Thursday, July 13, 2017

..........যোগ-বিয়োগের সমীকরণ..........

..........যোগ-বিয়োগের সমীকরণ..........

হাটতে হাটতে হাতঘড়িটার দিকে তাকালাম একবার ৷ হাতে পাঁচ মিনিট সময় আছে ৷ বারবার লেট করার জন্য ঘড়িটা দিয়েছিল মেঘা ৷ এক প্রকার হাপাতে হাপাতেই নদীর তীরে এসে দাঁড়ালাম ৷ সূর্যটা তখন পশ্চিমাকাশে ডুবতে বসেছে ৷ নদীর ঘোলা জল পাক খেয়ে ছুটে চলেছে সূর্য সাক্ষাতে ৷ একটু পরেই মেঘা এসে পাশে দাঁড়ালো ৷ ওর খোলা চুলে বাতাসের উদ্মাদনা ৷ কাজল চোখের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে, নাকি চোখ কাজলকে স্বার্থক করেছে তা বরাবরের মতই আমার অন্তর্নিহিত মণীষীগণের বোধগম্য হলো না ৷ আমাকে এভাবে বেহায়ার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘা মনেহয় একটু লজ্জা পেল ৷ মাথা নিচু করে বলল,
> এমন করে তাকাও কেন? (মেঘা)
আমি চোখ নামিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে বললাম
> নদীর জলটা দেখেছ?
> দেখছি তো!
> একটা কথা আছে জানো? মানুষ এক নদীর জলে দুইবার স্নান করতে পারে না
> কে বলল?
> ভাল করে নদীর দিকে তাকাও ৷ নিরন্তর বয়ে চলেছে ৷ সামনে যে জল দেখছো, নিরন্তর প্রবাহিত হয়ে নতুন জল আসছে...
> হুম, বুঝলাম! আমি কি নদী?
> জানিনা, তবে চির নতুন!
> কবি হয়ে গেলে দেখছি
> তেমন ইচ্ছা নেই, তোমায় হারাতে চাইনা
> কবি হওয়ার সাথে আমায় হারানোর কি সম্পর্ক?
> তুমি তো দেখি কিছুই বোঝনা! বেশির কবির কবি হওয়ার পিছনে একটা ব্যর্থ প্রেমের গল্প থাকে
> হুম, গাধামানবকে আজ বড় রোমান্টিক লাগছে
> হা হা হা
> ওই!! রাক্ষসের মত হাসবা না বলে দিলাম
রেগে কটমট করে তাকালো মেঘা ৷ আমি মুখে আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ মেঘা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে সামনে এগিয়ে নদীর আরেকটু কাছে গিয়ে দাড়ালো ৷ হটাৎ মনেহলো পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে ৷ পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা পিচ্চি মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে ৷ আমি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে "কি হয়েছে" সূচক ইশারা করলাম ৷ মেয়েটি বলল,
> আপনি একা একা কার সাথে কথা বলেন?
> কই একা? আমি তো একা নই!
> এখানে তো আপনি ছাড়া কেউ নেই!
আমি আর কিছু না বলে ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে আবার নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়ালাম ৷ মেঘা বলল,
> একটা কথা রাখবে? (মেঘা)
> কি? (আমি)
> জীবনটাকে আবার নতুন করে গুছিয়ে নিতে পারো না?
আমি আবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
> সূর্যাস্তের আর বেশি বাকি নেই
মেঘা করুণ চোখে তাকালো ৷ আমি আবার বললাম,
> বৌমনি, জীবনটা অনেক ছোট ৷ সুখ-দুঃখ দুইয়ে মিলেই জীবন ৷ সুখের যে অধ্যায় আমার জীবন পেয়েছে, তাই বা কতজনের ভাগ্যে জোটে? বাকি জীবনটা কাটানোর জন্য এটুকুই আমার জন্য পর্যাপ্ত!
মেঘা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ৷ কিন্তু আমার ফোন বেজে ওঠার কারনে থেমে গেল ৷ তমার ফোন,
> হ্যালো বাবা, এখনো নদীর পাড়েই দাঁড়িয়ে আছো? (তমা)
> হ্যা, একটু পরেই আসছি মা (আমি)
> কালকের দিনটা মনে আছে?
> হ্যাঁ রে মা, তোর বাবা এখনো ওত বুড়ো হয়নি যে ভুলে যাবে
> হুম, বেশি দেরি করো না
> আচ্ছা ঠিক আছে
ফোন কেটে মেঘাকে আর দেখতে পেলাম না ৷ বাড়ির পথে পা বাড়ালাম ৷ কাল আমার জীবনের একটা গুরুত্বপুর্ণ দিন ৷ অনেক কিছু পাওয়া আর অনেককিছু হারানোর দিন ৷ একটা রিক্সা নিলাম ৷ ইট-পাথরের শহরে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে ৷ আধুনিক ইঞ্জিন লাগানো রিক্সাটি এম্বুলেন্সের মত হর্ণ দিতে দিতে শো শো শব্দে ছুটে চলেছে...

