Wednesday, August 21, 2024

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
- ধুর। এই সাত-সকালে কোন সালায় রে? (ফোন রিসিভ করে)
- অই কুত্তা তুই কি বল্লি?
- (অবাক হয়ে! ফোনে মেয়ে আসলো কোথা থেকে) আপনি কে আফামনি?
- সালা লুচ্চা। আমি তোর আফা লাগি? (ইস্পিতা)
- তাইলে কে আপনি। (রাফি)
- হারামজাদা নাম্বার চেক কর। (রাগের ইমো😈)
- ওকে ওয়েট।
নাম্বার চেক করে দেখে মহারানীর ফোন। (খাইছে আম্রে। আম্রে কেও বাচা!!! সকাল সকাল রাগায় দিলাম। জানিনা আজকে কপালে কি আছে?  মাম্মি মাম্মি আমাকে বাচাও😂😂😂)
-ওওও জানপাখি তুমি। আগে বলবানাহ। আমি তো ভাবছি যে কে না কে ফোন দিসে।
- ওই আমি কে না কে?. কেন আমার নাম্বার তোর মোবাইল এ সেভ করা নাই হা? আয় আজকে তোর খবর আছে।
- ওমা😱 জানপাখি তুমি আমাকে তুই করে বলতেছ কেন।
- তুই জানস না কেন বলতাসি হুহ।👿। আজকে আমাদের কি দেখা করার ডেট ছিলো?
- (উরিম্মা ভুলে ই গেছি। আজকে কপালে শনি, রবি, সোম সব ই আছে) ওহ নু। জানু একদম ভুলে গেছিলাম। তা কখন যেন দেখা করার কথা?
- সকাল ৯টায়।
- আর এখন কয়টা বাজে?
- ৮:৪৯.
- হেহেহে. আর আপনি এখন কোথায়?( লেট লতিফ)
- তোর মতন একটা হারামজাদার জন্য পার্কে অপেক্ষা করতেছি।
- হিহিহি😁😁😁 আপনি শাস্তি রেডি রাখেন ম্যাডাম আমি আসতেছি। (পার্ক এ যাইতে ই লাগে ১৫ মিনিট আর আমার হাতে আছে ১১ মিনিট)
- ওই তুই বকবক রাইখা একটু জলদি আসবি নাকি আমি ই তোর মেস এ আসবো?
- নাহ গো জানপাখি আপনি ৫মিনিট বসেন আমি ১৫ মিনিটে আসতেছি।
- হুম প্লিজ সোনা জলদি আসো। কয়েকটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার খুব বিরক্ত লাগতেছে (নরম সুরে সাথে আবার তুমি. মাইয়াজাতী তুমি পারো ও)
- কিহ আমার জানের দিকে নজর। আমি আইসা লই। ওদের কে চাবিয়ে চাবিয়ে ডাস্টবিন এ ফালায় দিমু।
- জলদি আসো না জান।
- এইতোহ আইসা পড়ছি।

এইইইইই। যাহ। আপনাদের তো পরিচয় ই দিতে ভুলে গেছি। আমি হলাম রাফি। মধ্যবিত্ত পরিবার এর ২মাত্র শয়তান।।।উপস সর‍্যি। সন্তান। এবার মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষিত বেকার হয়ে আছি। আর সে হলো ইস্পিতা। বড়লোক বাবার পিচ্ছিলোক মাইয়াহ। সে অনার্স পাচুর্থ বর্ষে পড়ে। আর আমার একমাত্র ইয়ে। মানে আর কি ইয়ে বুঝেন না?. আর বুঝাইতে পারুম না। বাকিডা বুইঝা লন।

কথা বলতে বলতে পার্কে আইসা পরছি। (তার প্রিয় বেলিফুলের মালা নিতে কিন্তু ভুলিনাই!!! তানাহলে যে আমাকে আর আস্ত রাখবে না)

