Tuesday, September 17, 2024

-তুমি যাবে না আমিই বের হয়ে যাব ঘর
থেকে?(আমি)
-তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন?
(ইপ্সিতা)
-কেন বলছি জান না?রোজ সকালে তোমার
প্যানপ্যানানি এত ভাল লাগেনা।
-কি বলতে চাও এখন আমি পুরানো হয়ে
গেছি,আমাকে আর ভাল লাগছে না তাই
না।
-উফফ,তুমি এত বেশি বুঝ কেন বলত?আমি কি
বললাম আর তুমি কি বুঝলে?
-থাক আমি বুঝেছি। আর বুঝাতে হবেনা।
-কি বুঝেছ শুনি বলত...(বলেই হাতটা
বাড়িয়ে দিলাম চায়ের কাপ নিতে)
-অমনি পিছনে সরে দাড়াল।
-কি হল এটা?
-দেখতেই তো পাচ্ছ।
-চা দাও।
-উহু হবে না।
-কেন?
-একটু আগেই যাকে বললে ঘর থেকে বেরিয়ে
যেতে,এখন আবার তার কাছে চা চাইছ কোন
মুখে লজ্জা করেনা?
-নাহ বউয়ের কাছে লজ্জা কিসের?
-নাহ আমি কারও বউ না।(বলেই পিছন
ফিরে বেরিয়ে যেতে চাইল)
-এই শোননা এত রাগ কর কেন বলতো,জানই
তো ঘুম ভেঙে দিলে আমার কেমন রাগ হয়।
-হ্যা জানিতো,আর এজন্যই তো প্রতিদিন
বকা শোনার পরেও নির্লজ্জের মত
তোমাকে চা দিতে আসি।
-এভাবে বলছ কেন?বউকে একটু বকা দিলে
কি অপরাধ হয়?
-জানিনা তবে......একটা নিশ্বাস ফেলল।
-তবে কি?আমি বলছি তো আমার ভুল হয়ে
গেছে মাফ করে দাও।
-আমারই ভুল তোমার হাত ধরে বেরিয়ে
এসে বোধহয় অনেকটাই ভুল করে ফেলেছি।
-সামান্য একটা কারনে তুমি এমন কথা
বলতে পারলে?
-সামান্য কারন কোনটা,প্রতিদিন তোমার
কাছে বকা শোনার পরও চুপ থাকা,একটু
আগেই তো বললে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে।
-আমি তো ভুলবশত বলে ফেলছি।আমি
সত্যিই অনুতপ্ত ওভাবে বলা উচিৎ হয়নি।
-যাই হোক আমি বুঝতে পেরেছি আসলেই
তুমি মুক্তি পেতে চাইছ।
-মানে কি?ইপ্সিতা দেখ তুমি কিন্তু ভুল
বুঝছ।
-আমি মোটেও ভুল বুঝছি না।আসলে
আমাদের সম্পর্কটা অনেক দুর্বল।
-মোটেও না অনেক মজবুত।(বলেই হাতটা
ধরলাম)
-হাত ছাড় বলছি।
-নাহ ছাড়ব না।শক্ত করে ধরে রাখব।
-হ্যাচকা টানে হাত ছাড়িয়ে চলে গেল।
ইপ্সিতা শোন....
আর পিছু ফিরল না।
.
