Friday, September 23, 2016

""রাগের পাহাড়""

""রাগের পাহাড়""
.
লেখকঃ (অনিকেত প্রান্তর)
.
.
"রাস্তায় কোন মেয়ের সাথে মাখামাখি
করে আসছ বলো?"
একপ্রকার চিৎকার করেই কথা গুলো
বললো সোহানা।
.
প্রতিদিন কার মতো অফিস করে ক্লান্ত
শরীর নিয়ে বাজার থেকে সোহানার
প্রিয় ইলিশ মাছ নিয়ে বাসায় ফিরতেই।
সোহানা প্রতিদিনকার রুটিন মাফিক
আমার গায়ে থেকে ব্লেজার খুলে
দিচ্ছিল। আর তখনি বাধলো বিপত্তি।
আমার ব্লেজার খুলতে এসে আমার
শার্টের বোতামের সাথে কয়েকটা
মেয়েলী সোনালী চুল আবিষ্কার করে।
চুল গুলো হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ বড় বড়
করে আমার দিকে তাকিয়ে উপরের কথা
টি বললো..
.
"রাস্তায় কোন মেয়ের সাথে মাখামাখি
করে আসছ?"
.
চুল টা দেখে আমি নিজেও কিছুটা
ঘাবড়ে গেছি, এই চুল কোথায় থেকে
আসলো।
আমার মুখ দিয়েও কোন শব্দ বের হচ্ছেনা
একদৃষ্টিতে ভিতু মুখে সোহানার দিকে
তাকিয়ে আছি। সোহানা আবার বললো..
.
"কি বলেছি কানে যায়না? "
.
আমি একপ্রকার আমানতা আমানতা করে
জবাব দিলাম।
.
"মনে হয় রাস্তায় ধুলোবালির সাথে উড়ে
এসে বোতামের সাথে জড়িয়ে গেছে"।
.
"রাস্তায় ধুলোবালির সাথে চুল উড়ে এসে
তোমায় গায়ের উপরে এসে পড়লো? তাও
আবার বোতামের সাথে জড়িয়ে গেলো।
কেন রাস্তায় কি তুমি ছাড়া দ্বিতীয়
কোন মানুষ ছিলোনা? "
.
"আমি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে
আছি। এই মেয়েটা রেগে গেলে তার
উপড়ে কথা বলার দূর সাহস আমার নেই।
এই মেয়েটা এমনিতে খুব শান্ত কিন্তু
রেগে গেলে হাতের কাছে যেটা পাবে
সেটা ছুড়ে মারতে দ্বিধা করেনা। ভেবে
দেখলাম চুপ করে থাকাটা সোহানার
রাগের মাত্রা টা আরও বাড়িয়ে দিবে।
তাই মিনমিনে শুরে বললাম!
.
"বাসে ঠেলাঠেলি করে উঠতে যেয়ে
মনে হয় কোন মেয়ের সাথে ধাক্কা
লেগে চুল জড়িয়ে গেছে। আর এখন ঢাকার
শহুরের যে অবস্তা বাসে উঠতে যেয়ে কে
ছেলে কে মেয়ে কিছুই বুঝা যায়না।"
.
সোহানার দিকে তাকাতেই দেখি। দাত
কিড়মিড় করে ব্লেজার টা হাতে নিয়ে
ছেড়ার চেষ্টা করছে। আমি সোহানার
দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো
ভয়ে চুপসে গেলাম। সোহানা প্রায়
চিৎকার করে বললো!
.
"ছিঃ! বাসের মেয়েদের সাথে মাখা....
.
কথা টা শেষ না করেই ব্লেজার টা
আমার মুখের উপড়ে ছুড়ে মেড়ে রাগে
দাত কিড়মিড় করতে করতে বেড রুমের
দিকে হন হন করে চলে যায়। আমি বাকা
চোখে সোহানার গমন পথের দিকে
তাকিয়ে রইলাম। আমি একপা দুপা করে
ড্রইং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখতে
লাগলাম।
ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত নয়টা
বাজে। পেটের ভিতরের ক্ষুধার রাক্ষস
জানান দিচ্ছিল। পেটে পর্যাপ্ত পরিমান
খাবারের প্রয়োজন।
ভাবছি একবার গিয়ে কি দেখে আসবো
সোহানা কি করে। ভাবতে ভাবতে পা
টিপে টিপে বেড রুমে প্রবেশ করলাম।
দেখি সোহানা ঘুমিয়ে আছে, ডাকবো
কিনা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেলাম। মনের
ভিতরে সাহস সঞ্চয় করে বললাম..
.
"সোহানা কি ঘুমিয়ে পড়েছ? "
.
সোহানার কোন সারা শব্দ নেই। আগের
মতো গাপটি মেড়ে আছে।
.
"সোহানা আমার খুব খুধা লেগেছে। আজ
বাজার থেকে তোমার প্রিয় ইলিশ মাছ
নিয়ে এসেছি। সেটা কিন্তু নষ্ট হয়ে
যাচ্ছে।"
.
সোহানা আস্তে করে চোখ খুলে আমার
দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। চোখ
দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। আমি আর
কিছু বলার সাহস পেলাম না আস্তে করে
সামনে থেকে সরে আসলাম। পেটের
ভিতরের দানব গুলা যেন আর বাধা
মানছে না। ফ্রিজ খুলে পাউরুটি আর কলা
দেখতে পেলাম। পেট কে শান্তি দেবার
জন্য দুটা পাউরুটি আর দুটা কলা খেলাম।
খুধা রাক্ষস এবার একটু বিশ্রাম নিয়েছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দশটা
বেজে গেছে। আরেক বার সোহানা কে
দেখার জন্য রুমে প্রবেশ করলাম। দেখি
সোহানা আগের মতো চোখ বন্ধ করে শুয়ে
আছে। আমি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে
বললে শুরু করলাম..
.
"কেউ আমাকে ভালবাসে না। কেউ
আমাকে বিশ্বাস করেনা, আমি যে তাকে
কতো ভালবাসি সেটা কেউ বোঝেনা।
সে কি জানে তার জংলী বিল্লির মতো
চোখ কে আমি কতো ভয় পাই।"
.
কথা টা বলে দিলাম জিব্বায় কামড়। এই
রে আগুনের ভিতর ঘি ঢেলে দিলাম
বাসায় আজ নিশ্চিত আগুন লাগিয়ে
দিবে। ভয়ে ভয়ে সোহানার দিকে
তাকিয়ে দেখি সোহানা অগ্নিমূর্তি রূপ
ধারণ করে জংলী বিল্লির মতো বড় বড়
চোখ করে তাকিয়ে আছে। সোহানার
চোখের দিকে তাকিয়ে আমার জীবনের
ভয়াবহ বাসরশয্যা রাতের কথা মনে পড়ে
গেল। বাসরঘরের দরজার সামনে বন্ধু দের
সাথে টানা টানিতে বাসরঘরে প্রবেশ
করতে দেরী হয়ে যায়। বাসরঘরে প্রবেশ
করে দেখি লাল লম্বা একটা ঘোমটা
টেনে একটা মেয়ে বসে আছে। বন্ধুরা
শিখিয়ে দিয়েছে বাসরঘরে প্রবেশ করে
আগে বউ এর সামনে যেয়ে দাঁড়াবি। বউ
নাকি পায়ে সালান করতে আসবে আর
অমনি বউ রে হাত ধরে বলতে হবে তোমার
স্থান আমার পায়ে নয় আমার বুকে। কিন্তু
এই মেয়ের তো দেখছি খাট থেকে নামার
নাম গন্ধ নেই। আমি ভয়ে ভয়ে মেয়েটার
পাশে বসে একটা কাশি দিলাম। কিন্তু
মেয়েটা আগের মতো চুপ করে বসে আছে।
আমি বুকে সাহস সঞ্চয় করে কাপা কাপা
হাতে ঘোমটা শরাতেই চিৎকার দিয়ে
তিন হাত পিছিয়ে গেলাম। কারণ
মেয়েটা চোখের পাতা উল্টিয়ে জংলী
বিল্লির মতো করে রেখেছে। আমি
আবার চিৎকার করতে যেয়ে আর পালাম
না একটা নরম হাত আমার মুখটা ছেপে
ধরেছে। তাকিয়ে দেখি মেয়েটি রেগে
মুখ লাল করে আছে। মেয়েটার রাগী
মুখটার দিকে তাকিয়ে স্বপনের রাজ্যে
পাড়ি জমালাম। রাগলে একটা মেয়েকে
এতো সুন্দর লাগে জানা ছিল না। মুখ
থেকে হাত টা সরিয়ে বললো..
.
"আসতে এতো দেরী হলো কেন?
গার্লফেন্ডের সাথে ফোনে কথা শেষ
করে আসলে নাকি?
.
"না মানে, বন্ধুদের বিদয় দিয়ে আসতে
দেরী হয়ে গেলো। "
.
"তাহলে বন্ধুদের সাথে থাকতে এখানে
কি?
.
আমি কিছু না বলে চুপ করে নিচের দিকে
তাকিয়ে আছি। মেয়েটা আমার হাতে
একটা হাত পাখা দিয়ে বললো..
.
"এই নাও হাত পাখা আজ সারারাত এটা
দিয়ে আমাকে বাতাস করবা, এটা
তোমার দেরী করে আসার শাস্তি। "
.
"কেন হাত পাখা কেন? আর তাছাড়া তো
কারেন্ট আছে। হাত পাখার কি
প্রয়োজন? "
.
"আমি বলেছি তাই।"
.
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখি। আগের
সেই ভয়াল রূপ ধারণ করে আছে। আমি আর
কিছু বলার সাহস পেলাম না, আমি হাত
পাখা টা হাতে নিয়ে দেখছিলাম।
মেয়েটা আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে
বললো..
.
"কি বাতাস করতে বলেছিনা?"
.
আমি আর কিছু না বলে হাত পাখা দিয়ে
বাতাস করতে থাকি। মেয়েটা একটু পর
ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়। মেয়েটার
দিকে চোখ পরতেই অবাক হয়ে গেলাম।
ঘুমন্ত মেয়েটাকে একদম সর্গের মায়াবী
অপ্সরীর মতো লাগছে। মেয়েটা কে
দেখে এখন কেউ বলতে পারবেনা এই
মেয়েটা একটু আগে রেগে আগুন হয়েছিল।
মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই
খেয়াল করলাম ঠোটের কণে হাসির
ঝিলিক লেগে আছে, মেয়েটা আর কেউ
নয় আমার সোহানা।
কাচ ভাঙার শব্দে ভাবনার ছেদ পরলো..
.
দেখি আমার সামনে একটা কাচের গ্লাস
ভেঙে টুকরাটাকরা হয়ে আছে। আর
সোহানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে
ফোঁসফোঁস করছে। আমি কিছু না বলে
চুপচাপ কাচ গুলো পরিষ্কার করতে
লাগলাম। কাচ গুলো ফেলে দিয়ে
সোহানার প্রিয় ইলিশ মাছ ফ্রিজে
ঠুকিয়ে রেখে রুমে ফিরে এসে দেখি
সোহানা শুয়ে আছে। আমি লাইট টা বন্ধ
করে দিয়ে সোহানার পাশে শুয়ে
পড়লাম। সোহানা আমার বিপরীত দিকে
মুখ করে শুয়ে আছে। আমি আর কথা বলার
চেষ্টা করলাম না। ছাদের দিকে মুখ
কিরে শুয়ে আছি। ভিতরটা খুব ছটফট
করছে কিছুতে ঘুম আসছে না। ঘরিতে টং
টং শব্দ করে জানান দিলো বারোটা
বাজে। সোহানা মনে হয় ঘুমিয়ে পরেছে,
আস্তে করে আমার ডান হাতটা
সোহানার কোমরের উপড়ে রাখলাম। আর
সাথের সাত সোহানা ঝামটা মেড়ে
আমার হাতটা সরিয়ে দিল। আমি অসহায়
এর মতো হাতটা গুটিয়ে নিলাম।
তারমানে সোহানা ঘুমায়নি, একটু পর
সোহানার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ
পেলাম। আমি কোন কিছু বোঝে উঠার
আগেই সোহানা লাফ দিয়ে এসে আমার
টি-শার্টের কলার চেপে ধরে ঝাঁকাতে
ঝাঁকাতে বললো..
.
"এখনো সময় আছে বললো বলছি। কোন
মেয়ের সাথে মাখামাখি করে এসেছ?"
.
আমি অসহায় দৃষ্টিতে সোহানার মুখের
দিকে তাকিয়ে আছি। আমি কি বলবো
ভেবে পাচ্ছিনা, কারণ আমি নিজেই তো
জানিনা এই চুল কোথায় থেকে আসলো।
সোহানা আমার অসহায় মুখের দিকে
তাকিয়ে বললো..
.
"তুমি শুধু আমার, শুধু আমার। অন্য কোন
মেয়ের দিকে তাকিয়েছ তো তোমাকে
খুন করে আমি নিজেও মরে যাব।"
.
"বিশ্বাস করো সোহা...."
.
কথা টা শেষ করতে পারলাম না। একটা
উষ্ণ ঠোটের ছোঁয়ার আবেশে নিজে কে
বিলিয়ে দিলাম। যেটার মায়া অবহেলা
করার মতো শক্তি এই অধমের নেই।

No comments:

Post a Comment