Wednesday, October 12, 2016

"লাইফ ইজ সো রোমান্টিক"

"লাইফ ইজ সো রোমান্টিক"
.
১|
হঠাৎ নাকের কাছে কিছু একটার
সুড়সুড়ি তে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ
খুলে দেখি নীলু ভেজা চুলে আমার
মুখের উপড়ে ঝুকে আছে। আর চুল দিয়ে
আমার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে।
আমি ঘুমের মাঝে নীলু কে জড়িয়ে
ধরলাম। নীলু গোসল করে একটা সবুজ
শাড়ী পরেছে। আমি নীলুর মুখটির
দিকে তাকিয়ে আছি অপলক কয়েকটি
নিস্তব্ধ মুহূর্ত যায়। নীলু মিষ্টি ভরাট
দুটো গালে গহীন টোল ফেলে হাসি
দেয়। নীলু আমার বুকে আঙুল দিয়ে
বিলি কাটতে কাটতে আদুরে গলায়
বলে উঠে।
_ কি মহারাজ ঘুম কেমন হলো?
_ ঘুমাতে দিলে কোথায়, ঘুম তো
ভাঙিয়ে দিলে?
_ অনেক ঘুমিয়েছো! উঠো আমাকে
নাস্তা তৈরি করতে হেল্প?
_ আজ তুমি একা রান্না তৈরি করো?
আমার বড্ড ক্লান্ত লাগছে।
_ তুমি জানো না। আমার একা
রান্নাঘরে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
_ আজ রান্না না করলে হয় না?
_ রান্না না করলে খাবে কি
মহারাজ?
_ আমার মহারাণীর ভালবাসার
ভান্ডারে ভালবাসা কম পরেছে?
নীলু আমার ঠোটে আঙুল চেপে ধরে
বলে।
_ একদম দুষ্টামি করার চেষ্টা করবে না।
সারা রাত অনেক দুষ্টামি করেছেন
আপনি।
,,
নীলুর চোখে কপট রাগ। পারলে চোখ
দিয়ে ভস্ম করে দেবে। এই রাগ দেখে
ইচ্ছা না থাকা শর্তেও বিছানা
ছেড়ে উঠে ফ্রেস হতে গেলাম। এই
পাগলী টাকে রান্নায় হেল্প করা
মানে। সে রান্না করবে আর আমার
পিছন থেকে তার কোমর জড়িয়ে ধরে
রাখতে হবে। এতে নাকি স্বামী
স্ত্রী মাঝে মহব্বত বাড়ে। কোমর
জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থায়। যদি
রান্নায় লবণ মরিচ দেওয়া একটু
এদিকওদিক হয়। তাহলে মুখ বাংলার
পাঁচ বানিয়ে দিবে এক ঝামটা। তবে
সাবধান কোমর থেকে যেন হাত না
সরিয়ে যায়। যদি হাত টা ভুল ক্রমে
হাত ছুটে যায় তাহলে খুন্তি মুখের
সামনে ধরে ঝগড়া টা এমন হবে।
_ আমাকে আর ভালবাসতে ইচ্ছা করে
না বুঝি। করবে কিভাবে পাশে যদি
অমন সুন্দরী সুন্দরী কলিগ থাকে তাহলে
তো বউ এর কথা মনে থাকবেই না। মন শুধু
উড়াল উড়াল করে? একদম ডানা কেটে
বাসায় বসিয়ে রাখবো হু? হাতে কি
শক্তি নাই? শক্ত করে ধরে থাকো।
খুন্তি দিয়ে একদম চোখ তুলে ফেলবো!
বউ রেখে আশেপাশে তাকালে। কি
বলেছি মনে থাকবে?
_ হুম থাকবে।
_ তাহলে এখনো চুপ করে আছো কেন?
ধরো জড়িয়ে।
আমি আবার নিরীহ বালাক এর মতো
আবার কোমর জড়িয়ে ধরি। আমি
জানি আমার পাগলী বউটার এই ঝগড়া
গুলোর মাঝে কতো ভালবাসা
লুকিয়ে আছে।
২|
বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি নীলু
দেওয়ালে টাঙানো আমাদের
বিয়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে
আছে। আমি পিছন থেকে চুপিচুপি পা
টিপে যেয়ে কোলে তুলে নিলাম
নীলু ভুত দেখার মতো চুমকে উঠে আমার
গলা জড়িয়ে ধরে বলে।
_ কি ব্যাপার আজকে বউ এর প্রতি
ভালবাসা একদম উতলে উঠছে মনে হয়।
_ "জানো আমি আজো দেখেনি
মেঘের এতো রঙ। তবে তোমাকে
দেখেছি, সত্যি আকাশের ওই নীল
