Monday, August 19, 2024

কুয়াশায় ঢাকা শহর
,
জাকির হোসেন রাজু।
,
[একটি ছোট গল্প; সময়
নিয়ে পড়তে পারেন,
আশা করি অবশ্যই ভাল লাগবে]
,,
,
খুব শীত পড়ছে চারিদিকে, উত্তরের হীম
বাতাসে পুরো শহরটাতেই যেন মৃদু
শীতের
উষ্ণতাই ভরে উঠেছে, কুয়াশাতে দৃষ্টির
সীমানাটাও কেন জানি ক্ষীন হয়ে আসে,
পাশেই কিছু মধ্য বয়সি দিন মজুর খড়-
কুটার
আগুন
জ্বেলে চারিপাশে গা ঘেসে বসে আছে
তবুও থেমে নেই মানুষের পথের গন্তব্য,
হয়তো এর নাম'ই জিবন, এর নাম'ই পথ
চলা...
"মোরা অচেনা পথের পথিক, লক্ষ মোদের
দূর...
সন্ধ্যার ঐ বিদায়ী ক্ষনে,
মোরা এনেছি আগমনী সুর" [পথিক
তারুণ্যেন
প্রতীক]
হঠ্যাত পাশ থেকে একটি ছেলে এসে বল্ল
"স্যার চা খাবেন?"
উশখো- খুশখো চুল ছেলেটির,
পরনে একটি ছেড়া ফুল প্যান্ট, আর
গায়ে একটি পুরানো মকমালের জামা।
মনে মনে, বললাম...
"দেখে যাও হে পথ
পেরেছো কি ধরতে
পেরিয়ে এসেছি বাধা
যাব আজ গন্তব্যে
ছিল যে মোর শপথ"
- এত শীতের মাঝে এই
পাতলা একটা শার্ট
পরেছিস, শীত লাগেনা তোর?
: হ, লাগেতো! কিন্তু কি করুম?
- তোর বাড়িতে মোটা কাপড় নেই?
: ছিল তয়, আব্বার গায়ে আজ কয়দিন খুব
জ্বর
উঠছে, তাই হ্যায়
গায়ে দিয়া কামে গেছে।
- এত শীতের মাঝে গায়ে জ্বর নিয়ে?
: হ, চা দিমুনা স্যার?
- ওহ, হ্যা দে...
: এই লন স্যার
- হুম, টাকাটা ধর
: আপনাকে দিয়েই সকালে বউনি করলাম,
ভাঙটি নেই যে...
- আচ্ছা তোকে আর ভাঙটি দিতে হবেনা,
রেখে দে
: আচ্ছা
- এই শোন
: কি স্যার
- নে এই চাদরটা রাখ, পুরানো হলেও
চাদরটা আমার অনেক প্রিয়। তার পরেও
তোকে দিলাম
মুখ জোড়া এক মলিন
হাসিতে ছেলেটা দৃষ্টির
সীমানাতে হারিয়ে গেল, পাশ
ফিরে দেখলাম স্টেশনের
ঘড়িতে নয়টা বেজে সাত মিনিট, ট্রেন
আসতে এখনো বেশ কিছুক্ষন বাকি,
ষ্টেশনের
ওয়েটিং রুমে বেশ কিছুক্ষন ঝিম
মেরে বসে আছি
হঠ্যাত পাশ হতে মধ্যবয়সি একটা লোক
ডাক
ছেড়ে বল্ল "ট্রেন যে এসে গেছে,
যাবেন
না?"
এই লং রুটে একটি মাএ ট্রেন, তাও আবার
পাবলিক
লোক ঠেসাঠেসি আর মালের
ভীড়ে জায়গা পাওয়াটাই বেশ দুষ্কর।
তার
পরেও জানালাটির গা ঘেসে কিঞ্চিত
একটু
পা রাখার জায়গা পেলাম।
সামনে বসা মানুষগুলো অতি উৎসাহে জানালার
বাইরে হাত রেখে বসে আছে,
কেউবা আবার
নির্বাক দৃষ্টিতে দূরের কুয়াশাছন্ন
মাঠটির পানে চেয়ে আছে। হঠ্যাত
পাশথেকে কারো ডাক অনুভব করলাম,
পিছে তাকিয়েই
দেখি নীলা দাড়িয়ে আছে
বুকের মাঝে হূদস্পন্দনটা হঠ্যাত
করে বেড়ে গেছে শরীরের
জমা রক্তগুলো কিঞ্চিত চিনচিন
করে উঠলো,
অজানা এক উষ্ণ অনুভূতির ঢেউ বয়ে গেল
সারা শরীলে। কখনো ভাবিনি,
জিবনে চলার
পথে এভাবে আবার নীলার
সাথে দেখা হবে,
কিছু বলার আগেই নীলা প্রশ্ন করলোঃ
: কেমন আছো সিয়াম?
- তোমার
সাথে এভাবে দেখা হবে কখনো ভাবিনি
: হাহ্! আমি কি ভেবেছিলাম...
- অনেক বদলে গেছো তুমি!
: সময়টা যে বড় নিষ্ঠুর, সেই
মানুষকে পরিবর্তন হতে বাধ্য করে...
- আমার প্রতি তোমার বোদহয় অনেক
ঘৃণা জন্মে আছে, তাইনা নীলা?
