গল্পের নামঃ কালো বউ
_______ লেখকঃ Sajib Mahmud Neel (সিওনির মুগলি)
.
.
.
. . বাসর ঘরে ডুকেই দেখি মেয়েটা লাল ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
দেখে মনে হয়ে একটা কালো ড্রামকে লাল কাপড় দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে।
কালো মানে একটু বেশিই কালো।
বিয়ের আগে কেউ জানতাম না।
মেয়ে দেখানোর সময় অন্য একটা মেয়েকে আমাদের সামনে আনা হয়েছিলো।
বিয়ের সময় জানতে পারি ওটা ওর চাচাতো বোন ছিলো।
বাবা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিত্ব তাই ঝামেলা করে নি।
বাবা বিয়ের আসরে কানে কানে এসে বললো, এখন বিয়েটা করে নে পরে ছেড়ে দিবো।
বাবার কথায় রাজি হয়েছিলাম ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মেয়েটা বসে আছে খাটে।
কাছে যেতেই মেয়েটা দৌড়ে এসে পা ধরলো।
- আরে আরে কি করছো এই টা ছাড়ো বলছি।
- প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন!
আমি বিয়ে করতে চাই নি আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে আপনার সাথে!
-মানে?
- আমার চাচা তার মেয়েকে দেখাইছিলো আর আমাকে বিয়ে দিয়ে দিছে।
ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছি!
আমি কালো বলে আমার বিয়ে হচ্ছিলো না আর চাচা চাচি আমাকে দেখতে পারে না তাই তাদের বাড়ির আপদ বিদায় করতে এমন টা করেছে। - মানে কি সে তো তোমার বাবা!
- না মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিয়েটা দিয়েছে।
ওর কথা শুনে থো হয়ে গেলাম।
মেয়েটা অঝর নয়নে কাদছে।
কোন কথা না বলেই বালিশ নিয়ে বেলকোনীতে চলে আসলাম।
ভাবছি কি হতে কি হয়ে গেলো।
একটু পর কারও পায়ের আওয়াজ পেলাম!
ওঠে দেখি মেয়েটা।
- কি হলো যাও ঘুমাও
- না মানে আপনি বিছানায় যান আমি এখানে ঘুমাচ্ছি।
- বেশি কথা না বলে যাও।
মেয়েটি ভয় পেয়ে গেছে।
বুজলাম জোরে কথা সইতে পারে না।
সকালে বাইরে যেতেই সবার কানা ঘোষা শুনতে পেলাম।
ওদের কথার প্রতিবাদ করার শক্তি নেই।
বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আত্বীয় সজনের ভীড় পরে গেছে।
সবাই গোল হয়ে বসে আছে আর মাঝখানে মেয়েটা। সবাই ওর উদ্দেশ্য নানান কটু কথা বলছে কিন্তু কোন উওর না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।
আমি যেতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো।
- সজীব এই মেয়েকে নিয়ে তুই সংসার করতে পারবি ছেড়ে দে তোর জন্য আরও অনেক মেয়ে দেখবো।
- খালা আপনি আমার বিয়েতে আসছে আমার জীবন সাজানোর দ্বায়িত্ব আপনার না আর হ্যা নিজের ঘর ঠিক করেন! মেয়েকে সাবধান করেন নইলে আমার তো একটা জুটেছে ওর সেটাও জুটবে না।
- সজীব!
- মন খারাপের কথা না এটা সত্যিটা বললাম!
- তাই বলে এই মেয়েকে নিয়ে সংসার করবি?
- ওই যে বললাম নিজের জীবন নিজেই সাজাবো।
- যা ইচ্ছা কর পরে দোষ দিতে পারবি না বলে দিলাম।
- ভুল বললেন খালা!আচ্ছা যাই হোক নিতুকে দেখে রাখেন অনেক তো হলো আর কত?
আমার কথার কোন উওর না দিয়ে ডিং ডিং করে চলে গেলো।
- এই যে আপনি কি যেন বলছিলেন ওকে ও হ্যা বউ আনলে সুন্দরীই আনতে হবে তাই তো। পাশের বাসার আন্টির উদ্দেশ্য করে বললাম।
- হুমমম তাই তো
- আপনার মেয়ে কে কোথায় যেন বিয়ে দিলেন? তারা কি এমন কথা বলেছে?
- মানে?
- ওই যে আপনার মেয়ের তো একটা চোখের সমস্যা তাই না?
বুঝলাম এই মহিলার আমার গুষ্টি উদ্ধার করে দিয়ে চলে গেলো।
- আর হ্যা আপনি কি যেন বললেন বউ সুন্দর না হলে সমাজে বের করা যাবে না তাই তো।
পাশের বাসার আরেক আন্টিকে বললাম!
- হুমমম সত্যিটাই তো বললাম।
- ও আচ্ছা আপনার ছেলের বউ তো অনেক সুন্দর তাই না?
- হুমমম তা তো হবেই দেখতে হবে না কার ছেলের বউ!
- ঠিক বলছেন যেমন শাশুর তেমন বউ!
- কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
- ওই যে সেইদিন শুনলাম আপনার ছেলের বউ আর পাশের বাসার ছেলেটার নাকি ভিডিও অাপলোড হইছে দেখছেন?
কথাটা শুনার সাথে সাথে মহিলার মুখ কালো হয়ে গেলো। সবাই চলে গেলো!
মেয়েটা বসে আছে আগের মতই।
ওর কাছে গেলাম!
- ওই মেয়ে তোমার মুখে কোন কথা নাই?
ওরা বলছে আর তুমি শুনছো?
ওদের কিছু বলতে পারো না যত্তসব!
- কি বলবো!
- কিছু বলতে হবে না যাও ঘরে! মেয়েটা ঘরে গেলো!
সত্যিই মেয়েটা অনেকটাই কালো!
তবে একটু মায়াবতীও বটে।
কালো মেয়েরা মনে হয় এমনি হয়!
বাবার ঘরে গেলাম।
বাবা বসে আছে সাথে মাও।
আমাকে দেখেই বললো,
- আয় বাবা কিছু বলার ছিলো।
- হুমমম বাবা বলো
- দেখ যা হবার হয়ে গেছে এখন মেয়েটার পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে না হয় ডিভোর্স দিয়ে দিই কি বলিস!
- থাক না বাবা!
- মানে
- ছাড়বো না
- কিন্তু......
- বাবা আমি যদি ওকে নিয়ে সুখে থাকি তোমরা সুখি হবে না বলো?
- তবুও তোর জীবন টা এই ভাবে!
- আমার জীবনের কিছু হয় নি তোমরা দোয়া করো সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম!
জানি বাবা মা খুব খুশি হইছে।
রুমে এসে দেখি মেয়েটা বসে বসে কাদছে।
- এই মেয়ে সমস্যা কি হুমমমম সব সময় এমন করে কাদো কেন?
-....................!
- কি হলো!
- কিছু না।
- চলো তোমাকে নিয়ে বাইরে যাবো!
- না আমি যাবো না আপনিই যান।
- আবার বেশি কথা বলে যা বলছি তাই করো রেডি হও!
একটু জোরেই কথাটা বললাম।
কথাটা শুনে ওর ঠোট কাপতে লাগলো ভয়ে। ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
- কি যাবে না বাইরে?
কোন উওর না দিয়ে মাথা নাড়লো।
রিকশায় বসে আছি উদ্দেশ্য আমাদের আড্ডা খানায় যেখানে আমরা সব বন্ধুরা আড্ডা দিই। ওকে নিয়ে গেলাম ওখানেই।
বুঝলাম সবাই কানাকানি করছে আমার ব্যাপারে। মেয়েটা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
সবাই আমার কাছে আসলো।
- সজীব তুই এমন একটা কালো মেয়েকে বিয়ে করলি? (সজল)
- দোস্ত একটা কাজ করতে পারবি?
- বল কি!
- তোর বউটা আমাকে দিয়ে দে!
- মানে?
- মানে আর কি এটা তো কালো তাই ভাবছি তোর সুন্দরী বউকে আমি নিবো!
আমি জানি তোর কোন সমস্যা হবে না অনেক ছেলেরই তো ছোয়া পেয়েছে তোর সুন্দরী বউ তাই না?
সজল কোন কথা বলছে না।
চলে আসলাম ওখান থেকে।
আসার পর মেসেজ দিলাম "সরি "
আমি আর আমার বউটা বসে আছি একটা খোলা মাঠে।
ছেলেরা খেলা করছে আর আমরা প্রেম।
- আপনার তো আমাকে নিয়ে অনেক সমস্যা হলো তাই না?
- কিসের?
- এই যে কেউ আমাকে পছন্দ করে না
- আমি তো করি তাই না?
- তবুও ওদের সাথে তো জগড়া হলো!
- ওরা তো বন্ধু পরে ঠিক হয়ে যাবে!
- ও
- ভালোবাসবে তো সারাজীবন?
আমার প্রশ্ন শুনে আমার মুখের দিকে তাকালো! মনে হলো ওকে প্রশ্ন করা হয়েছে এমন কিছু যার উওর দেওয়া খুব কষ্টকর। অনেক ক্ষন পর বললো, ""বাসবো""
ওর কোলে মাথা রেখে সুয়ে আছি! পশ্চিমাকাশে সূর্ষটা ডুবতে চলেছে আর তার সাথেই শুরু হলো আরেকটা প্রেমের গল্প। __________________ সমাপ্ত
Wednesday, August 21, 2024
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment