Friday, September 9, 2016

ভালবাসার পরিপূর্নতা

-বাবু কাঁদছে কেন?(আমি)
-আমি কি করে বলব।(মায়া)
-তুমি বলবে না তো কে বলবে?
-আজিব বাবু কাঁদল কি হাসল আমাকে বলে
করবে
নাকি?
-কি হয়েছে তোমার মায়া এভাবে কথা বলছ
কেন?
-কিছু হয়নি।আমি তো ঠিকভাবেই কথা
বলছি।
-না তুমি ঠিকভাবে কথা বলছ না।
-তোমার যদি মনে হয় না তাহলে না।
-মায়া আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে
বল?
-বললাম তো কিছু হইনি।
-বাবুকে বকেছ কেন তাহলে?
-ইচ্ছে হয়েছে বলে এতটুকু বাচ্চাকে বকতে
হবে।
-হ্যা বকেছি বেশ করেছি আরও বকা দিব।
-মায়া তুমি এমন করছ কেন?
-এমন করছি কেন তুমি জাননা?
-জানি কিন্তু তাই বলে এই নয় যে তুমি এতটা
শাষন করবে বাচ্চাটা কেঁদে ফেলবে।
-কাঁদছে কাঁদুক দরকার হলে আরও বকব।
-ঠাশ...। পাগল হয়ে গেছ তুমি?
-হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি।তুমি জাননা ও
অসুস্থ ও কেন হাজারবার মানা করা সত্বেও
আইসক্রিম খাবে?
-ও তো বাচ্চা মেয়ে ভুল করতেই পারে।
-নাহ ও ভুল করবেনা।(কেঁদে কেঁদে)
-তুমি বুঝিয়ে কেন বলনি?
-অনেক বুঝিয়েছি ও বুঝবে না।
-যাও ওকে নিয়ে এস।
-পারব না।
-যেতে বলেছি তোমাকে।
যাবনা।ও কেন বোঝেনা ওর কিছু হয়ে গেলে
আমি
বাঁচবনা।ও প্রতিবার আইসক্রিম খাবে আর
অসুস্থ
হয়ে পড়বে।আমার দুশ্চিন্তা হয় ও বোঝেনা।
-ও তো অবুঝ।ও যদি ভাল মন্দ বুঝত তাহলে
কি এমন
করত।
-ও সব বোঝে।এবং বুঝে শুনে আমাকে কষ্ট
দেয়।
-দেখ সামান্য একটু আইসক্রিম তো খেয়েছে
তাছাড়া ও তো এখন পুরোপুরি সুস্থ তাহলে
এত
রাগ করছ কেন?
-তুমি এ কথা বলছ।তুমি জান না ডাক্তার কি
বলেছে?
-হ্যা জানি তার মানে এই নয় যে বাচ্চা
মেয়েটাকে বকতে হবে।
-ও কেন করে এমন বলতো।(কাঁদতে কাঁদতে
বুকে
মাথা রাখল)
-আরে পাগলী ও করবে না তো কে করবে ভুল
শুনি?একটাই তো বাবু আমাদের।
-তাই বলে বুঝবেনা ও অসুস্থ হলে ওর মায়ের
কত
কষ্ট হয়।
-বোঝেতো।দেখ না কত ভালবাসে
তোমাকে।
-ও কেন কাঁদায় আমাকে।
-এই পাগলী আর কাঁদতে হবেনা।যাও দেখ
আব্বুর
কাছে বসে কেমন নালিশ করে কাঁদছে।
-দুষ্টু মেয়েটা আব্বুকে সব বলেছে না?
-হুম আমাকেও বলেছে।
-খুব দুষ্টু হয়ে গেছে দাড়াও আমি যাচ্ছি।
-হুম দেখ অভিমান করেছে।
.
আমি শুভ্র।আর এই হল মায়া আমার স্ত্রী।ঁ
পাচবছর হল আমরা বিয়ে করেছি।আব্বু
আম্মুর
পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেছি।আমাদের
ছোট্ট
একটা সুখী পরিবার।আব্বু,আম্মু,আমি, মায়া
আর
আমাদের আদরের পুচকি মেয়েটা তুলি।
ভীষন দুষ্টু
একটা মেয়ে সারাদিন দৌড়া দৌড়ি,পাকা
পাকা
কথা বলা,কেউ কিছু বললে মুখ ভার করে বসে
থাকা,নিষেধ করা সত্বেও আইসক্রিম
খাওয়া
এগুলো হল পুচকিটার স্বভাব।অফিসে
যাওয়ার সময়
প্রতিদিন গলা জড়িয়ে ধরে বায়না ধরবে
আব্বু
আমিও অফিস যাব।বহু কষ্টে ভুলিয়ে রেখে
যেতে
হয়।
আজ সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরেছি।দৌড়ে
এসে
আমার গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে
নালিশ
করছে,
-আব্বু জানো আম্মু না আজকে আমাকে
অনেকগুলো
বকা দিয়েছে।
-কেন আম্মু?
-আইসক্রিম খেয়েছি বলে।
-আইসক্রিম পেলে কোথায়?
-বিকালে দাদার সাথে বাইরে গিয়ে
খেয়েছি,বাসায় এসে আম্মুকে বললে খুব
বকেছে।
আম্মু অনেক পঁচা,তুমি আম্মুকে বকে দাওনা
আব্বু।
-হুম বকব কিন্তু তোমাকে তো আইসক্রিম
খেতে
মানা করেছে আম্মু।
-সে জন্য তো কম খেয়েছি আব্বু।
-আচ্ছা চল দেখি তোমার আম্মুকে বকে দেই।
-না আমি যাব না পঁচা আম্মুর কাছে।(বলেই
কাঁদতে শুরু করল)
আমি জানি মায়া কেন বকেছে ওকে।তুলি
যখন
আরও ছোট ছিল তখন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে
পড়েছিল।
অবশ্য পরে সুস্থ হয়েছিল কিন্তু মাঝে
মাঝে
রাতের বেলা জ্বর আসত।ডাক্তার বলেছে
একেবারে যেন ঠান্ডা না লাগে আইসক্রিম
তো
খাবেই না।কিন্তু এই পুচকিটা মানা করা
সত্বেও
আইসক্রিম খাবে।মায়া প্রতিবারই বকা
দিয়ে
নিজে লুকিয়ে কাঁদে।তুলি যখন অসুস্থ হয়ে
পড়েছিল ভীষন কান্না করত মায়া
সারাদিন
আল্লাহ ডাকে যেন মেয়েটার সমস্ত
অসুস্থতা
সেরে যায়।এখন অবশ্য অনেকটাই ভাল তবুও
সাবধান থাকে।এজন্য আইসক্রিম খেতে
দেয়না।
তবে আজকে একটু বেশি বকা দিয়েছে এজন্য
আব্বু,আম্মুর কাছে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে
আছে।
.
রাতে খেতে বসেছি।তুলি আজ আমার
হাতে
খাবে।ওর আম্মুর হাতে খাবেনা,কথাও
বলবেনা।
একটু আগে মায়া আব্বুর রুমে গিয়েছিল
তুলিকে
আনতে কিন্তু আসেনি কথাও বলেনি।ভীষন
রেগে
আছে মেয়েটি।এ দিকে মায়া চোখের
পানি
ঝরিয়েই যাচ্ছে।কথা বলবেই না।
.
রুমে এসে শুয়ে পড়েছি।তুলি আমাকে
জড়িয়ে ধরে
আমার দিকে মুখ রেখে শুয়ে আছে। মায়া
ডাকছে
তবুও কথা বলবে না।মায়া কান্না শুরু
করেছে।
-বাবু আম্মু কাঁদছে তো একটু কথা বল।(আমি)
-না বলব না।(তুলি)
-কেন বলবেনা?
-আম্মু আমাকে বকল কেন?
-বাবু আম্মু কষ্ট পেয়েছে বলেই তো একটু
বকল,তোমার আম্মু তো তোমাকে অনেক
আদর
করে।
-আম্মু কেন কষ্ট পেয়েছে?
-তুমি আইসক্রিম খেয়েছ বলে।
-আইসক্রিম খেলে আম্মু কষ্ট পাবে কেন?
-আইসক্রিম খেলে তোমার ঠান্ডা লাগলে
আম্মুর
খুব কষ্ট হয় তাই।
-কেন কষ্ট হয়?
-আম্মু তোমাকে অনেক ভালবাসে তাই।
-আম্মু আমাকে একটুও ভালবাসেনা।
-অনেক ভালবাসে,দেখনা তোমাকে বকেছে
বলে
কেমন কাঁদছে।যাও আম্মুকে আদর কর।
এবার পুচকিটা আমাকে ছেড়ে ওর আম্মুর
গলা
জড়িয়ে ধরে আদর করছে।
-আম্মু তুমি কেঁদনা দেখ আমি তোমাকে
আদর
করছি।
-আম্মুর চোখের পানি মুছিয়ে দাও।
-আমি আর আইসক্রিম খাব না আম্মু তুমি
কেঁদনা।
(চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছে)
-তুমি আমার উপর রেগে আছ আম্মু?(মায়া)
-না তো।আমি তো তোমাকে খুব ভালবাসি।
-তাহলে আজকে আমার হাতে খেলে না
কেন?
-তুমি বকা দিয়েছিলে বলে।
-আমি আর কখনও তোমাকে বকবনা আম্মু।
আমি
তোমাকে খুব ভালবাসি।
-আমিও।
পুচকি মেয়েটা এখন ঘুমিয়ে গেছে।আমার
আর
মায়ার দুটো হাত ওর গায়ের ওপর রেখে
ঘুমিয়েছে।আমাদের ঘুমন্ত পরীটার দিকে
তাকিয়ে আছি দুজন।এভাবেই আগলে রাখব
ওকে।
আমাদের জীবনে ওই তো এনেছে
পরিপূর্নতা।।।

No comments:

Post a Comment