Wednesday, September 14, 2016

তাহারে গেঁথেছি হিয়াতে

তাহারে গেঁথেছি হিয়াতে
.
.
Written by:Tanjina Akter Tania(হিমাদ্রির মেঘ)
.
.
জীবনের প্রথম কোন ছেলেকে দেখে
ক্রাশ নামক অপুষ্টিকর খাদ্যটা খেলাম।এত বেশীই
খেয়েছি যে এখনো হজম করতে পারছিনা।
অবশ্য ছেলেটা যদি আমাদের ভাড়াটিয়া না হত
তাহলে এতক্ষনে তাকে মনের কথা জানিয়ে
দিয়ে অখাদ্যটা হজম করার ব্যবস্থা করে ফেলতাম।
ছেলেটা আমাদের বাসায় এসেছে দিন পনেরো
হল।আমার মত বদ মেয়ের নজরে পড়েছে
গতকাল।আমি যখন নানুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম
তখন ছেলেটা এসেছে আমাদের বাসায়।মায়ের
কাছে শুনেছি ও নাকি ব্যাচেলর ছেলে।আমাদের
ভার্সিটিতেই নাকি পড়ে। অনার্স ফাইনাল ইয়ার।
মেসে থাকতে সমস্যা বিধায় বাসা নিয়েছে।যদিও
বাবা প্রথমে ব্যাচেলর ভাড়া দিতে আপত্তি করেছিল
কিন্তূ ছেলেটার প্রবল রিকুয়েষ্টে নাকি না করতে
পারেনি। তাছাড়া বাবার মতে ছেলেটা নাকি দেখতে
খুব ইনোসেন্ট।কোন রিস্ক মনে করেনি তাই
ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন।ছেলেটা আসলেই
দেখতে খুব ইনোসেন্ট।একবারে সহজ সরল
টাইপের।ভীতু ভীতু লাগে।এই টাইপের
ছেলেগুলো নাকি বৌকে অনেক ভালবাসে।
.
আরে ধুর!কি ভাবছি এসব?ওর সাথে কখনো কথাই
হয়নি আর ওর বৌ হওয়ার ভাবনা ভেবে ফেলেছি।
তবে কথা বলতে ইচ্ছে
করে খুব।কিন্তূ বাড়ীওয়ালার মেয়ে আমি।আমার
একটা প্রেষ্টিজ আছেনা?নিজ থেকে কিভাবে কথা
বলি?
.
রাতে বসে পড়ছিলাম।মা ঘ্যানর ঘ্যানর করছিলেন।
নীচ
তলার ভাড়াটিয়া মহিলা নাকি খুব নোংড়া আর অলক্ষী।
কিচেনের বেসিনটা নাকি ময়লা ফেলতে
ফেলতে বন্ধ করে ফেলেছে।বাথরুমের
টেপ ভেঙে ফেলেছে।ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক
কিছু।তখনি চট করে মাথায় বুদ্ধি এল ঐ ভাড়াটিয়া
ছেলের দোষত্রুটি ধরার ছলে ওর সাথে কথা বলা
যাবে।ছেলে মানুষ।নিশ্চয়ই রুম অগোছালো
করে রেখেছে।
যাই!এক্ষুনি গিয়ে ব্যাটাকে ঝেড়ে আসি।মা জানলে
যেতে দিবেন না।তাই চুপি চুপি গিয়ে নক করলাম।
একটা কর্তী কর্তী ভাব নিয়ে দরজা খুলার
অপেক্ষায় দাড়িয়ে রইলাম।ছেলে দরজা খুলল।
কিন্তূ পড়নে শর্ট প্যান্ট।খালি গা।আমাকে
দেখেই ভ্যাবা ছ্যাকা খেয়ে আবার খট করে দরজা
লাগিয়ে দিল।আমারতো মুখ ঠেলে হাসি পেতে
লাগল।কিন্তূ হাসলাম না।তাতে প্রেষ্টিজ কমে
যেতে পারে।ডেকে বললাম
-দরজা খুলুন।কথা আছে।ভেতর থেকে আওয়াজ
আসল
-কে আপনি?এই রাতের বেলায় আমার রুমে
কেন?
