Monday, September 12, 2016

মেয়েটির জন্য

মেয়েটির জন্য

লেখক : Abeer Aronno Megh

:-ভাব ধরে আছেন কেনো?
.
=ভাব? আমি? কই!! নাতো!
.
:-মিত্থা কথা বলছেন.. মানুষ চিনেন?
থাপড়িয়ে ফেস
আলাদা করে দিবো।
:-ওই ওই, ওই ভিতুর ডিম যাচ্ছেন কোথায়?
.
=যাবোনা মানে! যে হারে আজেবাজে
বকছেন!
তৃষ্ণা পেয়েছে, পানি খাবো!
.
:-কেনো বেবি! মাম্মি ব্যাগে মাম দেয়নি
বুঝি??
.
=না! দিয়েছে! মানে......
.
:-হয়েছে, আর তোতলাতে হবেনা, আর এতো
ভাব ধরে থাকেন কেনো সব সময়? ডাকলেও
শুনেন না! কথা বলতে চাইলে কাশতে
থাকেন!
আজীব চিরিয়া!
.
=স্যরি, আমি চিরিয়া না, মানুষ!
.
:-তাতো দেখতেই পাচ্ছি বেবি! তা বয়স
কতো
তোমাল? বায়ো নাকি তেয়ো?
.
=আপনি.. আপনি.. আপনি আমাকে ইনসাল্ট
করছেন!!
.
:-আরে..... আজীব, কাদছেন কেনো?
ছেলে মানুষরাও কাদে নাকি!! আমি তো
ফান
করছিলাম!! এই দেখি চোখ টা..
এদিকে আসুন..
.
এটা বলেই আমাকে অবাক করে দিয়ে
সেদিন নিজ
হাতে আমার চোখের পানী মুছে দিচ্ছিলো
অরিন। তারপর আমার সামনেই অকারনে
অট্টহাসি তে
ফেটে পড়লো, আর বললো "বোকাবাবু,
এতো জলদি কেউ কাদে?, হুম, তোমাকে বড়
বানাতে হবে আমার.. বুজলাম"। ওইদিন এই
কথার
কোনো মানেই আমি বুঝিনি। বাট অরিনের
ওই
চঞ্চলতা টা আমার মধ্যে সেদিনই বেশ
প্রভাব
ফেলেছিলো। একটা অধ্যায়ের শুরু যে
সেদিনই
হয়েছিলো।
.
সত্যিই মেয়ে টা আমায় খুব শাসন করে,
কোনো
কিছুতে এক ইঞ্চি ছার দেয়না। আর ওর সব
গুলো
শাসন এর মধ্যেই পাগলামো লুকিয়ে থাকে।
একবার
হঠাৎ করেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম, ঠিক মতো
কিছু খেতে পারতাম না, এক টা পর্যায়ে
এমন হলো
যে পানি জাতীয় খাবার ছারা কিছুই
খেতে পারছিলাম না।
পাগলী টাও সে দুদিন কিচ্ছু খায়নি পানি
ছারা। আমার
চেয়েও বেশি চিন্তিত সে হয়ে পড়ে। হুট
করে
আমার বাসায় চলে আসে। আম্মু আব্বু কে
অদভুত
ভাবে কয়েক মিনিট এর মধ্যে হাত করে
ফেলে।
তারপর নিজ হাতে আমায় খাইয়ে দিয়ে
তবেই শান্তি
পেলো। যাওয়ার আগে ইচ্ছা মতো বকাও
দিয়ে
গেলো।
.
এক পূর্নিমা রাতে প্রায় ১১টার দিকে হঠাৎ
আমায় কল
দিয়ে বললো এই মুহুর্তে যেনো আমি তার
বাসার
সামনে যাই, সে ওয়েট করছে। অগত্যা বাধ্য
হয়ে
বের হলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো
বোকা
বানাবে কোনো কিছুতে, না হয় খুব
গুরুত্বপূর্ন কিছু
দিবে। অথচ তার কোনো টাই না করে বলে
উঠে
"সামু, চল, আজ সারা রাত ঢাকার রাজপথ
হেটে
বেরাবো" আমি এতোই থতমত খেয়েছিলাম
যে
কিছু বলার সুযোগ ই পেলাম না। তার আগেই
অরিন
আমার হাত টেনে হাটতে শুরু করে দেয়।
ঘোর
লাগা যখন কেটে যায় তখন সত্যিই খুব ভাল
লাগছিলো। জনমানব শুন্য ঢাকার রাজপথে
পৃথিবীর
শ্রেষ্ঠ চঞ্চল আর নিষ্পাপ মেয়ে টা তার
চটপটে
কথার ফুল ঝুড়ি খুলতে খুলতে আমার হাত ধরে
হাটছে। সোডিয়ামের আলোয় শুধু অরিন আর
আমি।
মাঝে মধ্যে ক'টা কুকুর হাক ছারছিলো।
যেনো
অদ্ভুত মাদকতায় ডুবে গিয়েছিলাম।
.
সে রাতে প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত অবিরাম
হেটেছিলো অরিন। যখন ও চলে যাচ্ছিলো
তখন
কেনো যেনো চোখ বেয়ে পানি ঝরছিলো।
না শুধু ওর না, আমার ও। কিছু সময় থাকে
যখন
অকারনে চোখের পানি ঝড়ে মনে এক ধরনের
প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সে সময়টাতেও ঠিক
তেমন
লেগেছিলো।
.
প্রথম যেদিন ও আমাদের বাসায় এসেছিলো
তারপরদিন থেকে সময় পেলেই বেলা
অবেলায়
ও বাসায় চলে আসতো। মাঝে মধ্যে আসার
