Friday, September 2, 2016

প্রেমের বিজয়

প্রেমের বিজয়
.
লেখকঃ- (শেষের পৃষ্ঠার পরের পৃষ্ঠা)
.
.
কলেজের একটা দুষ্টু জুটির নাম
আরিয়ান-মারিন।
এমন কেউ নেই যে তাদেরকে
চিনেনা। আর
চিনবে না কিভাবে, পুরো কলেজটা
ওদের
কাবুতে। তাদের দুষ্টুমির মাত্রা দেখে
যে কেউ
বলবে ওরা ৪-৫ বছরের শিশু। শিশুরা
যেভাবে
দুষ্টুমি করে সারা বাড়ি-বাসা
মাতিয়ে
রাখে
সেভাবে তারা কলেজ মাতিয়ে
রাখে।
কলেজে
স্টুডেন্টরা যেখানে বিদ্যা অর্জন
করতে
আসে
সেখানে তারা রেসলিং ম্যাচ করে।
এমন
কোন
দিন নাই যে মারিন আরিয়ানের
শার্টের
বোটাম
ছিড়ে নি। আর আরিয়ানও মারিনের
কান
টানে
নি। ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে প্রতিদিন
তাদের
ঝগড়া হয়। আর বিষন্নমুড নিয়ে বাসায়
ফিরে
ফোনে কথা বলে সরি আদান-প্রদান হয়।
কে
আগে
সরি বলবে তা নিয়ে কিন্তু কেউ আবার
ঝগড়া
করে না। একদিন আরিয়ান আগে বলবে,
অন্যদিন
মারিন, তারপর আবার আরিয়ান, আবার
মারিন।
এভাবে খুনসুটি ঝগড়া আর সরি নিয়ে
তাদের
দুষ্টুমিগুলা টম-জেরি-র মতো এগুতে
লাগলো।
..
দুজনকে দুজনকে সেই পিচ্ছি বয়স থেকেই
চিনে।
বাসা দুটো পাশাপাশি শুধু মাঝে
একটা
দেয়াল।
প্রতিদিন একসাথে স্কুলে যেতো আর
আসতো।
বাসা থেকে দুজনই টিফিন নিতো
কিন্তু
কাড়া-
কাড়ি করে নিয়ে না খেলে তাদের
টিফিন
টাইম
বৃথা। আরিয়ান লুকিয়ে লুকিয়ে
মারিনের
ব্যাগে
পাতা-কাগজ, চিপ্সের প্যাকেট, পাথর
ইত্যাদি
ঢুকিয়ে ব্যাগভর্তি করে রেখে চুপ-চাপ
নিজের
জায়গায় বসে থাকতো। মারিন ব্যাগ
খুলে
এসব
দেখে অনেক চেঁচা-মেচি করতো
কিন্তু
কোন লাভ
হতো না। সে জানেনা কে করে এসব।
এদিকে
আরিয়ান যখন বাসায় যেত, ব্যাগ খুললেই
দেখতো
তার ব্যাগভর্তি ময়লা। তার মাথায়
ঢুকতো
না
কে এসব করতো। আসলে আরিয়ানের
ব্যাগে
ময়লা
মারিন-ই ঢুকাতো। দুজন দুজনের ব্যাগে
ময়লা
রাখতো কিন্তু কেউ জানতো না
তাদের
ব্যাগে
কে ময়লা রাখতো। অবশেষে তারা
দুজনই
ধরা
পড়ে। কিন্তু ঝগড়া হয় নি উল্টো
অট্টহাসিতে
ভেঙে পড়ে।
..
ছোটবেলার কাহিনী বাদ-ই দিলাম।
এখনকার
কথা বলি। তাদের জুটিকে অনেকে
মনে
করে
তারা দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা।
অনেকে
এসব বলে
আরিয়ানকে ক্ষেপায় কিন্তু সে কোন
পাত্তাই
দেয় না। কিন্তু মারিন এসবের একেকটা
কথাকে
অনেক গুরুত্বসহকারে দেখে। আস্তে
আস্তে
মারিন
তাদের দুষ্টুমিকে অন্য পর্যায়ে নিতে
থাকলো।
মারিন সত্যি সত্যি আরিয়ানকে
ভালোবেসে
ফেলেছে। সে আগের মতো আর
আরিয়ানের
সাথে
ঝগড়া করে না, কথা বলে না, কিছু
শেয়ার
করে
না, তার থেকে দূরে থাকে, এক কথায়
মারিন পুরো
চেঞ্জ। আরিয়ান জিজ্ঞেস করছিলো
তাকে
তার
এরকম পরিবর্তনের কারন কি? সবকিছু ঠিক
আছে
তো? মারিন ঢোক একটা গিলে হ্যা
বললো।
আরিয়ানও আর বেশি কিছু ভাবে নি।
সে
চলে
গিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডায় লিপ্ত
হয়।
এদিকে মারিন লুকিয়ে লুকিয়ে
ফুপিয়ে
কাঁদছে।
বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় শুধু
মারিনের
ক্ষেত্রে। যে আরিয়ান আগে তার শুধু
বন্ধুই
ছিলো
এখন সে তার পথ চলার সাথী হিসেবে
অনুমান
করছে। আরিয়ান এমনিতেই মারিনের
পথ
চলার
সাথী কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে। আর
মারিন,
মারিন তাকে নিয়ে আজীবনের স্বপ্ন
বুনতে
শুরু
করে তার ভালোবাসার মানুষ
হিসেবে।
কিন্তু
মারিনের অনেক রাগ হয় আরিয়ানের
জন্য।
কেন
সে তার মনের কথা বুঝতে পারছে না?