: ঘৃণা? আসলে জানো কিসিয়াম?, ভালবাসার
মানুষ টি কে হয়তো কখনো ঘৃণা করা যাই
না,
অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি,
যেটা ছিল সেটা হয়তো অভীমান,
হয়তো সেটাও এখন আর নেই।
যে মানুষটার
উপর অভীমান করে বসে থাকবো, সেই
মানুষটাই যখন নেই, তখন আর
বৃথা অভীমান
রেখে কি লাভ বলো.....,
নীলার কথাগুলো শেষ হতেই চশমার সচ্ছ
গ্লাসটা কেমন ঝাপসা হয়ে এসেছে,
বোদহয়
চোখ হতে পানি পড়ছে,
কান্না লুকাতে গিয়ে উঠে দাড়ালাম
ট্রেনের জানালাটির পাশে, পাশ
ফিরে দেখলাম নীলা ওর
রুমালটা এগিয়ে দিল, ওর সচ্ছ গালেও
অশ্রুর
ফোটা গুলি গড়িয়ে পড়ছে! পাশের
যাত্রিরা হয়তো মধ্যবয়সি দুটো মানুষের
জিবনের এই ক্ষনিক মূহর্তটাকে অবাক
হয়ে দেখছে,
- বিয়ে করেছো নীলা?
: সেটা আর পারলাম কোথাই, সেদিন
তোমার
জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত
অপেক্ষা করেছিলাম,
শেষে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে জানলাম
বাবা স্ট্রোক করেছে,
আমি হাসপাতালে যেতে যেতেই...
তারপর বাকিটা বছর নানু বাড়িতেই
কাটিয়েছি
- এখন কি নানু বাড়িতেই যাচ্ছো?
: নাহ্, একটা স্কুলে চাকুরির আবেদন
করেছিলাম, চাকুরিটা হয়ে গেছে তাই
ওখানেই যাচ্ছি।
তুমি কি করছো বল্লেনা?
- হাহ্! আমি? কি আর করবো,
গ্রামে বাবার
রেখে যাওয়া কিছু সম্পত্তি ছিল, সেটাই
দেখাশোনা করছি।
: বিয়ে করেছো?
- অনেক
আগে একটা মেয়েকে কথা দিয়েছিলাম
তার সাথে ঘর বাঁধবো, কিন্তু সেই
কথাটি আমি রাখতে পারিনি, তাই এখন
আর
অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধার সপ্ন
দেখিনা,
কি লাভ বলো বৃথা অন্য
কারো জিবনটা নষ্ট
করে!
: সিয়াম আমার স্টেশনটা বোদহয়
চলে এসেছে সামনের স্টেশনেই
আমাকে নামতে হবে...
- নীলা শোনো...
: কি
- জিবনে একটি শেষ অনুরোধ করবো,
রাখবে?
: কি বলো...
- যাবে আমার সাথে টাংগাইলে, আমাদের
গ্রামটিতে; খুব ছোট্ট
একটি বাসা বানাবো,
শুধু তোমার আর আমার জন্য, যাবে বলো...
: না, সেটা যে আর হয়না সিয়াম!
-কেন হবেনা, ভালবাসায়
না বলে যে কোন
শব্দ নেই
জানো নীলা, আমার আম্মাটাও এখন আর
বেঁচে নেই, এখন সারাদিন
না খেয়ে থাকলেও কেউ
সামনে এসে মুখে ভাত তুলে দেয় না, কেউ
এখন আর শাসন করার নেই, সারাটা রাত
যদি জেগেও থাকি, কেউ এখন আর
এসে মাথাই হাত বুলিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে দেয়
না, কেউ আর আমার বাড়ি ফেরার
অপেক্ষা করে না, আমার আর আপন
বলে কেউ
রইলো না....
: সিয়াম ঐ লোকটাকে একটু
উঠে দাড়াতে বলো না...
- কেন?
: আমি এভাবে দাড়িয়ে টাংগাইল
যেতে পারবো না; আমার কষ্ট
হয়না বুঝি...,
নীলা এতক্ষন দাড়িয়ে ছিল।
লোকটাকে বললাম আংকেল
একটু অন্যসিটে গিয়ে বসবেন, প্লিজ।
লোকটা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে
উঠে অন্য সিটে গিয়ে বসল।
অবশেষে নীলাকে নিয়ে আমাদের টাংগাইলে
ফিরলাম।
সমাপ্ত
লেখক: জাকির হোসেন রাজু।।

No comments:

Post a Comment