Sunday, July 23, 2017

গল্প: এবং অতঃপর

গল্প: এবং অতঃপর
_--------_-----------------_-
আমার ঘুম আসছে না।
ঘুম আসছে না এটা আবার কেমন কথা?
না ঘুমালে ঘুম আসবে কিভাবে?
জানি না, আমার ঘুম আসছে না? (আহ্লাদী স্বরে)
আচ্ছা আমি কি করি বলো?
আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও,,,,,,,
কিভাবে কি? ফোনে কিভাবে তোমাকে ঘুম পাড়াই?
আম্মুকে ডাক দাও উনি ঘুম পাড়িয়ে দেবেন।
উহু,,, আম্মুকে বললে অনেকগুলো বকা দেবে। তুমি দাও না!!!
এই মেয়েকে নিয়ে ঝামেলায় আছি, প্রেমের স্বাদ একেবারেই মিটে গেছে। কেনো যে সিংগেল থাকতে প্রেমিকার জন্যে হাহাকার করতাম? সেই হাহাকার হয়তো কেউ শুনে আমার গলায় এই মেয়েকে প্রেমিকা হিসেবে বেধে দিয়েছেন।
এবার পরিচয় দিয়ে নেই, আমি রোমন,, যার সাথে কথা বলছিলাম উনি আমার হবু স্ত্রী , নীরা।
নওরিন জাহান নীরা।
এখন থেকে আমার সাথে যা হচ্ছে না জানি বিয়ের পর কি হবে।
আমাদের বিয়েটা হয়েই যাবার কথা ছিলো কিন্তু মাঝখানে সে বাধা হয়ে দাড়ালো তার নাকি আগে পড়া শেষে করতে হবে তারপর পরিবার সামলানোর প্রশিক্ষণ করবে তার পর বিয়ে, অবশ্য সেগুলা আমাকে একা নিয়ে বলেছিলো।
যাতে আমি বিয়ের দিনটা পিছিয়ে দেই, কারন বাবা মায়ের অনেক পছন্দ হয়েছে নীরাকে, আর আমারো।
সব মানলাম, কিন্তু পরিবার সামলানোর কোর্স, সেটা আবার কি?
আরে মিঃরান্না বান্নার কথা বলছি, এখন গেলে খাবার খেয়ে খুন করতে চাইবেন, ভালোবাসতে না। বলে সে কি হাসি।।।।।
মেয়েটার হাসি অনেক চমৎকার একেবারে পাগল করা হাসি। মনে মনে বললাম বালিকা শুনো এই হাসি যদি পরে তোমার না থাকে জেনে রেখো একফোঁটাও ভালোবাসা পাবে না।
পরে মা কে বলে বিয়েটা চারমাস পিছিয়ে দেয়া হলো, এরমাঝে ওর ফাইনাল এক্সাম হয়ে যাবে আর কয়েকদিন সেই কোর্স্টা করবে।
কিন্তু আসলে তিনি তেমন কিছু চান নাই, আমার সাথে ভালোকরে মিশতে চেয়েছেন সারা জীবনের কথা বলে।
সেই থেকে মিষ্টি যন্ত্রনা শুরু।
আমারো খারাপ লাগে না, কারণ যে জ্বালাচ্ছে সে তো আমারই একজন, একমাত্র একজন।
কি হলও কোথায় হারিয়ে গেলে? ভীষন ঘুম পাচ্ছে কিন্তু ঘুম আসছে না।
আচ্ছা ভেবে নাও আমি সামনে আছি আর তুমি দেখছো, দেখবে দেখতে দেখতেই ঘুম চলে আসবে।
কি যাতা বলছো তুমি সামনে থাকলে কি আমি ঘুমাবো নাকি?
তাহলে কি করবা?
যাই করি না কেনো আমার ব্যাপার।, আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও না প্লিইইজ।
আচ্ছা ধরে নাও আমার বুকে শুয়ে আছো এভাবে ভেবে শুয়ে থাকো ঘুম চলে আসবে।
আচ্ছা,,,,,,,
কিছুক্ষন নিরবতা
এই শুনছো গালে একটু আদর করে দাও না!!!
হুম দিলাম,,
না এভাবে না, ঠান্ডা হাতটা রাখোনা আমার গালে।
আচ্ছা,,,,,
এভাবে বলছো কেনো? কিছু বলতে পারো না?
কি বলবো?
আমি যদি সব বলে দেই তবে ঘুমাবে কে?
অহ তাইতো? আচ্ছা বলছি।
অনেক্ষণ কথা বলার পর সাড়াশব্দ না পেয়ে ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো!
কল কেটে দিলাম।
ঠোটের কোনায় একটা হাসির রেখা খেলে গেলো আমার।
কলেজ ভার্সিটিতে সময় অনেক পার করলেও প্রেমের হাওয়া লাগে নি আমার,
তার প্রধান কারন, আমি অতি মাত্রার বাচাল। বাচালের শেষ সীমা বলে কথা।
আর বড়ো কথা মেয়েদের পচাইতাম অনেক বেশি।
যার ফলে ক্লাসমেটগুলা সেরকম চোখে দেখতোনা।
আমিও আর মাথা ঘামাইনাই। বন্ধুরা মাঝে মাঝে প্রেমিকার ধাবড়ানি খেয়ে আমার কাধে কাধ মিলিয়ে মেয়েলি গলায় কান্না, হা হুতাস করতো, আমার সে কি ভালো লাগা,,,,,,,।
পরে আমি অবশ্য অনেক ঝামেলা মিটাইয়া দিছি,
এক্ষেত্রে আমাকেও অনেক ঝাড়ি, ধোলাই খেতে হয়েছে,(দেবর বলে কথা ভাবিরা ভাইয়ের উপরের রাগ আমার উপরে ঝাড়তেই পারে)
ভাইটাকে অনেক ভালোবাসে কি না!
মাঝে মাঝে আফসুস হতো অনেক, আমার দিকে কোনো মেয়ে আসে না কেনো? আমাকে ভালোবাসে না কেনো?
পরে সমাধান করেছিলাম অবশ্য,,,,,
ক্লাসমেট মেয়েদের বাদ দিলাম, তাদের সাথে আমার বনিননা নাই, যার ফলে জুনিয়র মেয়েরা আমার নামে খোজ নিলে তারা যা নয় তা বলে মামলা ডিস্মিস করে ফেলতো। নিজে তো করবেই না অন্যকেও সুযোগ দেবে না।
যাক আমার কপালেও প্রেমের ফুল ফুটলো অবশেষে।
যাকে ভালোবাসি সে আমারই হচ্ছে, মাত্রইতো কয়েকদিন মাত্র।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা।
ভোরে ফোনের ডাকে ঘুম ভাংলো, বউপাখি নামাজের তাগিদ দিচ্ছেন।
পড়তেই হবে নাহলে,,,,,,,,, বাকি কিছু হলে দিনটাই মাটি।
কথাবলা ছেড়ে দেবেন উনি।
আর উনার সাথে এখন কথা না বললে আমার দিন যায়ই না।
বউ বলে কথা।
এখনি যদি এই অবস্তা, এতো বউ পাগলা কেনো আমি? না জানি বিয়ের পর কি হয়?
কয়েকদিন পর, আমাকে সেই মাপের রিকুয়েস্ট, আমি যেনো উনার ক্যাম্পাসে যাই একবার, অনেক বড়ো মাপের দরকার।
বস কে বুঝিয়ে সুজিয়ে ছুটি নিয়ে চলে আসলাম।
উনাকে ফোন দিলাম,বললেন ক্যান্টিন এ চলে আসতে।
সেখানে গিয়ে তো আমার ভিমরি খাবার যোগাড়,
উনার সব বান্ধবী উনাকে ঘিরে আছে, আমার জন্যে অপেক্ষা করছেন।
আমি যেতেই সবাই সেই মাপের অভিনন্দন জানালেন।
একটু অস্বস্তি লাগছিলো, এতো গুলা মেয়ের সামনে কিভাবে কথা বলি।
য হোক সব মেয়েরা অভার স্মার্ট নানা ভাবে কথা বলছিলো, যেনো আমি কোনো পপুলার কেউ একজন,
আর সেই মাপের কথা ইউ আর সো হট!! নীরা সো লাকি!!
এরকম আরো অনেক উক্তি।
বাপরে মেয়েরাও এতো এডভান্স?
আমার সময় হলে হালি হালি প্রেম করতাম, কিন্তু সে সময় এমন ছিলো না।
সবাই আমাকে ঘিরে আড্ডা মারছে কিন্তু নীরা একা বসে, কেউ তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না, আমিও না।
সহ্য করতে না পেরে সে সবাইকে বললো, এই আমার জিনিস নিয়ে তোরা এতো মাতামাতি কেনো? আমাকেও যোগ কর।
জবাবে তাদের একজন বললো,
ভুলে গেছিস? তুই ই তো বলতি তোর জামাই হলো আমার জামাই, আর আমার জামাই তোর দুলাভাই।
আজ আমরা বদলা নিচ্ছি।
বলে কথাটা রিপিট করলো, এবং সবাই একসাথে।
দেখলাম বেচারির চেহারা পাল্টে গেছে। কেমন জানি লাগছিলো।
আমিও তাকে খেপানো জন্যে তাদের সাথে মিশে নানা কথা বলেই যাচ্ছি। একবারো ভাবি নাই অনেক আহ্লাদী মেয়ে নীরা, সামান্যতেই খেপে যায়। মেয়েপার্টিও আমাকে তাদের দলে পেয়ে অনেক খুশি, বান্ধবীদের মাঝের সবচেয়ে ফাজিল মেয়ে আজ কোনঠাসা।
একজন আমার কাধে হাত রেখে দিয়েছিলো , আমিও কিছু বলি নি দেখে সে খেপে যায়।
সেখানে কিছু বলে নি অবশ্য, তবে মুখ দেখে বুঝেছিলাম কিছু একটা আছে।
পরে উনাকে ছাড়িয়ে নেই।
নীরার বিভিন্ন সময়ের মঝাদার ঘটনাবলি একেকজন বলছে আর আমরা সবাই হাসছিলাম।
সবাইকে কফি পার্টি দিয়ে অনেক্ষন পরে চলে আসলাম, অনেক মজা লাগলো।
নীরাকে নিয়ে বের হলাম, একটাও কথা বলছে না আমার সাথে,
ব্যাপার কি?
নিরবতার সাথে চলে আসলাম পয়েন্ট এ, এখন সে একদিকে যাবে আর আমি আরেকদিকে।
আমি বললাম আমি চলে যাবো, তোমাকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসবো নাকি?
কিছু না বলেই উনি রিক্সা ডেকে উটে চলে গেলেন।
আমি নির্বাক দাড়িয়ে থাকলাম।
ভাবছিলাম সে ফিরে আসবে, কিন্তু সেরকম কিছু হচ্ছে না দেখে আমিও বাসায় চলে আসলাম।
নীরা কি রাগ করলো নাকি?
বাসায় এসে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছি কলের অপেক্ষায়, কিন্তু কোনো নাম নেই।
মেসেজের টোন শুনে তড়িদগতিতে হাতে নিয়ে দেখি জিপি অফার।
সবাই মজা করছে। সিমটাই বা বাদ যাবে কেনো?
রাত প্রায় এগারোটা,আমার হবু শাশুড়িআম্মার কল।
আমাকে নাকি এখুনি যেতে হবে।
কি ব্যাপার কিছু হয় নাই তো?
আম্মু কে বুঝিয়ে বের হয়ে পড়লাম, এতো রাতে কিছু পাবোনা তাই পাশের ফ্লাটের জাবেদ ভাইয়ের সাইকেলের চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, নীরাদের বাসা বেসি দুরে নয় মাত্র পঁচিশ মিনিট লাগলো। অনেক স্পিডেই এসেছি , কি না কি হয়েছে কে জানে?
