Saturday, July 29, 2017

--------: আমার কথাকলি ভালবাসা :--------

--------: আমার কথাকলি ভালবাসা :--------
:
.....অনিচ্ছা নির্বাসন (একজন আমি)
:
:
অরিন, আমার স্ত্রী। ১ বছর হল আমাদের বিয়ে হয়েছে। ও অন্যসব সাধারন মেয়ের মত নয়। ও জন্ম থেকেই বোবা। কথা বলতে পারে না। ভীষন আবেগী একটা মেয়ে। প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিলা বুঝেছিলাম একাকিত্ব ওকে পেয়ে বসেছে। প্রথম দেখাতেই ভাল
লেগেছিল, কিন্তু বুঝতে পারিনি তখন ও বোবা। কে বলবে ও বোবা। অন্যমেয়েদের মত সব আছে। গায়ের
রং ফর্সা। অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে। দেখে বুঝাই যাবেনা ওর শারিরীক সমস্যা আছে। সবকিছু শুনতে পায় বুঝতে পারে কিন্তু সাধারন মানুষের মত উত্তর দিতে
পারেনা।

অরিন আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে। প্রথম প্রথম
ভাললাগা তারপর মনের অজান্তেই ভালবাসা। এত সুন্দর একটা মেয়ে স্মার্ট না হলেও সাধারন পোষাকে কম যায় না। ওর বিএফ থাকাটা স্বাভাবিক ভেবে কিছুদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু ওর চলাফেরা, উদাসীন হয়ে আকাশ
দেখা, বিকেলের ছাদে খোলা চুলে বসে থাকা সবকিছুতে কেমন যেন মায়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম। কয়েকদিন পর ছাদে উঠেছি দেখি এককোনে দাড়িয়ে আছে। কাছে
গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করলাম চুপ করে রইল,আরও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম তবুও নিশ্চুপ তারপর ভীষন
রাগে বেশি কথা বললাম। আমি এতকিছু বলছি কিছু না হলেও একটা কথার জবাব দিক কিন্তু কিছুই বলছে।
ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললাম।

সেদিনের মত চলে এসেছিলাম।এর পর থেকে তেমনভাবে দেখতাম না। আমার দিকে তাকালে না দেখার ভান করে চলে আসতাম। একদিন ছাদে বসে আছি, মেয়েটি আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা চিরকুট দিল। ওখানে লেখা, বিশ্বাস করুন আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর গুলো দিতে চেয়েছিলাম সেদিন, কিন্তু আপনি তো জানেন না আমি বোবা। কথা বলতে পারিনা। তাই চুপ ছিলাম। আপনি আমার উপর রেগে আছেন জানি তবু আমি যে নিরুপায়। শেষে লেখা অরিন। তার মানে মেয়েটি বোবা ওর নাম অরিন।

সত্যিই লজ্জিতবোধ । অসহায়ের মতকিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললাম, ভালবাসি তোমাকে। অবাক দৃষ্টিতে একনজর তাকাল তারপর চলে গেল। আমি দাড়িয়ে ছিলাম চলে যাওয়ার পানে দৃষ্টি ।

পরেরদিন আমাকে আরেকটি চিরকুট ধরিয়ে দিল, সেখানে লেখা ছিল "" আমি অতি সাধারন একটা মেয়ে।তারপর বোবা। আপনার বউ হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। তাছাড়া আপনার ভিতর এখন হয়ত আবেগ না হয় করুনা কাজ করছে যা ক্ষনিকের জন্য
থাকবে। কিন্তু জীবনটা অনেক কঠিন আপনি আমাকে নিয়ে চলতে পারবেন না। আমি সত্যিই নিরুপায় আমি যদি অন্যসবার মত হতাম তাহলে নিশ্চয়ই আপনাকে
ভালবাসতাম। চিরকুটটা দিয়ে চলে যেতে চাইল। আমি হাত টেনে ধরে বললাম এটা করুনা নয়,আবেগ ও নয় আমি সত্যিই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি, এখন যেমন আছি সারাটি জীবন এমনভাবেই থাকব। উহু উহু করে
কেঁদে ফেলেছিল মেয়েটি। কিছুদিন পর বাসায় জানাই।সত্যি বলতে আব্বু আম্মু সবকিছু জানা সত্বেও মানা করেনি। হয়ত আমি ঠিক ছিলাম। ওর পরিবারের দিক
থেকেও কোন আপত্তি ছিলনা। কিন্তু ওকে অনেক কষ্টেই রাজি করিয়েছিলাম। তারপর বিয়েটা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। মেয়েটা ভীষন কেয়ার নেয়। সবকিছু গুছিয়ে
রাখে। আর নীরব মনের মেয়েটা যে কতখানি ভালবাসতে জানে সেটা তো উপলব্ধি করতে পারছি।

