Thursday, July 6, 2017

গল্প: আবার ও অসম

গল্প: আবার ও অসম

"কি বলে ডাকবো,,,বড়আপু নাকি বউ?"
সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে একজন মেয়ে বলতে গেলে আমার থেকে ২/১ বছরের বড় হবে আমাকে ডাক দিয়ে বললো-
সে-- এই ছেলে,,,এদিকে এসো তো।
আমি-- জ্বি আপু, আমাকে বলতেছেন?
সে-- আজ্ঞে হ্যা জ্বি জনাব, আপনাকেই বলতেছি।
আমি-- ও আচ্ছা,,,,আমি কিভাবে আপনার উপকারে আসতে পারি আপু?
সে-- কানের নিচে এমন তবলা বাজাবো না আপু ডাক সারাজীবনের জন্য ভুলে যাবি। আপু আপু শুরু করেছে, যেনো উনি আমার মায়ের পেটের আপন ছোট ভাই।
আমি-- sorry ভুল হয়ে গেছে, ডাক দেওয়ার কারনটা জানতে পারি কি? ( কি গুন্ডী মেয়ে রে বাবা)
সে-- হুম বলতেছি। তার আগে বলো আমি তোমার কি হই? মানে হলো আমি তোমার কাছে কে?
আমি-- আপু বললে মাইর দিবেন,,, তবে আন্টিও বলা যাবে না কারন এতো অল্প বয়সে আপনাকে আন্টি মানাবে না। আর বান্ধবীও হবে না কারন আমরা সমবয়সী না।
সে-- ঐ ইয়ার্কি মার্তেছিস তাই না? ঘুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দিলে সব তোর মাথায় এসে যাবে যে আমি কি হই।
আমি-- এই না,,, আম্মুর আর ছোট বোন ছাড়া কারো হাতে আজ অবধি মাইর খাই নাই,,টিচারও মারে না আমাকে। আপনি মারলে মানসম্মান থাকবে না আমার। ( কার খপ্পরে পড়লাম এসে?? কথায় কথায় তেড়ে আসে মারার জন্য।)
সে-- আহারে কচি খোকা রে,,,,আর হ্যা শোনো আমি তোমার বউ হই। এখনও হইনি অবশ্য তবে হবু-বউ হই তোমার।
আমি-- আপনার মাথা ঠিক আছে??? কি সব আবোল তাবোল বলতেছেন আপু? গরমে মনে হয় আপনার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে।
সে-- এই শেষবারের মতো বলতেছি আপু বলবি না আমাকে। বউ বলে ডাকবি আর না হয় জান, বাবু, এইসব বলে।
আমি-- আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আপনার নাম কি আপু? আর এসব যে বলতেছেন তার মূল কারন বা উদ্দেশ্যটা কি? ( এই যাহ! মুখ ফসকে আবারো আপু বলে ফেলেছি।)
সে-- ঠাসসসসসস..........আবারো আপু বললি কেনো? ( মুখ ফসকাতে দেরি হলেও হাত ফসকাতে দেরি হলো না ওনার।)
আমি-- আরে আপুই তো বলেছি এতে মাইর দেওয়ার কি আছে?
সে-- অনেক কিছু আছে। তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক করেছে তোমার বাসার লোক আর আমার বাসার লোক। তাই এখন থেকে আর যেনো আপু বলবা না। আর আমার নাম আস্মিকা।
আমি-- আপনাকে এসব কথা কে বলেছে? আর আমার বাসার লোক এমন কাজ করবে না আমাকে না জানিয়ে।
সে-- তোমার মা-বাবার কাছে আজ আমার মা-বাবা গিয়েছিলো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আর তারা সবাই যখন রাজি তখন কি করবে আর তুমি পাজি?
আমি-- এটা হতে পারে না। আমি রাজি না এই বিয়েতে।
সে-- মেরে চামড়া ছিলিয়ে লবণ আর গুরা মরিচ লাগিয়ে দিবো যদি বিয়ে নিয়ে কোনো উলটা পালটা কাজ করেছিস তো।
আমি-- যেই মেয়ে শুধু মারতে আসে কথায় কথায় আর তুই তুকারি করে তাকে বিয়ে করা Future Impossible Tense.
সে-- তুই তো বিয়ে করবি তোর বাআআ....থুক্কি শশুর মশাইয়ের কথা বলতেছি কেনো। তোকে বিয়ে করতেই হবে তা না হলে তুলে নিয়ে আসবো তোকে।
আমি-- বালতির মুল্লুক নাকি? আপনি বলবেন আর আমি বিয়ে করবো আপনাকে।
সে-- সব কিছুরই মুল্লুক আমার বর।
