Wednesday, August 31, 2016

"ভালোবাসার সম্মান"

"ভালোবাসার সম্মান"

বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে রিমি।
বিয়ের পর এটা তৃতীয়বারের মত রিমির এখানে
আসা।
রিমির বাবা দুইদিন আগেই রিমির বর
সারোয়ারকে বলেছিলেন, সারোয়ার যেন
সকাল সকাল রিমিকে এখানে দিয়ে যায়
আর রাতে এসে রিমিকে নিয়ে যায়।
সারোয়ার সকালে অফিসে যাবার আগেই
রিমিকে এখানে রেখে গেছে।
রিমির কাছে ব্যাপারটা মোটেও ভাল
লাগেনি।
বিয়ের আগে রিমি যখন প্রথম তার বাবাকে
সারোয়ারের কথা বলে, তখন তার বাবা
বিয়েতে রাজি ই হলেন না। অনেক কষ্টে
রিমি তার বাবাকে বিয়েতে রাজি করায়।
বিয়ের আগ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত
রিমি খেয়াল করেছে, রিমির বড় দুই বোন
এমন কি রিমির মা ও কথায় কথায়
সারোয়ারের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
সারোয়ারকে ছোট করার কোন সুযোগ ই
তারা ছাড়েন না।
রিমির দুই বোনের বিয়ে হয়েছে রিমির
চাইতে ধনী পরিবারে। আর তাই দুই
বোনেরই সে নিয়ে গর্বের শেষ নাই।
সকাল বেলাতেই নাস্তা খাবার সময় যেমন
রিমির বড়বোন বলে উঠেছিল, "এবারের ঈদে
শপিং করতে তোদের দুলাভাইয়ের সাথে
ইন্ডিয়া যাচ্ছি!"
আর প্রায় সাথে সাথেই রিমির মেজবোন
বলে উঠল, "আপা, তুই যাবার আগে বলবি,
আমরাও যাব।"
রিমির বড়বোন তখন বলে উঠলেন, "আচ্ছা,
বলব।
রিমি সারোয়ারকেও বলিস, যদি সে কোন
জায়গা থেকে টাকা ম্যানেজ করতে পারে
তবে তোরাও গেলি।"
কথাটা শুনে রিমি কিছু একটা বলতে
চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই রিমির মা
এসে থামিয়ে দিলেন দুই বোনকে।
দুপুরে খাওয়ার পর রিমির মা এসে তিন
মেয়ের পাশে বসলেন। রিমি বেশ বুঝতে
পারছিল, সারোয়ারকে নিয়েই হয়ত মা কিছু
বলতে চাইছেন।
রিমির মা বলে উঠলেন, "হ্যাঁ রে রিমি,
তোর শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেমন?"
-- "কেমন মানে? এটা কেমন প্রশ্ন, মা?"
রিমি উত্তর দিল।
-- "মানে তোর সাথে কেমন ব্যবহার করে।
হলুদের দিন তোর শাশুড়ি যে ঝগড়া করল
তোর ফুপির সাথে!"
রিমি কোন উত্তর দিল না। তার মেজাজ
খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মা ভাল করেই
জানতেন হলুদের দিন তার শাশুড়ির কোন
দোষ ই ছিল না। যা দোষ ছিল, পুরোটাই
তার ফুপির। তারপরেও মা আপুদের সামনে...
রিমির বড়বোন বলে উঠল, "থাক মা, ওইসব
কথা বলে লাভ নাই। সারোয়ারের মা তো
আর জানেন না আমার ফুপি কেমন! কত্তো
বড়লোকের বউ!"
রিমি এবার বলে উঠল, ''তোমরা কথা বলো
আমি বাবার সাথে একটা কথা বলে আসছি!"
এই বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে
চলে গেল।
কিছুক্ষণ একা একা কান্না করে
সারোয়ারকে ফোন করল।
--- ''কি করছো তুমি?"
-- '' তোমাকে মিস'" সারোয়ার উত্তর দিল।
-- "থাক, আর বানিয়ে বলতে হবেনা। মিস
