Wednesday, June 28, 2017

গল্প: 📂অভিমানী | Touchy

গল্প: 📂অভিমানী | Touchy
✍written by- Salman Ahmed Apu.
.
রোজা না রাখার যে কি প্যারা তা হারে হারে টের পাচ্ছি। আরে বাবা, একটা রোজা রাখিনি বলে এভাবে শাস্তি দিতে হবে? বাসায়-বাইরে কোথাও শান্তি নেই। ফেসবুকেও গফের ঝাড়ির ঝাঁঝে থাকা যেত না, তাই তাকে মিথ্যা বলছি। সত্যিটা জানতে পারলে হালুয়া টাইট করে ফেলবে। ফোন-টোন অফ করে দিয়ে আমি এখন একটা রেসুরেন্টে বসে গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করছি (খাবার)। আরে বাবা এতো পরিশ্রম করি। একটা রোজাই না হয় মিস্ দিলাম। তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল। ভাবছি, মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছি আর খাচ্ছি। এমন সময় পিছন থেকে,
- অ্যাই যে মিস্টার?
- আরে ভাই ডিস্টার্ব করবেন না তো। দেখছেন না খাচ্ছি?
এমন সময় শার্টের কলার ধরে টেনে তার দিকে ঘুরিয়ে,
- ওই কুত্তা, কি কইলি, আমি তোর ভাই লাগি? তুই নাকি রোজা? এই তোর রোজা?
পিছনে তাকিয়ে আমিতো পুরাই টাস্কি। ইনিতো সেই ভয়ংকর প্রাণী ওরফে আমার গফ। ওনার আধ্মাতিক ক্ষমতা থাকলে বর্তমানে প্রয়োগকৃত এই অগ্নী দৃষ্টিতে নিশ্চই আমি ভৎস হয়ে যেতাম।
- আরে শুনো, আমিতো রোজা ছি....
- তুই কোনো কথা বলবি না। কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি। তুই রোজা আছিস্ কি না আছিস্ আমার কিছু আসে যায় না।
- একটু শুনো..
- না কিছু শুনবো না। তোর কথা কেন শুনবো? আজ থেকে আমি তোর কেউ না, তুইও আমার কেউ না। ব্রেকাপ!😡
এসব বলেই হন হন করে হেঁটে চলে যাচ্ছে। আটকানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই। সে এখন স্বয়ং নিজের কথাই শুনবে না। মেয়েটা খুব ভালো কিন্তু রাগ প্রচন্ড রকমের।
.
ওর ঝাড়ি খেয়ে পেট ভরে গেছে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে হাঁটছি। প্রচন্ড গরম। ঘাম চুইয়ে পড়ছে। রিকশা নিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। যাওয়া যাক কিছু দূর। হাঁটতে হাঁটতে ভালো ভাবে ভাবা যায়। তাসফির রাগ ভাঙানোর ব্যাপারে কিছুটা ভাবলে মন্দ হয় না। ও হ্যা, আপনাদের তো বলাই হয়নি। মহারাণীর নাম তাসফি। নামাজ-রোজার ব্যাপারে খুব সেন্সিটিভ। আশ্চর্যের একটা ঘটনা বলি, ও নিজেই আমাকে প্রপোজ করেছিল তারপর আমি কিছু দিন পর যখন "হ্যা" করে দিলাম তখন মহারাণী নিজেই কন্ডিশন দেয়া শুরু করেছেন। তার মধ্যে ফার্স্ট ছিল নামাজ-রোজা ঠিক মতো করতে হবে।💘
কিন্তু ও জানলো কিভাবে আমি রেস্টুরেন্টে? নিশ্চই ভাবি বলেছে। উফ! সবাই একসাথে বাঁশ দেয়।
তাসফি, ভাবির মামাতো বোন। সে সূত্রেই দেখা হয়। তারপর আস্তে আস্তে রিলেশন-এ জড়াই।
মাথায় রাগ ভাঙানোর কোনো উপায় আসছে না। একটা ফোন করা যাক যদিও সুইচ্ অফ থাকার সম্ভাবনা নব্বই ভাগ। হ্যা, যা ভেবেছিলাম, ফোন অফ।😞
নাহ্, এভাবে মিথ্যা বলা ঠিক হয়নি। ওর মিথ্যা একদম পছন্দ না। তাছাড়া কোনো মেয়েই নিশ্চই তার ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে এটা আশা করে না।
ভাবিকে ধরেই এই রাগ ভাঙাতে হবে। এই মহৎ কার্য আমার জন্য নয়।
.