ইপ্সিতা আমার স্ত্রী।ছয়মাস হল বিয়ে
করেছি। এই ছয়মাসে প্রতিটি দিনই সকাল
হলে চা হাতে মেয়েটি চলে আসবে। তবু যদি
আদর করে বলেএই উঠো চা টা খেয়ে নাও।
কিন্তু না টং দোকানের মত বলবে চা গরম
চা গরম।এমনিতেই আমার ঘুম বেশি তারপর
প্রতিদিন ভোরে এভাবে ডেকে তোলে।
আমি মিষ্টি করে একটু রাগ দেখাই যদিও তবু
সকালে ওর মুখ আর ওর হাতের মিষ্টি চা খুব
ভালই লাগে।অন্যসবার মত আমাদের
বিয়েটা পারিবারিকভাবে নয়।কারন
পরিবার বলতে কি বুঝায় আমি জানিনা।
জন্মের পর যখন বুঝতে শিখেছি তখন শত শত
সঙ্গীদের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার
করেছি।এরপর বাস্তবতাটাকে খুব কাছ
থেকে দেখেছি।যদিও এতিমখানায় রুলস
দেওয়া থাকে তবুও খাবারের জন্য সেসব
কিছুই না।কতবার না খেয়ে থেকেছি বলতে
পারব না।এখান থেকেই জীবনযাত্রা শুরু।
এরপর এক হুজুরের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠায়
তিনি আমাকে উচ্চ মাধ্যমিক,উচ্চ শিক্ষার
সুযোগ করে দেন।কথায় আছে যার কেউ নেই
তার আল্লাহ আছে।হয়ত আমারও সহায়
ছিলেন তিনি।যাই হোক ইপ্সিতার সাথে
আমার পরিচয় ভার্সিটি লাইফে।ভীষন
জেদি আর লাজুক স্বভাবের মেয়ে।সবকিছু
জেনে শুনেও মেয়েটি আমার প্রেমে পড়ে।
নাহ মেয়েটি ধনী না মধ্যবিত্ত
পরিবারেরই।এরপর যখন বুঝতে পেরেছি ওর
পরিবার থেকে কখনই মেনে নিবেনা।তখন
এই ভুল পথটাই বেঁছে নিতে হল।পালিয়ে
বিয়ে করেছি।এখন আমি একটা জব করি।ও
সারাদিন বাসায়ই থাকে,জানি বোরিং
লাগে তবুও এটা মেনে নিতে হবে।মেয়েটা
আমার ভীষন খেয়াল রাখে।খাওয়া
দাওয়া,পোশাক,মিতব্যয়ী ইত্যাদি।
প্রতিদিন সকালে ওর হাতের মিষ্টি চা টা
দারুন লাগে তবু মুখে বলিনা।ঘুম ভাঙলেও
শুয়ে থাকি এই মিষ্টি মূহুর্তটার জন্য।
প্রতিদিনই একটু কটু কথা বলি,তবে আজ একটু
বেশিই বলে ফেলেছি মনে হয়।আজ ছুটির
দিন সত্যিই সত্যিই ঘুমে ছিলাম হঠাৎ করে
ডাক দিলে কেমন যেন মেজাজটা খারাপ
হয়ে যাওয়াতে যা ইচ্ছা তাই বলে দিলাম।
মেয়েটা বোধহয় ভীষন রেগে গেছে।
.
দুপুরে কি খাব শুনি?(আমি)
-আমার দিকে একনজর তাকাল তারপর
কাজে মন দিল।
-কি বলছি শুনতে পাচ্ছ না?
-কি করতে হবে আমাকে বল।রান্না করতে
হবে তো ওকে করছি একটু সময় চাই।(হঠাৎ
করে প্রচন্ড জোরে রাগান্বিত হয়ে চিৎকার
করে বলল)
-এই তোমার কি হয়েছে বলতো।সকালের
কথাটি এখনও মনে রেখেছ?
-মনে রাখার মতই তো কথা।
-আমি খুব ভুল করে ফেলেছি জান।আমাকে
এবারের মত মাফ করে দাও।আর কখনও
বলবনা এই দেখ কানে ধরছি।
-মাফ তুমিই আমাকে মাফ করে দাও আমি
তোমাকে এতদিন শুধু বিরক্ত করে এসেছি।
-এভাবে বলনা প্লিজ।আমি সত্যিই অনুতপ্ত।
-একটা কথা বলব
-হুম বল।
-তুমি আরেকটা বিয়ে করে নাও।
-কি বলছ এসব আবোল তাবোল।
-ঠিকই বলছি।কারন আমি যাওয়ার পর
তোমাকে কে দেখবে?
-মানে কি কোথায় যাবে শুনি?
-আমি বাসায় ফিরে যাব।
-কিন্তু কেন?
-জানিনা।
-এত রাগ আমার উপর?
-এখানে রাগের কিছুই নেই।আসলে আমারই
ভাল লাগছে না।
-কিন্তু কেন?
-জানিনা কাল সকালে একটা বাসের
টিকিট কেটে দিতে পারবে?
-আমি স্যরি অনেক স্যরি দেখ কানে ধরছি
তবুও প্লিজ তুমি এভাবে বলনা।
-আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
-ইপ্সিতা তুমি.....