ওইযে দেখা যায় একটা বেঞ্চের কোনায় গুপটি মেরে বসে আছে। দূর থেকে কত নিষ্পাপ লাগে চেহারা টা। আর যখনি কাছে যাই তখন ভুলে যাই যে আমি এইমুহুর্তে কোনো মানুষের সামনে আছি। মনে হয় মানুষের বাচ্চা বাঘিনীর সামনে দারিয়ে আমি। আমাকে যা যা আদেশ দিবে তা মাথা পেতে মানতে হবে। যাইহোক এবার গল্পে আসি।
- হাই জানু। (হাটু গেরে তার সামনে বসে মালা সহ হাত টা তার সম্মুখে তুলে ধরে)
-  কে আপনি? (চিনেনা আমাকে😭😭😭)
- সর‍্যি জানপাখি। (কানধরে উঠবস শুরু হয়ে গেছে)
- এই এই কি করতেছ তুমি থামো এবার। (দৌড়ে এসে আমাকে থামিয়ে দিলো)
- সর‍্যিহ আর এমন হবে না। প্লিজ।
- প্রতিবার ই তো বল যে আর হবে না। কিন্তু পরের বার তো ঠিক ই লেট কর। আমার বুঝি একা বসে থাকতে খারাপ লাগে না?😖😖😖(মন খারাপ করে)
- এরপর থেকে আর হবে নাহ। সেই ব্যবস্থা ই করতেছি। (মুখে আমার দুষ্টু হাসি)
- তুমি আবার কি করবা?
- আমার লাল টুকটুকে ময়না পাখিটাকে আজীবনের জন্য আমার করে নিবো।
- এই কি বলতেছ এগুলা উল্টা-পাল্টা। আগা মাথা কিছুই বুঝতেছি নাহ। (কাধে মাথা রেখে)
- তোমার কুছু বুঝতে ও হবে না। জাস্ট শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নাও।
- যাহ কি বল এইসব। আমার বুঝি লজ্জা লাগে না? (ন্যাকামো সুরে)😊😊😊
- হায়রে আমার লজ্জাবতী রে। দাড়াও। তোমার লজ্জা আমি দূর করে দিচ্ছি। (বলেই তার মুখের দিকে মুখ এগিয়ে নিচ্ছি আস্তে আস্তে)
- এই কি কর। সবাই দেখবে তো। বলেই হুট করে জরিয়ে ধরলো।
- এই যাহ। মিস করলাম।
- এর উসুল আমি সুদেআসলে উঠাবো।
- হুহ দেখা যাবে। এখন চলো খুব ক্ষুদা লাগছে।
- ওকে ম্যাম চলেন। আমার ও ক্ষুদা লাগছে। সকালে কিছু না খেয়ে ই চলে আসছি।

তারপর নাস্তা করে হালকা ঘুরাঘুরি করে তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসলাম। এবার বলি পাগলি টা আমার হলো কিভাবে।
আমি ছিলাম ফেছবুক-খোর। খাইতে, নাইতে, বাইরে, ঘরে, পড়ার টেবিলে, ঘুমাইতে সময়, এমনকি টয়লেট এও আমার সাথে আমার প্রিয় ফোন থাকতো। ইট জাস্ট ওনলি ফর ফেছবুক। তা একদিন একটা পোষ্ট এ কমেন্ট করলাম। সাথে সাথে ই দেখি আরেকটা কমেন্ট এসে হাজির এবং সেটা আমার বিপক্ষে। বেধে গেলো আমাদের মাঝে তুমুল ঝগড়া। সেখান থেকেই পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে পরিণয়। এবং অবশেষে আমি আর সে এক সুতোয় গাথা।

সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে রাতে বাসায় এসেছি। দেখি তৃণয় টেবিলে মুখে বিজয়ী হাসি নিয়ে বসে আছে। গিয়ে দেখি হাতে একটা হলুদ খাম।

