Wednesday, September 7, 2016

গল্প--সে তুমি

গল্প--সে তুমি

.
তামান্না আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে তবে আমার সামনে থেকে
নয় ও এখন ওর রুমের বারান্দার ঠিক কর্নারে
দাঁড়িয়ে আছে। আর আমি ওদের বাসার
গেইটের ঠিক বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে
আছি। আর এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে
আছি। হয়তোবা ও ঠিক বিশ্বাস করতে
পারছে না যে আমি ওদের বাসার সামনে
দাঁড়িয়ে আছি। আসলে আজ তামান্নার
জন্মদিন কিন্তু একবারও আমি ওকে
জন্মদিনের উইশটুকুও করিনি। আর এখন রাত
১১ বাজে। আমি জানি যে তামান্না আমার
উপর অনেক রেগে আছে। কেননা আমিতো
ওকে জন্মদিনের উইশ করিই নি তার উপর
আমাকে অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু সেই
ফোনটাও রিসিব করিনি। আর এই মেয়েটা
রাগ করলে অন্যদের মত রাগী গলায় শাসন
করে না বা বকাঝকা ও করে না বরং
রাগটাকে নিজের মাঝে রেখে কষ্ট গুলা
আড়াল করে একা একা কাঁদে। আসলে আমি
এক প্রকার ইচ্ছে করেই ওর ফোনটা রিসিব
করিনি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর থাকতে
পারলাম না নিজেই চলে আসলাম। আসলে
এই মেয়েটার কষ্ট আমি মোটেও সহ্য করতে
পারি না। কেননা ওকে আমি ভালবাসি
আর এও জানি যে তামান্নাও আমাকে
ভালবাসে।
.
পকেট থেকে মোবাইলট বের করে
তামান্নার নাম্বারটা ডায়াল করলাম।
আমি কখনো কন্ট্রাক লিস্ট থেকে
তামান্নার নাম্বার খুঁজে বের করে কল দেই
না বরং যতবারি কল দিব নাম্বার ডায়াল
করে কল দিব। তামান্নাকে যখন কল দিলাম
তখন কানে ফোন ধরে রেখে আমি ওর দিকে
তাকিয়ে আছি। তামান্না ওর হাতে থাকা
মোবাইলটা ওর মায়াবী মুখটা থেকে
কিছুটা নিচে ধরে রেখেছে। আর
মোবাইলের স্ক্রিনের আলোয় ওর মায়াবী
চেহারাটা পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে। মনে
হচ্ছে যে ও এক ঝাক জোনাক পোকা হাতে
ধরে রেখেছে যেন জোনাকির আলোয় ওর
মায়াবী চেহারাটা আমি ভাল করে
দেখতে পাই। ইচ্ছে করছে সারাটাজীবন এই
মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে।
কিন্তু লক্ষ্য করলাম অনেকবার রিং হবার
পর তামান্না কল রিসিব করেনি। তাই
আবার ওর নাম্বার ডায়াল করলাম হ্যা
এবার কল রিসিব করেছে কিন্তু কিছুই বলছে
না চুপ করে আছে। আমিও যে কি বলবো
সেটা বুঝতে পারছিনা তাই আমিও চুপ করে
আছি। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ চুপ করে
থাকা যায় তাই বলে উঠলাম।
.
"কি হল কথা বলছো কেন?
"...
"কি কথা বলবে না?
"কি বলবো?
"কেন কিছুই কি বলার নেই?
"থাকবে না কেন? অনেক কিছুই তো বলার
আছে কিন্তু তোমার তো সে কথাগুলু শুনার
সময়টুকুও নেই।
"না মানে বলছিলাম যে অনেকক্ষণ ধরে
দাঁড়িয়ে ছিলাম যদি তুমি একটু নিচে
আসতে?
"নিচে এসে কি করবো?
"কিছু না তোমাকে একটু কাছ থেকে
দেখতাম এই আরকি।
"কাছ থেকে দেখার দরকার নেই তুমি চলে
যাও এখান থেকে আমি আসবো না।
"একটু আসো প্লিজ।
"বললাম তো আসবো না তুমি চলে যাও।
"সত্যিই কি আসবে না?
"না আসবো না।
"ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।
"না এই দাঁড়াও বলছি। যেখানে দাঁড়িয়ে
আছোছো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবা এক
পাও নড়বা না বলে দিলাম আমি নিচে
আসছি।
"আসো তাহলে।
"দাঁড়াও তাহলে।
.
