ঘুম থেকে উঠে দেখি যে নিলু পাশে নেই। মাথা টাই গেল গরম হয়ে। রান্নাঘর থেকে টুকটাক আওয়াজ আসছে। নিশ্চয় নিলু রান্নাঘরে। দিলাম ডাক চিল্লিয়ে।
আমি: নিলুউউউউউ।
নিলু: নিশ্চুপ।
আমি: ঐ শ্বাশুরির বেটি। আরো চিল্লিয়ে।
নিলু: আবারো নিশ্চুপ।
আমি: ঐ শ্বশুর এর মেয়ে। (শোনেনা কেন। আবার দিলাম এবার আরো জোরে)
নিলু: আসতেছি। (কানে ডাক পৌছাইছে তাহলে)
অবশেষে আমার সামনে এসে জরসর হয়ে দাড়ালো। ইস কি সুইট লাগছে বৌ টা কে মন চাচ্ছে জাপটে ধরে রাখি বুকের মাঝে।😛। না এখন রোম্যান্স চলবে না রাগ করতে হবে। দিলাম ঝারি।
আমি: কই ছিলা এতক্ষন???( জোরে চিল্লিয়ে আর মুখে রাগের ভাং এনে)
সে: চুপচাপ মাথা নিচ দিক করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি কানে গেছে।
সে: কিছু ই বলছে না।
আমি: বস।
সে: খাটে বসতে আসতেছে।
আমি: এখানে না😡ফ্লোর এ কানে ধরে উঠবস কর। আমার রাগ ঠান্ডা হওয়া পর্জন্ত।
নিলু কান ধরতে যাবে ওমনি আমি নেমে প্রথম ইচ্ছাটা পূরণ করে ফেললাম। মানে জোরে জাপটে ধরলাম আমার সোনাবউ টা কে। ঝারি খেয়ে একদম চুপ হয়ে গেছে। আর একটু হলে কেদে ই দিত। হিহিহি। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললামঃ তোমাকে না বলেছি যে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তোমার চাঁদমুখ খানা দেখতে চাই সবকিছুর আগে। যদি তোমার কোনো জরুরি কাজ থাকে তাহলে আমাকে ডেকে তুলে দিবে তারপর তোমাকে দেখব মনভরে তারপর কাজে যাবা। মনে নাই নাকি?
সে: এখন চুপ করে আছে।
আমি: তার মুখের দু পাশ দু হাত দিয়ে ধরে কপালে ভালবাসা একে দিলাম। তারপর আবার জিজ্ঞাস করলাম যে রান্নাঘরে কি করছলা?
সে: আপনার জন্য চা বানাচ্ছিলাম।
আমি: ও তাই বুঝি?
সে: হুম।
আমি: ঝারি শুনে ভয় পাইছো?
সে: হুম।
আমি: হাহাহা। আরে পাগলি বউ আমার। আমি কি তোমার সাথে মজা ও করতে পারবোনা?
সে: হুম পারেন। কারন আমি যে আপনার সোনাবউ।
আমি: এইতোহ আমার সুইট বউ টা বুঝেছে। তো এখন যাও চুলা বন্ধ করে দিয়ে আসো। তোমাকে জরিয়ে ধরে কিছুক্ষন শুয়ে থাকবো। তা নাহলে ঘুম পরিপূর্ণ হবে না।
সে: কেন রাতে কি অন্য কাউকে জরিয়ে ছিলেন নাকি?
আমি: আরে নাহ।
সে: তাহলে?
আমি: আসলে সকালে ঘুম ভাঙার পর তোমাকে কিছুক্ষন জরিয়ে ধরে না থাকলে দিনটা ই মাটি জায়। যলদি যাও।
:
:
হাই; আমি আহমেদ বর্ষণ। নিজস্ব ব্যাবসা করি। আর এতোখন যার সাথে কথা বললাম সে হল আমার একমাত্র সহধর্মিনী নিলুফার জাহান নিলা।
:
নিলার সাথে পরিচয় পারিবারিক ভাবে ই। কখনো ভাবি নাই যে এরেঞ্জ ম্যারেজ করবো। ছোটবেলা থেকে ই লাভ ম্যারেজ এর প্রতি আলাদা টান ছিল আমার। কিন্তু কলেজ পর্যন্ত কোনো প্রেম ই করতে পারলাম না। এইচ,এস,সি এর পরে আর লেখা পড়া ও হয়ে উঠে নি। আর ছিলাম পরিবার এর বড় ছেলে। তাই ফ্যামিলির হাল ধরতে ই নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে দিলাম। ভালো ই চলতেছিল দিনগুলা কিন্তু যখনি ব্যবসা টা একটু লাভের মুখ দেখছে তখনি বাসার সবাই যেন উঠে পরে লাগলো আমাকে বিয়ে দেবার জন্য। আমি ও বেচারা কি করবো প্রেম তো আর করতে পারলামনা তাই বিয়ের জন্য নিমরাজি হয়ে গেলাম। নিলা কে যখন দেখতে গেলাম সে কি কাহিনী। তাকে এতো টাই মনে ধরল যে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে সবার সামনে ই বলে ফেললাম আমি এই মেয়ে কেই বিয়ে করবো। নিলা ও তখন ফিক করে হেসে দিয়েছিলো আমার কথা শুনে। যেন পৃথিবীর সেরা জোকস মারলাম (খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক)। তারপর সবকিছু যেন খুব তাড়াতাড়ি ই ঘটলো নিলা কে বিয়ে করে ঘরে তুলে ফেললাম, প্রথমে ভেবেছিলাম যে যাকে চিনিনা, জানিনা তার সাথে শুরু করবো কিভাবে। তার মন মানসিকতা ও বা কেমন হবে কে জানে। কিন্তু নিলা যেন এইগুলো কে আরো সহজতর করে দিলো। যেদিন আমাদের বাসর ছিল সেদিন কি ভয়েই না ছিলাম আমি। কিভাবে তার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করব সেই ভেবে কিন্তু যখন বাসরঘর এ ঢুকলাম তখন নিলা এসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো সেইসময় বাংলা মুভির সেরা ডাইলগ টা মনে পরে গিয়েছিল "তোমার স্থান আমার পায়ে নয়! আমার বুকে" কিন্তু তাকে বুকে নিতে সংকোচবোধ হচ্ছিল। হয়তবা সে আমার মনের কথা বুঝে ফেলেছিল তাই সে বললো যে বুকে জরিয়ে নিতে এতো সংকোচ কিসের। আমি আপনার বিয়ে করা বৌ না নাকি?