আমি: কিরে ক্যাবলা কান্ত। ক্যালাস ক্যান! আর হাতে কি?. প্রেম পত্র নাকি।।।😂😂😂.
তৃণয়: আরে তুই কখন এলি। আর এটা প্রেম পত্র তোকে কে বলছে.
আমি: তোর যে ভাবসাব দেখা যাচ্ছে।  তাই বললাম আর কি।
তৃণয়: অই🔫 তোএ বকবক থামাবি নাকি মাইর খাবি।
আমি: আচ্ছা যা একদম চুপ মেরে গেলাম। এখন কাহিনী কি বল।
তৃণয়: আগে বল ট্রিট দিবি কবে। আর কোথায়?.
আমি: কিসের ট্রিট। কি যাতা বলছিস.
তৃণয়: আরে এটা তোর জয়েনিং লেটার। কয়দিন আগে যে ইন্টার্ভিউ দিয়ে আসলি সেখানে। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে। শুরুতেই স্যালারি ৩০ হাজার দিবে। সাথে গারি আর বাড়ি দুইটাই দিবে।
আমি: কি বলিস!!!😱(অবাক হয়ে) দেখি দে তো খাম টা।
খাম থেকে লেটার টা পড়ে তো আমি পুরাই 'থ'. কিভাবে কি হলো। যাইহোক। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আলহামদুলিল্লাহ। এই সুখবর টা আগে বাসায় জানাই।

- হেলো মা।
- হ্যা বাবা বল। কেমন আছিস।
- ভালো মা। তোমরা কেমন আছো
- আছি ভালো আছি বাবা আল্লাহর রহমতে।
- বাবা কেমন আছে মা।
- উনিও ভালো আছে।
- মা একটা সুখবর আছে।
- কি সুখবর বাবা?.
- আমার চাকরি হয়ে গেছে মা। ভালো টাকা বেতন আর ব্যবহারের জন্য বাড়ি গারি দিবে।
- বলিস কি। যাক আলহামদুলিল্লাহ। সুনে ভালো লাগলো বাবা। এবার তোর একটা গতি হোক।
- মানে! তুমি কি বুঝাইতে চাইছো মা।
- বুঝছ ই তো বাবা আমরা বুড়ো হয়ে গেছি। বড় টার তো একটা গতি হয়ে ই গেছে। এবার তোর টা হয়ে গেলেই দায়িত্ব থেকে মুক্ত হই।
- মা। কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলতেছো। আর মাত্র চাকরি টা পাইলাম। কয়দিন তো যাইতে দাও নাকি।
- আচ্ছা বাবা আচ্ছা। তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর।
- ঠিক আছে মা। বাবাকে সালাম দিয়ো আর সবাই কে সুখবর টা বলিও।
- ঠিক আছে বাবা। তুই ও নিজের খেয় রাখিস।
- আচ্ছা মা। ভালো থেকো। ররাখছি।

অত:পর ফোন দিয়ে আমার রাগকুমারী কে খবর টা দিলাম। সে সুনে তো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।
পরের মাসেই শিফট হয়ে গেলাম নতুন বাসায়। আর শুরু হয়ে গেলো প্যারাময় অফিসওয়ালা জীবন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। গ্রাম থেকে বাবা, মা আর ভাবী এসেছে আমার এই ছোট্ট সংসার টাকে গুছিয়ে দিতে। ভাইয়ার কাজের জন্য আসতে পারে নি। এভাবেই দিনগুলা যাচ্ছিলো। তো একদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরে খুব ক্লান্ত লাগছিলো তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। এতই ক্লান্ত ছিলাম যে সাথে সাথেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম। ঘুম ভাংলো অনেক সময় করে।  চোখ মেলে দেখি আমার গায়ে কাথা দেওয়া আর জুতা খুলে রাখা। নিশ্চয় ভাবির কাজ। মানিব্যাগ টা ও দেখি বালিস এর নিচে রাখা। ঘরিতে তাকিয়ে দেখি রাত ১১ টা বেজে গেছে। ফ্রেশ হয়ে সবাই কে নিয়ে ডিনার টা সেরে নিলাম। রুমে এসে আবার ঘুম। সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডিউটির জন্য ফরমাল ড্রেস পরলাম। মানিব্যাগ হাতে নিয়ে দেখি কে যেন নাই। ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম যে ইস্পিতার ছবিটা ই গায়েব। এই কাজ ভাবি ছাড়া আর কারো পক্ষে ই সম্ভব নয়। এইজন্যই তো বলি কাল রাত থেকে ই দেখছি ভাবি আমাকে দেখলেই মুচকি হাসিতেছে। এটাই তাহলে ভাবির মুচকি হাসির রহস্য। আসল বোমাটা ফাটাল নাস্তার টেবিলে। আমি নাকি নিজে নিজে বিয়ে করার জন্য উতলা হয়ে যাচ্ছি, আর মেয়ে ও নাকি ঠিক করে ফেলেছি। মেয়ের ছবি হিসেবে ইস্পিতার ছবি টাকে দেখিয়ে দিলো। আমি আর যাই কোথায়, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব বের করে ফেললো। বাবা/মার ও নাকি ইস্পিতাকে পছন্দ হয়েছে। তারা ইস্পিতাকে বাসায় নিতে বল্লো আর ইস্পিতার বাড়ির ঠিকানা চাইলো কারণ আমার বিয়ের পাকাকথা দিতে যাবে। (হাসির ইমু)
বিকালে কাজ শেষে ইস্পিতাকে ফোন দিয়ে বললাম সব। আর এ ও বললাম যে তাকে বাবা/মা দেখতে চেয়েছে। ও বললো ওর বাসার সামনে যেয়ে ওকে নিয়ে আসতে। চলে গেলাম ওর এলাকায়। ওকে নিয়েই বাসায় ফিরলাম। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবাইও ওকে আপন করে নিলো। এখন এমন অবস্থা যে আমাকেই কেউ চিনেনা। সবার ব্যস্ততা ওকে ঘিরেই। ইস্পিতা ও সবাই কে অল্পতেই আপন করে নিয়েছে। যাইহোক ভালই হলো একদিক দিয়ে। বিয়ের পর নতুন ফ্যামিলি নিয়ে ইস্পিতার কোনো জ্বরতা থাকবে না। কয়েকদিন এর মধ্যেই ইস্পিতার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হলো। আর বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলো। বুঝতেই পারছিলাম যে ব্যাচেলর জীবন থেকে পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছি খুব শিঘ্রই। অবশেষে তিন কবুলের মাধ্যমে বিয়েটা হয়েই গেলো। কনে নিয়ে ফেরার সময় ইস্পিতার ক্রন্দন দেখে আমার ই কান্না চলে আসছে! আবেগ টাকে কন্ট্রোল এ রেখে তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম! তারপর ও কত কত ঝামেলা। আগে জানলে বিয়ে ই করতাম নাহ। সব শেষে আসলো সেই মহিন্দ্রখন। যেটা নিয়ে একজন মানিষের হাজারটা সপ্ন থাকে। সেই সপ্নের বাসর। কিন্তু বিধিবাম এখানে ও এখন রাজনীতি। নিজের ঘরে নিজের একমাত্র নতুন বৌ এর কাছে যাবো তাও নাকি ট্যাক্স দিতে হবে। নাহলে ঢুকতে দিবে না। কি আর করার বাসর রাতে বৌকে ছাড়া থাকার ইচ্ছা কারই বা থাকে। সাপের লেজে পা দিছি। ছোবল তো খেতে ই হবে। সব ঝামেলা পার করে গেলাম রুমে। আসলে কাল পর্যন্ত এটা আমার রুম ছিল। আজ থেকে আমাদের হয়ে গেলো এই যাহ। আমি দরজা লাগিয়ে খাটে উঠতে যাবো বৌ অমনি আমাকে থামিয়ে খাট থেকে নেমে পা ছুয়ে সালাম করলো। আমি তাকে বুকে টেনে নিলাম। কিন্তু হঠাৎ সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেললো আর আমার উপরে চরে বসলো। তারপর।।।।তারপর

এইযে ভাই/বোনেরা। কিছু তো প্রাইভেসি দেন। আর নিচে নামার দরকার নাই।

No comments:

Post a Comment