বেল চাপতেই দরজা খুলে গেলো।
যা শুনলাম তার মুল হল নীরা দুপুরে বাসায় এসে অনেক রাগারাগি করেছে, কয়েকটা গ্লাস ভেংগে তার পর নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বসে আছে, কারো কথাই শুনছে না।
বলতে বলতে আম্মা কেদেই দিলেন, মেয়েটা সকালে কি না কি খেয়েছে সারাদিন কিছুই খায় নি? একমাত্র মেয়ে বলে কথা,।।
আমি ফোন দিচ্ছিলাম কিন্তু বন্ধ, পরে দরজার কাছে গিয়ে ডাকলাম,
কয়েকবার ডাকার পর জবাব আসলো কে আমি?
অবাক হয়ে বললাম, আমি কে? আমি রুমন, দরজা খুলো প্লিজ!
আমি এই নামের কাউকে চিনি না, আমাকে একা থাকতে দাও।
কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না, তারপর মনে হলো দুপুরের ঘটনা মনে হয় অনেক দুর এগিয়ে গেছে।
তাই বললাম দেখো তুমি দরজা না খুললে আমি এখান থেকে একপাও নড়বো না, আর খাবার তো দুরের কথা, আমিও খাবো না কিছুই।
তিনি বললেন কেউ খেলে কি আর না খেলে কি? আমার কিছুই যায় আসে না যাও এখান থেকে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর রফায় আসলাম উনি দরজা খুললেন।
মাত্র দরজা খুলতে এতো সময় না জানি ব্যাপার জানতে কতো সময় লেগে যায় কে জানে?
মেয়েটা অনেক কেদেছে আরে এতো কাদার কি আছে, কিছু ঝামেলা হলে আমাকে বললেই পারে।
সবকিছুর মুলে আজকের মিটিংটাই।
এখানে না গেলে আজ এমন হতো না।
আমি কিছু বলার আগেই তার ফোন অন করে তাদের গ্রুপের মেসেজ দেখতে বললো, রিক্সায় উটার পর থেকেই মনে হয় মেসেজগুলা শুরু হয়েছিলো।
কথাগুলো হলো,
আমি নাকি মেয়ে পাগলা, কেমন করে সবার মাঝে বসে পড়েছি,
হবু বউকে পাত্তাই দেই নি তার বান্ধবীদের বেশি দাম দিয়ে ছি, নুভা নামের মেয়েটা লিখেছে, দেখছিস আমি গায়ে হাত দিছি তারপরেও সরায় নি, দেখছিস কেমন ছেলে?আমি একবার কল দিয়ে কথা বললেই আমার সাথে লাইন মারতে শুরু করবে।
কি হচ্ছে এসব? সামান্যকেই এতো বড়ো করে ভেবে নেন নাকি উনারা?
এমন অনেক লম্বা চ্যাট, বাকি আর পড়লাম না।
নীরার কাছে গিয়ে বললাম,দেখো এখানে আমার কি দোষ? তুমিই তো সবার সাথে দেখা করানোর কথা বলে আমাকে নিয়েছো, আগে বলে দিলেই তো পারতে জেতাম না, আর আমি ভেবেছিলাম তোমার ফ্রেন্ডস দের সাথে ভালোভাবে কথা বললে তুমি খুশি হবে তাই।
আর বিশ্বাস করো আমি অন্য মেয়েদের প্রতি মোটেও আগ্রহী না,পড়ালেখার বয়সে যা পারি নাই এখন কি করে পারি?
কি হলো কথা বলছো না কেনো?
এখনো ফুপিয়ে যাচ্ছে, এতো কাঁদতে পারে নাকি কেউ?
