Monday, August 19, 2024

আমার বৌয়ের মত এরকম বৌ আমি জীবনে দেখিনি। কোথ
থেকে একটা প্যারা এনে গলায় ঝুলায়ে দিয়ে গেল বাবায়।
ছোট বেলায় মা নামের মানুষটা যখন আমাকে রেখে
অন্যের হাত ধরে চলে যায় তখন থেকে আমার
নারীদের পছন্দ না। বলছি না নারীরা ভাল না। আমি দেখেছি
বাবা কতটা মাকে ভালবাসত। সারাদিন গ্যারেজের কাজ করে
বাড়িতে আসার সময় প্রতিদিন একটা করে গোলাপ আনত। বড়
লোকের বেটী ছিল আমার মা। ছোট্ট ঘর সংসারে তার
মন বসেনি। এক ধনী যুবকের হাত ধরে চলে যায়। বাবার
কান্না আমি কাছ থেকে দেখেছি। মানিব্যাগের কোণে
এখনো মায়ের ছবিটা থাকে বাবার। সেই বাবা কোলেপিঠে
করে মানুষ করেছে আমাকে । বাবার জীবনে একটাই
ইচ্ছে ছিল। তার একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান হবে যে
তাকে নিজের ছেলের মত শাসন করবে। কারণ বাবার তার
মাকে চোখেই দেখেনি, জন্মের আগেই উনি মারা যান।
.
সেই বাবার পছন্দ হয় এই মেয়েটিকে মানে এখন আমার বৌ
যে তাকে। বিয়েতে না করার ক্ষমতা আমার ছিলনা। আমার
স্কুল, কলেক ও ভার্সিটি কোথাও কোন মেয়ে বন্ধু
ছিলনা। মেয়েদের সাথে কথা বললেই আমার মায়ের কথা
মনে পরে তাই। মায়ের হাতের সেমাই এখনো ভুলতে
পারিনা। স্বাদ যেন জিহ্বায় লেগেই আছে। এমনকি আমার
অফিসে কোনো মেয়ে কর্মী নেইনি। অফিসের
বাইরের দেয়ালে বড় করে লেখা আছে " Female Not
Allowed " মেয়েদের মুখ দেখলেই মায়ের হাসি
চোখে ভাসে তখন আমার ভেতরটা অনেক কাঁদে।
যাহোক তবুও আমার এই মেয়ের সব আবদার অত্যাচার সহ্য
করতেই হবে। বাবার মেয়ে বলে কথা! ছেলে হলেও
কোন রান্নাই নাই যে আমি পারিনা। সব বাবার থেকে শেখা। মা
চলে যাবার পর থেকে বাবাই রান্না করত। গ্রামের
গ্যারেজেই থাকে বাবা। গ্যারেজটা বন্ধ তবুও বাবা গ্যারেজ
ছেড়ে আসেনা। গ্যারেজেই নাকি মায়ের সাথে প্রথম
দেখা হয়েছিল বাবার।
.
সকালে রান্না করে অফিসে গিয়েছিলাম। যেভাবে
আরবীর খাবার রেখে গিয়েছিলাম এসে দেখি সেভাবেই
আছে! দরজা খুলে দেখি মহারাণী খাটে বসে আছে।
ক্ষিদায় যে পেট ফেটে যাচ্ছে তা চোখে দেখেই
বুঝা যাচ্ছে। নরম স্বরে বললাম ' খাবার যেভাবে দিয়ে
গিয়েছিলাম সেভাবেই আছে দেখলাম। খাননি কেন? '
আরবী কোন কথা বললনা মুখ ঘুরিয়ে নিল। সারাদিন না
খেয়ে আছে এই কথাটা যদি বাবার কানে যায় তাহলে
কমপক্ষে মাসেও এই বাসাতে আসবেনা আমি জানি। সারাদিন
মেয়েটা না খেয়ে আছে এখন যদি তাকে না নিয়ে
খেতে বসি তাহলে ব্যাপারটা খুবই খারাপ দেখায়। কিন্তু
মহারাণী তো মুখই খুলছেনা। আধঘণ্টা হয়ে গেল কোন
জবাব দিচ্ছেনা। আমি অনেক পীড়াপীড়ি করার পর মহারাণী
খাতায় লিখে দেখালেন ' আপনি যতক্ষণ আমাকে আপনি
করে ডাকবেন ততক্ষণ আমি বোবা হয়েই থাকব ' বাবাকে
ছাড়া কাউকেই আমি আজ পর্যন্ত তুমি করে ডাকিনি।
.
আরেকজন ছিল উনি তো চলেই গেলেন। কোন কথা না
বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। কিন্তু কোন উপায়
নেই। আর কিছুক্ষণ পর দেখা গেল উনার শরীর খারাপ হল,
হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তারচেয়ে বরং তুমি করে
বলাই ভাল। গিয়ে বললাম ' টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে
নাও ' ওহ শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল তুমি করে বলতে।
মহারাণীর চোখে বৈশাখী মেলার হাওয়া ভাসল। মুখ খুলে
বলল ' ক্ষিদায় মরে যাচ্ছি বাবাগো ' বলে দৌড়ে টেবিলে
গেল। আমার খাওয়ার কোন সময়সূচী নেই। ইচ্ছে হলে
নাস্তা করিনা আবার ইচ্ছে হলে রাত তিনটা বাজে রান্নাঘরে মাছ
ভাজায় ব্যস্ত! রাত অনেক হল মহারাণী রুমে আসছেনা।
রুমের দরজা খোলা! খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি উনি
চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে! খাবার
সেভাবেই আছে! ডেকে বললাম ' কি হল খেলেন না
যে.. খেলে না যে? ' আরবী হাসল। তারপর বলল ' একদিন
না খেয়ে দেখছি যারা না খেয়ে থাকে তাদের কেমন
কষ্ট হয় '
.
বিরক্ত হয়ে বললাম ' অনেক দেখেছ এবার খেয়ে
আমাকে উদ্ধার কর পারলে ' আরবী হাতে গ্লাস নিয়ে
বলল ' আমি তো খাবনা। আপনাকে কথা দিতে হবে আপনি
আর রান্নাঘরে যাবেন না আর গেলেও রান্না করার জন্য না
তবেই আমি খাব নাহলে দেখি আমি কতক্ষণ না খেয়ে
থাকতে পারি ' এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে ছাড়বে।
পাগলামির একটা সীমা থাকা দরকার। বললাম ' এটা আমার অভ্যাস '
আরবী এক চুমুক পানি খেয়ে বলল ' তাহলে আমিও পানি
খেয়ে বেঁচে থাকার অভ্যাস করে নিচ্ছি ' এরকম কথায় হার
না মেনে কোনো উপায় নেই। বললাম ' ঠিকাছে ' বলার
সাথে সাথেই খেতে আরম্ভ করল। সারাদিনের ক্ষুধা। আমি
দাঁড়িয়ে থাকতেই আরবীর গলায় ভাত আটকিল। বলল ' দাঁড়িয়ে
আছেন কেন? দেখছেন না গলায় ভাত আটকেছে?
আমাকে ছুঁয়ে দিন তাড়াতাড়ি ' আমি আরবীর মাথায় হাত রাখতেই
দেখলাম চোখ বন্ধ করল। চোখ খুলে বলল ' অনেক
রাত হল ঘুমাতে যান '
.
আমি ঘুমাতে আসলাম। ভাবলাম খেয়ে ঘুমাতে আসবে। মাঝ
রাতে ঘুম ভাঙ্গল। দেখলাম পাশে আরবী নেই! দুজনের
মধ্যে যে কোলবালিশটা থাকে শুধু সেটাই আছে! ঠিক
করে ঘুমাতেও দিবেনা মেয়েটা। খাবার টেবিলে গিয়ে শুধু
চিৎকার করলাম না! ডেকে বললাম ' আমাকে কী ক্ষমা করা
যায়না? এখানে ঘুমালেন... ঘুমালে কেন? ' আরবী বলল '
মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়েছি, দুঃখিত '
কথাটা বলে রুমে চলে গেল। আমার মাথায় কিছু ঢুকল না কী
বলল! আরবীর আরেকটা অভ্যাস হচ্ছে প্রতিদিন রাতে
একটা ফালতু স্বপ্ন দেখবে। রুমের লাইট বন্ধ করতে
গিয়ে আরবীর ঘুমের চোখ দুটো আমার চোখে
পরল। জানিনা কী আছে এই চোখে। তবে মেয়েদের
ঘুমের চোখ সত্যিই অপরূপ, আজকে বুঝলাম। সকাল বেলা।
দাঁত ব্রাশ করছি। আরবী হাতে ব্রাশ আর টুথপেস্ট নিয়ে
আমার সামনে হাজির হল। বলল ' আমার দাঁত ব্রাশ করতে ইচ্ছে
করছেনা। আমার দাঁত ব্রাশ করে দিন তো একটু '
.
