Wednesday, July 12, 2017

গল্পঃ ` ইরাবতী `

গল্পঃ ` ইরাবতী `

-বিয়ের প্রথম দিন থেকে এই মেয়ের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ!
বাসর ঘরে ঢুকার সাথে সাথে বলে উঠলো সালাম না দিয়ে ঢুকলেন যে অপরিচিত কারো রুমে ঢুকলে  সালাম দিয়ে ঢুকতে হয় জানেন না বুঝি?
..
-না আসলে মানে ইয়ে...
থাক আর ন্যাকামি করতে হবে না!
..
-ইরা আমাকে সালাম দিলো!! আসসালামুলাইকুম...
-ওয়ালাইকুম সালাম।
-মনে মনে অনেক রাগ হচ্ছে জন্মের পর থেকে আমি এই রুমে থাকছি আর এখন আমার জন্য অপরিচিত রুম!! ভাবতে না ভাবতেই ইরা আমাকে ডাক দিয়ে বসলো...ফুল গুলো কি রেখে দেওয়ার জন্য এনেছেন নাকি দিবেন! না ফুল গুলো তোমার জন্য এই নেও।
..
-বিয়ের প্রথম দিনই বুঝে ছিলাম আমার রাজনীতির দিন শেষ। এই মেয়ে রাজত্ব করবে এই ঘর এই সংসারে।আমি শুধুই আমজনতা হয়ে থাকতে হবে।
..
-এভাবে চলছে আমাদের টুনাটুনির সংসার। যদি ও সব কিছু ইরার কথা মতে হয় আমাকে সামান্য একটু শেয়ার দেওয়া হয়েছে মাসিক চাঁদা দেওয়ার জন্য।(কি বুঝেন নাই)
..
-সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বলে দিয়েছিল আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার জন্য। বিকেল থেকে দুই তিন বার ফোন দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু রিসিভ করতে পারি নাই! এখন আমি জ্যাম এ আছি।
এবার ফোন রিসিভ না করলে আমার কপালে দুঃখ আছে...
..
-ফোনটা রিসিভ করেই বুঝতে পারলাম ও কাঁদছে।
-প্লিজ, লক্ষ্ণী সোনা কাঁদে না।
আমার চকলেট বেবি...সরি।
-হয়েছে থাক, তোমার আর আসতে হবে না।আমি তোমার কে!
..
- প্লিজ রাগ করো না। রাস্তায় খুব জ্যাম। ইরা আমার কথা শোনার আগেই ফোনটা রেখে দিলো!
এই পাগলী মেয়েটা কে নিয়ে আর পারলাম না। আমি ওকে হাজার নামে ডাকি।আমার মনে হয় না এক নামে দুইবার ডেকেছি। ইরা মনে হয় এখন বাসায় একা একা কাঁদছে আর আমার উপর পাহাড় সমান অভিমান করে বসে আছে। ইরাকে  আমি ভীষণ ভালবাসি। ভীষণ... (ভাববেন না আবার ভয় পেয়ে ভালবাসি..হুম)
→.
-কলিংবেল চাপতে না চাপতেই ইরা এসে দরজা খুলে দিলো! দরজা খুলে দৌড় দিয়ে রুমে ঢুকে বালিশ এর উপর পড়ে কাঁদতে লাগলো(মেয়েরা যেটা করে থাকে সব সময়) আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না! ইরার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় ১১ মাস ২৯ দিন হলো কখনো দেখি নাই ওকে কাঁদতে! আর আগামীকাল আমাদের ম্যারেজ'ডে কিন্তু আজ কেন এমন করছে বুঝতে পারছি না! হাজার ও প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যাক আস্তে আস্তে আমি পা টিপে টিপে আমাদের রুমে ঢুকলাম। ধপাস করে আমি ইরার গায়ের উপর পড়লাম আর জড়িয়ে ধরলাম। তারপর ও কোন কথা বলছে না। আমি কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম কি হয়েছে আমার চকলেট...
.→
-আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বললো সরো এখান থেকে এখন চকলেট মারাতে আসছে! আমি বললাম কি হয়েছে বলবে তো হুম...
..
-আমাকে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও বাহিরে যাবো।
মার্কেট এ গিয়ে বললো কোন কথা বলবা না শুধু বিল দিয়ে যাবা ব্যস...আমি ভয়ে কোন কথা বললাম না শুধু মাথা নাড়ালাম।
-ইরাকে দেখছি ছেলে মেয়েদের অনেক গুলো জামা কাপড় কিনছে। এইদিকে আমার পকেট খালি হয়ে গেলো! ইরাকে বললাম আর কিছু কিনবে নাকি ও বললো না। আমি বললাম একটু দাঁড়াও আমি এটিম থেকে টাকা তুলে আনছি যাওয়ার ভাড়ার টাকা নেই।
.
-চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ভাড়া আমার কাছে আছে আসো...আমি কি তোমার আশা করে আসছি নাকি। মনে মনে বললাম ওই টাকা ও তো আমার টাকা পকেট থেকে চুরি করছো। তারপর বাসায় চলে আসলাম।পরের দিন খুব সকাল বেলায় ডাকাডাকি শুরু করে দিল।
এই 'সুমন' উঠো... উঠো না। তাড়াতাড়ি উঠো এক জায়গায় যেতে হবে। আমি বললাম এত সকাল বেলায় কোথায় যাবে? আর একটু ঘুমাতে দেও না...প্লিজ বেবি। মানলোই না আমাকে ঘুস হিসেবে অনেক গুলো চুমু দিয়ে বললো এবার উঠো প্লিজ বাবু উঠো...
..
-রিক্সশা করে যাওয়ার সময় ইরাকে জিজ্ঞাস করলাম কোথায় যাচ্ছি আমরা...হুম। চুপ করে বসে থাকো দেখবে কোথায় যাচ্ছি।
-রিক্সশা গিয়ে থামলো একটা বস্তির সামনে। ইরাকে দেখার সাথে সাথেই অনেক গুলো বাচ্ছা ছুটে এলো ইরাকে জড়িয়ে ধরলো।
সবাই কে নতুন জামা কাপড় দিলো...ঈদ সেলামি দিলো। ওই দিন আমরা বাচ্ছাদের সাথে ইফতার করলাম, গল্প করলাম, আমাদের ম্যারেজ'ডে এর কেক কাটলাম...তারপর বাসায় ফিরলাম।
.→
-বাসায় এসে ইরা শুয়ে পড়লো। এত সুন্দর একটি দিন উপহার দিলো...কে জানে কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এই পাগলী মেয়েটি এমন একটি দিন উপহার দেওয়ার জন্য। বিয়ের প্রথম প্রথম ওকে জড়িয়ে ধরে আমি ঘুমাতাম ও আমার হাত সরিয়ে দিতো! বলতো ওর নাকি ঘুম আসে না জড়িয়ে ধরলে আর এখন জড়িয়ে না ধরলে ইরার ঘুমইই আসে না...ঘুমিয়ে নাকি তৃপ্তি পায় না!! সত্যি ও একটা পাগলী। আমার ইরা,আমার ইরাবতী, আমার চকলেট...আমার লক্ষী বউ।
.→
লিখেছেনঃ- Sumon Rahman
( কষ্ট এবং আমি সুমন)
.→

No comments:

Post a Comment