Thursday, July 27, 2017

গল্পঃ """রাগ-অভিমান"""

গল্পঃ """রাগ-অভিমান"""

- আমার কথার দাম নাই! তাই না? আমি মরলেই কি!
বাঁচলেই কি! বা বাপের বাড়ি চলে গেলেই কি! তাতে
তো আপনার কোন আসবেও না, যাবেও না।(অভিমানে)
.
- হ্যাঁ একদম ঠিক বলছেন।আপনার কথার কোনো দাম নাই!
আপনি কে? আপনি আমার কে হন? আপনি তো আমার কেউ
না! আপনি মরলেই কি! বাঁচলেই কি! বা বাপের বাড়ি চলে
গেলেই কি! আমার কিছু আসবেও না, যাবেও না, বরং
আমার আরও ভালো হবে।কারণ আরেক টা বউ আনা যাবে,
তার সাথে প্রেম পিরিতি করা যাবে, আরও কতকিছু!
(রাগে)
সাথীকে বলেছিল কোন সময় মরে যাওয়ার কথা ও চলে
যাওয়ার কথা যেন না বলে।কিন্তু সাথী ভুলে বলে ফেলে।
তাই সাথীর এই কথা শুনে তাওহীদের রাগ উঠে।তার রাগ
উঠলে সাথীকে আপনি করে বলে।সাথী এই কথা বলার পর
ভয় পেতে থাকে, সে কি জানি বলে ফেলে। মনে মনে
বলে ভুলে তো বলেই ফেলেছি এখন যা মন চাবে তাই
বলবে এবং তাই করবে।বলেও কিছু লাভ হবে না। কি যে
করি! আচ্ছা দেখি কথা ঘুরিয়ে নিজের চাওয়াটা ও
রাগটা যদি কমিয়ে ফেলতে পারি।তারপর সে বলে
.
- ছি! ছি! ছি! এই ছিল! আপনার মনে? এই! আল্লাহ তুমি
আমারে এ কি শুনাইলা! এই কথা শুনার আগে আমারে মৃত্যু
কেন দিলে না? এই জীবন রেখে কি করব আমি? তুমি বল!
কই আমি রাগ-অভিমান করেছি তা ভাঙ্গাবে; না উনি
উল্টা ঝারি দেয়।(কাঁদার ভাব ধরে) এই যে আপনি শেষের
কথাটা কি বলছেন?(কলারে ধরে ও রাগী ভাব নিয়ে)
- কি বলছি শুনতে পাননি? ঠিকমত শুনতে না পারলে কার
কি! ছাড়েন আমাকে ছাড়েন আমার লাগছে।
- লাগলে লাগবে কারণ আপনি আমার স্বামী।বেশী ব্যথা
পেলে! আদর ও বেশী পাবেন।বুঝছেন?
- এত আদরের দরকার নাই।(অভিমানে)
- ক্যারে! নতুন বউ এর আদর পেতে ইচ্ছা করছে?
.
- হু করছে তাতে আপনারর কোন সমস্যা?
- না আমার সমস্যা না, আমার কপালের সমস্যা।আব্বাহ
গো তুমি আমারে কার কাছে বিয়া দিলা? দুই দিন ও হয়
নাই এখনেই আরেকটা বিয়ে করতে উনার মন চায়!
- আপনার কপালের দোষ না আমার কপালের দোষ।
- কিহ!(কেঁদে কেঁদে)
- হুম।কারণ আপনার মতো এত ভাল স্ত্রী পেয়েছি।আপনি
আমার সব কথা শুনেন মানেন।কিন্তু আমি! আপনার একটা
কথাও শুনি না মানি না! এটা আমার দোষ না?(অভিমানী
সুরে)
কথা গুলো শুনে সাথীর মন খারাপ হয়ে যায়।এখন নিজের
কাছেই তার খারাপ লাগতে থাকে।