আমি চোখ বড়বড় করে আরবীর দিকে তাকালাম। মানুষ
এমনও করে? বললাম ' মাথার তার মনে হয় আজ দুটো
একেবারে ছিড়ে গিয়েছে না? ' আরবী আমার কথা
কানেই নিলনা। বলল ' ওহ আমার ব্রাশ লাগবে কেন? আপনারই
তো ব্রাশ আছে। নিন আমি হা করলাম আপনার ব্রাশ দিয়ে
আমার দাঁত ব্রাশ করে দিন ' আমি দূরে সরে গিয়ে বললাম '
পাগল নাকি? ব্রাশে আমার লালা লেগে আছে তো '
আরবী কাছে এসে হা করে বলল ' সমস্যা নেই, ব্রাশ
করে দিবেন না বাবাকে ফোন দিয়ে বলব আপনি আমাকে
থাপ্পড় মেরেছেন? যা বলছি তা করুন ' আমি অসহায়! উনার
দাঁতে ব্রাশ লাগাতেই হল। কান্নাকান্না স্বরে বললাম ' আর কিছু
পেলেনা? ' আরবী ব্রাশ সরিয়ে বলল ' রাতে ভেবে
দেখলাম এর থেকে রুমান্টিক মোমেন্ট আর হয়ই না ' আমি
বললাম ' আল্লাহ তোমাকে বহুদিন বাঁচিয়ে রাখুক ' আরবী
মুচকি হেসে বলল ' তারচেয়ে বেশি যেন আপনাকে
রাখে ' তাড়াতাড়ি আমি পালালাম। আরবী হাসছে।
.
রান্নাকরে বলছে খাইয়ে দিতে নাহলে আব্বাকে ফোন
করে বলবে সে দুদিন ধরে খায়নি! এরকম অত্যাচার আমি ছাড়া
অন্য কেউ হলে সহ্য করতে পারতনা। ম্যাডামকে খাইয়ে
দিতে হল। অফিসে যাওয়ার আগে মহারাণী নিজের কপালটা
দেখিয়ে বলল ' ফোন দিয়ে বাবাকে বলব কিন্তু আপনি
আমাকে বাসা থেকে বর করে দিয়েছেন হুঁ ' ম্যাডামের
কপাল ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করতেই হল। তারপরে উনি আর
লজ্জায় চোখ খুলতে পারলনা। সন্ধ্যা বেলা। আরবী জানালা
দিয়ে কার সাথে যেন ফিসফাস করছে। আমি ল্যাপটপ বন্ধ
করে কাছে গিয়ে বললাম ' কার সাথে কথা বল? ' আরবী
বলল ' মায়ের সাথে ' কথাটা বলার সময় আরবীর চোখ
থেকে এক ফোটা পানি নিচে পরল। আরবীর এমন
চোখ-মুখ আমি আগে কোনোদিন দেখিনি। আমি কিছু
বলতে যাব তখনই আরবী বলল ' আমি ঘুমাব। আর রাতে
আমাকে ডাকবেন না আমি খাবনা। রাতে আমি ঠিকই ডাকিনি।
আরবীর মন ভীষণ খারাপ।
.
আমাদের মধ্যবর্তীর কোলবালিশটা জড়িয়ে সবসময় আমি
ঘুমিয়েছি। আর আজকে আরবী! রাতে অনেক বৃষ্টি
হয়েছে। পাখিরা ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। জানালা দিয়ে
বাতাস আসছে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে কিছুটা। ঠাণ্ডায় আরবী
কোলবালিশটা আরো বেশি করে জড়িয়ে ধরছে। আমার
আজকে কেন জানি কোলবালিশটার উপর ভীষণ হিংসে
হচ্ছে। কোলবালিশের জায়গায় আমি থাকলে মনে হয়
আরো বেশি ভাল হত। কোনরকম কোলবালিশটা সরিয়ে
আমিই কোলবালিশ হয়ে গেলাম। আমি পৃথিবীতে আছি
আমার মনেই হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে স্বর্গের কোন
কক্ষে আছি। আমাকে জড়িয়ে আছে টের পেয়ে
আরবী বলল ' এয়াও এত শক্ত কোন মানুষ হয়? ' আমি হাসলাম,
আরবীর কানে কানে বললাম ' আচ্ছা তুমি আমাকে সবসময়
ব্ল্যাকমেইল কর কেন? ' আরবী মুখ বাঁকা করে বলল '
তাছাড়া কেউ তো আর আমাকে আর ভালবাসেনা '

No comments:

Post a Comment