Sunday, October 16, 2016

চলুক না জীবন তার নিয়মে। ভালোবাসা বাসির বাহুডোরে....।

চলুক না জীবন তার নিয়মে।
ভালোবাসা বাসির বাহুডোরে....।

শুভ্র: কাউকে ভালোবাসিস?
:নাহ..
শুভ্র:ফিউচারে ভালোবাসবি?
:নাহ..
শুভ্র: কেন? কাউকে কি ভালো
লাগেনা তোর?
:সেটাও নাহ।
শুভ্র:তবে কি? জটিলতা টা কী?
:বুঝবি নাহ..আমি উঠছি, টিউসনে
যেতে হবে...
এই বলে অর্নি হাটাঁ দিলো...
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো শুভ্র.
অর্নিকে বুঝা মুশকিল লাগে ওর
কাছে, এজন্য চুপ হয়ে যায়।
দুদিন পর, লাইব্রেরীর নির্দিষ্ট
জায়গা টাতে বসে বই পড়ছিলো
অর্নি। নির্দিষ্ট বলার ও একটা
নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। সেই দুবছর
ধরেই অর্নি এই একি জায়গাতে চুপচাপ
বই পড়ে। এর বিশেষ যদি কারণ থেকে
থাকে সেটা অর্নিই জানে।
যদিও শুভ্র অর্নিকে এক বছর ধরে চেনে,
তথাপি এই নির্দিষ্ট জায়গার রহস্য
সম্পর্কে সে আজো অজ্ঞাত।
শুভ্র দেখেছে কিভাবে নিজেকে
খুশি রাখতে হয়, কিভাবে হাসতে হয়,
সেটা হোক অন্যকে দেখানোর
নিমিত্তে। হোক একটু নিজেকে
পাল্টানোর জন্য, সে এসব অদ্ভূত
ব্যাপার গুলো অর্নির মাঝে
দেখেছে।
আর দেখেছে বলেই সে এক বছর ধরে
অর্নিকে বুঝার ব্যর্থ প্রয়াস ।
গল্পটা যতটাই বন্ধুত্বের হোক না কেন,
সেটা যত গভীরে যাবে,তত নতুন ভাবে
প্রকাশ পাবে।কেউ সেটা বুঝাতে
চাইবে, আর কেউ সেটা বুঝেও না
বুঝার ভান ধরবে। সে রকমটাই অর্নি আর
শুভ্রের মাঝে।
2.
ক্লাশ শেষে শুভ্র ও অর্নি হাটছিলো,
খোলা চুল, সাদা ওড়না , কাজল দেয়া
শ্যামলা চোখদুটিতে অযত্নে যে
কতগুলো আবেগ, ভালোবাসা জমে
গেছে তা হয়তো আদৌ এই
বেখায়ালী মেয়েটা জানেই না।
জানার চেষ্টাও করেনা। যা জেনে
ব্যাকুলতা বাড়ে অন্তরে তা জানা
উচিত নাহ, অজ্ঞাত ই থাকুক. অর্নির
মন্তব্য এরকম ই।
তবে অনায়াশেই এগুলো ধরা পড়ে
শুভ্রের চোখে। শুভ্র জানে মেয়েটা
চাইলেই এখনো সেটা পারে যা শুভ্র
চায়।
শুভ্র: অর্নি, তুই কি কাউকে
ভালোবাসতি?
অর্নি: নাহ তো , (অপ্রস্তুত হয়ে.)
শুভ্র: মিথ্যে বলবি নাহ. আমি জানি তুই
নিজেকে লুকাস, কিন্তু আজকাল
এতোটাই লুকাস যে আমার তোকে
বুঝে উঠা দায় হয়ে পড়ে।
অর্নি: উফ এতো মশলা দিয়ে কথা বলা
শিখলি কবে? আমি এখন ও তেমন আছি
যেমন টা প্রথমে দেখেছিলি।
শুভ্র: আচ্ছা, তো বল তুই প্রায় সময় ই ওই
জায়গাটায় কেন বসিস? ওখানে আমি
তোকে চিনতে পারিনা, যেন কত
দূরের অর্নি.. কি ওই জায়গায় প্লিজ
আমাকে বল আজ।
অর্নি: হাহাহ, গাধা ওই জায়গা টা
আমার ভাললাগে খুব,তাই।
শুভ্র: এড়িয়ে গেলি? অকে ফাইন, আজ
থেকে আমাদের আর যোগাযোগ
হবেনা.. হাটা দিলো শুভ্র।
দৌড়ে এসে অর্নি হাত ধরলো,
অর্নি: কোথায় পালাবি বলে যাহ,,
খুজতে হবেনা?
শুভ্র: জানিনা (রেগে,)
অর্নি: হুম, আমার একটা সম্পর্ক ছিলো বছর
দুয়েক আগে। খুব অল্প সময়ের তবে
আমাকে প্রায় পুরোটা গ্রাস করে
নিয়েছিলো . বিভোর ছিলাম ওই সময়
গুলো। অদ্ভুত ভাললাগার মাঝে কেটে
যেতে লাগল। শুভ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে
এলো,
মুখস্ত করা রচনার সূচনার মত স্বাভাবিক
হয়েই বলে দিলো অর্নি সব।
শুভ্র: তারপর? (মলিন মুখে,)
অর্নি: তুই জানিস শুভ্র, আমাদের প্রথম
দেখা লাইব্রেরীর ওই জায়গাটায়, সব
খুনসুটি, স্মৃতি সব যেন ওখানেই আটকে
পড়া এখনো। ওখানে বসলে আমি অনুভব
করতে পারি তাকে। প্রিয়জনের স্মৃতি
গুলো এমন ই, যখন মন থেকে চায় অদৃশ্যেও
অনুভব করা চলে। (মুচকি হেসে)
শুভ্র: কি হলো তারপর? (অবাক হয়ে)
অর্নি: তার আর পর নেই,এইতো এখনকার
আমি,যাকে বুঝতে এতো প্রচেষ্টা
তোর ।(হেসে)
শুভ্র: মানে কি? সে কোথায়?
অর্নি: সে? সে আছে ভালোই, আমার
সীমানার বাইরে বসে আমাকে
দেখছে, যেখানে হাজার ইচ্ছা
সত্বেও আর তাকে ছুতে পারিনা
আমি।
হুম শুভ্র, ও এখন আকাশের তারাঁ।
ক্যান্সার ধরা পড়ে হঠাত ই। তার
কিছুদিন পর ই ...
শুভ্র: এম রিয়েলী স্যরি অর্নি,
অর্নি: দূর ইমোশনাল হয়ে গেলি। তুই
সত্যি ই পিচ্চি, চল তো..
শুভ্র: হুম চল । শুভ্র অর্নির হাতটা শক্ত করে
ধরলো।
এই প্রথম শুভ্রের ছোয়াতে বন্ধুত্বের
থেকেও বেশি কিছু অনুভব করলো
অর্নি।
শুভ্র: আচ্ছা অর্নি তুই আমাকে
ভালোবাসবি?
হাতটা ছাড়িয়ে অর্নি বড় বড় চোখে
তাকালো।
শুভ্র খেয়াল করলো। কিন্তু আজ সে কথা
কাটাবেনা ,চলুক সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দের
অবসান প্রক্রিয়া। বুঝা হয়ে যাক অতি
সামান্য যে টুকু এখনো বুঝার
আওতাহীন। সমস্ত ব্যাকুলতারা পাখা
গজিয়ে উড়ে যাক কারো
খামখেয়ালীতে।
অর্নি: কি বললি শুভ্র ?
শুভ্র: ইয়ে মানে বেশি নাহ, ঐ একটু ই,
বাকিটা আমার ভাগে।
অর্নি: পাগল হয়ে গেছিস? নাকি করুণা
করিস?