কয়েক বছর আগে-

কলিংবেল চাপতেই মেঘা দরজা খুলে দিলো ৷ কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
> দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকো নাকি?
> কেন?
> এইযে বেল চাপতেই খুলে দিলে!
> ও হ্যালো, আমার কিচেনের জানলা দিয়ে গেট দেখা যায়, জানোনা যেন!
> হুম, বেশ সজাগ তুমি, গোয়েন্দা বউ
> হইছে, এবার ফ্রেস হয়ে উদ্ধার করেন আমায় ৷ আমি রান্নাঘরে গেলাম
> জো হুকুম বৌমনি
> ওই!! একদম বৌমনি বলবা না, ব্যাকডেটেড লাগে
> ভালবাসা পুরান হয়না
> জানি, যাও এবার
> ওক্কে

পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হলেও মেঘার সাথে আমার সম্পর্কটা কলেজ জীবন থেকে ৷ কম কথা বলার কারনে কলেজে তেমন কারো সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি আমার ৷ একা একাই সময় কটতো ৷ হটাৎ করেই সে একাকিত্বের জীবনে চলে আসে মেঘা ৷ শুরু হয় একসাথে পথচলা ৷ ওকে প্রপোজ করার দিনটার কথা মনে পড়লে আজও হাসি পায় ৷ বন্ধুত্ব ততদিনে ভালবাসায় গিয়ে পৌছেছে, কিন্তু সেটা মনেমনেই ৷ সেদিন হটাৎ করেই মেঘা ফোন দিয়ে বলল,
> বিকালে দেখা করতে পারবি একটু? (মেঘা)
> কেন? (আমি)
> দরকার আছে, বিকালে নদীর পাড়ে আসবি
> ওকে

