.
রাতে বাসায় ফিরেই আমি আমার রুমে যাওয়ার সাথে
সাথে মা ভাত নিয়ে আমার রুমে আসলো। আমি আর
কোনো কিছু না বলে ভাতটুকু খেয়ে নিয়ে
সোজা ঘুমাতে চলে গেলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তাটা সেরেই কাজে
যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।
.
হাসপাতালে এসেই সোজা রিসিপশনে ঢুকে বসলাম।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আমার কলিগ প্রিতি আপু বলে
উঠলো, ফায়সাল কাল রাতে ২৫৮, ৩২৪, ৪৭২ আরো
বেশ কয়েকটা কেবিনের রোগী রিলিজ হইছে।
এই নেও ফাইল গুলা তুমি চেক করে আমাদের মূল
ফাইলে সব তুলে ফেলো।
.
কথাটা বলেই প্রিতি আপু ফাইলগুলো আমার হাতে
দিয়ে কাজে মন দিলো।প্রিতি আপু আমার দুই
বছরের সিনিয়র। আর তাছাড়া তিনি সেই শুরু থেকেই
আমাকে অনেক হেল্প করে আসছে। ভাগ্যেটা
ভালো প্রিতি আপুর মতো এমন একটা কলিগ
পেয়েছি। আমি আর বসে না থেকে ফাইলগুলো
চেক করে আমাদের মূল ফাইলে সব কিছু তুলতে
লাগলাম।
.
হঠাৎ করে মোবাইলটা বেজে উঠার সাথে সাথে
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম মা ফোন
করেছে। রিসিভ করে বলে উঠলাম, হ্যালো!
" ওই তুই তাড়াতাড়ি গাজীপুর রওনা দে। আমি আর
তোর বাবা রওনা দিতেছি।
মার কথাটা শুনে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। মা
এমন অস্থির হয়ে কেন গাজীপুর যেতে
বল্লো? কারো কিছু হলো নাতো আবার। আমি
আর কিছুনা ভেবে মাকে বলে উঠলাম, এমন করে
কথা বলতেছো কেন? আর কি হইছে?
"শোভা সকাল থেকা ঘরে নাই। ওর কাপড় চোপড়
নিয়া বেড় হইয়া গেছে।
"কাপড় চোপড় নিয়ে বেড় হয়ে গেছে মানে?
"আরে! ওই ছেলের সাথে চইলা গেছে। তুই কথা
না বাড়ায়া তাড়াতাড়ি রওনা দে। আমি আর তোর বাবা বেড়
হইতাছি।
"আচ্ছা
.
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে যেই প্রিতি আপুর
দিকে তাকালাম, খেয়াল করলাম তিনি আগে থেকেই
আমার দিকে তাকায়ি আছে। আমি কিছু বলার আগে তিনি
বলে উঠলেন, কি হইছে?
"আপু আমার মামাতো বোনটাকে নিয়ে খুব সমস্যা
হইছে। কাইন্ডলি আমাকে এখন একটু গাজীপুর
যেতে হবে।
"আজকের দিনটাইতো তাই না?
"হ্যা! আপু।
"আচ্ছা ঠিক আছে যাও আমি এই দিকটা সামলিয়ে নিচ্ছি।
"ধন্যবাদ আপু।
কথাটা বলেই আমি রিসিপশন থেকে খুব দূরত্বে
বের হয়ে গেলাম।
.
গাজীপুর পৌছাতে প্রায় দুপুর ১টার মতো বেজে
গেলো। বাস থেকে নেমে রিকশা নিয়ে একদম
মামাদের বাড়ির গেটের সামনে যেয়ে নামলাম।
নামার সাথে সাথে খেয়াল করলাম ছোট মামা আর বাবা
কি নিয়ে যেনো আলোচনা করতেছে। বাবা আর
মা তাহলে আমার আগেই এসে পরেছে। আমি আর
তাদের সামনে না যেয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলাম।
বাড়ির ভিতর ঢুকার সাথে সাথে দেখলাম বাড়িটা যেনো
মহিলা দিয়ে ভিড় হয়ে গেছে। এরূপ দৃশ্য দেখে
আমি কিছুটা অবাক হলাম। বড় মামার রুমের ভিতর ঢুকে
দেখি বাড়ির সবাই এক রুমে বসে আছে। বড় মামা
খাটের উপর শুয়ে আছে। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে
গেলাম। কি হলো আবার উনার? আমি কাউকে
উদ্দেশ্যে না করে বলে উঠলাম, কি হইছে মামার।
.
আমার কথাটা শুনে ছোট মামি বলে উঠলো,
স্ট্রোক করছে।
ছোট মামির কথাটা শুনে আমার ভিতরটা কেমন
যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো। ভালো করে
তাকিয়ে দেখলাম বড় মামি চুল গুলো
এলোমেলো করে বসে আছে আর আস্তে
আস্তে কি যেনো বলতেছে।নানী মামার
পায়ের সামনে বসে তজবি জপতেছে, আর মা
মামার মাথার সামনে বসে মামার মাথা বুলিয়ে দিচ্ছে আর
কাঁদতেছে।
.
আমি এইবার ছোট মামিকে বলে উঠলাম, হাসপাতাল নিয়া
গেছিলেন?
"হ্যা। এইযে কিছুক্ষণ আগে নিয়ে আসলাম হাসপাতাল
থেকে।
"কি বলছে ডাক্তার?
"তেমন কিছু বলে নাই। যাওয়ার পর চেকাপ করলো
তারপর ঘুমের একটা ইনজেকশন দিয়ে বলছে আট
ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে। শোভাটা যে কেন
এমনটা করলো? এমনটা না করলে ভাইয়া কি আর
স্ট্রোক করতো!
"ছেলেটা এইখানে কই থাকে?
"ভাওয়াল কলেজের ওইদিকে।তোমার ছোট মামা
চিনে ওদের বাসা।
"ওদের বাসায় খোজ খবর নেওয়া হইছে?
"নেওয়ার সুযোগ টা পেলাম কোথায়? ভাইয়াকে
নিয়েই তো দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেছে সকাল
থেকে।
.
আমি আর ছোট মামিকে কিছু জিজ্ঞাস করলাম না।
আস্তে করে বড় মামার সামনে যেয়ে দেখলাম
তার ঠোট দুটো বাকা হয়ে আছে। আর বাম হাতটা
কেমন ঠুঙ্গিয়ে গেছে। তার এরূপ দৃশ্য দেখে
শোভার উপর কেন যেনো মাত্রা অতিরিক্ত রাগ
হতে লাগলো। আমি আর সেইখানে দাঁড়িয়ে না
থেকে সোজা ছোট মামার কাছে চলে গেলাম।
.
ছোট মামার কাছে যেয়েই তাকে বলে উঠলাম,
এখন কি সিদ্ধান্ত নিলেন? কি করতে চাচ্ছেন?
আমার কথাটা শুনে মামা বলে উঠলো, ছেলেদের
বাসায় যাই। ওইখান থেকে দেখি খোজ খবর কিছু
পাই কিনা।
"ছেলেরে কি চিনেন? ছেলে কেমন?
"হুম। ছেলে সুবিধার না। নেশা করে, নেশা করারো
একটা লিমিট আছে,কিন্তু এই ছেলে লিমিট ছাড়া নেশা
করে, নেতা-ফেতাদের পিছনে পিছনে ঘুরে
দুইবার জেলেও গেছে। ছেলে সুবিধার হলে
একটা বার ভেবে দেখতাম সব কিছু।
.
ছোট মামার কথাটা শুনে পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে
গেছিলাম ছেলে আসলেই ভালো না। কারন ছোট
মামাও এই জেনারেশনেরি ছেলে। তিনি বুঝেন
আজ কালকের ছেলেরা একটু চেংড়া হবেই। তবে
মাত্রা অতিরিক্ত আবার ভালোনা। তবে একটা জিনিস
মানতে হবে এই সব ছেলে গুলোর মুখে আলাদা
রকমের মজা আছে এরা খুব সহজেই
মেয়েগুলোকে বলদ বানিয়ে যেমনি খুশি
তেমনেই নাচাতে পারে।
আমি আর কিছু না ভেবে মামাকে বলে উঠলাম,
তাহলে চলেন ছেলেদের বাসায় যাই।
"হুম চল।
মামা কথাটা বলেই বাবাকে বাসায় থাকতে বল্লো
তারপর আমাকে নিয়ে রওনা দিলেন।
.
ছেলেদের বাসায় যাওয়ার পর ছেলের মা বল্লো
তার ছেলে সকালে বেড় হইছে এখনো
আসেনি। মামা ছেলের মাকে সব কিছু খুলে
বল্লো কিন্তু মহিলা বলছিলো তিনি কিছুই জানেনা।
একটা সময় মামা রেগে যেয়ে যেই বল্লো,
মেয়ে যে কাজ করছে পরিবার,আত্মীয়স্
বজনের সবার মন থেকে উঠে গেছে। আর তার
উপর মেয়ের বাবা স্ট্রোক করেছে। এইখানে
আপনার নিজের মেয়ে ভেবে চিন্তা করে
দেখেন তো আপনার মনের অবস্থাটা কি রূপ ধারণ
করে।
.
মামার কথাটা শুনে ভদ্র মহিলা কি ভেবে যেনো
বলে উঠলো, দাড়ান আমি দেখতেছি।
মহিলাটা কথাগুলো ময়মসিংহের ভাষায় বলেছিলো।
বুঝতে আর বাকি রইলোনা ছেলেরা যে সেই
কুইট্টালবাম,খাইয়ালবাম গ্রামের পাবলিক।
.
ছেলের মা কাকে যেনো ফোন দিলো। আর
এদিক দিয়ে আমি শোভার নাম্বারে ফোন দিয়ে
দেখলাম নাম্বার খোলা নাকি। কিন্তু নাহ! ওর নাম্বার
বন্ধ আসছিলো। আমি একটু মহিলার দিকে খেয়াল
করলাম। তিনি ফোনে কাকে যেনো তাদের
আঞ্চলিক ভাষায় জিজ্ঞাস করতেছে, জাবেদ
দেখতো নাহিদ বন্দে আছি নাকি? আমাকে তাড়াতাড়ি
দেখে জানা।
.
মহিলা কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিয়ে মামাকে
বলে উঠলো, মেয়ে মানুষ সামলিয়া রাখতে পারেন
না?
"নিজের বুঝ নিজে বুঝে,সামলিয়ে রাখার আর কি
আছে। আর তাছাড়া আমাদের মেয়ে এমন করতে
পারবে তা জানা ছিলোনা।
.
মামার কথাটা শেষ হতে না হতেই দেখলাম মহিলার
মোবাইলটা বেজে উঠলো। ফোনটা তিনি রিসিভ
করেই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বল্লো, আচ্ছা
ঠিক আছে। খবরদার নাহিদ যেনো বুঝতে না পাড়ে
আমি ওর খবর নিছি।
এতটুক কথা বলেই ফোনটা কেটে দিলো মহিলাটা।
.
তারপর মামার দিকে তাকিয়ে মহিলাটা বলে উঠলো,
নেত্রকোনা আছে। নাহিদ আর আপনাদের
মেয়ে।
"ঠিকানাটা দেন।
"ঠিকানা দিলে ওইখানে যেয়ে খুজতে খুজতে
অনেক দেড়ি হয়ে যাবে। চলেন আমিও যাবো
আপনাদের সাথে।
মহিলাটার এরূপ ব্যবহার দেখে খুব ভালো লাগলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর আড়াইটা বাজে।
.
আমরা আর বেশিক্ষণ দেড়ি না করে
নেত্রকোনার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। রাস্তা
যেনো ফুড়াচ্ছিলোই না।
.
টানা ছয় ঘন্টা পর নেত্রকোনা এসে পৌছালাম। এর
ভিতর দুইবার বাস পালটাতে হয়েছে। রাত ৯টা বেজে
গেছিলো। আমার একটু ভয় লাগছিলো। ছেলেটা
শোভার সাথে উল্টা পালটা কিছু করবেনা তো!
নেত্রকোনা আসার পর গট গট টাইপের এক
ধরনের গাড়িতে উঠলাম।
.
প্রায় আধা ঘন্টা পর একটা বিশাল ফসলি জমির সামনে
এসে গাড়িটা থামলো। গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ
হাটার পর দেখলাম একটা কুঁড়েঘর এর দিকে মহিলাটা
যাচ্ছে। একশ পাওয়ারের একটা হলদে বাল্ব ঘরটার
সামনে ঝুলানো। ঘরটার সামনে এসেই মহিলা
জড়তে এক ধাক্কা দিয়ে ঘরের দরজাটা খুলে
ফেললো।
.
ঘরের ভিতরে যেয়ে দেখি, শোভা এক কোনায়
বসে কাঁদতেছে। আর ছেলেটা ঘুমাচ্ছে
অন্যদিকে। শোভা আমাদের দেখে বসা থেকে
লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ছেলেটার মা
ছেলেটাকে লাথি দিয়ে শোয়া থেকে উঠালো।
একদম শুকনো টাইপের ছেলেটা। চেহারাটা খুব
গ্লেস মারতেছিলো, সবার চোখেই সুন্দর
লাগবে। এই যুগের মেয়েদের ক্রাশ ও বলা
যেতে পারে ছেলেটাকে। এই গ্লেস মারার মূল
উৎসটা পিছনে ছেলেটা দিনে রাতে যে লাল
পৃথিবীর নিচে কতবার আগুন ধরিয়েছে সেইটা আর
কোনো মেয়ে বুঝবেনা। তবে ওর শরীর
আর চোখ দেখে বুঝে গেছিলাম এ ছেলে
আসলেই বড় ধরনের খোর।
.