আমি এখন বসে আছি নিজের রুমে। সবাই ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। আম্মু, ভাবি, কাজের বুয়া এরা রান্না ঘরে ইফতারি তৈরিতে ব্যস্ত। আমার কথায় কর্ণপাত করার সময় তাদের নেই। ভাবিকে দুই বার ডাকতে গেলাম। সে ব্যস্ততা দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে গেছে। কি হয় দুই মিনিট একটু কথা শুনলে? সবই ইচ্ছে করে করছে। আমিতো বুঝি।
আবার একবার চেষ্টা করে দেখা যাক,
- ভাবি?
- কি?
- একটু শুনো না!
- বল্ শুনছি তো।
- একটু স্থির হয়ে শুনো, ছটফট করলে বলে কিভাবে?
- এভাবেই বললে বল্, নয়তো যা। দেখছিস্ না কাজ করছি?
- একটু রাগটা ভাঙিয়ে দাও না।😞
- কার রাগ, কিসের রাগ?
- তাসফির রাগ।
- আমি কেন ভাঙাবো?
- তুমিই তো বাঁধাইছো। ও-কে বলার কি দরকার ছিল যে আমি রোজা রাখিনি? তোমাদের সাথে ওর ঝাড়ির অ্যাটাচড্ হলে আমার কি বেঁচে থাকা সম্ভব?😭
- আমি কি রোজা রেখে ও-কে মিথ্যে বলবো?
- আচ্ছা, যা করেছো ভালই করেছো। এখন রাগটা ভাঙিয়ে দেও প্লীজ, প্লীজ, প্লীজ!
- নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান কর্।
- বললাম তো, প্লীজ!
- আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
- লাভ য়্যু ভাবি। উম্মাহ্।
- ছিঃ, ভাগ।
- হিহি।
.
আপাতত নিশ্চিন্ত। ভাবি যখন বলেছে তখন অবশ্যই ব্যবস্থা হবে। বাইরে থেকে কিছুটা ঘুরে এলে মন্দ হবে না। ফুরফুরা আমেজটা অবশ্যই অনুভব করা উচিত। আজ-কালকার মানুষের অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে। ভাবলেশহীন চেহারায় সারা জীবন কাটানোই যেন তাদের জন্মব্রত।
আসরের আজান হচ্ছে, নামাজটা পড়ে নেয়া যাক, যদি আল্লাহ্ একটু মুখ তুলে তাকায়। নামাজ শেষে মোনাজাতে একই বাক্য চল্লিশবার উচ্চারণ করে প্রার্থনা করেছি। শুনেছি, চল্লিশে নাকি বরকত আছে। বাক্যটা ছিল, "প্লিজ আল্লাহ্, তাসফির রাগটা ভাঙিয়ে দেও, প্লিজ।"
.
আল্লাহ্ হয়তো এই পাপীর ডাক শুনেছে। রমজান মাসে নাকি শয়তানদের বেধে রাখা হয় তাই স্বভাবতই মানুষ পাপ কম করে। তাই হয়তো আল্লাহ্ সবার দোয়াই অ্যাপ্রোভ করে নেন।😛 ফোন বাজছে, তাসফির কল,
- হ্যালো, তাসফি?
- বাসায় আসো।
- এখন?😱
- হ্যা, এখনি, কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না।
- সবাই কি ভাববে?
- বললাম না, এক্সকিউজ শুনতে চাই না? (ধমকের স্বরে)
- আচ্ছা, ঠিকাছে।😰
- হুম, ফাস্ট। রাখছি।
.
কলিং বেল চাপতেই ও দরজা খুললো। বসার ঘরে ওর ছোট বোন টিভি দেখছে। আমার আসার ব্যাপারটা যেন স্বাভাবিক। হাসি মুখে আমাকে "কেমন আছ, ভাইয়া?" জিজ্ঞেস করেই টিভি দেখাতে মনযোগ দিয়েছে। সেখানে আর কেউ নেই। তাসফি আমাকে টেনে সোজা ছাদে নিয়ে তুললো।
- আরে বাবা, এরকম কেন করছো? কেউ দেখলে কি ভাববে?
- চুপ! কোনো কথা বলবা না। (রাগ্বত স্বর)
- আচ্ছা, ঠিকাছে।😞
নিরবতা ভঙ্গ করার সাহস পাচ্ছি না। আপাতত সাইলেন্ট মুডে আছে, থাকুক। এখন ঘাটানো ঠিক হবে না।
কিন্তু তার এই সাইলেন্ট মুড বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ক্রমেই তা ভাইব্রেশনে রূপান্তরিত হলো। ও এখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এই কান্নার পুরোটাই এক আশ্চর্যজনক মায়া মাখানো। কোনো এক অপ্রতিরোধ্য ভালবাসার টান অনুভূত হয়। ইচ্ছে করে হাত দিয়ে চোখের জল মুছে দিতে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি প্রতিকূলে।
- তাসফি, কাঁদছো কেন?
- কাঁদলে তোমার কি?😭
- কষ্ট হয় তো।
- একদম মিথ্যে বলবা না।
- সত্যিই কষ্ট হয়।
- তাহলে কাঁদাও কেন?
- আমি কাঁদিয়েছি নাকি? নিজেই তো কাঁদছো।
- এমনিতে তো আর কাঁদছি না। কাঁদাও বলেই কাঁদছি। কোনো কথা শুনো তুমি আমার?
- সব কথাই তো শুনি।
- চুপ! আবার মিথ্যা। (কান্না অবিরত)
- মিথ্যে না, সত্যি। এক সত্যি, দুই সত্যি, ছয় সত্যি।
ও এখন আর কিছু বলছে না। ক্ষণিকের নিরবতা। এটা ভালো লক্ষণ। রাগ কমে যাওয়ার আগের ধাপ।
কিচ্ছুক্ষণ পর ও-ই বললো,
- কেন রোজাটা রাখোনি আজ?
- খুব ক্লান্ত লাগছিলো।
- মিথ্যে কেন বললে যে তুমি রোজা রেখেছো?
- নয়তো তো তুমি বকা দিতা।😞
- কিইই?😡 আমি খালি বকা দেই?
- আরে না, না। সেটা কখন বললাম।
- সেটাই তো বলছো, বুঝি না আমি?😒
- বললাম, তুমি তো ভালবাসো তাই বকা দেও। আমিও ভালবাসি।😍
- এই সরো। একদম কাছে আসবা না।
- আচ্ছা। 😞
- তুমি কি জানো কেন তোমায় নামাজ পড়তে বলি? রোজা রাখতে বলি?
- না।
- কারণ মৃত্যুর পরেও আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে পেতে চাই। আমি চাই, আমার ভালবাসার মানুষটি যেন জান্নাতবাসি হয়। জাহান্নামের কঠিন শাস্তি যেন তাকে না পেতে হয়।
এতটুকুই বলে আবার কান্না শুরু করে দিলো।
- সরি। বুঝতে পারিনি। আর কখনো ভুল হবে না।
- হুম, ঠিকাছে।
- আচ্ছা এবার তো কান্না থামাও।
- চোখের পানি মুছে দেও।
- হুঁ , দিলাম।
- আর কাঁদাবা?
- না।
- সত্যি?
- হুম, ছয় সত্যি।😁
- যাও, পাগল একটা।
- শুধু তোমার।😍
- হিহি, ভালবাসি।
- হুম, ভালবাসি।😍
.
The End.
.
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।)

No comments:

Post a Comment