ছেলেটার নাম তাওহীদ।তাওহীদ চুপচাপ স্বভাবের
ছেলে।সে সব সময় চুপচাপ থাকে।কিন্তু তার রাগ ও
অভিমান ছিল অনেক।তাওহীদের আপন বলতে এখন আর
কেউ নেই।তাওহীদকে ছোট রেখেই তার মা মারা যায়।
তিন বছর আগে তার বাবাও তাকে একা ফেলে ঐ পাড়ে
চলে যায়।এর পর থেকে সে একা হয়ে যায়।
মেয়েটার নাম সাথী।রুপে গুণে যেন মায়াবতী।সে ছিল
হাসি-খুশি ও চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে।কিন্তু তাকে কেউ
একটু রাগে কিছু বললেই কেঁদে ফেলতো।আর রাগে-
অভিমানে তার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকতো; কিছু
বলতো না।সে তার বাবা-মায়ের আদরের লক্ষী মেয়ে।
এভাবেই তাদের দিন গুলি চলে যাচ্ছিল।
.
তাওহীদের বাবা মারা যাওয়ার আগে থেকেই তাওহীদ
তার বাবার অফিস দেখাশুনা করতো।একদিন তাওহীদ
অফিস থেকে বাসায় ফিরছিল।তখন সাথী রাস্তা পার
হতে যেয়ে তার গাড়ির সামনে পড়ে।তারপর সিনেমার
কাহিনীর মত সাথীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।সাথী
পায়ে আঘাত পায়।
তাই সাথীকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দিয়ে তারপর তাওহীদ
বাসায় ফিরে।(সাথী শুধু বাসার ঠিকানাটা বলতে
পেরেছে।তারপর তাকে দেখেই গেছে কিছু বলতে
পারেনি) সাথীকে প্রথম দেখেই তাওহীদের ভাল লেগে
যায়।সে বিয়ের জন্য অনেক মেয়ে দেখে যাচ্ছে কিন্তু
কাউকে ভাল লাগে না।
মনে মনে বলতো যেদিন মনের মত মেয়ে পাব সেদিন
তাকে আপন করে নিব। রাতে বারান্দায় হেঁটে হেঁটে
চিন্তা করে কি উপায়ে সাথীকে পাবে।এমন সময় সাথীর
এক্সিডেন্টের ঘটনাটা মনে পরে যায়।সাথীর কান্না ভরা
মুখটা তার সামনে বার বার ভেসে উঠছিল।তখন নিজের
কাছেই অনেক খারাপ লাগতে থাকে।
.
তারপর সব চিন্তা ভাব না শেষ করে সাথীর বাবা-মায়ের
কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।সাথীর বাবা-মা একটু
এমত করে কারণ তার যে কেউ নেই। কিন্তু সাথী কি মনে
করে যেন রাজী হয়ে যায়।পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর
শুরু করে তাদের নতুন জীবন।তারপর সুখে-দুঃখে, রাগ-
অভিমান ও ঝগড়া-ঝাটির মধ্য দিয়ে তাদের দিন গুলি
চলে যাচ্ছিল।এবং বয়ের বয়স এক বছর ও পার করে দেয়।
তাদের মাঝে যায়েই হতো না কেন তবুও তারা একে
অপরকে ছেড়ে থাকতে পারতো না।

