Monday, August 19, 2024

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি চন্দ্রিমা আমার শিয়রে
বসে আছে। ঘরের লক্ষ্মী বউ যদি মাঝরাতে না
ঘুমিয়ে স্বামীর মাথার পাশে বসে থাকে তাহলে ঘুম
না হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি বিড়ালের মতো উসুম
ছেড়ে উঠতে গিয়ে দেখি আমি উঠতে পারছিনা।
আশ্চর্য হলাম যে আমার মাথায় কাপড়ের পট্টি !!
চন্দ্রিমা ইশারায় আমাকে উঠতে নিষেধ করলো,
আমি এমনিতেও শুয়ে পড়লাম। খানিকক্ষণ বাদে
চন্দ্রিমার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে
দেখলাম আমার ঘুম পাগলি বউটা ঘুমে আড়ষ্ট চোখ
দুইটা জোর করে খোলা রেখেছে। আর
কিছুক্ষণ পর পর কাপড়ের পট্টিটা বাটিতে রাখা পানিতে
ভিজিয়ে আবার আমার কপালে রেখে দিচ্ছে। আমার
বুঝতে বাকি রইলো না যে আমার জ্বর
বেঁধেছে। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ভিজে বাসায়
আসার ফল পেলাম। যদিও সেই সময়টা চন্দ্রিমা শুধু
বলেছিলো ছাতা থাকা সত্তেও ভিজে আসার
কোনো মানে হয় ? অসুখ বাঁধলে আমাকে
বলবে না।
অবাক হলাম এই ভেবে যে কিভাবে নিজের ঘুম
টাকে লাগাম পড়িয়ে আমার পাশে বসে আছে
মেয়েটা। যে মেয়েটা ঘুম ধরলে মাঝে মাঝে
সোফাতেই অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ে, মাঝে মাঝে
অবশ্য ইচ্ছে করেই ঘুমিয়ে যায় কারণ যাতে করে
আমি কোলে করে বিছানায় নিয়ে যাই।
...
জিরো লাইটের হালকা আলোয় চন্দ্রিমার মুখটা
পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও ওর ঠোঁটের
নিচের তিলটা চিনতে ভুল হলো না। আসলে অনুমান
করলাম আরকি !! ওর তিলটা অদৃশ্য থাকলেও আমি
দেখতে পাই। চুলগুলো দুই পাশ দিয়ে নেমে
গিয়েছে। এমন অনেক দিন গিয়েছে যখন ওর
সাথে ঝগড়া হলেও আমি ঠিকই ওর তিলটায় চুমু দিতাম,
আর ঠিক খানিক বাদেই ওর রাগ পানি হয়ে যেতো।
চন্দ্রিমা আমার কাছে জেনেছিলো এই তিল
দেখেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছিলাম।
চন্দ্রিমা আর আমার দেখা হওয়াটা যেরকম অস্বাভাবিক
ভাবে হয়েছিল সেরকম ভাবে বিয়েটাও হয়েছিল।
আমার সেদিনের কথা প্রায়ই মনে পড়ে। হাতে বড়
একটা ব্যাগ নিয়ে আমার ভাড়া বাসার সামনের চা স্টল
টাতে হাত পা গুটিয়ে বসে ছিলো। আমি প্রতিদিন বাসায়
ফেরার সময় এক কাপ চা খেয়েই বাসায় উঠতাম। আমি
চন্দ্রিমার পাশে বসে ছিলাম তবুও ওর দিকে খেয়াল
করি নাই। আসলে আমি যেখানে বসেছিলাম
সেখানে ডাব গাছের অন্ধকারটা পড়েছিলো। আমি
চা টা শেষ না করেই পকেট থেকে টাকা বের
করে দিতেই দোকানদারের পিচ্চি ছেলেটা বলে
উঠলো, ভাইজান ভাবি সন্ধ্যে বেলা আইসা চা খাইয়া
গেছে। বিল বাঁকি আছে। আমি খানিকটা অবাক হয়ে
বললাম, ভাবি এসেছিলো মানে ? ওইযে যে
আপনাকে বাসায় নাইমা দিয়ে চলে যায় সে। আমি তবুও
চুপ করে চা টা শেষ করছিলাম। হঠাৎ আমার পাশ
থেকে কোমরে চিমটি বসিয়ে দিয়ে কেউ
বললো, এই হয়েছে অনেক চা খেয়েছ। আমি
তড়াক করে এক লাফে উঠে দাঁড়ালাম। আমার ভয়
পাওয়া দেখে চন্দ্রিমার সে কি হাসি। সেদিন শুধু
বলেছিল মা আমার বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করছে।
আমি ভাবনা চিন্তা না করেই ওকে সরাসরি বলে
ফেললাম, চলো কাল বিয়ে করে ফেলি। ও
হয়তো আমার মুখ থেকে এ কথা শোনার
অপেক্ষাই করছিলো। পরদিন আমরা দুজনে শুভ
কাজটা সেরে ফেললাম। পরে মেয়ের এমন
কাণ্ডে আমার শাশুড়ি মা বেশ রেগে গেলেও আমি
অনেক বুঝিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে
পেরেছিলাম বলেই হয়তো সেদিনই আমাদের
মেনে নিয়েছিলেন।
...