-আমি বাড়ীওয়ালার মেয়ে।আপনি কোন অনিয়ম
করছেন কিনা দেখতে এসেছি।
.
এবার দরজা খুলল।পড়নে ট্রাউজার আর টিশার্ট।তাড়াতাড়ি
করে পড়তে গিয়ে টিশার্ট টা উল্টো করে পড়ে
ফেলেছে।কর্লার সামনে গলার দিকে।আর
ট্রাউজারের এক পা হাটু পর্যন্ত উঠে আছে।
মুখ চেপে একটু হাসলাম
তারপর চোখ ঘুরিয়ে উনার রুমটা গোছানো
আছে কিনা একটু দেখার চেষ্টা করলাম।তারপর
বাড়ীর মালিকের মত লুক নিয়ে বললাম
-হুম।রুমতো ঠিকি আছে।কিন্তূ শরীর এমন
অগোছালো কেন?
-ইয়ে মানে,তাড়াহুড়া করতে গিয়ে....
-থাক থাক।আর বলতে হবেনা।বুঝেছি।শুনুন,রুম টুম
পরিষ্কার করে রাখবেন সবসময়।বাথরুমে ও
কমোডে প্রচুর পানি ব্যবহার করবেন।কিচেন
পরিষ্কার রাখবেন।ডেইলি ফ্লোর মুছবেন।
মোটকথা,সবসময় সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা চাই।
নইলে আব্বুকে বলে বের করে দিব বাসা
থেকে।
-জ্বী আচ্ছা।
.
ঐ হাবলুটাকে শাসিয়ে নাচতে নাচতে সিঁড়ি দিয়ে
উপরে উঠলাম।সবকিছুতো পরিষ্কারই ছিল।তবুও
শাসালাম।কি যে হাসি পাচ্ছে ওকে বলদ বানিয়ে।
আবার ভয়ও হচ্ছে।ছেলেটার মনে আমার প্রতি
খারাপ ধারনা জন্মাবেনাতো আবার?
.
ধুর সে যাই হোক,ওকেতো বশ করবই আমি।
মাঝে মাঝেই ওকে দেখতে ইচ্ছে করে।
কিন্তূ ওতো সচরাচর বেরই হয়না রুম থেকে।
দেখব কেমনে?একটা বিহীততো করতেই
হবে।
মায়ের কাছে শুনেছি ও নাকি ইলেকট্রিকের কাজ
পারে।প্রতিদিন এটা সেটা নষ্টের অভিযোগে
ওকে ডেকে আনা যায়।
.
হঠাৎই রাত অাটটার দিকে আমার ক্রাশকে দেখতে
ইচ্ছে হল।ওহ!উনার নামতো বলা হয়নি।উনার নাম
তপু।উনাকে দেখার ইচ্ছা হল তাই আমার বাথরুমের
লাইট টা ইচ্ছে করেই ঘুরিয়ে ফোল্ডার থেকে
একটু বিচ্যুত করে ঢিলা করে ফেললাম।আর মাকে
চেঁচিয়ে
বললাম
-লাইট নষ্ট হয়ে গেছে।মা গিয়ে আমার ক্রাশকে
ডেকে আনলেন খুব আহ্লাদ করে।আমিতো
খুশিতে গদ গদ।
.
উনি এসে লাইটটা ভাল করে বসিয়ে আমাকে সুইচ
দিতে বললেন।আমি সুইচ দিতেই কারেন্ট চলে
গেল।ভয়ে একটা চিৎকার দিয়েই উনাকে পেছন
থেকে জড়িয়ে ধরলাম।বোধ হয় মিনিট তিনেক
ছিলাম।তারপর কারেন্ট চলে আসল।খুব লজ্জা
পেলাম।আস্তে আস্তে উনাকে ছেড়ে দিয়ে
দৌড়ে মায়ের রুমে চলে গেলাম।
.
