Monday, August 19, 2024

গল্প- ভালবাসার টান
.
.
বাসায় ফিরে দেখি দরজায় তালা মারা ! কি
হলো?? অবন্তী কোথায় গেল? আমাকে তো কিছু বলে
নি। তাহলে? তৎক্ষনাক মনে পরে গেল গতকাল রাতে
কথা। রাতে অবন্তীর সাথে ঝগড়া হয়েছিল তাই আজ
সকালেই তার বাবার বাড়ি যাবার কথা! অফিসের
কাজের চাপে মনে নেই। মনে পরার সাথে সাথেই মন
খারাপ হয়ে গেলো। নিজের কাছে থাকা চাবি
দিয়ে দরজা খুললাম। খুলে যখন খেয়াল হলো , অবন্তী
থাকলে এখন আমাকে এক গ্লাস পানি হাতে ধরিয়ে,
আমার হাতের ব্যাগ টা নিয়ে নিত। কিন্ত দুঃখজনক
ভাবে ও আজ নেই। যাই হোক, নিজের ব্যাগ রেখে,
ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খাওয়ার ইচ্ছা নাই এখন। আজকে
অফিস থেকে আগেই ফিরে এসেছি। সাধারণত আমি
ফিরি ৭ টার দিকে আর এখন বাজে মাত্র ৫ টা।
আসলে, আমাদের জন্য নিজেদের বউ চলে গেলে খুব
কষ্ট হয়। কিন্তু ব্যাচেলার হলে এতক্ষণ দিব্যি ভাল
থাকতাম। এখন কেমন জানি ঘর টা ফাকা ফাকা
লাগছে। খেয়াল করলাম খাটের উপরে একটা চিরকুট
টাইপ কিছু। হাতে নিলাম, তাতে লেখা-
“ফ্রিজে খাবার রাখা আছে,গরম করে খেয়ে নিয়েন”
এই মেয়েটা যখন আমার উপর রাগ করে তখন আমাকে
‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে। ফ্রিজ খুলে দেখলাম
খাবার রাখা আছে কিন্তু খেতে ইচ্ছা করলো না।
আজকে দুপুরে অফিসের কাজের চাপে কিছু খাওয়াও
হয়নি। জানে কে, সত্যি মনেহয় মানুষ টেনশন এ
থাকলে খাওয়া-নাওয়া ভুলে যায়, কে জানে। ইচ্ছা
হলো একটা ফোন দেই কিন্তু পরক্ষনেই আবার
চিন্তাটা বাদ দিলাম। ফোন দিলাম অবন্তীর
ভাইকে। জানতে পারলাম, অবন্তী ঠিক মতো পৌছে
গেছে আর ভাল আছে। তার কথায় মনে হলো যে
অবন্তী তার বাবার বাড়ি যাবার পিছনের কারণ টা
গোপন রেখেছে। শুনলাম যে অবন্তী ঘুমাচ্ছে এখনো।
ঘুম পাগলী নাকি ৩ টা থেকে এখনো ৫ টা পর্যন্ত
ঘুমাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে হয়তো রাতে ও ঘুমাইনি ।
কারন, প্রতিরাতে ও আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়
কিন্তু গতরাতে ও উল্টা দিক ফিরে ঘুমিয়েছিল। এখন
খুব ইচ্ছা করছে ওকে একনজর দেখতে , ওর কথা একটু
শুনতে কিন্তু তা তো সম্ভব না। ফোন বের করে
আমাদের কিছু ছবি দেখতে লাগ্লাম আর দক্ষিণে মুখ
করা বারান্দার বাতাস বয়ে চলছে অবিরাম।
.
আমি আবীর,তখন ৩য় বর্ষের ছাত্র -
>হ্যালো? শুনছেন? আমাকে একটু হেল্প করতে পারেন
কি? (অবন্তী)
>জ্বি হ্যা, বলুন । (আমি)
>আমার ডিপার্টমেন্ট এর রুম খুজে পাচ্ছি না।
কোথায় রুমটি ? (ডিপার্টমেন্ট এর নাম বলে)
>আপনি কি নিউ ইয়ারের?
>হ্যা, এখন বলুন কোথায় রুম?
আমি রুম দেখিয়ে দিলাম আর তার নাম জানতে
পারলাম ‘অবন্তী’ ।
এরপর থেকে মাঝে মাঝেই দেখা হতো আমাদের
কিন্তু সেভাবে কথা বলা হয়ে উঠতো না । এই কেমন
আছেন, পড়ালেখা কেমন চলে এসবের বাইরে কিচ্ছু
না। কিন্তু যাই বলেন, মেয়েটা দেখতে ছিল খুব সুন্দর
আর আমার কেন জানি ওকে খুব ভাল লাগতো । কিন্তু
সেভাবে তখনো তাকে কিছু বলে হওয়া ওঠে নি। আর
আমার বলার সাহস ও ছিল না।
.
তখন তো তাও দেখা হতো প্রায় কিন্তু আজ তো
তাকে নিজের করে পেয়েও দেখতে পারছি না।
গতকাল রাতে হয়তো একটু বেশিই বকে ফেলেছি।
রাতে যদি আবার মানিয়ে নিতাম তাহলে হয়তো আর
এসবের কিচ্ছু হতো না। কিন্তু কি করবো বলেন? তখন
কি আর এসব মনে ছিল?
একবারের কথা মনে পরে-
সেইদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। আমরা কিছু বন্ধুরা
ক্যাম্পাসে এসেছিলাম একসাথে মিলে ঘুরতে
যাবো তাই। আমাদের মধ্যে রাকিব আর সাকিব
তাদের জিএফ কে ব্যাস্ত তাই ওরা আসতে পারবে
না। কি আর করার আমরা সিংগেলরা অর্থাৎ -
আমি,রুদ্র,নাওমি,শোভা আর শাওন সবাই ঘুরতে
গেলাম। আমরা সবাই জানতাম যে, শোভাকে শাওন
খুব পছন্দ করে কিন্তু হয়তো আর বলে হওয়া ওঠে নি।
পরে অবশ্য জেনেছি ওরা বর্তমানে নাকে বিয়ে
করেছে। শুনে খুব খুশী হয়েছিলাম আর আমাদের
দাওয়াত ও দিছিলো কিন্তু তখন আমি বেকার
জীবনযাপন করছি তাই আর যাওয়া হয়নি। যাই হোক,
ওইদিন রমনা বটমূল এ গিয়েছিলাম আমরা সবাই।
আমাদের আরো কিছু বন্ধুরা ওখানে গিয়েছিল।
খেয়াল করেছিলাম যে, অবন্তীও গিয়েছিল কিন্তু
একটা কথা কি জানেন? ওইদিন ওদের সেইম ব্যাচের
একটা ছেলে ওকে আমার সামনে প্রোপোজ
করেছিল কিন্তু অবন্তী একটা থাপ্পর বসায় দিছিল
গালে। হা হা হা !! খুব ভাল লেগেছিল ওইদিন । আজ
ও সে কথা মনে পরে হেসে ফেললাম। কিন্তু তারপরে
আবার সেই নেই নেই ব্যাপারটা গ্রাস করে ফেললো
আমাকে। ইচ্ছা করছিল যে , এখনি অবন্তীদের
বাসায় চলে যাই কিন্তু শরীর সায় দিল না।
.
সকাল থেকে খেয়াল করছিলাম আমার মাথা টা
ভার ভার আর মাথা ব্যাথা ছিল খুব। এক কাপ কফি
খেলাম যদি একটু ভাল লাগে কিন্তু নাহ আর ভাল
লাগছিল না। শুয়ে পরলাম, সময় দেখলাম ঘড়িতে
প্রায় ৭ টা বাজে। এবার তো প্রচন্ড খারাপ লাগতে
শুরু করলো। এখন অবন্তী থাকলে আমাকে শুয়িয়ে
মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিত কিন্তু সে তো অভিমানে
বসে আছে অন্যখানে। একবার মনে আছে – কি এক
কারনে জানি অবন্তীর সাথে আমার
প্রিন্সিপ্যালের রুমে যাওয়া লেগেছিল। ফিরে
আসার সময় ইতে ধাক্কা খেয়ে পরে হাটুতে খুব
ব্যাথা পেয়েছিল। ওইসময় অবন্তী হুট করে কেমন
জানি হয়ে গেলো। আমাকে বসিয়ে আমার পায়ের
রক্ত আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছিল সে। নিজের
ওড়না পেচিয়ে দিয়েছিল পায়ে। পরে যখন আমার
ফ্রেন্ডরা এসে আমাকে নিয়ে গেলো তখন আর
তাকে দেখতে পাইনি। এই ঘটনার পর থেকেই অবন্তী
আমার কাছ থেকে একটু দূরে দূরে থাকতো। সামনে
গেলে লজ্জা পেতো! পরে বুঝেছিলা যে তাহার
ভালবাসার প্রকাশ পেয়েছিল ওইদিন। সেদিনি
ভেবেছিলাম অবন্তীকে জীবন সঙ্গী বানিয়েই
ছাড়বো। ভার্সিটি শেষ করে একটা ভাল চাকরি
পাওয়ার সাথে সাথেই মা-বাবকে বিষয় টা নিয়ে
জানালান আর তারা খুব খুশী মনেই নিয়েছিল
বিষয়টা। দেখতে দেখতে বিয়ে টা হয়ে গেলো! এখন
আমাদের ২ বছরের দাম্পত্য জীবন। এসব ভাবতে
ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নাই।
.
সময় দেখলাম রাত ৩টা বাজে। ঘুমের ঘোরে মনে
হয়েছিল কেউ কলিংবেল বাজিয়েছিল। আর এখন
মনে হচ্ছে মাথায় ঠান্ডা কিছু অনুভব করছি । হাত
দিয়ে দেখলাম মাথায় জলপট্টি !! কিভাবে?? বাসায়
তো কেউ নেই!!! কেম্নে কি?? খেয়াল করলাম রুমের
লাইট অফ কিন্তু পাশের রুম অর্থাৎ ডাইনিং এর লাইট
অন !! ভুতে করেছে এসব?? ধুর, কি ভাবছি আমি!! একটু
উঠে বসার চেষ্টা করছিলাম । যেই সাইড টেবিল
ধরে উঠতে যাবো সেই গ্লাসে ধাক্কা লেগে নিচে
– ঠাসসসস!!! দেখলাম শব্দের একটু পরে রুমের লাইট
অন হয়ে গেলো আর কেউ দাড়িয়ে আছে অবাক
চোখে। আরে!!! এ জে অবন্তী!!! ও কিভাবে এখানে??
ব্যাপার টা বোঝার সাথে সাথেই আমার বুক ধড়ফড়
করতে শুরু করলো। অবন্তী দৌড়ে আসলো আমার
কাছে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বল্লো-
>কি হয়েছে??!! এরকম করছো কেন??
আমি দু হাত দিয়ে ওর মুখ টা ধরে নিজের সামনে
এনে নিলাম । হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম
, টুপ করে এক ফোটা লোনা জল নিচে পরলো! কিচ্ছু
না ভেবে অবন্তীর কপালে একটা ভালবাসার স্পর্শ
একে দিলাম । একটু লজ্জা পেলো বুঝলাম। খেয়াল
করলাম অবন্তীর পায়ে কাচ ঢুকে গিয়েছে । বের
করতে চাইলো কিন্ত্য ব্যাথায় পারলো না। আমি
আস্তে করে বের করে দিলাম। আমরা এসব করছি আর
পিছে দাড়িয়ে আমার শালী এসব দেখছে আর
মিটিমিটি করে হাসছে। একটু পরে শালির স্বামী
আসলো ঘরে আর আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি
দিল । সবাইকে দেখে মোটামোটি আমি অবাক।
অবন্তীকে জিজ্ঞাসা করার আগেই চুপ করে দিয়ে
বলল –
>পরে শুনবে সব। এখন এই ঔষধ খেয়ে ঘুমাবে।
আমি বাধ্য ছেলের মত ঔষধ টা নিয়ে খেলাম আর
শুয়ে পরলাম কিন্তু ঘুম আসলো না। কিছুক্ষণ পরে
পাশের রুমের লাইট বন্ধ হলো আর অবন্তী রুমে ঢুকল
আর আমাকে বুঝিয়ে দিতে লাগলো যে কি হয়েছে
আর হয়নি!!
.
সব কথা শুনে যা বুঝলাম যে – পাশের বাড়ির আন্টি
এসেছিল কি কারণে । অর্থাৎ ঘুমের ঘোরে যে
কলিংবেলে আওয়াজ পেয়েছিলাম তা ছিল
আন্টির। আন্টি কোন সারাশব্দ না পেয়ে আমাকে
কল দিয়েছিল কিন্তু আমি তা ঘুমের জন্য শুনিনি।
পরে আন্টি অবন্তীকে ফোন দিয়ে ডেকে আনে রাত
৯ টার দিকে এবং সে সব অভিমান-রাগ ভুলে এখন
আমার পাশে শুয়ে আছে!!
.
এখন বাজে রাত ৩.৩০ , অবন্তী ঘুমিয়ে গিয়েছে আর
আমি ওর নিষ্পাপ মুখের দিয়ে চেয়ে আছি ।
জানালা দিয়ে আসা চাদের আলোয় অবন্তীকে খুব
সুন্দর লাগছে!! এখনে একজন কবি থাকলে হয়তো
একটা কবিতা লিখে ফেলাতো। আমি কপালে একটা
ভালবাসার স্পর্শ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম
কিন্ত নাহ আজ আর ঘুম আসবে না। ভাবলাম
অবন্তীকে ডাক দেই কিন্তু মন সায় দিল না! ওকে
আস্তে করে কোলে তুলে নিলাম যাতে ঘুম না
ভাঙ্গে। আমার জ্বর থাকলেও এখন তেমন কিছু মনে
হচ্ছে না ।
.
আরি বাবাহ!! ছাদে গিয়ে দেখি আমার শালী
অলরেডি প্রেমময় মুহূর্ত কাটাচ্ছে তার স্বামির
সাথে!! আজকে কি ভালবাসার ছড়াছড়ি হয়েছে
নাকি?? আমাদের দেখে ওরা কিছু বলতে যাচ্ছিলো
কিন্তু আমি অবন্তীকে দেখিয়ে বললাম কিচ্ছু না
বলতে যেহেতু সে ঘুমাচ্ছে। অন্য পাশের ছাদে
গেলাম, ওখানে খুব সুন্দর একটা দোলনা আছে !! আমি
দোলনায় গিয়ে বসলাম আর অবন্তীকে আমার কোলে
শুয়িয়ে দিলাম! আকাশের চাদটা আজকে বেশ বড়
কিন্তু আমি তাকিয়ে আছি আমার কোলে শুয়ে
থাকা চাদটার দিকে!! কি নিষ্পাপ চেহারা!!
সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি আমার অবন্তী ! এই
নিষ্পাপ চেহারা দিকে তাকিয়ে জীবন পার করে
দেওয়া যায়!!

No comments:

Post a Comment