Thursday, July 6, 2017

গল্প:টক মিষ্টি ঝাল ঝাল

গল্প:টক মিষ্টি ঝাল ঝাল

বিভ্রান্ত বাউণ্ডুলে।

-এই যে ভালো করে দেখো এই ছবিটা।এই ছেলের সাথেই আমার বিয়ের কথা হচ্ছে।

-হু, দেখতে ভালোই। কিন্তু চেহারায় একটা ছ্যাবলা ছ্যাবলা ভাব আছে।

-ছ্যাবলা মানে?

-ওই একটু ছোঁচা টাইপ আর কি!

-কি?

-না। কিছু না।

-এই শোনো! ছ্যাবলা হলেও ভালো। তোমার মতন অকর্মা না।

-ভালো তো। বিয়ে করে ফেলো। তোমাকে না করেছে কে?

-করবই তো।  তোমাকে যেন আমার চোখের সামনে আর না দেখি।

-আচ্ছা।

-ব্রেকআপ কিন্তু।

-আচ্ছা।

নওমীর সাথে যেদিন রাতে আমার ব্রেকআপ হয় সেদিন আমার ঘুম ভালো হয়। টেনশন থাকে না।আর তাছাড়া এই ব্রেকআপ -ব্রেকআপ খেলা আমার মন্দ লাগে না। এই নিয়ে কম করে হলেও বিশ পঁচিশ বার ব্রেকআপ হয়েছে আমাদের।

পরদিন অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করে বাসস্ট্যান্ডের ওপর দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। কদম মুচি ডাক দিলো, মিয়া ভাই হুইনা যাইন?

কদম মুচির বক্সের ওপর বসে বললাম,
- কি সিগারেট খাস?
-নেভি। দুইডা টান দিবেন নাহি?
-দে,দেই। নেভির সাথে বেনসনের ফ্লেভারে মিল আছে।
-হ।

নেভিতে দুটো টান দিতেই দেখি এক বোরকা পরিহিতা  মেয়ে, মুখ ঢাকা। জুতা সেলাই করতে এসে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমার কাছে যদিও চোখ দুটো খুব চেনা চেনা লাগছিলো তবু সাত পাঁচ না ভেবে চোখ মেরে বসলাম।

ওমা! মেয়েটি দেখি কটমট করে তাকায়!
জুতা সেলাই শেষ হতে না হতেই আমাকে টান দিয়ে নিয়ে গিয়ে রিকশায় উঠিয়ে মুখের পর্দা সরালে দেখি,  এ তো নওমী!
-ওই! তুমি রাস্তা ঘাটে মেয়েদের চোখ মেরে বেড়াও?

-তোমার অসুবিধে কি? তোমার সাথে তো ব্রেকআপ আমার।

-তার মানে এর আগে যতবার তোমার সাথে আমার ব্রেকআপ হয়েছে ততবারই তুমি মেয়েদের চোখ মেরেছো?

-তখন তো কেউ বোরকা পরে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকায়নি।

-ফাজিল!  তুই মুচির বিড়িতেও টান দিস?

-হু, দেই তো। পকেটে টাকা না থাকলে।

-এই ঠোঁটে তুই আবার আমাকে কিসও করছিস! ওয়াক থু! থু!

-মুচিরাও তো মানুষ।

-তুই কথা বলবি না আমার সাথে। তোর সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে।

-সকাল বিকাল নিয়ম করে কয়েকদিন জিনজার চুটকাও তবে। রুচি চলে আসবে।

-ফাজিল। তুই নাম রিকশা থেকে।

-পেত্নী! তুই আমাকে উঠাইছিস কেন রিকশায়? যা! ব্রেক আপ! ব্রেকআপ!

দুইদিন পর।
আমাদের শহরে নিরালা মোড়ে নতুন যে ফাস্ট ফুডের দোকান হয়েছে সেখান বসে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে কফি খাচ্ছিলাম আর আমি বকবক করছিলাম। কারণ ব্যথাটা আমারই বেশি ছিল সেদিন।

কি যে দিনকাল আইলো! মনে কর প্রেম কইরাও সুখ নাই। এক দুইদিন কিস করতে না করতেই কয়, আমার বিয়া আইছে। অপেক্ষা করতে পারুম না। বিয়া করো।
চিন্তা করছি  এহন থিকা ম্যায়া না পটাইয়া ম্যায়ার আম্মারে পটামু। ম্যায়ার আম্মা রাজি থাকলেই সুবিধা বেশি। বিয়ে শাদী আসলেও লাভ নাই, আমার জন্য বসাইয়া রাখব।

আমি এই কথা শেষ করতে না করতেই সোহেল আমাকে চিমটি দেয়।
-কি হইছে? চিমটাস ক্যা?
-শালা! দেখ! পেছনের টেবিলে নওমী ওর মা কে নিয়ে বসে আছে।

ওমা! পেছনে তাকিয়ে দেখি মা মেয়ে দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

সেদিন রাতে বাসায় ফিরতে না ফিরতেই নওমী ফোন দিয়েছে। আব্বা কাছেই ছিলেন। আমি ফোন কেটে দিলাম। আব্বা চোখ বড় বড় করে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

রাতে ফ্রি হয়ে নওমীকে ফোন দিয়ে বললাম,
-তোমার আম্মার সাথে বার্গার খেতে যাও কবে থেকে? হু?