বিকালে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখি মেঘা আগেই এসে দাঁড়িয়ে আছে,
> কিরে, কখন আসলি? (আমি)
> এইত একটু আগেই (মেঘা)
> ও, হটাৎ দেখা করতে বললি যে?
> একটা গুড নিউজ আছে
> কি?
> আমার বিয়ে! নে, প্রথম কার্ডটা তোকেই দিলাম (আমার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিল)
> কি!!?? না...
> না মানে?
> তুই বিয়ে করতে পারবি না
> কেন? সারাজীবন কি অবিবাহিত থাকবো নাকি?
> না, কিন্তু অন্য কাউকে বিয়ে করবি কেন?
> অন্য কাউকে মানে?
> ধুর! তুই বুঝবি না
> বোঝা লাগবে না, গেলাম আমি...
কার্ডটা দিয়ে চলে গেল ৷ আমি কৌতূহল নিয়ে কার্ডটা বের করলাম ৷ কিন্তু একি? এটা তো একটা ফাকা কার্ড, কিছুই লেখা নেই ৷ খামের মধ্যে আরও একটা চিরকুটের মত কিছু একটা আছে ৷ বের করলাম,
"গাধামানব, এই কাগজে আমার জন্যে একটা কবিতা লিখে আমার সামনে এসে হাটু গেড়ে আমায় প্রপোজ করবে ৷ তার আগে আমার সামনে আসলে ঘাড় মটকে দেবো ৷"
এটা মেয়ে, নাকি শাকচুন্নি? মহা ফ্যাসাদে পড়লাম ৷ গভীর চিন্তমগ্ন অবস্থায় কামড়ে কামড়ে কলমের মুখটা ক্ষত-বিক্ষত করেও এক লাইনও কবিতা বের হলো না ৷ তিনদিন হয়ে গেল, মেঘার সাথে দেখাও করতে পারছি না ৷ চতুর্থদিন মেঘা ফোন করলো,
> কোথায় আছিস? (মেঘা)
> বাড়িতেই (আমি)
> এখনি নদীর পাড়ে এসে দেখা কর
> কিন্তু কবিতা লিখতে পারিনি তো!
> পারবিনা জানি তো, এমনি এমনি তো আর গাধামানব বলি না ৷ জলদি আয়, আমি অপেক্ষা করছি
একপ্রকার দৌড়ে গেলাম নদীর পাড়ে ৷ আসার পথে একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে এসেছি ৷ মেঘার সামনে গিয়ে দাড়াতেই বলল,
> প্রপোজটা কি করতে পারবি? (মেঘা)
> চেষ্টা করে দেখি, দশ মিনিট সময় পাবো? (আমি)
> কেন?
> প্রাকটিস করে নিতাম একটু
> লাগবে না, প্রাকটিস ছাড়াই কর
পকেট থেকে কৃষ্ণচূড়ার ফুলটা বের করে হাটু গেড়ে ওর সামনে বসে ফুলটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
> আমি তোকে খুব ভালবাসি, তোকে বিয়ে করতে চাই, তুই কি রাজি?
> এটা প্রোপজ?
> হয়নি?
> থাক, ঢেড় হয়েছে!! আর দরকার নেই
> রাগ করলি?
> না, হাতটা ধর, ধরে চুপ পরে দাড়িয়ে থাক
> ওকে
> কোন কথা বলিস না, নিরবে নদীর বয়ে যাওয়ার শব্দ শোন
আমি মেঘার হাত ধরে নিরবে দাড়িয়ে রইলাম ৷ মেঘার চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কি দেখছে ৷ কিন্তু বুঝতে পারলাম না ৷ সে দৃষ্টি নদীর জলরাশি ছাড়িয়ে দিগন্তে মিশেছে ৷ আমিও তার দৃ্ষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বললাম,
> "শরৎ সকালে, কাশবন ফাঁকে
মাতাল হাওয়ার দোলা
তোমায় ছুঁতে এসে, দৃষ্টিতে মিশে
ভুলেছে সে মন ভোলা
বলবে সে আজ, শুনবে কি তুমি?
আছে কি সে অবসর?
না বলা কথা, হৃদয়েতে গাথা
বিরহতে মরমর!
ভয়ে ভীত মন, হারনোর ক্ষণ
ছেড়ে গিয়ে ফিরে আসি
ঝুমকোয় দুলে, কানে কানে বলি
ভালবাসি ভালবাসি !!

সেদিন অবাক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল মেঘা ৷

> ওই, একা একা হাসো কেন?
মেঘার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম ৷ মেঘা আবার বলল,
> কি ভাবছিলে?
> না কিছুনা ৷ খুদা লাগছে, রান্না শেষ?
> এখনো বিশ মিনিট মত লাগবে ৷ থাকো, রান্না শেষ হলে নিয়ে আসব
> ওকে, আমি ততক্ষণে কাজ সেরে নেই একটু
মেঘা চলে গেল, আমিও ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলাম ৷ একটু পরেই মেঘা ভাত নিয়ে আসলো ৷ আমাকে কাজ করতে দেখে বলল,
> এক অজুহাত রোজ রোজ, তাই না? (মেঘা)
> কিসের অজুহাত? স্ত্রী হিসেবে এটা তোমার দ্বায়িত্ব (আমি)
> হইছে, হা করো এবার
অতঃপর মেঘা আমায় খাইয়ে দিতে লাগলো ৷ আমি কাজের ফাকে ফাকে খেতে লাগলাম ৷ এটা নতুন কিছু না, রোজকার ঘটনা ৷ সকালের খাওয়ার দৃশ্য দেখলে তো আরও অবাক হবেন ৷ সকালে অফিস যাওয়া ব্যস্ততা থাকে ৷ আমি রেডি হই, আর মেঘা ভাত নিয়ে আমার পিছে পিছে ঘোরে ৷ শার্টটা পরলাম, একগাল ভাত দিলো ৷ টাইটা পরলাম, আরেকগাল ৷ মাথা আচড়ানোর ফাকে আরেকগাল ৷ কিছুটা বাচ্চাদের খাওয়ানোর মত ৷ চোখ বুজে দৃশ্যটা কল্পনা করেন একবার ৷ হাসার কি আছে? আমাদের ভালবাসা এমনই, হু!!