আমি জানতাম যে তামান্না আসবে
কেননা ও আমাকে ভালবাসে আর এই
কয়দিনে আমি সেটা খুব ভালভাবে বুঝতে
পেরেছি।
.
এইতো সেদিন একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে আছি
হঠাৎ কোথা থেকে যেন তামান্না আমার
সামনে এসে হাজির হল। আমি তামান্নার
এই হঠাৎ উপস্থিতিতে একটু অবাক হয়েছি।
আর যখন ওকে কিছু বলতে যাবো তখনি ও
রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
.
"এই তুমি এখানে কি হু? আর পাশে এটা কে
বসে আছে? ও এবার বুঝেছি তোমার নতুন
প্রেমিকা তাইনা? আর এইজন্য তো বলি
তুমি আমার সাথে এরকম কর কেন?
"আরে তামান্না এসব কি বলছো আমার
কথাটা শুনো।
"কি শুনবো তোমার কথা তোমাকে আমি
চিনে গেছি। আমার সাথে মিথ্যে কথা
বলে এখানে এসে নতুন প্রেমিকার সাথে
লুতুপুতু প্রেম করা হচ্ছে তাইনা। আর এইজন্য
রাতে কল দিলে তোমার ফোন ওয়েটিং
দেখায়। ওর সাথে সারারাত ধরে
প্রেমালাপ কর তাইনা?
"তামান্না প্লিজ আমার কথাটা শুনো তুমি
যা ভাবছো তা কিন্তু না।
"কি না হু? আর এই মেয়ে তুমিই বা কি একটু
বোকা টাইপের ছেলে দেখলে ওদের গলায়
ঝুলে পড়তে ইচ্ছে করে তাইনা। তুমি জানো
না আমি ওর জিএফ। তারপর ও কেন ওর গলায়
ঝুলছো?
(আমি তো এখন তামান্নার কথা শুনে পুরাই
অবাক। ও বলে কি ও আমার জিএফ এটা
কিভাবে সম্ভব? কথাটা শুনার পর যখন কিছু
বলতে যাবো তখন পাশে বসে থাকা
মেয়েটা বলে উঠলো)
"আপু আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা।
আসলে আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু না।
আসলে আমি উনার খালাতো বোন উনি
এভাবে বাইরে ঘুরতে আসতে চাইছিলেন না
কিন্তু আমি জুড় করে উনাকে নিয়ে বের
হয়েছে। আর তাছাড়া ভাইয়া আমাকে
বোনের চোখেই দেখেন। এর চাইতে বেশি
কিছু না।
.
(আসলে আমার পাশে যে মেয়েটা বসে
আছে ও আমার খালাতো বোন। কিছুদিন
হয়েছে আমাদের বাসায় ঘুরতে এসেছে
কিন্তু আজ খুব ধরেছে যে ওকে নিয়ে একটু
ঘুরতে বের হতে হবে। কিন্তু প্রথমে না করি
কিন্তু ওর জুড়াজুড়িতে পরে আর না করতে
পারিনি। তাই ঘুরতে ঘুরতে এই রেস্টুরেন্ট এ
আসা। কিন্তু এখানে এসে যে এরকম একটা
পরিস্থিতির স্বীকার হব সেটা বুঝতে
পারিনি। কিন্তু তামান্না যে আমাকে
এখানে দেখে এরকম ভাবে রিয়েক্ট করবে
সেটা তো আমার কল্পনার বাইরে। কিন্তু
সোমার (আমার খালাতো বোন) কথা শুনে
তামান্না তার ভুলটা বুঝতে পেরেছে যে।
সে ভুল করে ভুল কিছু ভেবে ভুল জায়গায়
ভুলবশত কথা গুলু বলেছে তাই মাথা নিচু
করে চুপ করে আছে। আসলে এরা কেন এরকম
আমি বুঝতে পারিনা। আসল ঘটনা না জেনে
প্রথমে এমন এক ভাব করবে যেন ওদের অনেক
বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আর এ জন্য এক প্রকার
যুদ্ধ চালাবে। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারবে
যে যুদ্ধটা তার শত্রু উপর না চালিয়ে বন্ধুর
উপরি চালিয়েছে তখন মাথা নিচু করে
চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকবে।
আমি তামান্নার এই নীরবতা দেখে
বললাম)
.
