- হ্যালো।
- বলুন ম্যাডাম।
- কই তুমি?
- বাম পাশে।
- কই দেখিনা তো।
- ধুরু, তোমাকে বুক চিরে দেখতে
বলছি?
- ফাইলামি রাখো। কই তুমি বলো।
- কই আর। বাসায়ই আছি।
- সকালে খাইছো?
- তার জন্য ব্রাশ করতে হবে।
- কি? এখনো ব্রাশ করো নাই?
- সকালে করবো।
- সকাল কয়টায় হয়?
- জানিনা। আমার তো ১০-১১ টার
মধ্যেই হয়।
- ৯ টা বাজে। উঠবা না আমি কিছু
করবো?
- ওয়েট ম্যাডাম। এক্ষুণি উঠছি।
- ব্রাশ, ফ্রেস, ব্রেকফাস্ট, স্টাডি। এর
মধ্যে ফোনে হাত দিলে খুন করে দেব।
- আম্মুউউউউউ!
- ঐ, একদম আম্মুকে ডাকবা না।
- তোমার আম্মুকে ডাকি নাই। আমার
আম্মুকে ডাকছি।
- যাকেই ডাকো। এইখানে আম্মুর কোন
কাজ নাই। ফোন রাখো। টাটা,
লাভিউ। টুটটুটটুট.....
- যা বাবা! আমাকে টাটা বলার
টাইমটাও দিলোনা?? আম্মুউউউউউ!!
- আবার??
- ও, তুমি ফোন রাখো নাই তাইলে।
ভালোবাসি।
- হয়েছে, এবার যান। ফ্রেস হন।
- ওকে, বাই!
.
একটা স্বপ্ন; সুখের, দুঃখের, হাসির,
কান্নার, বেদনার, আনন্দের। যে স্বপ্নটা
ধরে একটা বৃত্ত দাঁড়িয়ে থাকে। যে
বৃত্তে থাকে কয়েকজন মানুষ। একটা
পরিবার। সবকিছুই থাকে স্বপ্নটাতে।
স্বপ্নের রশিটা কখনো ছিঁড়ে যায়না।
মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ সেই রশি। এই
গল্পটা এমনি একটা মায়ার বাঁধনের।
দুটো পরিবার থেকে তৃতীয় পরিবার
হবার গল্প।
.
এইপাশে আছি আমি। অনিক। আমার
বউয়ের দেয়া নাম মেঘ। আমার বউ;
স্যরি, ভবিষ্যৎ বউ ইসরাত। ভালোবেসে
ইসু বলেই ডাকি। নীল ইসু। কিউট না?
উপ্পস, আমার তো ব্রাশ করতে হবে।
বাকিটা এসে বলছি, টাটা।
.
- হ্যালো বাবু।
- কেমন আছো?
- খুব খুব খুউউউব ভালো না!
- তাই বাবুতা?
- হুঁম।
- তো কি হইছে শুনি।
- ব্রাশ, ফ্রেস, ব্রেকফাস্ট, স্টাডি; কত্ত
কাজ করছি দেখছো?
- আহালে বাবুতা। থাক, কালকে
থেকে এগুলো আর করতে হবেনা।
- বিয়ের আগে বিধবা হবার ইচ্ছা
হইছে?
- একতু একতু!
- তাইতো বলি। নাহলে এমন পরামর্শ
হাউ সম্ভব?
- আচ্ছা, এখন ফোন রাখেন। পরে কথা
বলবো। এখন আমার কাজ আছে।
- আহারে, আমার বউতার কত্তো কাহ
করতে হয়!
- হুঁম, টাটা।
- বাই, লাভিউ।
- টু......
.
এই ছিলো প্রেমপর্ব। পাক্কা ৫ বছরের
প্রেমপর্ব। আসলে হইছে কি, আমরা সেম
এইজ। প্রেমটা এতদিন গড়াতে অবশ্যই কষ্ট
হইছে বিকজ, আই অ্যাম টু মাচ পিচ্চি।
সেম এইজের মেয়েরা একটু বেশিই বুঝে
কি না! আমরা এখন একটা রেস এ আছি।
অবশ্যই ও আমার সাথে দৌড়ে পারবে
না। কিন্তু সেটা দৌড়ের রেস না।
সো, ও জিততেও পারে। প্রতিষ্ঠিত
হবার রেস। পাঁচ বছর প্রেম করেছি,
বিয়ে করতে হবেনা? কিছুদিনের মধ্যে
একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ঢু
দিলে ঢুকে পড়লাম। ফ্যামিলি চলার
মতো একটা স্যালারি আসে। এবার
বিয়ে করা যায়।
.
- আম্মু।
- কি?
- তোমার শরীরটা ভাল লাগছে না।
চলো ডাক্তার দেখাই।
- কই? আমি তো ভালোই আছি।
- ও, আচ্ছা। তবুও যাই না! চেকআপ
করিয়ে নিয়ে আসলে ক্ষতি কি?
- বাহ্! বাবাজানের এত উন্নতি হঠাৎ?
- বড় হইছি না?
- অবশ্যই বড় হইছিস। তাইতো বিয়ের আগে
বাবুর মা ফোন দেয়!
- কিইইইই?
- বাবুর মা নাম্বার থেকে ফোন
আসছিলো। মেঘকে চায়।
- দেখছো। রং নাম্বার। এখানে মেঘ
বলে তো কেউ নেই।
- হ্যাঁ, রং নাম্বার। তাইতো সুন্দর করে
"বাবুর মা" লিখে নাম্বারটা সেভ
করা।
- আসলে আম্মু। তুমি যা ভাবছো তা না।
- তা তো অবশ্যই না। আমি ভাবছি এটা
তোর ফ্রেন্ড বাবুর মা। কিন্তু আসলে
তা না।
- রাইট, এটা বাবুর মার নাম্বার।
- আসলে আমি যা ভাবছি তা না।
বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভাবছিস?
- আম্মুউউ! কি যে বলোনা।
- হইছে, আর অভার এক্ট করা লাগবে না।
- পরিচয় করাবি না?
- পরে।
- দেখতে অবশ্যই পরীর মতো। তাই না।
- আমি দেখিনি?
- কি?
- মানে পরী দেখিনি।
- তবেরে...........
.
যাক বাবা। বেঁচেই গেলাম মনে
হয়েছিলো। আব্বু-আম্মু, শ্বশুর-ফ্যামিলি
সবাই ভালভাবেই মেনে
নিয়েছিলো। ছোট বোনদুটোর সাথে
তো আপন বোনের মতোই চলছিলো বাট
এটা আমার প্রব্লেম ছিলো। একসাথে
হলেই আমায় নিয়ে চক্রান্ত! কিভাবে
কতবার আমায় ফাঁসানো যায় সারাদিন
সেই চিন্তা। বিয়ের আগপর্যন্ত একটু এমন
হলেও প্রব্লেম ছিলোনা। কিন্তু বিয়ের
পর "বেঁচেই গেলাম" ফিলটা চলেই
গেলো। সবসময় "মরেই গেলাম" টাইপের
হেভি হেভি ফিল হওয়া শুরু করলো।
তবে এটা খুব ভাল লাগতো যে আমার
বউটা আমায় প্রচন্ড ভালোবাসে।
আগের চেয়ে অনেকটা বেশি।
.
- ঐ, আমার যৌতুক কই?
- আমি কেন যৌতুক দেব?
- আমি বলছি তাই।
- যৌতুক তো ছেলেরা নেয়। সেই
হিসেবে আমি নেব। তুমি কেন?
- তুমি আমার যৌতুক দিবানা? আমি
কালই বাড়ি চলে যাবো, হু!
- বাড়ি তো এটাই। আর কই যাবা?
- বাড়ির সামনে গিয়ে বসে থাকবো।
- থাক, হইছে অনেক। এই নাও ছোট যৌতুক।
- ওয়াও! কিটক্যাট? ইউ আর টু গুড্ডু!!
উম্মম্মম্মম্মম্মাহ্
- টু।
- কি টু?
- বিয়ের আগে তোমায় লাভিউ
বলছিলাম। তুমি শুধু টু বলছিলা।
প্রতিশোধ নিলাম।
- মাইর খাবা?
- উঁহু! ভালবাসা খাবো।
- হইছে অনেক, চলো খাবা।
- শোন।
- কি?
- উম্মম্মম্মম্মম্মম্মম্মাহ্!
- ইউ আর টু হার্ড অনি।
- আই নো ম্যাডাম।
.
আব্বু-আম্মু, পাগলী দুটো বোন আর
তাঁদের নতুন সঙ্গী, অফিস, ফ্রাইডে,
বন্ধুবান্ধব; সবমিলিয়ে ভালোই চলছে
আমার ভালবাসা মাখা প্রত্যেকটা
দিন। আমার হবু বাবুর আম্মু একটা যৌতুক
চেয়েছিলো আমার কাছে। দেইনি
এখনো। দুটো সারপ্রাইজ একসাথে দেব।
বিয়ের ১ বছর হতে কিছুদিন বাকি। হঠাৎ
করে একদিন রাতে ইসু কেমন যেন শুরু
করেছে। আম্মু দৌড়ে এসে ইসুর কাছে
বসে বললো এম্বুলেন্স ডাকতে। ইসু আমার
দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দ হাসি
দিলো। হসপিটালে নিয়ে গেলাম
ইসুকে। আমার শ্বশুর-শ্বাশুরী, সম্বন্ধী
সাহেব, আদরের শ্যালিকা আসলো।
ওখান থেকে আমার দু বোন, আম্মু আর
শ্যালিকাকে বাসায় পাঠিয়ে
দিলাম। একটু পর ডাক্তার সাহেব বললো
আপনার ছেলে হয়েছে। আই ওয়াজ টু
হ্যাপি!!
.
- হ্যালো আম্মু, তোমার জন্য একটা বর
দেখছি। নাম কাব্য। উচ্চতা প্রায় এক
ফিট। তুমি বিয়ে করতে রাজি?
- আলহামদুলিল্লাহ!
- আরে, তুমি হা বলে দিলা?
- শয়তান ছেলে।
.
অতঃপর টুটটুটটুট.... যা বাবা। কি এমন
করলাম?
.
- কাব্য। কই তুই?
- কাব্য কে? (শ্বাশুমা)
- আপনার হবু বর।
- শয়তান ছেলে।
- আম্মুও বলছে।
- কি?
- শয়তান ছেলে।
- তো, বাবু হবার আগেই নাম ঠিক করে
রাখছিলা বুঝি?
- আমি না। আপনার মেয়েই করছে।
- ঐ, আমি একা? (ইসু)
- আহারে বাবু। কিছুক্ষণ আগে আম্মু
হইছো এখন তো অ্যাটলিস্ট বাচ্চাদের
মতো আচরণ করা ছাড়ো।
- তুমিও তো বাবা হইছো। তুমি ছাড়ছো?
- ওকে। হিসসসসস! একদম চুপ!
- হুঁম, হইছে। এখন কোলে নাও।
.
নার্স কাব্যকে আমার কোলে তুলে
দিলো। নাহ্। আমায় দেখে কাঁদেনি।
মুখটা কাছে বাড়িয়ে দিলাম। চুমোও
খায়নি। কি আর করার? আমিই খেলাম।
.
- ঐ, এতো জোরে কেউ চুমো খায়?
- সবসময় তো আরো জোরেই খাই।
- তুমি একটা ইয়ে, মুখে কিছু আঁটকায় না।
- আমরা বাপ-ছেলে চুমো খাচ্ছি।
তোমার প্রব্লেম কি, হু?
- থাক। পাগলের সাথে প্রলাপ করার
কোন ইচ্ছেই আমার নেই। বেশি করে
খাও।
.
বাবা হবার মতো আনন্দের ফিলিংস
মনে হয় পৃথিবীতে আর নেই। অন্যরকম
একটা আনন্দ যোগ হয়। বলে বোঝাতে
পারবো না। ছেলে আমার কিন্তু
টানাটানি সবার। হলো কিছু? আমি
চাই আমার আব্বু হোক। ভাইয়া,
শ্যালিকা চায় তাদের আব্বু হোক।
বেচারা একটা কতজনের আব্বু হবে?
.
আজ ওদের বাসায় নিয়ে যাব। বাসার
সামনে গিয়ে ইসু আমায় জড়িয়ে ধরে
বড় একটা চুমো খেল। ওর যৌতুক চোখের
সামনে। সাইকেল। এটাই যৌতুক
হিসেবে বিয়ের আগেই আমার কাছে
চেয়েছিলো। আজ ডাবল সারপ্রাইজ
দিলাম।
.
বাসায় আসার পর সবাই একসাথে বসে
আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডার টপিক কি দিয়ে
শুরু হইছিলো, কি চলতেছে, আর কি
দিয়ে শেষ হবে তা একমাত্র আল্লাহই
ভাল জানেন। আপাতত কাব্যর নাম
রাখা নিয়ে চলতেছে। অবশ্য এই অনেক
হাসাহাসি হইছে নাম রাখা নিয়ে।
টপিক, বেবি হবার আগে নাম রাখা।
.
- শোন। (ইসু)
- বল।
- একটু এদিকে আসবা?
- হুঁম, এখন বলো।
- আচ্ছা, আমরা যে আরো ৬ বছর আগে
নাম ঠিক কিরেছিলাম, এটা বলে
দেব?
- শোলে চড়তে চাও? কি হবে জানো?
.
অতঃপর আমার আদরের বোন দ্বারা এই
নিউজও লিক। সবাই হাসতে হাসতে
প্রায় অজ্ঞান। অর্ধেকটা নাম সবাই
মিলেই রেখেছে। রাফসান শাহাদ।
পুরোটা রাফসান শাহাদ কাব্য। আমার
কাব্য। আমাদের কাব্য। আমাদের সবার
কাব্য।
.
আমি মেঘ। তুমি নীল। আমাদের কাব্য।
এটা আমাদের কথা। আমাদের স্বপ্নে
বাঁধিয়ে রাখা "মেঘনীল কাব্য"
Monday, August 19, 2024
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment