Sunday, June 25, 2017

গল্প: স্বপ্ন

গল্প: স্বপ্ন
.
অনার্স এর পর মাস্টার্স। গ্রেজুয়েশন কম্পলিট করে আমি এখন শিক্ষিত বেকার।তন্ন তন্ন করে চাকরি খুঁজছি। আজও চাকরির ইন্টার্ভিউ দিয়ে ফিরছি। খুব গরম। তার উপর এখন জ্যাম এ আটকা পড়েছি। ঘেমে অবস্থা একে বারে খারাপ।তাই অগত্যা রিক্সা তে চুপচাপ বসে রইলাম।মন খারাপ।চাকরি পাচ্ছি না।চাকরি টা খুব দরকার। কম বেতন হলেও চলত।কিন্তু চাকরিই তো পাচ্ছি না।বেতন তো পরের কথা।
বাবা রিটায়ার করেছে।সরকারি চাকরি করতেন তিনি।তাই এক কালিন কিছু টাকা পেয়েছেন। সেগুলো দিয়েই এখন চলছি।আবার পেনশন ও পাচ্ছেন। তবে যে টাকা আছে তার প্রায় অনেক অংশই খরচ হয়ে গেছে।কোন রকমে চলে সংসার। চাকরিটা পেলে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকা যেত।এগুলোই ভাবছি রিক্সা তে বসে। হঠাৎ চোখ গেল আমার ঠিক ডান পাশের কালো কার টার দিকে। আমার দৃষ্টি মন্থর হয়ে গেল।সকল ক্লান্তি, গ্লানি দুর হয়ে গেল।আমার বিরক্ত ভরা চেহারাতে বিস্ময় এর রেখা ফুটল।এত গরমের মাঝেও আমার হৃদয়ে স্নিগ্ধ হাওয়া বয়ে গেল।শান্তির হাওয়া।ভালো লাগার হাওয়া।নিজের অজান্তে বলে ফেললাম,
এত সুন্দরী মেয়েও কি বাংলাদেশে আছে? ওহহ কি মায়া ভরা চোখ।ছোট ছোট দুটি ঠোট। খুব পাতলা এবং ছিকুন। তার উপর হালকা গোলাপি লিপিষ্টিক এর প্রলেপ দেওয়া।চোখ জোড়ায় গাঢ় কাজল দেওয়া।চুপ চাপ বসে আছে গাড়িতে। চেহারাতে বিরক্তির ছাপ। তবুও আমার কেমন জানি ভালো লেগে উঠল।আমি চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। আমার হৃদয় বাগানে ততক্ষনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। শান্তি বা সুখ বেশিক্ষণ থাকে না।এখানেও তাই হল।জ্যাম ছেড়ে গেল।তার কালো কারটা আস্তে আস্তে চোখের আড়াল হয়ে গেল।আমি এক চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।
কে এই রমনি।কি তার পরিচয়। কেনইবা তাকে দেখে আমি যেন সুখের সাগরে হারিয়ে গেলাম।এক মুহূর্তের জন্যে ভুলে গেলাম যে আমি রাস্তায় আছি।আমি বাড়ি ফিরছি।।আমি সব ভুলে গেলাম।ভাবনার জগৎ-এ হারিয়ে গেলাম।আশে পাশে কি হচ্ছে এর কিছুই আমি জানি না।আমার মাথায় একটাই চিন্তা, কে এই রমনি? কি তার পরিচয়?
বাড়ি ফিরেও মেয়েটা আমাকে শান্তি দিল না।চোখ বন্ধ করলেই যেন আমি তার সেই চোখ জোড়া দেখি।গোল গোল চোখ দু'টো শুধু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল।নাহ! বেশি ভাবা ভালো না।আমাকে আমার চাকরি নিয়ে ভাবতে হবে।আমার পরিবার নিয়ে ভাবতে হবে।তারপরেও সে আমার ভাবনায় হানা দেয়।এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম। জানি চেষ্টা বৃথা হবে।তবুও আমাকে চেষ্টা করতে হবে ভুলে থাকার।
.
নিউ মার্কেট এসেছি।দুইটা শার্ট আর গেঞ্জি কিনতে হবে।অনেক দিন মার্কেট করি না।।একটা শার্ট ছিঁড়ে গেছে।আর চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে গেলেও এখন স্মার্টনেস লাগে।মূলত এ জন্যেই আসা। সাথে আছে রিপাত। আমার বন্ধু।কয়েকটা দোকান দেখলাম। একটা দোকানে ঢুকার সময় আমার চোখে অন্য দিকে চলে গেল।সেই মেয়েটা। হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ। কালো জামাতে ওকে বেশ মানিয়েছে। জামাটার নাম আমার অজানা।তার সাথে আরেকটা মেয়ে আছে।পাশের মেয়েটা কি জানি বলল।তারপর দুজনেই   হেসে উঠল। ওহহ কি সুন্দর তার হাসি।আমি তাকিয়ে আছি।সে আস্তে চোখের আড়াল হয়ে গেল।গোর কেটে যাওয়ার পর আমি আমার পাশে তাকালাম। রিপাত খুব অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। আমি বললাম,
:কিরে হাবলার মত হা করে আছিস কেন? মসা ঢুকবে তো।
ও আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
:আমি যা দেখছি এবং এখন যা ভাবছি তা কি সত্যি?
