Monday, July 10, 2017

গল্পঃ প্রপোজ

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,গল্পঃ #প্রপোজ
.
সুইট আজ অনেক খুশি কারণ আজ বর্ষা সুইটের প্রপোজ গ্রহণ করেছে। সুইটের খুশি যেনো কিছুতেই থামছে না,পুরা পৃথিবীটা যেনো তার কাছে রঙ্গিন লাগছে।যে দিকেই তার দৃষ্টি যাচ্ছে সেদিকেই সে বর্ষার সেই গালে টোল পড়া বাকা করে ঠোটে ঠোট কামড়ে ধরা লজ্জাময়ী চেহারা দেখতে পাচ্ছে। যে দিকেই কান যাচ্ছে সেদিকেই সেই রাজী হওয়ার কথাটা শুনতে পাচ্ছে। সুইট খুশিতে মনে মনে প্ল্যানও করছে বাসায় গিয়ে সে লুঙ্গি ড্যান্স, হাফ প্যান্ট ড্যান্স, ফুল প্যান্ট ড্যান্স, টাউজার ড্যান্স, শার্ট,টি-শার্ট, ব্লেজার,টাই সব ড্যান্সই দেবে। কারণ বর্ষা সুইটের ৩২ বার প্রপোজ রিজেক্ট করার পর আজ ৩৩ তম প্রপোজ গ্রহণ করেছে। এই ৩২ বারে সুইট কদম ফুল,গোলাপ ফুল, বেলী ফুল,চকোলেট, এমনকি শাপলা ফুল দিয়েও প্রপোজ করেছে কিন্তু বর্ষা প্রতিবারি তাকে হতাশ করেছে।
.
সুইটের সাথে বর্ষার পরিচয় ভার্সিটি লাইফে। তারা প্রথম যেদিন ভার্সিটিতে যায় সেই দিনি তারা ভার্সিটির বড় ভাইদের কাছে র্য্যাগিং এর শিকার হয়। তাদের র্য্যাগিং নির্ধারণ করা হয় একে-অন্যের কান ধরে টানা। সুইট তো সেই খুশি, এমন একটা সুন্দরী মেয়ের সে কান ধরে টানবে তাও আবার প্রথম দিনি ভাবতেই যেনো কেমন লাগছে তার,অন্যদিকে বর্ষা যে তার কানও ধরে টানবে সেইদিকে সুইটের কোনো ভ্রুক্ষেপই নাই। যখন তারা একে-অন্যের কান ধরে টানবে ঠিক তার আগে সুইট বড় ভাইদের উদ্দেশ্য করে বলে ভাইয়া এতো সুন্দর দৃশ্য তাও ক্যামেরা বন্দি করছেন না। সুইটের কথায় বর্ষা পুরাই রেগে ফুলে উঠে কিন্তু ততোক্ষনে কাজ হয়ে গেছে। পরেরদিন সেই ছবি সবার কাছে যায় আর সবাই তাদের নিয়ে মজা করে। বর্ষা রেগে সুইটের সাথে সেইদিনের পর থেকে আর কথাই বলতো না। তারপরে সুইট অনেক চেষ্টার পর বর্ষার রাগ ভাঙ্গাতে সক্ষম হয় এবং তাদের মাঝে অনেক ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। বন্ধুত্বের দু বছরের মাথায় সুইট প্রথম বর্ষাকে প্রপোজ করে। এই দু বছরে তাদের দেখে কখনো মনে হয়নি তারা শুধু বন্ধু যে কেউ দেখলেই বলবে তারা লাভ বার্ড।
.
বর্ষা বারবার সুইটের প্রপোজ রিজেক্ট করলেও সুইট কখনো আশা ছাড়েনি। সুইট সব সময় ভাবতো নতুন কোন উপায়ে তাকে প্রপোজ করা যায়। কারণ বর্ষা প্রতিবারি রিজেক্ট করার সময় বলতো এইসব কমন হয়ে গেছে, আর ভালোবাসা তোমাকে দিয়ে হবে না,সো এইসব চিন্তা মাথায় থেকে বাদ দিয়ে দাও।
.
সুইট আজ অনেক ফুরফুরে মেজাজে আছে কারণ আজ সুইট বর্ষাকে প্রপোজ করবে। অনেক ভেবে সে তার মনের কথা গুলা গোছাতে পেরেছে। তাই সুইট বর্ষার কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে তার দিকে এক জোড়া চশমা এগিয়ে দিয়ে বলে---
.
আমি তোমায় ভালোবাসতে বলছি না, শুধু আমার হাত ধরে আজীবন আমার পাশে থাকলেই হবে। আমি তোমায় আমাকে আদর করতে বলছি না, তবে প্রতি রাতে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দিও, আমাকে ভালোবাসতে হবে না তবে তোমার কোলে মাথা রেখে রাতের চাদটা দেখতে দিও, আমায় আদর দিতে হবে না, তবে প্রতিবারি বাইরে যাওয়া এবং বাইরে থেকে আসার সাথেই তোমাকে একটা চুমো খেতে দিও, আমাকে তোমার ভালোবাসতে হবে না,তবে প্রতিদিন রান্নার সময় তোমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে থাকতে দিও, আমাকে ভালোবাসতে হবে না,তবে প্রতিদিন সকালে তোমার ভেজা চুলের পানিতে আমার ঘুম ভাংগে দিয়ো।
.
আমাকে ভালোবাসতে হবে না আমি যখন বুড়ো হয়ে যাবো, একেবারে থুত্থুরে বুড়ো, তখনো আমার পাশে থাকবা তো,আমায় ভালোবেসে আগলে রাখবা তো? একটু ধৈর্য ধরে রাখবা আমার ওপরে? ধরো, যদি হঠাৎ করে দামী কাচের বাসনটা আমার হাত থেকে পড়ে যায় ? কিংবা, তরকারির বাটিটা উল্টে ফেলি টেবিলের উপরে? আমি যে তখন অতো ভালো দেখতে পাবো না রে! আমাকে তুমি চিৎকার করে না বকে ভালোবাসা দিয়ে বুঝে দিয়ো তাইলেই আর ভুল হবে না।
আমি যখন আর কানে শুনতে পাবো না, একবারে বুঝে ফেলবো না তুমি কী বলছো তাই বলে আমাকে ‘বধির’ বলে ডাকো না! লাগলে না হয় আরেকটাবার কষ্ট করে কথাটা বলিও, না হয় লিখেই দিলে কাগজে কলমে।
আর যখন আমার হাঁটু কাঁপবে, পা দুটো শরীরের ভার আর বইতে চাইবে না, তুমি একটু ধৈর্য ধরে আমাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করবা তো? আমার কাধে হাত রেখে আস্থত করবা তো যে আমি আছি তোমার পাশে ভয় নেই।
কখনো কখনো আমি ভাঙা রেকর্ড প্লেয়ারের মত বকবক করেই যাবো, তুমি একটু শুনিয়ো কষ্ট করে। কি করবা বলো আমার বয়সটাই যে তখন হবে বকবক করার, আমার বকবকানিতে অধৈর্য হয়ে আমাক ছেড়ে যাবা না তো। আমি যদি বলি অনেক ভালোবাসি তোমাকে তখন মুখ ভেঙ্গচিয়ে বলবা না তো বুড়ো বয়সে ভেমরতি ধরছে।
বুড়ো বয়সেও যখন তোমার শরীরের সেই চেনা গন্ধ ছাড়া আমার ঘুম আসবে না তখনো কি আমায় তোমার বুকে একটু জায়গা দিবা??আমি যখন বুড়ো বয়সে গোসল করবো না তখন কি তুমি আমায় ছোট বাচ্চার মতো জোর করে ধরে নিয়ে যেয়ে গোসল করে দিবা। গোসল করার পর যখন ঠান্ডায় আমার জ্বর আসবে তখনও কি আমার মাথায় সারা রাত হাত বুলিয়ে দিবা। যখনি সময় পাবো তখনি আমার সাথে ছাদে যেয়ে চাঁদ দেখবা আর পুরানো সব কথা মনে করিয়ে দিবা তো।
যখন বিছানায় পড়ে থাকবো, আমার একটু যত্ন নিবা সেদিন? আমি যদি তীব্র অসুস্থতার কারণে উঠতে না পেরে ভুল করে বিছানা ভিজিয়ে ফেলি, যদি চাদরটা নোংরা করে দেই তখনো কি ভালোবাসা দিয়ে আমায় আগলে রাখবা??? আমার শেষ সময়টায় শুধু আমার পাশেই বসে থাকবা তো। মোট কথা আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার পাশে থাকবা তো।
যখন আমার শেষ সময় হবে, আমার হাতটা তোমার মুঠোয় পুরে নিয়ো। আমাকে একটু সাহস দিয়ো যেন মৃত্যুকে আমি নির্ভয়ে আলিঙ্গন করতে পারি!
আর ভাবিও না, যখন আমি আমার স্রষ্টার দেখা পাবো, তখন তাঁর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলবো, যেন তোমাকে আমার সব পূন্যের বদলে জান্নাত দান করেন কারণ তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে বুড়ো বয়সেও, আমার বুড়ো সময়গুলোতে আমার যত্ন নিয়েছিলে।
.
যখন সময় হবে এই চশমা বের করে দিয়ে বলবা এই যে বুড়ো তোমার বাহাদুরি সব শেষ তুমি এখন বুড়ো হয়েছে গেছো, সো এখন থেকে আমার কথাই তোমাকে শুনতে হবে,হু। দিবা কি আমাকে সেই সুযোগ যাতে আজীবন তোমাকে এইভাবে জ্বালাতন করতে পারি।
তোমাকে অনেক ভালোবাসি রে…
.
আমাকে আজ আর ফিরিয়ে দিয়ো না গো,,এই যুবক সুইট তোমাকে ছাড়া চলতে পারলেও বুড়ো সুইট তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তেও চলতে পারবে না। তোমাকে যে আমার প্রতিটা পদে পদেই দরকার। আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
.
সুইট প্রপোজ শেষে দেখে বর্ষা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এবং তার চোখে পানি। বর্ষা চোখ মুছতে মুছতে মুচকী হেসে বললো পাগল একটা।
.
৫ বছর পর-----
.
আজ তাদের বিয়ের দু বছর পূর্ণ হয়েছে। সুইট এখনো বর্ষাকে সারাদিন জ্বালাতন করে,বর্ষাও হাসি মুখে সব মেনে নেয়, যখন বেশী রেগে যায় তখন সুইটকে ইচ্ছা মতো বকাবকি করে। সুইট সব বকাবকি মনোযোগ সহকারে শুনে শেষে হাত তালি দিয়ে বলে চমৎকার ভাষন, বর্ষার রাগ তখন আরো বেশী হয়। দিনে তারা যতই রাগারাগি করুক না কেনো সূর্য ডুবার সাথে সাথে তাদের রাগ অভিমানো ডুবে যায়। এই পাঁচ বছরে সমুদ্রে পানির পরিমান কমতে পারে কিন্তু তাদের ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি। এ যেনো ভালোবাসার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বেঁচে থাকুক আজীবন এইসব উৎকৃষ্ট মানের ফরমালিন মুক্ত তরতাজা ভালোবাসা গুলো।
.
লেখকঃ #ShahaRier_Nasim_Sweet.

No comments:

Post a Comment