Saturday, August 24, 2024

সবাই পড়বেন,অনেক ভালো লাগবে
.
কলিংবেল বাজছে।
নিশ্চয়ই আমার বর বাবু এসেছে।
খুব ইচ্ছে করছে নিজেই গিয়ে দরজাটা খুলে
দেই। হাতে বেসন, চুলায় বেগুনী।রেখে
যেতে ও পারছি না
কেউ খুলছে না কেন...
শশী ও শশী দেখোতো কে এল।
দাদা ভাই এসেছে ভাবী....
.
পিচ্চি ননদটা বলতে বলতে রান্না ঘরে এসে
হাজির।তোমাকে কোন হেল্প করতে হবে
ভাবী?? না পিচ্চি বুড়ি কিছু করতে হবে
না।
আমার প্রায় শেষ।
তুমি যাও। দেখ তোমার দাদা ভাইয়ের কিছু
লাগবে কি না।
হুম লাগবে তো।
তাহলে দিয়ে আসো।
দাদা ভাইয়ের যেটা লাগবে সেটা তো
এখানে,বলেই কেমন মিচকি মিচকি হাসছে
পিচ্চিটা।
আমি বললাম কি.... শশী বলল, তোমাকে
লাগবে।
তবে রে পাজি বলে যেই ওকে ধরতে যাব
অমনি ও দৌঁড়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে
যায়।
.
আর ঠিক তখন ও রান্নাঘরের দরজায় এসে
দাঁড়ায়। মুখটা কেমন থমথমে হয়ে আছে।
মুখে একটা অনিচ্ছাকৃত হাসি টেনে বলল....
দাও শরবতটা বানিয়ে ফেলি।অন্যদিনের
মত বলছে না....বউ এটা দাও,বউ ওটা কই
রাখছো, আমার বউটার বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে।
চুপচাপ নিজের মনে কাজ করছে। হঠাৎই ওর
এই চুপ হয়ে যাওয়াটা চোখে লাগছে।
.
ভুল করে চিনির বদলে লবণের কৌটা থেকে
লবণ দিয়ে ফেলছিল।
আরে.... আরে কর কি??
ওটা তো লবণ। আমার আচমকা চিৎকারে ওর
হাত থেকে চামুচ পড়ে যায়।
মলিন একটা হাসি দিয়ে বলে..ও হে তাই
তো।
.
বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।ওর কি কিছু
হয়েছে। নাহ এখন কিছু জিজ্ঞেস করব
না,জানি কিছু জিজ্ঞেস করলেও ওর পেট
থেকে কিছু বের করতে পারব না এখন।
এইদিকে ইফতারের ও টাইম হয়ে এসেছে।
ওকে সরিয়ে নিজেই শরবত বানাতে
লাগলাম।
তুমি যাও রেস্ট নাও গিয়ে।আমি করতে
পারব। হুম জানি তো আমার লক্ষী বউটা
তো সব পারে। পারি না বুঝি,একটু
অভিমানের সুরেই বললাম।
হুম পারেন তো...পরশু লেবু কাটতে গিয়ে
আঙুলটাই যে কেটে ফেলেছেন।
হুম রোজ রোজ কি আর এমন হবে নাকি।
যাও তো তুমি,বলেই ওকে জোর করে
রান্নাঘর থেকে পাঠিয়ে দিলাম।
.
ইফতারের আর কিছু সময় বাকি।সব কিছু
সাজিয়ে টেবিলে রাখছি। সাথে আমার
পাকনা পিচ্চি ননদটা যুক্ত হয়েছে আমাকে
হেল্প করার জন্য। বিয়ে হয়েছে খুব
বেশিদিন হয় নি।এর মধ্যেই পরিবারের
সবাইকে কেমন আপন আপন লাগে।অন্যদিন ও
হেল্প করে। কিন্তু আজ যে ও অন্যদিনের
মুডে নেই।চুপচাপ সোফায় বসে আছে।
.
মা ও মা ইফতারের টাইম হয়ে গেল যে,
বাবাকে নিয়ে আসেন।
এই হল আমার বউ। আমাদের বিয়ে হয়েছে ৪
মাস। আর এই কদিনেই ও কেমন সব্বাইকে
আপন করে নিয়েছে। আর আমি কিনা
কিছুই.....ধুর এই ঈদেই কেন এমন হতে হল।
নাহ্ আর ভাবতে পারছি না। বোনের ডাকে
ভাবনায় ছেদ পরলো।
.
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ও এখনো সোফায়
বসে আছে।ননদকে দিয়ে ওকে ডাকালাম।
আযান দিচ্ছে। ঠিক করে কিছু খেতে
পারছি না।বার বার ওর দিকে চোখ যাচ্ছে।
বাবা -মা সামনে থাকায় ঠিক করে
তাকাতে ও পারছি না ওর দিকে। অন্যদিন
দুই ভাই- বোন ইফতার নিয়ে কাড়াকাড়ি
করত। আর আজ কিছুই মুখে দিচ্ছে না।একটু
খানি খেয়েই উঠে গেল।
.
সব কিছু গুছিয়ে নামায পড়ে রুমে এসে
দেখি আমার কলিজাটা (বর) চোখ বন্ধ করে
শুয়ে আছে। অন্যদিনের মত বার বার ডাকছে
না। দরজার পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ও
নেয়নি আজ।