আমাকে খাওয়ানো শেষ করে মেঘা নিজের জন্য নিয়ে আসলো ৷ ওহ, আরেকটা মজার বিষয় তো বলাই হয়নি ৷ আমারদের খাওয়ার জন্য একটাই প্লেট ৷ আরও প্লেট আছে, কিন্তু সেগুলো অতিথি না আসলে বের হয় না ৷ এই একটা প্লেটেই আমাদের দুজনের খাওয়া ৷ আমার জন্য আনা পুরোটা খাবার আমার খাওয়া হয়না ৷ শেষে অল্পকিছু রেখে দিতে হবে ৷ তারপর তাতেই আবার খাবার নিয়ে মেঘা খায় ৷

খাওয়া শেষ করে মেঘা এসে বলল,
> তোমার কতক্ষণ লাগবে? (মেঘা)
> আর একটু বাকি, তুমি শুয়ে পড় (আমি)
> না
> কেন?
> আজ পূর্নিমা, তিনজন মিলে চাঁদ দেখব?
> তিনজন কোথায় পেলে?
> (নিরব)
উত্তর না পেয়ে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে মেঘার দিকে তাকালাম ৷ মাথা নিচু করে আছে ৷ আমি ওর মুখটা তুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম ৷ মেঘা হ্যাঁ সুচক মাথা দোলালো ৷ মুহুর্তে পৃথিবীর সকল সুখ যেন আমার চারপাশে ঘিরে ধরলো ৷ কিছুক্ষণ কিছু বলতে পারলাম না ৷ তারপর আস্তে করে একটা হাত মেঘার পেটে রাখলাম ৷ অজান্তেই চোখটা জলে ভিজে উঠলো...

অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে আছি ৷ ভেতর থেকে মেঘার চিৎকার শোনা যাচ্ছে ৷ ওর খুব কষ্ট হচ্ছে নিশ্চই ৷ এজন্যই বোধহয় সন্তানকে মায়ের নাড়ী ছেড়া ধন বলে ৷ মেঘার চিৎকার কমে এসেছে ৷ বোধহয় ইনজেকশন নিয়ে অজ্ঞান করেছে ৷ অনেকক্ষণ কেটে গেল ৷ আমি অপারেশন থিয়েটারের লাইটটার দিয়ে তাকিয়ে বসে আছি ৷ হটাৎ লাইটটা নিভে গেল ৷ একজন ডাক্তার বেরিয়ে এলেন ৷ আমি উঠে দাঁড়াতেই উনি বললেন,
> কনগ্রাচুলেশান, আপনার মেয়ে হয়েছে
কিন্তু তার মুখটা শুষ্ক মনে হলো ৷ আমি বললাম,
> মেঘা কেমন আছে?
> (নিরব)
> কি হলো? মেঘা ঠিক আছে তো? (একটু উচ্চস্বরেই বললাম)
> সরি প্রিতম সাহেব, সি ইজ নো মোর
চোখ ফেটে জল আসতে চেয়েছিল সেদিন ৷ অনেক কষ্টে আটকাতে সফল হয়েছিলাম ৷ মেয়েটার উপরে রাগ হয়েছিল খুব ৷ কিন্তু দেখার পর আর রাগ করে থাকা সম্ভব হয়নি ৷ ওর চোখটা ঠিক ওর মায়ের মত  ৷ নামটা মেঘাই ঠিক করে রেখেছিল, তমা ৷ সেদিন থেকে তমাকে নিয়েই আমার পৃথিবীর আহ্নিক গতি - বার্ষিক গতির ঘূর্ণয়ন...

বাসায় ফিরে মেঘার ছবিটার সামনে গিয়ে দাড়ালাম ৷ মেঘাকে চলে যাওয়ার আট বছর পূর্ণ হবে আগামিকাল ৷ সেই দিন, আমার জীবনের পাওয়া আর হারানোর দ্বন্দে ক্ষত-বিক্ষত একটা তারিখ ৷

জীবন মানেই কিছু পাওয়া আর কিছু হারানোর যোগ বিয়োগের অসমাপ্ত সমীকরণ ৷ যা পেয়েছি তার হাত ধরে আর যা হারিয়েছি তার অস্তিত্ব অন্তরে ধারণ করে নিরন্তর সংগ্রামে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই জীবন!!
:
:
(ক্ষুদ্র লেখক, ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
.......✍ নির্ঘুম চড়ুই (Pritom) ✍

No comments:

Post a Comment