Thursday, June 22, 2017

গল্প : ব্যাচেলারের প্রেম

গল্প : ব্যাচেলারের প্রেম
লেখা : Rabby Ahmed (কাল্পনিক সাহিত্যিক)
 
ফোন বেজে চলছে.......
একের পর এক কল আসতেছে,  
কিন্তু রিসিভ করার সামর্থ্যটুকু নাই।
গায়ে প্রচন্ড জ্বর। 
অনেক কষ্টে ফোনটা রিসিভ করলাম।
আমি : হ্যালো [ কাঁপা কাঁপা গলায় ]
নীলা : কি ব্যাপার,  কই ছিলা, কখন থেকে ফোন দিচ্ছি , জানো আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল।  
আমি : না কিছু হয় নাই..!
নীলা : এই তুমি এভাবে কথা বলতেছো  কেন...? 
আমি : কই, কিভাবে কথা বললাম। ঘুম দিয়া উঠছি মাত্র, তাই এমন মনে হচ্ছে।
নীলা: না। তুমি মিথ্যা বলছো। আচ্ছা তুমি কি অসুস্থ...?
আমি : না...! রাত জেগেছি , তেমন ভাল ঘুম হয় নাই । তাই হয়তো এমন শুনাচ্ছে।
নীলা : কি...!  তুমি আবার রাত জেগেছো , তোমাকে না কতবার বলছি রাত জাগবে না। কি অবস্থা তোমার। তুমি আমার কথা শুনো না কেন। 
আমি : SORRY 
নীলা: রাত জেগে কি করছো...? নিশ্চই মুভি দেখছো। আচ্ছা তোমার কি মুভি দেখা ছাড়া আর কোন কাজ  নাই ।  শুধু ইংলিশ মুভি আর ইংলিশ মুভি। পরিচালক হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি...?
আমি : আস্যাইনমেন্ট ছিল।  তাই দেরি হইছে।
নীলা : অনেক বেলা হইছে,  খেয়ে নাও।
আমি: হ্যা। তুমি খেয়েছো...?
নীলা : তুমি না খেলে আমি কিভাবে খাই বলো।
আমি : সরি জান। তুমি খেয়ে নেও।
নীলা: আচ্ছা 
আমি:   BYE
নীলা : বাই...! 
[ আসসালামুআলাইকুম।  আমার নাম নীল। পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য  ব্যাচেলর আমি। আর যে মেয়টার সাথে কথা বললাম, মেয়টার নাম নীলা। আমার ইয়ে।  ২ বছরের রিলেশনশিপ।  কথা একটু বেশিই বলে। রাগ, অভিমান, কেয়ারিং,  ভালবাসা কোনটাই কম নাই তার। প্রশ্ন করতে পারেন আমার জ্বর থাকা অবস্থায় মিথ্যা কেন বললাম। মিথ্যা না বললে মেয়েটা অস্থির হয়ে যেত, আমাকে নিয়ে টেনশনে থাকতো।   তাছাড়া সামনে পরীক্ষা মেয়েটার। বললে আমাকে নিয়ে চিন্তা করতো।
তাছাড়া সামান্য জ্বর মাত্র । ঔষধ খেলে  সেড়ে যাবে। কিন্তু তাও আর হবে না। 
মাস শেষ পেকেট ফাকা,  থাকি আমি ঢাকা। মাস শেষে চলাটা কত কষ্টের ব্যাচেলর ছাড়া অন্য  কেউ জানে না। ম্যাচে থাকি। বুয়া একদিন আসলে ৩ দিন আসে না ।
আজকে ও তাই।  কি করবো নীলাকে বলছি খাবো। পকেটও ফাকা। 
তাই এক গ্লাস পানি পান করেই থাকি।। ম্যাচটা যে ছেড়ে দিব তাও পারছি না।
৫ মাসের ভাড়া বকেয়া। ভাগ্যিস বাড়িওয়ালা ভাল মানুষ না হলে কবে তাড়িয়ে দিত। বলতে বলতে ১ ঘন্টা কেটে গেল। ]    