ভাবলাম ঐদিন যখন একটু দেখা অার কথা হল,ও নিশ্চয়ই
এবার নিজ থেকে কথা বলতে চাইবে।কিন্তূ না।ও
আগের মতই আহাম্মকই রয়ে গেল।আমার প্রতি
কোন ইন্টারেষ্টই দেখছিনা উনার।
.
ভাবলাম উনার ফেবু আইডিটা পেলে মন্দ হত না।
.
প্ল্যানমত একদিন উনার কলেজ যাওয়ার সময় সিড়িতে
দাড়িয়ে রইলাম।উনাকে আসতে দেখেই একটা
নাটক শুরু করলাম। ফোনটা কানে ধরেই বললাম
-সে কি নীলা,তুই এখনো আমার ফেবু আইডির
নাম জানিস না?তানিয়া আহমেদ।কি বললি?স্পেলিং
বুঝিসনি?টি এ এন আই এ।তারপর এ এইচ এম ই ডি।
বুঝেছিস?আর শুন মেইডেন নেইম হচ্ছে
হিমাদ্রির মেঘ।টপেই শো করা আছে।
প্রোপিকে আমার নিজের পিকই আছে ।একটা
গ্লাস পরা পিক ফোর পল করা।চিনবিনা এখন?
.
উনি আমার কথার দিকে তেমন কর্নপাত করল বলে
মনে হয়না।
.
তবুও অপেক্ষায় রইলাম।দেখি কোন নতুন রিকু
আসে কিনা।
একটু পর পর ফেবুতে লগ ইন করি আর দেখি তপু
নামের কোন আইডি থেকে রিকু আসে কিনা।
যতগুলো ফেক নামের আইডি থেকে রিকু
আসে সবাইকে নাম জিজ্ঞাসা করি।কিন্তূ কেউ আর
তপু বলেনা।প্রায় এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে রিকু বা
মেসেজ না আসায় রাগে আইডি ডিএক্টিভ করে
রাখি।
.
ভাবলাম ফেবু থেকে ফোনে কথা বলাই বেটার
হবে।মনের কথাটা বলে দিতে পারব।কিন্তূ ফোন
নাম্বার দিব কেমনে?হুম একটা উপায় আছে ফেবু
আইডি যেভাবে দিতে চাইছিলাম ওভাবেই।
.
আবারো প্ল্যানমত উনার কলেজ যাওয়ার সময়
সিড়িতে দাড়িয়ে বান্ধবীর সাথে কথা বলার ছলে
বললাম
-হ্যালো দোস্ত শুন।এই নাম্বারটা আজ থেকে
অফ করে দিব।কয়দিন ধরে রং নাম্বারে কল আসে
খুব।নতুন নাম্বারটা লেখ।019********।
মনে মনে ভাবলাম যদি ও আমাকে একটুও পছন্দ
করে থাকে তবে কল দিবেই।
.
সাতদিন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম অনবরত।
কোন কল আসলেই বুকটা ধুক করে উঠত।এই বুঝি
ফোন দিয়েই কেউ বলল
আমি তপু বলছি।
.
কিন্তূ না।কোন কল আসেনি।
.
মনের দুঃখে বেলকনিতে বসেছিলাম।হঠাৎ
কারেন্ট চলে গেল।গভীর রাতে কারেন্ট
চলে গেলে আমি গলা ছেড়ে গান গাই।এটা
ছোটবেলার অভ্যাস।তার উপর তপু ফোন দেয়নি
বলে মনটা খারাপ।তাই পরিবেশের সাথে মিলিয়ে
'আমি অবুঝের মত একি করেছি... গানটাতে টান
দিলাম।
গানটা যখন প্রায় শেষ।তখনি কারেন্ট আসল।সাথে
সাথে কলিংবেলে চাপ পড়ল।দরজা খুলে দেখি তপু
দাড়িয়ে আছে।চোখ কে যেন বিশ্বাস করাতে
পারছিনা।আমি নিশ্চিত ও আমার গান শুনে এসেছে।
ওর বেল্কনিতো আমাদের বেল্কনির
নীচেই।দুতলায়।এক
্কেবারে সোজা।আমার চোখে মুখে আশার
আলো ফুটে উঠলো।কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাব
তার আগেই উনি বলে উঠল
-বাংলালিংক কাষ্টমার সার্ভিসে ফোন দেয়ার সিষ্টেমটা
জানেন?আমার সুপার এফ এন এফ নাম্বারেও অনেক
চার্য হচ্ছে।
মনে মনে খুব ভয় পেলাম।এই ছেলের সুপার
এফ এন এফ লিষ্ট ফুল?ওর আবার জি এফ নাইতো?
সুপার এফ এন এফ তো ছেলেরা জি এফ'র সাথে
করে। কি যে রাগ হচ্ছে এই হাবলুটার উপর।ইচ্ছে
হচ্ছে ওর শার্টের কর্লার চেপে ধরে বলি
-ঐ ব্যাটা?এইটা জিজ্ঞাসা করার জন্য রুমে এসেছিস?যদি
ভালবাসার কথা ছাড়া অন্য কিছু বলতে আসিস
আরেকদিন তাহলে তোর ঘাড় মটকে দিব।
উফ!কিসব ভাবছি এস এফ এন এফতো ফ্যামিলি
মেম্বার বা কোন ক্লোজ ফ্রেন্ডের সাথেও
থাকতে পারে।
উনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন
-জানেন আপনি?
-হুম।ট্রিপল ওয়ানে কল করুন।বলেই দরজাটা মুখের
উপর লাগিয়ে দিলাম।এত কষ্ট লাগছে যে ভাষায়
বুঝাতে পারবনা।বাচ্চা পোলাপানের মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ
করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।এই ব্যাটা আমার ফিলিংস
বুঝেনা
কেন?
.
শেষ চেষ্টা স্বরুপ উনার রুমে গিয়ে সরাসরি
নিজের নাম্বারটা দিলাম উনাকে।দিয়ে বললাম
-ফ্লেক্সি লাগবে।বাহিরে গেলে একটু করে
দিয়েন।বলে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট আর
কাগজে লিখা নাম্বারটা দিয়ে চলে এলাম।
.
এবার যদি ফোন না দেয়, ব্যাটার দিকে থেকে
নজর ফিরিয়ে আনব।
.
কলেজে ছেলেরা কি নিয়ে যেন মারামারি করছে
প্রচুর।বেশ কিছু মেয়ে গোলযোগের মাঝে
পড়ে মাঠে চিৎপটাং হচ্ছে।উফ!কি নোংড়া অবস্থা।
ভাগ্যিস স্যার আমাদের কয়জনকে একটা রুমে তালা
দিয়ে রেখেছেন।কিভাবে বাসায় যাব ভেবে
পাচ্ছিলাম না। যখন খুব টেনশন করছি তখনি একটা
আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসল।বিরক্তি
নিয়ে রিসিভ করলাম।ওপাশ থেকে একটা ছেলে
কন্ঠ ভেসে আসল
-তানিয়া বলছেন?আমি তপু।আপনি কি কলেজে?
আপনার আম্মু ফোন দিয়ে আপনার নাম্বারটা দিয়ে
বলল, আপনাকে যেন কলেজ থেকে নিয়ে যাই
আমি।
.
যদিও আমার খুশি হওয়ার কথা।তবু হলামনা।কারন উনি
তাহলে আমার নাম্বারটা সেভ করে রাখেনি কাল।
আজ মা নাম্বার দিয়েছে বলে কল দিল!
.
আমি বাইকের পিছনে বসে আছি।তপু সাহেব গাড়ি
চালাচ্ছেন।উনার পারফিউমের স্মেলটা খুব সুন্দর।
বাতাসে উনার চুলগুলো খাড়াভাবে উড়ছে।আমার
নিজের লম্বা লম্বা চুলগুলোও উড়তে উড়তে
উনার গাল ছুঁয়ে দিচ্ছিল।খুব ভাল লাগছিল সা সা
বাতাসের মধ্য দিয়ে বাইক ভ্রমনটা।খুব ইচ্ছে
হচ্ছে হাত দিয়ে উনার চুলগুলো একটা নেড়ে
দেই।ইচ্ছে হচ্ছে দু হাতে উনার কোমড় ধরে
আস্তে আস্তে উনার পিঠে মাথাটা ঠেকাই।কিন্তূ
সেই অধিকারতো আমার নেই।উফ!যদি সামনে
হঠাৎ একটা গাড়ি চলে আসত।আর উনি একটা সাডেন
ব্রেক মারত,তাহলে চরম হত।
.
ইদানিং ঘন ঘন রাতে লোডশেডিং হচ্ছে।উফ!এই
গরমে লোডশেডিং।সবারই জান ঝালপালা।আমার
অবশ্য তেমন খারাপ লাগেনা।কারেন্ট চলে
গেলেই বেল্কনিতে বসে গলা ছেড়ে গান গাই
আর মনটা ফ্রেশ হয়ে যায়।
.
উনার সাথে ইদানিং প্রায়ই বিকেলে ছাদে দেখা
হয়ে যায়।কিন্তূ মুখটা কেমন জানি ভার করেই
রাখে।এরকমতো না যে আমরা আগে কথা বলিনি।
তবুও কেন উনি এভাবে থাকে?
বুঝেছি নিজ থেকে কথা বলবেনা।আমাকেই
বলতে হবে।উনি রেলিং ধরে নীচে রাস্তার
দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি পিছন থেকে গিয়ে
এহেম এহেম কাশি দিয়ে বললাম
-নজর ঠিক করুন।রাস্তায় মেয়েদের দিকে তাকিয়ে
আছেন কেন?
-কই মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছি?আমিতো
এমনিতেই দাড়িয়ে আছি।
-ওহ।আচ্ছা আপনি জোভানকে চিনেন?
-নাতো।কে?আপনার বয়ফ্রেন্ড?
-হোয়াট?কি বললেন আপনি?ঐ আমি বলছি জোভান
আমার বি এফ?ব্যাকডেট ক্ষ্যাত কোথাকার?
জোভানকে চিনেনা এখনো।বলতে বলতে
রাগে ফুস ফুস করতে করতে ছাদ থেকে
নেমে
গেলাম।
.
দিন দিন খুবই হতাশ হচ্ছি।এই ছেলেটা কি আমার ফিলিংস
একটুও বোঝেনা?এত বোকা কেন ও?যখন
ট্যাংকিতে পানি থাকেনা তখনি কেবল আমাদের
ফ্ল্যাটে আসে মটার ছাড়ার জন্য বলতে।
আমিতো চাই ও প্রয়োজন অপ্রয়োজনে বার
বার আমাদের ফ্ল্যাটে আসুক।যাতে ওকে
দেখতে পারি।আমিতো মেয়ে মানুষ।বার বারকি
ওর ফ্ল্যাটে যেতে পারি?
.
ভালবাসার অনুভূতিগুলো এত বিচ্ছিরি কেন?ভালবাসার
মানুষকে দেখতে মন চায়।কথা বলতে মন চায়।
হাতে হাত রেখে আর পায়ে পা রেখে একসাথে
চলতে মন চায়।এইগুলো কি একতরফা হয় কখনো?
আমার অনুভূতিগুলো কি করে বোঝাব উনাকে?
.
রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় গান গাইছিলাম।হঠাৎই অনুভব
করলাম,সবকিছু কেমন জানি কাঁপছে।ও মাই গড!
ভূমিকম্প!তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে ওর্নাটা
কিসের মধ্যে যেন আটকে গেছে।ওর্না ছাড়াই
দৌড়ে নীচে নামতে থাকলাম।হঠাৎই কেউ একজন
পেছন থেকে হাত টেনে ধরল।পিছু ফিরে
দেখি তপু নীচের দিকে তাকিয়ে এক হাতে
ওর্নাটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে আছে।আমি
থমকে গেলাম।এটা সেই ওর্না না যেটা আমি আজ
পড়েছিলাম।তার মানে উনি আমাকে এভাবে
আসতে দেখে ঘর থেকে আরেকটা ওর্না
নিয়ে এসেছে?এত এত মানুষ সিঁড়ি বেয়ে
নামছে।সবার মাঝে ও আমাকেই কেন লক্ষ করল?
সবাই নীচে নেমে গেছে।কেবল আমরাই
সিঁড়িতে
দাড়িয়ে।থমকে গেলাম আমি।মনে হচ্ছে
আজকেই উপযুক্ত সময়।এই মুহুর্তে দুজনেরি
দুজনার প্রতি একটা পজিটিভ ফিলিংস আছে।সময়টাও
আমাদের পক্ষে।এখন যদি মনের কথাটা না বলি আর
কখনো বলতে পারবনা?
.
গভীর একটা আবেগ নিয়ে ওর মুখের খুব কাছে
গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
-ওর্না ছারা নীচে গেলে কি খুব বেশী
প্রবলেম হত?(দুষ্টুমির ছলে)
-নীচে অনেক মানুষ।প্রবলেম হত নাকি আপনি
বুঝেন না?
-এতকিছু যখন বুঝেন,ভালোবাসি যে সেটা বুঝেন
না?
এবার ও চোখ তোলে তাকাল আমার দিকে।এরকম
প্রশ্ন মনে হয় আশা করেনি আমার থেকে।
বিষ্মিত হয়ে বলল
_তুমিও?
-তুমিও মানে?
-আমিওতো
-তুমিও কি?(কখন যে আমরা নিজেদের অজান্তেই
তুমিতে নেমে এসেছি তা বোধ হয় নিজেরাও
জানিনা)
-ইয়ে মানে,ভাআআআআলোবাসি।
-বিশ্বাস করিনা।
-এই দেখ,তোমার দেয়া পঞ্চাশ টাকার নোট আর
নিজ হাতে লেখা নাম্বার বুক পকেটে নিয়ে ঘুরে
বেরাই।কতবার যে নাম্বারটা ডায়েল করেও ভয়ে
কেটে দিয়েছি।নিজে বি এল কাষ্টমার সার্ভিসে জব
করা সত্বেও,তোমার কাছে কাষ্টমার কেয়ারের
নাম্বার আনতে গিয়েছিলাম কেন বলতে পার?
ঐসময় তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল
বলে।
সেদিন কলেজে ঝামেলা দেখে বুকটা ধরফর
করে উঠেছিল।তুমি আমার ঐ হাঙ্গামার ভেতর
পড়নিতো?তাই তোমাকে সাথে করে নিয়ে
এসেছিলাম।
-কিন্তূ তুমি যে বলেছিলে মা ফোন দিয়েছিল।
-তোমার মাকে তুমি হাঙ্গামার কথা জানিয়েছিলে কিনা
সেটাতো তুমিই ভাল জান।বাট আমাকে কেউ
ফোন দেয়নি।
-ওহ মাই গড!মাকেতো আমি ঐ ঝামেলার কথা আজ
অব্দিও বলিনি।আসলে আমি তোমাকে আহাম্মক
ভাবতাম।কিন্তূ আমিতো নিজেই দেখছি বড়
আহাম্মক
_প্রতিদিন রাতে নীচে গিয়ে মেইনসুইচটা অফ
করে দিতাম কেন জানো?তোমার গলাটা শুনার
জন্য।
-হোয়াট!এত্তকিছু করেছ তুমি?আর আমি
কিনা তোমাকে ভালোবেসে এত্তটা কষ্ট
পেয়েছি এতদিন।
.
তপু একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার হাতটা ধরে বলল,চল
এবার নীচে যাওয়া যাক।জানতো একবার ঝাঁকুনির পর
আবার ঝাঁকুনি হতে পারে।কথাটা ও দুষ্টুমির ছলে
বলল।আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর সাথে সিঁড়ি
বেয়ে নীচে নামছি।আমার ইচ্ছেটা পূরন
হচ্ছে।ভালবাসার মানুষের হাতে হাত রেখে আর
পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটার ইচ্ছেটা...........

No comments:

Post a Comment