Sunday, July 23, 2017

--------------: কদম জরিয়ে হাত :--------------

--------------: কদম জরিয়ে হাত :--------------
:
.....নওশাদ ইসলাম (শূন্যের প্রতিবিম্ব)
:
:
ভোরের আলো গুলো যেন আমার ঘরে আসবেই মানে আসবেই ৷
ঘুমের স্বপ্ন গুলো পালিয়ে গেলো. অবাক রাতের জোছনার সাথে।
মুহিব. তার বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হয়।
ভার্সিটিতে যাওয়ার পথটায় তার মস্তিষ্কের যন্ত্র টা একবিন্দু বিষয় বস্তু নিয়ে  চিন্তা করেই যাচ্ছে। চিন্তার কারণ নীরু কে তার ভালবাসা টা কিভাবে বুঝাতে পারবে। মুহিব তার চেষ্টা টা  .প্রায় 48 হয়ে গেছে। আর দুইটা উপায়ে ভালবাসা প্রোপোজ করলে হাফ সেঞ্চুরী হয়ে যাবে। কিন্তুু ..নীরুর মনে একটু জায়গায় পাবে কিনা সেটা জানা নেই।
ভার্সিটিতে পৌছাতে পৌছাতে একটা নতুন আইডিয়া এলো ..।
:
তাই ভার্সিটিতে গিয়ে নীরু কে খুজতে থাকে। সে ঠিকই তার স্থানে আছে। পুকুর পাড়ে ..।
নীরুর দৃষ্টি টা পুকুরের শাপলা গুলোর দিকে। এতো মনোযোগ দিয়ে দেখছে ..তাতে করে শাপলার সৌন্দর্য টা মনে হয় বেড়ে যাচ্ছে। .
গিয়েই পাশে বসে পড়লাম। নীরু একবার তাকিয়েও দেখলো না।
শুধু জিজ্ঞেস ..
-আজকে কি নতুন উপায় নিয়ে এসেছো? (নীরু)
-আচ্ছা আমাকে কি ভালবাসা সত্যিই যায় না?
-উত্তর টা জটিল চেষ্টা চালিয়ে যাও দেখো কি হয়। (একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো)
নীরু মুহিবের ক্লাসমেট। মেয়েটা খুব আলাদা। আর এই আলাদা টা মুহিব কে খুব টানে।
মুহিব ক্লাসের ভেতর নীরু কে দেখছে। কত মনযোগ দিয়ে স্যার এর কথা শুনছে ..কিন্তুু মাঝে মাঝে মুখে মিষ্টি একটা হাসি ফুটে উঠে।
ত মুহিবের 49 তম ..প্রোপোজ টা শাপলা দিয়ে করে তাতেও কিছু হয় না। নীরুর থেকে একবিন্দু ভালবাসা পাওয়া হলো না।
মুহিব এই নিয়ে অনেক চিন্তায় করে।
মেয়েটার অবহেলার ভেতরে ও কেন যেন একটা আলাদা কিছু উপস্থিত থাকে। . কারও অবহেলায় যে উৎসাহ জাগে সেটা হয়তো নীরু কে ভাল না বাসলে বুঝা যেতো না।
মুহিব চিন্তা করে  .এইবার তার শেষ ভালবাসা র কথা বলবে। এই শেষ বার তার হাতটি ধরার অধিকার চাইবে। ..
তাই এবার মুহিব আগে থেকেই প্রস্তুত নেয়।
নীরু এখন ভার্সিটির গেট এর সামনে দাড়িয়ে হঠাৎ কোথা থেকে মুহিব এসে হাজির ..।
-তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো। (মুহিব)
-হ্যাঁ বল (নীরু)
-এখানে না আজ না। কাল ভোরে মরুর ব্রিজে দেখা করবে।
-কিন্তুু ভোরে কেন?  আমা..(শেষ হতে দিল না)
-প্লিজ না বলো না। (কিছুটা অনুরোধ আবেদন ছিলো কন্ঠে)
-আচ্ছা ঠিক আছে ..
:::
পরের দিন ভোরে ..