-প্লিজ এখন তুমি এখান থেকে যাও।
বেরিয়েই আসলাম বাসা থেকে।দুপুর হয়ে
গেছে এখন কিছু খাওয়া হয়নি।মেয়েটা এত
কেন রেগে আছে জানিনা।আচ্ছা ও কি
সত্যি সত্যি চলে যাওয়ার কথা বলছে।
তাহলে আমি কি করে থাকব।আমার
প্রতিটা নিশ্বাসে ও জড়িয়ে।
বাইরে থেকে খাবার নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।
তখনও বসে আছে। আমাকে দেখে চোখের
পানি মুছে নিল।
-চল খাবার খেয়ে নিবে।(আমি)
-নাহ,তুমি খেয়ে নাও আমার ক্ষুধা নেই।
-প্লিজ ইপ্সিতা রাগ কর আমার উপর তবুও
না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দিওনা।
-বললাম তো খাবনা।
-আমিও খাবনা।
-তুমি কেন খাবেনা?
-ক্ষুধা নেই।
-আর কিছু বললনা।
এখন রাত নেমেছে।সকাল থেকে দুজনেই না
খেয়ে আছি।বসে আছি দুজন দুদিকে মুখ
করে।সারাটিদিন বোঝানোর চেষ্টা
করলাম ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও।কিন্তু
না হবেনা।
-একটা কথা বলব?(আমি)
-হুম।
-তুমি কি সত্যিই চলে যেতে চাও?
-হ্যা।
-জানতে চাইবনা কেন যেতে চাও।বারন
আমি জানি আমি সত্যিই খারাপ।
-এতে তোমার কোন দোষ নেই।আমারই ভাল
লাগছেনা।
-আর একটু ভাববে না?
-অনেক ভেবেছি।
-একটা সত্যি বলব?
-হুম।
-আমি তোমাকে ভালবাসি ভীষন।
-হয়তবা।
-আমি তোমাকে মিস করব কিনা জানিনা
তবে, প্রতিদিন সকালে ঘুমের ভান করে
শুয়ে থেকে অপেক্ষা করব একটা মিষ্টি
বউয়ের হাতের মিষ্টি চায়ের,মিস করব
অফিস শেষে ক্লান্তি নিয়ে ফিরলে
মিষ্টি একটা বউকে যে বুকে ঝাপিয়ে
পড়ত,মিস করব তাকে যে ভালবেসে সব
ছেড়েছিল,মিস করব তাকে যে ভালবাসায়
আমার কুঁড়েঘরে সুখ এনেছিল।
-নিশ্চুপ।
-কাল সকাল সাতটায় বাস ছাড়বে এই নাও
টিকিট।
-আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকাল
তারপর টিকিটটা নিল।
-ব্যাগ গুছিয়েছ?
-উহু
-আমি হেল্প করব?
-নাহ ঠিক আছে।
-ওকে ঘুমাও এখন কাল ভোরে উঠতে হবে।
-হুম।তুমিও ঘুমাও।
-হ্যা আসছি।
-আসছি মানে কোথায় যাচ্ছ?
-এইতো একটু ছাদে যাব।
-হুম।
বুকের ভিতর শূন্যতা চেপে বসেছে।জানিনা
কেন এত সহজে ওকে চলে দিতে দিচ্ছি।তবুও
কেন জানি মনে হচ্ছে আমার বাধা দেওয়ার
কোন অধিকার নেই এখন।আচ্ছা কতটা ভুল
করলে মানুষ তার প্রিয়জন থেকে দূরে যেতে
চায়,ততটাই ভুল কি আমি করেছি।
রাত দুইটা বাজে। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে
এসেছি।ঘরে ঢুকেই দেখি ঘুমিয়ে গেছে।
এতটা মায়ামুখ না দেখে কেমন করে থাকব
বাকি জীবনটা।জীবনে সবকিছু কেমন
জানি আমার হয়েও হলনা।জন্ম নেয়াটাই
বোধহয় পাপ ছিল।ছোটবেলা থেকেই
প্রিয়জনগুলো একটু একটু করে দূরে চলে
যাচ্ছে।সবকিছু কত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল
তাইনা....।
.
ভোর পাঁচটা ত্রিশ মিনিট...
-এই শুনছ ইপ্সিতা।(আমি)
-ঘুমিয়ে আছে।
-এই উঠো ছয়টা বাজতে চলল।(সেই কখন
থেকে ডেকে চলেছি তবু সাড়া
দিচ্ছেন,গায়ে হাত দিতেও কেন জানি
সংকোচ হচ্ছে)
-হু।(সাড়া দিল)
-উঠো ফ্রেশ হবেনা।বাস ছাড়ার সময় হয়ে
গেছে।
-উঠে চোখ মুখ মুছতে শুরু করল।বি হয়েছে
ডাকছ কেন?