সাথে
সাথেই তার গন্তব্য হতো সরাসরি কিচেন এ
। তারপর
আম্মু কে জোর করে বসিয়ে দিয়ে খাটি
রাধুনীর
মতো সেই বেলার খাবার রান্না করে
সবাইকে
খাওয়ানো টা ছিলো ওর অন্যতম পাগলামি।
এতোই
দ্রুত অরিন আমাদের পরিবারের সাথে
মিশে
গিয়েছিলো যে, আব্বু আম্মু আমার চাইতেও
ওর
যত্ন নিতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে যেতো।
.
আমাদের সম্পর্ক তখন প্রায় ২বছর থেকে
একটু
বেশি। এক বিকেলে অরিন বাসায় এসে
আমায়
কোনো কিছু না বলেই চুপচাপ ছাদে নিয়ে
গেলো।
.
:-চুপচাপ যা যা করতে বলবো তাই করবা,
মাম্মি মাম্মি
করে চেঁচাবে তো ধাক্কা দিয়ে নিচে
ফেলে
দিবো!!
.
=কি বলছো এসব!! কি হলো তোমার!!
.
:-কি হয়নি তা বলো, আর কতো জালাবে
আমায়
ফাজিল??
.
=মানে কি? আমার কাছে তো কোনো আগুন
জালানোর কিছু নেই!! তাহলে কিভাবে??
.
:-চুপ কুত্তা!!!! বসো! বসো বলছি!
:-আরে বলদ এভাবে সোজা বসতে বলিনি, এক
হাটু
নামিয়ে বসো, তারপর বলো।।
.
=কি বলবো?
.
:-কি বলবা মানে? প্রপোজ করবে।
.
"@অরিন যেভাবে বলেছিলো আমি পুরোটা
না
বুঝায় ঠিক ওভাবেই বসে বললাম 'প্রপোজ
করো' !! @"
.
:-ও গড, সামু তোমাকে আমি সত্যিই ধাক্কা
দিবো,
"প্রপোজ করো" এটা বলতে বলিনি আমি এটা
করতে বলেছি।
.
"@কথা টা শুনে আমার মধ্যে কেমন যেনো
বিদ্যুৎ খেলে গেলো, এতোটা কাছের করে
অরিন কে পাবো সেই কল্পনাও করিনি
কখনো,
কারন সাহসও হয়নি ওতোটা, আমি কোনো
মতে
"আই লাভ ইউ" বলতেই আমার পুরো শরীর
ঝাকি
দিয়ে উঠেছিলো।@"
.
:- !! (বেশ কিছুক্ষণ পর) আই লাভ ইউ টু
গাধাস্টিক......
..
.
অরিন এর সেই চিৎকার এখনো কানে বেজে
উঠে হঠাৎ। আর তখনোও শরীর শিউরে উঠে।
.
কথা গুলো ভাবতেই নিজের অজান্তেই হো
হো
করে হাসি দিয়ে উঠলাম, ঠিক তখন ই
হাতের মধ্যে
পিপীলিকার কামরের মতো অনুভব
হলো,পাশ
ফিরে তাকাতেই নিজেই চমকে উঠলাম!!
অরিন লাল
শাড়ি পরে ঘোমটা টা একটু উপরে তুলে দাত
কটমট
করতে করতে অগ্নিময় চোখে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে!!
.
বাস্তবে ফিরে আসতেই জিহ্বায় কামড়
দিয়ে
উঠলাম!! আজ কিছুক্ষণ আগেই আমার আর
অরিনের
দুজন দুজনাকে আজীবনের মতো করে কাছে
পাওয়ার সিকৃতীর অনুষ্ঠান উদযাপিত হলো!
আজ
আমাদের ফুলসজ্জার রাত!! আর আমি কিনা
ভাবনার
জগতে.......
ঘড়িতে তাকাতেই বুক ধুপুকধুক ডাক দিয়ে
উঠলো
আমার!! রাত প্রায় তিন টার বেশি!! অথচ
আমি এখনো
অরিন কে কিছু জিজ্ঞাসাও করলাম না!!
.
কিছু একটা জিজ্ঞাসা করা উচিৎ কিন্তু কি
বলবো তা
খুঁজতেই খুঁজতেই অরিনের ডাক!! "ওই
গাধাস্টিক!!
আজ কি বলতে হবে ওগুলোও কি আমায় বলে
দিতে হবে??" হঠাৎ কোত্থেকে যেনো
আমার
মাথায়ও পাগলামো চেপে বসলো, কিছু না
বলেই
অরিন কে সোজা কোলে তুলে নিলাম, এমন
কিছু
করবো তা হয়তো ও ভাবতেও পারেনি,
লজ্জায়
চোখ বন্ধ করে নিলো ও, অরিন কে কোলে
তুলেই ধিরে ধিরে আমি কোরিডোরের
দিকে
এগিয়ে গেলাম, দোলানায় বসে অরিনের
চোখের উপর আলতো করে হাতের দু আঙুল
বুলিয়ে দিলাম, অরিন এর চোখ দুটো কেপে
উঠলো। চাঁদের আলো কোরিডোরের সব টুকু
জুড়ে ছেয়ে আছে, তবুও কেনো যেনো
মনে হচ্ছিলো এই আলো আকাশের চাঁদের
নয়,
এই আলো আমার কোলের চাঁদ অরিনের
থেকে বেরিয়ে আসছে। আস্তে করে
অরিনের কপালে আমার ঠোঁটের মৃদু স্পর্ষ
একে
দিলাম। অরিন আমায় আরো শক্ত করে
জড়িয়ে ধরে
লজ্জায় বুকে মাথা গুজালো। অন্যরকম এক
অনুভুতি
আমার মনের সব টুকু জুড়ে যেনো ঝড় বইয়ে
দিলো.................

No comments:

Post a Comment