Monday, August 19, 2024

গল্পঃ "ফিক্সড ২৯"
লেখাঃ "অদ্রিতা জান্নাত"
সকাল হতেই নীলার ফোনটা বেজে উঠলো-
ক্রিং ক্রিং..ক্রিং ক্রিং..ক্রিং ক্রিং....
-উফ সকাল সকাল কে ফোন দেয় আল্লাহ,,
(ফোনের দিকে তাকিয়েই নীলা রাগে জ্বলে যাচ্ছে)
হ্যালো,,,এই ছেলে এই,,তোর কি কোনো কাজ নেই হ্যা? রোজ সকাল সকাল তুই কেনো আমাকে ফোন দিয়ে জ্বালাস বলতো??
-দেখ দোস্ত,,তোর পায়ে ধরি,আজকে তুই আমাকে পরীক্ষায় সাহায্য না করলে আমি শেষ রে দোস্ত।
-ওওও তাই না? তুমি সারারাত মেয়েদের সাথে গল্প করবা,সারাবছর ঘুরবা, আড্ডা দিবা আর পরীক্ষা আসলেই আমাকে এসে ধরবা তাই না? আমি পারবো না আর এসব করতে।
-প্লিজ দোস্ত,এমন করিস না,,কালকে রাতে মালিহার সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে। একবার আমার মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ।
-বাহ,,ভালো তো,,যা তুই এখন ব্রেকাপ পার্টি দে, তোর তো পরীক্ষা দেয়ার কোনো দরকার নাই। আমি রাখলাম আমি পড়বো এখন,,বায় দোস্ত।
-নীলা,নীলা প্লিজ শোন্ নীলা....
টুট..টুট..টুট...(কেটে গেলো লাইন টা...)
.
.
এতোক্ষণ কথা হচ্ছিলো নীলা আর নীলের মাঝে। ছোটো থেকেই ওরা একসাথে বেড়ে ওঠে। নীলের মা ছোটোবেলায় মারা যায়, ঘরে একটা সৎ মা আছে, ছোটো থেকেই তাই শাসনের অভাবে একটু বাজে ছেলেদের সাথে চলাফেরা,,মেয়েদের দেখলেই লাইন মারা এসব অভ্যাস হয়ে গেছে,,কিন্তু মনটা বেশ ভালো। কারো কখনো ক্ষতি করেনি তবে গল্প,আড্ডা, বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকে। তাই পড়ালেখাও করেনা সারাবছর ঠিকভাবে।আর অন্যদিকে নীলা বেশ মেধাবী। নীলা সারাবছর পড়ালেখা করে আর পরীক্ষার সময় নীলার থেকে সাহায্য নিয়েই আজকে নীল বিশ্ববিদ্যালয়ে নীলার সাথে পড়ছে। নীল একটু বদমেজাজি রকমের ছেলে বলে কিছুদিন পর পরই মেয়েদের সাথে ব্রেকাপ হয়। তবে নীলাই একমাত্র মেয়ে যে কিনা নীলকে খুব ভালো বুঝতে পারে। কিন্তু আজকে নীলের ফাইনাল পরীক্ষা অন্যদিকে নীলার সাহায্য না পেলে নীল ফেল করবে নিশ্চিত। কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
.
.
-(পেছন থেকে গুতো মেরে) এই নীলা....
-ওই,কি হয়েছে হ্যা?একদম বিরক্ত করবিনা কিন্তু।
-প্লিজ আমাকে যেভাবেই পারিস দেখাবি।
-নাহ,পারবো নাহ যাহ। তোর গফদের বল সাহায্য করতে, আমাকে বলিস কেনো
-দেখ,মেজাজ গরম আছে এমনিতেই। ভালোয় ভালোয় বলছি সব দেখাবি কিন্তু।
-(একটু দুষ্টামি করে) নাহ,আজকে তোকে দেখাবো নাহ যাহ।
নীল আজকে সত্যিই অনেক বেশি রেগে যায়,, কিন্তু নীলার সবকিছুই ছিলো মজা করে বলা। নীলের পরীক্ষা খারাপ হলে নীলারও কষ্ট লাগে, তাই যেভাবেই হোক নীলা আসলে ওকে সাহায্য করবেই।
কিন্তু নীলের বদমেজাজির জন্য সেদিনের পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিলো বেশ ভয়াবহ.....
