Friday, October 21, 2016

সুখের মুখরাত্রি,

সুখের মুখরাত্রি,
.
.
বিয়ে বাড়িতে আসাটা আমার
কাছে বিরক্তিকর
লাগলেও কেন জানি আজকে চলে
এসেছি।বিয়ের আগের
দিনের গায়ে হলুদ হইলেতো আর কথায়
নেই।কিছু সময় পর
পরই ঢংগি মেয়েগুলার কাজসাজ
দেখে মনে হচ্ছে আমি
কোন গায়ে হলুদে নয় বরং মেয়েদের
কোন শো তে চলে
এসেছি।এখানে এসেছি এক প্রকার
ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বলা
যেতে পারে।যার ঘরে আমার বউয়ের
মত এমন একটা বউ
থাকতে পারে তার ঘরে নিজের ইচ্ছা
বলে কিছু থাকতে
পারেনা।কেও ভাল বউ পাই,কেও ভাল
বউয়ের আদর পাই
আর আমি ভাগ্যগুনে বউয়ের রাগান্বিত
শাষন পাই।যদিও
এই শাষনের মাঝেও যে কম ভালবাসা
জরিয়ে থাকেনা
তা নয়।লুবনা আসলেই আমাকে অনেক
ভালবাসে।হা ওর
নাম লুবনা।
.
শরতের এক পশলা বৃষ্টির মাঝেই আমার
জীবনে ওর আগমন।
সেদিন ইচ্ছে করেই বিয়ে না করা
ছেলেটা কেন জানি
লুবনাকে দেখেই রাজি হয়ে গেছিল।
রিমঝিম বৃষ্টির
মাঝে কিছুটা ভালবাসা সে আমার
মনের মধ্যে গুজে
দিয়েছিল।আমিও বেচারা বাধ্য
ছেলে।সেই গুজে দেওয়া
ভালবাসাকে সম্বল হিসেবে নিয়ে
পাহাড় সমান
ভালবাসা গড়ে নিয়েছি।অবশ্য এর
পেছনে সবি লুবনার
কৃতিত্ব।
.
বিয়ে বাড়িতে বসে বসে যখন
নিজেকে অবিস্কার করলাম
একঘেয়েমি জামাই হিসেবে তখন
কেও একজন দুস্টামি
করে ঘোষনা করে যে আমাদের
দিহান দুলাভাই আমাদের
গান শুনাবেন।কন্ঠটা শুনে নিজের
কাছে ভাবতে একটুকুও
কস্ট হয়নি যে এটা আমার ছোট শালা
রবিনের কাজ।পুরো
বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা।এর
মাঝে নিজের
মানসম্মানের চাদর নিয়ে যখন
টানাটানি বাধতে ছিল
তখন লুবনা এসেই আমাকে তুলে দেই
গান গাওয়ার জন্যে।
যদিও আমি বেচারা ওতোটাও ভাল
গাইতে পারিনা।তবুও
নিজের ক্রেডিট টা বজায় রাখার
জন্যে গান গেয়ে
দিলাম।নিজের কাছে ভাল না
লাগলেও কেন জানি
বিয়ে বাড়ির সবার হাততালিতে
নিজের কাছে বেশ
ভালই লাগল।আবার লুবনাকে দেখেও
বেশ হাসিখুসি
দেখাচ্ছিল।সব দিক দিয়ে মনে হল
শেষমেষ যাইহোক
মানসম্মানে কেও আর হাত দেইনি।
.
রাত যত বাড়তে থাকে বিয়ে বাড়ির
লোকজনের
আনাগোনাও কমতে থাকে।এদিকে
লুবনাটাও জানি কই
গেছে।এই রকম একটা পরিস্থিতিতে
কি করা উচিৎ তা
ভাবতে ভাবতেই আমার পেছনে
কারোর কাশির আওয়াজ
শুনতে পেলাম।যদিও বিয়ে বাড়ির এত
লোকের মাঝে
আমি এই কাশির লোকের সাথে
পরিচিত নয়।পেছনে ঘুরে
দেখি একটা মেয়ে।হালকা খাটো আর
বেশ সুন্দরি এই
তরুনিটা এত রাত্রে আমার কাছে কি
চাই তা আমার
অজানা।তবুও ভদ্রতার খাতিরে কথা
বলে জানতে
পারলাম উনি আমার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে
ধন্যবাদ জানাতে
এসেছে।আমিও বেচারা হাবলু
গায়ক,জীবনে এমন ধন্যবাদ
পেয়ে হেসে হেসেই তার সাথে
কথা বলছিলাম।কথা
বলার একপর্যায়ে বুঝতে পারলাম কেও
একজন আমার হাত
ধরে টানাটানি করছে।ঘুরে দেখি
লুবনা।এই সময় আমার
ওকে কি বলা উচিত তা আমার মাথায়
আসল নাহ।
একদিকে লুবনা আর অন্যদিকে অচেনা
অজানা যুবতি
বয়সি তরুণী।লুবনার মুখ দেখে বুঝতেই
পারছি তার মুখে
কাল মেঘ বাসা বেধেছে।আমি এই
মেঘের সাথে