শোভার দিকে মামা তাকাতেই দেখলাম তার চোখে
যেনো পানি জমে গেছে। আর জমবেই বা না
কেনো এই ছোট মামা বড় মামার থেকেও বেশি
ওকে ভালবাসতো। মামা শোভাকে ডাক দিয়ে বলে
উঠলো, এদিকে আয়।
শোভা মামার কাছে এসেই বলে উঠলো, চাচ্চু
আমার ভুল হয়া গেছে। আমি ভাবছিলাম ও ভালো
হয়ে গেছে। কিন্তু ও এইখানে এসেও আমার
সামনে কি সব জানি খাইছে।
"খারাপ ভালো হইতে অনেক সময় লাগে। নিজের
কপালে নিজে কুঠার মারলি। খুব ভালো করসছিস।
আজকে তোর জন্য তোর বাবা স্ট্রোক করে
নাযাহাল অবস্থা।
"কি!!!
কথাটা বলেই শোভা আবার কেঁদে উঠলো।
.
ছেলেটার মা ও ছেলেটাকে একের পর এক কথা
শোনাতেই থাকলো। আমি আস্তে করে মামা কে
বলে উঠলাম, এখন কি এইখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন?
এমনেই অনেক রাত হয়ে গেছে। বাসায় যেতে
যেতে ভোর হয়ে যাবে।
.
মামা আমার কথাটা শুনে বলে উঠলো, দাড়া মহিলাটার
সাথে কয়েকটা কথা বলে নেই।
তারপর মামা মহিলাটার সামনে যেয়ে কি যেনো
বলতে লাগলো। আমি ছেলেটার দিকে তাকালাম
ছেলেটা নেশার ঘোরে দাঁড়ানো থেকে বসে
পরেছে।
.
মামার মহিলাটার সাথে কথা বলা শেষ হওয়ার পর
শোভাকে নিয়ে আমরা বাসায় যাওয়ার জন্য বেড়
হয়ে গেলাম।
.
নেত্রকোনা থেকে গাজীপুর পৌছাতে ভোর
চারটা বেজে গেলো। যেই জায়গায় কোনো
দিন যাওয়ার নাম,ডাক নেই নি আজকে এই মেয়ের
জন্য সেই জায়গায় যেতে হয়েছে। শরীরের
অবস্থা বারোটা বেজে গেছে এরকম একটা লম্বা
জার্নির ফলে। এখন ঢাকা কি করে যাবো? তার উপর
আটটা বাজে রিসিপশনে থাকতে হবে। কিন্তু আমার
শরীরটা তো ঠিক মতো কাজ করতেছেনা। নাহ!
আজকে কোন মতেই কাজে যাওয়া হবে না।
আজকের দিনটার জন্য যে করেই হোক প্রিতি
আপুকে ম্যানেজ করে নিতে হবে।
.
বাস থেকে নামার সাথে সাথে মামা শোভার ব্যাগ টা
নিয়ে একটা রিকশাতে উঠলো। আমি আর শোভা
আরেকটা রিকশাতে উঠে মামাদের বাসায় যাওয়ার জন্য
আবার রওনা হলাম। হুট করে কান্না জড়িতো কন্ঠে
শোভা আমাকে বলে উঠলো, বাবার কিছু হবেনা
তো?
আমি একটু রাগ নিয়েই বলে উঠলাম,জানিনা!
মেয়েটা একটু ন্যাকা শুরে বলে উঠলো, এমন
করে কথা বলতাছো কেন?
"কোনো কথা বলবিনা চুপ।
শোভা আর কিছু না বলে ফুফিয়ে সাইলেন্ট মুডে
কান্না করতে লাগলো।
.
বাসার সামনে আসার পর রিকশা থেকে নেমে
মেইন গেট নক করার সাথে সাথে মা এসে দরজা
খুললো। শোভা মাকে দেখেই সোজা যেয়ে
জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলতে
লাগলো, ফুপ্পি তুমিও সবার মতো করে আমার উপর
রাগ দেখাবা নাতো?
.
মা ও ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, কেন
করতে গেলি এই রকম কাজটা মা!
"আমার অনেক বড় ভুল হয়া গেছে। তুমি আমার উপর
রাগ দেখিয়ো না অত্যন্ত পক্ষে। সবাই যদি রাগ
দেখায় তাহলে আমার কি হবে?
"আচ্ছা চল এখন ঘুমাবি।
"বাবা ঠিক আছেতো ফুপ্পি?
"হুম ঠিক আছে। কিছুক্ষণ আগে ঘুমের টেবলেট
খায়িয়ে দিছি এখন ঘুমাইছে।
.
মা আর কিছুনা বলে শোভাকে নিয়ে শোভার রুমে
যেই ঢুকতে যাবে ঠিক তখনি বড় মামী রুম থেকে
বেড় হয়ে আসলো, যেই মামী শোভাকে কিছু
বলতে যাবে মা তখনি মামীকে থামিয়ে দিয়ে বলে
উঠলো, যা বলবি সকালে বলিস এখন মেয়েটারে
ঘুমাতে দে। কথাটা বলেই মা শোভাকে রুমে
নিয়ে চলে গেলো।
আসলেই আমার মা শোভাটাকে খুব বেশি ভালবাসে।
এই রকম একটা কাজ করার পরেও ওর প্রতি মা'র
কোনো অভিযোগ নাই।
.
আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে মুখ, হাত, পা ধুয়ে
নানীর রুমে ঘুমাতে চলে গেলাম।
.
সকাল ৯.০০ বাজতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। আর
ভাঙ্গবেই বা না কেনো। পাশের রুমে তমুল
বেগে ঝড় হচ্ছিলো শোভার উপর দিয়ে। আমি
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম প্রিতি আপুর ৪
ফোন এসেছিলো। আমি আর কিছু না ভেবে প্রিতি
আপু কে ফোন দিয়ে সমস্ত ব্যাপারটা খুলে
বল্লাম। আর বল্লাম আগামীকাল যেইভাবেই হোক
আমি কাজে আসবোই। তিনি যেনো আজকের
দিনটা একটু ম্যানেজ করে নেয়।
.
তারপর মোবাইলটা রেখে ফ্রেশ হয়ে ছোট
মামিকে ডাক দিয়ে নাস্তা দিতে বল্লাম।
.
নাস্তাটা খাওয়া শেষে বড় মামার রুমের সামনে
যেয়ে দেখি শোভার নানা আর মামা এসেছে। বাড়ির
সবাই বড় মামার রুমে বসা।শোভা মা'র সাথে ঘেষে
বসে আছে। বড় মামি হুট করে শুর টেনে বলে
উঠলো, হায়রে শোভারে! নিজের কপালে
নিজে কালো দাগ বসিয়ে দিলি! এলাকার সবাই তোর
এই খবর জেনে গেছে। যেই ছেলেরা
তোকে পছন্দ করে গেছে তাড়াও তোর খবর
পেয়ে গেছে। এখন কি হবে তোর?
.
সবার মুখে কোনো কথা নেই। বড় মামার দিকে
তাকিয়ে দেখলাম স্ট্রোক করাতে তার বাম হাতটা
আর ঠোট টাতে খুব ক্ষতি হয়েছে। তিনি নির্বাক
হয়ে শোভার দিকে তাকিয়ে আছে। মামি একের
পর এক কথা বলেই যাচ্ছিলো। বড় মামীকে
থামিয়ে তার বাবা/শোভার নানা বলে উঠলো, একটা
অঘটন যখন ঘটিয়ে ফেলছে মেয়েটা এখন তো
আর চেঁচালেও সব ঠিক হয়ে যাবেনা। আর তাছাড়া
এখন তো আর কেউ জেনে শুনে ওকে বিয়ে
করতে চাইবেনা। লুকিয়ে বিয়ে দিলেও যখন
স্বামী জানতে পারবে তখন কি হবে?
.
কথাটা বলেই শোভার নানা একটু থামলো। তারপর
আবার বলে উঠলো, আমার এক ভাতিজার ছেলে
আছে। ছেলের সয় সম্পত্তি ভালো। বিয়েও
হয়েছিলো এক বাচ্চা আছে। বউ সুবিধার না দেখে
ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এখন ছেলেরে বিয়ে
দিবে আবার বলতাছে। দেখি শোভার কথা বলুম নি।
আমি বললে তারা রাজি না হয়ে পারবেনা।
.
বুড়ার মুখে এরূপ কথাটা শুনার পর কেন যেনো
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। ঠিক তখনি মা
আর চুপ করে না থেকে বলে উঠলো, তালই
এইটা কেমন কথা বলতাছেন? এমন জায়গায় কেন
বিয়ে দিবো আমাদের মেয়েকে? এমন জায়গায়
আমার ভাতিজীর বিয়ে হতে দিবোনা।
.
মার কথাটা শুনে শোভার নানা চটে গিয়ে বলে
উঠলো, আমার নাতীন রে যেইখানে ভালো
হইবো ওইখানেই বিয়ে দিমু। তোমার এইখানে নাক
গলাইতে হবেনা মাথারী।
.
শোভার নানার এরকম ঝাল কথা শুনে মা ও কয়েকটা
কথা শুনিয়ে দিলো তাকে। হুট করে বড় মামা
আস্তে আস্তে মাকে বলে উঠলো, দেখ
বোন শোভার নানা যা করবে সেইটা শোভার
ভালোর জন্যেই করবে। তুই শান্ত হ।
.
মামার কথা শুনে মা তেলে বেগুনে চটে গিয়ে
বলে উঠলো, এমন জায়গায় আমি ওর বিয়ে হইতে
দিবো না। দরকার পরলে আজকের মধ্যে আমার
ছেলেরে দিয়া তোর মেয়েকে আমি নিয়া
যাবো। তবুও জেনে শুনে আমার ভাতিজীর এমন
জায়গায় বিয়ে হতে দিবোনা।
.
আমি মা'র কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। বল্লোটা
কি মা এইটা! মা'র মুখে সবাই কথাটা শোনার পর আমার
দিকে তাকালো। আমি শুধু বড় মামীর চোখের
দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই মহিলা তার রূপবতী
মেয়েকে আমার সামনে ভিড়তে দেই নি যদি শিফার
মতো তার মেয়েকেও আমার খাচায় বন্ধি করে
ফেলি। আর আজ তার মেয়েকে এক বাচ্চার
বাপের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে আর সেইখান
থেকে আমার মা তার মেয়েকে মুক্তি দিতে আমার
সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেছে।
.
মামীর চোখেটাও যেনো এখন বলছিলো
শোভার সাথে আমার বিয়েটা হোক। সবাই চাচ্ছিলো
এমনটা হোক। আমার মন টাও চাচ্ছিলো এমনটাই
হোক। কারন আমি চাই বড় মামীর মাথাটা এই
সুযোগে আমার কাছে নিচু হয়ে যাক। তিনি আমার
মনের ভিতর কম বড় দাগ দেয়নি!
.
এইবার মা আমাকে বলে উঠলো, কিরে তুই আমার
কথা রাখবিনা?
.
মা'র কথাটা শুনে আমি মুখে কিছু না বলে মাথাটা হিলিয়ে
হ্যা সূচক ইশারা দিলাম।
.
আমার এরূপ সিদ্ধান্তে বড় মামা যে খুশি হয়েছে তা
আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
.
আমি বড় মামার দিক থেকে চোখটা ফিরিয়ে নিয়ে
শোভার দিকে তাকালাম। শোভা মা'র কাধে মাথা
রেখেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জানিনা
আমার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কতটা সঠিক হয়েছে। কিন্তু
এটা জানি শোভা আমার চোখে আগে যেমন
ছিলো এখনো তেমনি থাকবে। তবে একটা জিনিস
মানতে হবে শোভাকে মা মাথায় তুলে রাখবে।
.
মামাদের বাড়িতে যেনো এক শান্তির ছোয়া
নেমে এসে পড়েছে ।গতকাল যেই বাড়িটাতে
এই সময়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছিলো।
আজ সেই বাড়িতে আনন্দ উল্লাসে মেতে
উঠেছে। বিষয়টা কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছেনা!
আসলেই অদ্ভুত!
.
দুপুরের খাওয়া শেষে দেখলাম ছোট মামা আর
শোভার নানা বাজারে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো।
ব্যাপারটা কেমন যেনো এলোমেলো
লাগছিলো আমার কাছে। এমন অবেলায় বাজারে
কেন যাচ্ছে?
আমি আর কিছুনা ভেবে নানীর রুমে চলে
গেলাম। ভাবতে লাগলাম রৌদ্রটা কমলেই ঢাকার
উদ্দেশ্যে রওনা হবো। এখন এক চোট ঘুমিয়ে
নেওয়া যাক।
.
ঘন্টা খানিক পর ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে
বাহিরে বেড় হয়ে দেখি সবাই কেমন জানি ব্যস্ত
হয়ে পড়েছে। রান্নাঘর থেকে স্বুঘ্রাণ ভেসে
নাকে আসতেছিলো। ব্যাপার টা আমি বুঝলাম না।
মাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম, কি হইতাছে বাসায়?
সবাই এতো ব্যস্ত কেন?
"ব্যস্ত হবেনা! এশার নামাজের পরেইতো কাজী
এসে পরবে।
"কাজী! কাজী কেন?
"বল্লাম না তখন আজকেই তোর সাথে শোভাকে
বিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে যাবো।
.