:তুই কি দেখিস আর কি ভাবিস তা আমি জানব কিভাবে? আমি কি গায়েব জানি নাকি?
:তুই ভালো করেই জানিস আমি কি বুঝাতে চাইছি।
কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে কথায় পারা যায় না।রিপাত তাদের মাঝে একজন। তাই বলেই দিলাম,
:হুম তোর ধারনাই ঠিক।
:কেমনে কি?
তারপর ওরে আমি বেপারটা বুঝিয়ে বললাম।
:দোস্ত আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।   যে ছেলে এত বড় হয়েছে তবুও কোন দিন কোন মেয়ের সাথে বলে নি কোন মেয়ের দিকে ঠিক মত তাকায়-ও নি সে কিভাবে আজ প্রেমে পড়তে পারে।
:কেন রে? আমার জন্যে কি প্রেম করতে কি নিষেধ আছে?
:না ঠিক তা না।তবে এটা মনে হতেই ভালো লাগছে যে তুইও শেষমেশ কারো প্রেমে পড়ে গেলি।
এই বলে ও হাসতে লাগল।আমি আর কিছুই বললাম না।পরিবারের কথা ভেবে আমি কোন দিন প্রেম করা তো দুরে থাক কোন মেয়ের দিকে ঠিক মত তাকাইও নি। যদি কারো চোখ দেখে প্রেমে পড়ে যাই সে ভয়ে।কিন্তু শেষমেশ প্রেমে পড়তেই হল।আরো এমন এক মেয়ের প্রেমে পড়লাম যাকে চিনিই না।তবে মেয়েটাকে আমার বেশ লেগেছে।মেয়েটার কথা মনে হতেই আমি এক দোড় দিলাম।মেয়েটাকে যেদিকে দেখিছিলাম সে দিকে। কিন্তু ততক্ষনে সে আবার হারিয়ে গেল।আমি দাড়িয়ে রইলাম। রিপাত এর দিকে তাকিয়ে দেখি সে আবারো হা করে তাকিয়ে আছে।মেজাজটাই গরম হয়ে গেল । এভাবে তাকানোর কি আছে।দিলাম এক ঘুসি।।শালা তোর জন্যেই আজ আবার ওকে হারালাম।
ও মুখ বাঁকা করে বলল,
:বাব্বাহ! একদিনের দেখাতেই এত সিরিয়াস!! তা বন্ধু তুমি যতই সিরিয়াস হও না কেন আমারে কিন্তু এক বেলা খাওয়াইতে হইবই।
:শালা তুই তো আছিস শুধু খাওয়া নিয়েই।চল তোর পেট ভরাই। তা না হলে আবার মায়ের কাছে গিয়ে কি না কি বলবি।তার থেকে ভালো এখনি তোর মুখ বন্ধ করার ব্যাবস্থা করি।
:এই না হল বন্ধু।চল চল!
আমি জানি রিপাত বেশি কিছু খাবে না।ও আমার অবস্থা সম্পর্কে সব বিষয়ই জানে।
.
আজ একটা চাকরির ইন্টার্ভিউ আছে যথা সময়ে এসে উপস্থিত হলাম। নতুন শার্ট আর প্যান্ট। বেশ ভালোই লাগছে।অনেক লোক বসে আছে। এরা সবাই ইন্টার্ভিউ দিতে আসছে । একের পর এক ডাকা হচ্ছে । অবশেষে আমার পালা আসল এক লোক এসে বলল,
:তাসফি আহমেদ আছেন। ?
:জি আমিই তাসফি আহমেদ।
:আসুন।
আমি গেলাম। তিনজন লোক বসে আছে দুইজন পুরুষ। আর একজন মহিলা।মহিলা বললে ভুল হবে। মেয়েই বলা যায়।কিন্তু আজিব বেপার হল এই মেয়েকেই আমি খুঁজছি। এই মেয়েকেই আমি জানি।এই মেয়েই সেই মেয়ে যে প্রথম দেখাতেই আমার মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি করল।
ওর বাম পাশে বসা আছে একজন।তিনি বৃদ্ধ। বয়স ষাট কি পঁয়ষট্টি হবে । ডান পাশে আছে একজন। তিনি বেশি বৃদ্ধ নয়।চল্লিশ উপরে হবে তার বয়স। তবে দুই ভদ্র লোকের চেহারাতে অবিজ্ঞাতর ছাপ রয়েছে।
আমি গিয়ে বসলাম। একেবারে মেয়েটার মুখ বরাবর। কাকতালীয় ভাবে এই তিনবার দেখা হল মেয়েটার সাথে।কেন জানি তাকে দেখলেই আমার মনের ভিতর এক অন্য রকম অনুভুতির সৃষ্টি হয়। এই অনুভূতির নামই কি ভালোবাসা? এর অন্য কোন সংগা নেই?
মেয়েটা মনে হয় এই অফিসের উচ্ছপদস্থ কেউ।কারন সব কিছুতে ওকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।মেয়েটা আমার কাগজপত্র গুলো দেখে বলল,
:আপনার রেজাল্ট এত ভালো।আপনি চাইলে তো আরো চাকরি করতে পারেন।
আমি বললাম,
:এখন কোন রকম একটা হলেই চলে।এট লাষ্ট সবাইকে তো বলতে পারব যে আমি চাকরি করি।আর এমনিতে তো চাকরিই পাওয়া যায় না।     কোন রকম একটা পাওয়া মানে হাতে সোনার হরিন পাওয়া।
আমি কথা গুলো বলে আমার সামনের দিকে তাকালম।তারা আমার দিকে এক চোখে তাকিয়ে আছে।চুপ চাপ নিস্তব্ধতা। হয়ত তারা ভাবছে আমি বেশি কথা বলি।এই জন্যে এক চোখে তাকিয়ে আছে।আমি লজ্জা বোধ করলাম।তারপর বললাম,
:সরি।
ডানপাশের লোকটা বলল,
:আপনি এখন আসতে পারেন..
আমি সোজা চলে এলাম। এমন বাজে ইন্টার্ভিউ আমি আর কোথাও দি নাই।সব ওই মেয়েটার দোষ।ওর চোখে দিকে তাকাতেই পারি না।তাকালেই আমি যেন গহিন অরন্যে হারিয়ে  যাই।আমি সিউর ছিলাম যে আমার চাকরিটা হবে না।অন্য কোথাও দেখতে হবে।।
.
কিছুদিন পর একটা চিঠি  আসল। চাকরি হয়েছে।ওই মেয়েটার অফিসেই।আমি বেশ কয়েকবার চিঠিটা পড়লাম। আসলেই কি সত্যি? মা বাবা তো বেশ খুশি। তাদের ছেলেকে এখন আর কেউ বেকার বলতে পারবে না। এই বেকারত্ব নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছে তাসফি কে।এখন আর কেউই তেমন কিছু বলবে না।সবাই সন্মান করবে ওকে।
অফিসে জয়েন করে মেয়েটার নাম জানা গেল।তানজিলা রুহি।এই অফিসের বস। আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। ওর সামনে কিভাবে যাব।কিভাবে কথা বলব।প্রথম প্রথম খুব নার্ভাস লাগছিল।পরে সয়ে গেছে।তবে তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাটা মিস হয় না।এখন আমার শুক্র বারেও অফিসে আসতে মন চায়।তবে আমি বেশি দুর আগাই নাই।কারন রুহি আমার বস।এই কথাটা মাথায় রেখেই আমি আর বেশি দুর যাচ্ছি না।হঠাৎ চাকরি টা চলে গেলে আবার লোকের কটু কথা শুনতে হবে।মাইরের আঘাত থেকে কথার আঘাতে মানুষ কষ্ট পায় বেশি।তাই নিজের সুপ্ত ভালোবাসা কে নিজের মাঝেই লুকিয়ে রেখেছি।
মাধ্যমিক শেষ হওয়া পরেই আমি আমার লক্ষ্য কে চেঞ্জ করলাম। বিসিএস দিব।একজন মেজিস্ট্রেড হব।এর পিছনে উপযুক্ত  কারনও আছে।কারনটা বললে লিখাটা বেশ বড় হয়ে যাবে। তাই বললাম না।
চাকরি করছি আর পাশাপাশি বিসিএস দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।এবং সেটা সবার অন্তরালেই।
একটা ফাইল নিয়ে রুহি মেডাম এর কাছে গেলাম।
:আসতে পারি মেডাম??
:হুম আসুন,,,
:মেম ফাইলটা একটু দেখে সাইন করে দিলে ভালো হত।
:কই দেন তো।
সে ফাইল নিল।ফাইল খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকাল।
:কি বেপার আপনি বসছেন না কেন?
:আপনার অনুমতি ছাড়া কি বসা যায়?
:অনুমিত ছাড়া লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে পারেন আর এখন সামান্য বসতে অনুমিত চাচ্ছেন?
:ঠিক বুঝলাম না মেম
:বেশি বুঝাও ভালো না।বসেন
:জি মেম।
ফাইলটা দেখে সাইন করে বলল,
:নিল আর হলুদ কালারের শার্টটা পরে আর আসবেন না বুঝলেন?
:কেন মেম।?
:বেশি কেন কেন করবেন না।যা বলছি তাই করবেন।তা না হলে তো বুঝেন-ই।
:জি জি ঠিক আছে মেম।
:হুম যেতে পারেন।
আমি উঠে চলে আসার জন্যে পাঁ বাড়ালাম। তখনি ও আবার ঢেকে বলল 
:আর শুনুন। অফিসের সবাই আমাকে তুমি করে ডাকে শুধু আপনি ছাড়া। সো নেক্সট টাইম থেকে তুমি বলে ডাকবেন।আপনি আপনি বাদ।
:জি মেম ঠিক আছে
আমি বের হয়ে গেলাম। ওহহ!! যে হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্ত হঠাৎ-ই মৃদু হাসি আওয়াজ পেলাম। হুম মেডাম এর রুম থেকেই তো আসছে। কিন্তু উনি হাসছে কেন? আমার এই নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে?