"আচ্ছা ঠিক আছে যা ঘটার তো আর ঘটে
গেছে এটা নিয়ে আর না এগুনো ভাল। আর
হ্যা সোমা আমি চাই যে তুমি এসব বিষয়
নিয়ে আর কারো সাথে কথা না বলাই
ভাল। আর তামান্না তা তুমি এখানে কি
করছো?
(আমার কথা শুনে তামান্না ওর আঙুল দিয়ে
একটা টেবিল দেখালো আর বলল)
"আমি আমার মামাতো বোনের সাথে
এখানে এসেছি আসলে ওর সাথে একজনের
বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই আমাকে নিয়ে
এসেছে উনার সাথে দেখা করতে।
.
(তামান্নার কথা শুনে আমি ওর দেখিয়ে
দেওয়া টেবিলটার দিকে তাকালাম
দেখলাম একটা বিবাহ যুগ্য মেয়ে একটা
চেয়ারে বসে টেবিলের উপর দুহাত রেখে
আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ও
দিকে তেমন একটা না তাকিয়ে
তামান্নাকে বললাম)
.
"ও তা তুমি কি থাকবে না চলে যাবে? আর
তাছাড়া শত হলেও তুমি আমার জিএফ
তোমার কথামত তো আমাকে চলতে হবে
তাইনা। সোমাকে তো বাসায় পৌছে
দিতে হবে তাই বলছিলাম কি আমি এখন
যেতে পারি?
.
তামান্না কিছু বলল না চুপ করে মাথা
দিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিল। তারপর
সোমাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে
আসলাম। হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা
খেয়ে আমার ঘুর কাটলো। চেয়ে দেখি
একটা বৈদ্যুতিক খুটি যেটার সাথে আমি
ধাক্কা খেয়েছি। ইশ কপালটা গেল মনে হয়
ডান হাত কপালে রেখে বাম হাত দিয়ে
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম।
দেখি ১০ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু এখনো
তামান্নার আসার নাম নাই। মেয়েটা কি
করছে? নাকি এখন সাজগোজ করছে? আসলে
এরা যে কি এখন আবার সাজগোজ করার কি
আছে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি আর উনি
সাজছেন। কিছুক্ষণ পর দেখলাম
তামান্নাদের বাসার গেইট টা আস্তে
আস্তে খুলছে। দেখলাম তামান্না বের হয়ে
আসছে আর যা ভেবেছিলাম তাই মেয়েটা
হালকা সেজে এসেছে আর একটা লং ড্রেস
আর স্কিন পায়জামা পড়েছে। তবে এই
হালকা সাজে তামান্নাকে খুব সুন্দর
লাগছে যা বলে বুঝাতে পারবোনা।
তামান্না এক পা দুপা করে হেটে আমার
সামনে এসে এক হাত দূরে দাঁড়ালো। কিন্তু
চুপ করেই আছে কিছু বলছেনা আমি আরেকটু
লক্ষ্য করে দেখলাম তামান্নার চোখের
নিচটা লাল হয়ে আছে। তার মানে এই
মায়াবী মেয়েটা সারাটাদিন খুব
কেঁদেছে। আসলে মেয়েটা মনে হয় খুব বেশি
কষ্ট পেয়েছে। কেননা কোথাও যেনো
শুনেছি যে অতিরিক্ত আঘাতে বাকি মানুষ
নিশ্চুপ হয়ে যায় হয়তোবা তামান্নার
ক্ষেত্রে ও সেটা হয়েছে। তাই ওর এই চুপ
করা দেখে আমি বলে উঠলাম।
.
"তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
"...
"কি হল কথা বলছোনা যে?
"কি বলবো?
"কেন কিছুই বলার নেই?
"থাকবেনা কেন অনেক কিছুই তো বলার
আছে কিন্তু তোমার তো সেই সময়টুকু নেই।
যে আমার কথাগুলু শুনবে।
(কথাগুলু তামান্না কেঁদে কেঁদে বলল)
"আরে কেঁদো না তো প্লিজ এমনিতেই
সারাটা দিন অনেক কেঁদেছো যার জন্য
চোখটাও খুব লাল হয়ে আছে এখনো যদি
আরো কাঁদো তাহলে তো চোখের পানিও
তোমার সাথে অভিমান করবে।
"তুমি সব কিছু নিয়ে মজা কর কেন? একটু
সিরিয়াস হতে পারো না?