আমি ও আর বাড়তি কিছু না ভেবে নিয়ে নিলাম বুকে কারন আজ থেকে সে তো আমার ই অর্ধাঙ্গিনী। তাকে নিয়ে ই তো আমার পরিপূর্ণতা।
:
তারপর থেকে আমার সবকিছু ই ভালভাবে চলতে লাগলো। নিলা যেন আমার জন্য ভাগ্য স্বরুপ যবে থেকে সে আমার জীবনে আসলো তখম থেকে আমার কপাল পুরোপুরিভাবে খুলে গেলো। ব্যবসায়ে লাভের মুখ বেশী দেখা গেলো। তা এমন ই একদিন কাজে যাওয়ার পর পাশের বাসার ভাবী ফোন দিয়ে আমাকে জলদি হাসপাতাল এ যেতে বললেন। কেন জিজ্ঞাস করলে কোনো কারন বললেন না। শুধু বললেন যে যত জলদি সম্ভব যেন পৌঁছে যাই। আমি ও আর হেতু না করে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার কলিজা টা হাসপাতাল এর বেড এ শুয়ে আছে। কপালে ব্যান্ডেজ লাগানো এটা দেখে তো আমার মাথা ই খারাপ হয়ে গেলো যে কি হল নিলার। ওর কিছু হলে তো আমি বাচবোনা। দেখলাম ভাবী আমার সামনে আসলো। তাকে দেখে ই কান্না কাটি শুরু করে দিলাম।
:
ভাবী : আরে ভাই কাঁদো কেন।
আমি: ভাবী ওর কি হয়েছে। কিভাবে কি হল বলেন আমাকে। ওর কিছু হলে আমি বাচবো না ভাবী। ও যে আমার বেচে থাকার পন্থা।
ভাবী : আরে পাগলা দেওর মশাই সব না শুনে ই এমন কান্নাকাটি শুরু করে দিলা।
আমি: কি হয়েছে ওর বলেন না আমাকে।?
ভাবী: তোমাদের বাসায় গিয়েছি গিয়ে দেখি নিলা ফ্লোর এ অজ্ঞান হয়ে পরে আছে আর মাথায় কেটে গেছে। উপর থেকে পরে গেছে মনে হয়। তারপর সবাই কে নিয়ে ধরা ধরি করে হাসপাতাল এ নিয়ে আসলাম। এনে ব্যান্ডেজ করে চেক-আপ করে দেখে যে ও প্রেগন্যান্ট হওয়াতে হঠাৎ পরে গিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আমি: বলেন কি ও প্রেগন্যান্ট?
ভাবী: হ্যা ভাই। কেন তুমি জানতে না?
আমি: না। ও তো আমাকে কিছু বলে নাই।
ভাবী: তাহলে মনে হয় তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।
আমি: হয়তবা। যাইহোক ওকে তাহলে বইলেন না যে ওর প্রেগন্যান্সির কথা আমি জানি।
ভাবী: ঠিক আছে ভাই বলবো না। কিন্তু আমাদের মিষ্টি কই। বাবা হবা আর মিষ্টি নাই সেটা তো হবে না।
আমি: সময় মতন পেয়ে যাবেন। টেনশন নিয়েন না।
ভাবী: মনে যেন থাকে। আবার ভুলে যেও না।
আমি: আরে নাহ। ভুলবো না।
ভাবী: ঠিক আছে ভাই। তুমি ওর পাশে থাকো। আমি বরং বাসায় যাই। খেয়াল রেখো। বৌ টা তো তোমার ই।
আমি: হাহাহা। ওকে ভাবী। চিন্তা নিয়েন না। বাসায় যান আপনি।
:
:
:
ভাবী চলে যাওয়ার পর আমি নিলার কাছে গেলাম। চুপচাপ শুয়ে আছে পাগলি টা আমার😍। না যানি কত কষ্ট হয়েছে যখন পড়ে গেছে😖 ওর বেডের পাশে চেয়ার পেতে বসলাম। হাত দুটো আমার হাতে বন্ধি করলাম। কিছুক্ষন পর দেখি হাতে চাপ বাড়ছে বুঝলাম যে পাগলি টার জ্ঞান ফিরেছে। তাকিয়ে দেখি পিট পিট করে আমার দিকে তাকাচ্ছে
No comments:
Post a Comment