Thursday, October 13, 2016

একটি শ্রেষ্ঠ শীতের সকাল (উইথ বউ)

একটি শ্রেষ্ঠ শীতের সকাল (উইথ বউ)
.

.
হঠাৎ করেই ঘুম টা ভেঙ্গে গেল ভোর
রাতে। না ভোর রাত না মনে হয়
সকালই হবে হয়তো। শীতের সময় বলে
কথা সকাল দুপুর ভোর আন্দাজ করাই
কঠিন হয়ে যায় কোন কোন দিন। আমার
আবার সামান্য ঘুমের বেডটা হঠাৎ
করে পরিবর্তন করলেই সারা রাত
ভালো মত ঘুম হয় না। আর এখন তো ঢাকা
থেকে গ্রামে আসছি শীতের রিক্ত
তা উপভোগ করতে। রাতে ঘুম ভালো
মতো না হওয়াটা স্বাবাভিক। সাথে
আছে তানি পাগলি। তানি হচ্ছে
আমার পাগলী বউ। ৪ বছর প্রেম করে
তবে বিয়েটা হয়েছে গত বছর
পারিবারিক ভাবেই।
কিন্তু চার বছরের মধ্যের সময়টা এতটা
সহজ ছিলো না যতটা সহজে আমি বলে
ফেললাম।
থাক কঠিন সেই সময়ের কথা আর আমি
মনে নাইবা করলাম!
.
ঘুমটা ভেঙ্গে যাওয়ার পরই চোখটা
তানির দিকে গেল। পাগলিটা
গভীরভাবে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আমার
বুকের মাঝে চুপটি হয়ে পড়ে আছে।
আমি আরেকটু জড়িয়ে ধরতেই দেখি
পাগলিটার মুখে হাসির রেখা ফুটে
উঠলো!
তারমানে পাগলিটা জেগে আছে।
ওহো আমার তো মনেই নেই যে
পাগলিটা ও ঘুমের জায়গা পরিবর্তন
করলেই ভালো মতো ঘুমাতে পারে
না।
তানির মুখের উপর থেকে চুলটা সরিয়ে
দিয়ে বললাম -
আমি - পাগলির ঘুম ভেঙ্গে গেল?
তানি - হুম!
আমি - মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি
ঘুমানোর চেষ্টা করো?
তানি - না আমি ঘুমাবো না ।
আমি - তো কি করবে??
তানি - এই যে এভাবেই পড়ে থাকবো
তোমার বুকে সূর্য না উঠা অবদ্ধি!
আমি - তানি বাইরে যাবে??
কুয়াশাচ্ছন্ন গ্রামের মেঠো পথে
দুজনে ঘুরে আসি চলো!
তানি - হুম যাবো (সেই টাইপ খুশি
হইছে)
.
এর পর দুজনে বেড়িয়ে পরলাম। শীত
করছে অনেক। পাগলিটাকে অনেক
বার করে বললাম যে শীতের পোশাক
ভালো মতো পড়ে নেই দুজনে কিন্তু
কোন কথাই শুনলো না। এক চাদরেই
বেরিয়ে পড়লো।
দুজনে একচাদরের নিচেই হাঁটতে
থাকলাম শিশিরভেজা মেঠো পথে
কুয়াশার জন্য দশ হাত দূরেও কি আছে
বুঝা যাচ্ছে না। হাঁটতে হাঁটতেই
আমির ওর দিকে একবার চাইলাম ।
শিশির বিন্দু পড়ে ওর রুপের ছোটায়
আবছা আলো অন্ধকারে কুয়াশা ঘেরা
প্রকৃতি যেন হার মানছে। মাথা নুইয়ে
জানান দিচ্ছে আমায় তুমি যাকে
পেয়েছ সে সাধারণ নয়! চিরোকাল
ধরে রাখ এ মানবীকে তোমার মনের
গভিরে।
হুম রাখবোই তো ছেড়ে দিবো নাকি!
.
দুরে একটা কুকুর হঠাৎ করে ডেকে
উঠলো। পাগলিটা কিছুটা ভয়
পেয়েছে মনে হয় এই জন্য আমায়
জরিয়ে ধরে হাটছে এখন। ওর শরীরের
উষ্নতায় আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছে।
যাক একটু শীত শীত লাগছিলো সেটা
তখন কেটে গেল!
ওকে বললাম
আমি - ভয় লাগছে পাগলি??
তানি - না ভয় লাগবে কেন তুমি আছো
না!!
আমি - হুম (কিছু বললাম না। কারণ আমিই
জানি পাগলিটাকে এরচেয়ে অনেক
কঠিন পথে চলতে হয়েছে)
প্রায় ৬০ টার মতো বিয়ের প্রস্তাব
ফিরিয়ে দেওয়া একটা মেয়ের পক্ষে
সহজ কথা না। হ্যাঁ পাগলিটা আমার
জন্য সব সাধন করেছে।
ওর পরিবারের প্রচন্ড চাপের মুখেও
দুমড়ে মচড়ে যায় নি।
গেলেও সেটা আমায় বলে নি। সব সময়
আমায় শুনিয়েছে আশার বানি।
ভালোবাসাটা যে কিভাবে
অমরত্তের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়
তা এই পাগলিটার নিকট থেকে
শিখেছি।
ওর ধৈর্যের ফল স্বরুপ আজ আমরা এভাবে
চলতে পারছি।
.
কিছু দুর যাওয়ার পর পাগলীটা জেদ
ধরে বললো যে -
তানি - আমায় এখন কোলে করে নিয়ে
হাঁটতে হবে। আমি আর একধাপ ও
হাঁটতেও পারবো না!
আমি - কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।