শুভ্র: দেখ অর্নি, আমি যে তোকে কবে
থেকে চাই তা তুই ই জানিস। বুঝতেই
চাসনি আমাকে।
অর্নি: শুভ্র, বুঝতে ট্রাই কর আমি
পারবো না আর। নিজেকে একবার
হারিয়ে বুঝেছি এ কেমন যন্ত্রনা।
শুভ্র: তোর সব যন্ত্রনা আমাকে দিবি
প্লিজ? তবু একটু কাছে টেনে দেখ
আমাকে। কখনো তোকে বুঝতে দিবো
না তোর অতীত।
অর্নি: প্লিজ শুভ্র, আমার ভেতরে ভয়
জমে তাতে শেওলা বসেছে, এ ভয়
ডিঙিয়ে উঠার নাহ।
শুভ্র: ওহ বুঝেছি, আমি কেউনা ,ঐ মৃত
ছেলেটার স্মৃতি ই সব। আমি কি ওর
থেকে বেশি ভালোবাসতে
পারিনা? অকে ফাইন, আমিও মরে
যাবো। তখন বুঝবি..
কথা শেষ না হতেই অর্নি শুভ্রের
গালে একটা চড় দিয়ে দৌড়ে চলে
গেলো। শুভ্র গালে হাত দিয়ে
বোকার মত দাড়িয়ে রইলো।
3.
এক মাস ধরেই অর্নি ক্যাম্পাসে
আসেনা. শুভ্র ফোনেও তাকে পায়না।
অস্থিরতার সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম
করছে শুভ্র। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রতিদিন
ক্লাসে আসে শুভ্র, যদি অর্নির দেখা
পায়। নিরুপায় হয়ে লাইব্রেরীতে যায়
শুভ্র, ঠিক যেখানটায় অর্নি বসতো,
সেখানে বসে কিছু অনুভব করতে
চাইছিলো। সে অর্নিকে খুজছিলো
তার চারপাশে, অর্নির সমস্ত মৌনতা,
হাসি, আনাড়ীপনা যেন বারবার
শুভ্রকে তাড়া করছিলো।দিশেহারা
হয়ে শুভ্র টেবিলে মুখ গুজে রইলো।
হঠাত সে অনুভব করতে লাগল যেন ওর
আশেপাশেই এখনো অর্নি বর্তমান।
ব্যাকুল শুভ্র বুঝতে পারলো কিসের
টানে অর্নি দিনের পর দিন পুরোনো
স্মৃতি হাতড়াতো, অনুশোচনা জাগে
নিজের জন্য, অর্নির সাথে এমন করা
উচিত হয়নি বলে।
ছলছল চোখে শুভ্র ভাবতে থাকে,
অর্নিতো আজো সেই অতীত কেই খুজে
ফিরে, সেখানে তো আমি শুধু অনাহুত
কেউ।
এদিকে শুভ্র দেশ ছাড়ার সমস্ত ব্যবস্থা
করে নিলো। অপেক্ষা শুধু অর্নির
কাছে ক্ষমা চাওয়ার। ভাবতে
ভাবতে মেসের সামনে এসে পড়লো
শুভ্র। ও ডুকতেই ওর রুমমেট মুচকি হেসে
বেরিয়ে গেল। শুভ্র অবাক হলো
খানিক, তারপর দেখতেই চোখ কপালে
উঠার অবস্থা। স্বপ্নের মত যেন অর্নি
বসে আছে। শুভ্র দু চোখের পানি
ছেড়ে দিলো।
নির্বাক হয়ে তাকিয়ে অর্নি,
অর্নি: কিরে হাদারাম,কাদছিস?