পরিচিত।বেশ পরিচিত।হয়ত লোকচক্ষুর
আড়ালে এই
মেঘবেয়ে কিছুটা অশ্রু ঝরেও পরবে।
.
পুরো রুমে নিস্তব্ধতা।জানালার ফাক
দিয়ে ঝিরিঝিরি
লাইটিং এর আলো এসে পরছে লুবনার
মুখে।লাইটিঙের
আলোয় লুবনার চেহারাটা যা দেখতে
হয়েছে তাতে
আমি মুগ্ধ।মায়াবি গড়নের এই
মেয়েটির মাঝে যে এতটা
মায়া আছে তা আজকে এই সময়ে
লুবনাকে না দেখলে
বুঝতেই পারতাম নাহ।ওর চেহারা
দেখে মায়া লাগলেও
কিছু যে একটা বলব তাও হচ্ছেনা।কিছু
একটা বলতে
গেলেও লুবনা উল্টা আচরণ করতে
পারে।তাই আমিও চুপ
করে থাকলাম।
.
ভাবনায় ছেদ ঘটলো লুবনার কথার
ঝংকারে।এত
ঝাঁঝালো ঝংকার যা আমি বুঝে
ওঠার আগেই আবার
মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেল।
বিছানা থেকে উঠে এসে
লুবনা আমার সামনে দাড়ালো।
মেয়েটি যে এবার
আমাকে কিছু একটা বলবে তা নিশ্চিত।
চোখের কোণে
হালকা পানি জমলেও মুখে যে রাগ
বেয়ে বেয়ে পরছে তা
দেখেই বুঝতে পারছি।লুবনা আমাকে
বলল,
--কি এত কথা ওই মেয়েটির সাথে?
হেসে হেসে কথা না
বললে হয়না?মেয়ে দেখলেই কথা
বলতে ইচ্ছা করে নাহ?
.
লুবনার কথার কি উত্তর দিব তা ভাবতে
ভাবতেই আবার
লুবনা বলল,
--কি ভাবছো বল?বউকে রেখে
এইভাবে অন্যমেয়ের
সাথে হেসে হেসে কথা বলবা আর
আমি মেনে নিব এটা
ভাবলে কেমনে তুমি?
.
লুবনার এত বেশি রাগের সাথে আমি
পরিচিত নয়।খুব
জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আর
ফোপাচ্ছে।কতটা
ভালবাসলে যে নিজের আপনজনকে
অন্যের সাথে কল্পনা
করা যাইনা তা লুবনাকে দেখে বুঝতে
পারছি।যদিও
আমার দোষ ছিল না তবুও লুবনার দিকে
তাকিয়ে ওর
দুগালে হাত দিয়ে চোখের পানি
মুছাতে মুছাতে বললাম,
--আরে পাগলি মেয়ে আমিতো
তাকে চিনিইনা।
কোত্থেকে এসে বলল আপনার গলা
বেশ............
.
আমার কথা শেষ হতে না হতেই লুবনা
আমাকে বলল,
--কি তোমার গলাটা বেশ সুন্দর তাই
বলেছে তাইতো?আর
ওমনি তুমি নিজের প্রশংসাই পঞ্চমুখ
হয়ে হো হো করে
হাসতে ছিলে।
.
আমি লুবনার কথায় এবার হেসে
ফেললাম।আমার হাসি
দেখে লুবনা আমাকে কলার চেপে
ধরে আমাকে বলল,
--আর যদি কখনো দেখি এমন তবে তখন
বুঝবে তোমার
একদিন কি আমার কয়েকদিন লাগতে
পারে।
.
আমি লুবনার কথা শুনে আবার হেসে
ফেললাম।এক প্রকার
জোর করেই ওকে বুকে নিয়ে বললাম,
--এই বুকের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওনা?
.
লুবনা তখন আমার বুকে ভাল করে কান
লাগিয়ে বলল,
--হা পাইতো।
.
আমি ওর চুলে বিলি কেটে দিতে
লাগলাম।মেয়েটির
নিস্তব্ধতা দেখেই বুঝতে পারছি সে
এখন গভীর
ভালবাসায় ডুব দিয়েছে।আমি ওকে
বললাম,
--শুনতেই যদি পাও তবে এত হারানোর
ভয় কেন পাগলি?
এই বুকেতো সব জাইগাই তোমার।
.
লুবনা ওর বাম হাতের আঙুল দিয়ে
আমার বুকের ডান পাশে
ছুয়ে দিতে লাগল।কেন জানি এই
রাতে কঠিন ভালবাসার
গন্ধ পাচ্ছি আমি।লুবনার আচরন আর ওর
ভালবাসা যে
দিনে দিনে আমাকে উন্মাদ করে
তুলছে তা আমার আর
অজানা রইল নাহ।কিছুটা রাগ বা
অভিমান থেকে যদি
ভালবাসার অনুভুতিগুলা টুপটুপ করে
জমা হতে থাকে তবে
সেটা কিন্তু মন্দ হয়না।ভাল থাকুক সবার
পবিত্র
ভালবাসা,ভাল রাখুক সবার
ভালবাসা।

No comments:

Post a Comment