Sunday, August 18, 2024

বৌগো

একটা মেয়েকে আমার ছোট বেলা থেকেই
ভাল লাগতো। আমার স্যার এর মেয়ে। হাই
স্কুলে থাকা কালিন আমি প্রতিদিন-ই
প্রাইভেট পড়তে যেতাম স্যার এর বাসায়।
আর ওখান থেকেই ভাল লাগা সৃষ্টি। যা
আস্তে আস্তে ভালবাসার রুপ নেয়।
তখন তো খুব ছোট ছিলাম ভেবে ছিলাম
হয়তো ভাল লাগা। পরে আস্তে আস্তে
দেখি না সত্যিই আমি ওকে ভালবাসি।
কিছুদিন পড় কলেজে যখন আমি ওঠলাম।
আবারো ভাবলাম এখন যদি ভাল লাগার
কথা বলি তো এইটা অনেক খারাপ দেখায়।
আমি আবার আমার পরালেখা নিয়ে ব্যস্ত
থাকলাম।
মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বলতে যা বুঝায়। তার
সঠিক একটা উদাহারন মেঘা।
আমাকে স্কুল ছাড়ার পর মানে স্কুল থেকে
বের হওয়ার পরও স্যার যেতে বলতেন। আর
আমিও যেতাম।
টুকটাক কথা হতো। কেমন আছো? লেখাপড়া
কেমন চলছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
ওর চোখ গুলো এতো মায়াবী যে বলে
বুঝানো সম্ভব না।
চলাফেরা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া
পর্যন্ত এতো মার্যিত বলার মতো না।
অনেক ভাল রান্না করতে পারে।
একদিন স্যার এর বড় মেয়ের বিয়ের অনুষ্টান
এ ওকে শাড়িতে দেখে আমার মাথা
ঘুরিয়ে পরে যাবার অবস্থা।
শাড়িতে মেয়েদের এতো সুন্দর নাকি
লাগে।
আমাকে ভাইয়া বলেই ডাকতো।
এর ৪ বছর পর আমি ওকে আমার ভালবাসার
কথা জানাই।
- আচ্ছা ধরুন আমিও আপনাকে ভালবাসি
তো কি হবে?
- কি আর হবে? যা হবার তা তো বিয়ের পর
হবে।
- সবসময় ফাইযলামু ভাল লাগেনা।
- আচ্ছা সরি। আগে বলো আমার আনসার টা
কবে দিবা?
- দেখোন আমি এসব প্রেম-ভালবাসায় তো
একদম-ই জড়াতে চাইনা।
- আমি যে তুমাকে ভালবাসি এটা তুমি
জানোনা?
- জানি আর আপনি ভালবাসলেই যে
আমাকেও বাসতে হবে এরকম তো কোন কথা
নেই।
- আমাকে কি ভালবাসা যায়না? আমি ক
এতোই খারাপ? তুমার অযোগ্য?
- না, বিয়ের আগে আমি কারো সাথে
রিলেশন এ যেতে পারব না। আর আমি কি
বলছি যে আপমি খারাপ? আর আমার
অযোগ্য?
- তার মানে তুমি আমাকে ভালবাসবে যদি
বিয়ে করি তাইতো?
- অনেকটা তাই।
- পুরোপুরি বলো। তাহলে আমি বিয়ের
প্রস্থাব পাঠাবো।
- বিয়ের পর-ই প্রেম করবো।
..
তো আমি আমার বাসার কাওকে কিছুই
বলিনি। কিভাবে নিজের বিয়ের কথা
নিজে বলা যায়? এমনিতেই আমাকে বিয়ের
কথা বলছে বাসার সবাই। লজ্জায় আর বলতে
পারিনি।
..
কিছুদিন পর।
..
-কি হলো বিয়ের প্রস্থাব পাঠান নি? নাকি
ভয় পায়ছেন?
- ভয়ের কি আছে কিন্তু লজ্জার ব্যাপার
নিজেই কিভাবে নিজের বিয়ের কথা বলি।
- তাহলে আমার সাথে আর পিরিত করার শখ
যেন না জাগে।
- তুমি নিশ্চিত থাকো। মনে হয়না আমি
বাসায় বলতে পারবো আর তুমার সাথে
বিয়ে হবে।
- হুম,ভাল। আপনি তো ভাল মিথ্যুক।
- কেন?
- আমাকে বললেন ভালবাসেন আবার বাসায়
ও বলতে পারবেন না এর মানে কি দাড়ায়?