তবে ওর ব্যাবহারে নতুনত্ব দেখা দিচ্ছে।আমি আমার কলিগ রূপা কে জিজ্ঞেস করলাম,
:আচ্ছা মেডাম কি মানষিক ভাবে অসুস্থ?
:এই কি বল এগুলো । চাকরি হারানোর ইচ্ছে আছে তোমার?
:আরে নাহ।
:তাহলে এমন কথা আর মুখেও আনবা না।তা তোমার এমন মনে হওয়ার কারন কি?
:আসলে আমি যখন উনার রুম থেকে আসছিলাম তখন আমার কেন জানি মনে হল উনি হাসছে।আমি হাসির আওয়াজ পেলাম।
:জানি না ভাই।উনি কেন হাসলেন তা জানি না।।তবে উনার এমন কোন প্রব্লেম নেই।
আমি হেসেই বলে উঠলাম,
:হা হা হা।না থাকাই ভালো।
রুপাও হাসল। তারপর হঠাৎ-ই ও চুপ হয়ে  গেল।চোখ দুটু বড় করে পেলল। আমি ওর চোখ অনুসরণ করে আমি পিছনের দিকে তাকালাম।
রুহি রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর হন হন করে অফিস থেকে বের হয়ে গেল। আমিও চলে আসলাম। কারন অফিস ছুটি।
পরের দিন রুহি এসেই আমাকে ডেকে পাঠালো।আমি তো ভয়ে শেষ।না জানি কি হয়। আমি ভয়ে ভয়ে ওর রুমের দিকে গেলাম।
নক করে বললাম,
:মেম আসব?
ও কি জানি দেখছিল।চোখ তুলে বলল,
:হুম আসুন
আমি সোজা গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালাম। ও আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো। আমি ভাবলাম যাক বাঁচা গেল।মেম কিছুই মনে করেন নি।কিন্তু কিছুক্ষন পর ও চোখ বড় করে উচ্চ স্বরে বলল,
:এইটা অফিস। প্রেম আলাফ করার জায়গা নয়।
এই বলে ও থামল। আমি ওর নিরাবতা দেখে বললাম,
:সরি মেম।আপনি ভুল বুঝতেছেন। আমি রুপার সাথে,,,,,
এই বলে আমি জিবে কামড় দিলাম।ওকে তুমি করে বলতে বলছে।কিন্তু আমি আপনি করে বলে পেললাম। ও চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
:আমার মুখে মুখে তর্ক করছেন কেন হু? এই জন্যে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
:আমার চাকরিটা খাবে না প্লিজ।আমি তোমার যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নিব।প্লিজ আমার চাকরি টা খেয়ে আমাকে আবার বেকারত্ব দান করিও না।প্লিজ!
:ওই!! চাকরি কি খাওয়ার জিনিস হুঁ।এমনিতেই মেজাজ খারাপ। তার উপর এসব আজে বাঝে বকে মাথা খাবেন না বলে দিলাম।
:সেকি মানুষের থামাও কি মানুষ খেতে পারে নাকি?
এই বলে আবার জিবে কামড় দিলাম।যাহহ! চাকরিটা চলেই গেল।
:ইউ!! গেট লষ্ট প্রোম মাই রুম।
এই বলে ও দাঁড়িয়ে গেল।
আমি যেভাবে এসেছি ঠিক সেভাবেই চলে গেলাম।নিজের ডেক্স এ এসে বসলাম। অনেক ভাবনা আমাকে আঁকড়ে ধরল।আবার শুনতে হবে যে "তুই বেকার?
"
রূপাও কিছু বলতে পারছে না।বেচারি মুখ কালো করে বসে আছে।কি রে ভাই একটু কথাই তো বললাম। তাই বলে....
.