করলে তো একটা ফোন ই দিতে!" অভিমানী
কন্ঠে রিমি বলল।
-- "সত্যি মিস করছিলাম। ভাবলাম, বাবার
বাড়িতে তুমি মা আর আপুদের সাথে গল্পে
বিজি, তাই বিরক্ত করিনি।"
-- "তুমি আসবে কখন? রাতে এখানে এসে
খাবে কিন্তু!" রিমি বলে উঠল।
-- "খাবো কিভাবে? তোমার বাবা তো
আমাকে ওইখানে খাওয়ার কথা কিছু বলেন
নি।"
রিমি চুপ করে রইল। আসলেই তো তার বাবা
সারোয়ারকে রাতে খাওয়ার ব্যাপারে
কিছুই বলেন নি। এমনকি রিমিকেও
সারোয়ারের কথা কিছুই জিজ্ঞেস করেন
নি। অথচ তার দুইবোনের জামাইকে এর
মধ্যে দুইবার ফোন করে রাতে এসে খেয়ে
যেতে বলেছেন।
রিমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সারোয়ারকে বলল,
"আচ্ছা, ঠিক আছে। খেতে হবে না তোমার।
তাড়াতাড়ি এসে আমায় নিয়ে যেও।"
--- "জ্বি, ম্যাডাম! আমি চলে আসবো!"
সন্ধ্যা হতেই রিমির মা রাতের খাবার
রান্নার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
নানারকমের সুস্বাদু খাবারের আয়োজন
করছেন তিনি।
রিমি কাছে গিয়ে বলল, "মা, আমি রেডি।
কিছুক্ষণ পরেই চলে যাচ্ছি!"
রিমির মা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, "চলে
যাচ্ছি মানে? রাতে খেয়ে যাবি না?
এতসব আয়োজন তবে কার জন্যে??"
মুচকি হেসে রিমি উত্তর দিল, "তোমার দুই
মেয়ের জামাই আসবে তো। তাদেরই না হয়
এসব খাইয়ে দিও!"
রিমির মা গম্ভীর স্বরে বললেন, "সারোয়ার
আসবে না তোকে নিতে? সে না খেয়ে
গেলে ব্যাপারটা কেমন হবে? তোর
শ্বাশুড়ি যখন জানবে তার ছেলে নতুন
শ্বশুরবাড়ি থেকে না খেয়ে এসেছে তখন
তোর বাবার মানসম্মান থাকবে?"
রিমি হাতের চুড়ি নাড়াতে নাড়াতে বলল,
"তোমরা তো কেউ ই সারোয়ারকে রাতে
খেয়ে যাবার কথা বলো নি। বিনা
দাওয়াতে আমার স্বামী এখানে খেলে
আমার কি মানসম্মান থাকবে?"
রিমির মা চোখমুখ শক্ত করে বললেন, "ঠিক
আছে, তুই একাই খেয়ে যা!"
-- "যে খাবার খাওয়ার ভাগ্য আমার
স্বামীর হল না , সেটা আমি কি করে খাব?"
রিক্সায় বসেই রিমি সারোয়ারের হাত
ধরে বলল, "আমাকে তো আসতেই দিচ্ছিল না
মা। বাবা বারবার বলছিলেন, জামাই না
খেয়ে চলে যাবে কেমন কথা? আমি মাকে
বলেছি, আজ রাতে তুমি আমাকে বাইরে
খাওয়াবে। ভাল করেছি না, বলো?"
রিমির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে
সারোয়ার বলল, ''খুব ভাল করেছো। আমরা
বাইরে থেকে খেয়েই বাসায় ফিরব।"
সারোয়ারের হাতটা শক্ত করে জাপটে ধরে
রিমি মনে মনে বলল, "আমার কাছে তোমার
সম্মান, তোমার ভালোবাসা পৃথিবীতে
সবচাইতে দামী। তোমার হাত ধরে রিক্সায়
ঘুরা বিদেশে গিয়ে শপিং করার চাইতে
অনেক আনন্দের। তুমি শুধু আমার পাশে
থেকো, একটু ভালোবেসো, আমি সব কষ্ট, সব
অপমান, সব বিদ্রূপ হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে
তোমার সুখেই ভাসবো! ""

লেখা---- সানজানা নিকিতা (Saanjana Nikita)

No comments:

Post a Comment