আজ অফিস থেকে এসে শুনি অরিন রান্না করতে গিয়ে গরম তেলে হাতে ফোস্কা উঠেছে। এমনিতেই ওকে আগুনের কাছে যেতে দেইনা। ওর আব্বু আম্মু নিষেধ
করেছিল। আজকে আম্মু বিকেলে ঘুমিয়েছিল তখন রান্না করতে গেছে। গরম তেল হাতে পড়লে হাতটা সরিয়ে আনতে গিয়ে একটা গামলা পড়েছিল ফ্লোরে তার
সাথে চাপা আর্তনাদ শুনে আম্মু উঠে এসে চুলাটা নিভিয়ে আমাকে ফোন করে । বাসায় ঢুকেই মাথাটা গরম হয়ে যায়, কেমন যেন ভুলে গিয়েছিলাম মেয়েটি
স্বাভাবিক নয় তাছাড়া একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই বলে হাত তুললাম। রাগ করে আম্মুর কাছে গিয়ে শুয়ে আছে। এর আগে একবার এভাবে কেঁদেছিল, বিয়ের
পরেরদিন ফুফু হঠাৎ ওর সামনেই বলে উঠল অনি তুই শেষ পর্যন্ত একটা বোবা মেয়েকে বিয়ে করলি। প্রচন্ড রাগ হয়েছিল সেদিন আমার ফুপির উপর। অরিন দৌড়ে গিয়ে রুমে শুয়ে শুয়ে কেঁদেছিল সারাদিন। আরে
পাগলী ফুপি কি বলল না বলল তা শুনেই তোমাকে কাঁদতে হবে। আমি তো তোমাকে অনেক ভালবাসি।
তবুও কান্না থামেনা। শেষে একটা চিরকুটে লিখে দেয় তুমি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নাও। আমি সাথে সাথে বুকে টেনে নিয়েছিলাম। এই পাগলী তুমি
ছাড়া দ্বিতীয় কোন নারী আমার জীবনে কখনও আসবেনা। সেদিনের পর থেকে বুঝেছিলাম মেয়েটা
কতটা আবেগী...

আমি --কে বলেছে তোমাকে রান্না করতে?(ধমকের সুরে বললাম)
অরিন---নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি-যেটা পার না সেটা করতে যাও কেন?
অরিন-- নিশ্চুপ।
আমি--আমি তোমাকে কিছু বলছি চুপ করে থাকবে না।
অরিন--মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
আমি --যদি বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটত। কে জবাবদিহিতা করত তোমার বাবা-মাকে।
অরিন--নিশ্চুপ।
আমি --আমার কথাগুলো কি কানে ঢুকেছে?
অরিন--নিশ্চুপ।
আমি --কতবার তোমাকে বোঝাতে হবে তুমি সাধারন মেয়েদের মত নও।
অরিন--মাথা উচু করে এবার উ উ উ করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
আমি --ঠাশ.....গালে একটা থাপ্পড় দিলাম।
অরিন--উহু উহু করে কেঁদে দিল।
আমি --আর কোন দিন যেন তোমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে না দেখি। তুমি কেন বুঝনা তুমি এগুলো পার না।
অরিন--উহু উহু উহু। (নীরব চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে,অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি --দেখি হাতটা দাও?কতখানি পুড়ে গেছে।
অরিন--নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি --কি হল হাত দেখাতে বলছি না। (বলেই হাতটা ধরলাম, অমনি কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

এই শোন শোন  বলে পেছন থেকে  ডাকলেও সাড়া দিল না, ছুটে বেরিয়ে গেল। মেয়েটাকে কেন মারতে গেলাম।
নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হচ্ছে।একটু জোরে কথা বললে যে কেঁদে দেয় তার গায়ে হাত তুললাম।ছি ছি ছি আমি মোটেও ঠিক করিনি। কিন্তু এই মেয়েটা অবুঝের মত কাজ করবে সারাক্ষন।এত মানা করি এটা করনা তুমি পারবে না তবুও শোনেনা।

আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু অরিন লুডু খেলছে।আমাকে দেখেই মুখটা কালো হয়ে ।
আব্বু --কি রে কিছু বলবি?
আমি --জ্বি। না মানে ক্ষুধা লেগেছে।
আব্বু -- ক্ষুধা লেগেছে টেবিলে খাবার দেওয়া আছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
আমি --তোমরা খাবে না?
আব্বু --একটু দেরি হবে।
আমি --ইশারায় অরিনকে ডাক দিলাম। (উহু উহু বলে উঠল)।
-কি হয়েছে মা?(আব্বু জিজ্ঞাাসা
করল)
অরিন - -ও মাথা নিচু করল। আব্বু আমার চোখের দিকে তাকাতেই মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলাম। ধ্যাত
মেয়েটার এত রাগের কি আছে। একটু বের হলেই পারত।রাগে গজ গজ করতে করতে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

একটু পরে আম্মু এসে ডাক দিল । খেতে বসেছি আম্মু ওকে খাইয়ে দিচ্ছে আমি ওর দিকে তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। খাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়েছি একটু পর অরিন ঢুকল। কিছু বলতে যাব,পাত্তা না দিয়ে অরিন আবার বেরিয়ে গেল। একটু পরে এসে জানালার কাছে দাড়াল।
আমি --আই এ্যম স্যরি।
অরিন--নিশ্চুপ।
আমি --আমি খুব অন্যায় করেছি আমার মিষ্টি বউটাকে বকা দিয়েছি, মেরেছি। আমার মিষ্টি বউটা কি এই পঁচা জামাইকে মাফ করবে না।
অরিন --নিশ্চুপ।
আমি -আমি তো জানি আমার বউটা অনেক রেগে আছে। কিন্তু কি করব আমার বউটা কেন এমন ছেলে
মানুষি করে যদি তার কিছু হয় আমি তো বাঁচব না।
অরিন --এবার জানালার কাছ থেকে সরে এসে একটা কাগজে কিছু লিখে আমার সামনে ধরল। আমি কি আমার স্বামীর জন্য কিছু রান্নাও করতে পারি না।
আমি --আমিও লিখলাম, পার তো কিন্তু তুমি তো রান্না করতে জান না।
অরিন --জানি না বলে শিখতে পারব না(লিখে দিল)
আমি --পারবে তো তবে আম্মুকে কাছে রাখবে।
অরিন --আমাকে মারলে কেন?
আমি --বুঝতে পারিনি। সত্যিই আমি দুঃখিত।
অরিন --না।
আমি --আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
অরিন --না।
আমি --আর কখনও এমন ভুল হবেনা।
অরিন --না। ( সব গুলো লিখে বলতেছে)
আমি --শেষবারের মত মাফ করে দাও।
অরিন --না

আমি স্যরি বলে হাত ধরলাম। হাতটি ছাড়িয়ে নিল।
কান্না চোখে পিছু ফিরলাম। কাঁদতে কাঁদতে আমার সামনে এসে উহু উহু করে জড়িয়ে ধরেছি। আমিও জড়িয়ে রাখব সারাজীবন। আর কখনও দুঃখ দিব না আমার মিষ্টি বউটাকে। অফিসে গেলে মাঝে মাঝে ফোন করে উ উ শব্দ শুনলে সত্যিই আমি ওকে উপলব্ধি করতে পারি। মনে হয় খুব কাছাকাছি বুকের বামপাশে হৃদয়ের মাঝে থাকে সে সারাক্ষন। আমি বুঝি ওর হৃদয়ের ভাষা। পৃথিবীর কাছে ও বোবা হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে সে কথাকলি। সারাক্ষন মেয়েটা চঞ্চল
থাকে আমি বুঝি সে চাঞ্চল্যতার ভাষা । মাঝে মাঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি মেয়েটির দিকে, এমন করে কেউ ভালবাসতে পারে। এত গভীর ভাবে মেয়েটি
ভালবাসতে পারে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে যাই। আমি মোটেও ভুল করিনি এই কথাকলিকে কাছে টেনে।

------------------------ সমাপ্ত ------------------------

No comments:

Post a Comment