Tuesday, August 30, 2016

~(অদ্ভুত স্বপ্নচারী)~

~(অদ্ভুত স্বপ্নচারী)~

ঘুম থেকে উঠতেই ফোপানোর শব্দ পাচ্ছি।
কাহিনী কি!!! এমন সকাল বেলা ফোপাচ্ছে
কে। আমার মাঝে কিউরিসিটি জেগে উঠল।
আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নামলাম।
শব্দটা ফলো করতেই মনে হলো ড্রইং রুম
থেকে আসছে। আমার মাথায় তো যেন
বাশ পড়ল। ড্রইং রুমে ফোপানোর শব্দ।
কোন মাইয়া আইসা আমার নামে কেদে
কেদে কমপ্লেন করছে না তো। ভাবতেই
শরীরটা শিরশির করে উঠল। হালকা করে
পর্দাটা সরিয়ে উঁকি দিলাম। এমা একি!!!!!!
যা ভাবলাম তার কিছুই হচ্ছে না।
ফ্যামিলির সবাই ড্রইং রুমে বসে আছে।
আর টিভিতে মুভির ইমোশনাল সিন চলছে।
এজন্য সবাই ফোপাচ্ছে। এমন আবেগী
ফ্যামিলি দুনিয়ায় আরেকটা নাই। আস্তে
আস্তে সবার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম।
মুভির ইমোশনাল সিন শেষ। এখন
রোমান্টিক সিন চলছে। আমার নিজেরও
নিজেকে রোমান্টিক রোমান্টিক লাগছে।
হঠাৎ করে টিভি থেকে চোখ সরিয়ে সবার
দিকে তাকালাম। ওমাগ!!!! অক্টোপাসও এত
তাড়াতাড়ি রং বদলাতে পারেনা ।
হেতেরা যত তাড়াতাড়ি মুখের ইমোশন
পাল্টাই দিছে । সবাই মুচকি হাসছে।
আহা!!!! কি রোমান্টিক। কিন্তু আমাদের
ফ্যামিলির সদস্য ১০ জন।যৌথ পরিবার তো
তাই। কিন্তু এখন ১১ জন লাগছে। ব্যাপার
কি!!! রাতারাতি কারো বাচ্চা হয়ে যায়নি
তো। মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুমে চলে
গেলাম। আমাকে কেউ খেয়াল করে নাই।
.
রুমে বসে বসে চিন্তা করছি ১১ জন কেমনে
হলো। হঠাৎ মনে হলো অতি পরিচিত
কাউকে এখানে দেখেছি। আরে দুররর!!!
সবাই তো আমার অতি পরিচিত।
মেমোরিটা রিস্টোর দিলাম। আবার মনে
করছি সবার মুখ। হ্যা একটা মুখ আলাদা
ছিল। ওহহহহহ গডডডড!!!! মেঘা!!!! মেঘা
আমার বাসায় কিভাবে। খাইছেড়ে!!!
আজকা আমার শ্রাদ্ধ এ বাসাতেই হবে।
প্রিয়াস সময় থাকতে দৌড় দে।
.
কোনরকমে কাপড় পড়ে এক দৌড় দিলাম। রুম
থেকে বেড়োতেই এক স্লিপ। স্লিপ খেয়ে
একদম মেঘার কোলে। আস্তে আস্তে চোখ
খুললাম। মেঘা হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি তো মনে মনে যে কলার বাকল ফেলছে
তার শ্রাদ্ধ করতাছি। কলার বাকলটার
জন্যই আমি এখন রুমে। নইলে এতক্ষনে বের
হয়ে বাইরে ঘুরাঘুরি করতাম। এখন বাচার
একটাই উপায়। অভিনয়!!! আস্তে করে চোখ
মেলে সবাই কে দেখে নিলাম। সবাই খুব
রাগি লুক নিয়ে আছে। আমার এখন অভিনয়
করা ছাড়া গতি নাই।
.
- ওমাগ!!!! কি ব্যাথা গো!!! আমি শেষ।
(আমি)
.
মা-বাবা সহ সবাই ছুটে আসল। ফুল
ফ্যামিলিতে একমাত্র ছেলে। আদরটা একটু
বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।
.
- কি হইছে বাবা তোর?? (মা)
- কই ব্যাথা পাইছস?? (বাবা)
- এইযে পায়ে আর কোমড়ে। (আমি)
- কাকিমা সব ঢং। কোন ব্যাথা পায় নাই।
(স্নিগ্ধা মোর কাজিন। এই মাইয়াটা এমন
হিটলার কেন)
- বুঝছি। এমন উল্লুকের মত চললে এমনই হবে।
(বাবা)
- মা!!! আমি উল্লুক?? (আমি)
- হইছে ভাব নিস না। তোরে আমি চিনি।
সুন্দর করে উঠে রুমে যা। (মা)
- মা ব্যাথা পাইছি। (আমি)
- ঐ তুই উঠ আর না উঠ আমার বান্ধবীর কোল
থেকে উঠ। (স্নিগ্ধা)
- তোরও বান্ধবী আছে?? (আমি)
- এটা কিরকম প্রশ্ন?? (স্নিগ্ধা)
- না মানে তুই যেরকম গুন্ডা টাইপের তোর
তো বান্ধবী হওয়ার কথা না। (আমি)
- যার কোলে শুয়ে আছস। সে আমার থেকেও
বড় গুন্ডা। (স্নিগ্ধা)
- ওমাগ!!!!! প্রিয়াস ভাগ। (আমি)
.
অতঃপর এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা
লাগাইয়া দিলাম। যাক মেঘা তাহলে
স্নিগ্ধার বান্ধবী সেজে আসছে। কিছুটা
হলেও শান্তি পাইলাম। এবার বুঝলাম মেঘা
আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিল কেন।
.
এক ঘন্টা কেটে গেছে। রুমে বসে মোবাইল
টিপছি। আর ভাল লাগছে না। রুমের বাইরে
যেতেও ভয় লাগছে। দরজা খুলে উঁকি
দিলাম। ড্রইং রুমে কেউ নাই। সবাই গেল
কই। অবুঝ শিশুর মত বেড়োলাম রুম থেকে।
স্নিগ্ধার রুমে যাওয়া যায়। মেঘাও ওখানে
হবে নিশ্চয়ই।
.
স্নিগ্ধার রুমে গিয়ে নক করছি। স্নিগ্ধা
দরজা খুলল। উঁকি দিয়ে দেখছি মেঘা কই।
স্নিগ্ধা বুঝে ফেলল -
.
- ঐ কি হইছে বল। (স্নিগ্ধা)
- না মানে তোর রুমটায় অনেকদিন যাবত
আসি না তো তাই আসলাম। (আমি)
- হইছে আজ আসতে হবে না।
- আরে না। আজ তোর রুমটা দেখতে ইচ্ছা
করছে।
- বলছি না ঢুকবি না।
- ঢুকে পড়ছি। আচ্ছা ঐ যে আপুটাকে দেখা
যাচ্ছে ইনি কে?? (মেঘার দিকে তাকিয়ে
দেখি এই আমাকে কাচা চিবাইয়া খাইল
বলে।
- ঐ ও তোর বড় না। আপু ডাকতে হবে না।
মেঘা নাম।
- মেঘাআআআআআ.......
- ঐ ও তোর জিএফ না যে এত্ত আবেগে
ডাকতে হবে।
- ওহহহহ তাই তো। আচ্ছা মেঘা আপু আপনার
উপরে তখন পড়ছি মাইন্ড করেন নাই তো??
(এবার মেঘার মুডটা এমন "চান্দু একবার
হাতে পাইয়া লই। যাইবা কই")
- না ভাইয়া আমি মাইন্ড করি নাই। (মেঘা)
- ভাইয়ায়ায়ায়ায়া???? আমি ভাইয়া?
(আমি)
- তা নয়ত কি?? তুই আমার ভাইয়া তার মানে
মেঘারও ভাইয়া। (স্নিগ্ধা)
- হ্যা প্রিয়াস ভাইয়া। (মেঘা)
.
আমার বুকে যেমন কেউ হাতুড়ি দিয়ে মারল।
ওহহহহ নু!!!! মেঘা আমাকে ভাইয়া ডাকতে
পারে না। রুমে এসে এতিমের মত বসে
আছি। সদ্য ছেকা খাইলাম। আমার তো
বালিশ ভেজানো উচিত। আমার রুমের
বেলকনিতে গিয়ে বসে আছি। আর চোখের
জল জড়াচ্ছি। আসলে হাতে একটা পিয়াজ।
ওটা আনমনেই ছুলছি আর চোখ দিয়ে পানি
বেড়োচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার
রুমের দরজা লক করছে। রুমে এসে দেখি
মেঘা। এক দৌড়ে এসে আমার গলা টিপে
ধরল। এমা!!!! মেরে ফেলবে নাকি। আসলেই
তো মাইয়া সেই মাপের গুন্ডী। এই মাইয়ার
শরীরে এত্ত জোর কইত্তে আসল।
.
- মেঘা মেঘা আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করে
তারপর মার। (আমি)
.