কেন
তার
চোখের ভাষা বুঝে না? হাসিমাখা
মুখের
পিছনে অভিমানী চেহারাটা কেন
তার
সামনে
ভাসে না? আরিয়ান কি আদৌ এসবের
কিছু
বুঝে
না? নাকি জেনেও না জানার ভান
করছে।
এসব
ভাবতে ভাবতে মারিনের কষ্টের
বোঝা
বাড়তে
থাকলো। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে
পারছে
না।
..
একদিকে মারিন একাধারে কাঁদছে
আর তা
লুকানোর চেষ্টা করছে আর অন্যদিকে
আরিয়ান
আড্ডায় মগ্ন। হঠাৎ মারিন দেখতে
পেলো,
আরিয়ান একটা মেয়ের সাথে হেসে
হেসে
কথা
বলতেছে। এমন ভাবে হেসে হেসে
কথা
বলতেছে
যেন মনে হয় ওরা একে-ওপরকে শত জনম
জনম
ধরে
জানে। ওরা যতই হাসতেছে মারিনের
কান্নার
বেগ ততই বাড়তেছে। মারিন নিজেকে
আর
কন্ট্রোলে রাখতে পারছে না। দাঁতে
দাঁতে
ঘর্ষন
হচ্ছে, দু-কান থেকে গরম হাওয়া বের
হচ্ছে,
সাদা
মুখটা লাল টমেটোর মতোর হয়ে
যাচ্ছে।
ব্রেঞ্চে
বসে থাকার মুড রইলো না তার। উঠে
আরিয়ানের
দিকে এগুতে লাগলো। আরিয়ানের
দিকে
তো
তাকাচ্ছেই সাথে ওই মেয়েটার ওপরও।
আরিয়ানের শার্টের কলার ধরে দাঁড়
করিয়ে
এদিক-ওদিক না তাকিয়ে টাস-টুস করে
দুগালে
চড়ের দাগ বসিয়ে দিলো। আশে-
পাশের
বন্ধুরা
তা দেখে বিন্দুমাত্রও বিচলিত হয় নি।
স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে। কারন,
সে
অনেকবারই আরিয়ানের গালে
এভাবে দাগ
বসিয়েছে। তাই তারা অবাক না হয়ে
আবার
আড্ডায় মনোযোগ দিলো। আসার পরে
আরিয়ান
সেই থেকেই যে মারিনের চোখে
চোখ
রাখছিলো, এখনো সরায় নি। আরিয়ান
বুঝতে
পারছে তার গালে কিছু একটা পড়েছে
কিন্তু
একবারও গালে হাত দেয় নি।
মারিনের
দিকে
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে
পারছে
আজকের চড়গুলা অন্যদিনের চড়ের মতো
নয়।
আজকের চড়ের সাথে অন্যকিছু মিশে
আছে।
তার
এক ঝটগাতেই আরিয়ান কিছুটা পিছনে
সরে
যায়।
পা টা থামাতে থামাতে দেখতে
পারে
মারিন
ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
আরিয়ানও এক
সেকেন্ড লেইট না করে তার পিছু নেয়।
..
তখন বিকেল ৫ টা। মারিন দিহানা
পার্কে
গিয়ে
আনমনে বসে আছে। আরিয়ান তার পিছু
পিছু
গেছে
সে জানে কিন্তু কিছু বলে নি।
আরিয়ান
চুপটি
মেরে তার পাশে বসে আছে। প্রায় ১০
মিনিট
ধরে দুজনই চুপ। কেউ কোন কথাই বলছে
না।
অবশেষে আরিয়ান নিস্তব্ধতা
ভাঙলো।
-- কি হলো, কিছু বলছিস না যে,,,,
(আরিয়ান)
-- কিছু বলার নাই। (মারিন)
-- কেন কেন? বলার নাই কেন?
-- যা বলার তুই তো দেখাই দিলি।
-- আমি আবার কি দেখাইলাম?
-- ওই মেয়েটা কে?