এমন সময় নীলার ফোন। নিশ্চয় জানতে চাইবে খেয়েছি  কি ' না..
আমি: হ্যালো...
নীলা: নিচে আসো।
আমি: কেন...?
নীলা: নিচে আসতে বলছি।
আমি: জান,  আমি না অসুস্থ। 
নীলা : হ্যা জানি।। তাই তো আসতে বলছি।  
আমি: কিভাবে জানলে...?
নীলা: তোমার কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারছিলাম তুমি অসুস্থ। তারপর আলভির কাছে ফোন দিয়েছিলাম। আলভি বলছে। 
[ আলভি আমার রুমমেট। নীলার সাথে ভালই পরিচয় আছে। আলভি হারামীটা  বলে দিল  ]
আমি: কি বলছে...? 
নীলা: তোমার জ্বর,  সকালে কিছু খাও নাই। আজকেও বুয়া আসে নাই।  
তুমি আমার কাছে না বলে ঠিক করো নাই।  তাড়াতাড়ি নিচে আসো...!
আমি : বিকালে বের হই...
নীলা : তুই কি নিচে আসবি...?
[রেগে আগুন। আর একটু লেট করলে ফায়ার ব্রিগেড এসেও থামাতে পারবে না। ] 
আমি : আসতেছি....
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে গেলাম। দেখি জান পাখি  রিকশা নিয়া অপেক্ষা করছে। রেগে লাল হয়ে গেছে। ]
আমি : জান কেমন আছো...?
নীলা : রিকশায় উঠো....
আমি : কোন কথা না বলেই রিকশায় উঠলাম।  জান আমরা কি পার্কে যাচ্ছি। 
নীলা : মামা চলেন।
আমি : হ্যা মামা পার্কে নিয়া চলেন।
নীলা : চুপ করে বসে থাকো।
আমি: আচ্ছা! 
নীলা: ইশশশ!  কি জ্বর আর তুমি আমাকে বললে না। বুয়াও আসে নাই, না খেয়ে আছো। এমন কেন করো তুমি। আমাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না। 
আমি: সরি  জান। আসলে মাস শেষ, টাকা ছিল না। তারপর তোমাকে চিন্তায় রাখতে চাই নাই। 
নীলা : কি বললি তুই..? তোর কাছে টাকা নাই।  তাই বলে না খেয়ে থাকবি। ঔষধ খাবি না। নাম রিকশা দিয়ে।  মামা থামনে। নেমে যা তুই। বলছি না চাকরি না পাওয়া প্রর্যন্ত প্রবলেম হলে আমাকে বলতে। তা বলবি কেন। আমি তোর কে...? 
আমি : তুই আমার সব। আই লাভ ইউ।  কপালে একটা পাপ্পা দিলাম।
[ দেখি রিকশাচালক হা করে তাকিয়ে আছে আর  হাসছে। ]
ঐ মিয়া হ্যা করে তাকিয়ে আছেন কেন। আগে কখনো দেখ নাই। 
নীলা: আই লাভ ইউ ঠু। রাগ করে না জান। মামা চলেন।
[ হাসপাতালের সামনে নামলাম। আমাকে নিয়ে ডাক্তার দেখালো, ৩ টা টেষ্ট দিল। সবগুলার ই রিপোর্ট নরমাল। পুরাটা সময়ই নীলা অস্থির  ছিল। অনেক গুলা ঔষধ দিলো , সবগুলাই নীলা কিনে দিল। এবার দয়া করে একটু নিয়ম অনুযায়ী খেয়ে নিয়েন মিস্টার।  ]
নীলা : আর পারছি না, কেয়ারলেছ একটা। কোন দুঃখে যে প্রেমটা করতে গেলাম।
আমি : ছেড়ে দিলেই তো পারো...!
নীলা : একটা থাপ্পড় দিয়া সব গুলা দাঁত ফেলে দিব।  মুখে কোন কথা আটকায় না। 
আমি : রাগ করো কেন...আমি তো একটু দুষ্টামি করেছি :-D
নীলা : আমি মনে হয় সিরিয়াসলি বলছি,  আমিও তো দুষ্টামি করেছি :-)
আমি: ওরে আমার দুষ্টুরে।
নীলা: অনেক খুদা লাগছে চলো এবার কিছু খেয়ে নি।
আমি : তুমি এখনো খাও নাই...?
নীলা : তুমি না খেয়ে থাকলে কিভাবে খাই। চলো না একসাথে খাই। 
আমি: চলেন....
[ জ্বরের মাঝে একদম ই খেতে ইচ্ছা করছিল না। নীলা নিজ হাতে খাইয়ে দিল। ]
নীলা: চলো বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।
আমি : যেতে ইচ্ছা করছে না।
নীলা : তাইলে আমারে নিয়া যাও...!
আমি : হ্যা। একটা চাকরি পাই, বিয়া করে একবারে নিয়া যাবো। 
নীলা: হুমম। তখন জ্বর হলে পানিতে চুবাবো। 
আমি : জান।। তুমি এইটা করতে পারবে। তুমি না আমাকে ভালবাসো।
নীলা : না।  মোটেও না।।
[ আসার সময় নীলার চোখের কোনে অশ্রু জমতে শুরু করলো। মুখটা মলিন হয়ে গেল। ]
নীলা: খুব কষ্ট হবে তোমার তাই না...?
আমি : না,  তেমন কিছু হবে না। ঔষধ খেলেই সেড়ে যাবে।
নীলা: আমি এতই হতোভাগী তোমার ঠিকমত কেয়ারটাও নিতে পারছি না।
[ নীলা কেঁদেই দিল। পুরাই ছেলেমানুষী] 
আমি: পাগলী আমার। কিছু হবে না। ২ দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবো। কাঁদে না জান। আই লাভ ইউ।  [ চোখের জল মুছে দিলাম ] 
নীলা: আই লাভ ইউ টু 
আমি: BYE
নীলা: বাই...
ভালবাসায় কখনো চাওয়া পাওয়া থাকে না।  থাকে একটু কেয়ারিং।  নিজে ভাল থেকে,  অন্যকে ভাল রাখার নাম ই ভালবাসা।

No comments:

Post a Comment