-যাবেনা বাস তো ছেড়ে দিবে একটু পরে।
একেবারে বাচ্চাদের মত বসে বসে চোখ
মুছে চলেছে।
-হু।
-যাও ফ্রেশ হতে যাও।
-যাচ্ছি তো তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এত
ব্যস্ত কেন?
-আরে নাহ।তোমার ভালর জন্যেই তো
বলছি।
-থাক আর কিছু বলতে হবেনা।
-ওকে।
ফ্রেশ হয়ে এসে বসে পড়ল।যেন কোন কিছুই
হয়নি একটু পরে সে চলে যাবে তেমন কোন
ভাবই নেই তার মধ্যে।কাপড় পরে নাও আমি
বাইরে যাচ্ছি।
-এই শোন?
-জ্বি বল।
-চা খাবে?
-অবাক হয়ে তাকালাম মেয়েটির দিকে।
কি বোঝাতে চাইছে।
-কি হল হা করে তাকিয়ে আছ কেন?
-না কিছুনা খাব না।
-তাহলে কাল মিথ্যে বললে কেন আমার
হাতের চা তুমি মিস করবে?
-হ্যা করব।কিন্তু এখন খাবনা।
-কেন?
-মায়া বাড়াতে চাইনা।একটু পরেই তো
হারিয়ে যাবে।
-ও।
বেরিয়ে আসলাম।একটু পরে রুমে গেলাম।
কাপড় পরেছে।তবে বোঝা যাচ্ছে মন দিয়ে
পরেনি।এলোমেলোভাবে পরেছে।
-কি পরেছ এটা?(আমি)
-কেন শাড়ি।
-সে তো দেখতেই পারছি।কিন্তু এলেমেলো
কেন?
-এমনি।
-আচ্ছা দাড়াও।(বলেই কাপড়টা ঠিক করে
দিচ্ছি।আমার দিকে একপলকে তাকিয়ে
আছে)
আচ্ছা এবার হয়ে গেছে চল।
-আমি যাব না।(বলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে
দিল)
-আজিব সবকিছু রেডি আর এখন বলছ
যাবেনা মানে কি?
-আমি ফাজলামো করে বলেছি আমি চলে
যাব আর তুমি সেটা বিশ্বাস করে নিবে।
আমাকে এতটাই ঘৃনা কর।
-ঘৃনা করব কেন?আমি দোষ করেছি বলেই
তো চলে যেতে চেয়েছ এতে অবিশ্বাসের
কিছু ।তাছাড়া যে যেতে চায় তাকে শত
বাধনেও বেধে রাখা যায়না।
-আমি তো যেতে চাইনি।দেখতে
চেয়েছিলাম কতটা ভালবাস আমাকে?
-হয়তবা।
-আমি চলে গেলে তুমি তো থাকতে
পারবেনা।
-কে বলেছে?একাকীত্বে থাকার অভ্যাস
আমার আছে।
-আমি তো কখনই তোমাকে ছেড়ে যাবনা।
(কেঁদে কেঁদে বলল)
-যেতে হবে।
-না।
-হাত ধরে বললাম চলো বাস ছাড়ার সময়
হয়ে গেছে।
-আমি যাব না।উহু উহু উহু
-তাহলে বললে কেন?
-আমি কি জানতাম নাকি তুমি সত্যি
ভাববে।তাছাড়া তুমি আমাকে কাল ঘর
থেকে বেরিয়ে যেতে বললে কেন?
-আমি তার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলাম।
-আমিও চাইছি।
-উহু যেতে হবে।
-আমি বাঁচবনা তোমাকে ছেড়ে গেলে।
(বলেই কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল)
-উহু হবেনা যেতে হবে।
-ভালবাসি বাবু।
-আমি বাসিনা।
-তাহলে কাঁদছ কেন?
-জানিনা।
-চা খাবে?
-না।
-আমি সত্যিই চলে যাব?
-না।
-তাহলে বললে কেন?
-তুমিই তো ছেড়ে যেতে চাইলে।
-যেতে চাইলাম বলে যেতে দিতে হবে।
-জানিনা।চা খাব?
-হুম।(বলেই কান্না চোখে কিচেনে গেল)
পাগলী মেয়ে।আমি তো জানি ও আমাকে
ছেড়ে কখনই যেতে পারবে না।তবুও মিছে
মিছি এই অভিমান।ভালই হল।বুঝতেই
পারছি আজকের চা টা স্পেশাল মিষ্টি
হবে।।।
.
.
লিখা:অন্তহীন শ্রাবন

No comments:

Post a Comment