"আচ্ছা বাবা ঠিক আছে সিরিয়াস হব তবে
এখন না একটু পর। আর এই নাই ফুলটা তোমার
জন্য এনেছি 'শুভ জন্মদিন কাঁদো কন্যা'
(কথাটা শুনার পর তামান্না হেসে দিল আর
বলল)
"কাঁদো কন্যা কি হ্যা? আর সারাটা দিন
কোথায় ছিলা এক বার ও কি আমার খুজ
নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে না?
"আরে সারা দিন কোথায় আর থাকবো
ছিলাম কোথাও একা বসে যেখানে কেউ
ডিস্টার্ব করতে পারবে না।
.
"তাই বলে সারাটা দিনে একবার আমাকে
কল দিলা না? আচ্ছা কল দিবানা মানলাম
তোমাকে এতবার যে আমি ফোন দিলাম
একটি বারের জন্যও ফোন রিসিব করলে না?
তুমি জানো সারাটা দিন আমার কেমন
কেটেছে?
"আরে সারা দিন যখন তোমার সুখের ক্ষণে
সবাইকে তোমার পাশে পাবা তখন হয়তো
আমাকে নাও পেতে পারো কিন্তু যখন তুমি
দুঃখের ক্ষণে অশ্রুসিক্ত নয়নে আমাকে
মনে করবে তখন দেখবা আমি তোমার পাশে
ঠিকি এসে ছায়ার মত হয়ে দাঁড়িয়েছি
যাকে তুমি ইচ্ছে করে হলেও দূরে ঠেলে
দিতে পারবে না।
"আচ্ছা তুমি এমন কেন? বলবা আমাকে?
"না তোমাকে বলবো না আর তুমি এটাও
জানো যে তোমাকে আমি মিথ্যে কথা
বলতে পারবোনা আর সত্যিটাও বলবো না
যদি তুমি কষ্ট পাও।
"না বল সত্যি কথাটাই বল। মিথ্যে বলে
হাসানোর চেয়ে সত্যি বলে কষ্ট দেওয়াই
ভাল তাইনা?
"কিন্তু তোমার কষ্ট আমার ভাল লাগে না।
"কেন?
"জানিনা। আচ্ছা বাদ দাও আমার সাথে চল
তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব।
"কি সারপ্রাইজ?
"আরে বোকা মেয়ে যদি তোমাকে বলেই
দেই তাহলে কি সারপ্রাইজ টা আর
সারপ্রাইজ থাকবে?
"আচ্ছা তা মানলাম কিন্তু কোথায় যাবো
সেটা তো বলবে।
"তেমন কোথাও না এই একটু সামনে যাবো।
"আচ্ছা ঠিক আছে চল তাহলে।
"দাড়াও।
"কেন এখন আবার কি হল?
"আগে এই ওড়নাটা দিয়ে তোমার চোখটা
বেধে নেই।
"আরে ওড়না দিয়ে চোখ বাধবো কেন? আর
তাছাড়া তুমি এটা কোথায় পেলে?
"কোথায় পাবো আর ছোট বোনের ওড়না চুরি
করে নিয়ে এসেছি।
"আসলে তুমিও না একটা পাগল।
"হ্যা পাগল।
"কিন্তু এই রাতের বেলা চোখ বাধলে আমি
যাবো কিভাবে?
"বিশ্বাস কর আমাকে?
"নিজের চাইতেও বেশি।
"তাহলে এত চিন্তা কর কেন? আমি আছি
তো। আর যদি সব কিছু দেখে ফেল তাহলে
তো আর সারপ্রাইজ দেওয়া হবে না।
"আচ্ছা বাবা ঠিক আছে বাধো চোখ।
"ধন্যবাদ।
.
তারপর ওড়ানাটা দিয়ে তামান্নার চোখটা
হালকার উপরে বেধে নিলাম যাতে পাগলী
টা ব্যথা না পায়। আর বললাম যে আমি
বলার আগ পর্যন্ত যেন চোখ থেকে ওড়নাটা
না সরায়। তারপর তামান্নাকে নিয়ে
কিছুদূর হেটে এসে থামলাম আর ওর চোখ
থেকে ওড়নাটা সরালাম। কিন্তু
তামান্নাকে চোখ খুলতে বারণ করলাম।
তারপর ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি একটু
সামনে গেলাম। তখন তামান্না বলে
উঠলো।
.
"আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো আমাকে রেখে?