ওর পাশে গিয়ে বসলাম।ও টেরও পায়নি।
মাথায় হাত দিতেই চোখ মেলে তাকিয়ে
আমার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে
নিল।
.
ও বর কি হইছে তোমার, শরীর খারাপ
লাগছে?
অফিসে কোন প্রবলেম? অফিস থেকে এসেই
চুপ হয়ে আছো যে।
কিছু হয়নি গো আমার বউটা.... বলেই
আমাকে ও ওর বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল। ওর
বুকে মাথা রেখে আমি ও একটু খানি
অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলাম- কিছু না হলে
এমন চুপ করে আছো কেন?
.
প্রতিদিনই তো বকবক করি,তোমাকে
জ্বালাই।আজ না হয় একটু চুপ থাকলাম।
আর তুমিই তো বল- পাজি বর,অসভ্য বর
খালি পকপক করে।তাই আজ চুপ করে আছি,
বলেই হেসে উঠলো।
আমি বুঝি কিছু বুঝি না,না?
কেন জানি খুব রাগ হল,ঠিক রাগও না কষ্ট।
ওকে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
আমার এমন চুপচাপ বর চাই না। আমার অসভ্য,
পাজি বর ই চাই। বলেই কেঁদে দিলাম।ও
আমার হঠাৎ এমন আচরণে মোটেই প্রস্তুত
ছিল না।মাথাটা বুক থেকে তুলে ওর দুহাত
দিয়ে আমার মুখটা তুলে বলে- এই বউ কি
হচ্ছে এটা, কাঁদছো কেন?
.
মাথাটা ওর বুকে রেখে বললাম,
তবে বল তোমার কি হইছে,এমন চুপ হয়ে
গেলে কেনো হঠাৎ? ও আমার কথার কোন
উত্তর দেয়না। গোপনে ছাড়া দীর্ঘশ্বাসটা
বুকের মধ্যে কেমন ধাক্কা দিল।
কি হল চুপ করে আছো কেন, বলো..
.
এইবার ঈদে বেতন পাব না,বোনাস তো নাই।
কাউকে কিছুই দিতে পারব না।তার উপর
আমার এক ও একমাত্র বিয়ে করা নতুন
বউটাকে ঈদে কিছুই দিতে পারব না।বিয়ের
পর এটাই তো তোমার প্রথম ঈদ। সব
মেয়েরাই আশা করে বিয়ের পর প্রথম ঈদ
একটু স্পেশাল হবে।আমি তো তোমার বর
হওয়ার ও যোগ্য.....
.
আমি ওকে আর কিছুই বলতে না দিয়ে ওর মুখ
চেপে বললাম -আপনার লেকচার দেওয়া শেষ
হইছে,লেকচার গাইড?
এইবার আমি বলি।
পাজি বর, শয়তান বর,কুত্তা বর,বিলাই বর এই
কথা.......
ঘুসি দিয়ে বোচা নাকটা আরো বোচা
বানিয়ে দিব। আমার কিছুই লাগবে না। এই
সামান্য ব্যাপারে কেউ মুখ পেঁচার মত করে
রাখে?
আর তুমিই তো বলে দিলে..... নতুন বউ।
তা নতুন বউয়ের সব কিছুই তো নতুন।
কত্তগুলি শাড়ি আছে।নতুন। এখনো পরাই
হয়নি।
ওগুলি দিয়েই আমার ঈদ হয়ে যাবে, বুঝলা
কলিজা।
আর হুম এই ঈদ আমার জন্য সত্যিই স্পেশাল।
এই ঈদে তো আমার বর আছে,শ্বশুড়বাড়ি
আছে। এটাই তো আমার বোনাস, আমার
সবচেয়ে বড় গিফট। আমার কথা শুনে ও
আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
এই মুখ বন্ধ কর,মশা ঢুকবে...
.
আর আমার কাছে কিছু টাকা আছে। তা
দিয়ে বাবা-মা আর শশীর জন্য কিছু কিনে
দিও।
টাকা!!!! তুমি টাকা পেলে কই?
বারে সবাই যখন আমাকে দেখতে
এল,আমাকে
সালামি দিল না, ওই টাকা। ওই টাকা কি
আমি খরচ করেছি নাকি।
.
ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
বউ আমাকে তুমি মাফ করে দিও।
আবার, বলেই ওর চুল গুলি মুঠি করে
টেনে ধরলাম।
উফফ ব্যাথা পাইতো।
আর যদি এসব বলনা একটা চুল ও আর মাথায়
রাখব না,বলে দিচ্ছি।
ওকে, ওকে এইবার তো চুল ছাড়ো
হুম ছাড়ছি, তবে আমার একটা জিনিস
লাগবে।
কি লাগবে??
আমার এই পাজি বরটাকে আর....
আর??আর তোমার নাকটা ।
নাক!!!! হুম নাক।
আমি ওর বোচা নাকটা আলতো করে চেপে
ধরে বললাম -ওটার উপর একটা ট্রাক
চালাবো কিনা তাই।বলেই দুজনে হেসে
উঠলাম।
ও আমার কপালে একটা ভালবাসার কিসসি
এঁকে দিলো।
আহ্! ঈদের আগেই ঈদের আনন্দ।কি শান্তি।

No comments:

Post a Comment