মেঘমালায়।
মেঘকন্যা হয়ে ঘুরে বেড়াতে।"
নীলু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে
টোল পরা সেই বিখ্যাত হাসিটা
দিলো। আমি মন্ত্রমুগ্ধ্যে সে হাসির
দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি জানি আর কিছু বললেই এই
মেয়েটা নির্ঘাত কান্না করে
দিবে। এই মেয়েটা বেশি সুখে
কান্না করে দেয়। নীলুর চোখে পানি
টলমল করছে। যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু
হতে পারে। আমি আর কিছু না বলে
নীলুকে কোলে করে রান্নাঘরে
নিয়ে যাই।
প্রতিদিনকার মতো নীলু রান্না করছে
আর আমি পিছন থেকে নীলুর কোমর
জড়িয়ে ধরে আছি।
৩|
নাস্তার টেবিলে সামনা সামনি
দুটো প্লেটে সুন্দর গরম ভাত, আলু ভর্তা,
ডাউল আর ছোট মাছের চর্চরী।
ডাউলের পাত্রে উলটো করে রাখা
চামচ। গরম ভাতের ধুয়ো উড়ছে। মন
উত্থাল-পাথাল করা স্বর্গীয় পরিবেশ।
দুজনি কেউ কারও চোখের দিকে
তাকাতে পারছিনা। হঠাৎ নীলু উঠে
এসে মাথা নিচু করে আমার পাশে
বসে পরে। আমি জানি এই বসে পরার
মানে এখন তাকে খাইয়ে দিতে হবে।
আর নীলু ড্যাবড্যাব করে ছলছল চোখে
আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
পাগলী টাকে একলা বাসায় রেখে
অফিসে যেতে ইচ্ছা করেনা। যতক্ষণ
বাসায় থাকবো বুকের সাথে লেপটে
থাকবে। অফিস থেকে ফিরার পর
আমার ঘামে ভেজা শরীর অনেকক্ষন
জড়িয়ে ধরে থাকবে। তারপর হঠাৎ
ঝামটা দিয়ে নিজে কে ছাড়িয়ে
বলবে।
_ অনেক হয়েছে এবার ঢং ছেড়ে ফ্রেস
হয়ে আসো, একদম লাই দিয়ে দিয়ে
মাথায় তুলে ফেলেছি। অফিস থেকে
এসেই বউ কে জড়িয়ে ধরতে হবে। এই সব
ঢং আমার একদম সহ্য না হু!
এক নিশ্বাসে সব বলে মুখ বাঁকিয়ে
ভেংচি কেটে চলে যাবে। আমি তখন
শুধু হাসি মাত্র। এই পাগলী টা কিছুতেই
আমাকে বুঝতে দিতে চায় না যে সে
আমাকে এতো ভালবাসে।
৪|
রাতে শুয়ে আছি আর নীলু আমার বুকে
মাথা রেখে নাক দিয়ে আমার গলায়
সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আর জানালা দিয়ে
কিঞ্চিৎ চাঁদের আলো এসে পড়ছে
নীলুর মুখে। আমি নীলুর দিকে
তাকিয়ে আছি।
ভ্রু তে সেই কুঞ্চন, কি আদুরে আর কি
মায়াময় ঠোঁটের কোণে সেই তিল।
তার এলোমেলো রেশম রেশম চুল,
নিষ্পাপ ডাগর দুটি চোখ। নীলুর
অনিন্দ্য সুন্দর ঠোঁট দুটিতে কি এক
অভিমান। চোখ দুটিতে এক পৃথিবীর সব
সারল্য। হঠাৎ নীলু অভিমানী গলায়
বলে।
_ আমি তোমার সাথে এতো ঝগড়া
করার চেষ্টা করি। তুমি কেন আমার
সাথে ঝগড়া করো না?
_ ছোট ছোট ঝগড়া থেকে মান
অভিমানী শুরু হয়। আস্তে আস্তে এই
ছোট ছোট ঝগড়া থেকে বড় ঝগড়া
তৈরি হবে। তুমি চাইবে আমি যেন
তোমার কাছে আগে ক্ষুমা চাই আর
আমি চাইবো তুমি যেন আমার কাছে
ক্ষুমা চাও। এতে আমাদের মাঝে দূরত্ব
টা বাড়বে, ভালবাসা টা না। সবাই
যেন আমাদের দেখে বলে। আহ্ কি
সুন্দর মধুর তাদের ভালবাসা।
খেয়াল করলাম আমার বুক আস্তে
আস্তে নীলুর চোখের জলে ভিজে
যাচ্ছে। আমি জানি এটা সুখের
কান্না। মেয়েটা বেশি সুখ একদম সহ্য
করতে পারেনা। আমি শক্ত করে
জড়িয়ে ধরলাম। লাইফ ইজ সো
রোমান্টিক।

No comments:

Post a Comment