.
.
নীল সেদিন সাথে করে নকল এনেছিলো,কিন্তু পরে রাগের মাথায় সেটাকেই সে কাজে লাগালো...
-স্যার,,একটু এদিকে আসবেন প্লিজ...
-বলো,কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
- না,মানে স্যার নীলা নকল করছে।
-নকল!!! কি বলো!!! তুমি সত্যি বলছো??
-জ্বী স্যার, আমি নিজের চোখে দেখেছি,আপনি দেখুন।
ওর ফাইলের নিচে কিছু কাগজ রাখা আছে।
-দেখি তো নীলা,তোমার ফাইলটা উপরে তোলো।
-স্যার,নীল মিথ্যা বলছে,আমি কোনো নকল আনিনি স্যার। আমি ওকে দেখাইনি বলে ও এখন মিথ্যা বলছে।
স্যার নীলার ফাইলের নিচে চেক করতেই বেশ কিছু কাগজ পেলো,,নীলা কিছুই বুঝতে পারছিলো না।
নীলার সে মুহূর্তেই পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করে দিলো। এবং ওকে আর পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি। নীলা বুঝতে পারছিলো না কী করবে। নীলার বাবা নেই,,সংসারটা নীলাকেই চালাতে হয় কোনো না কোনো ভাবে।
.
.
পরের দিন নীলারা সবাই গ্রামে চলে যায়। নীল সারারাত ছটফট করছিলো,কারণ সে বুঝতে পেরেছে কাজটা তার ঠিক হয়নি। সকালে নীল নীলাদের বাড়িতে ছুটে আসলো। কিন্তু এর আগেই তারা চলে যায় সেখান থেকে। নীলা ফোন নাম্বারটাও বন্ধ করে রাখে।
কিন্তু নীলা যাওয়ার আগে নীলের বন্ধু রাশেদের কাছে একটা চিঠি দিয়ে যায়। নীলা বলেছিলো সে চলে গেলে নীলকে চিঠিটা দিতে। রাশেদ নীলকে চিঠিটা দিয়ে যায়।
.
.
নীল তাড়াহুড়ো করে চিঠিতা খুললো। তবে নীলার লেখা কথাগুলোর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।
""নীল,,জানিনা কি বলবো তোকে আজ আর।
আমি জানিনা তুই কেনো এমন করেছিস,সেই ছোটো থেকে আমরা একসাথে আছি। তুই জানিস আমি তোর জন্য কতোটা করেছিলাম,,সেদিনও আমি তোকে ঠিকই সাহায্য করতাম। কিন্তু তবুও আজ শুধুমাত্র তোর রাগ আর জেদের জন্য আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো। আমি তোর সামনে আসবোনা। তুই ভাবছিস আমি তোর উপর রাগ করেছি??? নাহ, আমার খারাপ লেগেছে তবে রাগ করিনী। অবাক হচ্ছিস তাইনা???
আমার রাগ না করার পেছনের কারণটা জানতে পারলে আজ তুই আরো অবাক হবি। হুম,,আমি তোকে ভালোবাসি নীল। জানি আমার জন্য তোর মনে কোনো ভালোবাসা নেই কিন্তু তবুও,আমিতো ভালোবাসি।
আর তোর সামনে থাকলে প্রতিনিয়ত আমার মনে হতে থাকবে যে আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার সাথে
খারাপ কিছু করেছে,,আমার ক্ষতি করেছে।
এটা মেনে নেবার মতোন ক্ষমতা আমার হয়নি।
তাই,চলে গেলাম তোকে ভালোবেসে।
ভালো থাকিস রে নীল.....
ইতি
তোর নীলা...""
.
.
নীলের চোখের জলে ভিজে গেলো নীলার চিঠিটা।
নীলের জীবনে এ পর্যন্ত অনেক মেয়ের আগমন
আর প্রস্থান ঘটলেও,নীল কখনো কারো জন্য এতোটা কাঁদেনি। কিন্তু আজ নীলা ওর পাশ থেকে চলে যাওয়ার পর নীলার অনুপস্থিতি নীলকে ক্রমশ বিমর্ষ করে তুলছে। নীলা নীলকে ভালোবেসেও কখনো বলতে পারলো না,,আর আজ যখন নীলা তার ভালোবাসার কথা বলতে পারলো,তখন নীলা নিজেই হারিয়ে গেলো। নিয়তি হয়তো বা ঠিক এরকমই।
কিন্তু নীল আর নীলার সময় কাটছে কীভাবে???
.
.
কোনো মানুষ যখন হারিয়ে যায় কারো জীবন থেকে, তখন মানুষ তার দেয়া স্মৃতিটুকু নিয়েই বেঁচে থাকে।
নীল যখন শেষবারের মতোন নীলার বাড়িতে গেলো, তখন দরজার বাহিরে একট কানের দুল পড়ে ছিলো। নীলার সে দুলটাকেই আজো আকড়ে ধরে আছে নীল। কিন্তু নীলা হারিয়ে যাওয়ার পর আজ নীল অনুভব করতে পারলো- নীলও নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু নীল জানেনা কোথায় তার এ ভালোবাসার পূর্ণতা। তবে নীলের একটা বিশ্বাস ছিলো- নীলা যদি মন থেকে নীলকে ভালোবাসে আর নীলার জন্য নীলের ভালোবাসাও যদি সত্যি হয় তবে নীল আর নীলার এ ভালোবাসার পূর্ণতা পাবেই। সত্যিকারের ভালোবাসার একটা জোর থাকে। হয়তো সে জোর থেকেই আজ নীলের এতোটা বিশ্বাস।
.
.
নীলা গ্রামের একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করে সংসার চালায়। নীলার নিজের আর তার বোনের পড়ালেখাও নীলাকে চালাতে হয়। আর প্রতিনিয়ত এক অসহ্য যন্ত্রণার মাঝে নিজেকে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যেতে হয়। তবুও নীলা থেমে নেই। নীলা খুব ভালোভাবে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও ভীষণ মিস করতে থাকে নীলকে। আর ভাবতে থাকে,হয়তো নীল নতুন কাউকে নিয়ে বেশ সুখী আছে। নীলের হয়তো আমার কথা মনেই পড়েনা। ভালো আছে হয়তো খুব। আমার জন্য নীলের জীবন আটকে থাকবেনা। নীলের তো ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই!!! একা একা এসবই ভেবে চলে নীলা। আর নিজের কষ্টটুকু আড়ালে রেখে ভালো থাকার অভিনয় করে যায় কেবলমাত্র। নীলার মা নীলার বিয়ের জন্য অনেকবার নীলাকে বললেও নীলা কখনো রাজি হয়নি। কারণ নীলা আরেকবার জীবনে হারতে চায়না। নীলা পড়া শেষ করে সমাজে যেদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে সেদিন নীলার সকল কষ্ট সার্থক হবে। নীলা সেদিনের অপেক্ষায় আছে আজো....
.
.
নীল আজকাল একা একা বসে থাকে। নীল এখন আর সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত থাকেনা। এখন আর আগের মতোন বদমেজাজি স্বভাবটাও নেই। সারাক্ষণ ঘরের দরজা বন্ধ করে একা একা ডায়েরী নিয়ে বসে থাকে। ডায়রীতে নীলের সব অনুভূতিগুলো লিখে রাখে নীলাকে নিয়ে। নীলাকে ঘিরে নীল তার স্বপ্ন সাজায়,সকল ভাবনাগুলো লিখে রাখে, একা একা কল্পনা করে। এতেই নীলের সবটুকু ভালোলাগা। কিন্তু নীল অন্য সবার মতোন নিকোটিনের ধোঁয়ার মাঝে ডুবে থাকেনি কখনো,,রাত জেগে মাতাল হয়ে পড়ে থাকেনি কখনো.... নীল সকল কষ্টের মাঝেও নিজেকে ঠিক রেখে শুধু অপেক্ষা করে গেছে। নীল অপেক্ষা করে আছে নীলার ফিরে আসার জন্য।
কিন্তু নীল থেমে নেই। নীল আজ তার নিজের পড়ালেখায় মন দিয়েছে। আস্তে আস্তে নীল নিজেকে গড়ে তুললো কলেজের টপ ছাত্র হিসেবে। আর সবাইকে অবাক করে দিলো সেইসাথে। এখন আর নীল মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেনা,মেয়েদের সাথে নীলকে আজ আর দেখা যায়না। এখন মেয়েরাই নীলের পিছনে পড়ে থাকে। হয়তো নীল আজ নীলার সত্যিকারের ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছে। তাই নীল আজ সকলের নজর কাড়ার মতোই আদর্শ ছেলে....
.
.
৭ বছর পর.................
নীল আর নীলা দুজনেরই পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে।
দুজনেই এখন চেষ্টা করছে ভালো কোনো চাকরির জন্য। সাত বছর পর আজ নীলা ঢাকায় এসেছে। একটা মাল্টিমিডিয়া কোম্পানির এম.ডি পদের জন্য নীলা আবেদন করেছিলো। সেখানে আজ নীলাকে আসতে বলা হয়েছিলো। ঢাকায় আসতেই মনে পড়ে গেলো নীলার সকল স্মৃতিগুলোর কথা। নীলার চোখে আজো সেই জল। আজো নীলা কিছুই ভুলতে পারেনি। সকল মায়ার বাঁধনে যে আজো আবদ্ধ হয়ে আছে নীলা। যথাসময়ে নীলা পৌঁছে গেলো কোম্পানিতে।
নীলাকে তারা সিলেক্ট করেছে। কাল থেকেই নীলাকে অফিসে জয়েন করতে বলা হয়েছে।
নীলা সেদিন প্রথমবারের মতোন সুখের কান্না আর দুঃখের কান্না কেঁদেছিলো। আজ নীলার কষ্ট সার্থক হয়েছে। আজ নীলার সকল কষ্টের অবসান হয়েছে।
নীলা এবার তার সকল স্বপ্ন পূরণের পথে।
.
.
নীলা যে কোম্পানির এম.ডি, নীলও ছিলো সে কোম্পানির একজন কর্মকর্তা। পরদিন যখন সকালে নীলা অফিসে পৌঁছালো,,নীল একটি জরুরি ফাইল দেখানোর জন্য এম.ডি ম্যাম রুমে আসছিলো, কিন্তু নীল তখনও জানতো না যে নীলা-ই হলো নতুন এম.ডি।
- ম্যাম,আসতে পারি??
-জ্বী আসুন।
-নীলা তুই!!! (নীল ভেতরে এসে অবাক)
-নীল!!! তুই এখানে!!! কিভাবে?
-আমি এই কোম্পানিতে কাজ করি,কিন্তু তুই এখানে কিভাবে??
-আমি এই কোম্পানির নতুন এম.ডি...
-তুই ই তাহলে এ কোম্পানির এম.ডি!!!
-হুমম...আপাতত আপনি আমার কোম্পানির সামান্য কর্মকর্তা এবং আমি তোর ম্যাম,,অতএব আমি আশা করবো আপনি যথেষ্ট সম্মান এবং ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলবেন।
-জ্বী ম্যাম। ম্যাম ফাইলটা একটু দেখে দিবেন।
-রেখে যান।
-জ্বী....
.
.
নীল নীলার কথায় সামান্য কষ্ট পেলেও আজ নীল অনেকটা খুশি। কারণ নীল আজকে তার সকল অপেক্ষার পর অবশেষে নীলার দেখা পেলো।
নীল ভাবতে থাকে- যেভাবেই হোক নীলাকে আজ সব কথা বলতে হবে।
লাঞ্চ টেবিলে নীলার সাথে আবার দেখা....
-নীলা,,তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।
-হুম বলো। বসতে পারো।
-Tnx. কেমন আছো নীলা?
-হুম,ভালো আছি।
-আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করলেনা?
-হুমহ্(মৃদু হেসে) জানি,,ভালো আছো বেশ।
-কিভাবে বুঝলে যে ভালো আছি?
-ভালো থাকার কারণগুলো তোমার কাছেই ছিলো।
তাই ভালোই থাকার কথা তোমার।
-নাহ নীলা,আমি ভালো নেই একদম। আচ্ছা নীলা তুমি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো তাইনা???
-হা..হা..হা.. রাগ!! কিসের রাগ?? কেনো রাগ করবো? আর রাগ করলেই কি আজ আর ফিরে পাবো সব কিছু?
-নীলা প্লিজ,তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আমার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি। এই সাতটা বছর আমার ভুলের কারণে প্রতিনিয়ত আমি জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি।
-আর আমার কষ্টগুলো?? আমি কি এই সাতটা বছর খুব ভালো ছিলাম?
(ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে) নীল,চিনতে পেরেছিস?
-আরে,,এটাতো আমার রুমাল। এটা তুই কোথায় পেলি?
-হুম। পেয়েছি যেভাবেই হোক,,সাতটা বছর ধরে এটাইতে আকড়ে ছিলাম।
-আচ্ছা একটু অপেক্ষা কর। (পকেট থেকে কানের দুলটা বের করে) চিনতে পেরেছিস নীলা?
-এটাতো আমার কানের দুল। তোর কাছে কীভাবে?
-যেভাবেই হোক না কেনো। সাতটা বছর এটাকেই আকড়ে ছিলাম। তোর ছোঁয়া খুঁজেছি এর মাঝে।
আর শোন,এই ডায়রীটা রাখ। ইচ্ছে হলে পড়ে দেখিস।
হয়তো তোর ভুলগুলো ভাঙবে।
নীলা আর কোনো কথা না বলেই চলে এলো সেখান থেকে। নীল বার বার পিছু ডাকলেও নীলা পিছন ফিরে তাকায়নি। কেননা নীলা বুঝতে পেরেছিলো, হয়তো বা আবারও কোনো নতুন মায়ার জালে আটকা পরতে যাচ্ছে সে। হয়তো এ মায়া আরো বেশি অদ্ভুত। তাই আর কোনো কথা না বাড়িয়েই চলে এলো নীলা।
.
.
নীলা রাতে বাড়ি ফিরেই ডায়েরীটা নিয়ে বসলো।
নীলা প্রতিটা মুহূর্তেই খুব অবাক হতে লাগলো। কারণ,নীল প্রতিটা দিনই নীলাকে নিয়ে সকল ভাবনা সকল স্বপ্নের কথাগুলো ডায়রীতে সাজিয়ে রেখেছিলো। নীলা বুঝতে পেরেছে তার ভাবনাগুলো ছিলো ভুল। নীলও আসলে প্রতিটা মুহূর্তে যন্ত্রণায় কাটিয়েছে। নীলের সকল ভাবনা,সকল কল্পনা, জাগরণ-নিদ্রা,সকল কিছুই ছিলো নীলাকে ঘিরে।
নীলা চলে যাওয়ার পর থেকেই নীল প্রকৃত ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। নীল আর নীলা শুধু দুজনের থেকে এতোদিন দূরে থেকেছে কিন্তু এই দূরে থাকার কারণেই দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসা আরো বেড়ে গেছে।
নীলের এতো ভালোবাসা দেখে নীলা খুশিতে খুব কেঁদেছিলো। নীলা মনে মনে ভাবতে থাকলো-
""পাগলটাও এতোদিন আমারই মতোন কষ্ট পেয়েছে। তবে ভালোই হয়েছে,,এই দূরত্বটা তৈরি না হলে হয়তো নীল প্রকৃত ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পারতোনা।
মাঝে মাঝে কিছু কষ্টের পরেই একসময়ে চিরস্থায়ী এবং প্রকৃত সুখ অর্জন করা যায়।
এসব ভাবতে ভাবতেই ডায়রীটা বুকে জড়িয়ে কখন যেনো নীলা ঘুমিয়ে পড়লো।
.
.
খুব সকালে নীলার ফোনটা বেজে উঠলো। ঠিক সাত বছর আগের মতো,যেভাবে রোজ নীল ফোন দিয়ে নীলাকে জাগিয়ে দিতো। হুম,,নীলা ফোনের দিকে তাকিয়েই দেখে,আর কেউ নয়,নীল ই ফোন করেছে।
-হ্যালো...
-সাতবছর পর আজ আবার তোকে ফোন করে জাগালাম। আবার শুনতে পেলাম তোর সেই কন্ঠস্বর টা। এই একটু কন্ঠস্বর শুনার জন্য সাতটা বছরের প্রতিটা মুহূর্তে অপেক্ষা করেছি শুধু। আজকের সকালটা আমার জন্য খুব স্পেশালরে। নীলা,, আমার একটা কথা রাখবি??
-হুম বল....
-আজকে বিকেলে আমাদের কলেজের সামনের নদীর পাড়ে একটু দেখা করবি নীল শাড়ি পড়ে এসে?
-হুম আসবো। আর শোন্,,,
-হুম বল..
-আমার দেয়া সেই নীল পাঞ্জাবিটা পড়ে আসবি কিন্তু।
-আচ্ছা আসবো। (নীল অনেকটা খুশি হয়ে বলে)
.
.
নীল নীলার দেয়া সেই নীল পাঞ্জাবি পড়ে বিকেলে অপেক্ষা করছিলো নদীর পাড়ে।
একটু পরেই তাকিয়ে দেখে নীলা আসছে।
যেন একটা নীল পরী নেমে এসেছে আকাশ থেকে।
কি অপরূপ ই না লাগছে আজ নীলাকে।
নীলের দৃষ্টি ফেরেনা আজ আর......
-নীলা,চল সামনে গিয়ে বসি।
-হুম চল।
-(পেছন থেকে গোলাপটা এনে)
নীলা,,খুব ভালোবাসি তোকে...
-(নীলা অনেকটা অবাক আর খুশি হয়ে গেলো)
আমিও তোকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু,,,,
-কিন্তু!!! কিন্তু আবার কি নীলা???
-তুই কি এতোদিনে সেঞ্চুরী করে ফেলেছিস???
- সেঞ্চুরী মানে??? বুঝলাম না ঠিক।
-আমি থাকতে তো ২৮ নাম্বার পর্যন্ত লিখে রেখেছিলাম।
এই সাতবছরে নিশ্চয় ই তোর সেঞ্চুরী হয়ে গেছে গার্লফ্রেন্ডডের সংখ্যা তাই না? এই,,,আমি কতো নাম্বার এ আছি রে??
- নীলা... তুই এখনো সেই পাজিই রয়ে গিয়েছিস।
তুই যাওয়ার পর থেকে আমি বদলে গেছি রে নীলা।
আমি আর আগের মতোন নেই,, তুই যাওয়ার পর থেকে কখনো কোনো মেয়ের পিছনে ছুটা তো দূরের কথা,, কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলিনী.......
.
.
প্রকৃতিটা নিস্তব্ধ,, নীল আর নীলা সবুজ ঘাসের উপর বসে আছে দুজনে,দৃষ্টি আজ পরস্পরের প্রতি।
নীল আলতো করে নীলার হাতটা ধরলো-
নীলার সমস্ত শরীরে এক অন্যরকম আলোড়ন...
ভালোবাসার ছোঁয়া যেনো সমস্ত হৃদয় জুড়ে....
-নীলা.....
-হুম...
-একটা কথা বলবো....
-হুম...
-অনেক সাধনার পরে তোমাকে পেয়েছি আজ।
আর কখনো তোমাকে হারাতে চাইনা।
সবটুকু ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখবো সারাজীবন।
তুমি ই আমার প্রথম আর সত্যিকারের ভালোবাসা।
তোমাকে সাথে নিয়েই বাকিটা পথ চলতে চাই।সারাজীবনের জন্য থাকবে আমার হয়ে??
-হুম থাকবো। আমিও যে আমার সবটুকু দিয়ে শুধু তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু.........
-কিন্তু কি নীলা???
-আমি শুধু তোমার ফিক্সড ২৯। মনে থাকে যেনো....
আর কেউ যেনো কখনো আসতে না পারে....
-হুমম,,,তুমিই শুধু আমার ফিক্সড ২৯......
গোধূলিটা যেনো আরেকটু ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিলো দুজনকে....দুজন দুজনকে জড়িয়ে নিয়ে আরেকটু ভালোবাসার মুহূর্ত পার হয়ে যাক...
ভালোবাসাগুলো আরেকটু দৃঢ় হয়ে থাকুক...
সুখী থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো....

No comments:

Post a Comment