Wednesday, August 21, 2024

গল্পঃ বয়‌ফ্রেন্ড যখন কুরিয়ার ম্যান!!!•®

দারোয়ান আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ।
চোখ জুড়ে খানিকটা বিশ্ময় !
আসলে বেচারা ঠিক মেলাতে পারতেছে না ।

আমি আবার বললাম-এটা তো ২৭৫/সি তাই না ?-
জি !-
দুই তলায় জামান সাহেব থাকেন?
-জি !
-উনার নামে পার্সেল এসেছে !
-উনি তো এখন বাসায় নাই !

দারোয়ান এখন ও আমার দিকে সন্দের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! আমার পোষাকের দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি কুরিয়ারের লোক হতে পারি !

আমি বললাম- আসলে উনার নামে না ঠিক । পার্সেল এসেছে উনার মেয়ের নামে ।
উনার মেয়ের নাম তো নিশি ?
তাই না ?
-হু !
-উনি আছেন ?
দারোয়ান কিছু যেন ভাবলো কিছুক্ষন ।
সন্দেহ এখন ও যাচ্ছে না ।

আমি বললাম-কি আছেন উনি ?
দেখুন আমার আরো কাজ আছে ।
আরো কয়েক জায়গায় যেতে হবে ।
এই দেখুন কত পার্সেল দিতে হবে ।
এই বলে আমার পিছনে থাকা
ব্যাগটার দিকে ইঙ্গিত করলাম।

আবার বললাম-
দয়া করে মিস নিশিকে একটু ডাক দেন ।-
নিশি আফা আছে কি না তো এখনও জানি না । তয় উনার মায়ে আছে ।-
উহু । মা থাকলে হবে না ।
পার্সেল উনার নামে আছে ।
উনাকেই সেটা নিতে হবে ।

-আফা তো পড়া শুনা করে ।
ক্লাসে যাইতে পারে ।-
আরে না । আজকে তার ক্লা........।
কথাটা বলতে গিয়ে আটকে গেলাম । দারোয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম ।নাহ !
বেটা ঠিক মত লক্ষ্য করে নাই আমি কি বলতে গেছি ।
নিজেকে একটু সাবধান করলাম ।
নিশির ক্লাস আছে কি না সেটা আমার জানার কথা না কিছুতেই ।
অপু মিয়া চুপচাপ বসে থাকো ।
এবং অপেক্ষা কর !
কথাবার্তা বল সাবধানে !

দারোয়ান আমাকে কিছুক্ষন দাড় করিয়ে রেখে বলল-
আচ্ছা আপনে খাড়ান । আমি ডাইক্যা আনি ।আমার মনটা খুশি হয়ে উঠলো ।
এই তো নিশি এখনই আসবে !
আমি এইবার জিতে যাবো ।

    আয় নিশি আয় !
আয়  নিশি   ডাক পারি !
     আমার নিশি কোন বাড়ি !

কিন্তু কয়েক মিনিট পরে দেখি নিশি না দারোয়ানের সাথে এক মহিলা নেমে আসছে ! একটু ভাল করে লক্ষ্য করতে বুঝতে পারলাম তিনি হয়তো নিশির মা হতে পারে ।
চেহারায় তো খানিকটা মিল আছে !
দারোয়ান আমার কাছে এসে বলল-
আফায় ঘুমাইতাছে ।
আপনে উনার মার কাছে দেন !
আমি একটু লক্ষ্য করে দেখলাম নিশির মা ও আমাকে খানিকটা সন্দের চোখে দেখতেছে ।নাহ !

এই শার্ট টা পরে আসা মোটেই উচিৎ হয় নাই । যে কারো সন্দেহ হতে পারে । নিশির মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
তুমি কুরিয়ারের লোক ?
-জি ?
-কোন কুরিয়ার ?
-জি ! আমাজানবন !
-আমাজান বন ? এটা আবার কোন কম্পানি ? সুন্দরবন কুরিয়ার শুনেছি ! আমাজান বন তো শুনি নাই !

আমি খানিকটা অবাক হওয়ার ভাব করে বললাম-কি বলেন আন্টি ? নাম শুনেন নাই ? সুন্দরবন তো বাংলাদেশে আর আমাজান বন হল পুরা বিশ্বের । আন্তর্জাতিক মানের কুরিয়ার কোম্পানি । বিশ্বের সব গুলো মহাদেশে আমাদের শাখা আছে ।
-আচ্ছা ।
ঠিক আছে । ঠিক আছে । আমাকে দাও ।

-জি না আন্টি ! এটা হবে না । আমাদের কোম্পানি আন্তর্জাতিক মানের ! এখানকার নিয়ম ও আন্তর্জাতিক মানের । যার নামে পার্সেল তাকেই দিতে হবে ! তা না হলে আমার চাকরী থাকবে না ।-

আরে তোমার কোম্পানী কি জানে নাকি কে নিলো বা না নিলো ! আমিই যদি নিশি হয়ে নেই তাহলে তো সমস্যা নাই !

কসকি মমিন ? আপনে নিশি হইলে তো কামই হইতো!! আমি অতি বিনীত স্বরে বললাম-আন্টি এটা সম্ভব না কিছু তেই !
হয়তো আমি ধরা পড়বো না কিন্তু নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকো .....।

আমর কিছু নীতি কথা শুনিয়ে দিলাম ।
এতে দেখলাম আন্টির মানে নিশির মায়ের সন্দেহ আরো গাঢ় হল !
আমার দিকে তাকিয়ে বলল-তুমি আসলেই কুরিয়ারের লোক তো ?
-জি আন্টি !
আইডি কার্ড দেখাবো ?
আমি খানিটা সঙ্কিত হলাম ।
কারন এখন যদি আন্টি আমার আইডি কার্ড দেখতে চায় আমি দেখাতে পারবো না ।
আসলে আমার নিজেরই খানিকটা সন্দেহ হচ্ছিল হয়তো আন্টি এখনই আমার আইডি কার্ড দেখতে চাইবে তাই নিজে থেকেই দেখাতে চাইলাম ।
এখান আল্লাহ ভরশা !
আমি তাকিয়ে আছি আন্টির দিকে ।
মুখটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতেছি ।আসলে সব দোষ ঐ ফাজিল মেয়েটার ।

ঐ দিন রাতে বলা নাই কওয়া নাই আমাকে বলল-তুমি আমাকে ভালবাসো না ?
-হুম বাসি তো !
-তাই ?-হুম
তো !-আচ্ছা । তোমাকে আমি তিন দিন সময় দিলাম । এই তিন দিনের ভিতরে আমার সাথে তোমার দেখা করতে হবে !-
আরে আবার কেমন কথা হল ?
চল কালকেই দেখা করি ।-
না ! আমি করবো না ! তুমি দেখা করবা । আমি বলবো না আমি কোথায় যাচ্ছি বা না যাচ্ছি । তুমি নিজে আমাকে খুজে বের করবা !

ঠিক আছে ?
-দেখ ! এটা কিভাবে হবে ? তুমি যদি নাই বল যে কোথায় আছো তুমি তাহলে আমি কিভাবে দেখা করবো?
-এটাই তো ! যদি পারো !
ভাল !
দেখা যাক !
আমি কত ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হল না !

তিন দিন সময় দিয়েছিল ।
বাকি দুই দিনে আমি সম্ভাব্য সব জায়গায়ই ঘুরে বেরিয়েছি কিন্তু ওর দেখা পাই নাই !
আজকে শেষ দিন ছিল ।
বাধ্য হয়ে এই পথে আসতে হয়েছে !নিশির মা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো !
কিন্তু আইডি কার্ড দেখতে চাইলো না ।
আমার যখন মনে হল তিনি দেখতে চাইে না তখন আমি নিজেই আইডি কার্ড বের করার ভাব করলাম ।

আন্টি বলল-আচ্ছা ঠিক আছে । তুমি দাড়াও !আমি নিশিকে পাঠাচ্ছি !!আমি অপেক্ষা করতে থাকি ।
কিছুক্ষনের ভিতরেই নিশি হাজির ।
আমাকে দেখে খানিকটা অবাক আর বিশ্ময় ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ।

কিছু বলতে যাবে আমি চোখের ইশারায় আমি ওকে মানা করলাম ।
বেশ কিছুক্ষন সময় লাগলো আসলে কি হচ্ছে সেটা বুঝার জন্য !
যখন সব কিছু বুঝতে পারলো তখন ওর সারা মুখে একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে পরলো !
ওকে বললাম-ম্যাম আপনার নামে পার্সেল এসেছে !
-তাই ! কোথা থেকে ?
-একজন অতি আগ্রহে আপনার কাছে পাঠিয়েছে !
-কিভাবে বুঝলেন যে সে অতি আগ্রহে পাঠিয়েছে !
-না মানে আমাদের কুরিয়ারের এটা একটা রুলস । যে পার্সেল পাঠায় সাথে সাথে তার খানিকটা আবেগ ও দিয়ে দেয় ! এটাতে আমরা বুঝতে পারি কারটা কত জরুরী !

নিশি কিছু বলল না আর ।
কেবল মিসমিস করে হাসতে লাগলো !
আমি ওর কাছে একটা সিগনেচার বই এগিয়ে দিলাম ।
-এই খানে সই করেন ম্যাম !
নিশি সই করলো !
কিন্তু তাকিয়ে দেখি সেখানে সে নিজের নাম লিখে নাই । লিখছে
           "আই লাভ ইউ   " !
আমি বললাম-বাহ ! আপনি তো অনেক সুন্দর নাম সই করতে পারেন !নিশি কেবল হাসলো ।আমি হাটা দিলাম ।
আমার কাজ শেষ ।
এখানে থেকে আর নাভ নাই ।

আর আজ বিকালে তো দেখা হচ্ছেই!!
আমি যতবার পিছন ফিরে তাকালাম ততবারই দেখলাম নিশি আমার দিকে তাকিয়ে আছে !মুখে সেই মিষ্টি হাসিটা লেগেই আছে !

#আ‌লোহীন__ল্যাম্প‌পোস্ট

No comments:

Post a Comment