কিছুক্ষন পর আবার ডাক পড়ল।নাহহ! এইবার এই মেয়েকে কিছু বলতেই হবে।কি পেয়েছেটা কি হুম।বস হলে হয়েছে আর কি।তাই বলে এত ভাব।যাই।চাকরি তো যাবেই।শেষমেশ একটা ঝাড়ি দিয়ে আসি।
একেবারে বুক ফুলিয়ে গেলাম ওর রুমে।
কিন্তু কিসের কি! আমি ওর সামনে যেতেই সব গুলিয়ে পেললাম। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
ওর চোখের দিকে তাকালে আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না।
কিছুক্ষন পর আবার রুম থেকে বের হলাম।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমারো মন খারাপ। কি থেকে কি হয়ে গেল। এমনটা তো আমিও ভাবি নি।আমার ডেক্স এর সামনে এসে ফাইল আর কাগজ পত্র গুলো গুছিয়ে আবার ওর রুম এর দিকে গেলাম।কেউ টু-শব্দও করল না।সবাই তাকিয়ে  আছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে আমি চিড়িয়াখানায় নতুন নিয়ে আসা কোন পশু।তাই সবাই আমাকে দেখছে। । ওর রুমে ডুকার আগে একবার সবাইকে দেখে নিলাম।তারপর একটা হাসি দিয়ে ওর রুমে ডুকে গেলাম।নিশ্চই সবাই অবাক হয়েছে। অবাক তো হাওয়ারি কথা।যেখানে আমি অবাক হয়ে গেলাম সেখানে ওরা তো অবাক এর উপর অবাক হওয়ার কথা।আসলে আমার এই  চাকরিটা শেষ।আবার নতুন চাকরিও হয়েছে।বুঝলেন না তো? আসেন বুঝিয়ে বলি।আসলে ওর রুমে যাওয়ার পর  ও আমাকে বলল যে আপনার শাস্তি পেতে হবে। তাই শাস্তি হিসেবে আমার ববর্তমান চাকরি টা শেষ।চলে গেছে।রুহি এই চাকরি নিয়ে আবার নতুন চাকরি দিল।সেই চাকরিটা হল ওর প্রাইভেট সহকারী হতে হবে।যতক্ষণ অফিসে আছি ততক্ষন ওর সাথে থাকতে হবে। আমি এই কথা শুনে হাসব না কাঁদব সেটাই বুঝতেছি না।আবার বেতনও বাড়িয়ে দিয়েছে।তাই আর না করি নি।অল্প কয়দিনই তো।শুধু বিসিএস-এ একবার টিকে গেলেই এই চাকরি ছেড়ে দিব।
এতে অবশ্য আমার অন্য দিক দিয়ে ভালোও হয়েছে।ওকে খুব কাছের থেকে দেখতে পাব।আবার ভয়-ও হচ্ছে।যদি ধরা পড়ে যাই?
আমি ভাবছি আমিই শুধু এই ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।কিন্তু সেও যে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে এটা আমি এখন টের পাচ্ছি। সকালে এসে সারা দিন ওর সাথে থাকি।অফিস ছুটির পর ও আমাকে আমার বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসে।আমি না করেছিলাম। কিন্তু সে দিবেই দেব।এদিকে ও এখন আমাকে তুমি করেও বলা শুরু করে দিয়েছে।মোট কথা খুব ভালোই কাটছিল দিন গুলো।হঠাৎ-ই এক দিন ও সবাইকে দেখি বিয়ের কার্ড দিচ্ছে।আমার বুকটা ধক করে উঠেছিল।মাথাটা কেমন জানি ঘুরছিল।কেমন জানি কষ্ট হচ্ছিল। ও যখন আমাকে কার্ড টা দিল তখন আমি মাথা নিচু করে কার্ডটা নিলাম।কার্ডটা নিয়েই আমি উল্টা ঘুরে গেলাম।ও আমার পিছনে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।ততক্ষনে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে গেছে।ও পিছন থেকেই বলল,
:আমার বড় বোন এর বিয়ে।তোমাকে অবশ্যই থাকতে হবে।কি থাকবে তো।
আমি  কোন রকমে বললাম যে,
:হ্যাঁ অবশ্যই থাকব।
:তুমি ওই দিকে তাকিয়ে আছ কেন? আমার দিকে তাকাও।
:নাহহ! এমনি তাকিয়েছি।তুমি যাও আমি আসছি।
ও চলে গেল।আমি এক লাপ দিয়ে হাতের আংগুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করে আস্তে করে বললাম,
:ইয়েস! ইয়াহহু। হা হা হা হা।আমি কি বোকা। কি ভাবছি আর কি হল।
এই বলে হাসতে লাগলাম।
এই কাঁদলাম। এখন হাসছি।বেপারটা আজিব না? মানুষ এমনি।
.
ওর বোনের বিয়ে কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ও বিয়ে করছে। যে হারে শপিং শুরু করছে। মাঝখানে আমার অবস্থা খারাপ। সব শপিং করে আমার হাতে তুলে দিবে।কি যে জ্বালায় পড়লাম।আল্লাহ তুমি আমাকে উদ্ধার কর।
ও আমার জন্যে একটা শার্ট আর পাঞ্জাবী কিনেছি। পছন্দ আছে বলতে হবে।আফটার ওল আমার হবু বউ বলে কথা। আবার মনে হল কোথায় কি।আমি তো ওকে বলিই নি যে আমি তাকে ভালোবাসি।কথায় আছে না যে গাছে কাঁঠাল গোঁপে তেল।আমার এখন সেই অবস্থা আর কি। ওকে এখনো বলিই নাই।তার আগেই হবু বউ? এটা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেল।
:এই কি ভাবছ।চল,,
:তোমার শপিং শেষ হয়েছে?
:হুম আমার তো শেষ।তোমার কোন কাজ আছে এখানে?
:নাহ! আমার কি কাজ থাকবে।
:তাহলে দাঁড়িয়ে আছ কেন।চল?
:হুম চল।
গাড়িতে কেউই কথা বললাম না।আমার হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।তাই কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আমি এমনি।হঠাৎ মন খারাপ হলে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না।
গাড়ি থেকে নেমে চলে যাওয়ার সময় ও বলল,
পাঞ্জাবীটা পরেই কিন্তু আসবে। মনে থাকে যেন।
আমি শুধু মাথা নাড়লাম।ঘরে এসে অনেক ভাবলাম।আমার সাথে কি রুহির কখনো মিল হবে? আমি কি ওকে পাব? এই চিন্তা গুলো আমাকে যেন চারিদিক থেকে গ্রাস করে পেলছে।নাহহ! আর ভাবতে পারছি না।ঘুম আসছে ঘুম যাব।
কোন কিছুর খবর নেই। দিলাম এক ঘুম।ঘুম থেকেই উঠে ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে ফোন নিয়ে ছাদে উঠলাম।ফোনটা খুলে দেখলাম রুহির অনেক গুলো কল দেওয়া।ওর সাথে আমার ফোনে তেমন কথা হয় না।কিন্তু আজ এত কল দেওয়ার কারন কি?।ফোন দিলাম।রিং হচ্ছে।ফোন ধরেই বলল,
:এই তুমি কই
:এই তো বাড়িতে। কেন?
:এত গুলো কল দিলাম। ফোন ধরলা না কেন? হুম?
:আসলে গুমিয়ে গেছিলাম।তাই ধরতে পারি নি।কেন ফোন দিছিলা?
:কেন তোমাকে কি ফোন দিতে কারন লাগে নাকি?
:না! তা নয়।আসলে তুমি তো তেমন ফোন দাও না। তাই বললাম আরকি।
:দি নাই । তবে এখন থেকে দিব।কোন সমস্যা?
: না সমস্যা হবে কেন?
:একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
: কি বল
:আজ মার্কেট থেকে ফেরার সময় তোমার মন খারাপ ছিল কেন? সত্যি করে বলবা কিন্তু
:কিছু না। এমনিই।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।তারপর ফোন অফ।
পুরো রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি।কেন জানি খুব টেনশনে কাটল রাত টা।সকালে গুম থেকে উঠলাম।আজ শুক্রবার। আজ ওর বোনের বিয়ে।কিন্তু আমার মনটা খারাপ।কেন? জানি না।ভালোই লাগছে না।নাস্তা করেই চলে গেলাম মার্কেট-এ।রনি,রিহান,রায়হান,রিপা,তানিয়া, রানু, অবিনাশ। এরা বস্তিতে থাকে। তবে এদের সাথে আমার অনেকটা সময় কেটে গেছে।পড়ালিখা চলা কালিন সময় থেকে এদের সাথে আমার পরিচয়। এদের সাথে খেলতাম, এদেরকে পড়াতা,দুষ্টামি করতাম।ওদের মেনারস শিখাতাম।কিভাবে কার সাথে কথা বলতে হবে।কিভাবে কাউকে সন্মান করতে হবে। এসবই শিখাতাম।ভালো লাগত।এখানে আসলেই আমার মনভালো হয়ে যেত।চাকরির সুবাদে এত দিন আসতে পারি নি।না জানি কি মনে করে ওরা।জানি ওরা জামা গুলো পেলে খুব খুশি হবে।তবুও এত দিন যাই নি।
.
আমি বাড়ি যাওয়ার পর মা খুব রেগে গেল।রুহি নাকি আমাকে এসে খুজে গেছে।না পেয়ে মাকে বলে গেছে যে,আমরা যেন তাড়াতাড়ি যাই।আমি মাকে বললাম,
:মা তোমারা একটু পরে আস।আমাকে আগে যেতে হবে।
:হুম তুই যা আমার এখনো অনেক কাজ পড়ে আছে সেগুলো সেরেই তারপর যাব।
:হুম ঠিক আছে।
আমি তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে চলে গেলাম ওদের বাড়ির দিকে।
বাহহ! সেই তো বাড়িটা।খুব ভালো করে সাজিয়েছে বাড়িটা।এতে এর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।আমি ভিতরে যেতেই এক ময়দা সুন্দরির সাথে দেখা।আমাকে দেখেই বলল,
:ভাইয়া একটু দোকানে যেতে পারবেন?
: কেন?
:আসলে আমার ছোট ভাইটা চকলেট খাবে বলে কান্না করছে। কোন ভাবেই ওর কান্না থামাতে পারছি না।একটু যদি এনে দিতেন।
রাগ আর মেজাজ টা কোন রকমে ধরে রেখে ছোট একটা হাসি দিয়ে বললাম,
:জি আচ্ছা।
চকলেট নিয়ে এসে পড়লাম আরেক ঝামেলায়।কোথায় হারিয়ে গেল যে মেয়েটা। ওই তো।ডাক দিলাম।
:এই যে মিস! দাড়ান ।আপনার চকলেট।
:ওহহ।সরি।আসলে মা ডাকছিল।সরি এবং ধন্যবাদ।
আমি হালকা হেসে বললাম,
:ওকে,,,,,
কথাটা বলা শেষ হয় নি।কেউ আমার বাজু ধরে একটান দিল।টানছে তো টানছেই। ওইদিকে ওই মেয়েটা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে হয়ত বুঝতে পারছে না বিষয় টা।রুহি একটা রুমে এনে দরজা বন্ধ করে শুরু করল অত্যাচার।মারছে তো মারছেই।থামা থামি নেই।
:ওফহহ! লাগছে তো। ছাড়! আরে মারছ কেন?
:চুপ বেয়াদব। চুপ।কথা বলবি না।আমার রাগ না কমা পর্যন্ত মার খাবি।একটা কথাও বলবি না।
:এ কেমন বিহেভ রুহি।
:বিহেভ এর কি দেখলি।হু।কি দেখলি।ফোন বন্ধ। বাড়িতে খুঁজে আসলাম। সেখানেও নেই।আবার এখানে এসে মেয়েদের সাথে টাংকি মারা। হুঁ। আজ তোকে মেরেই পেলব।
এই বলে আরেক ধপা হয়ে গেল।রোমান ও এই মেয়ের কাছে হারবে।কি শক্তি রে বাবা।পুরো বিয়েতে আমাকে ওর পাশে পাশে রাখল।কোন কথা নাই।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে হল।অনেকে আড় চোখে তাকাচ্ছিল। কিন্তু রুহি তা পাত্তাই দিল না।ওর বান্ধুবি রা আমাকে ওর পাশেই দেখেই শুরু করল হাসি তামাসা।বন্ধুরা এমনি।পঁচানির সুযোগ পেলে হাত ছাড়া করে না।
ওর বোনের বিয়ের দুই দিন পরেই আমার বিসিএস পরিক্ষা শুরু হল।এরই মাঝে ওর সাথে আমার ফোনআলাপ ও হত।ও জানত না যে আমি বিসিএস দিচ্ছি। ওর অগোচরেই পরিক্ষা দিচ্ছি । অফিসে যেতাম।আসতাম।মাঝে মাঝে ওর সাথে ঘুরতে যেতাম।আমি বুঝতে পারি যে ও আমার প্রতি দুর্বল। কিন্তু আমি যে ওকে গিয়ে বলব যে "আমি তোমাকে ভালোবাসি "সে যোগ্যতাটাই আমার নেই।এই কথা বলার সাহসও তো আমার নেই।একটা ডিসিশন নিলাম।আমি যদি বিসিএস টিকি তাহলে ওকে প্রপোজ করার চেষ্টা করব।আর যদি না টিকি তাহলে ওর কাছ থেকে অনেক দুরে চলে যাব।জানি কষ্ট হবে। তবুও ওর সুখের জন্যে যদি ওকে ছেড়ে চলে যেতে তাহলে আমি তাই করব।
.
আজ আমার সব চেয়ে খুশির দিন।কারন আমি আমার স্বপ্ন পুরুন করেছি।আমি আমার লক্ষে পৌঁছেচি।বাবা কে বলাতে বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরল।এক প্রকার কেঁদেই দিল।কারন এই স্বপ্নটা আমার একার না। আমার বাবাও খুব চাইত যে আমি একজন মেজিস্ট্রেড হই।কিন্তু আর্থিক অবস্থার কারনে তিনি এই সম্পর্কে কিছু বলেন নি।শুধু মাকেই বলেছে।আর তখন আমি আড়াল থেকে তা শুনে গেছি।তারপর শুরু হয় আমার লক্ষ্যে পৌছানোর যুদ্ধ।অফিসে গেলাম মিষ্টি নিয়ে । সবাইকে খাওয়ালাম। সবাই খুশি। শুধু একজন ছাড়া।রুহি! হ্যাঁ ও ঠিকি মিষ্টি খেল।কিন্তু আমি সিউর ছিলাম যে ও কষ্ট পেয়েছে।
ও খুশি না।মন খারাপ ওর।
কিছুদিন পর সোজা ওর রুমে গেলাম রিজাইন পেপার দিয়ে চলে আসলাম।ও শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।
আমি বাড়ি চলে আসলাম।ভাবলাম কি করা যায়।হঠাৎ-ই ওর ফোন।
:হ্যালো
:দেখা করতে পারবে?
আমার কলিজা যেন নড়ে উঠল।ওর কন্ঠটা কেমন জানি শোনাল। আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি ও কান্না করেছে।তাড়াতাড়ি বললাম
:হুম অবশ্যই।
:হুম আমার অফিসের সামনে আস।
আমি ওর অফিসের সামনে গেলাম।ও দাঁড়িয়েই ছিল।সোজা গাড়িতে গিয়ে বসল।আমিও ওকে অনুসরণ করে গাড়িতে উঠলাম।
গাড়িটা সোজা চলে আসল মনিপুরী পার্কে।নেমেই আমার হাত ধরে পার্কের ভিতরে নিয়ে গেল।তারপর আমাকে বসাল।নিজেও বসল।কোন কথা নেই।চুপচাপ। আমিই নিরাবতা ভেংগে বললাম,
:কি হল চুপ কেন?
:নিশ্চুপ
:এই রুহি....
মেয়েটা এবার কেঁদেই দিল।ওর কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না।
:এই তুমি কান্না করছ কেন?
:.....
:এই রুহি কান্না করছ কেন?
:সুখে কান্না করি।কথা বলবা না
আমি চুপ করে গেলাম।মেয়েটা এক চোখে কান্নাই করে যাচ্ছে।নাকের ডগাটা লাল হয়ে গেছে।গাল বেয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে।
আমি আর সহ্য না করতে পেরে বলেই দিলাম কথাটা।
:রুহি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ও আমার দিকে হা করে তাকালো। যেন সে এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না।
:কি?
আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই বললাম,
:নাহ কিছু না। এমনি। কিছু না।
ও রাগে রাগে খোভে আমায় একটা চড় দিল।তারপর কলার ধরে হেচকা একটান দিয়ে বলল,
:আগে বলছিস যেটা সেটা এখন আবার বলবি।যদি না বলিস তাহলে এখানেই খুন করে দেব।নে বল এবার।
কি মেয়েরে বাবা।শেষেমেশ আমাকেই প্রপোজ করতে হল।
মেয়েরা এমনি।বুক ফাটবে তবুও মুখ পাঠাবে না।
.
আজ আমাদের বাসর রাত আমি যথা সময় রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। এর আগে রিপাত বলে গেছে যে,
:বন্ধু যাও বিড়াল মারো।এটাই মুখ্যম সুযোগ বেড়াল মারার।পরে কিন্তু আর এমন চান্স পাবা না।
:ধুরর বেটা। যা এখান থেকে।
: তা তো যেতে বলবিই।এখন অন্য একজন আছে না।আমারি কপাল পোড়া।আমিই এখনো সিংগেলই রয়ে গেলাম।গিয়ে দেখি কাউকে পাই কি না।
:আরে যা যা।তোর মত ছেলে আবার প্রেম করবে।
:কিহ? এত বড় কথা।দেখ কালই
একটা পডাই নিয়া আসমু। গেলাম।
এই হল দরজার বাইরের কাহিনী  এখন আমি দরজা ভিতরে।
আমি ওর সামনে গেলাম । ও সালাম করল।তারপর আবার যথাস্থানে বসল।
ও বলল,
:জানো তুমি যখন আমার দিকে রাস্তায় প্রথম তাকিয়েছিলে আমি খুব বিরক্ত বোধ করছিলাম। তারপর মার্কেট এ দেখা।সেদিন আমিই তোমাকে দেখিছি যে তুমি আমাকে পাগলের মত খুঁজছ।আমার জন্যে নিজের বন্ধু কে মারলে।তারপর অফিসে চাকরির ইন্টার্ভিউ দেওয়া।জানো সেদিন তোমার বোকা বোকা চেহারা দেখে আমার এত ভালো লেগেছে যা বলে বুঝাতে পারব না।চাকরি তে জয়েন করার পর থেকে আমি লক্ষ্য করলাম তুমি আমাকে দেখছ।আমিও যে তোমাকে দেখতাম না তা নয়।আমিও তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। তোমাকে দেখার জন্যে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসি।তোমাকে মন ভরে দেখি।তুমি বুঝতে কি না তা জানি না।তবে এটাই সত্যি।জানো তোমাকে আমি কত ভালোবাসি? তোমার জন্যে আমি প্রতিদিন দোয়া করতাম যেন তুমি বিসিএস এ টিক।প্রতিদিন দু রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করতাম।
:ওয়েট ওয়েট। তুমি জানো কিভাবে যে আমি বিসিএস দিচ্ছি?
:তা যেনে তুমি কি করবা।তুমি বিসিএস এ টিকছ এটা ছিল আমার সবচেয়ে খুসির খবর। কিন্তু জানো সেদিন আমি কেন জানি হাসতে পারি নি।খুব কান্না আসছিল। তোমাকে আআর কাছে
পাব না।তুমি অন্য কোথাও চাকরি করবে।অন্য মেয়ের সাথে মিসবে, আমাকে ভুলে যাবে।এগুলো ভাবতেই খুব কষ্ট হত।
এতটুকু বলে ও থামল।কয়েকফোটা চোখের জল ওর গাল বেয়ে পড়ল। ও আর কিছু বলতে পারছে না।ওর কান্না আমার একেবারেই সহ্য হয় না।তাই ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ও কান্না করছে না।তবে চুপচাপ আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আমি বলল,
:ওই রিপাত বলল বিড়াল মারতে। কিন্তু বিড়াল পাব কই এখন।আর মারবও বা কি ভাবে?
ও আমার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলল,
:এদিকে আস আমি তোমাকে বিড়াল মারা শিখাচ্ছি।এত বড় হয়েছ এখনো বেড়াল মারাটাও শিখলে না।
আমিও অবুজ শিশুর মত ওর সামনে গেলাম।  তারপর হঠাৎ-ই  ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম।  রুহির নরম তুলতুলে গোলাপি দুই ঠোট আমার দুই ঠোটের মাঝে।দুই হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে আছে।আমার পুরো শরির কেঁপে উঠল।অজানা শিহরণ বয়ে গেল মনের ভিতর দিয়ে।শান্তির শিহরণ। আমি কেঁপে উঠেছি দেখে রুহি আমাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরল।দুজনেই হারিয়ে গেলাম ভালোবাসার অতল গহ্বরে।পুর্নিমার চাঁদটা এমন ভালোবাসা দেখে খুব হাসে।খুব হাসে।সাথে ছোট তারা টিও মিটি হাসে।পরিবেশটা যেন ভালোবাসার গন্ধে ভরে গেল।কি মনোরম সেই গন্ধ।
.

ভুলত্রুটি মার্যনীয়
(তাসফি আহমেদ)

No comments:

Post a Comment