Sunday, July 23, 2017

গল্পঃ Pure Love

গল্পঃ Pure Love

' ফজরের আযান তো দিয়া দিছে উঠবেন কখন? ' জবা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল। সুমন ঘুমাচ্ছে! নতুন বিয়ে করেছে মাত্র। খুব বেশি ছুটিও নেই তার হাতে। কর্মঠ লোকদের ঘুম খুব গভীর হয়। সুমন ঘুমঘুম চোখে বলল ' তুমি  গোসল করছ নাকি? ' জবা কথার উত্তর না দিয়ে হাতে ঠাণ্ডা পানির মগ এনে বলল ' ঢালব না নামাজে যাইবেন? ' সুমন বাচ্চাদের মত উঠে নামাজে গেল। জবা আলনায় রাখা সুমনের শার্টের কলার ধরে ভাবছে ধুয়ে দিবে কি না। কলারে অনেক ময়লা জমে আছে। সুমন ড্রাইভার মানে গাড়িচালক। একটা প্রাইভেট কোম্পানির। দুর্ভাগ্যবশত তার বস হচ্ছে একজন মহিলা। যিনি ছেলেদের কষ্ট একদমই বুঝেননা। শুধু মাত্র কাজে বিশ্বাসী। কাজ কাজ করতে চল্লিশ পার করেছেন তবুও বিয়ে করেন নি।
.
সুমন মসজিদ থেকে এসে আবার শুয়ে পরল। শুয়ে শুয়ে জবাকে ডাকছে ' বৌ ও বৌ এদিকে একটু আসনা ' জবা তাড়াহুড়ো করে এসে বলল ' কি হইছে এমনে ডাকতাছেন কেন? ' সুমন জবার দিকে তাকিয়ে জোর স্বরে বলল ' এমনিই তোমায় দেখতে ইচ্ছে হল তাই ডাক দিলাম। তাছাড়া তুমি শুদ্ধ করে কথা বলতে পারনা? ' জবা বলল ' অত শুদ্ধ করে বলার কাম নাই। কি কইতে ডাক দিছেন সেইটা বলেন ' সুমন জবার শাড়ির আঁচল ধরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে চৌকিতে বসিয়ে বলল ' ঘরে এত কাজ তুমি কই পাও বল তো? আজকে ঠিক এভাবে সারাদিন বসে থাকবা আমি তোমাকে দেখব ' জবা হেসে বলল ' আর আপনি অত পাগলামি কই পান? আমার তো আর কাজ নাই যে এমনে বইসা থাকব। সরেন তো আপনার কাপড়-টাপড় ভিজাইয়া রাখতাছি কাল থাইকা যে কাজে যাইতে হইব মনে নাই তো আপনার '
.
সুমন আর কিছু বললনা। মুখ কালো করে চেয়ারে বসল জানালা খুলে। হাল্কা বাতাস আসছে। ভাবছে কাল থেকে টানা একমাস আর সে সময় পাবেনা জবাকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরবার বা বেড়ানোর জন্য। জবা কাপড়চোপড় ভিজিয়ে রাখতে গিয়েছিল। হঠাৎ পাশ থেকে বলল ' আইচ্ছা আপনে যে গাড়ি চালান ভয় করেনা? ' সুমন অবাক হয়ে পিছনে তাকাল। বলল ' ম্যাডামের কাজ শেষ হল কিভাবে এত তাড়াতাড়ি? ' জবা মুচকি হেসে বলল ' কি আর করার! মেয়েদের আবার সবকিছুর খেয়াল রাখতে হয় ' সুমন চেয়ার থেকে উঠে জবাকে বসিয়ে ভিবিন্ন ভাবে তর্ক করে শুরু করে দিল। আসলে সুমনের ইচ্ছে তার বৌ রাগ করবে। গাল ফুলিয়ে রাখবে। তারপর সে রাগ ভাঙাবে। কিন্তু তার ইচ্ছেটা আর পূরণ হচ্ছেনা। সূর্যের আলো এসে সারা ঘর ফর্সা হয়ে গেল। তবুও তারা সেভাবেই রয়ে গিয়েছে!
.
তিন বছর পর!
.
দুপুরবেলা সুমন গাড়ি চালাচ্ছে। তার ডিউটি হল সকাল দশটা থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত। কাজের সময় সুমনের ফোন সাইলেন্ট করা থাকে তাই কেউ ফোন করলে তার খোঁজ হয়না। হঠাৎ কয়টা বাজে দেখতে পকেট থেকে ফোনটা বের করল। ফোনের স্কিনে দেখল জবার অসংখ্য ফোন! এতগুলো ফোনই বলে দিচ্ছে কোন জরুরী কিছু। সুমন ফোন দিতেই জবা রিসিভ করে একটা কথাই বলল ' আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে এক্ষণি! ' সুমন কিছু বুঝতে পারছেনা। বসের কাছে বললে উনি ভুলেও ছুটি দিবেনা। চলন্ত গাড়ি থামিয়ে রাস্তার পাশে গাড়িটি দাঁড় করিয়ে একটা সি,এন,জি তে উঠে পরল। তার সহকারী চালক একজন আছেন কিন্তু যদি উনি এই খবর বসের কাছে দেয় তাহলে চাকরী 'দা ইন্ড'! তবুও সুমনের মাথায় কিছু আসছেনা। এভাবে কোনদিন জবা বলেনি!
.
বাড়ি যেতে যেতে চার ঘন্টা লেগে যায়। ঘরের দরজা খোলা! ভীতরে কেউ নেই! ঘর থেকে বের হতেই সামনের দোকানের দোকানদার দৌড়িয়ে এসে বলল যে জবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়াতে মাথা থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে গিয়েছে! সামনেই সদর হাসপাতাল। হেঁটে গেলেও দশ মিনিট লাগবেনা। সুমন দৌড়িয়ে কেবিনের সামনে হাজির। কাঁচের গ্লাস দিয়ে দেখা যাচ্ছে জবার চোখ বেয়ে পানি পরছে! ভীতরে কোনমতেই ঢুকতে দিচ্ছেননা ডাক্তাররা। একটুপর যেতে দেওয়া হল। ডাক্তাররা মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে আর জবাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা তাই কি দরকার সুমনকে বাইরে আটকিয়ে রাখার। একটু কথা বললে আফসোসটা কমপক্ষে থাকবেনা। সুমন জবার সামনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা! জবা কোনমতে মুখ গোঙানি দিয়ে বলল ' ছেলের একবছরও আর আমি বেঁচে থাকতে পূরণ হবেনা সেই চুড়ি গুলোও পরা হবেনা। '
.
সুমনের চোখ বেয়ে পানি পরা ছাড়া আর কোন উপাই নেই! মুখ দিয়ে কোন শান্তনাবাক্যও বের হচ্ছেনা। জবা আবারো বলল ' শেষবারের মত আমার হাতটা একটু ধরবেন? অনেক শক্ত করে? ' সুমন জবার হাত ধরতেই জবা একটু জোর কাটিয়ে হাতের সঙ্গ দিতে চাইল কিন্তু ভীতরের রক্তেরা সারা দেয়নি। তারা সবার জায়গায় স্থীর হয়ে বসেছে। জবার চোখটাও বন্ধ হয়ে আসছে। নিজের চোখের সামনে জবার পরলোকগমন দেখতে পারছেনা সুমন। 'জবা' করে এক লম্বা চিৎকার দিল। এক চিৎকারে জবা ঘুম থেকে উঠে গেল! ছেলেটা হাত পা নাড়াচ্ছে! জবা ভয় চোখে সুমনের কপালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল ' কি হল আপনার? এত জোরে চিৎকার করলেন কেন? ' সুমন জবার উত্তরে কিছুই বলছেনা। পাঁচ মিনিট স্থীর থাকল আর লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস! কিছুক্ষণ পর বলল ' তোরে হলুদ চুড়ি কিনে দিয়েছিলাম না? ' জবা ভয় পাচ্ছে! অস্ফুটস্বরে বলল ' হ্যাঁ ' সুমন বলল ' চুড়িগুলো পরস না কেন? ' জবা আবারো ভয়ে ভয়ে বলল ' বাবুর একবছর পূর্ণ হওয়ার জন্য আরকি!.... '
.
জবা কথা শেষ করার আগেই সুমন ঝাড়ি দিয়ে বলল ' দেশে কি চুড়ির অভাব পরছে? তোরে চুড়ির দোকান কিনে দিব তুই এক্ষণি চুড়িগুলা পর ' জবা চোখ বড়বড় করে বলল ' সকালে পরলে হয়না? ' সুমন আর কোন কথা না বলে আলমারি থেকে চুড়িগুলো এনে জবার হাতে চুড়িগুলো পরিয়ে দিল। জবা নিচুস্বরে বলল ' এভাবে জোরে জোরে কেউ চিৎকার করে? ছেলেটা যদি ভয় পেত! ' সুমন বলল ' ঘুমা এখন! ' জবা শুতে যেতে যেতে বলল ' যখন ইচ্ছা তুইতোকারি করবেন উনি ' সুমন আবারো বলল ' তোরে তুই কেন তোরে তো এখন মারতে ইচ্ছা করতেছে। ' জবা অবাক হয়ে বলল ' কিহহ! কেন? কি করছি? ' সুমন রাগি চোখে বলল ' তোরে কি কম ভালবাসি তবুও আমারে ছেড়ে দূরে যেতে চাস কেন? ' জবা দুঃস্বপ্নের ব্যাপারটা বুঝতে পারল! তাই কোন উত্তর দিল না। অনেক্ষণ হয়ে গিয়েছে। ছেলেটা ঘুমিয়ে পরেছে। সুমনের চোখে ঘুম আসছেনা। জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। জবা সুমনের বুকের উপর নিজের হাতটা দিয়ে বলল ' কেউ হাতটা শক্ত করে না ধরলে আমার ঘুম হয়না ' ||
.

____ Siam Ahmed Joy (গান গবেষক)

No comments:

Post a Comment