-- কোন মেয়ে?
-- যাহহহ, আর ঢং করিস না।
-- ওহহ আচ্ছা, ওই মেয়ে? ওটাতো আমার
ফ্রেন্ড।
-- ফ্রেন্ড ইয়া গার্লফ্রেন্ড??
-- আরে নাহ। শুধু ফ্রেন্ড।
-- ওহ।
-- গার্লফ্রেন্ড তো অন্যজন।
-- কে? (আগ্রহের সহিত)
-- তুই কে তোকে বলবো?
-- ওহহ আচ্ছা।
-- একটা সত্যি কথা বল,,
-- কি?
-- তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?
-- তুই কে তোকে বলবো?
-- আচ্ছা, যদি তুই সত্যিটা বলিস
তাহলে
আমিও
অন্যজনের কথাটা বলবো।
-- আমি কাউকে ভালোবাসি না। এখন
তুই
বল
অন্যটা কে?
-- হি হি হি। সত্যিটা না বললে আমিও
বলবো
না।
-- আমি তো সত্যি কথাই বললাম।
-- আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
একথা
বলতে
পারবি?
-- কেন পারবো না? অবশ্যই পারবো।
-- তাহলে বল,,,
-- আমি_____ (আর কিছু বলতে পারেনি।
মারিন
আরিয়ানের চোখে টিক-ই
তাকিয়েছে
কিন্তু
কথাটা বলতে পারেনি।)
-- কি হলো বল,,,
-- পারবো নাহহহ।
-- তুই এরকম কেন রে?
-- কিরকম?
-- যাকে ভালোবাসিস তাকে
ভালোবাসার
কথাটা বলতে পারিস না কেন?
-- ও আমাকে ভালোবাসে না। অন্য
কাউকে
ভালোবাসে।
-- তুই জানিস অন্যকেউ কে??
-- নাহহ।
-- তাহলে এতো শিউর হলি কিভাবে
অন্যকেউ
আছে?
-- না মানে ইয়ে___ (মাথায় আউলা-
ঝাউলা হয়ে
গেলো)
-- কি হলো বল,,, (সে মারিনের চোখের
জল
মুছিয়ে দিলো)
-- তার মানে অন্যজন আমি??
-- হি হি হি। উম।
-- তাহলে বললি না কেন?
-- আমি চেয়েছিলাম তুই বলবি।
-- হাহা। আমরা মেয়েরা বস, এতো
সহজে
কিছু
বলি না।
-- উম, তা তো বুঝতেই পারছি।
-- কি বুঝতে পারছিস?
-- এই, যে তোদের বুক ফাটবে তবুও মুখ
ফুটবে
না।
-- কাআআআআআরেক্ট।
-- হিহিহি পাগলি রে, কি করে যে
তোকে
বলি
তুই কে আমার।
--তোদের জন্য তো অনেক সহজ, তাহলে
এতো
নাচালি কেন?
-- হিহিহি, দেখতে চেয়েছিলাম
নাচলে
তোকে
কি রকম লাগে?
-- তো কিররকম লাগলো শুনি,,,
-- পুচকির মতো লাগছিলো।
-- হি হি হি।
-- আমি তোকে নিয়ে গড়বো এক
পৃথিবী
ভালোবাসা, তার প্রত্যকটা সুঁতোয়
তোকে
রাখবো আমার ভালোবাসা দিয়ে।
তোকে
নিয়ে
গড়বো আমি প্রেমেরই ভূবন,
ভালোবেসে
যাবো
শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। তুই কি আমায়
ভালোবাসবি?
-- উমম। (লজ্জামিশ্রিত স্বরে)
-- সারাজীবন?
-- শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।
-- কখনো ছেড়ে যাবি না তো?
-- যদি যাই, তাহলে দুজন একসাথে
যাবো।
-- হাত টা ধর,
-- উমম।
-- গোল্ডেন ওয়ার্ডস বলবি না??
-- ভালোবাসি তোকে, খুব খুব
ভালোবাসি।
-- আমিও তোকে খুব ভালোবাসি।
..
সারাদিনের আলো বিলিয়ে সূর্য যখন
পশ্চিমাকাশে প্রকৃতির দিগন্তে
হারিয়ে
যাবার
উপক্রম হয়, ধারন করে লাল বর্ণ তখনই
সূর্যাস্তলগন
শুরু হয়। একসময় ক্লান্ত সূর্য দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন
করে
লুকিয়ে যায় দিগন্ত রেখার নিচে, এ
সময়ই
সন্ধা
নামে পৃথিবী জুড়ে। আরিয়ান
মারিনের
হাত
ধরে পশ্চিমাকাশের সাদা মেঘের
সাথে
রাস্তার একপাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
অজানা
গন্তব্যের দিকে............!!!

No comments:

Post a Comment