Sunday, September 4, 2016

"'অনেক ভালবাসি তোকে'"

"'অনেক ভালবাসি তোকে'"
-
লেখাঃ (রাজকন্যার হবু বর)
.
.
->এই এত বেহায়া কেনো আপনি?
->(জবাবে) বত্রিশ পাটির দাঁতগুলো মেলে
ফিক করে একটা হাসি দিলাম।
->ছিঃ লজ্জা করেনা। আবার হাসছেন।
->কেন বলুন ত (জামাকাপড় দেখলাম) সবকিছু
ঠিকঠাক ই তো আছে লজ্জা পাবো কেন।
->(কোমড়ে দুহাত গুঁজে) অই ঠিক আছে
মানে। কতবার বারণ করেছি আপনাকে
আমার দিকে তাকাবেন না। তারপরেও কেন
তাকান হ্যা। কথা কি কানে যায় না
আপনার।।
->(পুনরায় আরেকটা হাসি দিয়ে বললাম)
দেখুন..মহান আল্লাহ আমাদের চোখদুটো
কেন দিয়েছেন? তার সৃষ্টির সৌন্দর্য
দেখার জন্যই তো তাই না বলেন। তাহলে
আমায় কেন সেটা দেখার থেকে বার বার
বঞ্চিত করতে চাচ্ছেন বলুন তো।।
->শুনুন! বেশি রোমান্টিক হবার চেষ্টা
করবেন না। দুনিয়াতে দেখার জন্য আরো
অনেক কিছুই আছে যান সেদিকে গিয়ে নজর
দিন। আরেকবার আমার দিকে তাকাবেন
তো চোখ একদম উঠায় ফেলবো বলে দিলাম।
(বাপরে পুরো জল্লাদনী টাইপ ডায়লগ)
->আচ্ছা আমি যে আপনার দিকে তাকিয়ে
থাকি এটা কে বলেছে আপনায়?
->কে বলবে আবার। এইটা বলতে আরেকজনের
প্রয়োজন হয় নাকি। আমি তো আর অন্ধ নই।
আমি নিজের চোখেই দেখেছি আপনি
সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে
তাকিয়ে থাকেন।
->হা হা...তার মানে আমার ধারনা ঠিক।
আপনিও আড়চোখ করে আমাকে দেখেন।
(অট্টোহাসিতে পড়ে গেলাম)
->এই যে মিঃ..এখন নিজেকে সাধু প্রমাণ
করার জন্য আমার কাধেই দোষ চাপাচ্ছেন।
(রেগে চোখ-মুখ ফুলিয়ে একাকার)
->এই না,,না কি বলেন।আমি আপনাকে দোষ
দেবো কেন।হুম্মম অবশ্য আপনিও যে আমার
দিকে তাকান সেটা নিশ্চই মিথ্যে নয়।
তবে এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
আপনি তাকাতে পারেন।
->ইহহ! আমার বয়েই গেছে উনার দিকে
তাকাতে।স্টুপিড কোথাকার।হুহ..(ভেংচি
কেটে চলে যায় মেয়েটি)
-
মেয়েটার যাবার পথের দিকে ক্ষানিকসময়
তাকিয়ে রইলাম।
.