আমি-- আমি আপনার বর না আর আপনিও আমার বউ না।
সে-- উফ!! হাত মাইর দেওয়ার জন্য জ্বলতেছে। যাক এখন ছেড়ে দিলাম। Love you বর, পরে কথা হবে। বিয়ের জন্য কেনাকাটা করতে যাবো। bye..
আমি-- Good bye forever..
বাসায় আসার সাথে সাথে আম্মুর কাছে গেলাম। আর আম্মুকে সবকিছু জিজ্ঞাস করায় আম্মু যা বললো তাতে পুরাই টাসকি খাইয়া গেলাম। আম্মু বললো -
আম্মু-- আস্মিকা সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি তার কারন হচ্ছে মেয়েটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কখনো আমাদের বাসায় আসে নাই ঠিকই তবে তোকে প্রতিদিন নাকি রাস্তায় দেখে। বারান্দায় বসে বসে তোর জন্য অপেক্ষা করে কখন তুই ঐ রাস্তা দিয়ে যাবি।
আমি-- আমাকে ভালোবাসে? উনি তো আমার থেকে বয়সে বড়। এটা ঠিক না তো।
আম্মু-- জানি তো। এই কথা ওর বাসার সবাই ওকে এই কথাটাই বুঝানোর অনেক চেষ্ঠা করেছে কিন্তু ও নাকি তোকেই বিয়ে করবে। এই কারনে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো আর ২ বার নাকি suicide করতে গিয়েছিলো।
আমি-- বলো কি? এতো খুব সাংঘাতিক মেয়ে।
আব্বু-- কে সাংঘাতিক মেয়ে? ( আব্বু অফিস থেকে এসেই আমাদের আলোচনার সাথে যুক্ত হলো।)
আম্মু-- ঐ যে আস্মিকার কথা বলতেছিলাম।
আব্বু-- দেখো বাবা, আমি আর তোমার মা অনেক ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে তুমি যদি না চাও তাহলে এ বিয়ে হবে না।
আমি-- না আব্বু, আপনি আর আম্মু যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমার ব্যাপারে তা কখনো খারাপ হবে আমার বিশ্বাস।
আম্মু-- তোমার সারাজীবনের ব্যাপার কিন্তু এইটা।
আমি-- কোনো সমস্যা নেই। তবে তোমাদের কি মনে হয়না যে মেয়েটা সাইকো টাইপের।
আব্বু-- না সাইকো না। তবে তোমার আম্মু আর আমি যা বুঝেছি তাতে মেয়েটা খুব আবেগময়।
আম্মু-- তোমার উপর বিশ্বাস রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি বিশ্বাসের মর্যাদা রাখিও।
আমি-- আমি আপনাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করবো না কখনো।
ব্যাস ২ মাস পরেই বিবাহ সম্পন্ন হলো। এর মাঝে কতো বার ঝাড়ি আর মাইর খেয়েছি আপু বলা নিয়ে তার ঠিক নাই।
এখন সবাই মিলে একপ্রকার জোর করেই পাঠাচ্ছে বাঘের খাচায় মানে বাসর ঘরে। বাসর ঘরে ঢুকে দরজা লক করার পর ঘুরে দাড়াতেই নতুন বউ এসে পা ছুয়ে সালাম করতে লাগলো -
আমি-- আরে করেন কি? আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট।
সে-- তাতে কি?? নবিজী (স:) তো তার থেকেও ১৮ বছরের বড় খাদিজা (রা:) কে বিয়ে করতেছিলেন।
আমি-- কথায় উনি আর কথায় আমি। আমি তো সাধারণ মানুষ আর উনি হলেন শ্রেষ্ঠ মানব।
সে-- হুম,, তা ঠিক।
আমি-- আচ্ছা আপনি তো আমার থেকে বয়সে বড়। আপনাকে আমি " কি বলে ডাকবো,,বড় আপু নাকি বউ?"
সে-- ঠাসসসসসস,,,, জানোয়ার আজ তোর একদিন আর আমার যতোদিন লাগে।
( এবার ইচ্ছা করেই আপু বলেছি,, ভালোবাসার সংসার একটু অন্যরকমভাবে শুরু না হলে চলে নাকি।)
.
বি.দ্র: গল্পে কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার করে দিয়েন কারন গল্পটা সম্পুর্ন কাল্পনিক।
.
,,,,,,,,,,,,,,,,,,(Collected),,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

No comments:

Post a Comment