Sunday, August 28, 2016

*** অতঃপর ভালোবাসি ***

*** অতঃপর ভালোবাসি ***
.
লেখা : Adhora Zafrin
.
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে নিলয়ের। ঘুম ঘুম
চোখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে লাফ দিয়ে উঠে
বসে পড়লো সে কি কয়টা বেজে গেছে
কোথায় উঠার কথা ছিল ৮ টায় আর এখন ১০ টা
বেজে গেছে। নিলয় মাকে বলতে লাগল .………
>>>: আরেকটু আগে ডেকে দিবা না??
>>>: ভেবে ছিলাম কাল সকালেই একেবারে
ডেকে দেই।ভাগ্য ভাল যে তোকে আবার ও
ডাকতে এসেছি।
আবার ডাকতে এসেছে মানে এর আগে ও মা
এসে ডেকে গেছেন।
>>>: তুমি আগেও এসেছিলে ডাকতে?
>>>: নাহ তো তোর আরেকটা মা আছে না?উনি
এসে ডেকে গেছে।
>>>: হাহাহা…কি যে বল তুমি?
>>>: উঠো এবার,উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা
খেয়ে,উদ্ধার করো আমাকে।
মা আরও কি যেন বলতে বলতে পাশের রুমে
চলে গেলেন। হঠাৎ মনে হলো আজ তো
নীড়ার সাথে দেখা করার কথা। ইশশশ ……… সত্যি
ভুলে গেছিলাম আরও আগে উঠার দরকার ছিল।
নীড়াকে ফোন দিলাম।
-: হ্যালো!!!
>>: হ্যালো নীড়া
-: হুম বলো…
>>: তুমি কি বের হয়ে গেছো??
-: শব্দ পাচ্ছো কোন?
>>: হ্যা পাচ্ছি রাস্তার শব্দ। ওহ……সরি… সরি তুমি
রাস্তায়, মানে বের হয়ে গেছো। আমিও বের
হচ্ছি একটু সময় লাগবে আর কি। আসলে ঘুম
থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।
-: হয়েছে থাক আর বাহানা খুঁজতে হবে না তারাতারি
এসো।
>>: হুম আচ্ছা,ওকে রাখছি তাহলে। বাই ……
-: ওকে বাই।
.
নিলয় আর নীড়ার ফেবুতে ফ্রেন্ডশীপ হয়
তাদের ফ্রেন্ডশীপ বললে ভুল,সম্পর্ক ধরা
যেতে পারে। নিলয় কখনো নীড়াকে
দেখেনি তবুও নিলয় নীড়াকে না দেখেই
অনেক ভালবেসে ফেলেছে। নীড়া
নিলয়কে দেখেছে কিন্তু নিলয়ই নীড়াকে
দেখেনি তাকে সত্যি সত্যি তার সামনে বসা
দেখবে বলে।নীড়া কেবল হাসে আর
নিলয়কে বলে।তুমি হয়তো এখন আমাকে ভালবাস
আমাকে দেখার পরে ভাল না ও বাসতে পার।নিলয়
ও সব গল্পের নায়কের মতো বলে,ভালবাসা
চেহারা দেখে হয় না ভালবাসা হয় মন থেকে।আমি
তোমার চেহারাকে নয় তোমার সুন্দর মনটাকে
ভালবাসি।নীড়া বলে আমি একা চলতে পারিনা আমার
ইচ্ছে গুলোকে ওই বিশাল আকাশে উড়িয়ে
দিতে পারিনা।নিলয় বলে আমি তোমার চলার সাথী
হতে চাই।তোমার ইচ্ছে গুলোকে তোমার
সাথে দূর নীল আকাশে উড়িয়ে দিতে চাই।
.
খুবই অদ্ভুত একটা মেয়ে নীড়া। নিলয়ের মন
খারাপ থাকলে ২মিনিটেই মন ভাল করে দেয়ার দারুণ
ক্ষমতা রাখে নীড়া।নীড়ার কথা,হাসি সব কিছুই
নিলয়ের ভাল লাগে।নীড়া কল্পনার জগৎতে ডুবে
থাকতে ভালবাসে।ভালবাসে দূরের ওই নীল
আকাশটাকে।কালো মেঘ গুলো যখন নীল
আকাশটাকে ঢেকে দেয় তখন নীড়ার মন খারাপ
হয়।সে চায় অন্ধকারে নয় উজ্জ্বল আলোয়
চারিদিক আলোকিত হয়ে থাকুক।
.
নিলয় তারাতারি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো
মা নাস্তা খেয়ে যেতে বলল।বাহিরে খেয়ে
নিবে বলে নিলয়।মা বললেন দুপুরে রান্না হবে না
রান্না বন্ধ এসে এগুলোই খাবে। আচ্ছা ঠিক আছে
বলেই চলে যায় নিলয়।যে জায়গায় তাদের দেখা
করার কথা সেখানে গিয়ে নিলয় নীড়াকে ফোন
দেয়।নীড়া বলে সে পার্কের ভিতরে বসে
নিলয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।নিলয় ভিতরে
ঢুকে নীড়াকে খুঁজতে লাগলো।পার্কের
কোনার একটা বেঞ্চে একা একটি মেয়ে বসে
আছে। নিলয়ের মনে হচ্ছিল এই মেয়েটি নীড়া
হবে।দূর থেকেই মেয়েটিকে দেখতে
অনেক সুন্দর লাগছে।নিলয় আবারো ফোন
দেয় নীড়াকে দেখলো মেয়েটিও ফোন
বের করলো।নিলয়ের বুঝতে বাকি রইল না এই
মেয়েই টি হলো নীড়া।নিলয় সামনে এগিয়ে যায়
যতই নীড়ার কাছে যাচ্ছে ততই অবাক হচ্ছে
মেয়েটি এত সুন্দর কিন্তু কেন বার বার বলতো
তাকে দেখলে আর ভালবাসবো না।
>>: হ্যালো………আমি নিলয়।
-: হাই …… আমি নীড়া।
>>: কেমন আছো?
-: এই তো ভাল। তুমি??
কিছুক্ষণ তাদের কথা হয়।নিলয় বলল……
>>: আচ্ছা তুমিতো দেখতে অনেক সুন্দর
তাহলে কেন বলতে তোমাকে দেখলে আমি
আর ভালবাসতে চাইতাম না।
নীড়া চুপ করে মাথা নিচু করে রইল। হঠাৎই নীড়া
গম্ভীর হয়ে গেল নিলয়ের সেটা ভাল লাগলো
না। আকাশটা ও তার সাথে গম্ভীর আর কেমন
অন্ধকারে ঢেকে গেছে মনে হচ্ছে এখনি
বৃষ্টি নামবে।নিলয় আর কিছু বলল না। নিলয় দাড়িয়ে
হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে নীড়াকে বলল। আমার হাতটা
একটু ধরবে,হাত ধরে দুজনে একসাথে একটু
হাঁটবো??নীড়া কিছুই বলছে না মাথা নিচু করেই
বসে আছে আর নিলয় হাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে।
কেউ একজন বলে উঠলো নীড়া মামুনি বাসায়
যাবে না দেখেছো অনেক মেঘ করেছে
বৃষ্টি নামবে তারাতারি চলো। নিলয় পিছনে তাকালো
অর্ধ বয়সী একটি লোক হাতে হুইল চেয়ার নিয়ে
দাড়িয়ে নীড়াকে বলছে। নীড়া মুখ তুলে
তাকালো নীড়ার মুখটি মলিন হয়ে গেছে।নীড়া
নিলয়ের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। কিন্তু
সেই হাসিটা কোন আনন্দের নয় একটা কষ্টের
হাসি।হাসিটা নিলয় কে বুঝিয়ে দিল এই জন্য বলেছি
আমাকে দেখলে আর ভালবাসতে চাইবে না।
বৃষ্টিও নেমে গেল হঠাৎ নীড়া চেয়ারে
বসলো লোকটি চেয়ারটা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
নিলয় সেখানেই দাড়িয়ে রইল আর নীড়ার চলে
যাওয়া দেখতে লাগল।
.
অনেক সময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা
হয়ে গেল নিলয় এখনো বাড়ি ফিরল না।নিলয়ের মা
খুব টেনশন করছে।ফোনটাও অফ করে
রেখেছে ছেলেটা আসুক আজকে বাসায় খবর
আছে ওর। কি পেয়েছে এত সারাদিন শুধু আড্ডা।
আড্ডা দেয়া ছাড়া কিছুই নেই।হঠাৎ কলিংবেল
বেজে উঠলো চলে আসছে নবাব আজকে
নবাবের খবর আছে কথা গুলো বলতে বলতে
মা দরজা খুলেন।
-: ভিজে তো কাকের বাচ্চা হয়ে বাসায়
ফিরেছো।সারাদিন কোথায় ছিলা??তোমার জন্য
যে মা টেনশন করি এটা কি জানো?ফোন অফ
করে রেখেছো কেন??মা যেন ফোন
দিতে না পারি তাই তো।
মা আর কিছু বলার আগেই নিলয় মাকে জড়িয়ে ধরে
কেঁদে ফেলে।নিলয়ের মা একটু ঘাবড়ে যায়।
-: কি হয়েছে বাবা?এমন বাচ্চা ছেলের মতো
কাঁদছিস কোন?কারো সাথে কি কিছু হয়েছে??
একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে মা।নিলয় কিছুই
বলছে না কেঁদেই চলেছে।মা বলল আচ্ছা তুই
ফ্রেশ হয়েনে আমি খাবার দিচ্ছি তারপর শুনবো
কি হয়েছে।মায়ের কাছে কিন্তু কিচ্ছু লুকাবি না।
.
নিলয় নীড়ার কথা মাকে সব বলে।মা সব কিছু
শুনেন শুনার পর বললেন তোর বাবা আসুক আমি
তার সাথে কথা বলবো দেখি তোর বাবা কি বলে।
নিশ্চয়ই উনি তোর খারাপ চাইবে না।আর আমি
বুঝিয়ে বলবো তোর বাবাকে।নিলয়ের বাবাকে
নিলয়ের মা সব বুঝিয়ে বলেন।উনি ছেলের খুশির
জন্য রাজী হয়ে যান।
.
নিলয় সারাদিন পর রাত প্রায় ১২:৩০ বাজে ফেবুতে
লগইন করল।নীড়া অনেক গুলো মেসেজ
করেছে। লাস্ট মেসেজটা ছিল এমন জানি আমাকে
তুমি আর কখনোই চাইবে না,ভালবাসবে না,আমার
সাথে কথাও বলবে না।তোমাকে আমি এই কথাটি এ
জন্যই বলিনি কারন আমিও তোমাকে ভালবেসে
ফেলেছিলাম।তোমাকে কখনো হারাতে চাইনি।
হারানোর ভয়ে তোমাকে সত্যিটা বলিনি।আমাকে
মাফ করে দিও।তুমি ভালো থেকো।নিলয়
মেসেজটি দেখে হাসছে কারন নীড়া ভালবাসি
এই কথাটি কখনোই বলেনি নিলয়কে।আজ সত্যিটা
জানতে পেরে নিলয়ের খুব আনন্দ হচ্ছে।
নীড়া অনলাইনে নিলয়ের জন্য অপেক্ষা
করছে। নিলয় মেসেজ দিল নীড়াকে,কিসের
মাফ কোন মাফ পাবে না তুমি। আমার সাথে মিথ্যে
বলেছো এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।
নীড়া বলল কিসের শাস্তি?দেখতেই পাবে এখন
ঘুমাও আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না বলে
নিলয় লগআউট করে দেয়।নীড়া তারপরেও
মেসেজ দেয় কিন্তু কোন রিপ্লাই আসে না।
.
পরের দিন নিলয়,নিলয়ের বাবা আর মা নীড়াদের
বাড়িতে এসে হাজির।নীড়া নিলয়কে দেখে অবাক
হয়ে যায় কাল রাতেই কিসব বলছিল আর আজ এখানে
সবার সাথে। নিলয়ের বাবা নীড়ার বাবার কাছে
নীড়াকে তার পুএবধু করার জন্য দাবী জানায়।
দুজনেই হেসে উঠে দুজন দুজনকে আগে
থেকেই চিনতো।নীড়া আর নিলয়ের বাবা একই
অফিসে চাকরি করে আগে ছিল কলিগ আর এখন
থেকে হবে বিয়াই।
.
৫বছর পর……………
বা…বা……বা…বা…উতো………(নিলয়ের মেয়ে)
-: তোমার আম্মুকে ডাক মামনি।বলো বাবা
তোমাকে ছাড়া উঠবে না।
>>: কেনো উঠবে না?
-: এই…রে…… তুমি কখন এলে?
>>: অনেক আগেই কতবার ডেকেছি খবর আছে
উঠার?
-: ঘুমিয়ে থাকলে কি কেউ আর খবর রাখে না
দেখে?
>>: আবারো?? (রাগী রাগী কন্ঠে)
-: হা হা হা
নিলয় এই ৫ বছরের মধ্যে পড়াশোনা শেষ
করে। স্যাটেল হয়ে নীড়াকে বিয়ে করে।
নিলয় আর নীড়ার বিয়ে হয়েছে দু'বছর
হয়েছে। তাদের ছোট্ট একটি মেয়েও
হয়েছে নাম রেখেছে লিয়া। এখন তারা খুব খুশি
জীবন যাপন করছে।ভালবাসায় ভরপুর এখন তাদের
জীবন।

No comments:

Post a Comment