-ফাজিল! অসভ্য! আমি তো আম্মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম তোমার আমার আমার সম্পর্কের কথা বলতেই। আর তুমি?

-মানে ব্রেকআপের কথা বলতে?

-বান্দর! তোকে খুন করব আমি।

-কেন?

-চুপ।

-আচ্ছা।

-আমার আম্মা তোর কাজকাম দেখে আর আমি যা বলছি তোর ইতিহাস সেই সব শুনে কি বলছে জানিস?

-কি?

-ছেলেটা আসলেই বান্দর!

-অ!

-অ কি?  অ কি? আগামী শুক্রবার আমাকে দেখতে আসবে। বিয়ে মোটামুটি ফাইনাল।

-তবে তো ব্রেক আপই ঠিক আছে আমাদের। তাই না?

- ফাজিল!

নওমী ফোন রেখে দিলো।
আমি একখান ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুম।

কয়েকদিন পর।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে দুপুর বেলা বাসায় এসে আম্মাকে বললাম, আম্মা ভাত দেন। খিদে লাগছে খুব।
দেখি আম্মা ছোট বোনের চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে। আমাকে দেখে খানিকটা  গলা ঝেড়ে আমার বোনকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেছে, শোন আমাদের পাশের বাসার জামান সাহেবের যে মেয়েটা আছে, নওমী। কি লক্ষ্ণী মেয়ে!

মেয়েটা অনার্স শেষ হতে না হতেই প্রাইমারী স্কুলে একটা চাকুরী জোগাড় করে ফেলল। আজ সকালে ওর মা এসে বাসায় বলে গেলো। আর তোর ভাই মাস্টার্স দিয়ে বসে আছে। কবে রেজাল্ট হবে আর কবে চাকুরী করবে কে জানে?বোনটাও দেখি আম্মার সাথে সুর মেলাচ্ছে।
-জি আম্মা।
শোন ওই মেয়ে কিন্তু পড়াশোনাও করবে। বলতেছে এখনই বিয়ে করবে না। এই চাকুরী ছেড়ে ভালো কোনো চাকুরী পেলে তারপর বিয়ে করবে।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, আম্মা ওর যে বিয়ের কথা হচ্ছিল একটা সেটার কি হলো।
-আম্মা মুচকি মুচকি হেসে বলে  সেটা জেনে কি হবে তোর?
-আম্মা! বলেন না?
-না করে দিয়েছে ও।
-সত্যি?
-হু।
-রাতে আপনাদের সন্দেশ খাওয়াবো।
-বেশরম ছেলে!  যা ভাগ এখান থেকে।

পরদিন দুপুরে কি একটা কাজে ভিক্টোরিয়া রোড গিয়েছিলাম। চলে আসব ঠিক তখনই ক্যাপসুল মার্কেটের সামনে দেখি নওমীর সবচেয়ে কাছের বান্ধবী উর্মি। আমাকে দেখেই বলল,
-ভালো আছেন ভাইয়া?
-আছি একরকম।
-আপনার সাথে আমার একটা ব্যাপার শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম। একটু সময় দিবেন?
-বলো।
- একটা ছেলে আমাকে ভালোবাসত অনেকদিন ধরে। সে কয়েকদিন আগে কথাটা বলেছে আমাকে। আমিও রাজি হয়েছি। কিন্তু ওর মা ওর বিয়ের জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করে রেখেছিলো আগে থেকেই। ও সেটা জানতো না। এখন ওর মা চাচ্ছে, ও ওর মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করুক কিন্তু ও চাচ্ছে আমাকে। এই নিয়ে মা আর ছেলের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এখন আমি কি করব বলেন তো ভাইয়া?
-তুমি আমার সাথে প্রেম করো।

উর্মি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো আমার মুখের দিকে। আমি আর কিছু না বলে চলে এলাম সেখান থেকে।

সেদিনই সন্ধ্যার কিছু আগে এলজিইডি মোড়ে জসিমের দোকানের সামনে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে চা বিড়ি খাচ্ছিলাম। সোহলে খোঁচা মেরে বলল, ওই দেখ তোর পাখিটা আসছে,নওমী।
নওমী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ডাকছে আমাকে। আমি দেখেও না দেখার ভাণ করে আছি। সোহেল বলছে,
-কিরে যাস না কেন?
- ওদিকে তাকাস নে।মাইর দিবে।

নওমীর ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলো।
-এই শোনো?
-বলো
-উর্মিকে কি বলছ তুমি?
-বলছি উর্মি তোমার বান্ধবী বিশ্ব সুন্দরী।
-ফাজিল!
-এহ!  ভালো ছেলে।
-শোনো তোমার মতলব খুব খারাপ। ভালোভাবে বলছি কাজী অফিসে চলো।
-আমি দেনমোহর দিতে পারব না।
-দিতে হবে না।
-বিয়ের পর তুমি থাকবে কোথায়?
-তোমাকে ছয় মাস সময় দিব।
মনে মনে বলি এটাই তো চাচ্ছিলাম আমি, মুখে বলি
-তাহলে কদম মুচিকে সাথে নিয়ে যাই?
-কেন?
-সাক্ষী দিবে বিয়েতে।
-যা! ফাজিল! অসভ্য!

No comments:

Post a Comment