গলা থেকে হাত নামাল।
.
- ঐ তোর শেষ ইচ্ছার খেতায় আগুন। (মেঘা)
- ওহহহহ আচ্ছা তাইলে আগে ফায়ার
সার্ভিসরে কল করে নেই। আগুন নেভাতে
হবে তো। (আমি)
- ওহহহ গডডড এই পুলাটারে নিয়া কি করব
আমি?
- ঐ আমারে নিয়া কি করবা??
- তোরে প্রথমে কোবামু। তারপর পিস পিস
করমু। তারপর কেজি হিসেবে বিক্রি করমু।
- ওমাগ!!!! আমাকে হুমকি দিতেছে???
প্রিয়াসকে হুমকি?? হুহ দেইখা লমু।
- কি দেখবি হ্যা???
- আরে না না কথা স্লিপ হয়ে বেড়িয়েছে ।
- আমি তোর আপু???
- আরে হ্যা.... না..... হ্যা..... না....
- ঐ কি বলতাছস??
- আপু লাগি আমি তোর??
- আরে না না। তুমিতো আমার বউ। সুইটু
কিউটু আমার।
- ফাজলামি করছ??
- আরে না। বউয়ের সাথে ফাইজলামি করতে
নাই।
- তো তখন আপু বললি কেন??
- আরে ভুলে স্লিপ করে গেছে।
- আরেকদিন যদি ভুলেও কোন কথা বের হয়
তোর মুখ চিরদিনের জন্য বন্ধ কর দিব।
- প্রিয়াসকে আবার হুমকি??? হুহ!!!
- হ্যা হুমকি দিছি। কি করবি??
- আরে জানু চেত কেন?? এমনি বললাম।
- আর যাতে এমনি কোন কথা বলা না হয়।।
- আচ্ছা।
- আচ্ছা তোমার ফ্যামিলিতে সবাই
তোমারে এত্ত কম দাম দেয় কেন??
- আর বলোনা। ঐ যে স্নিগ্ধা দেখছনা??
ওরে আমি এক জায়গায় বেড়াতে গিয়ে
পাইছি। তখন মাবাবারে বললাম ওরেই
আমার বোন হিসেবে চাই। তখন মা বাবা
জেঠু আর জেঠিমনিকে বলে ওরে নিয়া
আসছে। আর এখন ও আমার সাথে ভাব লয়।
.
হঠাৎ করে পিছনে ঘুরে দেখি স্নিগ্ধা
দাড়িয়ে। একি!!! মেঘা দরজা লক করে
নাই???
.
- মেঘা দরজা লক কর নাই??? (আমি)
- না তো। যাস্ট মিশিয়ে রাখছিলাম।
(মেঘা)
- আমি তো লক করার শব্দ পাইছিলাম।
(আমি)
- কেন কি হইছে?? (মেঘা)
- হয় নাই হবে আমার শ্রাদ্ধ। (আমি)
- ঐ আমারে কই জানি পাইছিলি??
(স্নিগ্ধা)
- কই পাইছিলাম?? (আমি)
- এখন না বললা??? (মেঘা)
- আজকা তোরে খাইছি। তোর সব অকর্ম আর
কুকর্ম প্রকাশ করমু। (স্নিগ্ধা)
.
অতঃপর স্নিগ্ধা আমার যতসব ভাল ভাল
কাজ করছি সব বলে গেল। আমি এতিমের মত
বিছানার উপরে বসে আছি। মেঘা আমার
দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ
মেঘা হাসতে শুরু করল। আমিও দাত বের
করে হাসা শুরু করলাম।
.
- এত্তগুলা মেয়ের চড় খাইছ মিথ্যা বলার
জন্য?? (মেঘা)
- হা হা আমি এমনই.... (আমি)
- এমনই মানে?? তোর লজ্জা করে না এসব
বলতে?? (ওমাগ!!!! এখন দেখলাম দিপীকা
হঠাৎ করে রিনা খান কেমনে হইয়া গেল)
- আসলে জানু একটা কথা শেয়ার করার ছিল।
- একদম কথা ঘুরাবি না।
- ওখে।
- আর কখনো মিথ্যা বলবি??
- জীবনেও না।
- গুড বয়। এবার কি শেয়ার করবা বল।
- না মানে দশদিন পর আমার বিয়ে। বাবার
বন্ধুর মাইয়ার সাথে।
- কি??তুমি রাজি??আমাদের দুই বছরের
ভালবাসা?