- এখানে মিথ্যের কি আছে। আমি তুমাকেই
ভালবাসি, তুমাকেই ভালবাসি।
- তো বাসায় বলেন।
- আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
..
বাসায় ও আর বলতে পারিনা আর বিয়ের
জন্য গ্যানগ্যান করছে সবাই।
কিছু মেয়ের ছবি এনেছিলো মা।
আমি দেখিনি। কারন বিয়ে করলে
মেঘাকেই করবো।
আমি নিজে পারব না ভাল করেই বুঝতে
পারলাম। তাই আমি রকি (ফ্রেন্ড) কে
বললাম।
রকিকে সবাই পছন্দ করে। আর ওর কথা
ফেলতে পারবে না।
তো ও কাকে জানি বললো। মনে হয়
চাচ্চুকে।
তারপর চাচ্চু মনে হয় মাকে বলছিলো।
রাতে কানে হ্যাডফোন লাগিয়ে গান
শুনতে ছিলাম।
তখন মা আসলো।
- বাবা এখন ঘুমাবি?
- কেন মা কিছু বলবা?
- ফরিদ স্যারের মেয়েকে তোর পছন্দ?
এই আমি লজ্জা পেলাম না কি পেলাম
বুঝলাম না। তবে মার চোখের দিকে আর
তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।
- কি হলো বল।
- না মানে হু।
- ওরে বোকা আমরা তো মেঘার কথা-ই
তোকে এতোদিন বলতেছিলাম।
- কি? তো আমাকে না কিছু মেয়েদের ছবি
দিছিলা?
- দেখছিলাম তুই কি করস।
..
আমার রীতিমত বিশ্বাস হচ্ছে না। কি বলে
এসব। আমি মেঘা কে ফোন দিলাম।
- আসসালামু আলাইকুম। (মেঘা)
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
- এতো রাতে ফোন দিলেন কেন?
- এতো রাত কোথায় হলো? এখন তো মাত্র
১১:০০ টা বাজে।
- আপনার জন্য না হতে পারে। কিন্তু আমার
জন্য অনেক রাত। কি জন্য ফোন দিলেন
আগে বলেন।
- তুমার সাথে নাকি আমার বিয়ের কথা-
বার্তা চলতেছে?
- কি? কই আমি কিছু জানিনা। হুম তবে
বাবা বলেছে রাজ নামে কোনো ছেলের
সাথে।
- কি? তো আমার নাম কি ?
- রাজ, কেন অন্য কারো নাম রাজ হতে
পারেনা?
- কার নাম আবার রাজ হবে? আমার সাথেই
হচ্ছে।
- হলে হবে।
- কি বলো সত্যিই নাকি? আমার তো
বিশ্বাস হচ্ছে না।
- এখন ঘুমান। কালকে অফিস আছেনা?
- না আরেকটু কথা বলিনা প্লিজ।
- হেহ আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ যে
বললেই হবে।
- এখন না তো কি হইছে কয়েকদিন পর তো
ঠিকিই হবা।
- তখন দেখা যাবে। আমি ঘুমাবো। গুড
নাইট।
টুট টুট টুট
বলেই ফোনটা কেটে দিলো। কিন্তু হিসাব
মিলাতে পারছি না। তার মানে কি? ও
জানতো যে আমার সাথেই বিয়ের কথা
হচ্ছে।
আগে বললে কি হতো?
যাই হোক। অনেক রাত করে ঘুমালাম।
সকালে হতেই আখি ( ছোট বোন ) ডাকতে
শুরু করলো।
- এই ভাইয়া কয়টা বাজে? অফিসে যাবা
না? ওঠো তারাতারি।
- অফিসে যাবো না তুই যা তো একটু
শান্তিতে ঘুমাতে দে।
- অফিসে যাবা না মানে। আজকে কি কথা
ছিলো? ভুলে গেছো? ওয়েট পানি
আনতেছি।
- ওই থাম তো। কিসের কি কথা ছিলো আমি
ভুলে গেছি।
- ও কিছুদিন পর তো আমাকেই ভুলে যাবা।
যে তুমার ছোট একটা বোন আছে আখি নাম
যা তুমিই রাখছিলা।
অভিমান করে।
- কি কথা আছিলো সত্যিই ভুলে গেছি বল
না কি হইছে?
- আমার পায়েল হুহু।
- ও এটা আগে বলবি না। ওকে আসার সময়
নিয়ে আসবো।
- হিহি আচ্ছা কিনার সময় সময় ভাল করে
দেখে কিনবা।
..
একবার অনেক আগে আমার উপর রাগ করে
খাওয়াদাওয়া অফ করে দিছিলো।
তাই তখন ওকে বলেছিলাম যে আজ
পায়েল কিনে দিবো।
কি আজব ভুলে নাই। আমি তো কবেই ভুলে
গেছিলাম।
অফিস থেকে আসার সময় পায়েল কিনলাম।
তবে শুধু আখির জন্য না। মেঘার জন্য ও।
বাসায় গিয়ে দেখি ও পায়ে ব্যাথা
পাইছে।
সিড়ি দিয়ে ওঠতে গিয়ে পা মচকে গেছে
হালকা।
আর বাচ্চা মেয়েদের মতো কান্না তো
থামেনা। -জানি তুমি আমাকে বদ দোয়া
দিছো।
এজন্য ব্যাথা পাইছি। না কিনে দিবা
বলতা।
কান্না করে আর মুখ মুছে। উউ উউউ উউউ
-না লক্ষি বোন আমার আমি তোকে বদ
দোয়া দিতে পারি? তুই এটা বলতে পারলি?
-তো আমার পা মচকে গেলো কেন হুম?
- আরে বাবা কিছু হয়নি। দুইদিনের মধ্যেই
ঠিক হয়ে যাবে। আর দেখ তোর জন্য পায়েল
ও আনছি।
- থাক লাগবেনা। এখন নিয়ে কি করব পা-ই
তো মচকে গেছে।
- এরকম করেনা বোন আমার। চল কালকে ঘুরে
আসি গ্রামের বাড়ি থেকে।
- হইছে হইছে। আমার এস এস সির রেজাল্ট এর
সময় একবার আমাকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলা
আমার মনে আছে স্পষ্ট এর পরে একদিন ও
নিয়ে গেছো? ছোট ছিলাম ভাল ছিলাম।
কান্না করলেই দোকান আর বাইরে নিয়ে
যাইতা।
- এখন কি বড় হয়ে গেছিস? কই। দেখিতো
আমার বোনটা কতটুকু বড় হইছে ওয়েট আমি
ফিতা নিয়ে আসতেছি।
- আমি কি খুব লম্বা হয়ে গেছি নাকি?
আমার বয়স বাড়ছে না?
- মনে আছে তোর গ্রামের বাড়িতে তুই
একবার পানিতে পড়ে গেছিলি?
- এখন আবার ভয় দেখাও? যাও এখান থেইকা।
- আচ্ছা যাই তাহলে।
- এই ভাইয়া।
- কি হইছে আবার?
- আমি বললাম বলে তুমি...।
- তো কি করবো?
- পায়েল পড়িয়ে দাও।
- দিলাম এবার খুশি?
- না, আইস্ক্রিম আনো গিয়ে। এখন তো আমি
বাইরে যেতে পারবো না।
- এখন?
- যাবানা?
- ওকে ওকে বাবা যাচ্ছি।
- হিহি যাও তারাতারি আসবা।
..
কথা মতো আইস্ক্রিম আনলাম কিন্তু
নিজের হাতে খাবেনা। ওকে খাইয়ে দিতে
হবে।
- তোর পায়ে ব্যাথা হাত-মুখ এ কি হইছে?
- আমার পায়ে ব্যাথা তাই খেতে পারবো
না তুমি খাইয়ে দিবা। না দিলে খাবোনা।
ছোট বেলায় ভাল ছিলো। দিনের মধ্যে
তিনবার-ই খাইয়ে দিতা।
- আবার ছোট বেলার খুটা মারে।
হা কর।
- হিহি তুমার বিয়ের সময় মেহেদী
দিবোনা তখন ও খাইয়ে দিতে হবে আগেই
বলে দিলাম।
...
এই হলো আমার ছোট বোন। পা মচকে গেছে
ওর। দুষ আমার। খাইয়ে দিতে হবে আমার।
ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে আমার।
রাতে ঘুমানোর আগে আখি কে বললাম
মায়ের কাছ থেকে জেনে আসতে কবে
বিয়ে ঠিক করছে।
কিন্তু ওনি আবার শর্ত ছাড়া কোনো কাজ
করেনা। এবারের শর্ত হলো এক হাজার
টাকা। না রাজি হয়ে কোনো উপায় নেই।
মার কাছ থেকে আসার পর।
- এক হাজার টাকা হবেনা।
- কেন? আগে বল তারিখ কবে?
- আগে এমাউন্ট বাড়াও।
- আগে বলনা তারিখ।
- ২ হাজার রাজি আছো?
- না।
- তাইলে আমিও গেলাম।
- এই শোন ১৫০০ দিলাম এবার বল।
- ৫০০ টাকা বেশি নিলাম কারন। বিয়ে
মাত্র ১৫ দিন পর।
- আল্লা যেন তোর বিয়ে না লিখে রাখে।
- হুহ আমি বিয়ে করবোও না কখনো।
- হ্যা তুই তো বুড়ি।
- হুহ আমি এখনো ছোট বাচ্চা বুড়ি বললে খবর
আছে।
- এখন যা রুম থেইকা। ডাকাতনী।
..
বিয়ের দিন প্রায় ঘনিয়ে আসছে। সব কিছু
আয়োজন করা থেকে শুরু করে সবাইকে
আমন্ত্রণ করাও শেষ।
..
-ভাইয়া তুমার ফোনটা একটু দাওতো।
- কেন? তোর ফোন কই?
- তুমার হবু স্ত্রী আর আমার হবু ভাবি
ওনাকে ফোন দিবো।
- কেন?
- আগে ফোন দাও।
মেঘা কে ফোন এ ধরিয়ে দিলাম।
- ভাবি, একটা কথা বললে রাখবা?
- হুম বলো তুমি দেখি।
- দেখি না হ্যা অথবা না বলো।
- আচ্ছা রাখবো। বলো তুমি।
- হিহি, আসলে আমি ভাইয়ার সাথে একদম
পারিনা। বিয়ের পর তুমি কার দলে থাকবা
আমার না ভাইয়ার?
- তুমার সাথে থাকলে কি হবে?
- আমরা দুজন মিলে ভাইয়া কে জব্দ করবো।
তুমি আর আমি যদি একসাথে ভাইয়াকে কে
জব্দ করি তাহলে সবসময় আমাদের কথায়
ওঠবে বসবে মজা হবেনা?
- হুম হবে। তাহলে তো তুমার দলে থাকতেই
হয়।
- হিহি ধন্যবাদ ভাবি।
..
এই ধরো তুমার ফোন। তুমার থেকে ভাবিই
অনেক ভাল। আরে এখনি আমার থেকে
ভাবি বেশি আপন হয়ে গেলো? আচ্ছা আর
তোকে খাইয়ে দিবোনা। লাগবে না ভাবি
আসছে না।
..
বিয়ের দিনের অপেক্ষা শেষ। আজকেই
আমাদের বিয়েটা স্বয়ং সম্পুর্ন হলো।
না আমি এখনো বাসর ঘরে যায়নি।
বাইরে টই টই করছি। না এবার গেলাম।
দেখি ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
আমাকে দেখেই সালাম করতে আসলো।
- আচ্ছা একটা কথা বলবো?(আমি)
- হুম, আজ একটা না যত ইচ্ছা বলেন।
- আমার মা কে নিজের মা-র মতো মনে
করবে তো? আমার বোনটা আছেনা অনেক
পাগলী। কিন্তু মনটা অনেক ফ্রেশ। ওকে
কখনো দুঃখ দিয়োনা কোন কথায়। ওর কষ্ট
আমি দেখতে পারিনা।
- আরে এভাবে বলছেন কেন? আপনার মা তো
আমারও মা। আর আপনার ছোট বোন মানে
আমারও তাইনা?
- জানি কিন্তু..
- এ নিয়ে চিন্তা করবেন না।
- তুমার চোখ গুলো এতো সুন্দর কেন?
- আপনার জন্য। এখন আমাকে প্রপুজ করেন।
- কেন?
- মনে নেই, বিয়ের পর প্রেম..।
- ও, আচ্ছা কিভাবে প্রপুজ করবো?
- আপনি জানেন।
- আচ্ছা প্রপুজ করলাম। আই লাভ ইউ মেঘা।
আমি তুমার প্রেমিক হতে চাই। হইছে?
- কিছুটা। হুম অনুমতি দিলাম। আজ থেকে
আমিও আপনাকে ভালবাসতে চায়। কখনো
ছেড়ে যাবেন না তো?
- হেহে কি বলো। আমি বেছে থাকতে না।
তুমার পা-টা দেখিতো।
- কেন?
পকেট থেকে পায়েল বের করলাম।
- কি এটা?
- পায়েল।
- কার জন্য?
- বিয়ে আমি কয়টা করছি?
- ও আমার জন্য?