আসল কথা আমাকে জানালেই তো হয়।
নীরার কাছে হাটু ঘেড়ে বসে হাতটা আমার হাতে নিয়ে বললাম,
দেখো তোমার হাতটা আমার হাতে নিয়েছি অনেক ভরষা করেই, প্রিয়জনের হাতের ছোয়ায় ও ভালোবাসার বিশ্বাস থাকে। আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমার হাত ছাড়াবে না, আর চাইলেও পারবে না। আবার এখানে অন্যকেউ যদি জোর দেয় তাহলে হয়তো আমার ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পারবেনা কিন্তু দুজনের মাঝে ভুলবুঝাবুঝির বীজ বুনে দেবে।
এবার তুমিই ভেবে দেখো আমি তাদের সাথে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছি যে তারা বুঝুক যে তোমার বর লাজুক লতা মার্কা নয়। কিন্তু সেখানে তারা অন্য পথে কথা বাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
যদি মনে হয় আমার হাত আছে ওখানে, আমাকে বলতে পারো আমি নিজেকে গুটিয়ে নেবো। মনে করবো আমি এসবের যোগ্য না, তোমারো যোগ্য না। তবে জেনে রেখো জীবনেও কোনো মেয়েকে সম্মান দিয়ে কথা বলবো না, উনাদের দেবী ভেবেছিলাম আমি, এটাই কি আমার অপরাধ?
এতো কিছুর পরেও সে তার মতোই ফুঁপিয়ে যাচ্ছে।
আমার ধারোনামতে আমার শেষের কথাই মনে হয় তার মনে ধরে গেছে, তাহলে আমি এখানে কেনো থাকবো? দোষ আমারই তো।
বাই নীরা ভালো থেকো।
বলেই ফিরে জোর পায়ে হাটা ধরলাম, পেছন থেকে আওয়াজ পাচ্ছিলাম কিন্তু কানে না তুলে আমার মতো চলে আসলাম।
বাইক যখন স্টার্ট দিচ্ছিলাম তখন সিড়ির পথে কাউকে নামতে দেখেছি, নীরাই,,,
থাক তার মতো সে, আমার কথার দাম নেই আমার উপর যার বিশ্বাস নেই তার দিকে আমি ঝুকবো হবো কেনো।
ভীষন কান্না পাচ্ছিলো, আমার সাথেই কেনো এমন হয়?
একজনমাত্র মানবীকে ভালোবাসতে চাইছিলাম, কি পেলাম?
বাসায় এসে কোনোমতে মা কে বুঝিয়ে ঘুম দিলাম,
ফোনে বারে বারে রিং হয়েই যাচ্ছে, আছাড় মেরে গলা একেবারে বন্ধ করে দিলাম।
কিছুক্ষন পর মা ডাকদিয়ে বললেন নীরা ফোন দিচ্ছে তোর ফোনে কল যাচ্ছে না, নে দরজা খোল কথা বল।
মা আমি ভীষন ক্লান্ত আমাকে ঘুমুতে দাও প্লিজ।
আর কথা বাড়াই নি। ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে রোজকার মতো রেডি হয়ে অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি
টাই হাতে দাড়িয়ে আছি, অন্য দিন হলে কানে ফোন নিয়ে ওর সাথে কথা বলতে বলতেই কাজ সারতাম, আজ কেনো জানি একা একা ফিল হচ্ছে।
আরেহ একা কেনো যখন সে ছিলো না তখন কি আমি বাচি নাই, কাজ টাজ করি নাই? সবই ঠিক আছে। আমি আমার মতোই এবার থেকে থাকবো।
পেছনে কারো উপস্তিতি টের পেয়ে ফিরে থাকালাম, একবার মনে হলো আমার কল্পনা হতে পারে, নীরা স্বশরীরে আমার রুমে!
পরে বুঝলাম কল্পনা নয় সে ঠিকই এসেছে।
আবেগ সামলে নিয়ে বললাম
এখানে কেনো এসেছো?
কোন কথা ছাড়াই দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, সেই সাথে ডুকরে কান্না সুরে,,
আমাকে যতো জলদি পারো বিয়ে করে নাও আমি এসব সইতে পারবো না, তোমাকে নিয়ে অন্য মেয়ের সামান্য কথাই আমার কলিজা ছিদ্র করে দিয়েছে, আমি তোমার কাছে অন্য কাউকে দেখতে পারবো না।
কাল রাতে একটা সেকেন্ড থামলে কি এমন ক্ষতি হতো তোমার বলো?
আমার কথা মানলে কোথায় তুমি বলো? সেই প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম আমার এমন অভ্যাস নেই।
আর তোমার কি মনে হয়, আমার কষ্ট হয় নাই?
ওকে আমার বিছানায় বসিয়ে বললাম, জানো রাস্তাঘাট দেখতেই পারছিলাম না চোখের জলে সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিলো।
নীরা আমার চোখের দিকে থাকিয়ে বললো আমি আসলেই বেশি করে ফেলেছিলাম, সরি।
এই সরি বলছো কেনো।
দুজনেরই সমান সমান হয়েছে, এবার এটা বাদ দাও।
অফিস থেকে ছুটি নিলাম আজকের মতো, হালকা নাশতা করেই নীরাকে নিয়ে বেড়াতে বের হয়ে গেলাম, আমার প্রাইমারি স্কুল, খেলার মাঠ, কলেজ,ভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলো।
বিশেষ করে কলেজ আর ভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে তার উপস্তিতি অনেক ভালো লাগা ধরিয়ে দিয়েছিলো, যখন এখানে পড়তাম একটাও মেয়ে বন্ধু বা প্রেমিকার সংগ আমার হয়ে ওঠেনি আজ না হয় হবু বউকে নিয়ে আসলাম। ভালোই লাগছিলো সবকিছুই।
চেনা পরিচিত কেউ নেই এখানে কেবলই সেই চিরোচেনা ঝালমুড়ি ওয়ালা আর ফুসকাওয়ালাই এখনো আছে বহাল তবিয়তে, পড়াকালিন সময়ে সামান্য ভাব হয়েছিলো তাদের সাথে, আমাদের দেখতেই এমন ভাবে কথা শুরু করলো তারা যেনো অনেক বড়ো কেউ, আসলেই পুরোনো ছাত্র আর রেগুলার কাষ্টমার ছিলাম বলে এতো আপ্যায়ন হয়তো।
যাক ভালোই লাগলো, এখানে ফুসকা খেতে খেতে সেই বন্ধুদের কথা মনে পড়ে গেলো, কতো মঝাই না করতাম তাদের সাথে, তারা প্রেমিকাদের ট্রিট দিতো ডেটিং করতো আর আমি মাঝখানে মুফতে ভাগ বসাই ছুট দিতাম।
ভাবতে ভাবতে চোখের পানি কখন বেরিয়ে আসলো বলতেই পারি না,
এই ঝাল বেশি না তো তাহলে কাদছো কেনো?
এই কথা শুনে মনযোগ ফিরিয়ে বললাম বন্ধুদের কথা মনে পড়ে গেছে, এই এখানে বসে ছুটে ওদের অনেক জ্বালিয়েছি মঝা করেছি আজ সব ঠিকই আছে কেবল তারা নেই।
হাত দিয়ে চোখ মুছতে যাবো তখন থামিয়ে দিয়ে বললো হাতে ঝোল লাগানো চোখ জ্বালা করবে বলে ওড়না দিয়ে মুছিয়ে দিলো।
শুনো বন্ধুরা হয় জ্বালানী সহ্য করার জন্যেই, ওরা না করলে কে সহ্য করবে বলো।
আর আমাদের বিয়েতে সবাইকে দাওয়াত দিবা, ওকে? কেউ যেনো বাদ না যায়।
আমি বললাম, আমাদের বিয়ে আর হতে দিচ্ছো কই তুমি তারিখ পেছাও বারে বারে তুমি।
সে সমান জোর দিয়ে বললো দেরি করবো না তো কি করবো অজানা লোকের সাথে থাকবো কিভাবে?
তার কথায় আসলেই জোর আছে, চেনা জানা আসলেই প্রয়োজন নাহলে সংসার জমবে না যে। তাই আমি বললাম,,,
যা জেনেছো তাতে কি আমাকে নিজের মতো মানিয়ে নিতে পারবে তুমি!
সে কিছুক্ষন আমার চোখের দিকে থাকিয়ে লাজুক মুখে ডান দিকে মাথা নাড়ালো।

লেখাঃরোমন উবায়দুল

No comments:

Post a Comment