Wednesday, August 31, 2016

childhood love

childhood love

চার তলার ফ্লাট দুটোকে মাতিয়ে রাখার জন্য আমিই
যথেষ্ট।পাশের ফ্লাট আর নিজেদের ফ্লাটের
মধ্যে কোনো তফাৎ দেখতাম না।যখন
যেখানে খুশি শুয়ে বসে কাটিয়ে দিতাম।আন্টি
অবশ্য আমাকে অনেক ভালবাসতেন।আহারে
,আফসোস হয়,আন্টি আমাকে কতই না ভালবাসে
আর আমার মা কি না পাশের বাসার ওই পিচ্চি
মেয়েটাকে আদর করে?ওর সামনে আমাকে
পাত্তাই দেয় না?আর মেয়েটাও হয়েছে,সারাদিন
এসে আম্মুর পিছে পিছে লেগে থাকে।নাহ এ
মেয়েকে তো সুবিধার মনে হচ্ছে না।আমার
আদরে ভাগ বসায়?হুম্মম্ম।।।বুদ্ধি পেয়েছি,ও
সারাদিন আমাদের বাসায় যেহেতু থাকে,তো ওর
বাসায় ওর খেলনা,ড্রয়িং খাতা,রং পেন্সিল সব ওলট পালট
করে রাখব।হাহাহা কি মজা হবে।যেই বুদ্ধি সেই
কাজ।ওদিকে ওই পিচ্চি কি করছে কে জানে।
:আন্টি আমাকে পুতুল বানিয়ে দিবা?(পিচ্চি)
:অবশ্যই মামনি,তুমি কাপড় নিয়ে আসো,দিব।(আমার
মা)
:একটা জামাই পুতুল আরেকটা বউ পুতুল বানাইয়া দিবা
:ওলে বাবালে,কি বিয়ে দিবা?
:হু।
:আচ্ছা আম্মু দিব।নাসিম ভাইয়ার খেলনা গুলা একটু
গুছিয়ে দিবা মা?
:ওকে আন্টি দিতেছি।
:এইতো লক্ষী আম্মু।
যার খেলনা অগোছালো করে আসলাম সে
আমার কত ছোট হয়েও আমার খেলনা গুলো
গুছিয়ে রাখছে।ইসসস।কি কাজটাই না করলাম।
তবে ওকে ক্ষেপাইতে খুব ভাল লাগত।কিন্তু
মেয়েটা খুব বোকা,ওকে রাগাইতে পারতাম না।ঝারি
দিলে চুপচাপ শুনত মাথা নিচু করে।যেন আমার বিয়ে
করা বউ ছিল।যদিও আজকালকার বউরা কথা বললে
বরকে মাথা নিচু করে শুনতে হয়।
মেয়েটার নাম তিথি।সেই ছোট্ট থেকে
একসাথেই বড় হয়েছি।তিথি আমার চেয়ে দু
বছরের ছোট।ওরা আর আমরা একত্রে থাকি
অনেকবছর ধরে।আর আমাদের দুই পরিবারের
মধ্যেও একটা অটুট বন্ধন আছে।আন্টিও আমাকে
অনেক স্নেহ করতেন।কিন্তু ছোট থেকে
আমি ছিলাম দুষ্টের শিরোমণি।সারাদিন এটা ওটা করে
বেড়াতাম আর সুযোগ পেলে তিথিকে বোকা
বানাইতাম।আর বোকা মেয়েটার নাজেহাল অবস্থা
করতাম।
তখন আমার বয়স সাত বছর,তিথির পাচ।ওকে একদিন
ডেকে বলি এই মেয়ে শোন,আমার সাইকেল টা
মুছে দে তো।
:আমি কেন মুছে দিব?
:এই বড়দের মুখে মুখে কথা?জানিস আমি তোর
কী হই?
:কী হও?
:আমি তোর জামাই।জামাইর কথা শুনতে হয়।
দেখিসনি তোর আম্মু যেমন তোর আব্বুর কথা
শোনে?
:ও আচ্ছা,ঠিকাছে ভাইয়া দিচ্ছি।
:ওই জামাইকে কেউ ভাইয়া বলে?
:তাহলে কী বলে?
(এই রে,নিজেই তো জানি না)
:সে আমি জানি না।পরে বলব
তিথিকে সাইকেল মুছতে দিয়ে গেলাম বন্ধুদের
সাথে চডুইভাতি করতে।গাধীটা আমার সাইকেল
মুছতে শুরু করল।আম্মু আর আন্টি এসে দেখে
তিথি সাইকেল মুছতেছে।আম্মু জিজ্ঞাসা করল
:একি মামনি তুমি সাইকেল মুছতেছো কেন?বাদরটা
কই?
:ভাইয়া মুছতে বলছে আন্টি
:ও বললেই করতে হবে?
:ভাইয়া বলছে ও নাকি আমার জামাই।আর জামাইয়ের
কথা শুনতে হয়।
মা আর আন্টি দুজনেই হেসে উঠে।আম্মু ওকে
কোলে নিয়ে আদর করে বলে ওলে আমার
লক্ষী বউ মা।কী কষ্ট।
এভাবেই হাসি আনন্দে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি।
পরের বছর আমি ক্লাস থ্রি তে প্রমোশন
পেলাম আর তিথি কেবল ওয়ানে ভরতি হল।আমার
বাঁদরামির কারনে মা বাবা দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলেন
আমাকে ঢাকায় রেখে আসবে মামার বাসায়।ওখান
থেকে পড়ালিখা করব।আমার মন খুশিই হয়েছিল,মামার
কাছে যখন যা খুশি আব্দার করতে পারবো।ঢাকায়
যাওয়ার দিন তিথির মুখটা ভার মনে হল।আন্টি বলে
উঠল,"কীরে জামাই যাবে দেখে মুখ ভার
করেছিস"
ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেছে বুঝতে পারছি,সবাই
হেসে উঠল।বাবার সাথে লঞ্চে করে পাড়ি দিলাম
রাজধানী শহর ঢাকায়।মামার বাসায় পড়ালিখা শুরু করলাম।
মামাত ভাই আর আমি একত্রে স্কুলে যেতাম
কোচিং করতাম।বছরে একবার বাড়ি আসতাম।তাও
অল্পকিছুদিন থেকে চলে যেতাম।ঢাকায় গিয়ে
জীবনটা কেমন যন্ত্রে পরিনত হল।শৈশবের
পুরোটাই প্রায় ঢাকায় কাটাতে হল।
তখন আমি অষ্টম শ্রেনিতে পড়ি,বাড়িতে
বেড়াতে এলাম।তিথি তখন ক্লাস সিক্সে মাধ্যমিকে
ভরতি হল।আমি যখন বাড়িতে পৌছালাম তখন তিথি
স্কুলে।বিকেলে এসে আমার রুমে চুপচাপ উকি
দিয়েই দৌড়ে পালিয়ে গেল।ভাবলাম যাই গাধীটাকে
একটু জ্বালিয়ে আসি।ওর ঘরে গেলাম।ওকে
পেলাম না।ওকে খুজে পেয়ে ভয় দেখানোর
জন্য পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।ও নিজেকে
ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।পরে বলে
উঠল নাসিম ভাইয়া প্লিজ,ছেড়ে দাও না।কেমন যেন
মনে হল।ছেড়ে দিলাম।ও দৌড়ে চলে গেল।
বাড়িতে বেশীদিন ছিলামও না।আর আমার মন
পড়েছিল ঢাকায়,ক্লাস নোটস আর টিউটোরিয়াল এর
মধ্যে।দুদিনের মধ্যে ফিরে এলাম আবার।
আমি দশম শ্রেনীতে টেষ্ট পরীক্ষা দিয়ে
শীতের সময় একবার বরিশালে এলাম।বিকেলে
ছাদে হাটছি আনমনে,এমন সময় তিথি এল।ওমা তিথি
শাড়ী পরেছে।শাড়ীতে ওকে অপরুপ
অপ্সরীর মত লাগছে।চোখ ফেরাতে পারছিলাম
না।অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম।তিথিকে
আজ মনে হয় একটু বেশী সুন্দর লাগছে।এতদিন
ওইভাবে দেখিনি ওকে।দিনে দিনে কত বড়
হয়েছে ও।
:ওভাবে কী দেখছ?(তিথি)
:অপ্সরী।।।(আমি)
ঘোরের মাঝেই ওর উত্তর দিলাম।ও বোধহয়
লজ্জাই পেয়েছে।ওর মুখেও কথা নেই আমিও
নির্বাক।মনে হচ্ছে তিথিকে আজ নতুন দেখছি।
যৌবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ের এক কিশোরীর রুপ
মুগ্ধ নয়নে শুধু দেখেই যাচ্ছি।
সারা সন্ধ্যা সারা রাত শুধু আমার একটাই চিন্তা তিথি।কী
ব্যপার আগে তো কখনো এরকম অনুভুতি হয়নি।
তবে কী আমার কিশোর মনে প্রেম বাসা
বুনতে শুরু করেছে?এসবের উত্তর খুজতে
খুজতেই সেবার ঢাকায় চলে আসলাম।এস এস সির
পর আবার বরিশালে।অধীর আগ্রহে বসে আছি
ওকে দেখার জন্য।বিকেলে ছাদে আসল তিথি।
খুব সুন্দর করে সেজেছে
:কেমন আছো?(তিথি)
:হুম ভাল।তুমি?(এই প্রথম ওকে তুমি বললাম,বুকের
ভেতর যেন একটা শিহরণ বয়ে গেল)
:এই তো।পরীক্ষা কেমন দিলে?
:ভালই।একটা কথা বলব?
:হুম বল।(আগ্রহ নিয়ে)
:আজ আবার একটু শাড়ী পরে আসবে?
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিথি।
:কী হল?যাও না,শাড়ী পড়ে এস।
:পারব না।আমি কী তোমার বউ নাকি যে যা বলবে
শুনতে হবে?
আমি কিছু বলার আগেই চলে গেল তিথি।ধ্যৎ মনটাই
খারাপ হয়ে গেল।আনমনে ভাবছি তিথি রাগ করল কি
না?একটু পর একটা কাশির শব্দে পিছনে ঘুরে
তাকালাম।
আবারো আমার চোখটা কেড়ে নিল তিথি।শাড়ী
পরে এসেছে।হলুদ শাড়ী খোলা চুল,দারুন
লাগছিল ওকে।বিভোর হয়ে ওকে দেখছিলাম।
:অনেক সুন্দর লাগছে।
:সুন্দর না ছাই।আমি গেলাম।
চলে যেতে চাইলো।আমি হাত টেনে ধরলাম।
:বউকে কথা বললে শুনতে হয়।তুমি না আমার বউ।
:যাও তো জানি না।
লজ্জা পেয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় দিল।সাথে
আমার মনটাকেও নিয়ে গেল।মনের মাঝে
উপলব্ধি করতে পারলাম যে প্রেমে পড়েছি।
এরপর থেকে তিথি আমার সামনে তেমন আসত
না।ছোট থেকেই মেয়েটা শান্ত আর লাজুক।
আমাদের মনের মাঝেই যেন দুজনে এক হয়ে
থাকতাম।
নটরডেম কলেজে ভরতি হয়ে আবার ফিরে এলাম
ঢাকায়।আর আমার প্রেম মনের মাঝেই থেকে
গেল।আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।কিন্তু
একাকীত্বের সময় ওকে অনুভব করতাম আমার
মাঝে।বাড়িতে এলে ওর লাজ রাঙা মুখটা একবার
দেখার জন্য পাগল হয়ে যেতাম।আর তিথিও চুপি চুপি
আমার রুমে এসে উকি দিয়ে পালিয়ে যেত।কিন্তু
মুখফুটে আমরা কেউ কাউকে ভালবাসার কথা বলিনি।
চলুক না এভাবে।বুকের মাঝে এক অজানা শিহরণ
নিয়ে বেশ আছি।
এইচ এস সি শেষ করলাম,ঢাকা ইউনিভারসিটি থেকে
সিএসই ও প্রায় শেষের পথে।তিথিও বিবিএ করছে
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।এমন একদিন ফোনে
মেসেজ আসল একটা অচেনা নাম্বার থেকে
"কাল আমার বিয়ের পাকা কথা বলতে পাত্রপক্ষ
আসবে,যদি ভালবেসে থাক তবে এর আগে
এসো"
চোখে অন্ধকার দেখছিলাম।ওকে পাওয়ার
আগেই হারানোর বেদনা আমাকে পেয়ে বসল।
বন্ধুর পালসার নিয়ে ছুটে চললাম বরিশাল।আমার
পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হল।সোজা তিথিদের বাসায়।
দেখলাম কিছু মেহমান ওদের ড্রয়িংরুমে বসে
আলাপ করছে।আমার মা বাবাও আছেন।ভয় পাবো
নাকি এগিয়ে যাবো বুঝতে পারলাম না।নাহ আজ
আমাকে পারতেই হবে।বাংলা সিনেমার নায়কের
মত দৌড়ে এন্ট্রি নিলাম ড্রয়িংরুমে।তিথিও ছিল।সোজা
ওর সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে চিৎকার
দিয়ে বললাম
না আ আ আ আ
এ হতে পারে না। i love her from my childhood.i
just love her.
বলেই আমি কেদে দিলাম।চারিদিকে পিন পতন
নিরবতা।কিছু বুঝলাম না।কী হল।হঠাৎ শুনি সবাই হো
হো করে হেসে উঠল।বিষয় কী বুঝলাম না।
তিথির দিকে তাকিয়ে দেখি মিটি মিটি হাসছে।আন্টি
বলে উঠল
:ওরে আমার জামাই,তোমার সাথেই দিব
মেয়েকে।সমস্যা নাই।
সবাই আবার হেসে উঠল।পরে বুঝলাম যে তিথি
কে আমি আজীবন গাধী বানিয়েছি আজ সে
আমাকে গাধা বানাইলো।আসলে ওখানে আমার আর
তিথির বিয়ে নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল।ওকে একা
পেয়ে দুষ্টুমি করতে চাইলাম।কিন্তু আমাকে
বোকা বানিয়ে আবার ও চলে গেল।
:এই,বউ,জামাইর কথা শুনতে হয়
:কচু শুনবো।
আমাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেল।
ভেতর থেকে ডাক্তার বের হয়ে হাসি মুখে
বললেন wellcome Mr. Nasim u have a baby girl.
খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলাম।অপারেশন
থিয়েটারের পাশে বসে এতক্ষন আমাদের কথা
গুলো মনে পড়ছিল।আজ সেই ছোট্ট তিথির
কোল জুড়ে আরেকটা ছোট্ট পরী আসল।
তিথির ইচ্ছেতে ওর নাম দিলাম অজান্তা।নাজমীন
ফারাবী অজান্তা।সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।।।

No comments:

Post a Comment