- রাজি না হয়ে কি করব। ফ্যামিলির সবার
ইচ্ছা । (কাদ কাদ হয়ে)
- তুমি কি গরু নাকি যে ফ্যামিলির সবাই
মিলে তোমাকে কোরবানি দিয়ে দিল।
- কি আমাকে গরুর সাথে তুলনা??
- আমি এখনই আন্টিকে বলছি তুমি বিয়ে
করবেনা।
- ওখে বলে দেখ।
.
মেঘা বিশাল রাগ নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
আমি ও পিছন পিছন দরজা পর্যন্ত আসলাম।
পর্দার ফাক দিয়ে উঁকি দিলাম। ড্রইং রুমে
সবাই বসে আছে। মেঘা গিয়ে মার সামনে
দাড়াল।
.
- আন্টি প্রিয়াস বিয়ে করবে না। (মেঘা)
- কিসের বিয়ে কার বিয়ে?? (মা)
- প্রিয়াসের বিয়ে। প্রিয়াস আমাকে
ভালবাসে। আমিও প্রিয়াসকে ভালবাসি।
আমরা বিয়ে করব। আংকেল আপনার বন্ধুকে
না করে দিন প্লিজ। (মেঘা)
- আমার বন্ধু???? আমার বন্ধুকে না করব
কেন??(বাবা)
- আপনার বন্ধুর মেয়ের সাথেই তো
প্রিয়াসের বিয়ে। তো বন্ধুকে না করবেনন
না?? (মেঘা)
- ওহহহহ তাই!!! তা প্রিয়াসের বিয়ে কবে??
(মা)
- দশদিন পর বলল। (মেঘা)
- ওহহহহ বজ্জাতটা কই??? ওর বিয়ের সাধ
মেটাচ্ছি। (বাবা)
.
হঠাৎ কেউ কানে ধরে টান দিল। আমিও
টানের চোটে একদম ড্রইং রুমে।
.
- কাকু এই যে বজ্জাতটা। (স্নিগ্ধা)
- কি সাহেব বিয়ে করার খুব শখ?? নিজে
বলার সাহস নাই?? মিথ্যা বলে মেয়েটারে
পাঠাইছ। (বাবা)
- না বাবা আসলে তা না। (আমি) <মেঘা
বুঝতে পারছে আমি মিথ্যা বলছি। রিনা
খানের মত কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ
রাঙাচ্ছে। >
- তা কি কাহিনী শুনি?? (মা)
- আসলে না মানে..... (আমি)
- আসলে কাকু আমাদের মাননীয় প্রিয়াস
মহাশয় মেঘাকে গত দুই বছর যাবত
ভালবাসে। মেঘা মহাশয়াও সেম। কিন্তু
আমি জানতে পারছি মাত্র একটু আগে। ওরা
রুমে চুপিচুপি কথা বলছিল। (স্নিগ্ধা)
<ফাকা মাঠে হাড়ি ফাটাইয়া দিল>
- ওহহহহ তাই বল.... (মা)
- আমি ভাবছিলাম। মেঘা যদি আমাদের
বাসার বউ হয় তাহলে প্রিয়াসের মিথ্যা
বলাটা কমে যেতে পারে।(জেঠু)
- আমি ও তাই বলছি। (জেঠুমনি)
- তাহলে আর কি। বিয়ে হবে দশদিন পর।
(বাবা)
- ইয়াহু!!!!! (আমি)
- এত্ত খুশি হওয়ার কিছু নাই। আমি কিন্তু
ভাঙানিও দিতে পারি । (স্নিগ্ধা)
- যা তোরে ম্যাংগো ক্যান্ডি খাওয়ামু। তবু
ভাঙানি দিস না। (আমি)
- ম্যাংগো ক্যান্ডি??? এত্ত কিপ্টা তুই??
(স্নিগ্ধা)
- নিজে টাকা ইনকাম করলে কিপ্টা হতেই
হয়। (আমি)
- বুঝছি। মাথা ইনকাম করছ। প্রতিদিন তো
কাকুর পকেট থেকে টাকা নেস। আর বলস ইদুর
নিয়া গেছে। (স্নিগ্ধা)
.
আমি মাথায় হাত দিয়া বসে পড়ছি। বাবা
আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাইয়া
আছে। আমি উঠে দাড়ালাম। চোখ বন্ধ করে
এক দৌড়ে রুমে।
.
কিছুক্ষন পর কে যেন রুমে আসল। আতংকে
শিউরে উঠলাম। কজ ইটস মেঘা। মিথ্যা
বলার জন্য অতঃপর আমার উপর দিয়ে বালির
ঝড় যাচ্ছে। কেউ আমারে বাচান!!!!!!!!!

No comments:

Post a Comment