মা'র কথাটা শুনে কি বলবো বুঝতে পারতেছিনা।
আজকেই কেন বিয়ে! আমিতো ভাবছিলাম মা তখন
কথায় কথায় মামাকে বলে ফেলেছিলো যে আমার
ছেলেকে দিয়ে তোর মেয়েকে আজকেই
নিয়ে যাবো। তাই বলে কি আজকেই বিয়ে হতে
হবে?
.
আমি চুপ করে না থেকে মাকে খুব শান্ত হয়ে
বলে উঠলাম, জিনিসটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছেনা?
"সমস্যা কি?
"ঈদের পর করলে হতো না কাজটা?
"একিতো। ঈদের পর আমাদের বাসায় ছোট করে
অনুষ্ঠান করে ফেলবো।
.
আমি আর একটা কথাও বল্লাম না। আমি জানি মা'র সাথে
এই বিষয় নিয়ে কথা বল্লে আর কাজ হবেনা। তারপর
কি মনে করে যেনো বাহিরে বেড় হয়ে
গেলাম।
.
এশার নামাজের আগেই বাড়ির সবাই সবকিছু ঘুছিয়ে
কাজীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
এতক্ষণে আমার বড় আপু আর দুলাভাই,শোভার
ছোট মামা আরো বেশ কিছু লোক বাড়িতে এসে
পড়েছিলো। খেয়াল করলাম আপু শোভার সাথে
হেসে হেসে কি বলছে যেনো। আর শোভা
কিছুটা হাসতে চেষ্ঠা করতেছিলো।
.
এশার নামাজের পর কাজী এসে বিয়ের কাজটা শেষ
করে ফেল্লো। তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্বটা শেষ
করে শোভার নানার বাড়ির মানুষগুলো বাড়িতে যাওয়ার
জন্য আগে বেড় হয়ে গেলো।
.
রাতের সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। এই
অবস্থায় সি.এন.জি পাওয়াটাও খুব কষ্টের। আর তাছাড়া
শোভার সব জিনিসপত্র নিয়ে বাসে করে যাওয়াটা
সম্ভবনা। এমন অবস্থায় বড় মামা আর মামী বলে
উঠলো, আজকের রাতটা এইখানেই যেনো
থেকে যাই। কিন্তু আমার যে করেই হোক কাল
ঠিক সময়ে রিসিপশনে থাকতেই হবে। আমি বিষয়টা
সবাইকে ঠিক মতো বুঝালাম।আমার কথাটা শুনার পর বাবা
আমাকে একাই চলে যেতে বললো আর
বললো কাল তারা সকালে চলে আসবে। তারপর বাড়ি
থেকে যেই বেড় হতে যাবো তখনি বড় মামী
আমাকে ডাক দিয়ে বল্লো, সাবধানে যাস।
"ঠিক আছে।
ইশ! মহিলা শাশুড়ি সাজলো! কতগুলা বছর পর মহিলাটা
আজকে আমার একটু টেইক কেয়ার করলো।
.
সকালে প্রিতি আপুর আগেই হাসপাতালে এসে
রিসিপশনে যেয়ে বসলাম। গতকাল ঢাকা পৌছাতে
রাতের ২.০০ টা বেজে গেছিলো। আমি যে
আজকে প্রিতি আপুর আগেই হাসপাতালে এসেছি
সেটাই অনেক কিছু।
.
কিছুক্ষণ পর প্রিতি আপু চলে আসলো। আমাকে
দেখেই ছোট একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,সব
কিছু কি ঠিক ঠাক এখন?
"জ্বি । আর কোনো সমস্যা নেই।
"যাক ভালো।
আমি আর কিছু বল্লামনা। তারপর ডেস্কে থাকা ফাইল
গুলো নিয়ে দেখতে লাগলাম।
.
কাজ শেষ করে বাসায় পৌছাতে রাতের ৯ টা বেজে
গেছে। বাসায় এসে দেখি মা আর শোভা টিভি
দেখতেছে। আমি আস্তে করে আমার রুমে
যেয়ে ফ্যানটা ছেড়ে বিছানায় বসে শার্টের বুতাম
গুলো খুলতে লাগলাম।
.
শার্টটা খুলে যেই দরজার পিছনের স্টানে ঝুলাতে
যাবো তখনি দেখলাম শোভা দরজার সামনে
দাঁড়ানো। আমি ওকে দেখেই বলে উঠলাম, কি
হইছে?
"কই কিছু না তো।
.
শার্টটা স্টানে রাখতে রাখতে আমি শোভাকে
বলে উঠলাম, কিছু বলবি?
"না।
আমি আর কিছু ওকে জিজ্ঞাস না করে ওয়ারড্রব এর
সামনে যেয়ে যেই প্রথম ডয়ারটা খুলে আমার
টাউজার আর টি শার্ট টা বেড় করতে যাবো তখনি
শোভা পিছন থেকে আমাকে বলে উঠলো,
উপরের দুই ডয়ারে আমার কাপড় চোপড় রাখছি।
তোমার গুলো নিচের দুই ডয়ারে রাখছে ফুপ্পি।
.
আমি আর প্রথম ডয়ারটা খুললাম না। নিচের ডয়ার খুলে
টাউজার আর টি শার্টটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।
.
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ
করে মা'র রুমে গেলাম। মা আমাকে দেখেই
বলে উঠলো, ভাত দিবো?
"না। একটু বাহিরে যাবো। তোমরা কখন আসছো?
"দুপুর ১২ টার দিকেই আইসা পরছি।
"ওহ। আচ্ছা বাহিরের গেট টা লাগিয়ে দেও।
কথাটা বলেই বাহিরে বেড় হয়ে গেলাম।
.
বাহিরে বেড় হয়েই রাস্তার মোড়ের চায়ের
দোকানে যেয়ে দেখলাম সাদনান আর অকিব
বসে আছে। চা ওয়ালা মামাকে তিন কাপ চা দিতে
বলে আমি ওদের পাশে বসলাম।
.
আমাকে দেখেই ওরা বলে উঠলো,আসছোস
তাহলে তুই?
"হুম আসলামতো।
আমার দিকে তাকিয়ে অকিব বলে উঠলো,
কোনো সমস্যা হইছে নাকি?
"দাড়া চা খেতে খেতে সব বলি।
.
দোকানদার চা দেওয়ার পর সাদনান আর অকিবকে
কথাগুলো সব খুলে বল্লাম। আর ওদের না বলেও
কোনো উপায় নেই। আমার শোভার বিয়ের কথাটা
শোনার পর শালারা মশকারা শুরু করে দিলো। প্রথমে
সাদনান বলে উঠলো, মামা বিয়া হয়া গেছে আর তুমি
একটুও এক্সাইটেড না। মামাতো বোন হইছে
তো কি হইছে? আমার ছোট মামাতো বোন
থাকলে আমি যে কি করতাম!
"দেখ মামা ওকে আমি কখনো এমন চোখে
দেখি নাই।
"তাইলে বিয়া করলি কেন?
"ওর অন্য যেই জায়গায় বিয়ে হতো না কেনো,
স্বামী বাড়ির মানুষের সাথে একটু কথা কাটাকাটি
হলেই, ওর সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়টা নিয়ে খোটা
দিবে, আর দ্বিতীয়তো মামীর জন্য। তার
অহংকারটা কমিয়ে দিলাম। ফাতরা ছেলের সাথেই শেষ
পর্যন্ত তার নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে হলো।
.
আমার কথাটা শুনে সাদনান বলে উঠলো, হুম বুঝলাম।
আজকেতো তোমরা প্রথম একসাথে,এক বিছানায়
রাতে ঘুমাবা।মানে আজকেতো তোমাদের বাসর
রাত। প্লান কি?
"তুই ব্যাটা জীবনেও ভালো হবিনা।
এইবার সাদনান আর অকিব দুইজনেই হেসে উঠলো
আমার কথাটা শুনে।
.
সাদনান চুপ হয়ে যাওয়ার পর অকিব বলা শুরু করলো,
দোস্ত বিয়া করছোস এখন তো আমাদের আর
সময় দিতে পারবি না।
"আমি এমনটা বলছি?
"আরে ব্যাটা হইছে, বউ যখন ফোন দিয়ে বলবে,
বাবু কই তুমি! একটু বাসায় আসো। তোমাকে মজা
দিবো অনেকগুলা। এই মজার কথা শুনে তুমি ফায়সাল
ভাই-ব্রাদার ফালায়া উড়াল দিবা।
.
আমি জানি এখন শালারা মজা নিতেই থাকবে। আমি যেই
ওদের কিছু বলতে যাবো তখনি মোবাইলটা
বেজে উঠলো। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে
দেখি মা ফোন করেছে বাসা থেকে। আমি
ফোন টা ধরার সাথে সাথে ওই পাশ থেকে শোভা
বলে উঠলো, ফুপ্পি তোমাকে বাসায় আসতে
বলছে।
"আসতাছি।
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে যেই ওদের দিকে
তাকালাম তখনি ওরা হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
দেখছো বলতে না বলতে প্রথম দিনেই ফোন
দিয়ে দিছে। যাও যাও বউয়ের কাছে যাও!
ওদের কথাটা শুনে খুব রাগ উঠলো। আমি ওদের
কে আর কিছু না বলেই চায়ের বিলটা দিয়ে বের
হয়ে গেলাম।
.
বাসায় আসার পর দেখি বাবা কাজ থেকে এসে
পরেছে। মা ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে সবার
জন্য ভাত বাড়তে বাড়তে আমাকে বলে উঠলো,
রাতে বাহিরে বেড় হওয়ার অভ্যাসটা বন্ধ কর এখন
থেকে।
.
মা'র কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। কিছু
বলতেও পারতেছিনা বাবা সামনে। উনি না থাকলে কিছু
একটা বলতাম।
.
ভাত বাড়া শেষে মা শোভার পাশে বসে ওকে
তরকারী দিতে দিতে আমাকে আবার বলে
উঠলো, এখন নতুন করে আরেকটা দায়িত্ব বাড়ছে
তোর, সেই দিকটাও কিন্তু এখন খেয়াল রাখতে
হবে।
.
কথাটা মা বলার পর শোভার দিকে খেয়াল করে
দেখলাম শোভা ভাতের লোকমাটা মুখে নেওয়ার
সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়েছে। আমি ওর দিক
থেকে চোখটা ফিরিয়ে নিয়ে তরকারীর বাটি
থেকে চামচটা উঠিয়ে দুই চামচ ডাল আমার প্লেটে
নিলাম।
.
খাওয়ার এক পর্যায়ে দেখলাম মা শোভার ডান হাতের
চুড়িটা টান দিয়ে হাতের উপরে উঠিয়ে দিয়ে বলে
উঠলো, চুড়িটাই সামলাতে পারতেছিস না। বার বার
হাতের তালুর কাছে এসে পড়তাছে। আমার এই
সংসারটা সামলাবি কি করে?
মা'র কথাটা শুনে শোভা ওর চোখের সামনে আসা
চুল গুলো কানের চিপায় গুজে মাথাটা একটু নিচু করে
ভাত গুলো আঙ্গুল দিয়ে নাড়াতে লাগলো।
.
মা ওর এরূপ দৃশ্য দেখে একটু আওয়াজ করে
হেসে বল্লো, কিরে চুপ করে বসে আছিস
কেন? তাড়াতাড়ি খাঁ।
.
খাওয়া শেষে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে
যেয়ে দেখি বিছানার চাঁদরটা পালটিয়েছে। আমি
সেই দিকটাতে আর লক্ষ্য না করে বিছানাতে
লম্বানে যেই গাঁ এলিয়ে দিতে যাবো ঠিক তখনি
শোভা রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।
.
আমি আর লম্বানে না শুয়ে বালিশটা নিয়ে পাথালি করে
বিছানার এক প্রান্তে শুয়ে পড়লাম। ঠিক কিছুক্ষণ পর
শোভাও খাটের অপর প্রান্তে শুয়ে পড়লো।
আচ্ছা! আমি কি শোভাকে বড় মামীর উপর রাগ
নিয়ে বিয়েটা করলাম? নাহ! তার উপর আমার প্রচন্ড রাগ
আছে। তবে সেই রাগটা আমার উপর দিয়ে। ভিতর
দিয়েনা! মামীর মাথাটাতো নিচু হয়ে গেছিলো
তখনি যখন শোভা নাহিদর সাথে ভেগে গেছিলো।
তাহলে কি ওর সুবিধার জন্য আমি ওকে বিয়ে করলাম?
কি জানি!
.
আমি আর কিছুনা ভেবে চোখ দুটো বুজে ঘুমাবার
চেষ্টা করতে লাগলাম।
.
একের পর এক দিন চলে গেতে লাগলো।
বিয়ের আগে যেমনটা ছিলাম এখনো ঠিক তেমনি
আছি। তবে রাতে আড্ডা দেওয়ার পরিমানটা একটু
বেড়ে গেছে। এই নিয়ে বাবা কিছু না বল্লেও মা
প্রতিদিন কথা শুনায়। ছেলেরা নতুন বিয়ে করলে নাকি
ঘর ছাড়া কিছু বুঝেনা। বাহিরে বেড় হলেই নাকি কখন
বাসায় যাবে, কখন বউটাকে দেখবে সারাক্ষণ এই
চিন্তায় থাকে। কিন্তু আমি ঠিক উল্টো টা।আসলে
শোভার প্রতি আমার তেমন কোনো ফিলিংস কাজ
করেনা। এই নিয়ে মেয়েটার কোনো
অভিযোগ হয়তো নেই। আর থাকারো কথানা।
তবে মা শোভাকে পেয়ে খুব খুশিতে আছে তা
দেখলেই বুঝা যায়।
.
আজকে বাসায় ফিরতে প্রতিদিনের তুলনায় একটু
বেশিই দেড়ি হয়ে গেলো। কাজ থেকে
এসেই পাঞ্জাবিটা আনতে ইসলামপুর গেছিলাম।
সেইখানে যেয়ে কলেজের কিছু বন্ধুদের
সাথে দেখা। ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে
কখন যে সাড়ে বারোটা বেজে গেছিলো।
সেই খেয়ালটা আমার ছিলোনা। বাসায় এসে দরজাটা
নক করার সাথে সাথে দেখলাম প্রতিদিনের মতো
আজকেও শোভা দরজাটা খুললো। দরজাটা খুলেই
কেমন ভাবে যেনো আমার দিকে তাকালো
মেয়েটা। চোখ গুলো কিছুটা লাল দেখাচ্ছিলো
ওর।
.
আমি ঘরের ভিতর ঢুকে দেখলাম মা'র রুমে লাইট
অফ করা। বুঝতে আর বাকি রইলো না তারা ঘুমিয়ে
পড়েছে। তারপর আমি আমার রুমে যেয়ে হাতে
থাকা পাঞ্জাবির ব্যাগটা ওয়ারড্রব এর উপরে রেখে
যেই বিছানায় শুতে যাবো তখনি শোভা আমাকে
বলে উঠলো, কয়টা বাজে এখন?
ওর মুখে কথাটা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে
দেখলাম ১:১৫ বাজে। আমি শোভার দিকে তাকাতেই
দেখলাম ওর চোখটা ঘড়ির দিকে। আমি যেই কিছু
একটা বলতে যাবো তখনি শোভা আমাকে থামিয়ে
দিয়ে আবার বলে উঠলো,১.১৫ বাজে আর
তোমাকে কতগুলা ফোন দিছি?
.
শোভা কথাগুলো কেমন করেই যেনো
বলছিলো আমাকে। কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে। আমি
ওকে কিছুনা বলে মোবাইলটা পকেট থেকে
বেড় করে দেখলাম ৩৭টা মিসডকল। খেয়াল করে
দেখলাম মোবাইলটা সাইলেন্ট করা। তারপর আমি
ওকে বলে উঠলাম, মবাইল সাইলেন্ট হয়ে আছে।
ফোন দিছোস শুনবো কি করে?
"তোমার দেড়ি হবে আসতে একবার কি ফুপ্পিকে
ফোন দিয়ে বলতে পারতানা? জানো তুমি ফোন
ধরতেছনা দেখে উনি কত টেনশনে ছিলো।
কিছুক্ষণ আগে আমি ফুপ্পিকে মিথ্যা বলছি, কাজ
আছে দেখে তুমি হাসপাতালে গেছো। আসতে
দেড়ি হবে। আমার কথাটা শোনার পর ফুপ্পি আর ফুপা
ঘুমাইছে।
.
আমি কি বলবো কিছু বুঝতে পারতেছিনা। শোভা
আমার এরূপ চুপ করে থাকা দেখে আমাকে আর
কিছু না বলে খাটে যেয়ে ওর ওড়নাটা বালিশের
কোনায় রেখে শুয়ে পরলো।
.
রাগ দেখালো শোভা আমার উপর? তাও আবার
এতো আস্তে আস্তে কথা বলে। রাগ
উঠলেতো গলার আওয়াজটা খুব জড়তে হয়। কিন্তু
ওর গলার আওয়াজটা তো খুব নিচু ছিলো।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমের
ভিতর এসে শার্টটা পরতে লাগলাম। ঠিক তখনি
শোভাকে খেয়াল করলাম আমার পিছনে দাঁড়িয়ে
আছে। আমি ওর দিকে না তাকিয়ে শার্টের বুতাম
গুলো লাগাতে লাগাতে ওকে বলে ফেললাম,
দাঁড়িয়ে আছিস কেন কিছু বলবি?
"হুম।
শোভার কথাটা শুনে আমি পিছন দিকে ফিরে ওর
দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, কি বলবি?
"নাহিদ আমার ফোন নাম্বারটা ওর ফ্রেন্ডদের দিয়ে
আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে। একটা সিম এনে দিবা
আমাকে?
"আমার ডয়ারে একটা সাদা বক্স আছে। ওইটার ভিতরে
একটা সিম আছে। ওইটা আপাতত চালা।
"ঠিক আছে।
কথাটা শেষেই শার্টের কলারটা ঠিক করে আমার
মোবাইলটা পকেটে ভরে চুল গুলো আচরিয়ে
কাজে যাওয়ার জন্য বেড় হয়ে গেলাম।
.
দেখতে দেখতে শবেবরাত টা এসে পড়লো।
আজ রাতেই নামাজ। বাড়িতে আজকে আমরা চার
জনেই রোজা আছি। এই কয়েকটা দিনে শোভার
মাঝে একটা জিনিস খেয়াল করেছি। মেয়েটা আমার
উপর খুব চটে আছে। এর মূল কারন প্রতিদিন রাতে
আমি আড্ডা দিয়ে দেড়িতে বাড়ি ফিরি। তবে এই
বিষয়টা নিয়ে শোভা কখনো আমাকে স্পষ্ট করে
কিছু বলে নি। কিন্তু টুক টাক ওর সাথে কথা বলার সময়
আমার উপর চটে থাকার সেই ঝাজটা মেয়েটা
আমাকে কথার মাঝেই বুঝিয়ে দিতো। আমি কি
করবো? আমার বাসায় কেন যেনো এখন মনটা
টিকে না। আচ্ছা! আমি বেশি রাত করে আড্ডা দেই না
যা করি এতে করে শোভার এরকম রিয়েক্ট করার কি
আছে?
.
আজ আসরের আজানের আগেই হাসপাতাল থেকে
বাসায় রওনা দিলাম। ভাবলাম আসরের নামাজটা এলাকার
মসজিদে পড়বো। আর তাছাড়া আজকে রোজাটা
রেখে একটু বেশিই দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে।
শরীরটাও কেমন জানি দুর্বল দুর্বল লাগছিলো।
কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেড় হওয়ার পর
কোনোমতে যেনো বাস পাচ্ছিলাম না। যাও দুই
একটা বাস দেখলাম সেইগুলো একদম মানুষ দিয়ে
ভর্তি। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গরমে
পুরো শরীরটা যেনো ভিজে যাচ্ছিলো।
মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। প্রায় আধাঘণ্টা
পর একটা বাস আসলো খেয়াল করে দেখলাম
বাসের সিট গুলো বুকিং হয়ে গেলেও দাঁড়িয়ে
যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে। আর অপেক্ষা
করতে পাড়লামনা। দৌড়ে যেয়ে সেই বাসটাতে
উঠলাম।
.
বাসায় এসে পৌছিয়ে যেনো মেজাজটা আরো
বেশি বিগড়ে গেলো। মা রান্নাঘরে এই গরমের
ভিতরে একা বসে পিয়াজ রসুন কাটতেছিল আর
কিছুক্ষণ পর পর চুলার সামনে যেয়ে
আলুচপ,বেগুনি গুলো ভাজতেছিলো। রুমের ভিতর
খেয়াল করে দেখলাম শোভা বিছানায় হেলান দিয়ে
টিভি দেখতেছে।
.
আমি রুমের ভিতর যেয়ে শোভার হাত থেকে
রিমোট টা টান দিয়ে নিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিলাম।
আমার এরকম কান্ডটা দেখে শোভা আমার দিকে
অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। আমি আর চুপ করে না
থেকে কিছুটা রাগ নিয়েই বলে উঠলাম, তুই এখানে
আরামে বসে টিভি দেখতেছিস। আর মা রান্নাঘরে
এই গরমের ভিতরে রোজা রেখে একা এতগুলা
কাজ করতেছে। একটুতো যেয়ে হেল্প
করতে পারোস? এই পর্যন্ত তোকে একটা
দিনেও আমি ঘরে কাজ করতে দেখি নি। আজাইরা
সারা দিন ঘরের ভিতর বসে থাকছ। কাজ কি শরীরে
ঘুচে না?
.
আমার কথাগুলো শুনে শোভা কিছু না বলে চুপ
করে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মা
রান্নাঘর থেকে আমার রুমে এসেই আমাকে বলে
উঠলো, ওই তুই কাজ থেকে আইসাই এমন
চেঁচাচেঁচি শুরু করে দিলি কেন?
"চেঁচাবোনা! রান্নাঘরে তুমি একা সব কাজগুলো
করতেছো। আর ও এইখানে হেলান দিয়ে টিভি
দেখতেছে। একটুতো পারে তোমার কাজে
হেল্প করতে।
"আমিই বলছি ওকে কাজ না করতে। এমনেতেই
আজকে ও রোজা আছে।
"ও! রোজা আছে বলে কাজ করতে পারবেনা তাই
না! তুমি রোজা রেখে কিভাবে কাজ করতেছো?
আর তাছাড়া এমনি সময় বা ও কখন কাজ করে?
"তুই চুপ থাকবি?
"চুপতো সব সময় থাকি। আজকে ওর জায়গায় অন্য
কোনো মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিলে পারতা
এরকম বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে? নিজের ভাতিজি
দেখে এমন ছাড় তাই না?
মা এইবার আমার উপর খুব রেগে গিয়ে বলে
উঠলো, বাহিরের হাতির পাঁচ পা দেইখা আইছোস?
আইসাই কি শুরু কইরা দিছে, জানোয়ার কোথাকার।
.
মা কথাটা বলেই শোভাকে নিয়ে আমার রুম থেকে
বেড় হয়ে গেলো। আমি কিছু একটা বলতে
যেয়েও থেমে গেলাম। আচ্ছা! আমি খারাপ কি
বল্লাম? শোভার জায়গায় যদি অন্য মেয়ে থাকতো
মা কি ওই মেয়েকেও এরকম বসিয়ে বসিয়ে
রাখতো? আমি আর কিছু না ভেবে মসজিদে যাওয়ার
জন্য রুম থেকে বেড় হয়ে গেলাম।
.
ইফতারি সামনে নিয়ে সবাই বসে আছি। শোভা মাথায়
কাপড় দিয়ে মাথাটা নিচু করে বসে আছে। মা'র দিকে
তাকাতেই দেখলাম তিনি কিছুটা রাগ নিয়ে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। নিজের কাছে এই মুহূর্তে কেমন
যেনো ফিল হচ্ছিলো।
.
আযান টা দেওয়ার সাথে সাথেই সবাই পানি মুখে নিলাম।
শোভা পানি,শরবত আর এক পিছ খেজুর খেয়ে
আর কিছু না খেয়েই উঠে পরলো। বাবা
শোভাকে উঠে যেতে দেখে বলে উঠলো,
কি হলো, উঠে যাচ্ছো কেন? মুড়ি মাখতেছি খাবা
না?
"তোমরা খাও। আমার গ্যাস্ট্রিকে চাপ দিছে।
কথাটা বলেই শোভা রুমে ঢুকে গেলো। ওর
কন্ঠটাও কেমন জানি ভারি ভারি লাগলো। সত্যিই কি ওর
গ্যাস্ট্রিকে চাপ দিছে? আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম
না। মুড়িমাখা শেষে অল্প কয়টা মুড়ি খাওয়ার পর কেন
যেনো মুড়িমাখাটা ভালো লাগছিলোনা। তাই আর মুড়ি
না খেয়ে চিন্তা করলাম নামাজ পড়ে এসে ভাত
খেয়ে নিবো।
.
নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে দেখলাম বাবা এখনো বাসায়
আসেনি। মা'র রুমে যেয়ে আমি মাকে বলে
উঠলাম, মা ভাত দেও তো আমাকে।
মা আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। আমি তার
চুপ থাকা দেখে আবার বলে উঠলাম, কি হলো? ভাত
দেও।
এইবার মা আর চুপ করে না থেকে বলে
ফেল্লো, সারাটা দিন রোজা থেকে মেয়েটা
পানি,শরবত আর এক টুকরা খেজুর ছাড়া কিছু খায়নি। এই
দিকটাতে খেয়াল আছে তোর?
"গ্যাস্ট্রিকে চাপ দিছে দেখেই তো খায়নি।
"কোনো গ্যাস্ট্রিকে চাপ দেইনি, তুই যে
বিকেলবেলা বলছিলি অন্য মেয়ে বিয়ে করলে
বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারতা। ওই কথাটার জন্য
এখনো কিছু খায় নি।
.
আচ্ছা! এই কথাটার জন্য শোভা খায়নি! কথাটা কি শোভা
খুব মাইন্ডে নিলো? আমি মাকে বলে উঠলাম, যাও
ওকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসো। তারপর একসাথে
খেতে দেও।
"আমি গেছিলাম। এখন খাবেনা। তুই যেয়ে নিয়ে
আস।
আমি আর মাকে কিছু বল্লামনা। আস্তে করে মা'র রুম
থেকে উঠে যেয়ে আমার রুমে যেয়ে
দেখলাম শোভা বিছানার এক কোনায় গুটিসুটি খেয়ে
শুয়ে আছে। আমি বিছানার এক পাশে বসে বলে
উঠলাম, শোভা!
আমার ডাকটা শুনে মেয়েটা কেমন করে যেনো
নিশ্বাস ছাড়লো। আমি আবার বলে উঠলাম, কি হলো?
এইবারো ও কিছু বল্লোনা। আমি ওর কিছুটা সামনে
যেয়ে বলে উঠলাম, কথাটা যে তুই এরকম ভাবে
নিবি আগে জানলে কখনো বলতাম না।
.
