Sunday, August 28, 2016

গল্পের নাম: "ভালোবাসার কাজল কন্যা"

গল্পের নাম: "ভালোবাসার কাজল কন্যা"
.
.
সেই মেয়েটাকেই ভালোবাসবো.........
.
যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে,আমার চোখের দিকে
তাকিয়ে কাঁদতে পারবে,ঠিক তার চোখের কাজল
লেপটে যাওয়া পর্যন্ত।
.
এইটুকুই লিখে নোট প্যাডে সেব করে
রাখে,অন্তিম তার কম্পিউটার ক্লাসের কম্পিউটার এ
যেখানে সে প্রতিদিন কম্পিউটার শিখতে যায় আর
নিয়মিত ওই কম্পিউটারের সামনেই বসে।
.
.
এমনি টুক টাক দুই-চার লাইন লিখে নোট প্যাডে
সেব করে রাখতো অন্তিম।আর জমা রাখতো
একটা ফোল্ডারে যার নাম ছিলো,"ভালোবাসার
শেষ মৃত্তিকায়"।পরের সপ্তাহে অন্তিম ক্লাস
শেষে বের হবে এমন সময় খেয়াল করে সাদা
ড্রেস পড়া একটা মেয়ে ক্লাসের বাইরে তার
দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটার চোখে মুখে
কিছু বলার ছাপ।অন্তিমকে দেখে চমকে যায়,এমন
একটা ভাব।অন্তিম আর না তাকিয়ে ক্লাস শেষ
করেই বের হয়।
.
যখন কাচের গ্লাসের দরজা ঠেলে অন্তিম বের
হয়ে যখন জুতার বেল্ট লাগাচ্ছিলো তখন দেখে
মেয়েটা গিয়েও সেই কম্পিউটার এ বসলো।
তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে ওইদিনের মত বাসার
দিকে পা বাড়ায়।যেতে যেতে মনের মাঝে
একটাই চিন্তা কিসের জন্য মেয়েটা তার দিকে অমন
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো কিসের জন্য।
.
পরেরদিন ক্লাসে গিয়ে অন্তিমের মনে পড়ে
মেয়েটার কথা।ক্লাসের ট্রাইনারের সাথে
ভালো পরিচয় থাকায় অন্তিম তার কাছে মেয়েটার
কথা জানতে চায়।ক্লাসের ট্রাইনার বলে মেয়েটার
নাম অনন্যা।খুব ভদ্র ক্লাসে আসে যায় আর ক্লাস
করে কোন ফাজলামি না।অন্তিম বাসার কথা
জিজ্ঞেস করে কিন্তু ট্রাইনার বলে এইটা জানি না
হয়ত ভর্তি ফর্মে লেখা আছে।
.
.
পরে অন্তিম তার কম্পিউটারে বসে Ononna নামে
সার্চ করে।সাথে সাথে একটা ফোল্ডার চলে
আসে।কম্পিউটারে একটু ভালো জ্ঞান থাকায়
অন্তিম সব সহজেই বুঝে।ফোল্ডার অন করে
দেখে তার ভিতরেও কিছু নোটপ্যাড ফাইল সেব
করা।সে যে লেখাগুলি লিখতো সেই নামেই
লেখা গুলি শুধু তার ফাইলের নামের পরে উত্তর
কথাটি লেখা।প্রথম ফাইল ওপেন করে
অন্তিম,যাতে
লেখা ছিলো তার সেই কথাটি.....
.
.
সেই মেয়েটাকেই ভালোবাসবো.........
.
যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে,আমার চোখের দিকে
তাকিয়ে কাঁদতে পারবে,ঠিক তার চোখের কাজল
লেপটে যাওয়া পর্যন্ত।
.
জবাব: সেই ছেলেটির অপেক্ষায় আছি যে.........
.
আমার কান্না ভেজা চোখের কাজল মুছে দিবে
তার দুহাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিবে আমার
চোখের পাতা,আমি তাকেই ভালোবাসবো।
.
.
অন্তিম দেখেই তো অবাক,মেয়ে কি বলে
আমার কথার জবাব দিছে।যাক দেখতে,শুনতে
তো খারাপ না ভালোবাসাই যায়।তবে আজকেই
বলবে না কিছুদিন তাদের এমন ডিজিটাল চিঠির আদান-
প্রদান হোক।অন্তিম ও জবাবে একটা চিরকুট লিখে
যায়।এমনি করে চলতে থাকে তাদের দিন গুলি।
.
মেয়েটাও এসে দেখে ছেলেটি জবাব
দিয়েছে।কিন্তু অনন্যা শুধুই ছেলেটির
ফোল্ডারের নাম জানতো কিন্তু ছেলেটা কে
তা জানতো না।অন্যদিকে অন্তিম জানতো
চিনতো অনন্যাকে।প্রায় ৬মাস এমন করেই
চলল,দুইজন দুইজনের খুব ক্লোজ হয়ে
গেছে।নাম্বার শেয়ার হয়েছে।ফোনেও কথা
হয় তবুও অনন্যা চিনে না অন্তিমকে।অন্তিম
লুকোচুরি খেলে যায় অনন্যার সাথে কারণ সে
তো তাকে চিনেই।অনেক অনুরোধের পর
অন্তিম রাজি হয় দেখা করার কিন্তু কথা থাকে দেখার
পর তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।
.
.
আজকে অন্তিম আর অনন্যার দেখা করার কথা।
অনন্যা আগে এসেই বসে আছে তার লুকোচুরি
পাগলটার জন্য।প্রায় ৩০মিনিট অপেক্ষা করার পড়েও
দেখে কেউ আসে না।একটুপরে দেখে
কেউ একজন বাইক নিয়ে আসছে অনন্যা ভাবে এই
বুঝি লুকোচুরি পাগল।সে অন্তিমকে লুকোচুরি
পাগল বলেই ডাকত।কিন্তু দেখে না বাইকটা কাছে
আসলো কিন্তু থামলো না।অনন্যা বুঝতে
পারে,এই তার লুকোচুরি পাগলটা না।
.
বাসায় যখন চলে যাবে এই সিদ্ধান্ত,তখন দেখে
বাইকটা আবার তার পাশে এসে দাঁড়ায় আর কেউ
একজন বলে আপনি অনন্যা না?কম্পিউটার সিটিতে কাজ
শিখতেন না?আমিও ওইখানে শিখতাম।তো আপনি কি
কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?অন্তিম বললে
এই ছেলেটাই কি লুকোচুরি?আবার চিন্তা করে না,
লুকোচুরি হলে তাকে তো বলবেই।অনন্যা
বলে জি একজনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু
সে আসেনি হয়ত কোন কাজে আটকে
গেছে।
.
.
অন্তিম জিজ্ঞেস করে আপনি ফোন দেন
তবেই তো হয়।অনন্যার জবাব না দেওয়া হইছি নাকি
কতবার ফোন দিছি অথচ বন্ধ।এই বলেই মেয়েটা
চোখ মুছতে থাকে,নিজের কান্নাটা আর সামলে
রাখতে পারলো না।এইবার অন্তিম নিজেই ভয়
পেলো,একটু বেশিই লুকোচুরি হয়ে গেছে
তার সাথে।অন্তিম বলে আপনি তাকে চিনেন?
অনন্যা মাথা নাড়িয়ে বলে না।অন্তিম বলে আজব
তবে আপনি তাকে চিনবেন কি করে?
.
অনন্যা বলে ও বলছিলো বাইক নিয়ে আসবে,সাদা
শার্ট পড়া থাকবে আর মাথায় লাল ক্যাপ এইটা দেখেই
চেনার কথা।অন্তিম বলে তবে কি আপনি অন্ধ?
এইগুলা কি আমি পড়ে নেই নাকি.......অনন্যা তার
দিকে তাকিয়ে নিজেই মাথায় হাত দেয়।ফাজিলটার
চিন্তায় সব ভুলে গেছে।তার সামনে দাঁড়িয়ে
আছে এত সময় আর সেই চিনতে পারলো না?
আর তাকে কাঁদিয়েই ছাড়লো।
.
.
অনন্যা আবার কাঁদছে, অন্তিম বলে কি আবার কাঁদো
ক্যান,এই বলেই নিজের কাছে টেনে নেয়
অনন্যাকে, দু-হাত দিয়ে অনন্যার কান্না-ভেজা
চোখের পানি মুছে দেয় কাজল লেপটে যাওয়ার
আগে।
.
অন্তিমের বুকে মুখ গুঁজে অনন্যা কেঁদে
যাচ্ছে আর অন্তিমের শার্ট ভিজে যায় অনন্যার
চোখেরজলে।এ যে শুধু ভালোবাসার
মানুষটাকে এতদিন পর কাছে পাবার পরের কান্না।
যেই কান্নার মাঝেও থাকে একপ্রকারের
ভালোবাসা।অন্তিম শক্ত করে আগলে রাখে তার
"ভালোবাসার কাজল কন্যাকে"। (সমাপ্ত)
.
.
ডেডিকেটেড টুঃ "লাজুক রাজকন্যা"
.
.
লেখকঃ Naimul Islam Rubel (নিশ্চুপ জীবনের
লুকোচুরি)

No comments:

Post a Comment