- না আমার বউয়ের জন্য।
- অনেক সুন্দর হইছে। কবে কিনলেন?
- প্রায় ১৭-১৮ দিন আগে। তুমার আর আখির
জন্য।
- পড়িয়ে দিবেন না?
- হুম,
- সত্যিই অনেক সুন্দর হইছে।
..
পরে কি হলো তা বলা যাবেনা।
..
বিয়ের কিছু মাস দেখয়ে দেখতে পেরিয়ে
গেলো। টের-ই পেলাম না।
খুব সকাল বেলা ।
ওর হাত দুটো ধরে শুয়ে আছি। মনে হচ্ছে
জেগে গেছে।
- সকাল হয়ে গেলো নাকি? (মেঘা)
- হুম ( মাথা নাড়িয়ে )
- ওঠবেন না?
- না। আরেকটু ঘুমাবো।
- না এখনি ওঠেন।
- তাহলে দাও।
- কি দিবো?
- জানোনা?
- না।
- প্রতিদিন যে দাও।
- আজ দিবোনা।
- কেন।
- এমনিই।
হাতটা ছেড়ে দিলাম। যাও দেয়া লাগবে
না।
একথা শুনে দিলো।
- হুম লক্ষি বউ আমার বুকে আসো।
- না এতো আদর দেখাতে হবেনা। ওঠেন এখন
নাহয় আখি কে বলব পানি ঢেলে দিতে। -
এরকম করো কেন? আরো অনেক সময় তো
আছে।
ওঠে গিয়ে বলল।
- তারাতারি ওঠে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
নাস্তা রেডি করবো। আর যেন ডাকা না
লাগে।
- হুম।
..
এর কিছুক্ষণ পর। গুসল করে ভেজা চুলে অপরুপ
লাগছিলো।
এ দৃশ্য কোন পুরুষ মানুষ উপেক্ষা করতে পারে
না।
..
বিছানা আর ভাল লাগলো না বউটাকে
গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
- এই কি করছেন? ছাড়েন বলছি। দর্জা তো
খুলা।
- তো কি আমার বউকে আমি আদর করছি
এতে কার কি?
- হইছে ছাড়েন না।
- তুমাকে ভেজা চুলে এতো অপরুপ লাগে
কেন? তাইতো দূরে থাকতে পারিনা।
- দূরে থাকতে কে বলছে হুম? শুধু এখন ছেড়ে
দেন।
..
অফিস থেকে আসার সময় বাসের সাথে বড়
ধরনের ধাক্কা খেলাম। তারপর কিছু মনে
নেই।
দুই ঘন্টা পর দেখি হাসপাতালে আছি।
মাথায় ব্যান্ডেজ। পায়ে ব্যান্ডেজ।
কেভিন থেকে শুনতে পাচ্ছি। বাইরে সবাই
কান্নাকাটি করছে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ভিতরে ডুকতে দিলো।
আর যতটা না মাথায় আঘাত পেয়ে কষ্ট
পেয়েছি তার থেকে বেশি পেয়েছি মা সহ
সবার চোখে পানি দেখে।
ডাক্তার বলেছে আরেকটু বেশি চোট পেলে
হয়ত মরেই যেতাম।
আল্লাহর রহমত এ এরকম হয় নি।
আখি এভাবে কাঁদতে পারে এর আগে
দেখিনি।
হাসপাতালে আখি আর জলি ছিলো সাথে।
আর বাকিদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
প্রায় পনেরো দিন পর ডাক্তার বাসায়
যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে বলেছে।
তো বাসায় নিয়ে গেলো।
বাসায় গিয়ে মনে হলো। আমি আমার প্রাণ
ফিরে পেয়েছি।
মাথায় চোট পেয়েছি এর জন্য এতো কথা
বলতে পারতাম না।
খাওয়ার সময় আখি খাওয়াই দেয়।
আমি হা করে তাকিয়ে থাকি।
- একটু ভাল করে রাস্তাও পার হতে
পারোনা?(আখি)
- মাথা নাড়িয়ে বললাম না।
- তাহলে এরকম অবস্থাই হবে।
- ভালই হলো।
- কি?? কি ভাল হইছে?
- কিছুনা। আর খাবোনা তুই যা।
- ভ্যা হা করো নাহলে মাথায় আবার..।
- খাইছি তো অনেক।
..
রাতে শুয়ে আছি।
-আচ্ছা আমি যদি ওইদিন মরে যেতাম
আমাকে কি ক্ষমা করতে না?
