Friday, June 23, 2017

গল্পঃ "প্রেমিকা যখন বউ"

গল্পঃ "প্রেমিকা যখন বউ"

পরিবারের সদস্যদের সাথে এসেছি বিয়ের পাত্রী দেখতে। আর বিয়ের পাত্র এই অধম আমি নিজেই।

সামনে টেবিল ভর্তি নানা রকম মুখরোচক খাবার সাজানো। এ বাড়ির বড় মেয়েকে বিয়ে করার বদৌলতে বেশ জম্পেশ জামাই-আদর পাবো বলে মনে হচ্ছে!

বাকি সবাই গল্পগুজব করছে। আর আমি উশখুশ করছি পাত্রীর লজ্জাবনত মুখের দর্শন লাভের আশায়।

শুনেছি এ যুগের মেয়েদের লজ্জাবোধ একটু কম-ই। যাহোক, মা হয়তো আমার বিচলিত ভাব লক্ষ্য করেই পাত্রীর মা-কে বললেনঃ
-মেয়েকে এবার নিয়ে আসুন, আপা।

মায়েরা যে সত্যিই সন্তানদের মনের কথা বুঝতে পারে, এ কথাটার আরেকবার প্রমাণ পেলাম।

পাত্রী এলো শাড়ি পরে, হাতে গ্লাসভর্তি শরবতের ট্রে নিয়ে। আমার মায়ের চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে উনি পারলে এখন-ই এই মেয়েকে নিজের বড় ছেলের বউ বানিয়ে ঘরে তুলতে পারলে স্বস্তি পান! এরপর মা আর আপু পাত্রীকে কিছু টুকটাক প্রশ্ন করলো।

আমার বাবা বললেনঃ
-তাহলে এবার বিয়ের তারিখটা ফাইনাল করে ফেলতে চাইছি আপনাদের আপত্তি না থাকলে।

বাবার কথা শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম৷ আমাকে হতাশা থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন আমার হবু শাশুড়ি মা! তিনি বললেনঃ
-তার আগে ছেলে মেয়ে একান্তে কথা বলে নিলে ভালো হত না!

সবাই এতে সম্মতি দিল।

এখন আমি বসে আছি পাত্রীর বেডরুমে। আমার ইচ্ছা করছে সামনে দাড়িয়ে থাকা, ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটিয়ে রাখা ললনা-কে বলি যেঃ
-"ওহে মায়াবতী, আমি তোমার মায়ায় সারাজীবন আটকে থাকতে চাই। তোমাকে আমার বুকের বামপাশটা দলিল করে দিলাম, হে বালিকা! তুমি সবসময় আমার কাছে আকাঙ্ক্ষিত থাকবে, ঠিক প্রথমবার দেখার মতোই!"

কিন্তু ইচ্ছা হলেও আমি এসব কিছুই বলব না!
কারণ, আমি জানি এখন দরজায় কান পেতে আছে পাত্রীর নানী, ছোট বোন আর কাজিনরা।
তাই রোমান্টিকতাকে গলা টিপে মেরে ফেলে গলা খাকারী দিয়ে দরজায় কান পেতে থাকা সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে পাত্রীর উদ্দেশ্যে বললামঃ
-তা প্রেম করেছেন কয়টা এ পর্যন্ত?

আমার প্রশ্ন শুনে পাত্রী বেশ অবাক হলো। কিন্তু আমি সেটাকে পাত্তা দিলাম না।এরপর আমাকে অবাক করে দিয়ে পাত্রী বললোঃ
-আস্তাগফিরুল্লাহ! এসব কি বলেন! আমি ওই রকম মেয়ে না।

আমি মনে মনে বললামঃ
-তবে রে! সারাদিন বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘোরাঘুরি করেও বেমালুম অস্বীকার! চান্দু, বিয়ের পর বুঝবা মজা!

এরপর কিছু বাক্যালাপ শেষে দুজনই সম্মতি দিলাম বিয়ের।

তারপর তিন বার কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ে হয়ে গেল আমাদের। গাড়িতে উঠার আগ মুহূর্তে বাবা, মা, ভাই, বোন-কে জড়িয়ে ধরে আমার বউয়ের সেকি কান্না! মনে হচ্ছে তাকে যেন কেউ বানের জলে ভাসিয়ে দিয়েছে। অ্যারেইঞ্জড ম্যারেজ হোক বা লাভ ম্যারেজ, বিয়েতে মেয়েরা কাঁদবেই এটা যেন অলিখিত নিয়ম!

দাঁড়িয়ে আছি আমার রুম, মানে বাসর ঘরের সামনে আর কি। একটু নার্ভাস লাগছে। যতই হোক প্রথমবার ঢুকবো তো বাসর ঘরে তাই এ অবস্থা। দুলাভাই আর বন্ধুদের দেওয়া সাহসকে পুঁজি করে অবশেষে পা রাখলাম রুমের ভিতর।
দরজা আটকে বিছানার দিকে ঘুরেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! এটা দেখার আগে মরে গেলাম না কেন!

বউ আমার ঘোমটা তুলে বিছানার উপর পা উঠিয়ে আরাম করে বসে মোবাইল টিপছে!

ফাজলামীর একটা সীমা আছে! মেজাজ গরম করে মোবাইলটা হাত থেকে কেড়ে নিলাম৷ এরপর দেখি তিনি তার ফেসবুক আইডিতে এই মাত্র একটা পিক আপলোড করেছেন! আমাদের বিয়ের কাপল পিক!
পিক-এর ক্যাপশনে লিখাঃ "একটু আগেই আমি আমার বিবাহিত জীবন শুরু করেছি৷ আমি খুশি হলেও, এ বিয়েতে আমার সাবেক প্রেমিক সারাক্ষণ গম্ভীর মুখে ছিল।"

এটুকু পড়ে আমি হা হয়ে গেলাম! তাকিয়ে দেখি আমার বউ চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
ক্যাপশনের বাকি অংশটুকু হলোঃ
-"আমার প্রেমিক থেকে স্বামীতে প্রমোশন পাওয়ায় তিনি মনে হয় কিছুটা বিমর্ষ এবং অসহায়বোধ করছেন! হয়তো এজন্যই কাপল পিকেও গম্ভীর মুখ, এ অসহায়, গম্ভীর ছেলেটির জন্য কয়টা লাইক হবে ফ্রান্স?"

এরকম ক্যাপশন দেখার পর আমি হাঁসব, নাকি কাঁদবো সেটা না বুঝতে পারলেও, এটুকু বুঝলাম যে, এই মেয়ে আমার প্রেমিকা থাকা অবস্থায় যেমন জ্বালিয়েছে, এখন বিয়ের পরে তার চেয়েও বেশি জ্বালাতন করবে...।।

No comments:

Post a Comment