হাটু গেড়ে বসে পড়লো শুভ্র অর্নির
পায়ের কাছে। প্লিজ অর্নি আমাকে
মাপ করবিনা তুই?আমি বুঝেছি
প্রিয়জনের না থাকার মানেটা কতটা
নির্মম, কোথায় হারিয়েছিলি তুই?
(কেদেঁ কেদেঁ)
অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অর্নি,
অর্নি:কোথায় পালাচ্ছিস তুই?
শুভ্র:বাইরে চলে যাচ্ছি, ভালো
লাগেনা এখানে আর।
অর্নি:অহ.
শুভ্র:হুম, মাপ করে দিস আমাকে,
সেদিনের জন্য, আসলে আমিই ভূল,
অনাহুত একজন আমিই, ক্ষমা করিস।
অর্নি:অকে।
হতাশ মুখে একটা হাসি দিয়ে মুখ
লুকাতেই অর্নি শুভ্রের শার্টের কলার
টেনে ধরলো পেছন থেকে,শুভ্র
তাকাতেই আরেকটা চড় দিলো অর্নি।
অর্নি:কি ভেবেছিস? যখন যা খুশি
করবি?ভালোবাসবি, আবার লুকাবি?
কেন এমন? আমি কী পারিনা
ভালোবাসতে? পারিনা সব ভয়
পেরিয়ে তোকে আকড়ে ধরতে?
(চিত্কার করে)
শুভ্র যেন দু মিনিট চেতনহীন হয়ে
শুনছিলো, চোখে পানি নিয়েও
হেসে দিলো, শুভ্র অর্নির চোখের
পানি মুছে দিয়ে বলল, কাদছো কেন?
অর্নি বড় বড় চোখে তাকালো।
ভয় পেয়ে শুভ্র নিজের গালে হাত
দিয়ে রাখলো।
মুচকি হেসে অর্নি শুভ্রের হাত টা
নামিয়ে বলল,
ব্যাথা পেয়েছো খুব?
শুভ্র:হুম বলে মাথা নাড়ালো ।
অর্নি:দেখিতো আমি।
শুভ্র:না..হ.. আরেকটা চড় খেতে পারমুনা
আমি. হুহ।
অর্নি:হিহিহ, গম্ভীর হয়ে অর্নি বলে,
আসতে বলছি সামনে।
শুভ্র:হুমম।
আলতো করে শুভ্রের গালে হাত
দিলো অর্নি, ভয়ে চুপসে গেল শুভ্র,
চোখ বুজতেই অর্নির একটা চুমু ছুয়ে
দিলো শুভ্রের ফর্সা গাল।
শুভ্র হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো,
শুভ্র:কি করলি এটা তুই?
অর্নি:কই কিছুনা তো. হিহিহ।
শুভ্র:ছিঃ লজ্জা করছে এবার আমার।
অর্নি:কিহ? আরেকটা দিবো, আয়।
শুভ্র:না নাহ, এটা হজম হোক তো,.হুহ।
অর্নি:তাহলে কিছু বল,?
শুভ্র:ইয়ে মানে , ভালোবাসিতো।
অর্নি:হুমম।
শুভ্র:খুব বেশী বেসে পেলেছি। মাথা
নিচু করে।
অর্নি:বাসবিই তো, তোর ভাগে তো
বেশিই, তাইনা?
শুভ্র:বলনা প্লিজ ঐ টুকুই?
অর্নি:ভালোবাসি শুভ্র, এই একটুকু
থেকেই না হয় শুরু..হিহিহি।
এই একটুকু থেকেই শুরু হোক কারো
শেওলা পড়া ভয়ের ভাঙন।
মুছে যাক কারো সমস্ত দ্বিধা ,ক্লেশ,
আকুতি। নতুন করে মিশে যাক সমস্ত
আবেগ কারো এক মুঠো আদরেই। কি হয়
তাতে? চলুক না জীবন তার নিয়মে।
ভালোবাসা বাসির বাহুডোরে....।
.
.
.
Tahmina Alam

No comments:

Post a Comment