হঠাৎ চন্দ্রিমা উঠে ঘরের বাইরে গেলো। আমি
শুয়ে থেকেই দেখতে পেলাম যে বেসিনে
গিয়ে পানির ঝাঁপটা চোখে দিয়ে আবার আমার কাছে
এসে বসে পড়লো। আজ ওর প্রত্যেকটা
কাজেই আমি যারপরনাই অবাক হচ্ছি। এমন না যে আমার
অসুখ হলে আগে কখনো এমন করেনি তবে
আলাদা কিছু তো সব ব্যাপারে থেকেই থাকে।
আজ চন্দ্রিমা কে একটু বেশিই আলাদা লাগছে। এই
আলাদা কেমন আলাদা জানিনা ! তবে চন্দ্রিমার এইরূপ
আচরণ আমার কাছে ওকে ওর সুন্দর চেহারার
থেকেও বেশী উজ্জ্বল করে তুলেছিলো।
ভেজা কাপড়টা দিয়ে চন্দ্রিমা আমার শরীর মুছে
দিতে লাগলো। চন্দ্রিমার দিকে তাকিয়ে আমার
কেনো জানি মনে হলো প্রতিদিন জ্বর হলেই
বরং ভালো হতো। অন্তত গভীর রাতে
মেয়েটার ঘুম জাগা মুখটা দেখে নিজেকে ভাগ্যবান
মনে হতো।
- নাহ ( চন্দ্রিমা )
- কি হলো ? ( আমি )
- বারবার এদিকে তাকাচ্ছো কেনো ? পিঠ মুছে
দেই চুপ করে থাকো।
- আমি বাধ্য ছেলের মতো ওর কথা মেনে নিলাম।
আজ যেনো ওর কথা গুলো মানতে একটু বেশিই
ইচ্ছে জাগছে।
চন্দ্রিমা আমার মাথা টা ওর কাঁধে নিয়ে নিয়ে আমার পিঠ
মুছে দিচ্ছে। চন্দ্রিমার শরীর থেকে একটা ঘ্রাণ
আসছে, অনেকটা দম বন্ধ করা সুগন্ধ। প্রত্যেক টা
স্বামীই হয়তো স্ত্রীর শরীরের এই গন্ধ টা
খুঁজে বেড়ায়। এই সুগন্ধটাই হয়তো দুজন কে
দুজনের আরো কাছে টেনে আনে। এক
জনের শরীরের একটা গন্ধ থাকে যেটা একমাত্র
তার সবথেকে কাছের মানুষ টাই বুঝতে পারে।
আমাকে আবার বালিশে শুইয়ে দিয়ে চুলগুলো ঠিক
করে দিতে লাগলো মেয়েটা। চন্দ্রিমা আমার
চুলগুলো খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে কিছু সময়
ও আমার মাথা টা ওর বুকে জড়িয়ে নিয়ে থাকে। তখন
আমার চুলগুলো তে ও নাক ঘষে, এলোমেলো
করে দেয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে আমার
চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে আবার
নিজেই বিলি কেটে সিঁথি করে দেবে।
...
আমার স্পষ্ট মনে আছে আমাদের বাসর রাতে
চন্দ্রিমা আমার কাছে আব্দার করে বসে একটা
জিনিস। আমি যখন ওকে বলেছিলাম আমি চেষ্টা
করবো ওর সবরকমের আব্দার পূরণ করার। যদিও
রিলেশনের শুরু থেকেই ওর ইচ্ছেগুলো আমিই
পূরণ করে আসছি।
- আমার পায়ে আলতা পরিয়ে দিবে ?
- আমি ওর এই আব্দার শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে
বললাম, এতো রাতে আলতা পাবো কোথায় ?
- ও একটু হেসে বেড থেকে নেমে বেলকনি
তে লুকিয়ে রাখা আলতা এবং আলতা দেবার সবকিছু
আমার সামনে এনে বললো, এই নাও।
- আমি খানিকটা অবাক হলাম ভেবে যে ও আলতা
কোথায় পেল।
আমায় জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে ও পায়ের
গোড়ালি থেকে শাড়ী সরিয়ে আমার সামনে
এগিয়ে দিলো ওর পা দুখানা।
চন্দ্রিমার আব্দার আর ওর ছোট ছোট চাওয়াগুলো
আমাকে ভীষণ ভাবে আলোড়িত করে
তোলে। সেই আব্দারের অভ্যাস টা ওর কখনো
কমে নাই। মাঝে মাঝে এমনও হয় ও মাঝরাতে
আমাকে ঘুম থেকে তুলে আব্দার করবে ওকে
সাজিয়ে দিতে। আমি কখনই ওর এই আব্দার
গুলোতে বিরক্ত হই না, বরং বেশ আগ্রহ ভরেই
উপভোগ করি। আপনি কখনই শুধু সুন্দর দেখেই
মানুষকে পছন্দ করতে পারেন না, মানুষটাকে পছন্দ
করতে অবশ্যই তার মাঝে আপনার প্রিয় গুণগুলো
খুঁজে দেখেন। আমি ওকে দেখে পছন্দ
করেছিলাম ওর ঠোঁটের নিচে তিলটা লম্বা চুলের
জন্য। এরপরে দিনে দিনে ওর আর আমার মনের
টানটা শুধু বেড়েই চলেছে।
...
