Friday, September 2, 2016

অনুভবে স্পর্শময়!

অনুভবে স্পর্শময়!

-(পাবনার অদ্ভুত ছেলে)
.
প্রতিদিনের মতোই প্রভাতে ব্যায়াম করার
জন্য বাসা বের হয়েছি। জিমনাস্টিক
ক্লাবের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। কিন্তু
বাসা থেকে বের হয়ে, এলাকার মামার
দোকানে চা খাওয়ার জন্য বসেছি। হঠাৎ
চোখ গিয়ে পড়ল মামার দোকানের সামনেই
একটা সাদা রং করা বিল্ডিং এ। দ্বিতীয়
তলায় একটা অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে দাড়িয়ে
আছে। আর আমার দিকে অপলোক দৃষ্টিতে
তাঁকিয়ে আছে। আমি স্তব্ধ এবং বিস্মিত
হয়ে সেই অসম্ভব সুন্দর মেয়েটির দিকে
তাঁকিয়ে আছি। আচমকা মামা চা দিয়ে
বলল, চা নাও। আর দৃষ্টিকটু হয়ে পড়ি।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটিও বারান্দা ছেঁড়ে রুমে
চলে গেল। আমিও চা' খেয়ে জিমনাস্টিক
ক্লাবের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। সেই মুহূর্ত
থেকে শুধু সেই মেয়েটার প্রতিচ্ছবি আমার
অন্তরালে ভেসে উঠছিল সব কেমন যানি,
অন্যরকম লাগছিল। ভালোবাসার অর্থেই
নদীর স্রোত ঢেড তুলছে বোধ হয়। শুধুই
মেয়েটার চিন্তায় মগ্নচৈতন্য হয়ে পড়েছি।
জিমনাস্টিক ক্লাবে এসেও কোন কিছু
প্রতি মনোসংযোগ করতে পারছি না।
মাষ্টার দেখে দেখে বলল, কি ব্যবপার কোন
সমস্যা, আজ তোমায় খুব চিন্তিত মনে
হচ্ছে? না তেমন কিছু না। অতপর মাষ্টার
চলে গেল। আজ আর ব্যায়াম করা হলো না।
এজন্য জিমনাস্টিক ক্লাব থেকে বের হয়ে
চলে আসলাম।
.
এখন প্রায় প্রতিদিনই প্রভাতে মামার
চা'য়ের দোকানে এসে চা' খাওয়ার ভান
ধরে মেয়েটির বাসার বারান্দার দিকে
তাঁকিয়ে থাকি। মনের মধ্য অফুরন্ত
ভালোবাসার ধ্বনি ভেসে উঠে। কিন্তু
সেদিন খুবই আশ্চর্য্য হয়েছিলাম। মেয়েটি
আমাকে দেখে সানগ্লাস পড়ে রুমের মধ্য
চলে গেল। সেদিন খুবই আশ্চর্য্য হয়েছিলাম।
আমাকে দেখেও এভাবে অতিক্রম করে চলে
গেল। দেখেও না দেখার ভান করল। সেদিন
খুব চিন্তাতরঙ্গ হয়ে পড়েছিলাম। রাস্তার
পাশ দিয়ে ফাহিম যাচ্ছিল। এজন্য ডাক
দিলাম।
-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
-ওলাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস ফাহিম?
-ভাল ভাইয়া। আপনি?
-ভাল। আচ্ছা তোদের এ্যাপারমেন্ট এ
দ্বিতীয় তলায় কারা উঠেছে রে?
-এটা ঠিক বলতে পারছি না। বাবা যানে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। যেতে পারিস।
-আচ্ছা ভাইয়া আসি।
.
একদিন ফাহিমদের এ্যাপারমেন্ট এ গিয়ে
সেই মেয়েটার বাসার দরজায় নক করলাম।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে নক করছিলাম কিন্তু কোন
সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না। এজন্য চলে
আসছিলাম ঠিক সেই মুহূর্তে মেয়েটি পিছ
থেকে বলল শুনুন। আমি পিছ ফিরে তাঁকিয়ে
দেখি মেয়েটি সাদা রংয়ের থ্রী পিছ পড়ে
এবং চোখে কালো চশমা। দেখে অসম্ভব
ভাল লাগছিল কিন্তু আমি আশ্চর্য্য
হয়েছিলাম রুমের মধ্য কালো চশমা পড়া
দেখে। যাইহোক কথা না বাড়িয়ে মেয়েটি
বলল ভিতরে এসে বসুন।
-ধন্যবাদ
-আচ্ছা আপনি কার কাছে এসেছেন?
-জ্বি আপনার কাছে। আচ্ছা আপনার মা-
বাবা কোথায়?
-আমি কী আপনাকে চিনি? আর আম্মু-আব্বু
অফিসে গিয়েছে ফিরে আসার সময়ও হয়ে
এসেছে।
-আপনি আমাকে নাও চিনতে পারেন কিন্তু
আমি আপনাকে প্রায় মাস ধরে অনুসরণ
করছি।
-কিন্তু কেন?
-আপনাকে আমার অসম্ভব ভাল লাগে।
(মেয়েটি আমার এ কথা শুনে আট্টহাঁসি
দিল, আমি এমন হাঁসি দিতে কাউকে
দেখিনি)
-আপনি তা খুবই মজার মানুষ! যাইহোক।
-আচ্ছা আজ আসি।
-ঠিক আছে। সময় করে পড়ে আবার আসবেন
কিন্তু।
-অবশ্যই।
.
মেয়েটার কণ্ঠসর এবং কথা বলার ধরণ।
আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। আমি মেয়েটাকে
অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। আমি বড্ড
বোকা! কারণ মেয়েটার নামটাও যানা
হয়নি। এবং অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেল।
আমি কখনোই পূর্ণতা অর্জন করতে পারিনি
শুধু অপূর্ণই রয়ে গেল। এবার চিন্তা ভাবনা
করলাম আগামী শুক্রবার মেয়েটির বাসায়
যাব। এজন্য সেই পরিকল্পনা করছিলাম কী
নিয়ে যাওয়া যায়। হঠাৎ মনে হলো
মেয়েরা মেয়েরা বই খুবই পছন্দ করে। এজন্য
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের "রোমিও জুলিয়েট"
বই এবং কিছু চকলেট নিলাম। এবার যাওয়ার
জন্য প্রস্তুত হলাম। বাসা থেকে বের হয়ে
এ্যাপারমেন্টের উদ্দেশ্য বের হলাম। সেই
মেয়েটার রুমে সামনে গিয়ে নক করলাম।
কিন্তু সাথে সাথে দরজা খুলে দিল
মেয়েটা আর সেই সাথে আমাকে বলল কেমন
আছেন? ভাল। কিন্তু আপনি বুঝলেন কী করে
দরজার ওপাশ থেকে যে আমি। অন্য কেউও
তো হতে পারত। আমি উপলব্ধি করেছিলাম
আপনিই হবেন। রুমের ভিতর থেকে কণ্ঠসর
ভেসে আসল! সাদিয়া কার সঙ্গে কথা বলছ।
আম্মু অদ্ভুত একটা মানুষের সঙ্গে। এরপর ওর
আম্মু-আব্বু বের হয়ে আসল। আমাকে
জিজ্ঞেস করল।
-তুমি কে বাবা?
-আঙ্কেল পাশেই আমাদের বাসা।
-অহ আচ্ছা ভিতরে আসো। বাহিরে
দাড়িয়ে আছো কেন।
-আচ্ছা!
-আম্মু এর আগেও একদিন আসছিল। (সাদিয়া
বলল)
-আচ্ছা! সাদিয়া তুমি রুমের মধ্য কালো
চশমা পড়ে থাকো কেন তোমাকে চশমা
ছাড়ায় অনেক ভাল লাগে। (কথাটা বলার
সঙ্গেই চশমা খুলে ফেলল)
-সাদিয়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি! (সাদিয়ার বাবা
বলল)
আমি শুনে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলাম। এছাড়াও
সাদিয়া কে দেখে মনে হয় না। সে
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি!!! যত যায় হোক না কেন।
আমি সাদিয়া কে ভালোবেসে ফেলেছি।
চাইলেও পিছিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
-সাদিয়া তোমার জন্য বই আর কিছু চকলেট
নিয়ে আসছি।
-হ্যাঁ সেটা বুঝতে পেরেছি।
-কীভাবে?
-ঘ্রাণ এর মাধ্যমে! চকলেট অনছ বুঝতে
পারছি। আর আমি বই নিতে পারব না।
দুঃখিত। তোমার দেওয়া বই আমি কখনোই
পড়তে পারব না।
-তুমি এতো চিন্তা করো না। আমি
তোমাকে বই পড়ে শুনাব।
আঙ্গেল আমি সাদিয়া কে দেখা শোনার
দায়িত্ব নিতে চাই। ঠিক আছে বাবা।
যেটা তুমি ভাল মনে করো। আচ্ছা সাদিয়া
কে নিয়ে আমি বাহিরে যাচ্ছি।
-আপনি আমার জন্য এতো কিছু করছেন কেন?
-তোমাকে ভালোবাসি। প্রতিটা মুহূর্ত
তোমাকে নিজের করে রাখতে চাই। তুমি
কী থাকবে না প্রতিটা মুহূর্ত আমার সাথে
কাটিয়ে দিতে?
-আমার মনে হয়। আপনার সাথে আমার যায়
না। কারণ আপনি খুবই ভাল মানুষ।
-তোমার এসব মনে হচ্ছে কেন?
-আমি দেখতে পায় না।
-তাতে কী হয়েছে? তৃমি আমার চোখ দিয়ে
দেখবে।
-আমার মনে হয় আপনি খুব ভুল করছেন।
আপনার বিশেষভাবে চিন্তা করার
প্রয়োজন বোধ করছি।
-আমি অনেক আগেই তোমাকে নিয়ে ভেবে
রেখেছি। ভালোবাসা শুধুই অনুভব করতে হয়।
এবং তোমাকে প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করি
এবং তুমি মিশে আছো অন্তরস্থলে। এবার
তুমিই বলো আমার কী আর বিশেষভাবে
চিন্তা করার প্রয়োজন আছে?
-আপনি সত্যিই আমাকে এতোটা
ভালোবাসেন! আমি সত্যিই ভাবতে পারছি
না। আমার মনের গহীন কোণে আপনার
মতোই একজনের স্বপ্নবৎ করে আসছিলাম।
আজ আমার খুবই আনন্দের দিন। আজকের
দিনের অপেক্ষা এতোদিন যাবত করে
আসছিলাম।
-আমি কী তোমার স্বপ্নের রাজকুমার?
-অবশ্যই! আচ্ছা তোমাকে একটা অনুরোধ
করব, রাখবে?
-কী কথা বলো?
-তুমি আমাকে কখনো ছেঁড়ে চলে যাবে না!
বলো? কথা দাও...
-তোমাকে কখনো ছেঁড়ে যাব না এবং
প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে চক্ষুকর্ণ করে
রাখব। কখনো আড়াল হতে দেব না।
-তুমি অল্পতেই আমার অন্তরস্থলে জায়গা
অর্জন করে নিয়েছ। প্রতিটা মুহূর্ত
তোমাকে পেতে চাই, আমার মন...!
ভালোবাসা অন্ধ! প্রতিটা ক্ষেত্রে!
প্রতিটা মুহূর্তেই!
ভালোবাসা স্পর্শ করার জন্য নয়! শুধুই
অনুভবে মিশে থাকে ভালোবাসার
মানুষের হৃদয়ের স্পর্শ।

No comments:

Post a Comment