আমার কথাটা শুনে শোভা শুয়া থেকে উঠে চোখ
দুটো মুছতে মুছতে বলে উঠলো, নাহ।
ঠিকিতো বলছো।বসে বসে খেলেতো যে
কেউ এমনটা বলবে।
ওর কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম আমার কথাটায় ও খুব
কষ্ট পেয়েছে। কান্না করতে করতে চোখ
দুটো লাল হয়ে ফুলে গেছে মেয়েটার। মুখটাও
খুব শুকনো শুকনো দেখাচ্ছিলো ওর।
.
আমি আর চুপ করে না থেকে বলে উঠলাম, খুদা
লাগছে খুব, চল একসাথে খাবো।
"আমি খাবোনা তুমি যেয়ে খাও।
ওর কথাটা শুনে আমি চুপ করে রইলাম। একটু মায়াও
হচ্ছিলো ওর প্রতি। কেন হচ্ছিলো জানিনা। তবে
ওর এরকম শুকনো চেহারাটা দেখলে যে কারো
মায়া হবে। আমি এইবার ওকে বলে উঠলাম, রাগের
মাথায় কথাগুলো বলে ফেলছি। বিশ্বাস কর আমি যদি
জানতাম তুই খুব কষ্ট পাবি কথাটাতে আমি কখনো
বলতাম না।
.
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার দিকে চুপ করে
তাকিয়ে রইলো। আমি আবার ওকে বলে উঠলাম, মা
আমার উপর রেগে আছে। বাবা জানলেও খুব রাগ
করবে। কিছু খেয়ে একটু শুয়ে থাক। আজকে
রাতে আবারতো নামাজ পরবি।
.
এইবার আর আমার কথাটা শোভা ফেলতে
পারলোনা। বিছানা থেকে উঠে সোজা ওয়াশ রুমে
যেয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসেই ডাইনিং
টেবিলে যেয়ে বসলো। শোভাকে দেখেই
মা তার রুম থেকে বেড় হয়ে আমাদের খেতে
দিলো।
.
এশার আযানটা দেওয়ার পর সাদনান ফোন দিয়ে
বল্লো দোস্ত রেডি হয়ে মসজিদের ছাদে
আইসা পর আমি আর অকিব আসতেছি।
আমিও বল্লাম ঠিক আছে।
.
ফোনটা রেখে পাঞ্জাবিটা পড়ে শোভার দিকে
তাকালাম। মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে।চোখের নিচটা
ফুলে গেছে। এতটুকু কথায় এমন করে কান্না
করতে পারলো! মুখটা যেনো মায়া দিয়ে ভরে
গেছে। এতোদিন পর ওকে দেখে এমন মায়া
হচ্ছে কেন? কি মনে করে যেনো ওর কাছে
যেয়ে বসলাম। হুট করে নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন
জেগে উঠলো, আচ্ছা,শোভা যদি মামার মেয়ে না
হতো আমি কি পারতাম ওর কাছে না এসে থাকতে।
ধূর! এইসব কি ভাবতেছি! আমার মাথায় এমন কিছু কি
করে আসতে পারলো? আচ্ছা! শোভাকি আমাকে
নিয়ে ভাবে? ধ্যাত! আমাকে নিয়ে ও আবার কি
ভাববে।
.
আমি আর এক মুহূর্ত শোভার পাশে বসে না
থেকে বেড় হয়ে গেলাম।
.
মসজিদের ছাদে যেয়ে দেখি অকিব,সাদনান ছাড়া
আর কেউ নেই। খেয়াল করলাম সাদনান ফোনে
কার সাথে যেনো কথা বলতেছে। আমি অকিবের
সামনে যেয়ে দাড়াতেই অকিব আমাকে বলে
উঠলো, দেখ শালায় এমন একটা দিনে কোন
মেয়েরে যেনো ইসলামিক ভালবাসা সম্পর্কে
জ্ঞান দিচ্ছে। দোস্ত বুঝি না ওর ভাগ্যেই কেন
সব ভালো ভালো মেয়েরা পড়ে। আমাকে কি
চোখে দেখেনা?
আমি অকিবের কথা শুনে হেসে উঠলাম।
.
এশার নামাজ শেষে কিছুক্ষণ হুজুরের বয়ান শোনার
পর সাদনান আর অকিব বলে উঠলো, দোস্ত
আজকে রাতে বাইতুল মোকাররমে নামাজ
পড়বো। আমাদের কলেজের বন্ধুরাও আসবে
এক সাথে পড়বো।
আমি ওদের কথা শুনে বলে উঠলাম, সেই আগের
মতো রয়ে গেলি। নামাজতো না তোরা ফুর্তি
করতে যাবি এমন একটা দিনে।
আমার কথাটা শুনে অকিব বলে উঠলো, আরে ব্যাটা
চল। ফুর্তি কই? নামাজি পড়বো।
.
আমি আর কিছু বল্লামনা। এইবার সাদনান বলে উঠলো,
তাহলে বাসায় যা খাওয়া দাওয়া করে একবারে বেড় হই।
একদম ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় আসবো।
"আমিতো খেয়েই বেড় হইছি। আচ্ছা ঠিক আছে
চল বাসায় যাই।
.
বাসায় এসে আমার রুমে না ঢুকে মা'র রুমে চলে
গেলাম। দেখলাম মা নামাজ পড়তেছে। শোভা কি
নামাজ পড়বেনা? ও কি এখনো ঘুমাচ্ছে! ওর শরীর
কি ঠিক আছে! একসাথে আমার মন এতগুলো কথা
বলে উঠলো। আমি মা'র রুম থেকে বেড় হয়ে
আমার রুমে চলে গেলাম। আমার রুমে যেয়ে
দেখলাম শোভা রুমে নাই। কোথায় গেলো
শোভা! খেয়াল করলাম ওয়াশরুমে কেউ একজন
আছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না। শোভা
ওয়াশরুমে। আমি আর আমার রুম থেকে না সরে
বিছানায় একটু হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
.
কিছুক্ষণ পর দেখলাম শোভা ওয়াশরুম থেকে
বেড় হয়ে রুমে ঢুকলো। তা ও আবার গোসল
করে। কেন যেনো ওর দিক থেকে আমার
চোখ জোড়া ফিরছিলো না। মেয়েটা সাদা
সেলোয়ার পরনে ছিলো। চুল গুলো ভিজা আর
ছড়ানো ছিলো। আমি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে
তাকিয়ে রইলাম। শোভাকে যেনো চিনাই
যাচ্ছিলোনা। এই প্রথম ওকে গোসল করা অবস্থায়
দেখলাম। খুব সুন্দর লাগছিলো। তবে ওর নাকের
নথটার দিকে তাকাতেই মনে হলো নথটা যদি একটু
ছোট হতো তাহলে একটু বেশিই সুন্দর লাগতো।
.
শোভা আমাকে দেখেই ওয়ারড্রব এর উপর
থেকে ওর ওড়নাটা নিয়ে গাঁয়ে দিলো। আমার এরূপ
তাকিয়ে থাকার দৃশ্য দেখে শোভা যে কিছুটা লজ্জা
পেয়েছে। আমি ঠিকি বুঝতে পেরেছিলাম। হঠাৎ
কি হচ্ছে এইগুলা? আজকে দুপুরবেলাও তো ঠিক
ছিলাম। সন্ধ্যার পর থেকে সব কিছু এমন
এলোমেলো হয়ে গেলো কেন? শোভার
দিক থেকে আমি খুব কষ্টে চোখগুলো ফিরিয়ে
নিলাম। তবুও আমার চোখগুলো চোরের মতো
ওর ভেজা চুলের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কেন
যেনো ওর দিকে আমার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে
করতেছে। আমার এরকম কান্ড দেখে আমার
নিজের কাছেই খুব অবাক লাগলো।
.
দুইজনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। শোভা নীরবতাটা
ভাঙ্গিয়ে বলে উঠলো, নামাজ পড়ে এতো তাড়াতাড়ি
চলে আসছো?
"নাহ। এখন আবার বেড় হবো। হঠাৎ গোসল করলি
এমন অসময়ে?
"আজকে একটা নামাজ আছে। ওই নামাজটা গোসল
করে পড়তে হয়।
"ওহ! আচ্ছা আমি তাহলে যাই। একদম ফজরের নামাজ
পড়ে বাসায় আসবো।
.
কথাটা বলেই আমি যেই রুম থেকে বেড় হয়ে
গেলাম। ঠিক তখনি শোভা বলে উঠলো,পায়েস
রান্না করছি খাবা?
"নাহ! পেট ভরা।
.
গেটের সামনে যেতেই মনে হলো শোভা কি
বল্লো, পায়েস রান্না করছি নাকি করছে।পায়েস কি
ও রান্না করছে! আমি গেটের সামনে থেকে
ঘুড়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলাম, তুই রান্না করছিস পায়েস?
আমার কথাটা শুনে শোভা মাথাটা ঝুকিয়ে হ্যা সুচক ইশারা
করলো। পেট ভরা অবস্থায় কেন যেনো
খেতে ইচ্ছে করলো আমার। আমি ওকে বলে
উঠলাম, অল্প একটু দে।
.
আমার কথাটা শুনার পর শোভার চেহারাটায় খুশির একটা
আভা দেখতে পেলাম। তারপর মেয়েটা তাড়াহুড়া
করে রান্নাঘরে পায়েস আনতে চলে গেলো।
.
পায়েস আনার পর আমি পায়েসটুকু খেয়ে
শোভাকে বলে উঠলাম, আরেক বাটি পায়েস আমার
জন্য ফ্রিজে রেখে দিস।
সকালে এসে খাবো।
কথাটা বলেই আমি বাহিরে বেড় হয়ে গেলাম।
.
শবেবরাত চলে গেছে দশ দিন হয়ে গেলো।
এই দশ দিনে শোভার মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন
লক্ষ্য করলাম। আগে মা সবার জন্য খাবার বাড়তো
এখন সেই কাজটা শোভাই করে। সকালে নাস্তা
বানানোর সময় শোভা মাকে রুটিবেলে দেয়।
আমার সেইদিন ওর উপর রেগে উঠাটা মনে হয়
কাজে লেগেছে। কিন্তু গত কাল আমার ভিতর
এরকম একটা ভাবনা এসে যাবে আমি কখনো ভাবতে
পারিনি! গত পড়শু ঘুম না আসাতে রাত জেগে
ইউটিউবে বেশ কয়েক রোমান্টিক সর্ট ফিল্ম
দেখলাম। সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গছিলো না বিদায়
শোভা আমাকে ডেকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে
দিয়েছিলো। ঠিক তখন শোভার দিকে তাকিয়ে
কেন যেনো ইচ্ছে করছিলো ওকে আমার
পাশে এনে ওর ছড়ানো চুলের মাঝে আমার মুখটা
গুঁজে দেই। এমন একটা চিন্তা মাথায় আসার সাথে
সাথেই আমি লাফ শুয়া থেকে উঠে পড়লাম। কারন
আমি জানি এখন শুয়ে থাকলে ঘুম মাতাল অবস্থায় কিছু
একটা অজান্তেই হয়ে যাবে। বিয়ের পর এই প্রথম
এমন একটা ভাবনা আমার মাথায় আসলো তাও আবার
শোভাকে নিয়ে! বিয়ের আগেও এমনটা
অনেকবার হয়েছে তবে তখন কল্পনার মাধ্যমেই
সুখটা অনুভব করে নিতাম।
.
হাসপাতালে আসার পর থেকেই রিসিপশনে চুপচাপ
বসে আমি কথাগুলো ভাবতে লাগলাম। আমার এরকম
চুপ করে বসে থাকা দেখে প্রিতি আপু বলে
উঠলো, কি ব্যাপার বসে বসে কি ভাবতেছো?
"না আপু কিছুনা।
কথাটা বলেই আমি প্রিতি আপুর দিকে তাকালাম। তার
দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম তার নাকের নথটার
দিকে। একদম ছোট কেমন যেনো
চমকাচ্ছিলো। শোভাকে এই নথটাতে দারুণ
লাগবে। আমি প্রিতি আপুকে হুট করে বলে উঠলাম,
আপু আপনার নাকের নথটা কোন জায়গা থেকে
কিনছেন?
প্রিতি আপু আমার কথাটা শুনে অবাক হয়ে বলে
উঠলো, কেনো!
.
প্রশ্নটা করেও যেনো আমি খুব বোকা হয়ে
গেলাম। এখন কি বলবো আমি! প্রিতি আপুকে আমি
এখনো বলি নি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ভাবছিলাম
ঈদের পর অনুষ্ঠান হবে তখন বলবো। আমি কিছু না
বলে চুপ করে রইলাম। প্রিতি আপু আমার চুপ করে
থাকা দেখে একটু হেসে বলে উঠলো,
গার্লফ্রেন্ড এর জন্য কিনবা নাকি?
আমি আর তার কাছে কিছু না লুকিয়ে শোভা আর
আমার বিয়ের কথাটা বলে দিলাম।
.
প্রিতি আপু সব কিছু শোনার পর দুষ্টামি করে বলে
উঠলো, বউয়ের প্রতি এতো ভালবাসা!
"তা না! ওকে এরকম নথে খুব ভালো লাগবে। তাই
আরকি।
"হুম বুঝছি বুঝছি! তুমি নিউমার্কেট চাঁদিনীচক যেয়ে
দেখবা ওইখানে সামনে দিয়ে কয়েকটা জুয়েলারির
দোকান আছে। বাহির থেকেই দেখবা বক্সে
এগুলো ডিসপ্লে করে রাখছে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলেই আর কিছু না ভেবে কাজে
মনোযোগ দিলাম।
.
কাজ শেষে রাতে বাসায় আসার পর দরজাটা নক করার
সাথে সাথে মা এসে দরজাটা খুলে দিলো। ঘরের
ভিতর ঢুকে দেখলাম শোভা রান্নাঘরে। খেয়াল
করে দেখলাম ও চা বানাচ্ছে। আমি আর সেই দিকটা
খেয়াল না করে রুমে যেয়ে জামাটা চেঞ্জ করে
নিলাম।
.
জামাটা চেঞ্জ করে বালিশটা খাটের সাথে রেখে
কিছুক্ষণ হেলান দিয়ে বসে রইলাম। প্রায় মিনিট
পাঁচেক পর শোভা চায়ের মগ হাতে আমার কাছে
আসলো। তারপর চায়ের মগটা আমার কাছে দিয়েই
আমার কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসলো।
.
চা টা চুমুক দেওয়ার সাথে সাথে শোভা আমাকে
বলে উঠলো,আচ্ছা আমাদের বিয়েটা কয় তারিখে
হইছিলো?
.
ওর কথাটা শুনে আমি দ্বিতীয় বার চায়ে চুমুক দেওয়া
থেকে থমকে গেলাম। কথাটা বলেই শোভা আমার
দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি মনে করতে একটু
চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার মটেও মনে আসছিলো
না। এমন একটা স্যাচুয়েশনে আমাদের বিয়েটা
হয়েছিলো বিয়ের তারিখ যে কারো মনে থাকার
কথা না। তবে এতটুক মনে আছে এপ্রিলের শেষ
দিকে। আমার এরকম চুপ করে থাকা দেখে শোভা
বলে উঠলো, জানোনা তাই তো?
কথাটা যেনো শোভা কেমন করেই বল্লো।
কথাটার মাঝে কিছু একটা মিশানো ছিলো। যা আমি ওর
চোখ দেখে ঠিকি বুঝতে পেড়েছিলাম।
.
আমি আর চুপ করে না থেকে ওকে বলে উঠলাম,
তারিখটা মনে নাই তবে এপ্রিলের শেষ দিকে।
আমার কথাটা শুনে শোভা একটু হাসলো। তারপর
আমার বুকের দিকে একটু তাকিয়ে আমার চোখে
চোখটা রেখে বলে উঠলো, চা ঠান্ডা হয়ে
যাবে, তাড়াতাড়ি খাও।
আমি আর কিছু না বলে চা টুকু খেয়ে শেষ করে
ফেললাম।
.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে প্রতিদিনের মতো আমার
জায়গায় এসে আমি শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর
শোভা এসেও শুয়ে পড়লো। আমি মোবাইলটা
হাতে নিয়ে ডাটা টা অন করলাম। ঠিক তখনি শোভা
আমার দিকে ফিরে বলে উঠলো, কাল গাজীপুর
যাচ্ছি।
শোভার কথাটা শুনেই আমি মোবাইলের লক বাটুন
টাতে চাপ দিয়ে, ওর দিকে একটু ঘুরে বলে উঠলাম,
কেন?
.
আমার কথাটা শোনার পর শোভা একটু অবাক হয়ে
বললো, যাওয়া যাবেনা!
"আমিতো সেইটা বলি নাই। হঠাৎ গাজীপুর কিসের
জন্য যাচ্ছিস?
"বাবা ফোন করছে একমাস হয়ে যাইতেছে
একবারের জন্যেও এখনো গাজীপুর যাই নাই।কাল
ছোট চাচ্চু এসে নিয়ে যাবে।
"ওহ। যা তাহলে।
কথাটা বলেই আমি আবার মোবাইলটার দিকে তাকালাম।
.
চোখটা মোবাইলের দিকে থাকলেও আমি বেশ
কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে দেখলাম শোভা আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। কি মনে করে যেনো
ফেসবুকে ঢুকে শোভার প্রফাইলে ঢুকলাম।
খেয়াল করে দেখলাম ওর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস
ম্যারিড দেওয়ানো। কিন্তু ম্যারিড এর তারিখটা শোভা
উল্লেখ করে নি। আর ম্যারিড উয়িথ কে সেটাও
দেয়নি। তেইশ ঘন্টা আগে রিলেশনশিপ ম্যারিড
দিছে। কি মনে করে যেনো কমেন্টে ক্লিক
করে কমেন্ট গুলো চেক করতে লাগলাম। একটা
কমেন্ট দেখে আমি অনেকটা এক্সাইটেড হয়ে
কমেন্টের রিপ্লাই কি ছিলো সেইগুলো
দেখতে লাগলাম। কমেন্টটা ছিলো, বরের নাম কি
গো? শোভার রিপ্লাই ছিলো, ফায়সাল। তারপর
সেইখানে আবার কমেন্ট করে বলা হয়েছে, কি
করে বর? শোভার রিপ্লাইটা ছিলো, চুরি, ডাকাতি সব
করে। লাস্ট কমেন্ট ছিলো, কতটা ভালবাসে বর?
এইবার শোভার রিপ্লাইটা দেখে আমি হেসে
উঠলাম। রিপ্লাইটা ছিলো, ভালবাসায় খরা পরেছে
বর্ষার পর পরিমাপ করে বলবো।
.
কমেন্টা আমি দুই তিন বার পড়লাম। তারপর একটা
স্কিনশট নিয়ে ডাটা অফ করে শোভার দিকে
তাকাতেই দেখলাম মেয়েটা ঐ পাস ফিরে শুয়ে
আছে। ভালবাসায় খরা পরেছে! কথাটা আস্তে
আস্তে নিজে নিজেই বলে হেসে উঠলাম।
.
সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বেড় হবো। ঠিক তখনি
শোভা আমার অনেকটা কাছে এসে বলে
উঠলো, এখনতো আর আমি বাসায় থাকবো না।
এখন রাতে কম আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে ফুপ্পিকে
একটু সময় দিও।
শোভার কথাটার মাঝে আমি কেমন যেনো একটা
ক্ষোভ এর গন্ধ পেলাম। আমি কি বলবো কিছু
বুঝতে পারতেছিলাম না। ও আমার দিকে কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থেকে আবার বলে উঠলো, যাও কাজে
যাও।
কথাটা বলেই শোভা রুম থেকে বেড় হয়ে
গেলো। আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে কাজে
যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।
.
চার দিন যাবৎ ঘরটা কেমন যেনো খালি খালি লাগছে।
এই চারটা দিনে শোভা একটা বারের জন্যেও
ফোন দেয় নি। কিন্তু গতকাল রাতে মাকে
ফোনে ওর সাথে কথা বলতে দেখছিলাম।
.
দেখতে দেখতে রোজাটা এসে পড়লো। কি
করে যে চারটা রোজা শেষ হয়ে গেলো
কোনো টেরি পেলামনা। শোভা গাজীপুর
গেছে আজ নয় দিন। এই নয়টা দিনের ভিতর একটা
দিনেও ওর সাথে কথা হয়নি।আচ্ছা! ওর কি ইচ্ছে নাই
আমার সাথে কথা বলার? নাকি সেই ক্ষোভটা
এখনো ওর মনের মাঝে বিরাজ করতেছে!
মোবাইলটা হাতে নিয়ে কি মনে করে যেনো
ওকে ফোন দিলাম। ফোনটা রিসিভ করেই বলে
উঠলো, ফোন দিতে ইচ্ছে করলো?
"হুম।
"কিসের জন্য দিছো?
কথাটা শোভা রাগ নিয়েই বললো। আমি চুপ করে না
থেকে বলে উঠলাম, এমনিই দিলাম।
"আমি মার্কেটে আসছি। এখন রাখি।
কথাটা বলেই আমাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে
শোভা ফোনটা কেটে দিলো। রেগেই যে ও
এমনটা করলো সেইটা আর আমার বুঝতে বাকি
রইলোনা।
.
আরো ছয়টা দিন পাড় হয়ে গেলো।এর মাঝে
আমিও আর ওকে ফোন দেয় নি।শোভাও
আমাকে দেয়নি। কিন্তু মা'র সাথে শোভার রাতে
দৈনিক কথা হতো। তবে আমার উচিত ছিলো
শোভাকে আবার ফোনটা দেওয়ার। কিন্তু সেইটা
আমি করলাম না।
.
কাজ থেকে আজ রাতে বাসায় আসার পর মা আমার
রুমে এসে বলতে লাগলো, রোজার আজকে
১০ টা। মেয়েটা ১৫ দিন ধরে গাজীপুর। ওকে বাসায়
আনার কোনো নাম গন্ধই দেখতেছিনা তোর
মাঝে।
"শুক্রবার যেয়ে নিয়ে আসবো।
আমার কথাটা শুনে মা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
থেকে বলে উঠলো, এইভাবে আর কয় দিন
চলবি? বিয়ের পর থেকাই দেখতেছি তোদের
মাঝে কিছুই ঠিক নাই। মেয়েটা ভুলে এমন একটা কাজ
করে ফেলছে। এর মাশুল টা যেনো খারাপ না হয়
তার জন্য তোর সাথে বিয়ে দিলাম। এরকম একটা
পরিস্থিতিতে মেয়েটারে কই তুই একটু সাপোর্ট
দিবি তা না করে ঠিক মতো ওর সাথে দুইটা কথাও বলিস
না। এগুলা কি তুই ঠিক করতাছিস? তুই আর এমনটা করে
মেয়েটাকে কষ্ট দিস না।
.
মা'র কথাগুলো আমাকে কেমন যেনো একটা
ভাবনায় ফেলে দিলো।
শোভা কি আসলেই আমার থেকে কষ্ট
পেয়েছে!
.
দেখতে দেখতে আরো একটা দিন চলে
গেলো। আজকে বৃহস্পতি বার। হাসপাতালে আসার
পর থেকেই ভাবতেছি কাল গাজীপুর যেহুতু
যাবো বড় মামার জন্য একটা পাঞ্জাবি আর বড় মামীর
জন্য একটা শাড়ি নিয়ে যাবো। তারপর পকেট
থেকে মানিব্যাগটা খুলে দেখলাম যা টাকা আছে তা
দিয়ে কিনা হয়ে যাবে।
.
রাতে কাজ শেষে হাসপাতাল থেকে বেড় হয়েই
নিউমার্কেট চলে গেলাম। সেইখানে যেয়ে মামার
জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনে গাউসিয়া মার্কেট
থেকে মামীর জন্য একটা শাড়ী নিলাম। মার্কেট
থেকে বেড় হয়ে যেই বাসে উঠতে যাবো
তখনি চোখটা চাঁদিনীচক লেখা সেই বড়
সাইনবোর্ডটার দিকে পড়লো। কেন যেনো
আর বাসে না উঠে আমি শোভার জন্য নথ কিনতে
সেইখানে চলে গেলাম। প্রিতি আপুর কথা মতো
সামনের কয়েকটা জুয়েলারির দোকানের দিকে
লক্ষ্য করে দেখলাম পাথরের নথ গুলো
ডিসপ্লে করা। তারপর একটা জুয়েলারি থেকে
শোভার জন্য দুইটা নথ কিনে কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে
মানিব্যাগের ভিতর রেখে দিলাম।
.
ভোরে শেহেরি খেয়ে নামাজটা পড়ে এসে
যেই শুতে যাবো। তখনি মা আমার রুমে এসে
বলে উঠলো, এখন ঘুমাস না। ছয়টার দিক দিয়ে রওনা
দিয়ে দিস। জ্যাম থাকবেনা। ঠান্ডায় ঠান্ডায় পৌছে
যেতে পারবি।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
মা আমার কথাটা শুনে একটু মুচকি হেসেই আমার মাথার
সামনে বসে আমার মাথাটা বুলিয়ে দিতে লাগলো।
আর একের পর এক কথা বলতে লাগলো। কাল
রাতে মামীর জন্য শাড়ী মামার জন্য পাঞ্জাবী
এনেছি দেখে মা খুব খুশি হয়েছিলো। এখনো
মা'র মুখে আমি সেই খুশিটা দেখতে পাচ্ছিলাম।
.
সকাল ৯টার মধ্যেই গাজীপুর এসে পৌঁছে গেলাম।
মামাদের মেইন দরজাটা নক করার কিছুক্ষণ পর নানী
এসে দরজা খুললো। আমাকে নানী দেখেই হাসি
দিয়ে আমার হাতটা ধরে বড় মামার রুমে নিয়ে
যেয়ে বলে উঠলো, ওই দেখ কে আইছে!
.
মামা বিছানায় শোয়া থেকে উঠে আমার দিকে
তাকালো আর মামি রান্নাঘর থেকে বেড় হয়ে
বলে উঠলো, আসতে মন চাইলো এতদিনে?
"সময় পেলেতো আসবো। সারাদিন থাকি কাজে
সেই রাতে যেয়ে ফ্রি হই।
"রোজা আছিস?
"হ্যা।
কথাটা বলেই আমি বড় মামা আর মামীর জন্য নিয়ে
আসা পাঞ্জাবি আর শাড়ীর ব্যাগটা মামীর হাতে দিয়ে
বলে উঠলাম, আপনার আর মামার জন্য আনছি।
.
মামীব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো, এগুলা আনার
কি দরকার ছিলো?
"কখনোতো আপনাদের কিছু দেই নাই। তাই
আনলাম।
"ঘেমে দেখি গেছিস, যা খাটে যেয়ে বস।
.
খাটে এসে বসার পর বড় মামার সাথে কথা বলতে
লাগলাম। খেয়াল করে দেখলাম মামার হাতটা এখনো
বাঁকানো, কথা বলার সময় ঠোটটা ট্যাড়া হয়ে যায়।
কথায় কথায় মামা বললো, লাঠিতে ভর ছাড়া নাকি হাটতে
পারেনা। ডাক্তার ঔষধ দিছে আর ব্যায়াম করতে
বলছে একটু সময় লাগবে নাকি ঠিক হতে।
.
মামার সাথে কথা বলতে বলতে একটা সময় আয়নার
দিকে খেয়াল করে দেখলাম শোভাকে দেখা
যাচ্ছে। আমি পিছনের দিকে তাকিয়েই দেখি শোভা
বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে আমার ঘুম। মামা
বিষয়টা বুঝতে পেড়ে আমাকে ঘুমাতে শোভার
রুমে পাঠিয়ে দিলো।
.
ইফতারির পর যেই বল্লাম, বাসায় যেতে হবে, তখনি
মামি রান্নাঘর থেকে প্লেটে করে এক প্লেট
ঠেসে মোড়ক পোলাও নিয়ে আসলো। আমি না
পারতে সেইগুলো খুব কষ্টে খেলাম।ইশ! কি
জামাই আদরটা না করতেছে আমাকে। তিনি কি
কখনো কল্পনা করছে এই জামাই আদরটা আমার
মতো একটা ফাতরা ছেলেকে করবে। হাহ!
ভাগ্যের কি লীলাখেলা।
.
বাসা থেকে বেড় হয়েই দেখলাম ছোট মামা
সি.এন.জি ভাড়া করে নিয়ে আসছে। আমি শোভার
ব্যাগ দুইটা সি.এন.জি এর ভিতর রাখার পর শোভা
যেয়ে সি.এন.জির ভিতর বসলো। আমি যেই
ভিতরে ঢুকে বসতে যাবো ঠিক তখনি বড় মামি আমার
কাছে এসে জোর করে কিছু টাকা আমাকে
মার্কেট করার জন্য দিতে চাইলো। আমি টাকা গুলো
না নিয়ে তাকে বল্লাম, আমাকে দেওয়ার সময় চলে
যাচ্ছেনা। এমনিতেই মামা কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে ঘরে
বসা। আগে মামা ঠিক হোক তারপর নিবো। এখন
মামাকে ভালো করে ডাক্তার দেখান।
আমার কথাটা শোনার পর মামীর চোখে পানি জমে
আসছিলো। আমি আর দেরি না করে বিদায় নিয়ে
সি.এন.জির ভিতর যেয়ে বসলাম।
.
মেইন রোডে সি.এন.জি আসার পর খুব গতি
সহকারে সি.এন.জি চলতে লাগলো।শোভার দিকে
তাকিয়ে দেখলাম ও এক দৃষ্টিতে বাহিরের দিকে
তাকিয়ে আছে। বাসায় আসার পর একটা বারের
জন্যেও আমার সাথে কথা বলে নেই । এই
কয়েকটা দিনে যেনো বেশ শুখিয়ে গেছে
মেয়েটা।
.
আমি ওর দিক থেকে যেই চোখটা ফিরাতে নিলাম
তখনি শোভা আমার দিকে ফিরে বলে উঠলো,
সেইদিন ফোনটা যে আমি হুট করে কেটে দিলাম,
তোমার কি আরেকটা বার আমাকে ফোনটা দেওয়ার
প্রয়োজন ছিলোনা?
কথাটা শোভা রাগ নিয়েই বললো। কি মনে করে
যেনো আমি আমি বলে ফেললাম, হুম।
"তাহলে কেন দিলা না?
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। আমার চুপ
করে থাকাটা দেখে শোভা আবার বলে উঠলো,
আমার প্রতি করুণা দেখিয়ে বিয়েটা না করলেই পারতা!
অযথা নিজের লাইফটা নষ্ট করলা না?
"আমি এমনটা কখনো বলছি?
"বলো নাই, তবে তোমার কাজ কর্মে তা বুঝায়।
"আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঢুকাস না।
আমার কথাটা শোনার পর শোভা আর কিছু না বলে
আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকয়ে থেকে আবার
বাহিরের দিকে তাকালো।
.
শোভার মাঝে অভিমানের একটা ছাপ দেখতে
পাচ্ছিলাম। অভিমানটা রাগের থেকে বেশি ভয়ানক।
রাগটা যে কারো উপর করা যায়। কিন্তু অভিমানটা সবার
উপর করা যায় না। আমি নিরবতাটা ভাঙ্গিয়ে আবার
শোভাকে বলে উঠলাম, পড়াশোনাটা করার কি ইচ্ছা
আছে?
শোভা বাহিরের দিকে তাকিয়েই বলে
উঠলো,থাকবে না কেন?
"ফাস্ট ইয়ারটা গাজীপুর থেকেই কমপ্লিট কর।
সেকেন্ড ইয়ারে এইখান থেকে ট্রান্সফার করে
ঢাকায় কোনো কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবো।
আমার কথাটা শুনে শোভা অনেকটা অবাক হয়ে
আমার দিকে তাকালো। আমার কাছ থেকে ও
কখনো এরকম কিছু হয়তো আসা করে নি। আমি
আস্তে করে পকেট থেকে মানিব্যাগটা বেড়
করে শোভার জান্য আনা নাকের নথ দুটো ওর
হাতে দিলাম।
.
শোভা নথ গুলো দেখে আরেকটু বেশি অবাক
হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মুহূর্তে
শোভার মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু
সেইটা ও মুখ ফুটে প্রকাশ করার ভাষাটা হারিয়ে
ফেলছে। আমি কি মনে করে যেনো বলে
ফেললাম, তোর নাকের নথটাতে তোকে বেশি
সুট করেনা,এই নথ গুলাতে খুব মানাবে তোকে।
কথাটা বলেই আমি ওর দিক থেকে চোখটা ফিরিয়ে
নিলাম।
.
বাসার সামনে চলে আসার পর সি.এন.জি থেকে
নেমে শোভার ব্যাগ দুটো হাতে নিয়ে যেই
আমাদের গলির ভিতর ঢুকতে নিলাম তখন খেয়াল
করলাম শোভা আমার হাতটা যেনো ধরতে
চেয়েছিলো। কিন্তু আমি আগেই হাটা শুরু করে
দেই তার জন্য আর ও আমার হাতটা ধরতে পারি নি।
.
দিন দিন কেন যেনো ওর প্রতি আমার মায়াটা
বেড়েই চলছিলো। রাতে এখন যেনো ইচ্ছা থাকা
সত্যেও বাহিরে আড্ডা দিতে পারতামনা। সারাদিন
রোজা থেকে অনেক খাটা খাটনি করে খুব ক্লান্ত
হয়ে থাকতো মেয়েটা। আর তার উপর আমি দেরি
করে ফিরলে না ঘুমিয়ে জেগে থাকে। তাই রাতে
আর বাহিরে বেশিক্ষণ থাকতে পারতামনা। এই জিনিসটা
শোভা খুবি উপভোগ করতো। আমি বাড়ির বাহিরে
থাকলে কারনে অকারনে হুট হাট আমাকে ফোন
দিয়ে কি বলবে ও নিজেই ভেবে পেতো না।
দিন দিন যে শোভা আমার প্রতি দুর্বল হয়ে
যাচ্ছিলো ওর কথা, বার্তায় বুঝতে পারতাম। আমি
অনেকবার চেষ্টা করেছি ওর এই দুর্বলতাটায় একটু
সাড়া দেই কিন্তু আমাকে দিয়ে কেন যেনো
হয়ে উঠছিলোনা।
.
আজকে হাসপাতাল থেকে ঈদের জন্য বেতন,
বোনাসটা মাস শেষ হওয়ার আগেই পেয়ে
গেলাম। সেইখান থেকে ঘর ভাড়ার টাকাটা আলাদা
রাখলাম। বাড়িতে ঘর ভাড়ার টাকাটা আমি দেই। আর
খাওয়ার খরচটা বাবা চালায়। তারপর কিছু টাকা ঈদে হাত
খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা থেকে মা'র জন্য
শাড়ী আর বাবার জন্য লুঙ্গি, পাঞ্জাবি কিনে বাড়িতে
ফিরলাম।
.
বাড়িতে এসে খেয়াল করে দেখলাম হাতে মাত্র
চার হাজার টাকার মতো আছে। শোভা না থাকলে এই
টাকা গুলো দিয়ে আমি নিজেই কিনা কাটা করতাম।
কেমন যেনো একটা টানা-টানির মধ্যে পড়ে
গেলাম। বিয়ের পর মেয়েটার প্রথম ঈদ আমাদের
এইখানে। একটু আয়েশ মতো ওকে কিছু কিনে না
দিলে কেমন দেখায়? মনটা বলতে লাগলো, এই
টাকা গুলোর মধ্যে শোভার কি ভালো মতো কিনা-
কাটা হবে! নাহ! এই বছরটা একটু ম্যানেজ করে
নিতেই হবে। সামনের বছর থেকে আগে
থেকেই টাকা পয়সা জমিয়ে রাখতে হবে। এই বছর
না হয় আমি শবেবরাতের পাঞ্জাবি আর গত বছরের
প্যান্টটা দিয়ে চালিয়ে দেই। আর তাছাড়া পাঞ্জাবি আর
প্যান্টটা একবার পরেছি এমনিতেই ওগুলো নতুন।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম শোভা
রুমে এসে ঢুকেছে। আমার সামনে এসে বলে
উঠলো এতক্ষণ বসে কি ভাবলা?
আমি বুঝতে পারলাম শোভা আগে থেকেই
আমাকে লক্ষ্য করেছে। ওর দিকে তাকিয়ে আমি
বলে উঠলাম, কই কিছু না তো!
"মিথ্যা বলতেছো!
"আরে তেমন কিছুই ভাবি নাই।
"ওহ! রান্না হইছে খাবা এখন।
"নাহ। একদম সেহরি এর সময় খাবো।
শোভা আর কিছু না বলে আস্তে করে বিছানায়
এসে শুয়ে মোবাইল টিপাতে লাগলো।
.
কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম শোভা মোবাইলটা
হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পরেছে।আমি আস্তে করে
মোবাইলটা ওর হাতে থেকে নেওয়ার সাথে
সাথে লক বাটুমে চাপ পড়ে যাওয়াতে দেখলাম ডাটা
অন করা। মোবাইলে সাইড লক ছিলো বিদায় লকটা
খুলে ডাটা অফ করার পর খেয়াল করলাম অনলাইনে
একটা ড্রেসে শোভার কমেন্ট ছিলো,
ড্রেসটার প্রাইজ কত? ড্রেসটা দেখতে বেশ
সুন্দর ছিলো। আমি ডাটা টা আবার অন করে চেক
করে দেখলাম কোনো রিপ্লাই আসছে নাকি। হুম!
রিপ্লাই ছিলো। ড্রেসটার দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।
আমি কিছু না ভেবে ড্রেসটার নিচে থাকা এড্রেসটা
এক নজর দেখে নিলাম। আর ড্রেস কোডটা
মনে রাখলাম।
.
আজকে কাজ শেষে বাড়ি ফিরার আগে শোভার
মোবাইলে দেখা ড্রেসটার এড্রেস অনুযায়ী
সেখানে গেলাম। তারপর সেইখান থেকে সেই
ড্রেসটা কিনে সোজা বাসায় আসলাম।
.
বাসায় আসার পর শোভার হাতে ড্রেসের ব্যাগটা
দিলাম। শোভা ব্যাগ থেকে ড্রেসটা বেড় করে
ড্রেসটা দেখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি ওর এরূপ তাকিয়ে থাকা দেখে বলে উঠলাম,
কাল তুই মোবাইল হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পরছিলি।
তোর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখি
মোবাইলের ডাটা অন ডাটা অফ করতে যেয়ে
দেখলাম তুই এই ড্রেসটায় কমেন্ট করছিস। ভাবলাম
তোর খুব ভালো লাগছে। তাই নিয়ে আসলাম।
"তোমার কাছে কেমন লাগছে?
"হুম ভালোই।
"ভালো লাগবে আমাকে?
"হুম লাগবে।
" সত্যিতো!
"হ্যা!
"আচ্ছা আমি ফুপ্পিকে দেখায়া নিয়া আসি।
কথাটা বলেই শোভা মা'র রুমে চলে গেলো। ওর
চেহারাটা দেখে বুঝতে পেলাম ও খুব খুশি
হয়েছে।
.
ঈদের দুই দিন বাকি থাকতেই হাসপাতাল থেকে ছুটি
পেয়ে গেলাম। ঐদিক দিয়ে বড় মামা ফোনের
উপর ফোন দিয়ে বলতে লাগলো ঈদে
যেনো আমরা সবাই গাজীপুর চলে আসি। আমিও
বলে দিয়েছিলাম আসবো।
.
আজকে চাঁদরাত সকাল বেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে
যাওয়ায় বিছানাতে শুয়েই শোভার দিকে তাকিয়ে
রইলাম। নিজের কাছে যেনো কেমন লাগছিলো!
নিজের উপর কিছুটা জিদ হচ্ছিলো। বিয়ের পর
মেয়েটার প্রথম ঈদ, কিন্তু আমি ওকে সাথে করে
শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারলাম না। এই নিয়ে শোভার
কোনো অভিযোগ নেই এমনকি কোনো মন
খারাপি নেই। তবে আমার নিজের কাছেই খুব খারাপ
লাগছিলো।
.
সারা দিন ঘরে টিভি দেখেই কাটিয়ে দিলাম। রাতে
সাদনান ফোন দেওয়াতে বাহিরে বেড় হলাম।
প্রতিবার চাঁদ রাতে আমরা একটা দুইটা পর্যন্ত বাহিরেই
থাকি। আমাদের কাছে ঈদের থেকে চাঁদ রাতটাই সব
থেকে বড়। আকিব,সাদনান আর আমি একসাথে হওয়ার
পর। তিন জন মিলে রিকশায় করে ফেরিঘাট চলে
গেলাম। সেইখানে যেয়ে তিন কাপ গরুর দুধের চা
নিলাম। এক চুমুক দিতেই কথার প্রসঙ্গ উঠলো
আমাকে আর শোভাকে নিয়ে। আমি জানি বছর খানিক
না যাওয়া পর্যন্ত এদের কাছ থেকে শান্তি পাবোনা।
ওরা দুইজন মিলে যেনো আমাকে পুরা বাটে নিয়ে
নিলো।
.
সেইখানে আড্ডা দেওয়ার প্রায় ঘন্টা তিনেক পর
মোবাইলটা বেজে উঠলো। আমি সাদনান আর
অকিব কে চুপ থাকতে বলে মোবাইলটা পকেট
থেকে বেড় করে দেখলাম শোভার ফোন।
ফোনটা ধরতেই শোভা বলে উঠলো, কই তুমি?
"বাহিরে আছি। কেন?
"বাসায় আসবা না?
"হুম।
"তোমার সাথে কথা আছে তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।
আমি আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
খেয়াল করে দেখলাম ১১টা বেজে গেছে।
আগে থেকে শোভার কথার ধরন গুলা খুব
পরিবর্তন হয়ে গেছে। কেমন যেনো এখন সব
কিছুতেই জোড় খাটিয়ে কথা বলে। আমি ওদের
সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওদের বলে
বাসায় রওনা দিলাম।
.
বাসায় আসার পর দেখলাম শোভা হাতে মেহেদি
দিয়ে বসে আছে। আমি রুমে ঢুকার পর আমার
দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি ওকে বলে উঠলাম, কি
কথা বলবি বল?
"সবার জন্য কিনা-কাটা করলা। তোমার জন্য করলা না
কেন?
"আমারগুলা ঈদের আগেই করে ফেলছি।
"কই দেখলাম নাতো!
"কাল পরলে দেখিস।
শোভা আর কিছু বললোনা। এতটুকু কথার জন্য
তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললো! আমি ওর দিকে
তাকিয়ে রইলাম। খেয়াল করে দেখলাম ওর বাম হাতটা
মেহিদি দেওয়াতে একদম লাল টকটকে
দেখাচ্ছিলো। ইশ! যা লাগছিলোনা। হাতটা যেনো
কেন খুব ধরতে ইচ্ছে করতেছে। কিন্তু কেমন
একটা যেনো দ্বিধায় পড়ে গেলাম। শুধুমাত্র এই
দ্বিধাটার জন্য আজ এই মেয়েটাকে আমার কাছে
নিয়ে আসতে পারতেছিনা। আমি জানি আমি একটু
ইঙ্গিত দিলে শোভা একবারেই আমার সাথে মিশে
যাবে। কিন্তু ঐযে! দ্বিধাটাই সেইটা হতে
দিচ্ছিলোনা।
.
সকালে ঘুমটা ভাঙ্গলো শোভার ডাকে। আমি
চোখ দুটো খুলে দেখি শোভা আমার মাথার
পাশে বসা। ওর চেহারাটা দেখে খুব হাসি খুশি
লাগছিলো। আমি চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে
বলে উঠলাম, কি হইছে?
"গত কাল রাতে না মসজিদে এলান্স করে দিলো ৮
টায় নামাজ। উঠো রেডি হও।
শোভার কথাটা শুনে আমি একটু চোখটা বন্ধ করলাম।
ঘুমটা যেনো কাটছিলোই না চোখ থেকে। যেই
চোখটা খুলে শুয়া থেকে উঠে পরলাম, খেয়াল
করলাম শোভা আমার মাথায় ওর হাতটা রাখতে
নিচ্ছিলো। আর ঠিক সেই সময় আমি শুয়া থেকে
উঠে গেছি। আমি শোভার দিকে তাকিয়ে দেখলাম
মেয়েটা আস্তে করে হাতটা সরিয়ে নিলো।
নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগলো। এর আগেও
আমার হাতটা ধরতে চেয়েও ধরতে পারলোনা।
আজকেও ঠিক তেমনটাই হলো। শোভা মুচকি একটু
হেসে আবার বলে উঠলো, যাও তাড়াতাড়ি গোসল
করে তাড়াতাড়ি নামাজে যাও।
.
গোসল করে এসে শবেবরাতের বানানো সেই
পাঞ্জাবিটা পরার সাথে সাথে শোভা বলে উঠলো,
তুমি এইটা পরতেছো কেন?
শোভার কথাটা শুনে আমি বলে উঠলাম, এইটাইতো
ঈদের জন্য বানাইছি। শবেবরাতে একদিনের জন্য
একটু পরছিলাম।
"তাই নাহ!
কথাটা শোনার পর ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম।
শোভার সেই হাসিমাখা চেহারাটা মিনিটের মধ্যে
চেঞ্জড হয়ে গেলো। আমি আর কিছু না বলে
আস্তে করে নামাজে যাওয়ার জন্য বেড় হয়ে
গেলাম।
.
ঈদের নামাজ শেষে কিছুক্ষণ রাস্তায় বন্ধুদের
সময় দিয়ে বাসায় এসে দেখলাম শোভা গোসল
করে মাত্র বেড় হলো। ভালো করে খেয়াল
করে দেখলাম ওর পরনে থ্রি-পিছটা নতুন যেইগুলা
এইবার ঈদে নিয়েছে সেইগুলার মধ্যে একটাও না।
ও আগের থ্রিপিছ পড়েছে। শোভা আমাকে
দেখেই রান্নাঘর থেকে সেমাই এনে দিয়ে
জানালার সামনে যেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
বুঝতে আর বাকি রইলোনা আমি যে মিথ্যা বলছি
শোভা তা ধরে ফেলেছে। তাই বলে এই ঈদের
দিনে ও নিজে নতুন জামা না পড়ে আগেরটা পরবে?
.
এরি মধ্যে মা হুট করে রুমে চলে এসে বলে
উঠলো,ওই তোরা গাজীপুর আজকে চলে যা।
আমি আর তোর বাবা কাল চলে আসবো। এইখানে
আমাদের কাজ আছে আজকে।
কথাটা বলেই মা শোভার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে
তাকালো। তারপর মা আর কিছু না বলে চলে
গেলো।
.
আমি সেমাই এর বাটিটা বিছানায় একপাশে রেখে
শোভার সামনে গেলাম। আমাকে দেখেও
শোভা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো। আমি কি
ভেবে যেনো বলে উঠলাম, এইটা কি পড়ছিস?
নতুন এতগুলা ড্রেস থাকতে?
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার দিকে তাকিয়ে রাগ
নিয়ে বলে উঠলো, যা ইচ্ছা তাই পড়বো। ওইগুলা
পড়ার আর ইচ্ছা নাই।
"কি হইলো আবার হঠাৎ করে তোর?
"তুমি আমার সাথে মিথ্যা কেন বল্লা? তুমি নাকি কিনা-কাটা
আগে করে ফেলছো!
"আরে এই পাঞ্জাবি ঈদের জন্যেই কিনছি।
"আবার আমার সাথে মিথ্যা বলতেছো!
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। এই মেয়ের কাছে
দেখি কিছু লুকানো সম্ভব না। শোভার চোখ
গুলো কেমন যেনো লাল হয়ে যাচ্ছিলো। আমি
আর চুপ করে না থেকে শোভাকে বলে উঠলাম,
আচ্ছা ঠিক আছে আমার ভুল হইছে। এখন যা যেয়ে
রেডি হ। গাজীপুর যাবো।
শোভা আর কিছু না বলে আমার সামনে থেকে
চলে গেলো।
.
শোভা রেডি হয়ে আসার পর দেখলাম ও এখনো
ড্রেসটা চেঞ্জ করে নাই। রুমে ঢুকেই ব্যাগের
ভিতর আগের পুরানো ড্রেস গুলো ঢুকাতে
লাগলো।ওর এরকম কান্ড দেখে আমার খুব রাগ
উঠে গেলো। আমি ওর হাত থেকে ব্যাগটা একটু
জড়তেই টান দিয়ে নিয়ে ওর সব নতুন ড্রেস
গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে আমার কয়েকটা নতুন
উঠানো জামা ব্যাগে নিলাম।
.
আমার এরকম কান্ড দেখে শোভা কিছুটা ভয়
পেয়ে গেলো। সেটা আমি ওর চোখ দেখে
ঠিকি বুঝতে পেরেছিলাম। তারপর রুম থেকে
বাহিরে বেড় হয়ে বাবা আর মাকে বলে রওনা দিলাম।
.
বাসে উঠার পর থেকে শোভা একটু পর পর আমার
দিকে তাকাতে লাগলো। ওর চেহারাটা যেনো খুব
গম্ভীর দেখাচ্ছিলো। ব্যাগটা ওরকম করে টান না
দিয়ে একটু বুঝালে তো বুঝতো। এমন একটা
দিনে মেয়েটার মনটা খারাপ করে দিলাম! বাসায়
যেয়ে যদি এরকম গম্ভীর হয়েই থাকে তাহলে
বড় মামা আর মামী কি ভাববে! আমি আর কিছু না
ভেবে ওর হাতটা ধরেই ফেললাম। শোভা কিছুটা
চমকে যেয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কিছুনা
বলে চুপ করে ওর হাতটা ধরে বসে রইলাম।
.
কিছুক্ষণ পর কন্টাক্টদার টিকেট চেক করতে
আসলে আমি ওর হাতটা ছেড়ে পিছনের পকেট
থেকে মানিব্যাগ টা বেড় করে টিকিট টা দেখালাম।
টিকেট চেক করে কন্টাক্টদার চলে যাওয়ার পর
শোভার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, এমনে
অনেক জামা কাপড় দিয়ে ঘর ভর্তি। তাই আর এবার কিনি
নাই কিছু। আর তুই অযথা একটা সিম্পল বিষয় নিয়ে এমন
করতেছিস। বাসায় যেয়ে যেনো আমার কিছু
বলতে না হয় সোজা যেয়েই ড্রেসটা চেঞ্জ
করে ফেলবি।
.
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার হাতটা ওর মাথায়
রেখে বলে উঠলো, সত্যি তুমি ইচ্ছে করে
কিনো নাই নাকি তোমার হাতে টাকা ছিলোনা?
ও যে এরকম একটা কাজ করবে আমি কখনো
ভাবতে পারি নাই। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম, কি
করলো ও এইটা! আমি আর চুপ করে না থেকে
সত্যটাই বলে উঠলাম, হুম টাকা ছিলোনা।
আমার কথাটা শুনে শোভা আমার দিকে একটু তাকিয়ে
থেকে বলে উঠলো, এতো টাকা দিয়ে কি দরকার
ছিলো আমার ড্রেসটা কিনার? এতোই যখন কিছু
দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো তাহলে অল্প টাকার ভিতর
কিছু একটা কিনে দিতা আর নিজে কিছু নিতা! তাতেই খুব
খুশি হতাম।
"বিয়ের পর এই প্রথম ঈদ তোর। সেই তুলনায়
কিছুই দিতে পারি নি। অন্য ছেলেদেরো দেখছি
বিয়ের পর প্রথম ঈদে বউকে কত কিছু কিনে
দেয়। আর আমি!
.
আমার কথাটা শুনে শোভা বলে উঠলো, আমাকে
বউ ও ভাবো তুমি!!
ওর কথাটা শুনে আমি কি বলবো কিছুই জেনো মাথায়
আসছিলো না। ও বললোটা কি এইটা!
আমি আর ওর দিকে তাকিয়ে না থাকতে পেড়ে
মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললাম।
.
মাথাটা ঘুরানোর সাথে সাথেই শোভা ওর হাত দিয়ে
আমার মাথাটা ওর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
রইলো। ওর চোখে যেনো পানি জমতে শুরু
করলো। তারপর মেয়েটা আবার বলে উঠলো,
মুখ দিয়েতো এখন কোনো কথাই বেড় হবেনা!
সব কিছু নিজের ভিতরেই রেখো। যা করতেছো
খুব ভালো করতেছো! আমিও দেখবো কয় দিন
এমনটা করতে পারো!
কথাটা বলেই, শোভা আমার দিকে আরো কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থেকে আমার হাতটা শক্ত করে ওর বুকের
সাথে মিশিয়ে নিয়ে আমার বুকে মাথা গুঁজে দিলো।
কেন যেনো নিজেকে এমুহূর্তে ওর কাছ
থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারলাম না। কোনো
দ্বিধাও যেনো এমুহূর্তে কাজ করছিলো না। আমার
মনটাও যেনো এমুহূর্তে বলতে লাগলো, একটু
সাড়া দে! আমি আর কিছু না ভেবে আমার মনের
কথাটাতে শাই দিয়ে আলতো করে ওর চুলে আমার
মুখটা গুজিয়ে দিলাম। আজ যেনো আমার সেই
অজানা ছোয়াটার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।
লেখা> ফ|য়স|ল আহম্মেদ শ|ওন

No comments:

Post a Comment