আমাকে ছোট বাচ্চার মতো হা করিয়ে ঔষুধ
খাইয়ে দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে
লাগলো। আমি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে
থেকে অনেককিছু ভাবছি। অনেকক্ষণ পর ড্রয়ার
থেকে থার্মোমিটার বের করে আমার জ্বরের
তাপমাত্রা টা আরেকবার দেখে নিলো।
হয়তো বা আমার গায়ের জ্বর খানিকটা কমে
যাওয়াতে চন্দ্রিমার মুখটা একটু হাসি হাসি লাগছিলো।
আমার কপালে আলতো করে চুমু খাবার পর ও
বললো, এখন ঘুমিয়ে যাও।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ?
চন্দ্রিমা একটু হেসে বললো, প্রতিদিন আগে
তো আমিই ঘুমুই আজ আগে তুমি তারপরে আমি।
আমারো কেনো জানি একটু ঘুম ঘুম ভাব ধরলো।
ইচ্ছে করছিলো চন্দ্রিমা যখন আমার পাশে বসে
থাকে সে অবস্থায় ওকে কেমন লাগতো সেটা
দেখার ... আমার সাথে সবসময় বাচ্চা বাচ্চা স্বভাবের
আচরণ করা মেয়েটা এক রাতেই এতো ভিন্নরূপে
আমার চোখে ধরা দেবে আমি ভাবিনি। যেনো
মনে হচ্ছে আমিই ওর কাছে একটা বাচ্চা !! মনে
হচ্ছে বাঁকিটা সময় ও আমার দিকে এভাবেই তাকিয়ে
থাকুক। আমি যেনো সকালে উঠে দেখতে পারি
ওর ঘুমে জড়ানো চোখ দুটো আর নয়তো
আমার বুকের উপর ওর মাথাটা থাকুক।
...
একটু ভোরে ঘুম ভাঙ্গায় আমার যেনো কোন
কারণে বেশ ভালো লাগলো। একদম ছোট
বাচ্চার মতো করে আমার গায়ের সাথে লেপ্টে
আছে চন্দ্রিমা। অন্যান্য দিনগুলোতে বেশিরভাগ
আমার গায়ের উপরে উঠে ঘুমিয়ে থাকে। বাইরে
এখনো পুরোপুরি আলো ফুটে উঠেনাই,
কেবল সূর্য টা ঘুম ভেঙ্গেছে। কি যেনো
মনে হলো এইসময় ওকে কোলে নেবার খুব
ইচ্ছা জাগলো। অবশ্য ব্যাপারটা দারুণ হবে। অসুস্থ
শরীর নিয়ে ভয় পাবার থেকে কাল রাতে চন্দ্রিমার
মুখখানার কথা মনে হতেই যেনো শরীরে
জোড় এসে গেলো কোথা থেকে !!
চন্দ্রিমা কে কোলে করে আমি বেল্কনি তে
নিয়ে গেলাম। আমি কোলে নিয়ে খানিকক্ষণ
দাঁড়িয়ে থাকতেই ওর ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। এই
সাতসকালে ওকে কোলে করে বেল্কনি তে
নিয়ে যাওয়াতে ও ভীষণ অবাক হয়েছে সেটা ওর
চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কখন যে ও চোখ
খুলে আমার দিকে চেয়ে আছে আমি বুঝতেই
পারিনি।
- এই এই তুমি নামাও আমাকে। তোমার শরীর
এমনিতেই দুর্বল।
- যে মেয়েটা সারারাত আমার সেবা করতে পারে
তাকে কোলে নিয়ে এই ভোরের সূর্য
দেখলে কোন অপরাধ হবে না।
চন্দ্রিমা আমার কপালে হাত দিয়ে বললো, জ্বর
তো অনেক কমে গেছে।
আমি বললাম, কাল রাতের মতো আরেকটা চুমু দাও
বাকিটুকু আপনাআপনি সেরে যাবে। মাঝে মাঝে
আপনি এমন কিছু মুহূর্তের মুখোমুখি হবেন যে
মুহূর্তটিকে আপনি হয়তো থামিয়ে রাখতে
চাইবেন !! হয়তো সেটা সম্ভব না তবে এইটাও
হয়তো চাইবেন এই মধুর সময়টা যেনো বারবার
ফিরে আসে। সে সময়টা বারবার ফিরে হয়তো
পাবেন না তবে যে মানুষটি এমন মুহূর্ত উপহার দেয়
সে মানুষটির পাশে সারাজীবন থাকুন।
চন্দ্রিমা একটু হেসে আমাকে আরেকটু আড়ষ্ট
করে জড়িয়ে ধরার পর আমার ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু
খেলো।
আহ !! এর থেকে মধুর সকাল আর হয় নাকি ……
...
লিখা ঃ আলমির শাকিল

No comments:

Post a Comment