নীরু মরুর ব্রিজে দাড়িয়ে। কত সুন্দর আকাশ ..বর্ষার সময় তাই. মেঘ রোদের লুকোচুরি খেলা চলছে।
হঠাৎ. একটা ছোট্ট ছেলে নীরুর কাছে এসে ..একটা কদম ফুল দিয়ে একটা চিরকুট দিলো।
চিরকুটে লেখা ছিলো.
"ভালবাসি তিনপাতার এক কদম ফুল টার সাথে। "
নীরু তখন খেয়াল করে  .কদম টার তিন পাতা।
তারপর ..হঠাৎ আবার সেই ছেলেটি ..আরও কিছু ছেলে নিয়ে এসে সবার হাতে একটা কদম ফুল সবাই দিয়ে সবাই একটা চিরকুট ছিলো সেগুলো তে..আগের টার মতো অনেক কিছু উপমার সাথে ভালবাসিটা ছিলো। .
শেষ একটা মেয়ে তিনটা কদম দিয়ে একটা চিরকুট দিলো। ..
সেই চিরকুটে "পরবর্তী দিক টা বলা ছিলো।
কথা মতো নীরু ব্রিজ পেড়িয়ে সামনে এগিয়ে দেখে একটা ছোট্ট ..বেঞ্চ  একটা বট গাছের নিচে সেটায় কেউ একজন বসে আছে । নীরু বুঝলো মুহিব এটা।
নীরু মুহিবের পাশে গিয়ে বসে। নীরু কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুহিব বলে উঠলো।
-নীরু এইটাই আমার ভালবাসা বলার শেষ দিন তোমাকে বিরক্ত করার শেষ মুহুর্ত। আমি জানি আমি হয়তো কখনো তোমার মনে জায়গা নিতে পারবো না। তাই আজকের পর থেকে  .আমি আর তোমার সামনে আসবো না।
ভালো থেকো আর মনের মতো কাউকে পাও এই শুভকামনা করি। ..
এই কথা গুলো বলে মুহিব চুপচাপ চলে গেলো। নীরু কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
নীরুর চোখে অশ্রু বিন্দু। কারণ নীরুও মুহিব কে ভালবেসে ফেলেছে শুধু মুহিবের নতুন নতুন ..আইডিয়ায় ভালবাসি বলাটা নীরুর খুব ভালো লাগতো। একবার দুজন দুজনের হয়ে গেলে আর কখনো এমন ভাবে মুহিব কখনো ভালবাসি বলবে না। ..নীরু শুধু চুপচাপ দুরে তাকিয়ে আছে। মুহিব একটু ও বুঝতে পারে না যে ও কতটা ভালবাসে ওকে। শুধু আমার নীরব থাকাটা কে না বুঝে নিলো।
সেদিনের পর থেকে ..মুহিব আর নীরুর সামনে যায় না। মুহিব দুর থেকে সব দেখে। আসলে মুহিব বরাবরের মতোই নীরুর জন্য আবার নতুন আইডিয়া খুজে আবার ভালবাসি বলতো কিন্তুু শেষ বার মুহিবের বন্ধু আর নীরুর বন্ধু রা মিলে ওকে সাহায্য করে। মুহিবের বন্ধু আবিদ বলে নীরু কে এইটা বলতে  যে সে আর তাকে বিরক্ত করবে না আর সামনে আসবে না। আর এদিকে নীরুর বন্ধুরা এই বলে সাহায্য করে যে নীরু তার ডায়েরিতে শুধু মুহিব কে নিয়ে লেখে সে কি কি করে তাই এবার সবার কথায় কিছুদিন আড়াল হয়ে থাকে।
এদিকে নীরুর যেন কিচ্ছু ভালো লাগছে না সে নিজেও কারণ টা জানে। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে কেন এতো দিন মুহিব কে নিজের করে নিলো না।
একদিন নীরু কষ্টে অর বন্ধুদের সামনে কেঁদে দিলো। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে সব বলে বন্ধুরা ওকে বলে ..শেষ বার যেখানে দেখা করেছিস সেখানে একবার যেয়ে দেখ। নীরু আগেপিছে কিছু না ভেবে সেখানে চলে যায়। বিকেলে বেলা গোধূলি প্রহর নেই। কারণ মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ টাও আজ কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। নীরু সেই গাছের নিচে বেঞ্চটিতে বসে আছে হঠাৎ বৃষ্টি নেমে এলো নীরু ছাতা মেলে ধরতেই পেছন থেকে কেউ একজন তার পাশে একগুচ্ছ কদম ফুল রাখলো।
এইটা দেখে নীরু উঠে দাড়িয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখে মুহিব দাড়িয়ে।
-একগুচ্ছ কদম হাতে ভিজতে চাই তোমার সাথে ..(এইটা বলে হাত টা বাড়িয়ে দেয় নীরু কিছু না বলেই দৌড়ে মুহিবের বুকে ঝাপিয়ে পরে।
-ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি প্লিজ ..আমার থেকে দুরে যেয়ো না। (কান্না করছে। সেটা বোঝা গেলোও অশ্রু দেখা যাচ্ছে না বৃষ্টির জলের জন্য।
হ্যাঁ নীরুও জিতেছে সেদিকে খেয়াল নেই।
-তাহলে আমাকে দুরে রেখেছিলে কেন এতো ভালবাসো যদি।
-শুধু তোমার নতুন আইডিয়ার ভালবাসি কথা শোনার জন্য।
-আমার বুঝি ভালবাসা পেতে ইচ্ছা হয় না?
-কথা বলতে না বলতে নীরু অবাক করে দিয়ে মুহিবের ঠোঁট দুটিতে কিছু স্পর্শ করিয়ে দেয়।
তারপর নীরু বলে.
-এখন থেকে ভালবাসবো।
-বাব্বা কিছুদিন দুরে থেকে ত বেশ লাভ হয়েছে। আবিদ দোস্ত তুই গ্রেট।
নীরু অবাক চোখে জিজ্ঞেস করে। তারপর মুহিব সব বুঝিয়ে বলে।
নীরু কিছুটা অভিমান করে চলে যেতে চায় কিন্তুু মুহিব আবার টান দিয়ে কাছে টেনে নেয়।
-আর ত ছাড়ছি না পাগলী টা।
-সবাই আমাকে এভাবে ঠকালে
- কি করবো তা না হলে যে আমি জানতে পারতাম না এই মেয়েটা আমাকে এতো ভালবাসে।
-জানাটা কি খুব জরুরি ছিলো? না জানলে কি হতো?
-ও আচ্ছা তাহলে যাই চলে যাই ..(কথাটা বলতা না বলতে মুহিবের কলার ধরে বসে)
-এবার হারালে একদম মেরে ফেলবো।
কথাটি বলে কান্না করে বলে।
-প্লিজ. আমি মরে যাবো।
-এতো ভালবাস আমায়?? (মুহিব)
-হ্যাঁ এতো এতো এতো ..
-এভাবে এখন থেকে বাসবে?
-একটা শর্তে
-কি? শর্ত?
-নতুন উপায়ে ভালবাসি বলাটা জারি রাখতে হবে।
-না রাখলে?
-কি? (রেগে চোখ বড় করে কলার চেপে ধরে)
-না অবশ্যই ..আপনার যেমন ইচ্ছা।
নীরু আবার শক্ত করে জরিয়ে ধরে। মুহিব বলে
-ম্যাডাম একগুচ্ছ কদম হাতে কি ভিজবেন?
-নীরু শুধু ছোট হাসি দিয়ে বেঞ্চ থেকে ফুল গুলো নিয়ে দুজনে হাটতে থাকে

(ভালবাসা টা এমন। অনেকের হয়তো এমন হয়। শুধু এটুকু বলি নিজের ভালবাসার ওপর ভরসা রাখুন এবং ধৈর্য্য রেখে চেষ্টা চালিয়ে যান। ফলাফল সেটা একদিন ঠিক পাবেন)

---------------------- সমাপ্ত ----------------------

No comments:

Post a Comment