তাছাড়া এটা শহর না গ্রাম।
তানি - ভাবলে ভাববে। আমি যখন
বলছি নিতেই হবে ব্যস।
কি আর করা কোলে নিয়েই হাঁটতে
হচ্ছিলো। এদিক ওদিকে লক্ষ্যও
রাখলাম যেন কেউ যেন দেখে
ফেলে।
লজ্জ্বা বলে তো একটা ব্যাপার আছে!
কিছুদুর যাওয়ার পর একটা দীঘির পাড়ে
ওকে নামিয়ে দিয়ে বললাম -
আমি - এতো মোটা হচ্ছো কেন দিন
দিন??!
তানি - কিহহহ আমি মোটা???
আমি - হুম মুটকিই তো। এতটুকু আনতেই
ক্লান্ত হয়ে গেলাম!
তানি - তাই না?? যাও তোমার সাথে
আর কথাই নাই বলে দিঘীর পাড়ে বসে
পড়লো!
কি জন্য যে বলতে গেলাম।
আমি - পাগলি নেও ওঠো আবার
নিচ্ছি কোলে!
তানি - নাহ!! (রেগে আছে)
আমি - তো কি করবে পাগলটা??
তানি - এখন এই দীঘির পানিতে পা
ভিজিয়ে দুজন বসে থাকবো।
আমি - কিহহ! এই শীতের মধ্যে তা হবে
না। নিজেও অসুখ বাঁধাবে আমার ও
বাঁধবে। এখনি উঠো!(ধমকের সুরে)
তানি - জানো তুমি না অনেক চেন্জ
হয়ে গেছো আগের মতো আর কিছু শুনো
না। (কাঁদতে কাঁদতে)
শুরু করে দিছে ইমোশনার ব্লাকমেইল!
যা বলছে তা করতেই হবে না হলে
এখানেই বসে থাকবে!
তাই ওকে আবার কোলে করে নিয়ে
দিঘীর সাঁনের নিচ ধাপিতে গিয়ে
বসে পড়লাম পানিতে পা নামিয়ে।
তানি অন্য দিক মুখ করে এখনো কেঁদে
যাচ্ছে। কান্না থামাতে হবে তাই
বললাম -
আমি - তানির মুখটা দেখি??
তানি -..............
আমি - কথা বলবে না পাগলি??
তানি - তুমি আর আগের মতো নেই
(কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখের পানি এক
করে ফেলছে!)
আমি - কে বললো আগের মতো নেই! এই
যে তোমার পাগল তোমার মতো করেই
তোমার কাছে আছে।
তানি - তো যা বলি আগের মতো শুনো
না কেন??
আমি - আমি কি কখনো তোমার কথা
ফেলেছি। সব কথাই তো শুনি তাই না??
তানি - হুম। তবে এখন থেকে আর কোন
বাহানা দেখাবে না ওকে,??
আমি - জ্বি মহারাণী।
তানি - হুমমমমম (এরা অল্পতেই খুশি হয়
অল্পতেই মন খারাপ করে।)
কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর পা
টা জমে আসছিলো। জোর করে
উঠিয়ে নিয়ে আসলাম। না হলে
দুজনারই অসুখ বাধানো সম্ভাবনা আছে।
তাছাড়া সকাল হয়ে গিয়েছিলো।
কিন্তু এক শর্তেই রাজি হয়েছে যে
পেছনে ও গলা ধরে ঝুলে থাকবে আর
আমারর বয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে।
এবার ও কিছু বলতে পারলাম না কারণ
শর্ত তো দিয়েই দিয়েছে। তাছাড়া
আমি তো ওর কথা ফেলতে পারি না !
অতঃপর অনেকের চোখেই ধরা পড়লো
একট বিরল দৃশ্য যে গ্রামের মঠো পথে
দিয়ে একটা ছেলে তার পাগলী
বউকে লবনের বস্তার মতো করে পিঠে
নিয়ে যাচ্ছে!
না এবার আর আমার লজ্জ্বা করছে না
কারণ যাকে পিঠে নিয়ে বয়ে
বেড়াচ্ছি সে তো আমারই অংশ
আমারই অস্তিত্ব। যাকে ছাড়া আমার
নিশ্বাসটাও ঠিক মতো পড়বে না।
আর পাগলিটা সেই হারে হাসতিছে।
হাসুক না! এই হাসিটুকু দেখার জন্য এরকম
হাজারও শীতের সকাল ওর পায়ের
কাছে এনে দিবো
আর বলবো -
পাগলি জানিস কেন শীতের এ
রিক্ততার সজ্জ্বা?
তোরে দেখে পেয়েছে যে ভিষণ
লজ্জ্বা
যা বলবি এনে দিবো আজ
মিটাবো আমি সারা জীবন তোর
মনের সাধ!
.
বাড়িতে ফিরে পাগলিকে বললাম
যে
এরকম হাজারটা শীতের সকাল তোমার
সাথে কাটাতে চাই থাকবে না
পাশে তুমি??
পাগলিটা শুধু একটু হাসি দিলো। হ্যাঁ
এই হাসির অর্থ ইতিবাচক তা আমি বুঝি!
কারণ পাগলিটাও যে আমার কোন
কথাই ফেলতে পারে না।।।।
.
(বিদ্রঃ শীত প্রিয় ঋতু তাই শীতের
আগমনীতে একটা গল্প লিখে ফেললাম।
আজ থেকে ৫ বছর পর বিয়ে করে বউ কে
নিয়ে এরকম একটা শীতের সকাল
উপোভগ করার চিন্তাভাবনা করে
লিখছি!)

No comments:

Post a Comment