আমি রাফি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
আর যে মেয়েটার সাথে এতক্ষণ ঝগড়া
করছিলাম উনি হচ্ছেন রিধী আমার পাশের
বেঞ্চের ছাত্রী। মানে দুজন একই
শ্রেণীতে পড়ি।।
-
-
ইন্টার ফার্স্ট থেকেই খুব পছন্দ করি আমি
ওকে। শুধু পছন্দই না বড্ড বেশি
ভালোবাসি। কিন্তু দুঃক্ষ একটাই আজ
পর্যন্ত ওর সামনে সেটা প্রকাশ করা হয়নি।
ও খুব জেদি টাইপের মেয়ে তাই ভয়ে কিছু
বলিনি। উঁহু!! মার খাওয়ার ভয়ে নয়..যদি
রাজি না হয় সেই ভয়ে।
তাই হ্যাবলার মতো শুধু তাকিয়ে থাকি।
ও আমায় তাকিয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস
করেছিল কয়েকবার।
বলতে না পারায় রেগে গিয়ে বলে দিয়েছে
ওর দিকে যেন আর না তাকাই। কিন্তু সেটা
যে আমার পক্ষে অসম্ভব। ওকে না দেখলে
কেন জানি মনে হয় অক্সিজেনটা হারিয়ে
ফেলেছি।তখন নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়।
আচ্ছা কেন এমন হয়। ওকে ছাড়াও তো আমি
একসময় দিব্যি ভাল থাকতাম।
কই তখন তো এমন হতো না।তাহলে এখন কেন
হয়।
হুম্মম বুঝেছি হয়ত এটাই ভালবাসার
অনুভূতি।
আচ্ছা ও কি বোঝেনা আমি যে ওকে
এতোটা ভালবাসি! বোঝে সব বোঝে বুঝেও
ইচ্ছে করে এমন করে। সব ওর ন্যাকামো।
(আনমনে কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে
কথাগুলো ভাবছি)
-হঠাৎ ই নায়িকার আগমন।
বাহ চমৎকার লাগছে তো মেয়েটাকে।
ভেজা চুলগুলো শুকানোর জন্যই হয়ত
বারান্দায় এসেছে।।
এই প্রথম রিধীকে আমি খোলাচুলে দেখছি।
কি অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
নাহ প্রশংসা তো করতেই হয়।
___তাই পিছন থেকে রিধীর কানের কাছে
গিয়ে আস্তে করে বললাম.....
.
->খোলাচুলগুলোতে দারুণ লাগছে আপনাকে।
(পরবর্তী রিয়েক্টে হাসি দিবে, না
চিৎকার করবে সেটার জন্যে অপেক্ষা না
করেই দিলাম ভোঁ এক দৌড়)
-
কলেজ শেষে নাদিয়া কে নিয়ে রিক্সায়
করে চলে এলাম।।
.
পরেরদিন ক্যান্টিনে বসে বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিচ্ছি।এমনসময় পেছন থেকে রিধীর
কন্ঠ কানে আসল.....
->এই যে শুনুন! (রিধী)
__পেছনে তাকিয়ে আমিতো অবাক।এ কি
রিধী আমার সামনে তাও খোলাচুলে
দাঁড়ানো।উফফ মেয়েটা দিনে দিনে আমার
নজর কাড়ছে কেনো এত। তবে আজ ভেজা নয়
শুকনোই দেখাচ্ছে চুলগুলো।
কেমন বাতাসের সাথে খেলা করছে।মাঝে
মাঝে কিছু চুল উড়ে এসে মেয়েটার চোখ-
মুখের উপর ঝাপটে পড়ছে।
দৃশ্যটার থেকে যেন চোখ ফেরাতেই পারছি
না।
ইশশ...খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটার মায়াবী
মুখটা থেকে আলতো করে চুলগুলোকে সরিয়ে
দিতে।।
->এদিকে আসুন।(রিধী বলল)
->(ভয়ে ভয়ে) জ্বি আমাকে?
->হ্যা। ইশারা ত আপনার দিকেই নড়ছে।
->ওহ সরি (সামনে এসে) কিছু বলবেন।
(মিটিমিটি হাসছি)
->জ্বি। কিন্তু আপনি হাসছেন কেন?
->কই না তো।(হাসি থামিয়ে)
->মিথ্যা কেনো বলেন আমিতো দেখলাম
আপনাকে হাসতে।
___শোনেন অতো খুশি হবার কিছু নেই।
ভাববেন না আপনার কথায় এগুলো খুলে
রেখেছি(চুল দেখিয়ে) তুলি খুঁজে
পাচ্ছিলাম না তাই বাঁধিনী।
->হুম্মম বুঝলাম।(আমি)
->কি বুঝছেন?
->এইমাত্র যা বললেন সেটাই।
->বুঝলে ভাল।এখন যেটা জানতে আসছি
সেটার জবাব দিন।
->কি জানতে আসছেন?
->গতকাল রিক্সায় আপনার সাথে একটা
মেয়েকে দেখলাম।
->কখন বলুন তো?
->কলেজ ছুটির পর।
->হুম্মম।
->কে ওটা?
.
___মাথায় হঠাৎ একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।
->ওহ ওটা আমার জি এফ।(মুচকি হেসে)
->কিইহহ..আপনার জি এফ আছে? কই আমাকে
তো বলেননি।
->আপনি তো কখনো জানতে চাননি।
->তার মানে.....ছিঃ...আপনার জিএফ থাকা
সত্ত্বেও আপনি আমার দিকে তাকিয়ে
থাকতেন।
->কেন।এটা কোথায় লেখা আছে যে জিএফ
থাকলে অন্য মেয়ের দিকে তাকানো যাবে
না।
->আসলেই কথাটা ঠিক। ছেলে মানুষগুলোকে
এতো বেশি বিশ্বাস করতে নেই।
(চেহারাটা কেমন মলিন করে ফেলেছে।এরই
মধ্য চোখের কোনে মেঘও এসে জমাট
বাঁধতে শুরু করেছে..মনে হচ্ছে
ক্ষানিকবাদেই বৃষ্টি ঝড়বে)
->এই যে মিস..আপনি আমার জন্যে গোটা
ছেলেজাতিকে অপমান করছেন কেন।
___শোনেন আমার কোনো জি এফ-টি এফ
নেই ওটা আমার খালাতো বোন নাদিয়া।
গতকাল ওর জন্মদিন ছিল তাই ওকে নিয়ে
কেক কেনার জন্যই দুজন একসাথে
বেড়িয়েছিলাম বুঝছেন।
.
->মানে।তাহলে আপনি একটু আগে যে
বললেন.....
->মিথ্যে বলেছি।
->কেন?
->আপনাকে বোঝার জন্যে।
->তাই...কি বুঝলেন শুনি?
->ভালোবাসেন আমায়!
->(চুপটি হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
মেয়েটা)
->চুপ কেন।
->আপনি তো......(পুরো কথাটা শেষ করতে
না দিয়েই)
->(মেয়েটার নিচু করে রাখা মুখখটাকে
উপরে উঠিয়ে বললাম) হুম্মম আমিও। তবে
সামান্য নয় অনেক বেশি ভালবাসি।
->হুহ,,,সব মিথ্যা।(মুখ বাঁকিয়ে)
->অই না সত্যি।
->তাহলে এতোদিন বললেন না কেন।
->বললে আপনাকে লুকিয়ে দেখার
পারিশ্রমিক গুলো কি আমি পেতাম বলেন।
->মানে। কবে দিলাম আমি আপনাকে
পারিশ্রমিক?
->আপনার দিকে তাকানোর অপরাধে যখন
আপনি এসে আমাকে চোখ রাঙাতেন,মুখ
ফুলিয়ে ধমকে দিতেন,আবার মাঝে মাঝে
মার খাওয়ানোর ভয় দেখাতেন। জানেন!
ওগুলাই ছিলো আমার জন্য জীবনের সবচেয়ে
বড় পাওয়া পারিশ্রমিক। যা চাইলেও সবার
ভাগ্যে জোটে না।
.
.
মেয়েটার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে। নাহ
থামাবো না ওকে। কান্না মুছে দিয়ে
বিরক্ত ও করবো না আজ। কাঁদুক না
কিছুক্ষণ। মন খুলে কাঁদুক। এ যে সুখের
অশ্রু,নিজের চাওয়াকে আপন করে পাবার
আনন্দ অশ্রু।।

No comments:

Post a Comment