- নাহ, মুখে আরেকবার এই কথা ভুলেও
আনবেন না।
- মনে করো না।
- মনে করার আরো অনেক কিছু আছে।
- আচ্ছা তুমার কষ্ট হয়নি? হাসপাতালে
প্রতিদিন জেগে ছিলা।
- কিসের কষ্ট? কোনো কষ্ট হয়নি। কষ্ট হবে
কেন?
- একটুও না?
- না। আপনাকে সুস্থ করতে দরকার পরলে
আরো থাকতাম। আপনি সুস্থ হয়ে ফিরে
এসেছেন আমার আর কিছু চায়না।
- ওরে আমার লক্ষি বউটারে। এদিকে আসো
লাবিউ।
- আমিও।
..
৩ বছর পর।
- এই শুনেন না ইফতি ( আমাদের ছেলে ) না
আজকে এখনো খায়নি। আমি আর পারিনা
আপনার ছেলের সাথে।
- তো আমি অফিস থেকে ওকে খাইয়ে দিবো
নাকি?
- কি করবো বলেন না।
- তুমি মেয়ে হয়ে তাও আবার ওর মা
তারপরেও ওকে সামলাতে পারোনা?
-আমার কাছে কতক্ষণ থাকে হু? সারাদিন
তো আখির কাছেই থাকে।
- ইফতি কই এখন?
- কই আবার আখির কাছে।
- গিয়ে দেখো ওরা দুজন ঠিকিই কিছু
খাচ্ছে।
- আচ্ছা, আপনি খেয়েছেন?
- না খাবো একটু পর। তুমি খাইছো?
- বাবুকে রেখে আমি খাই বুঝি?
- তারাতারি খেয়ে নাও তো।
- আচ্ছা আপনি তারাতারি আসবেন কিন্তু।
- ওকে, আচ্ছা তুমি আমাকে এখনো আপনি
করে বলো কেন? এখনো আমি পর?
- তুমি করে আমি বলতে পারবো না লজ্জা
করে।
- দুদিন পরে দুই সন্তানের মা হবা এখনো
লজ্জা কাটে নাই। হায়রে কই যাই।
- যেতে হবেনা তারাতারি বাসায় আসেন।
- একবার তুমি করো বলো না।
- পারবো না।
..
অফিস শেষ করে বাসায় গেলাম। আমাকে
দেখেই কাছে ছুটে আসলো।
আমি কোলে নিলাম।
- আব্বু আমার জন্য আজকে কি আনছো?
- ব্যাডমিন্টন।
- আমি তো খেলতে পারিনা।
- আখি শিখিয়ে দিবে।
- ফুপ্পি পারে?
- হুম যাও।
নেমে এক দৌড় দিয়ে আখির রুমে।
-ফুপ্পি ফুপ্পি তুমি ব্যাডমিন্টন খেলতে
পারো? আমাকে শিখাও না।
- না শিখাবো না।
- কেন ফুপ্পি আমি কি করছি।
- পাপ্পার কথা ভুলে গেছো না?
- ও আচ্ছা। এবার তো আসো।
- হিহি চলো।
..
ফ্রেশ হলাম খাইতে বসলাম। কিন্তু
টেবিলটা খালি খালি লাগছে। ইফতি আর
আখি ছাদে ব্যাডমিন্টন খেলছে মনে হয়।
মেঘা কে বললাম গিয়ে ওদের ডেকে
আনতে। মেঘা গেলো ছাদে।
- আব্বু আমার তুমি কই?
- এইযে আমি এখানে।
- তুমার আব্বু তুমাকে ডাকছে নিচে যেতে
আসো।
- না আম্মু আমি এখন খেলবো। তারপর
ফুপ্পির সাথে চলে আসবো তুমি যাও।
..
নিচে চলে আসলো।
- আপনার ছেলে আমার কথা শুনে। বলছে
পরে আসবে এখন ওনি খেলছে।
- হুম।
..
দেখতে দেখতে ছেলেটা বড় হয়ে যাচ্ছে।
এরি মাঝে মেঘা আবার প্রেগন্যান্ট।
এবার ফুটফুটে একটা মেয়ে হইছে।
এর নাম কি রাখবো?
আমরা কেউ কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা।
..
মেয়ের নাম রাখার দায়িত্ব আপনাদের
হাতে ছেড়ে দিলাম।
কি নাম রাখা যায় বলেন তো?
..
__ অন্যরকম লেখক (সুনয়নার অপেক্ষায়)

No comments:

Post a Comment