আজ রাতে সাথী আইসক্রীম খেতে বলেছিল।কিন্তু
তাওহীদ না করে কারণ সাথীর ঠান্ডা লেগেছে ও জ্বর
উঠতেছে।খেলে তো আরও বাড়বে তাই না করে।কিন্তু
সাথী রাগ করে ভুলে এমন কথা বলে ফেলে আর তাতেই
তাওহীদ উল্টা রাগ করে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর আবার বলতে থাকে
- আইসক্রীম খেতে চাওয়া হয় যদি আমার অপরাধ! আচ্ছা
আর খেতে চাইতাম না।আপনার টাকার এতই দরদ! এতই দাম!
আর আমার জন্য কোন দরদ নাই! আমার কথার ও কোন দাম
নাই! আরও উল্টা কথা শুনান। আচ্ছা! মনে থাকব।
- এত ভাব নিয়ে কেন কথা বলেন? ও ভাবছেন এভাবে কথা
বললেই আমি গলে যাব! তাই না? আমি তো কোনদিন
আপনাকে আইসক্রীম খাওয়াই নাই! যখনেই যা চেয়েছেন
তা এনে দেই নাই! তাই না? হ্যাঁ ঠিক বলছেন আমার
টাকার দরদ আছে, টাকার দাম আছে।কিন্তু ভালবাসার
কোনো দাম নাই! তাই তো!
.
সাথী কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না।কিন্তু একটা
জিনিস খুব বুঝতে পারছে সেটা হল তাওহীদ যে রেগে
যাচ্ছে।এবং কিছু একটা যে করে বসবে সেটাও ঠিক
বুঝতে পারছে।মনে মনে বলে, আইসক্রীম তো খাওয়াবেই
সাথে আরও কতকিছু যে বলে ও করে তা আল্লাহ ভাল
জানে।মৃত্যুর কথা ও চলে যাওয়ার কথা কেন যে বলতে
গেলাম। এখন আমি এই পাগলাকে কিভাবে শান্ত করি!
সাথী দেখে তাওহীদ খালি আইসক্রীমের বক্স গুলো
নিয়ে আসতেছে।তাওহীদ এক এক টা বক্স ছুড়ে ফেলে আর
বলে
.
- আমি এই দিন এইটা খেয়েছি ঐ-দিন ঐ-টা খেয়েছি
এভাবে আইসক্রীমের সব বক্স ফেলে আর আমি এইদিন
এইটা খয়েছি ঐটা খেয়েছি এই কথাটা বলে।আমিই সব
গুলো খেয়েছি; আর আপনি আমার খাওয়া দেখে গেছেন।
আবার মাঝে মাঝে আমাকে খাইয়ে দিয়েছেন।তাই না?
আমার টাকা দিয়ে এতদিন আমি শুধু খেয়েই গেছি? আর
আপনি হা করে থেকেছেন আর বক্স গুলো জমা করেছেন।
তাই না?
এই কথা গুলো শুনে সাথী কেঁদেই ফেলে।তারপর সাথী
বলে
- দয়া করে আপনার এই কথা গুলো বন্ধ করুন।আমি আর সহ্য
করতে পারছি না।আমি ভুলে মৃত্যুর কথা বলে ফেলেছি
আমি না বলতে চাইনি; বিশ্বাস করেন!
- সব বিশ্বাস করেছি।এখন আপনি আমার সামনে থেকে
সরে যান।
সাথী সরে না দেখে সে নিজেই অন্যরুমে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর তাওহীদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে শীতের
প্রকৃতি দেখতে থাকে।সাথী পিছনে এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
কাঁদতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে বলে
- দেন না আমাকে ক্ষমা করে! একবার ক্ষমা করে দিলে
কি এমন ক্ষতি হবে? আমি কি ইচ্ছা করে ভুল করি!
কিভাবে যেন ভুল হয়ে যায়।
- .....
- এই যে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না!
- .....
- যেহেতু আমার কথার কোন দাম নাই তাহলে আমার
থাকার ও কোন মানে নাই(কথাটা শেষ করতে পারেনি
তার আগেই মুখ চেপে ধরে)
তখন দুজনেই দুজনকে দেখতে থাকে ও চোখের পানি
ফেলতে থাকে।তাওহীদ চোখের ইশারায় চুপ থাকতে
বলে।তারপর বলে
.
- বেশী কথা বলা শিখে গেছ? তোমাকে বলছিলাম না এই
কথা গুলো কখনো না বলতে।জানো না এই কথা গুলো
শুনলে আমার খুব কষ্ট হয়।তারপরেও কেন বললে? তোমার
ঠান্ডা লেগেছে ও শরীরে জ্বরও উঠতেছে দেখেও
কিভাবে বল আইসক্রীম খাবে? তোমার ভালোর জন্যই
তো তোমাকে খেতে না করেছিলাম। তোমার অসুখ না
থাকলে কি আমি কখনো তোমাকে খেতে না করি তুমি
বুঝ না? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে! বল?
.
- কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন টা হবে না।
- সত্যি(চোখের ভাষায়)
- হুম(চোখের ইশারায়)
তারপর চুপচাপ তাওহীদের বুকে মাথা রেখে আদর-
ভালবাসা নিতে থাকে।পরে আইসক্রীমের বক্স এনে
সাথীকে খাইয়ে দেয়।কারণ সে কখনো সাথীর কথা
ফেলতে পারে না।সাথীও তাওহীদকে খাইয়ে দেয়।এখন
একটু অসুখ হলে হোক না তাদের ভালবাসা তো বেড়েছে।
এভাবেই রাগ-অভিমান ভুলে তারা আবার কাছে চলে
আসে।

MD Mahmudur Rahman Tauhid

No comments:

Post a Comment