"আরে বোকা মেয়ে তোমাকে ছেড়ে আমি
কোথায় যাবো? তোমার সামনেই আমি
দাঁড়িয়ে আছি তবে এখন চোখ খুলবে না
কিন্তু। আমি বলার পর খুলবে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
"হুম এবার চোখ খুলো তাহলে।
.
কথাটা বলার পর যখন তামান্না চোখ
খুললো তখন ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে। ওর সামনে একটা বড়
কাগজে ওকে নিয়ে একটা কবিতা আর তার
পাশে ওর মায়াবী চেহারার একটা বড় ছবি
এবং ছবির পাশে একটা মিডিয়াম কাগজে
প্লাস চিহ্ন আঁকা আর এর পরে আমি
দাঁড়িয়ে আছি আর ওর দিকে তাকাচ্ছি।
তামান্না অবাক চোখে ঐগুলার একবার
তাকাচ্ছে আরেকবার আমার দিকে
তাকাচ্ছে। তারপর দেখলাম তামান্না ঐ বড়
কাগজটায় ওকে নিয়ে লিখা কবিতাটা পড়া
চেষ্টা করছে। তখন আমি বলে উঠলাম।
.
যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি
সে তুমি...
যার মাঝে আমার ইচ্ছে গুলা পূষন করতে চাই
সে তুমি...
যাকে নিয়ে ভাবনার সাগরে ডুব দেই
সে তুমি...
যার উপর আমার নিজের চাইতেও বেশি
বিশ্বাস
সে তুমি...
যার জন্য ঘন্টা পর ঘন্টা কাঠফাটা রোদের
মধ্যে ব্যাস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা
করতে পারি
সে তুমি...
যাকে নিয়ে গূধৌলি অরন্যে হারিয়ে যেতে
চাই
সে তুমি...
যাকে নিয়ে জোৎস্ন্যা বিলাস করতে চাই
সে তুমি...
যার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই
সে তুমি...
যার মিষ্টি হাতের ছোঁয়ায় বানানো
চায়ের ঘ্রাণে সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে
চাই
সে তুমি...
যার সাথে এক কাপ চা ভাগাভাগি করতে
চাই
সে তুমি...
কথার ফাঁকে যার চুলে একটু হাত ভূলাতে
চাই
সে তুমি...
যার খোলা চুলে আমার আনাড়ি হাতে
বেনি করে দিতে চাই
সে তুমি...
যার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই
সে তুমি...
যাকে আমি আমার টাই বাধার অধিকার
দিতে চাই
সে তুমি...
যার মিষ্টি অভিমান মিশ্রিত রাগ
ভাঙ্গাতে চাই
সে তুমি...
যার হাতে হাত রেখে সারাটা জীবন এক
সাথে কাটাতে চাই
সে তুমি...
.
সত্যি কথা বলতে কি যাকে নিজের চাইতে
বেশি ভালবাসি
সে তুমি...
হবে কি তুমি আমার সে তুমি...
.
কথাটা বলার দেখলাম তামান্না কান্না
মিশ্রিত চোখে দৌড়ে এসে আমাকে
জড়িয়ে ধরলো আর বলল।
.
"আচ্ছা তুমি এমন কেন?
"কেমন আমি?
"জানিনা।
"ওহ তাই। আচ্ছা তুমি তো বললে না যে তুমি
আমার সে তুমি হবে কি না?
"আমি তো সেই কবে থেকেই তোমার সে
তুমি হয়ে আছি কিন্তু সেটা বুঝতে
পারলেনা।
(কথাটা শুনে আমি তামান্নার মাথাটা
তুলে বললাম)
"কে বলেছে আমি বুঝতে পারিনি? আরে
বোকা মেয়ে বুঝতে পারি বলেই তোমায় এত
ভালবাসি।
"কচু ভালবাস।
"এখন থেকে দেখবা ভালবাসা কাকে বলে
তোমায় আমি এমন ভালবাসবো যেটা
উদাহারণ হয়ে থাকবে।
"লাগবে না আমার এত ভালবাসা। শুধু
তোমার হাতে হাত রেখে পাশে থেকে
চলতে দিও তাহলে হবে।
"তাহলে চল হাটি।
"হুম চল।
.
তারপর মায়াবী রাতে মায়াবী কন্যাকে
সাথে নিয়ে আমাদের ভালবাসার পথটা
চলতে শুরু করলাম।

No comments:

Post a Comment